আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১২

কুরানে বিগ্যান (পঞ্চদশ পর্ব): কুরানের ফজিলত!

লিখেছেন গোলাপ


আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর আল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে ঘোষণা করেছেন যে, তাঁকে বিশ্বাস ও মান্য করে তাঁর বাণীকে (কুরান) অনুসরণের ফজিলত (উপকারিতা) বহুবিধ! অল্প কিছু উদাহরণ: 

২:২ - এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য 

১৬:৬৪ - আমি আপনার প্রতি এ জন্যেই গ্রন্থ নাযিল করেছি, যাতে আপনি সরল পথ প্রদর্শনের জন্যে তাদের কে পরিষ্কার বর্ণনা করে দেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে এবং ঈমানদারকে ক্ষমা করার জন্যে। 

১৮:২ - একে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন যা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ভীষণ বিপদের ভয় প্রদর্শন করে এবং মুমিনদেরকে যারা সৎকর্ম সম্পাদন করে-তাদেরকে সুসংবাদ দান করে যে, তাদের জন্যে উত্তম প্রতিদান রয়েছে। 

>>> অর্থাৎ, যারা মুহাম্মদকে (আল্লাহ) বিশ্বাস করে তার হুকুম তামিল করবে, শুধু তারাই হবে, "(সত্য) পথ-প্রাপ্ত, ক্ষমা-প্রাপ্ত, উত্তম প্রতিদান-প্রাপ্ত এবং রহমত-প্রাপ্ত (১৭:৮২)"; কিন্তু যারা মুহাম্মদ ও তার কথাকে বিশ্বাস করবে না, তার কথামত চলবে না, তাদের কী হবে? তাদের জন্য শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি! তাদের ক্ষতি বাড়তেই থাকবে! মুহাম্মদের ভাষায়: 

১৭:৮২ - আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়। 

১৭:৮২ এর “গোনাহগার" শব্দটি দেখে বিভ্রান্ত হবার কোনো অবকাশ নেই। ইসলামের প্রাথমিক শর্ত হলো "ইমান"; মুহাম্মদের (আল্লাহর) প্রতি বিশ্বাস। এই শর্ত অনুযায়ী মুহাম্মদকে (আল্লাহ) অবিশ্বাসকারী প্রতিটি মানুষই গোনাহগার। একই ভাবে ইসলামে বর্ণিত "সৎকাজ" শব্দটি নিয়েও বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়! এখানেও ইসলামের প্রাথমিক শর্ত অনুযায়ী মুহাম্মদ (আল্লাহ) যে কাজের আদেশ করেছেন, সেই কাজটিই হলো "সৎকাজ।" হোক না সেটা মানুষ খুন, লুটের মাল ভোগ (গনিমত), দাস-দাসীকরণ বা দাসী সম্ভোগ! যে কাজটি তিনি নিষেধ করেছেন তা "অসৎ-কাজ"। Straight and Simple! 

২০১০ সালের এক সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে যে, বর্তমান বিশ্বে মোট জনসংখ্যা ৬৯০ কোটি। মুসলিম জনসংখ্যার পরিমাণ আনুমানিক ১৬০ কোটি। আর অমুসলিমদের পরিমাণ আনুমানিক ৫৩০ কোটি। অর্থাৎ, বর্তমান বিশ্ব জনসংখ্যার সিংহভাগই (৭৬ শতাংশ) অমুসলিম। ২০১০ সালের সমীক্ষায় আরও দেখানো হয়েছে যে, অমুসলিমদের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অতীতে আরও অনেক বেশী ছিল। ১৯৯০ সালে তা ছিল ৮০ শতাংশ। অমুসলিমরা কুরানকে সৃষ্টিকর্তার বাণী এবং মুহাম্মদকে সেই স্রষ্টার প্রেরিত বিশেষ মহামানব (নবী) হিসাবে কখনোই স্বীকার করেন না। তাই প্রবক্তা মুহাম্মদের ওপরোক্ত ১৭:৮২ দাবি মুতাবেক কুরানের বাণী এবং তার শিক্ষা সর্বদায় পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষের শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি করে এসেছে, সেই শুরু থেকে! 

দাবি করা হয় যে, সৃষ্টির সবচেয়ে সেরা জীব হলো মানব জাতি! "আশরাফুল মখলুকাত"! যে সৃষ্টির আগমনের জন্য স্রষ্টা ১৩৫০ কোটি বছর অপেক্ষায় ছিলেন! এই অত্যন্ত সুদীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর সেই বিশেষ সৃষ্টির মধ্য থেকে স্রষ্টা আরবের মরু-প্রান্তরে একেশ্বরবাদী নবীদের ধারাবাহিকতার সর্বশেষ নবীকুল শিরোমণি হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে সৃষ্টি করেন! তাঁর মারফত স্রষ্টা সর্বকালের সকল মানুষের পথ প্রদর্শনকারী (হেদায়েত) যে একমাত্র জীবন বিধানটি পাঠালেন, তা নাযিলের শুরু থেকে গত ১৪০০ বছর ব্যাপী পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষের শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি করে চলেছে! কী উদ্ভট দাবী! বিশ্বাসী পাঠকদের আমি বিভ্রান্ত না হবার অনুরোধ করছি। ওপরোক্ত দাবি স্বঘোষিত নবী মুহাম্মদের (আল্লাহ)! সৃষ্টিকর্তার সাথে মুহাম্মদের এ দাবির যে কোনই সম্পৃক্ততা থাকতে পারে না, তা যে কোনো স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও সহজেই অনুধাবন করতে পারেন! বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তাকে (যদি থাকে) এতটা অবিবেচক ভাবার কোনোই কারণ নেই। মুহাম্মদ তার দলকে ভারী করার জন্য সৃষ্টিকর্তার নামে কত যে প্রলাপ বকেছেন তার নমুনা ইতিহাস হয়ে আছে কুরানের পাতায় পাতায়! পৃথিবীর কোনো মানুষই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তা সে মুসা, ঈসা, মুহাম্মদ যে-ই হোন না কেন। সুতরাং যুক্তি-তথ্য-বাস্তবতা ও জ্ঞানের কষ্টি-পাথরে অনুত্তীর্ণ তাদের যে কোনো একজন বা সবার দাবিকে নির্দ্বিধায় বাতিল করেও মানুষ সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী হতে পারেন। বিশ্বাস কোনো প্রমাণ নয়। এটা বিশ্বাসীর একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি। তার সেই অপ্রমাণিত বিশ্বাসকে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়ার কোন অধিকারই তার নেই। 

প্রবক্তা মুহাম্মদ আরও দাবি করেছেন: 

১৬:১০২ - বলুন, একে পবিত্র ফেরেশতা পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিশ্চিত সত্যসহ নাযিল করেছেন, যাতে মুমিনদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এটা মুসলমানদের জন্যে পথ নির্দেশ ও সু-সংবাদ স্বরূপ। 

>>> মুহাম্মদের এই দাবিটির মধ্যে আদৌ কি কোনো সত্যতা আছে? বাস্তবতা কী বলে? অমুসলিমরাই আজ বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত। মুমিনরা নয়। জীবনের সর্বক্ষেত্রে অমুসলিমরাই আজ বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। আজকের বিশ্বে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, চিন্তা-ভাবনায়, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, শিক্ষা-মর্যাদায় ইসলাম অনুসারীরাই পৃথিবীর সর্বনিম্ন, যা মুহাম্মদের ওপরোক্ত ১৬:১০২ দাবীর পরিপন্থী। মুসলমানেরা যত তাড়াতাড়ি এই সত্য উপলব্ধি করতে পারবেন, তত দ্রুত তাদের মুক্তি মিলবে! কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ মুসলমানই এই সত্য উপলব্ধি করা তো দূরের কথা, স্বীকার করতেও রাজি নয়! অনেকে এটাও বলেন যে, মুসলমানদের আসল সাফল্য হলো মৃত্যুর পর বেহেশতে প্রবেশ। তাই তারা সর্বদাই সাফল্যমণ্ডিত। আর অমুসলিম কাফেররা সর্বদাই অসফল! কারণ তারা কখনই বেহেশতে প্রবেশ করবে না। 

মৃত মানুষ কথা বলতে পারে না। মৃত্যুর ওপার থেকে কেউ সংবাদও পাঠাতে পারে না। তার পরেও এ সকল মুসলমান নিশ্চিত! ক্যামনে? কারণ তা কুরানেই লেখা আছে। কুরানের কথা যে সত্য, তার প্রমাণ কী? কারণ মুহাম্মদ বলেছেন কুরান বিশ্বস্রষ্টার (আল্লাহ) বাণী। মুহাম্মদ যে মিথ্যা বলেননি, তার কী প্রমাণ? প্রমাণ, মুহাম্মদ বলেছেন (কুরানে), “মুহাম্মদ সত্যবাদী।" বক্তা নিজেই নিজের প্রশংসাপত্র বিলিয়েছেন! কোনো অবস্থাতেই কোনো ব্যক্তির নিজের দেয়া সনদপত্র তার সত্যবাদিতার মাপকাঠি হতে পারে না। এই সহজ সত্যটি ধর্মান্ধরা যখন বুঝতে পারেন না, তখন অবাক না হয়ে উপায় থাকে না! 

আমি আমার চারপাশের বহু উচ্চশিক্ষিত মুসলমানদের সাথে প্রাসঙ্গিক আলোচনা কালে যখন জানতে চাই যে, হাজার বছরেরও বেশি শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও কেন মুসলমানরা আজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অমুসলিমদের তুলনায় পশ্চাৎপদ। প্রায় সবাই যে জবাবটি দেন, তা হলো, “মুসলিম শাসকরা তাদের ক্ষমতার জন্য সবকিছু করেছেন। ইসলামের জন্য কিছুই করেননি। তাই আজকের এই দুরবস্থা!” দাবি করেন, “যদি তাঁরা সঠিক ইসলাম পালন করতেন, তবে মুসলমানেরাই হতো বিশ্বে সর্ব উন্নত জাতি!” তাঁরা ইসলামের শিক্ষার কোনোই দোষ দেখতে পান না! যখন তাঁদেরকে স্মরণ করিয়ে দিই, মুসলিম শাসক ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা ইসলামের শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের নিমিত্তে পৃথিবীর সর্বত্র লক্ষ-লক্ষ মসজিদ-মক্তব-মাদ্রাসা তৈরি করেছেন। সেই আদিকাল থেকে ইদানীং কালের সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক মুসলমান শাসক এখনও তা করে চলেছেন আমাদের দেশসহ পৃথিবীর অন্যত্র পরম একাগ্রতায়। কিন্তু তারা আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের জন্য কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন বা অনুদান দিয়ে সাহায্য বা উৎসাহিত করেছেন, এমন নজির আমার জানা নেই। থাকলেও তাকে ব্যতিক্রমই বলতে হবে। শত শত বছর যাবত আমাদের পূর্বপুরুষরা সে সব মসজিদ-মক্তব-মাদ্রাসা থেকে ইসলামিক জ্ঞান আহরণ করেছেন। পালন করেছেন তা নিষ্ঠা ভরে। আজকের মুসলমানেরাও তার ব্যতিক্রম নয়। সেই কুরান! সেই হাদিস! সেই সিরাতের (মুহাম্মদের জীবনী) শিক্ষা! 

‘বিদ্যা শিক্ষার জন্য প্রয়োজনে সুদূর চীন দেশে যাও’-এ দুর্বল (Da’if) হাদিসটি বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের মুখে মুখে! ‘নবীর চলার পথে যে ইহুদি বুড়ি কাঁটা দিতো / আবর্জনা ফেলতো, সে পথ একদিন কাঁটা-হীন /আবর্জনা-মুক্ত দেখে নবী সেই বুড়ীর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে যখন জানলেন যে সে অসুস্থ; তখন নবী সেই বুড়ির সেবা-যত্ন করে তাকে সুস্থ করে তুললেন’ - এ সকল মহান গল্প শোনেননি, এমন মুসলমান পৃথিবীতে একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ! কিন্তু ক'জন মুসলমান জানেন যে, এ মহান গল্পের আদৌ কোনো আদি ভিত্তি নেই! ক'জন মুসলমান জানেন যে, এই কিচ্ছা ইসলামী সহি মিথ্যাচারের ফসল, জাল হাদিস! এমনতর ভিত্তিহীন ও জাল গল্পের উদ্ভাবক ও প্রচারক কারা? নিশ্চয়ই ইহুদী-নাসারারা নয়! নিবেদিতপ্রাণ ইসলামী সৈনিকরাই যুগে যুগে পরিকল্পিতভাবে সমগ্র পৃথিবীতে এরূপ মিথ্যাচার করে আসছেন! মিথ্যার বেসাতী এ নির্লজ্জ প্রচার ও প্রসারে তারা এতটাই সিদ্ধহস্ত যে, এ সমস্ত দুর্বল/জাল হাদিস (Fabricated Hadits) এখন বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের মুখে মুখে। 

কিন্তু সাধারণ মুসলমানেরা জানেন না, মুহাম্মদের আদেশে বনি-কুরাইজা, আবু-রাফি, ক্বাব বিন আশরাফ কিংবা আসমা বিনতে মারওয়ান সহ অসংখ্য অমানবিক হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা সম্বলিত সিরাত (নবী জীবনী) ও সহি হাদিসের সামান্যতম আভাস! আদি উৎসে এ ঘটনাগুলোর বর্ণনা অত্যন্ত স্পষ্ট ও প্রাণবন্ত! সাধারণ মুসলমানেরা আরও জানেন না, অমুসলিমদের উদ্দেশ্যে কুরানে বর্ণিত মুহাম্মদের অসংখ্য অমানবিক আদেশ ও নিষেধ। তাদের জানানো হয় না! পরিকল্পিত ভাবে তা গোপন করা হয়! কিংবা বৈধতা দেয়া হয় বিভিন্ন উদ্ভট কসরতের মাধ্যমে। সেই আদিকাল থেকে এখন পর্যন্ত মুসলিম শাসক-যাজক চক্র সাধারণ মানুষের জ্ঞান অর্জনের জন্য যা কিছু করেছেন এবং করছেন তার উদ্দেশ্য ইসলামের প্রচার ও প্রসার। সুতরাং তারা ইসলামের জন্য কিছুই করেননি, এ তথ্য ডাহা মিথ্যা। 

যখন আমি উচ্চ শিক্ষিত বন্ধুদের একটা অতি সাধারণ প্রশ্ন করি, “শুধু কুরান-হাদিসের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এবং পুরোপুরি সহি ইসলামের আদেশ ও অনুশাসন (পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, বছরে ৩০ টি রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি) একান্ত একাগ্রতায় পালন করে কীভাবে একজন মুসলমান ডাক্তার-প্রকৌশলী-বিজ্ঞানী-বুদ্ধিজীবী হতে পারেন?” জবাব আসে, "ইসলাম তো আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ নিষেধ করে নাই।" উৎসাহিত কি করেছে? সমগ্র কুরানে অবিশ্বাসীদেরকে অভিশাপ, অসম্মান, হুমকি, শাসানী, ভীতি প্রদর্শন ও হত্যার উৎসাহ দিয়ে শত শত স্পষ্ট আয়াত আছে। কিন্তু আধুনিক যুগোপযোগী শিক্ষার আবেদন কিংবা উৎসাহ দিয়ে সমগ্র কুরানে স্পষ্ট একটি বাক্যও নাই। সুতরাং ইসলামী শিক্ষার আদর্শের অনুসারী একজন নিবেদিতপ্রাণ বিশ্বাসী মুসলমান আধুনিক শিক্ষায় কেন আগ্রহী হবেন? তারা আগ্রহী এবং উদ্বুদ্ধ হবেন কুরান-হাদিস যে বিষয়টিকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছে, তার প্রতি। বাস্তবে হয়েছেও তাই। সুতরাং ইসলামী শিক্ষার কোনো দোষ নেই, সব দোষ মানুষের; এ দাবিটি যাঁরা করেন, তাঁরা মূলত: মসজিদ-মৌলভী-হিপোক্রাইট চক্রের প্রোপাগান্ডার শিকার। গত ১৪০০ বছর ধরে ইসলাম বিশ্বাসীদেরকে এটাই বারংবার বোঝানো হয়েছে যে, দোষ ইসলামের নয়। দোষ "শুধু ইসলাম" ছাড়া আর সবখানেই! ইসলাম সর্বদাই শুদ্ধ! Islam is always right. ইসলামকে সর্বদাই আড়াল করে রাখা হয়েছে মিথ্যার বেড়াজালে। 

এর পরেও যদি ধরে নিই বাস্তবতার নিরিখে (ইসলামের কোনো কৃতিত্ব নয়) নিবেদিতপ্রাণ কোনো মুসলমান আধুনিক শিক্ষায় উৎসাহিত হয়ে কোনো আবিষ্কারে (উদাহরণ) ব্রতী হলেন। তিনি তাঁর সমস্ত ধ্যান-মন-প্রাণ সেই আবিষ্কারের পিছনে নিয়োগ করলেন। সময় সর্বদাই সবার জন্য ২৪ ঘণ্টায় দিন-রাত্রি। একজন মানুষের দেহ-মন সুস্থির রাখার জন্য প্রতিদিনে কমপক্ষে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। আর প্রতিদিনে আরও কমপক্ষে দুই ঘণ্টা দরকার জীবনের অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় কাজে (প্রাতঃক্রিয়াদি, খাওয়া, গোসল, ব্রাশ ইত্যাদি) অর্থাৎ নিবেদিতপ্রাণ মুসলিম-অমুসলিম সবাই প্রতি দিন সর্বোচ্চ ১৬ ঘণ্টা সময় পাবেন তাদের ব্যবহারিক কাজে (উদাহরণ-এ ক্ষেত্রে আবিষ্কার)।

নিবেদিতপ্রাণ ইসলাম বিশ্বাসীকে তার সবচেয়ে প্রাথমিক ও অত্যাবশ্যকীয় (ফরজ) প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায, প্রতি বছরে এক মাস রোজা এবং তার সাথে আরও আনুষঙ্গিক অনুশাসন (তারাবী নামাজ, ইফতার, ইত্যাদি) পালন করতে হবে। তবেই না তাঁকে বলা যাবে সত্যিকারের ইসলাম অনুসারী! প্রতি ওয়াক্ত নামাজে গড়ে কমপক্ষে যদি সে ৩০ মিনিট সময়ও ব্যয় করেন, তবে প্রতিদিনে শুধুমাত্র নামাজের জন্যই তাঁকে আরও অতিরিক্ত আড়াই ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হবে। ভুললে চলবে না যে, তাঁকে তাঁর সফলতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে পৃথিবীর অন্যান্য অনুরূপ নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি বর্গের সাথে। যাঁদের ৭৬ শতাংশই অমুসলিম। যাঁরা তাদের ১৬ ঘণ্টা লভ্য সময়ের আরও অতিরিক্ত আড়াই ঘণ্টা ‘নামাজে’ ব্যয় করেন না। এ পরিস্থিতিতে অমুসলিম নিবেদিতপ্রাণ কোনো ব্যক্তির মেধা-মনন-একাগ্রতা-নিষ্ঠা ইত্যাদি সমস্ত বিষয় (Variable) যদি বিশ্বাসী নিবেদিতপ্রাণ মুসলিম ব্যক্তিটির সমানও হয়, তথাপি ঐ অমুসলিম ব্যক্তিটি তার ব্যবহারিক কাজে মুসলিম ব্যক্তিটির চেয়ে ‘শুধু নামাজের জন্যই’ প্রতি দিন অতিরিক্ত আড়াই ঘণ্টা বেশি সময়-সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ, অমুসলিমরা মুসলিমদের চেয়ে ১৬ শতাংশ অতিরিক্ত সময় সুবিধা তাঁর কর্মক্ষেত্রে ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। এমতাবস্থায় ফলাফলে কে বিজয়ী হবেন, তা যে কোনো চিন্তাশীল মানুষ অতি সহজেই বুঝতে পারেন। সুতরাং যাঁরা দাবি করেন যে, মুসলিমদের আজকের দুর্গতির কারণ ইসলামের অনুশাসন ঠিক মত পালন না করা, তাঁরা মতিবিভ্রমের (Delusion) স্বীকার। বাস্তবতাবিবর্জিত 'কল্পনার' জগতে তাদের বাস। সত্য হলো মুসলমানদের আজকের এ দুরবস্থার জন্য দায়ী কারণগুলোর অন্যতম হলো ইসলামের শিক্ষা। যাকে সর্বদাই বাতিল করা হয় আদি কারণ (Primary reason) থেকে। ইসলামের বাধ্যতামূলক প্রাত্যহিক ধর্মীয় অনুশাসন পূর্ণভাবে পালন করে একজন মুসলমানের পক্ষে একজন অমুসলিমের সাথে প্রতিযোগিতায় জয়ী হবার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। 

২০০৬ সালে ডাঃ ফারুক সেলিম এক নিবন্ধে মুসলিম ও অমুসলিম দেশের এক তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছেন। নিবন্ধটি একটু পুরানো হলেও গত ছয় বছরে মুসলিম জাহানের আর্থ-সামাজিক অবস্থার যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। ডাঃ ফারুক তাঁর সেই নিবন্ধে দেখিয়েছেন যে, ৫৭ টি মুসলিম দেশের মিলিত সর্বমোট জিডিপি দুই ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার। যেখানে আমেরিকা একাই ১২ ট্রিলিয়ন, চায়না ৮ ট্রিলিয়ন, জাপান ৩.৮ ট্রিলিয়ন, জার্মানি ২.৪ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার (purchasing power parity basis)। প্রায় অর্ধেক আরব মহিলা অক্ষরজ্ঞানহীন। ৫৭ টি মুসলিম দেশের ১৬০ কোটি জনগণের জন্য ৬০০ টির ও কম বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে ভারতে আছে ৮৪০৭ টি এবং আমেরিকায় ৫৭৫৮ টি । ১৬০ কোটি মুসলমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে গত ১১০ বছরে মাত্র ১০ জন মুসলমান নোবেল বিজয়ীর তালিকায় (২০১১ সাল পর্যন্ত) স্থান পেয়েছেন। এই দশ জনের ৬ জনই পেয়েছেন নোবেল পুরষ্কারের সবচেয়ে বেশী বিতর্কিত বিষয় - শান্তিতে। মাত্র দু'জন বিজ্ঞানে। ১৯৭৯ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে প্রফেসার আবদুস সালাম (যাকে তাঁর দেশ পাকিস্তানে মুসলমান বলেই স্বীকার করা হয় না) এবং ১৯৯৯ সালে রসায়নে আহমেদ জেওয়াল। তাদের দুজনই গবেষণা চালিয়েছেন অমুসলিম দেশে। অন্যদিকে, এক কোটি ৪০ লাখ ইহুদী জনগোষ্ঠীর ১৮৫ জন নোবেল বিজয়ী। অর্থাৎ বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠীর (মুসলমান) আহরণ মোট নোবেলের মাত্র এক শতাংশ। আর ইহুদীরা বিশ্বজনগোষ্ঠীর মাত্র ০.২৩ শতাংশ; কিন্তু তারা মোট নোবেলের ২২ শতাংশের অধিকারী। মুসলমান জনগোষ্ঠীর গড়ে প্রতি ১০ লাখে ২৩০ জন বিজ্ঞানী। যেখানে আমেরিকায় প্রতি ১০ লাখে ৪,০০০, জাপানে প্রতি ১০ লাখে ৫,০০০ জন। মুসলমান জনগোষ্ঠীর গড় শিক্ষিতের হার ৪০ শতাংশ। যেখানে খ্রিষ্টান জন গুষ্টির গড় শিক্ষিতের হার ৯০ শতাংশ। সংক্ষেপে, মুসলিম জনগোষ্ঠী আজ জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিক্ষা-অর্থনীতিসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বে সর্বনিম্ন। 

আজকে বিজ্ঞানের অবদানের কাছে আমরা প্রতি মুহূর্তে নির্ভরশীল। অথচ বর্তমান বিশ্বে সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় এমন একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারও নেই, যার মুখ্য আবিষ্কর্তা একজন মুসলমান। পাঠক, আপনার চারপাশে একটু মনোযোগের সাথে খেয়াল করুন! বেডরুম-রান্নাঘর থকে শুরু করে স্থলে, জলে ও আকাশে! বিদ্যুৎ, মোবাইল ফোন, টেলিফোন, ফ্যাক্স, টেলিভিশন, ভিসিপি, ভিসিআর, কম্পিউটার- প্রিন্টার-স্ক্যানার, ইন্টারনেট, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ, রাইস-কুকার, মটর সাইকেল, গাড়ী, রেলগাড়ি, ট্রাক-বাস-মিনিবাস, লঞ্চ-স্টিমার, উড়োজাহাজ, স্যাটেলাইট যন্ত্র, GPS, চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয় সামগ্রী (স্টেথোস্কোপ, এক্স-রে মেশিন, CT Scan, MRI ইত্যাদি), জীবনরক্ষাকারী ঔষধ, ক্যামেরা, ঘড়ি, চশমা ইত্যাদি-ইত্যাদি-ইত্যাদি - এমন কিছু কি আপনি দেখতে পান, যার মূল আবিষ্কর্তা হলেন একজন মুসলমান? এটি যে একটি অত্যন্ত লজ্জাকর অবস্থান, এ বোধও অধিকাংশ ইসলাম বিশ্বাসীর আছে বলে পরিলক্ষিত হয় না! অল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত সাধারণ মুসলমানদের এ বোধ না থাকলে আশ্চর্য হবার কোনো হেতু নেই। কিন্তু, যখন উচ্চশিক্ষিত তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ইসলাম-বিশ্বাসীরা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, আকারে-ইঙ্গিতে, বক্তৃতা-বিবৃতিতে, খবরের কাগজের আর্টিকেলে ও ব্লগ-জগতে বিতর্ক-বিতণ্ডায় দাবী করেন যে, তারাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, তারা মানসিক বিভ্রমের (Delusion) স্বীকার। এই মানসিক বৈকল্যের কারণে তাঁরা বুঝতেও পারেন না যে, তাদের কার্যকলাপ ও বাস্তবতাবিবর্জিত অন্তঃসারশূন্য ফাঁকা বুলিকে অমুসলিমরা কীভাবে মূল্যায়ন করছেন! 

এমন কি হতে পারে যে, সৃষ্টিকর্তা পরিকল্পিতভাবে ইসলাম-বিশ্বাসীদের মেধা-মনন ও উদ্ভাবনী শক্তিকে খর্ব করেই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন? অসম্ভব প্রস্তাবনা! অবশ্যই না! একজন ইসলাম বিশ্বাসীর গড় মেধা অমুসলিমদের সমতুল্য। একই পৃথিবীর পানি-হাওয়া-বাতাস ও অন্ন-বস্ত্রে মুসলিম এবং অমুসলিমরা বেড়ে উঠছেন প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে। অমুসলিমরা কোনো ভিনগ্রহ থেকে আবির্ভূত হয়নি! যে সমস্ত মুসলমান ভাই তাদের অনুন্নত জন্ম-ভূমি ছেড়ে ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া-কানাডা-জাপান-নিউজিল্যান্ড সহ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত (Developed) কাফেরের দেশে ভাগ্য উন্নয়নে পাড়ি দিয়েছেন, তাদের পরিমান মোট বিশ্ব-মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় তিন শতাংশ (৫ কোটি); এ ছাড়াও মোট মুসলিম জনসংখ্যার ২৩.৩ শতাংশেরও বেশী মুসলমানদের নিবাস উন্নয়নশীল (Developing) অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে। অর্থাৎ মোট মুসলিম জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশেরও বেশি বসবাস করছেন এবং বেড়ে উঠছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিম দেশগুলোর নাগরিকদের সাথে। একই কাতারে। একই পানি-হাওয়া-বাতাস ও সরকারী সুযোগ সুবিধা নিয়ে। তথাপি, বিশ্ব জনগোষ্ঠীর এক-চতুর্থাংশ প্রতিনিধিত্বকারীর পক্ষ থেকে যখন একটি আবিষ্কারও বর্তমান বিশ্বের আপামর জনসাধারণের উপকারার্থে দেখা যায় না, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এই সম্প্রদায়ের চিন্তা-চেতনা-ভাবাদর্শে একটি মৌলিক গলদ আছে! কী সে গলদ? 

মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে বিশ্বের অন্যান্য সম্প্রদায়ের একটি মৌলিক ও সাধারণ পার্থক্য হলো - ধর্ম। আর সকল ধর্মেরই এক বিশেষ সাধারণ বৈশিষ্ট্য এই যে, একান্ত শিশু-অবস্থার কোমল মস্তিষ্কে "ধর্ম-বীজ" রোপণ করা! ধর্মের যাবতীয় আদেশ-নিষেধ, শাসন-অনুশাসন, ভাল-মন্দ ইত্যাদি যাবতীয় বোধ শিশু মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেয়া! এর প্রভাব হয় সুদূরপ্রসারী। জীবনের পরবর্তী সময়ে চিন্তা-ভাবনা-মন-মানসিকতায় এর প্রভাব নিশ্চিতরূপেই পরিলক্ষিত হয়। তাই একজন মুসলমানের মেধার সাথে একজন অমুসলমানের মেধার তেমন কোন পার্থক্য না থাকলেও তাদের চিন্তা-ভাবনা-চেতনা-মন-মানসিকতার পার্থক্য অনেক! মুসলমানদের অবক্ষয়ের পেছনে ধর্মশিক্ষার কোনো যোগ নেই, এ ধারনা নিঃসন্দেহে ভ্রান্ত! সুতরাং আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, মুহাম্মদের বাণী (কুরান-হাদিস) ও শিক্ষা গত ১৪০০ বছর ধরে শুধু অবিশ্বাসীদেরই নয় (১৭:৮২); বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষেরই শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি করে চলেছে! পরিসংখনে এ সত্যও স্পষ্ট যে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী হচ্ছে তারাই যারা মুহাম্মদের বাণী ও শিক্ষায় আস্থাবান। 

কোনো বিখ্যাত বিজ্ঞানী-বুদ্ধিজীবী-মনীষীর অবদান তাঁর জন্মসূত্রে প্রাপ্ত ধর্মের সাথে সম্পর্কিত নয়! শ্রদ্ধেয় ও বরেণ্য এ সকল বিজ্ঞানী-মনীষী-বুদ্ধিজীবীদের অর্জন তাঁদের জন্ম-সূত্রে প্রাপ্ত ধর্ম-অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জিত হয়নি। ধর্মের কোনো কৃতিত্বই এখানে নেই। উদাহরণ, আলবার্ট আইনস্টাইনের যুগান্তকারী আবিষ্কারের পিছনে ইহুদী ধর্মের কোনো কৃতিত্ব নেই। কোপারনিকাস, ব্রুনো, গালিলিও, নিউটন অথবা চার্লস ডারউইনের যুগান্তকারী আবিষ্কারের সঙ্গে খ্রিষ্টান ধর্মের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ইবনে সিনা, ওমর খৈয়াম, মুহাম্মদ বিন জাকারিয়া আল-রাজীর আবিষ্কারের সঙ্গে ইসলাম ধর্মের কোনো ভূমিকা নেই। এ সকল বিজ্ঞানী/মনীষীদের অনেকেই বিশ্বাসীদের দ্বারা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন, যখন তাদের পরীক্ষালব্ধ জ্ঞান বা বিবৃতি ছিল প্রচলিত ধর্ম-বিশ্বাসের বিপরীতে। আজও তা অব্যাহত আছে বহাল তবিয়তে! তথাপি বিশ্বাসীরা এ সকল বরেণ্য মনীষীদের নাম ব্যবহার করে তাদের ধর্মের মহাত্ব প্রচারে পিছপা হন না। ইসলাম বিশ্বাসীরা এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার! তাঁরা কারণে-অকারণে মধ্যযুগের আরব-পারস্যের মুসলিম বিজ্ঞানী/মনীষীদের উদাহরণ টেনে ইসলামের স্বর্ণযুগ-এর মহাত্ব বয়ান করেন। এ সকল মুসলিম মনীষীদের আবিষ্কারের পিছনে "ইসলামের" কোনোই ভূমিকা নেই। 

পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্মের সাধারণ ধর্মাম্বলীরা ইসলামের মত এত বেশি সময়সাপেক্ষ অত্যাবশ্যকীয় ধর্মীয় অনুশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট নয়। একজন নিবেদিত প্রাণ সাধারণ মুসলমান তা২র প্রাত্যহিক ১৬ ঘণ্টা লভ্য সময়ের ২-৩ ঘন্টা ব্যয় করেন শুধুমাত্র নামাজেই। এ ছাড়াও আছে অত্যাবশ্যকীয় ধর্মীয় আরও অন্যান্য অনুশাসন। প্রত্যুষে ঘুম ঠেকে ওঠার সময় থেকে (ফজর নামাজ) শুরু করে রাতে ঘুমোতে যাবার পূর্ব পর্যন্ত (এশার নামাজ) প্রতিদিন বাধ্যতামূলকভাবে কমপক্ষে ৫ বার ইসলাম বিশ্বাসীর মস্তিষ্কে মুহাম্মদের গুণকীর্তন-আদেশ নিষেধের বাণী স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় উচ্চকণ্ঠ আজানের মাধ্যমে। পরিবার সদস্যদের মাধ্যমে। পরিপার্শ্বের অন্যান্য মুসলমানদের মাধ্যমে। ১৬ ঘণ্টায় ৫ বার! অর্থাৎ, গড়ে প্রতি ৩ ঘণ্টায় একবার! জন্ম থকে মৃত্যু পর্যন্ত! সুস্থ চিন্তা ও মুক্ত বুদ্ধিবৃত্তিচর্চার সময় কোথায়? ফলশ্রুতিতে ইসলাম বিশ্বাসীদের ধ্যান-মন-প্রাণের সবটা জুড়েই থাকে মুহাম্মদের বাণী (কুরান-হাদিসের) ও অনুশাসন চিন্তা! মুহাম্মদ (আল্লাহ), মুহাম্মদ আর মুহাম্মদ! ফলে তাঁদের মগজ ধোলাই অন্যান্য ধর্মের মানুষের তুলনায় হয় অধিকতর নিশ্চিত (Guaranteed), তীব্রতর ও সুদূরপ্রসারী! মুক্তচিন্তার পথ চিরতরে হয় রুদ্ধ! মুহাম্মদের জালে তাঁরা হয়ে পড়েন আষ্টেপৃষ্টে বন্দী! তাঁদের চেতন-অবচেতন মস্তিষ্কের সবটা জুড়েই বাসা বাঁধে বেহেস্তের প্রলোভন ও দোযখের অসীম শাস্তির ভয় এবং কবর আযাবের বিভীষিকাময় চিত্র! তিনি মুক্ত মানুষ থেকে পরিণত হন দাসে! পরম তৃপ্তিতে! একান্ত আজ্ঞাবহ মুহাম্মদের দাস! আবদ-মুহাম্মদ! 

[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।]

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন