আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০১৪

সতীদাহ প্রথা: কোত্থেকে ও কী ক'রে

লিখেছেন 'যুক্তি' নামের ফেইসবুক পেইজের অ্যাডমিন 

হিন্দুধর্মের ইতিহাসে সতীদাহ বা সহমরণের কথা প্রথম জানা যায় অথর্ববেদে। যেখানে বলা হয়েছে : “... জীবিত নারীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মৃতের বধু হতে” (১৮/৩/৩)। “এই নারী পতিলোকে যাচ্ছে, এ প্রাচীন রীতি অনুসরণ করছে...” (১৮/৩/৩/১)। 

পরাশর সংহিতা বলছে: “মানুষের শরীরে সাড়ে তিন কোটি লোম থাকে, যে নারী মৃত্যুতেও তার স্বামীকে অনুগমন করে, সে স্বামীর সঙ্গে ৩৩ বৎসরই স্বর্গবাস করে।” (৪:২৮)। 

দক্ষ সংহিতার ৪:১৮-১৯নং শ্লোকে রয়েছে, যে সতী নারী স্বামীর মৃত্যুর পর অগ্নিতে প্রবেশ করে সে স্বর্গে পূজা পায়। আবার পরবর্তী শ্লোকে (৫:১৬০) বলা হয়েছে, “যে নারী স্বামীর চিতায় আত্মোৎসর্গ করে সে তার পিতৃকুল, স্বামীকুল উভয়কেই পবিত্র করে।” 

যেমন করে সাপুড়ে সাপকে তার গর্ত থেকে টেনে বার করে তেমনভাবে সতী তার স্বামীকে নরক থেকে আকর্ষণ করে এবং সুখে থাকে। ব্রহ্মপুরাণ বলে, “যদি স্বামীর প্রবাসে মৃত্যু হয়ে থাকে তবে স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর পাদুকা বুকে ধরে অগ্নিপ্রবেশ করা।” 

মহাভারতের মৌষল পর্বে, ভগবান কৃষ্ণের মৃত্যুর পর তাঁর চার স্ত্রী রুক্ষিণী, রোহিণী, ভদ্রা এবং মদিরা তাঁর চিতায় সহমৃতা হয়েছিলেন। এমন কি বসুদেবের আট পত্নীও তাঁর মৃত্যুর পরে সহমরণে গিয়েছিলেন। পঞ্চপাণ্ডবের পিতা, হস্তিনাপুরের রাজা পাণ্ডুর মৃত্যুর পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী মাদ্রিও সহমরণে গিয়েছিলেন। 

ব্যাসস্মৃতি বলছে, চিতায় বিধবা নারী তার স্বামীর মৃতদেহে আলিঙ্গন করবেন অথবা তার মস্তকমুণ্ডণ করবেন। (২:৫৫)। 

ষষ্ঠশতকের বরাহমিহির তার বৃহৎসংহিতায় বলেন, “অহো নারীর প্রেম কি সুদৃঢ়, তারা স্বামীর দেহ ক্রোড়ে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করে।” (৭৪:২৩)। 

‘হিন্দু নারী তার স্বামীর প্রতি ভালোবাসার জন্যই সহমরণে যায়। এ হিন্দু নারীর চিরন্তন বৈশিষ্ট্য, ঐতিহ্য, মমত্ব, স্বামীর প্রতি অগাধ ভালোবাসার দুর্লভ উদাহরণ।’--ব্রাহ্মণ্যবাদীদের এরকম সাফাই বক্তব্যের দিয়েছেন সুকুমারী ভট্টাচার্য : 

“বৃহৎসংহিতার যুগ থেকেই সমাজ এই অতিকথা ঘোষণা করে আসছে যে নারী তার স্বামীর প্রতি ভালোবাসার জন্যই সহমরণে যায়। এই মিথ্যার অবসান হওয়া উচিৎ। যদি স্বামীর প্রতি প্রেমে এক নারী আত্মহত্যা করে তবে কেন আজ পর্যন্ত কোনো স্বামী তার স্ত্রীর চিতায় আত্মহত্যা করে নি? এ তো হতে পারে না যে আজ পর্যন্ত কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে ভালোবাসে নি। যদি সতীদাহের ভিত্তি হতো প্রেম, তবে আমরা অবশ্যই কিছু কিছু ঘটনা দেখতে পেতাম যেখানে মৃত স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীও সহমরণে গেছেন। কিন্তু তা হয় নি, এ বিষয়ে কোনো শাস্ত্রীয় বিধিও নেই। সুতরাং মূল ব্যাপার হল স্বামীর স্বার্থে স্ত্রীর সম্পূর্ণ আত্মবিসর্জন; আর সতীদাহ এই আজীবন নাটকেরই পঞ্চমাংকের শেষ দৃশ্য।” (দ্রষ্টব্য : প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ, পৃষ্ঠা ১৪৮)।

সতীদাহের এ রীতি কত পুরানো? এটি আর্য না প্রাগার্য সংস্কৃতি? কারণ আমরা ইন্দো-ইয়রোপীয় অন্য সভ্যতাগুলিতে আমরা সহমরণের কথা তো পাই না। অথচ ১৮১৫ সাল থেকে ১৮১৮ সাল পর্যন্ত মাত্র তিন বছরে নারীর সতীত্ব রক্ষার নামে কেবল বাংলায় (যা তখন বারাণসী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল) ২৩৬৬ জন নারীকে আগুনে পুড়িয়ে সতী বানানো হয়েছিল, যার মধ্যে কলকাতাতেই সতীদাহের সংখ্যা ১৮৪৫। আর ১৮১৫ থেকে ১৮২৮ সাল পর্যন্ত, মাত্র তের বছরে বাংলাতে ৮১৩৫ জন নারীকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ‘সতী’ বানিয়েছিলেন হিন্দু ঠাকুর-পুরোহিতগণ। 

হিন্দু নারীরা কি স্বামীর মৃত্যুর পর স্বেচ্ছায় স্বামীর চিতায় ওঠে সহমরণে যেতেন? ঐতিহাসিকগণ জানিয়েছেন কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সদ্য বিধবা নারীকে উত্তেজক পানীয় পান করিয়ে কিংবা নেশা জাতীয় দ্রব্য শুঁকিয়ে অজ্ঞান করে, অর্ধচেতন অবস্থায় স্বামীর চিতায় তুলে দেওয়া হতো। এ প্রসঙ্গে গবেষক সুকুমারী ভট্টাচার্যের কিছু বক্তব্য প্রসঙ্গক্রমে তুলে ধরছি :

“সদ্যবিধবা নারী নববধূর মতো সাজে, তার শ্রেষ্ঠ পোষাক পরে, সিঁদুর, কাজল, ফুলমালা, চন্দন, আলতায় সুসজ্জিত হয়ে ধীরে ধীরে সে চিতায় ওঠে, তার স্বামীর পা দুটি বুকে আঁকড়ে ধরে কিংবা মৃতদেহকে দুই বাহুতে আলিঙ্গন করে, এইভাবে যতক্ষণ না আগুন জ্বলে উঠে ততক্ষণ সে বিভ্রান্তির সঙ্গে অপেক্ষা করে। যদি শেষ মুহূর্তে বিচলিত হয় এবং নীতিগত, দৃশ্যগতভাবে ছন্দপতন ঘটে তাই শুভাকাক্সক্ষীরা তাকে উত্তেজক পানীয় পান করায়। এমন কি পরে যখন আগুনের লেলিহান শিখা অসহনীয় হয়ে ওঠে, পানীয়র নেশা কেটে যায়, তখন যদি সেই বিধবা বিচলিত হয়ে পড়ে, ‘সতী’র মহিমা ক্ষুণ্ণ হবার ভয় দেখা দেয় তখন সেই শুভাকাক্সক্ষীরাই তাকে বাঁশের লাঠি দিয়ে চেপে ধরে যদি সে চিতা থেকে নেমে আসতে চায়, প্রতিবেশী, পুরোহিত, সমাজকর্তা সকলেই অনুষ্ঠানের সাফল্যের জন্য অতিমাত্রায় সাহায্য করতে চায়। তারা গান করে, ঢাক বাজায় এতো উচ্চ জয়ধ্বনি দেয় যে সতী যা কিছু বলতে চায় সবই উচ্চনাদে ঢেকে যায়।” (দ্রষ্টব্য : প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ, পৃষ্ঠা ১৪৭)।

একটু ভাবুন তো, একটি নিরাপরাধ মেয়েকে টেনে-হিচড়ে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলছে, পাশে মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন সক্কলে দাঁড়িয়ে ‘বল হরি বল’ কীর্তন গেয়ে নিজেদের স্বর্গে যাবার আয়োজন করছে, ভাবতেই গা গুলিয়ে উঠে! 

মানুষ কী পরিমাণ ধর্মান্ধ হলে এরকম কাজ করতে পারে? ‘ধর্ম’ নামক আফিমীয় মাদক মানুষকে কতটুকু নির্বোধ-মানবিকতাশূন্য বানিয়ে দেয়, তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে সতীদাহ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন