আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪

মডারেট মুসলিম কখনো মুসলিমই নয়

লিখেছেন ক্যাট ম্যান

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা বলেছেন, আইসিল ইসলাম সম্মত নয়। তাঁর মতে মডারেট ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। মডারেট ইসলামে কোনো প্রকার অশান্তির সুযোগ নেই। তাই সনাতন ইসলামের নামে আইসিল যে বর্বরতা চালাচ্ছে তা অনৈসলামিক।

প্রেসিডেন্টে ওবামার এমন চিন্তা শুধু অজ্ঞতাপ্রসূতই নয়, বরং এটি মারাত্মকভাবে কুরআন অবমাননার শামিল। মডারেট ইসলাম বা মডারেট মুসলিম ধারণাসমূহ পাশ্চাত্যের আবিষ্কার। এই সমস্ত ধারণা সহি ইসলামকে বিকৃত করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে করে মুসলমানগন অশান্তির ধর্ম ইসলামের বর্বরতা ও অজ্ঞতাকে ভুলে নিবীর্য নপুংসক শান্তিপ্রিয় বিকৃত মুসলমানে পরিণত হয়, সেই অসৎ উদ্দেশ্যেই পাশ্চাত্যের ইহুদি-নাসারা বুদ্ধিজীবীগণ 'মডারেট ইসলাম' ও 'মডারেট মুসলিম'-এর মত ঈমানবিধ্বংসী অনৈসলামিক ধারণার জন্ম দিয়েছেন। তাই ইসলামপ্রিয় বর্বর তৌহিদি জনতার এই মূহুর্তের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, ইসলামকে শান্তির ধর্ম বলার অপরাধে পাশ্চাত্যের সকল অনৈসলামিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দুর্বার ইসলামি জঙ্গি আন্দোলন গড়ে তোলা।

যারা আল-কুরআনের প্রকৃত শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়ে ইসলামকে শান্তির ধর্ম দাবি করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যে আল-কুরআনে বলা হয়েছে:
আমি তো আসমান, যমীন ও পর্বতমালার প্রতি এই আমানত পেশ করিয়াছিলাম, উহারা ইহা বহন করিতে অস্বীকার করিল এবং উহাতে শংকিত হইল, কিন্তু মানুষ উহা বহন করিল; সে তো অতিশয় জালিম, অতিশয় অজ্ঞ।
(সূরা আহযাব, ৭২)
উক্ত আয়াতের মূল শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ তার আমানত অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করার জন্য আকাশ, ভূমি ও পাহাড় সমূহকে আহ্বান জানিয়েছিলেন; কিন্তু তারা প্রত্যেকেই আল্লাহর মনোনীত আমানত ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। বরং আকাশ, ভূমি ও পাহাড় সমূহ আল্লাহর নিকট থেকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত পেয়ে শংকিত হয়। তারা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় যে, আল্লাহর এই আমানত যা ইসলাম নামক ব্র্যান্ডের আড়ালে পৃথিবীতে চালানোর অপপ্রয়াস চলছে , তা পৃথিবী ও পৃথিবীবাসীর জন্য মহা অশান্তির কারণ হবে। সঠিক বোধবুদ্ধিসম্পন্ন ও যুক্তিনিষ্ঠ কোনো সত্তার পক্ষে ইসলাম নামক এমন হীন আমানত গ্রহণ করা সম্ভবপর নয়। একমাত্র অত্যাচারী, বর্বর, অসভ্য, অজ্ঞ, মূর্খের পক্ষেই ইসলামি ব্র্যান্ডের এমন হীন আমানত গ্রহণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আকাশ, ভূমি ও পাহাড়সমূহ সচেতনভাবে আল্লাহর মনোনীত আমানত ইসলামের মহা অপকারিতা উপলব্ধি করতে পেরে তা গ্রহণ ও বহনে অস্বীকৃতি জানায়। 

কিন্তু বোকা মানুষ, যারা আজ বর্বর ও অজ্ঞ মুসলমান হিসেবে বিশ্বে পরিচিত, তারা আল্লাহর মনোনীত আমানত ও বর্বরতার মোক্ষম হাতিয়ার ইসলামকে গ্রহণ করে। ফলস্বরূপ পৃথিবীতে মহা অশান্তির সূত্রপাত হয়। আল্লাহর আমানতের তাত্পর্য এমনই যে, বিশ্বের সর্বত্র ইসলামি হত্যাযজ্ঞ, ইসলামি ধর্ষণযজ্ঞ, ইসলামি লুটতরাজ, ইসলামি দাসতন্ত্র, ইসলামি জঙ্গি কার্যক্রম, ইসলামি শোষণ-নির্যাতন অদ্যাবধি অব্যাহত গতিতে চলমান।

তাই আল্লাহর আমানত বহনকারী অসভ্য, বর্বর ও অজ্ঞ মুসলমানদের এমন কর্মকাণ্ডে খুশি হয়ে আল্লাহ-সুবহানাহুতাআলা তাদেরকে 'অতিশয় জালিম ও অতিশয় অজ্ঞ' মর্মে সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন। 

আল্লাহ প্রদত্ত উক্ত সার্টিফিকেটের বদৌলতেই আমরা জানতে ও উপলব্ধি করতে সক্ষম হই, আল্লাহর নবী মুহম্মদ একজন জালিম ও অজ্ঞ নবী (সোবানাল্লা), মুহম্মদের অনুসারী মুসলমানগণ প্রত্যেকেই জালিম ও অজ্ঞ (সোবানাল্লা); যেখানেই ইসলাম, সেখানেই জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন ও অজ্ঞতার চরম নিদর্শন বিদ্যমান। 

মুসলমানদের স্মারক হলো বর্বরতা ও অজ্ঞতা। তারই উত্তম দৃষ্টান্ত বর্তমান বিশ্বে স্থাপন করে চলেছে মধ্যপ্রাচ্যের আইসিল, আইসিস, আল-কায়েদা, হেজবুল্লাহ ; আফ্রিকার বোকো হারাম, আল-শাবাব ; এশিয়ার তালেবান, লস্কর- ই তৈয়বা, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদের মতো ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী। ওই সকল প্রকৃত আল্লাহওয়ালা বর্বর জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যারা বিভ্রান্তিকর প্রচার-প্রচারণা চালায়; সেই সব কাফের মুনাফেকদের ষড়যন্ত্র থেকে অজ্ঞ ও বর্বর মুসলমানদের সাবধান থাকতে হবে। মডারেট ইসলাম ও মডারেট মুসলিম ইত্যাকার অনৈসলামিক ধুয়া তুলে কেউ যেন ছাগু মুসলিমদের জঙ্গি ঈমানি চেতনায় ধ্বস নামাতে না পারে, সে ব্যাপারে অজ্ঞ ও বর্বর মুসলমানদের সদা সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে, বর্বর ছাগু মুসলমানদের যথাযথ স্বীকৃতিসূচক আল্লাহ-প্রদত্ত সার্টিফিকেট ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

চিত্রপঞ্চক - ৯৬ (হ্যালোউইন স্পেশাল)





মহাম্যাডের ঘাম ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মোবারকের মাজেজা

(লেখাটা পড়ার সময় বারবার মনে হচ্ছিলো, ইছলামের নবীকে নিয়ে লেখক বাড়াবাড়ি রকমের রূপকথার গল্প ফেঁদে বসেছেন। ভুলটা ভাঙলো একেবারে শেষে গিয়ে। তাই লেখাটা শেষ পর্যন্ত পড়া আবশ্যক।)

লিখেছেন নিলয় নীল

পৃথিবীর সর্বচ্রেষ্ট ধর্ম ইচলাম হলো সমস্ত বিগ্যানের বিগ্যান। আর ইচলামী বিগ্যানুসারে সমস্ত বিগ্যানের মুলে রয়েছেন একজন, তিনি হলেন নবী মহাম্যাড। এই পৃথিবী আকাশ, বাতাস, গাছ, নদী, ফুল, ফল, মানুষ ও অন্যান্য পশুপাখীসহ সব কিছুর আদি এবং একমাত্র উৎস হচ্ছে আমাদের পেয়ারের নবী মহাম্যাড। আল্লাহ্‌ আসমানে শাজারাতুল ইয়াক্কীন নামক চারটি শাখাবিশিষ্ট প্রকাণ্ড অথচ নজরকাড়া সুন্দর একটি বৃক্ষ সৃষ্টি করেছিলেন। এই বৃক্ষে আল্লাহ্‌ তাহার আপন নূর হইতে আমাদের পেয়ারের নবী মহাম্যাডের নূর সৃষ্টি করে তা বহু সংখ্যক সাদা মুক্তা দিয়ে খুব সাবধানতার সাথে জড়িয়ে রেখে সুন্দর ময়ূর পাখির মতো আকার দান করে হাজার হাজার বছর সে গাছের ওপর উপবিষ্ট করে রাখেন। 

পাখিটি সেই গাছের ওপর বসে ৭০ হাজার বছর যাবত আল্লাহর মহিমা, তাসবীহ-তাহলীল, ইবাদত বন্দেগীতে নিমগ্ন থাকেন। এরপর আল্লাহ্‌ খুব আকর্ষণীয় একটি আয়না বানিয়ে পাখিটির সামনে তুলে ধরেন। পাখিটি আয়নার মধ্যে তার মনোরম ও অতি সুন্দর আকৃতি দেখে আল্লাহর কাছে শোকরানা আদায় করেন। এইভাবে চলে গেলো আরও অনেক বছর। ময়ূর আকৃতির পাখিটি আরও অনেক বছর সেই গাছে বসে আল্লাহার জিকির করার এক পর্যায়ে আল্লাহ্‌ রহমতের নজরে দৃষ্টিপাত করেন। তাতে পাখিরূপ উক্ত নূরে মহাম্যাডী লজ্জায় জড়সড় হয়ে পড়েন এবং ঘামতে থাকেন। 

আল্লাহর এই মহব্বতের দৃষ্টির ফলে নূরে মহাম্যাডী থেকে যে ঘাম বের হয়, তা থেকেই মহান আল্লাহ্‌ আঠারো হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করেন। এ কারণেই রাচুলের আরেক নাম উম্মী রাখা হয়েছে। আরবী ভাষায় উম্মন শব্দের অর্থ হচ্ছে মূল। সুতরাং নবী মহাম্যাডই হলেন সকল সৃষ্টির আদি উৎস। অতঃপর পাখিরূপ নূরে মহাম্যাডী হাজার হাজার বছর তথায় অবস্থান করে আল্লাহার ইবাদত বন্দেগীতে মগ্ন থাকেন। তারপর আল্লাহ্‌ নূরে মহাম্যাডী হতে সমস্ত নবী ও রাসুলগনের রূহসমূহ পয়দা করেন। সেই সব রূহকে কালেমা ই তাইয়্যিব লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ পড়ার নির্দেশ দিলেন। 

আল্লাহ্‌র নির্দেশ পেয়ে সকল নবী রাচুলগণ উক্ত কলেমা পাঠ করে হযরত মহাম্যাডকে নবী বলে স্বীকার করে নেন। এ কারণেই তিনি হলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন বা প্রেরিত মহাপুরুষদের সর্দার। এ থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, তিনি খাতেমুল আম্বিয়াই নন, তিনি ফাতেহুল আম্বিয়া অর্থাৎ নবীগণের সূচনা। আল্লাহ্‌ সর্বপ্রথম হযরত মহাম্যাডের নূরকেই সৃজন করেছেন যার থেকে সকল কিছুর সৃষ্টি। 

এর কিছুদিন পর মহান আল্লাহ্‌ একটি অতি মনোরম ঝাড়বাতি নির্মাণ করলেন। ঝাড়বাতি নির্মাণ করে নিজের আকৃতিতে নবীর আকৃতি তৈরি করে উক্ত ঝাড়বাতির মধ্যে অতি সযতনে সংরক্ষণ করতে থাকেন। রাসুলেফাকের সংরক্ষিত আত্মার চারপাশে সকল মানবাত্মা ঘুরে ঘুরে হাজার হাজার বছর ধরে আল্লাহার তাসবিহ-তাহলীল পাঠ করতে থাকেন। একদিন আল্লাহ্‌ সকল মানবাত্মাকে নির্দেশ প্রদান করেন, হে আত্মাসমূহ, তোমারা সবাই মিলে আমার বন্ধু (ইচলামী বিগ্যানুনুযায়ী আল্লহর কাছে সব মানুষ দাস হলেও শুধুমাত্র মহাম্যাডই তার বন্ধু) হযরত মহাম্যাডের পবিত্র নূরের দিকে একবার দৃষ্টিপাত করো। আল্লাহার নির্দেশে সকল মানবাত্মা নূর এ মহাম্যাডির দিকে দৃষ্টি দিলো। ফলশ্রুতিতে – 

- যে মানবাত্মাগুলো সর্বপ্রথম রাচুলের মাথা মোবারকে দৃষ্টি দেয়, তারা পৃথিবীতে খলিফা ও রাজা বাদশা হবার সৌভাগ্য অর্জন করে। 

- যে সকল মানবাত্মা হুগুরের পবিত্র কপাল মোবারক দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছে, তারা দুনিয়াতে নিঃস্বার্থ জননেতা হয়েছে। 

- যে রুহুগুলো রাচুলের ভ্রু মোবারক দেখতে পেয়েছিলো, তারা দুনিয়াতে ভালো শিল্পী হয়েছে। 

- যারা কান মোবারক দেখতে পেরেছে, তারা দুনিয়াতে অগাধ ধন দৌলতের মালিক হয়েছে। 

- যারা হুগুরের চক্ষু মোবারক দেখেছিলো, তারা ভালো কুরআনে হাপেজ হতে পেরেছে। 

-  যারা হুগুরের নাক মোবারক দেখেছে, তারা পৃথিবীতে চিকিৎসক ও ভালো আতর (সুগন্ধি) বিক্রেতা হয়েছে।

- যারা নবীজির মুখ দেখেছে, তারা খুবই রোজাদার হয়েছে। 

- যারা তার গলা দেখেছে, তারা বিখ্যাত ওয়াজ ও উপদেশদানকারী এবং মুয়াজ্জিন হয়েছে। 

- যারা তার দাড়ি দেখেছে, তারা খ্যাতিমান যোদ্ধা হয়েছে। 

- যারা তার উভয় হাতের তালু দেখতে পেয়েছে, তারা সৌভাগ্যবান ও দানশীল হয়েছে। 

- যারা তার উভয় হাতের পিঠ দেখতে পেয়েছে, তারা কৃপণ হয়েছে। 

- যারা তার বুক দেখেছে, তারা প্রকৃত আলেম ও মুজতাহিদ হয়েছে। 

- যারা তার পার্শ্বদেশ অবলোকন করেছে, তারা জিহাদি হয়ে গাজি বা শহীদ হয়েছে। 

- যারা হাঁটু দেখেছে, তারা রুকু সিজদা দিতে শিখেছে। 

- যারা পা দেখেছে, তারা ভ্রমণকারী ও শিকার কাজে পারদর্শিতা লাভ করেছে। 

- আর যারা দুর্ভাগ্যবশত নূরে মোহাম্মদীর পবিত্র নূরানি শরীরের কিছুই দেখতে পায়নি, তারা ইয়াহুদী, নাসারা, কাফের, মুশরিক প্রভৃতি হয়েছে। 

ওপরের ইচলামী বিগ্যান থেকে একথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে, সবকিছুর সৃষ্টি হয়েছে আমাদের পেয়ারের নবী আল্লাহ্‌র বন্ধু মহাম্যাড থেকে। অবিশ্বাসীরা মহাম্যাডের কিছুই দেখতে পায়নি বলেই তারা অবিশ্বাসী হয়েছে। 

এখন আপনাদের কাছে প্রশ্ন মহাম্যাডের আর এমন কোন অঙ্গ থাকতে পারে, যা দেখে দুনিয়ায় মানুষরা কামুক হয়েছিলো? 

(তথ্যসূত্র: "মরনের আগে ও পরে কবরের খবর"; লেখন – ইমাম গাযযালী (রহঃ), বাংলা অনুবাদ – মাওলানা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জাহেরী।) 

ইছলাম: কাটে গর্দান জোড়ায় জোড়ায়



বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৪

ধর্মবিদ্রূপানন্দ - ১৮

লিখেছেন Mosammot Rinee Khatun

৫২.
ত্যাগ ছাড়া ধার্মিক হওয়া যায় না; আর সে ত্যাগ হতে হবে মনুষ্যত্ব গঠনের অতি প্রয়োজনীয় উপাদান বিদ্যা, বুদ্ধি, কাণ্ডজ্ঞান, সর্বোপরি আপনার মগজ। এই উপাদানগুলো যত ত্যাগ করতে পারবেন, আপনি ততবেশী ধাম্মিক হতে পারবেন।

৫৩.
আল্লাহ সর্বশক্তিমান, কিন্তু তাকে ও বন্ধুর অবমানকারীর কিছুই সে করতে পারে না। এক্ষেত্রে রাষ্টের সাহায্য নিয়ে ধর্মঅবমাননাকারীর শাস্তির দাবি করা হয়। আল্লাহর শক্তিমানত্বের অসহায়ত্বে অামার সুদু হাসি ফায়।

৫৪.
একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে মা-বোনেরা পাকি হানাদারদের হাতে ধর্ষণের স্বীকার হয়েছেন, তাঁদেরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে বলি বীরাঙ্গনা।
অার যে বাংলাদেশি ললনারা পাকি প্রেমে বুঁদ হয়ে "Afridi mary me" পোস্টার বুকে ধারণ করে গর্ভিত হয়, তারা বারাঙ্গনা।

মুর্গি যখন মুক্তিদাতা

নিজের পাপের ভার কোনও জীবজন্তুর ওপরে চাপিয়ে দিয়ে পাপমুক্ত হবার ইডিয়টিক প্রথা আছে অনেক ধর্মেই। মুছলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টানদের মতো ইহুদিদের ভেতরেও এমন একটি অরুচিকর রিচুয়াল প্রচলিত আছে। একটি জীবন্ত মুর্গিকে কারো মাথার ওপর তিনবার ঘোরানো হয় এবং এর ফলে নাকি সেই ব্যক্তির সমস্ত পাপ চলে যায় ওই মুর্গির ভেতরে। তারপর মুর্গিটিকে জবাই করে খেয়ে ফেলা হয় বা দান করা হয় দরিদ্রদের। এই রিচ্যুয়ালের নাম Kapparot.




এমনকি হাসপাতালে রোগীর বিছানায় জীবন্ত মুর্গি!

ধর্মান্তিক সমাচার - ০১

লিখেছেন হাইয়্যা আলাল ফালাহ্‌

১.
ধর্ম নিয়ে আস্তিক কারও সাথে তর্ক করতে গেলে প্রথমেই শুনতে হয়, “এতগুলো মানুষ তো আর ভুল হতে পারে না” কিংবা “আপনার কি মনে হয়, দুনিয়ার সবাই বোকা আর আপনি একাই চালাক?” নিজের ভুল বুঝতে পারি তখন। বুঝি যে, যুক্তি আর প্রমাণ দিয়ে বলদের সাথে কথা বলা যায় না। তখন আমিও জঙ্গি নাস্তিক হয়ে যাই। আমি বলি, “আজ থেকে যদি বাংলাদেশের সব মানুষ বাম হাত দিয়ে ভাত খাওয়া শুরু করে, আপনিও তাই করবেন?” দৃঢ় কন্ঠে উত্তর আসে, “হ্যাঁ, করবো।” তখন আমি বলি, “ধুর ভাই! সাইডে যান। যে লোক মাইনষের দেখাদেখি গু খায়, তার লগে আমি কথা কই না”

২. 
এক পাড়াতো বন্ধুর সাথে সমসাময়িক বিভিন্ন কুসংস্কার (ধর্ম) নিয়ে উচ্চমার্গীয় ও তুলনামূলক আলোচনা করছিলাম। এক পর্যায়ে সে বলে, “তবে যাই কস না কেন, হিন্দুরা সবচেয়ে বোগাস। আর এছলাম সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য।” কারণ জিজ্ঞেস করলাম। বলে, “কী সব মূর্তি-টূর্তি নিয়া হিন্দুগুলা পূজা করে। এগুলার কোনো ভিত্তি আছে?” আমি বললাম, “শেষ কবে আল্লাহ্‌র সাথে বইসা চা খাইছস? ঐ হালায়ও তো ডাকলে আসে না। দেখলামও না একদিন। খালি নামই শুনলাম।” সে উত্তেজিত হয়ে বললো, “আল্লাহ্‌র কসম! আল্লাহ আছে। আমাদের পেয়ারের নবীজী দেখছে”। 

তখন আমার ওপর ওহী নাজিল হলো এই মর্মে: “কল্যাণের শপথ! নিশ্চয়ই আপনার চারপাশে অজস্র ছাগু আবর্তিত হয়। আমি তাদের মগজকে করে দিয়েছি তাদের বিচির চেয়ে ছোট আকৃতির। যেন তারা তালগাছের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত থেকে সারা জীবন পার করে দেয়। এদের সাথে তর্ক না করে তাল খেয়ে গাছের তক্তা এদের দিয়ে দিন। নিশ্চয়ই আমি সর্বজ্ঞাত ও কৌশলী।”

আমি বললাম, “দোস্ত, তুই ঠিক। এবার চা আর সিগারেট এর বিলটা দিয়া দে”।

৩.
ছোটবেলায় একবার নামাজে ছেজদারত অবস্থায় আমার হঠাৎ মাথায় আসলো, কেয়ামতের দিন যদি দেখি আল্লাহ্‌ নাই, দেবী দূর্গা দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সবার সামনে... তখন কী হবে? তো আমার মত আরও অনেকের মনে নিশ্চয়ই এসব আজেবাজে চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছে শয়তান। তাদের জন্য বাজারে এসেছে নতুন কালেমা: কলেমা উলতিমাতুল ফালাহ্‌। এই কালেমা ঈশ্বরভেদে পরিবর্তিত হয়। উদাহরণ এরশাদ করা গেল:
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (কিয়ামতে যদি আল্লাহ্‌র সামনে পড়েন)
লা ইলাহা ইল্লাদ্দুর্গা, মুহাম্মাদুর রাসুলুদ্দূর্গা (কিয়ামতে যদি দূর্গার সামনে পড়েন)
লা ইলাহা ইল্লাজ্জিউস, মুহাম্মাদুর রাসুলুজ্জিউস (কিয়ামতে যদি জিউসের সামনে পড়েন)
এভাবে কাল কেয়ামতের দিন ফ্লাইং স্প্যাগেটি মনস্টার, এলোহিম, জিসাস, রা’ থেকে শুরু করে ম্যারাডোনা পর্যন্ত সবাইকে সামলাতে পারবেন। মুহাম্মদের ব্যাপারে উপস্থিত ঈশ্বরের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত না হলে কলেমার শেষ অংশ বাদ দিতে পারেন। 

বি.দ্র. অনেক কষ্ট করে এই আলটিমেট কলেমা নাজিল করিয়েছি। কপিরাইট সংরক্ষিত। আর এর পরও যদি মনে সংশয় থাকে, তাহলে আপনি একটা নাস্তিক। আপনার চিন্তার কিছু নাই। নিশ্চিন্তে মইরা যান। মরার পরে কিচ্ছু নাই।

ইছলামে পারফিউম গন্ধহীন, হুইস্কি অ্যালকোহলহীন

ইছলামে যা কিছু হারাম, সেসবের হালাল ভার্শন বের করার উদগ্র প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় মুছলিমদের ভেতরে। হালাল বিয়ার, হালাল মদ তো বটেই, এমনকি হালাল বেকনও বাজারে লভ্য। হালাল সেক্স শপও আছে। নাছারাদের লোভনীয় খাদ্য-পানীয় ও অন্যান্য উপকরণের ইছলামী বিকল্পের এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন - হালাল হুইস্কি

একমাত্র ইছলামেই সম্ভব অ্যালকোহলবিহীন বিয়ার-মদ-হুইস্কি। এ পথ অবশ্য নবীজিই দেখিয়ে গিয়েছে। 

হাদিসে আছে (Abu Dawud Collection: ::Book Number 32:: Hadith # 4037): মেয়েদের ব্যবহার্য পারফিউমের রং থাকবে, কিন্তু কোনও গন্ধ থাকতে পারবে না। অর্থাৎ গন্ধবিহীন পারফিউম! 

বিনুদুনময় ইছলাম! আমার ধারণা, হারাম জিনিস হালালকরণের এই ইছলামী ধারার পরবর্তী আকর্ষণ: যৌনাঙ্গহীন হালাল পতিতা। 

পোস্টার বানিয়ে দিয়েছেন দাঁড়িপাল্লা ধমাধম


বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৪

কুরানে বিগ্যান (পর্ব-৫৩): মদিনা সনদ তত্ত্ব - তথাকথিত! ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – ছাব্বিশ

লিখেছেন গোলাপ

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭ > পর্ব ৪৮ > পর্ব ৪৯ > পর্ব ৫০ > পর্ব ৫১ > পর্ব ৫২

মুহাম্মদ ও তাঁর প্রত্যক্ষ অনুসারীরা কী রকম অমানুষিক নৃশংসতায় বিরুদ্ধবাদীদের দমন করেছিলেন, তার ধারাবাহিক আলোচনা “ত্রাস হত্যা ও হামলার আদেশ” এর পূর্ববর্তী পর্বগুলোতে করা হয়েছে। তাঁর মৃত্যু-পরবর্তী সময়ে তাঁর অনুসারীরা সে সকল শিক্ষার ধারাবাহিকতা অনুগতভাবে পালন করেছেন ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার চেষ্টায়। তার জের চলছে আজও। মুহাম্মদের মৃত্যুর ১৪০০ বছর পরও মুহাম্মদ ও তাঁর ইসলামের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার বিভীষিকা পৃথিবীবাসী প্রতিনিয়তই প্রত্যক্ষ করছেন।

ইসলামের ইতিহাস পাঠের সময় একটি সত্য সর্বদায় মনে রাখা অত্যন্ত আবশ্যক!

সেই সত্যটি হলো:

‘আদি উৎসে বর্ণিত ইসলামের সমস্ত ইতিহাস সংকলিত ও লিখিত হয়েছে ইসলাম-বিশ্বাসীদের কল্যাণে। লেখকরা যাদের বর্ণনার ভিত্তিতে মুহাম্মদের স্বরচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থ কুরান (আল্লাহর রেফারেন্স দিয়ে মুহাম্মদের বক্তব্য) এবং হাদিস (আল্লাহর রেফারেন্স না দিয়ে মুহাম্মদের বক্তব্য ও কর্মের ইতিহাস) সংকলন করেছেন ও সিরাত (মুহাম্মদের জীবনী) রচনা করেছেন, সে সকল সংকলনকারী ও বর্ণনাকারীর প্রত্যেকটি সদস্যই (এক শত ভাগ) ছিলেন বিশিষ্ট ইসলাম বিশ্বাসী।

আর ইসলামের অবশ্য অত্যাবশ্যকীয় প্রাথমিক সংজ্ঞা (ইমান: আল্লাহ এবং মুহাম্মদে বিশ্বাস) অনুযায়ী কোনো ইসলাম বিশ্বাসীরই মুহাম্মদের কোনো কর্মের সামান্যতম সমালোচনা, কটূক্তি বা নিন্দা করার কোনই ক্ষমতা নেই

মুহাম্মদের প্রতিটি কর্মকাণ্ডকে বিভিন্ন কসরতের মাধ্যমে বৈধতা প্রদান এবং মুহাম্মদের সাথে সুর মিলিয়ে অবিশ্বাসীদের যাবতীয় ইতিহাস, শিক্ষা-সংস্কৃতিকে আইয়্যামে জাহিলিয়াত আখ্যায় অত্যন্ত হেয় প্রতিপন্ন করাই প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসীর অত্যাবশ্যকীয় ইমানী দায়িত্ব। তাঁদের সামনে অন্য কোনো পথই খোলা নেই। ইসলাম ১০০% সমগ্রতাবাদী মতবাদ। এই ইমানী দায়িত্বে অন্যথাকারী কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কখনোই নিজেকে "ইসলাম-বিশ্বাসী" বলে দাবী করতে পারেন না।

অর্থাৎ,

ইসলামের সকল ইতিহাস সম্পূর্ণরূপে একপেশে (One-sided)! কারণ সেই ইতিহাসের প্রবর্তকরা হলেন শুধুই মুহাম্মদ (কুরান) ও তাঁর নিবেদিতপ্রাণ অনুসারীরা (সিরাত ও হাদিস); আত্মপক্ষ সমর্থনে পরাজিত বিরুদ্ধবাদী কাফেরদের প্রামাণিক সাক্ষ্যের কোনো দলিল ইসলামের ইতিহাসের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই অবিশ্বাসী, সমালোচনাকারী ও বিরুদ্ধবাদীদের বিরুদ্ধে মুহাম্মদ ও তাঁর নিবেদিতপ্রাণ অনুসারীদের বর্ণিত অপবাদ ও অভিযোগের ইতিহাসের সঠিকত্ব প্রমাণের কোনো সুযোগ নেই (পর্ব-৪৪)।

মুহাম্মদের যে কোনো আদেশ-নিষেধ ও কর্মকাণ্ডের সামান্যতম সমালোচনাকারী প্রতিটি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে মুহাম্মদ "আল্লাহ ও তার রসুলের (ইসলামের) শত্রু"বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর তাঁর অনুগত অনুসারীরা তাঁর সাথে সুর মিলিয়ে ইসলামের সমালোচনাকারী যে কোনো ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে ইসলামের শত্রু (Enemies of Islam) বলে আখ্যায়িত করে আসছেন ইসলামের জন্মলগ্ন থেকেই। ইসলামের এই শত্রুদের কীভাবে শায়েস্তা করতে হবে, তা আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর প্রতিটি অনুসারীদের হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। কুরান, হাদিস ও মুহাম্মদের জীবনীগ্রন্থের পাতায় পাতায় বর্ণিত আছে সে সমস্ত কলা-কানুন।

তাই,

অনিবার্য কারণেই ইসলামের যাবতীয় ইতিহাস অত্যন্ত তোষামোদ (সর্বাবস্থায় মুহাম্মদের বন্দনা) ও পক্ষপাতদুষ্ট।

এই অত্যন্ত তোষামোদ ও পক্ষপাতদুষ্ট ইতিহাস থেকে সত্যকে আবিষ্কার করা মোটেওসহজ কাজ নয়। আর সেই সত্যকে আবিষ্কারের পর তা প্রকাশ করা ইসলাম-বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী নির্বিশেষে প্রতিটি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তি, জাতি ও গোষ্ঠীর জন্য এক অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। লক্ষ লক্ষ নিবেদিতপ্রাণ ইসলাম-বিশ্বাসী এ সকল সত্য প্রকাশকারী "ইসলামের শত্রুদের" বিভিন্ন কায়দায় শায়েস্তা ও প্রয়োজনে খুন করার ইমানী দীক্ষায় দীক্ষিত।

“কোন অর্বাচীন নিতে চায় তাঁর কর্ম, পেশা ও মৃত্যুঝুঁকি? কোন অর্বাচীন রাজনৈতিক নেতা নিতে চায় তাঁর দেশ ও জাতিকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে? সবচেয়ে সহজ যে কাজটি তা হলো, ‘Shut up your mouth! Say, 'Islam means PEACE’! Praise Muhammad and his GREAT ideology!’"

এ ভাবেই রচিত হয়েছে ইসলামের যাবতীয় ইতিহাস! তাই, অতিরিক্ত অনুসন্ধানী দৃষ্টি না দিলে বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।’  

>>> কালের পরিক্রমাকে অতিক্রম করে মুহাম্মদের জীবন-ইতিহাসের (সিরাত ও হাদিস) যে ঘটনাগুলোর বর্ণনা রেফারেন্স হিসাবে আমাদের কাছে মজুত আছে, তা প্রথম লেখা হয়েছে বর্ণিত সেই ঘটনা গুলো সংঘটিত হওয়ার এক থেকে দুই শতাব্দীরও অধিক পরে। কালের এই দীর্ঘ পরিক্রমাকে অতিক্রম করে “মুহাম্মদের সর্বপ্রথম যে পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থটি” আমাদের হাতে পৌঁছেছে, তা লেখা হয়েছে মুহাম্মদের মৃত্যুর ১১০ বছরেরও অধিক পরে। সেই বইটি হলো মুহাম্মদ ইবনে ইশাক ইবনে ইয়াসার (৭০৪-৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দ) রচিত 'সিরাত রসুল আল্লাহ'। তাই, মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের এই গ্রন্থটিই ইবনে ইশাক পরবর্তী ঐতিহাসিকদের মূল রেফারেন্স। আর, ইবনে হিশাম সম্পাদিত ‘সিরাত রাসুল আল্লাহ’ বইটিই হলো মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের মূল বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্করণ (বিস্তারিত: পর্ব- ৪৪)।

পরবর্তীতে গত ১৪০০ বছর যাবত মুহাম্মদের যে অসংখ্য সম্পূর্ণ ও অসম্পূর্ণ জীবনীগ্রন্থ বিভিন্ন লেখকরা বিভিন্নভাবে (প্রয়োজন মত যোগ-বিয়োগ ও সঠিক-বিকৃত তথ্য/উদ্ধৃতি সহকারে) লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁদের সবাইকেই এই গ্রন্থটির ওপরই বিশেষভাবে নির্ভরশীলহতে হয়েছে।

এই গ্রন্থটির অধিকাংশ ঘটনার বর্ণনায় "তথ্যসূত্র/উৎসের” (কোন কোন মানুষের কাছ থেকে ধারাবাহিকভাবে তা সংগ্রহীত হয়েছে) উল্লেখ থাকলেও বহু স্থানে ঘটনার বর্ণনায় লেখক মুহাম্মদ ইবনে ইশাক সেই ঘটনার তথ্যসূত্র/উৎসের কোনোই উল্লেখ করেননি। অনিবার্য কারণেই "উৎসের উল্লেখ" না থাকায় সে সকল ঘটনার বিশ্বাসযোগ্যতা আরও প্রশ্নবিদ্ধ!

আদি মদিনাবাসী ইহুদি গোত্রের বিভিন্ন ব্যক্তির ওপরমুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের অনৈতিক আগ্রাসী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং বনি কেউনুকা ও বনি নাদির গোত্রের সমস্ত মানুষকে বিতাড়িত করে তাঁদের সর্বস্ব লুণ্ঠন (পর্ব ৫১-৫২) ও বনি কুরাইজা গোত্রের সমস্ত মানুষের ওপর অমানুষিক গণহত্যাযজ্ঞ ও তাঁদেরকে দাস-দাসীতে রূপান্তর (পর্ব-১২) করে তাঁদের সর্বস্ব লুণ্ঠন করার বৈধতা দিতে ইসলামী বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অ-পণ্ডিতরা মুহাম্মদ ইবনে ইশাক রচিত "মদিনা সনদ নামক এক উপাখ্যানের” উদ্ধৃতি উপস্থাপন করেন।

অত্যন্ত লক্ষণীয় বিষয় এই যে, "মদিনা সনদ" নামক এই উপাখ্যান ও তার শর্তগুলোর বিবরণ এমনই একটি বর্ণনা যাতে মুহাম্মদ ইবনে ইশাক কোনোরূপ উৎসের উল্লেখ করেননি!

ইবনে হিশাম সম্পাদিত ‘সিরাত রাসুল আল্লাহ বইটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন A. GUILLAUME. বইটির ২৩১ পৃষ্ঠায় হঠাৎ করেই "The Covenant between the Muslims and the Medinans and with the Jews" শিরোনামে মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের বর্ণনা শুরু হয়েছে, কোনো রূপ তথ্যসূত্র বা উৎসের (Isnad) উল্লেখ না করেই।

কী ছিল সেই "মদিনা সনদ" নামের শান্তিচুক্তি এবং কী তার শর্ত?

মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের বর্ণনা মতে "মদিনা সনদ নামক চুক্তিটি”ছিল মদিনায় পালিয়ে আসা (হিজরত) মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারী মুসলমানদের সাথে মদিনায় বসবাসরত স্থানীয় ইহুদী ও অন্যান্য অবিশ্বাসী গোত্রের পারস্পরিক শান্তিচুক্তি।

ইবনে ইশাকের বর্ণনা মতে চুক্তিটি ছিল নিম্নরূপ ([**] ও নম্বর যোগ- লেখক): [1] [2]

ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। - অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ - লেখক।]

The Covenant between the Muslims and the Medinans and with the Jews                
[In Islamic history it is known as “THE MEDINA CHARTER”, 622 CE]
‘The apostle wrote a document concerning the emigrants and the helpers in which he made a friendly agreement with the Jews and established them in their religion and their property, and stated the receiprocal obligations, as follows:
In the name of God, the Compassionate, the Merciful.
(1) This is a document from Muhammad the prophet [governing the relations] between the believers and Muslims of Quraysh and Yathrib, and those who followed them and joined them and labored with them.
(2) They are one community (umma) to the exclusion of all men.
(3) The Quraysh emigrants according to their present custom shall pay the bloodwit within their number and shall redeem their prisoners with the kindness and justice common among believers.
(4) The B. ‘Auf according to their present custom shall pay the bloodwit they paid in heathenism; every section shall redeem its prisoners with the kindness and justice common among believers. The B. Saida, the B. ‘l-Harith, and the B. Jusham, and the B. al-Najjar likewise.
(5)  The B. ‘Amr b. ‘Auf, the B. al-Nabit and the B. al-‘Aus likewise.
(6)  Believers shall not leave anyone destitute among them by not paying his redemption money or bloodwit in kindness.
(7) A believer shall not take as an ally the freedman of another Muslim against him. 
(8) The God-fearing believers shall be against the rebellious or him who seeks to spread injustice, or sin or enmity, or corruption between believers; the hand of every man shall be against him even if he be a son of one of them. 
(9) A believer shall not slay a believer for the sake of an unbeliever, nor shall he aid an unbeliever against a believer. 
(10)  God’s protection is one; the least of them may give protection to a stranger on their behalf.  Believers are friends one to the other to the exclusion of outsiders. 
(11) To the Jew who follows us belong help and equality.  He shall not be wronged nor shall his enemies be aided. 
(12) The peace of the believers is indivisible. No separate peace shall be made when believers are fighting in the way of God. Conditions must be fair and equitable to all. 
(13) In every foray a rider must take another behind him. 
(14) The believers must avenge the blood of one another shed in the way of God. 
(15) The God-fearing believers enjoy the best and most upright guidance. 
(16)  No polytheist shall take the property of person of Quraysh under his protection nor shall he intervene against a believer. 
(17) Whoever is convicted of killing a believer without good reason shall be subject to retaliation unless the next of kin is satisfied (with blood-money), and the believers shall be against him as one man, and they are bound to take action against him.
(18)  It shall not be lawful to a believer who holds by what is in this document and believes in God and the last day to help an evil-doer or to shelter him. The curse of God and His anger on the day of resurrection will be upon him if he does, and neither repentance nor ransom will be received from him. 
(19) Whenever you differ about a matter it must be referred to God and to Muhammad.
(20)The Jews shall contribute to the cost of war so long as they are fighting alongside the believers. 
(21) The Jews of the B. ‘Auf are one community with the believers (the Jews have their religion and the Muslims have theirs), their freedmen and their persons except those who behave unjustly and sinfully, for they hurt but themselves and their families. 
(22) The same applies to the Jews of the B. al-Najjar, B. al-Harith, B. Sai ida, B. Jusham, B. al-Aus, B. Tha'laba, and the Jafna, a clan of the Tha‘laba and the B. al-Shutayba.
(23) Loyalty is a protection against treachery. The freedmen of Tha ‘laba are as themselves. The close friends of the Jews are as themselves. 
None of them shall go out to war save the permission of Muhammad, but he shall not be prevented from taking revenge for a wound.
He who slays a man without warning slays himself and his household, unless it be one who has wronged him, for God will accept that. 
(24)The Jews must bear their expenses and the Muslims their expenses. Each must help the other against anyone who attacks the people of this document.
(25) They must seek mutual advice and consultation, and loyalty is a protection against treachery.
(26) A man is not liable for his ally’s misdeeds. The wronged must be helped. 
(27)The Jews must pay with the believers so long as war lasts. 
(28) Yathrib shall be a sanctuary for the people of this document. 
(29) A stranger under protection shall be as his host doing no harm and committing no crime. 
(30)  A woman shall only be given protection with the consent of her family. 
(31)  If any dispute or controversy likely to cause trouble should arise it must be referred to God and to Muhammad the apostle of God. 
God accepts what is nearest to piety and goodness in this document. 
(32)  Quraysh and their helpers shall not be given protection. 
(33)The contracting parties are bound to help one another against any attack on Yathrib. 
(34)  If they are called to make peace and maintain it they must do so; and if they make a similar demand on the Muslims it must be carried out except in the case of a holy war. 
(36) Every one shall have his portion from the side to which he belongs; the Jews of al-Aus, their freedmen and themselves have the same standing with the people of this document in pure loyalty from the people of this document.
(37)  Loyalty is a protection against treachery: He who acquires aught acquires it for himself. God approves of this document. 
(38) This deed will not protect the unjust and the sinner. The man who goes forth to fight and the man who stays at home in the city is safe unless he has been unjust and sinned. God is the protector of the good and God-fearing man and Muhammad is the apostle of God.’ [1][2]

>>> পাঠক, মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের বর্ণিত "মদিনা-সনদ" নামক চুক্তির শর্তাবলীর দিকে খুব মনোযোগের সাথে খেয়াল করুন!

চুক্তির শর্তগুলো পর্যালোচনা করার আগে যে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি মনে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন, তা হলো:

হিজরত পরবর্তী প্রথম অবস্থায় মুহাম্মদ কোনো ইসলামী রাষ্ট্রনায়কের (তাঁর কোনো রাষ্ট্র ছিল না) পদমর্যাদায় ছিলেন না। তিনি ছিলেন অল্প কিছু কাল আগে ইসলামে দীক্ষিত স্বল্প সংখ্যক আদি মদিনাবাসীর (আনসার) সাহায্যের প্রতিশ্রুতির ওপর ভরসা করে মদিনায় সদ্য আগমনকারী স্বেচ্ছানির্বাসিত এক ব্যক্তি। যে ব্যক্তিটির স্ট্যাটাস, কারিশমা ও সফলতার নমুনা হলো তাঁর মক্কায় অবস্থানকালে সুদীর্ঘ ১২-১৩ বছরের অক্লান্ত চেষ্টার ফসল/অর্জন সমাজের নিম্নশ্রেণীর সর্বোচ্চ মাত্র ১৩০ জন অনুসারী (মুহাজির), যাদের সকলে তখনও মদিনায় হিজরত করেন নাই।

সেই পরিস্থিতিতে মদিনায় বিত্তবান ইহুদি ও অন্যান্য অবিশ্বাসী (অমুসলিম) সম্প্রদায়ের লোকের দৃষ্টিতে স্বভাবতই মুহাম্মদ ও তাঁর সঙ্গের মক্কাবাসী হিজরতকারী অনুসারীরা একদল বহিরাগত ছাড়া আর কিছুই নয়। যে বহিরাগতরা আশ্রয় নিয়েছিলেন আনসারদের বাড়িতে। যাদের না ছিল কোনো নিজস্ব বাসস্থান, না ছিল কর্মসংস্থান। যারা সম্পূর্ণরূপে শুধু আনসারদের ওপরই নির্ভরশীল ছিলেন না, নির্ভরশীল ছিলেন ইহুদিসহ অন্যান্য আদি মদিনাবাসী বিভিন্ন গোত্রের ওপরও; প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে। সেই মুহূর্তে স্বাভাবিকভাবেই মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা ছিলেন বিশেষভাবে দুর্বল (পর্ব:২৮-২৯)!

এতদসত্ত্বেও,মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের বর্ণিত তথ্যসূত্র ও রেফারেন্সবিহীন এই শান্তিচুক্তিটিতে যে-বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট তা হলো, এই চুক্তি-পত্রে:

"অত্যন্ত নাটকীয় এমন কিছু শর্তের উপস্থিতি, যা অবিশ্বাসীদের জন্য শুধু যে অবমাননাকর তাইই নয়, তা যে কোন স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি-গোষ্ঠীর আত্মমর্যাদার পরিপন্থী!”

কিছু উদাহরণ:

৯) ‘অবিশ্বাসীদের খাতিরে কোনো বিশ্বাসী অপর কোনো বিশ্বাসীকে কখনোই (“shall not”)  হত্যা করতে পারবে না; একইভাবে কোনো বিশ্বাসী অপর কোন বিশ্বাসীর বিরুদ্ধে কোনো অবিশ্বাসীকে কখনোই সাহায্য করতে পারবে না।

১৭) কেউ যদি কোনো বিশ্বাসীকে সন্তোষজনক কারণ ছাড়াই খুন করার কারণে অপরাধী সাব্যস্ত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রতিশোধ গ্রহণ বিবেচ্য হবে, যদি না তার [নিহতের] নিকটতম আত্মীয়েরা সন্তুষ্ট হয় (রক্তমূল্যের বিনিময়ে); এবং সমস্ত বিশ্বাসীরা একযোগে অবশ্যই তার [অপরাধী] বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে’।

১৭ নম্বর শর্তের সরল অর্থ হলো:
কোন অবিশ্বাসী অথবা বিশ্বাসী [যে কেউ (whoever)] যদি কোনো বিশ্বাসীকে হত্যা করে, তবে সেই নিহত বিশ্বাসী পরিবারের নিকটতম আত্মীয়ের সন্তুষ্টির জন্য ন্যায় বিচার (প্রতিশোধ ব্যবস্থা) নিশ্চিত করতে বিশ্বাসীরা একজোট হয়েপ্রয়োজনে খুনিকে হত্যা (Eye for an Eye) সহ যে কোনো ধরনের যথাযোগ্য সাহায্য করতে বাধ্য থাকবে।

আর, ৯ নম্বর শর্তের সরল অর্থ হলো:
কোনো বিশ্বাসী যদি কোন অবিশ্বাসীকে হত্যা করে (একই রূপ অপরাধ) তবে সেই নিহত অবিশ্বাসী পরিবারের নিকটতম আত্মীয়ের সন্তুষ্টির জন্য একই রূপ (১৭ নম্বর) ন্যায় বিচার (প্রতিশোধ ব্যবস্থা) নিশ্চিত করতে কোনো বিশ্বাসী কখনোই সেই খুনিকে শুধু যে হত্যা (Eye for an Eye) করতে পারবে না, তাইই নয়; খুনির (বিশ্বাসী) বিরুদ্ধে নিহতের পরিবার (অবিশ্বাসী) কে তারা কখনোইকোনোরূপ সাহায্যও করতে পারবে না!

নিঃসন্দেহে, অবিশ্বাসীদের জন্য এই শর্ত গুলো যে চরম অবমাননাকর ও পক্ষপাতদুষ্ট তা অনুধাবন করার জন্য কোন মহাজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই!

১৯) ‘যখন তোমরা কোনো ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত হবে, তখন তা "অবশ্যই" আল্লাহ ও মুহাম্মদের গোচরে আনতে হবে।

২৩) --আল্লাহ ও মুহাম্মদের অনুমতি ছাড়া কখনোই কেউ যুদ্ধে জড়িত হতে পারবে না।

৩১) যদি কখনো কোনো বিবাদ অথবা বিতর্ক জড়িয়ে পরার সম্ভাবনা থাকে যা দুর্ভোগের কারণ হতে পারে, তখন তা "অবশ্যই" আল্লাহ ও আল্লাহর নবী মুহাম্মদের গোচরে আনতে হবে। ----------’।

একই ভাবে ১৯, ২৩ ও ৩১ নম্বর শর্তে দাবী করা হয়েছে যে, ওপরে বর্ণিত চরম পক্ষপাতদুষ্ট ও অবমাননাকর শর্তে মদিনাবাসী অবিশ্বাসীরা যে শুধু স্বাক্ষর করেছিলেন তাইই নয়, সেই অবমাননা গ্রহণ করে তাঁরা মুহাম্মদকে তাদের নেতা ও দণ্ড-মুণ্ডের কর্তা হিসাবে স্থান দিয়েছিলেন - যদিও তাঁরা মুহাম্মদকে নবী হিসাবে স্বীকারই করেন না!

অল্প কিছু ধর্মান্তরিত নব্য মুহাম্মদ-অনুসারী আনসার এবং তাদের বাড়ি-ঘরে আশ্রিত পলাতক মুহাম্মদ ও মুহাজিরদের সাথে এমন একটি অবমাননাকর শর্তে তাদের চেয়ে অনেক অধিক সংখ্যা, শক্তি ও সমৃদ্ধিতে বলীয়ান মদিনাবাসী ইহুদি ও অন্যান্য অবিশ্বাসীরা লিখিতভাবে রাজী হওয়ার যে উপাখ্যান মুহাম্মদ ইবনে ইশাক লিপিবদ্ধ করেছেন, তা যুক্তির বিচারে আরব্য উপন্যাসের অতিকথাকেও হার মানায়! 

>>> ইসলাম অনুসারী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা ১৭ নম্বর শর্তের বৈধতা দিতে ১৮ নম্বর শর্তের উদ্ধৃতি দেন। যেখানে বলা হয়েছে:

১৮) ‘এই চুক্তি পত্রে আবদ্ধ আল্লাহ বিশ্বাসীর জন্য কখনোই আইনসিদ্ধ নয় যে সে কোনো অনিষ্টকারী ব্যক্তি (Evil-doer) কে সাহায্য করবে কিংবা আশ্রয় দেবে। যদি সে তা করে তবে পুনরুত্থানের দিন আল্লাহর ক্রোধ ও অভিশাপ তার উপর বর্তাবে এবং অনুতাপ অথবা খেসারৎ কোনটিই তার কাজে আসবে না।’

ইসলামী পরিভাষা সম্বন্ধে যাদের কোন স্বচ্ছ ধারনা নেই তাঁরা ১৮ নম্বর শর্তের "অনিষ্টকারী"; ২৩, ২৫ ও ৩৭ নম্বর শর্তের "প্রতারণা(Treachery)", ২৬ নম্বর শর্তের “জুলুম” (wronged); ৩৪ নম্বর শর্তের "পবিত্র যুদ্ধ ও ৩৮ নম্বর শর্তের নীতিবিগর্হিত ও পাপী(unjust and sinner)" জাতীয় শব্দের মারপ্যাঁচে বিভ্রান্ত হতে বাধ্য!

ন্যায়-অন্যায়ের সর্বজনগ্রাহ্য পরিচিত এই রূপ শব্দমালার অর্থ ইসলামিক পরিভাষায় সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থ বহন করতে পারে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পর্ব-৩৩-এ করা হয়েছে।

সংক্ষেপে:

ইসলামের প্রাথমিক সংজ্ঞা হলো:

“হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) ও তাঁর প্রচারিত বাণী ও মতবাদে অবিশ্বাসী প্রতিটি ব্যক্তিই হলেন অপকর্মকারী, বিপথগামী, লাঞ্ছিত, পথভ্রষ্ট, পাপী - ইত্যাদি, ইত্যাদি! তাঁরা বে-ইমান (অবিশ্বাসী) । আর, প্রতি টি বে-ইমান ব্যক্তিই অনন্ত শাস্তির যোগ্য (পর্ব-২৭)!”

আর, ইসলামের প্রাথমিক নির্দেশ হলো:

“কোন অবিশ্বাসী যদি মুহাম্মদ ও তাঁর মতবাদ ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেন, সমালোচনা করেন কিংবা করেন বিরুদ্ধাচরণ; তবে তাঁদের বিরুদ্ধে 'জিহাদ (পবিত্র যুদ্ধ) ও প্রয়োজনে তাঁদেরকে "হত্যা" করা প্রত্যেক ইসলাম বিশ্বাসীর অবশ্যকর্তব্য ইমানী দায়িত্ব। হোন না তিনি সেই মুমিন বান্দার পিতা-পুত্র, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশী। বদর যুদ্ধে মুহাম্মদ তাঁর এই নির্দেশের সর্বপ্রথম বাস্তবায়ন ঘটান (পর্ব: ৩০-৪৩)।

আবু আফাক নামের ১২০ বছর বয়সের অতিবৃদ্ধ ও পাঁচ সন্তানের জননী কবি আসমা-বিনতে মারওয়ানকে রাতের অন্ধকারে নৃশংসভাবে খুন করা ইসলামের পরিভাষায় কোনো অন্যায় কর্ম নয়; খুনিরা নয় কোনো "অন্যায়কারী" (পর্ব: ৪৬-৪৭)! কাব বিন আল আশরাফ ও আবু-রাফিকে প্রতারণার আশ্রয়ে খুন করা ইসলামিক পরিভাষায় "মহৎ কর্ম" (পর্ব: ৪৮ ও ৫০)! বনি কেউনুকা, বনি নাদির ও বনি কুরাইজা গোত্রের উপর মুহাম্মদ ও তাঁর সহকারীর নৃশংস আগ্রাসী কর্মকাণ্ড ইসলামিক পরিভাষায় কোনো "জুলুম" নয়, তা হলো "পবিত্র যুদ্ধ"!

গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল নিবন্ধে তথ্যসূত্র ও রেফারেন্স না থাকার কারণ:

প্রশ্ন হলো, কী কারণে ইসলামে নিবেদিত প্রাণ মুহাম্মদ ইবনে ইশাক এমন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়ে তথ্যসূত্র ও রেফারেন্স এর উল্লেখ করেন নাই?

সাধারণত: যে দু’টি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী কারণে কোনো লেখক/ঐতিহাসিক তাঁর বর্ণিত দলিলে তথ্যসূত্র/রেফারেন্স এর উল্লেখ করেন না, তা হলো:

প্রথম কারণ:
নির্ভরযোগ্য প্রামাণিক তথ্যসূত্র ও রেফারেন্সের অভাব!

দ্বিতীয় কারণ:
উল্লেখিত বিষয়/ঘটনা টি এতই সর্বজনবিদিত ও নির্ভরযোগ্য যে তার বর্ণনায় প্রামাণিক তথ্যসূত্র ও রেফারেন্স উল্লেখের কোনো প্রয়োজনই নেই!

এমন কি হতে পারে না যে,মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের তথ্যসূত্র ও রেফারেন্সবিহীন "মদিনা সনদ" চুক্তির উল্লেখিত উপাখ্যানটি শেষোক্ত প্রকৃতির? অর্থাৎ বিষয়টি এতই সর্বজনবিদিত ও নির্ভরযোগ্য যে, প্রামাণিক তথ্যসূত্র ও রেফারেন্স উল্লেখের কোনো প্রয়োজনই নেই?

এই প্রশ্নের অতি সংক্ষিপ্ত জবাব হলো, "না! কারণ?”

কারণ উপাখ্যানটি সর্বজনবিদিত ও নির্ভরযোগ্য এমন কোনো প্রমাণ যে নেই, শুধু তাইই নয়, আমরা দেখতে পাই এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র! আর সেই চিত্র টি হলো:

১) নিবেদিত প্রাণ বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিক আল-তাবারী যে বিখ্যাত ঐতিহাসিক গ্রন্থটি রচনা করেছেন ('কিতাব রসুল ওয়াল মুলুক'), সে গ্রন্থে মুহাম্মদের জীবন ইতিহাসের (ভলিউম: ৬-৯) প্রায় সমস্ত তথ্যই তিনি মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের “সিরাত রসুল আল্লাহ” থেকে সংকলিত করেছেন।

এ ছাড়াও আল তাবারী মুহাম্মদের জীবন ইতিহাসের বর্ণনায় মুহাম্মদ বিন উমর আল ওয়াকিদী (৭৪৭-৮২৩ খৃষ্টাব্দ), হিশাম বিন মুহাম্মদ ইবনে আল-কালবি (৭৩৭-৮১৯ খৃষ্টাব্দ), উরউয়া বিন আল জুবাইর [আয়েশার (রা:) নিজের বোন আসমার ছেলে (মৃত্যু ৭১৩ খৃষ্টাব্দ)] থেকে সংগ্রহীত মুহাম্মদ বিন শিহাব আল জুহরী (মৃত্যু ৭৪২ খৃষ্টাব্দ) প্রমুখের রেফারেন্স উদ্ধৃত করেছেন। তার সাথে যোগ করেছেন তাঁর নিজের ও মতামত।

অত্যন্ত লক্ষণীয় বিষয় এই যে, আল-তাবারী তাঁর সেই সংকলনটিতে ইবনে ইশাকের “তথ্যসূত্রবিহীন এই মদিনা সনদ” এর কোনো উল্লেখই করেননি! 

অত্যন্ত শ্রমসাধ্য গবেষণালব্ধ তাঁর এই রচনায় তিনি যা উদ্ধৃত করেছেন, তা হলো বনি কেউনুকার বিরুদ্ধে অভিযান (The campaign Against the Banu Qaynuqa) শিরোনামের আওতায় "মাত্র তিন লাইনের একটি বাক্য"। সেই বাক্যটি হলো,

"যখন তিনি (মুহাম্মদ) প্রথম মদিনায় আগমন করেন তখন তিনি মদিনার ইহুদিদের সাথে এই মর্মে একটি চুক্তি করেন যে, তারা তাঁর বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করবে না এবং যদি কোন শত্রু তাঁকে সেখানে আক্রমণ করে তবে তারা তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসবে।" [3]

["When he (Muhammad) first came to Medina he had made a compact with its Jews that they would not aid anyone against him and that if any enemy attacked him there they would come to his aid."] [3]

ব্যস, এটুকুই! ইবনে ইশাকের মতই এখানেও কোনোরূপ তথ্যসূত্রের উল্লেখ নেই।এমনকি আল-তাবারী তাঁর এই তথ্যের সপক্ষের সূত্র (Reference) হিসাবে ইবনে ইশাকের নামটিও উল্লেখ করেননি। মুহাম্মদ বিন ইশাকের উপাখ্যানটি “সর্বজনবিদিত ও নির্ভরযোগ্য" হলে স্বভাবতই মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের মত আল-তাবারীও তা বিশদভাবে লিপিবদ্ধ করতেন। 

২) আর, ইসলামের ইতিহাসের আরেক দিকপাল আদি ঐতিহাসিক মুহাম্মদ ইবনে সা'দ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ তাবাকাত আল-কাবিরে ইহুদিদের ওপর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীর নৃশংস আগ্রাসী আক্রমণের বর্ণনার অনুষঙ্গে লিখেছেন "কারণ তাহারা চুক্তি ভঙ্গ করিয়াছিল" জাতীয় এক লাইনের একটি বাক্য! ব্যস, এ টুকুই! [4]

>>> তাই, যে কোনো মুক্তবুদ্ধির মানুষ স্বাভাবিকভাবেই যে প্রশ্নটি করতে পারেন, তা হলো:
এমন অবমাননাকর ও নিজ জাতি-গোষ্ঠীর আত্মমর্যাদার পরিপন্থী শর্তে একজন বহিরাগত পরমুখাপেক্ষী, গৃহহীন, বিত্তহীন, জীবিকাহীন, নিজ জাতি-গোষ্ঠীর রোষানল থেকে রাতের অন্ধকারে চুপি চুপি কাপুরুষের মত পলাতক (স্বেচ্ছানির্বাসিত) ব্যক্তিকে সমস্ত অমুসলিম মদিনা-বাসী ও বিত্তবান ইহুদি সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের মাতৃভূমির সর্বময় কর্তা ও সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সর্বময় বিচারপ্রধান হিসাবে মেনে নেয়ার যে লিখিত চুক্তির উপাখ্যান একজন নিবেদিত প্রাণ মুহাম্মদ-অনুসারী লিপিবদ্ধ করেছেন, তার সত্যতা কতটুকু?

যুক্তি ও বাস্তবতার নিরিখে এই দাবিটি যে একেবারেই অবাস্তব, তা যে কোনো চিন্তাশীল মানুষ অতি সহজেই অনুধাবন করতে পারেন। বিশেষ করে এমন একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার বর্ণনায় যখন লেখক কোনোরূপ উৎসের উল্লেখই করেন না; অন্যান্য সমসাময়িক ঐতিহাসিকরা তা দায়সারাভাবে (এক অথবা তিন লাইনের চিরকুট) উদ্ধৃত করেন; আর তা লিখিত হয় কথিত ঘটনাটি সংঘটিত হওয়ার প্রায় ১১০ বছরের অধিক পরে নিবেদিতপ্রাণ অনুসারীর লেখনীতে।

মুহাম্মদের সন্ত্রাসী ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিতে মুহাম্মদ পরবর্তী প্রজন্মের ইসলাম বিশ্বাসীরা (বর্ণনাকারী এবং/অথবা রচনাকারী) হাজারও মিথ্যাচারের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই তথাকথিত চুক্তি যে তারই একটি উদাহরণ, এই সত্যকে কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। 

Let us forget about everything!

পাঠক, আসুন আমরা ওপরের যাবতীয় রেফারেন্স, মেধা প্রজ্ঞা ও বিচারশক্তি সম্বন্ধীয় (Intellectual) কচাল ভুলে আলোচনার খাতিরে ধরে নিই যে, "মদিনা সনদ” নামের এমন একটি চুক্তির উপাখ্যান শতভাগ সত্যি!

এতদসত্ত্বেও, বনি কেউনুকার নৃশংস ঘটনাটির ধারাবাহিক বর্ণনায় আমরা জানতে পেরেছি যে, বদর যুদ্ধ জয়লাভের পর ক্ষমতাধর মুহাম্মদ বিনা উস্কানিতেই মদিনার ইহুদিদের একত্রিত করে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, যদি তাঁরা তাঁকে নবী হিসাবে গ্রহণ করে তাঁর বশ্যতা স্বীকার করতে রাজি না হয়, তবে তিনি তাঁদের কে ভিটেমাটি থেকে বিতাড়িত করবেন।

আর, "তাঁর আল্লাহর" রেফারেন্স দিয়ে ইহুদিদের এই বলে হুশিয়ার করে দেন যে, যদি তাঁরা তাঁকে নবী হিসাবে গ্রহণ না করে তবে বদর যুদ্ধে তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের হাতে কুরাইশদের যেমন হাল হয়েছিল তেমনই হাল ইহুদিদের জন্যও অপেক্ষা করছে!

"নিঃসন্দেহে এমন হুমকি, শাসানী ও ভীতি প্রদর্শন কোন শান্তির বার্তা নহে!" [5][6]

এ ছাড়াও,

ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি যে, বনি কেউনুকা ও বনি নাদির গোত্রের সমস্ত মানুষ কে বিতাড়িত করে তাঁদের সমস্ত সম্পত্তি লুণ্ঠন ও করায়ত্ত করার প্রেক্ষাপট"তারা তাঁর বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করবে না এবং যদি কোন শত্রু তাঁকে মদিনায় আক্রমণ করে তবে তারা তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসবে"জাতীয় শর্তের চুক্তিভঙ্গ বিষয়ক ঘটনা ছিল না (পর্ব-৫১-৫২)! মুহাম্মদের বিরুদ্ধে বনি কেউনুকা ও বনি নাদির গোত্রের লোকেরা কাউকেই কোন সাহায্য করেনি! মদিনা/মুহাম্মদ তখন কোনো বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্তও হয় নাই!

সুতরাং তথাকথিত “মদিনা সনদ" নামক কোনো শান্তিচুক্তির অস্তিত্ব যদি শতভাগ সত্যও হয় এবং সেই চুক্তিপত্রে যে শর্তই উল্লেখ থাকুক না কেন, সর্বপ্রথম চুক্তিভঙ্গকারী ব্যক্তিটি হলেন স্বয়ং মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ বিন আবদুল মুত্তালিব! ইহুদিরা নয়!

>>> মক্কাবাসী কুরাইশদের উপর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের যাবতীয় অমানুষিক নৃশংস অনৈতিক আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বৈধতা প্রদানের জন্য যেমন কুরাইশদের "আইয়্যামে জাহিলিয়াত" নামে আখ্যায়িত করা এবং মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের ওপর তাঁদের বর্বর আচরণ/অত্যাচার/মক্কা থেকে বিতাড়িত করার উপাখ্যান প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা একান্ত প্রয়োজন; ঠিক একইভাবে মদিনায় ইহুদীদের ওপর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের যাবতীয় অমানুষিক নৃশংস আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বৈধতা প্রদানের জন্যও তেমনই একান্ত প্রয়োজন "মদিনা সনদ" নামের এক উপাখ্যান প্রচার ও প্রতিষ্ঠা!

আর তা না করতে পারলে কুরাইশদের মতই মদিনায় ইহুদীদের ওপর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের আগ্রাসী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের যে কোনো বৈধতাই থাকে না!

(চলবে)

[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে। 

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ:  A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫ - পৃষ্ঠা ২৩১-২৩৩; (অনুবাদ ও নম্বর যোগ- লেখক)

[2]THE MEDINA CHARTER

[3] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক:  আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭ – পৃষ্ঠা (Leiden) ১৩৬০

[4] কিতাব আল-তাবাকাত আল-কাবির – লেখক: মুহাম্মদ ইবনে সা'দ  (৭৮৪-৮৪৫ খৃষ্টাব্দ)', অনুবাদ এস মইনুল হক, প্রকাশক কিতাব ভবন, নয়া দিল্লি, সাল ২০০৯ (3rd Reprint), ISBN 81-7151-127-9(set)

[5]সহি বুখারী: ভলিউম ৪, বই ৫৩, নম্বর ৩৯২
“---তিনি তাদেরকে বললেন, 'যদি তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো, তাহলে তোমরা নিরাপদ। তোমাদের জানা উচিত যে এই ভূমির মালিক আল্লাহ এবং তার রসুল। আমি তোমাদেরকে এই ভূমি থেকে বিতাড়িত করবো। --"

[6] কুরান: ৩:১২-১৩ - “কাফেরদিগকে বলে দিন, খুব শিগগীরই তোমরা পরাভূত হয়ে দোযখের দিকে হাঁকিয়ে নীত হবে - সেটা কতই না নিকৃষ্টতম অবস্থান। নিশ্চয়ই দুটো দলের মোকাবিলার (বদর যুদ্ধে কুরাইশ ও মুসলিম দল) মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন ছিল।” ------এরই মধ্যে শিক্ষণীয় রয়েছে দৃষ্টি সম্পন্নদের জন্য।"

এক জোড়া পোস্টার



শিবলিঙ্গগাথা

লিখেছেন সেক্যুলার ফ্রাইডে

আর সব ধর্মের মতই হিন্দুধর্মও পুরুষপ্রধান ও পুরুষতান্ত্রিক।

হিন্দুধর্ম মূলত স্মৃতি- ও শ্রুতিনির্ভর, এবং স্মৃতি ও শ্রুতি মুলত দুই ধরনের: বৈদিক ও তান্ত্রিক।

হিন্দুদের মুল ধর্মগ্রন্থ বেদে প্রচলিত হোম ও যাগ যজ্ঞের আচার হল বৈদিক, আর এর বাইরে যে দেব ও দেবী, পূজাপদ্ধতি, জপ, পূজা প্রকরণ, সেটিই তন্ত্র।

লিঙ্গপূজা এ অঞ্চলে প্রচলিত ছিল মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পার সময় থেকেই; মানে বেদেরও আগে থেকে। মূলত এটি রাক্ষস প্রথা এবং বেদে একে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আর্য আর অনার্য সংস্কৃতি ধীরে ধীরে সনাতন ধর্মে মিশেছে এবং এর সাথে মিল রেখেই পূজা পদ্ধতিরও বিবর্তন ঘটেছে। বৈদিক ও তান্ত্রিক পদ্ধতির পাশাপাশি উদ্ভব হয়েছে মিশ্র পদ্ধতির।

তাই বেদের উদাহরণ টেনে অনেকে একে লিঙ্গপূজা না বলার চেষ্টা করলেও এটি সুস্পষ্টভাবেই লিঙ্গপূজা।

আরেকটু যোগ করি: 

শিব কিন্তু অনার্য দ্রাবিড় দেবতা; বেদে অনার্য শিব-এর কোনোই উল্লেখ নেই।

বেদে রুদ্র নামে দেবতা ছিলেন পশু সংহারের দেবতা আর অনার্য শিব ছিলেন পশু পালনের দেবতা। আর্য ও দ্রাবিড়দের মিশ্র সংস্কৃতির প্রভাবে রুদ্র ও শিব মিশে যায় এবং শিব প্রধান দেবতাদের একজন হয়ে ওঠেন।

সত্যম শিবলিঙ্গম সুন্দরম

শিবলিঙ্গের গল্পের পেছনে তিনটি ভার্শন পাচ্ছি...

১. হিন্দু অ্যাপোলোজিস্টদের সংস্করণ:
অথর্ববেদে একটি স্তম্ভের স্তব করা হয়েছে, যার শুরু বা শেষ নেই। আদি-অন্তহীন এই স্তম্ভ চিরন্তন ব্রহ্মের প্রতীক। এটিই, সম্ভবত, লিঙ্গপূজার উৎস। যদিও বৈদিক সাহিত্যে লিঙ্গপূজার কোনো নিদর্শন নেই; বিবেকানন্দসহ অনেকের মতে যূপস্তম্ভ বা হাঁড়িকাঠের সঙ্গে শিবলিঙ্গের যোগ রয়েছে। শিবলিঙ্গর সঙ্গে পুরুষাঙ্গের যোগ বৌদ্ধধর্মের পতনের পর কিছু অশাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তির মস্তিস্কপ্রসূত গল্প থেকে এসেছে বলে হিন্দুধর্মীয় এই ভার্শনটি দাবি করে।
২. খ্রিষ্টীয় ভার্শন:
গুস্তাভ ওপার্ট শালগ্রাম শিলা ও শিবলিঙ্গের উৎস সন্ধান করতে গিয়ে তাঁর গবেষণাপত্রে এগুলিকে পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গে সৃষ্ট প্রতীক বলে উল্লেখ করেছেন, যেগুলো অনার্য রীতি থেকে এসেছে। আবার, উইলিয়াম ওয়ার্ড বলেছেন লিঙ্গ "পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গে নির্মিত" এবং লিঙ্গপূজা "মানুষের চারিত্রিক অবনতির সর্বনিম্ন পর্যায়"; শিবলিঙ্গের প্রতীক "অত্যন্ত অশালীন এবং সাধারণের রুচির সঙ্গে মেলানোর জন্য এর পরিমার্জনা করা হয়েছে।"
৩. এনসাইক্লোপিডিয়া ভার্শন:
ব্রিটানিকা এনসাইক্লোপিডিয়ায় শিবলিঙ্গকে যৌন প্রতীক বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, এই "দিব্য আলোকস্তম্ভের প্রতীক, যার শুরু বা শেষ নেই" - এই ব্যাখ্যা, সম্ভবত, ভারতীয় প্রভাবে ব্রিটানিকায় স্থান পেয়েছে।
সচেতন নারীবাদী ব্যাখ্যা অবশ্য যথার্থভাবেই একে নারীর ওপর পুরুষের অধিকার, যোনির উপর শিশ্নের অধিকার হিসেবেই দেখেছে।