আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শনিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

ওহুদ যুদ্ধ –১৫: হামরা আল-আসাদ অভিযান: কুরানে বিগ্যান (পর্ব- ৬৮): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – বিয়াল্লিশ

লিখেছেন গোলাপ

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭ > পর্ব ৪৮ > পর্ব ৪৯ > পর্ব ৫০ > পর্ব ৫১ > পর্ব ৫২ > পর্ব ৫৩ > পর্ব ৫৪ > পর্ব ৫৫ > পর্ব ৫৬ > পর্ব ৫৭ > পর্ব ৫৮ > পর্ব ৫৯ > পর্ব ৬০ > পর্ব ৬১ > পর্ব ৬২ > পর্ব ৬৩ > পর্ব ৬৪ > পর্ব ৬৫ > পর্ব ৬৬ > পর্ব ৬৭

স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ওহুদ যুদ্ধে সমবয়সী চাচা হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিবের নৃশংস পরিণতিতে কীরূপে আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন এবং যুদ্ধস্থল থেকে মদিনায় ফিরে আসার প্রাক্কালে মৃত ও আহত আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জন্য শোকাহত মদিনার লোকজনদের হাহাকার ও ক্রন্দন প্রত্যক্ষ করে তিনি কীরূপে আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন, তার আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।

যুদ্ধ শেষে মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ তাঁর মৃত সহকারীদের ওহুদ প্রান্তেই সমাধিস্থ করেন। তারপর ঐ দিনই সন্ধ্যায় তিনি মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন।

ওহুদ যুদ্ধটি সংঘটিত হয় 'সাবাথ দিন' শনিবার (পর্ব-৫৬); মদিনায় প্রত্যাবর্তনের পরের দিন রবিবার তিনি ঘোষক মারফত অনুসারীদের ঘোষণা দেন যে, যারা আগের দিন ওহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল তারা সকলেই যেন আবু-সুফিয়ান ও তাঁর সৈন্যদলের পশ্চাদ্ধাবন করার উদ্দেশ্যে তাঁর সাথে অবশ্যই সামিল হয়।

তিনি তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে মদিনা থেকে ৮ মাইল দূরবর্তী স্থান "হামরা আল-আসাদ" পর্যন্ত গমন করেন। ইসলামের ইতিহাসে এই অভিযানকে "হামরা আল-আসাদ অভিযান" নামে আখ্যায়িত করা হয়। ইসলামে নিবেদিতপ্রাণ আদি মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় ঘটনাটি ছিল নিম্নরূপ: [1]

মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮) ও আল-তাবারীর (৮৩৮-৯২৩) বর্ণনা:

(ইবনে হুমায়েদ < সালামাহ <) মুহাম্মদ ইবনে ইশাক < হুসায়েন বিন আবদুল্লাহ <ইকরিমা হইতে বর্ণিত:

ওহুদ যুদ্ধটি সংঘটিত হয় শাওয়াল মাসের মাঝামাঝি 'সাবাথ দিন' শনিবার। ১৬ তারিখ রবিবার সকালে আল্লাহর নবীর ঘোষক লোকদের এই বলে আহ্বান করেন যে, তারা যেন শত্রুর পশ্চাদ্ধাবন করে এবং ঘোষণা করে যে, যারা আগের দিন যুদ্ধে উপস্থিত ছিল, তারা ছাড়া অন্য কেউ এই অভিযানে অংশ না নেয়।

জাবির বিন আবদুল্লাহ বিন আমর বিন হারাম বলে, "হে আল্লাহর নবী, আমার পিতা আমাকে আমার সাত বোনের দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়ে যুদ্ধে যেতে এই বলে বারণ করেছিলেন যে, কোনো পুরুষ মানুষের উপস্থিতি ব্যতিরেকে মহিলাদের ফেলে রেখে আমাদের দু'জনেরই যুদ্ধে যাওয়া সমীচীন নয়; এবং তিনি এমন লোক নন, যিনি তার পরিবর্তে আমাকে আল্লাহর নবীর সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করাকে বেশি প্রাধান্য দেবেন। তাদের দেখাশুনার দায়িত্বে থাকার কারণে আমি পিছিয়ে পড়েছি।" আল্লাহর নবী তাকে অনুমতি দেন এবং সে তাঁর সাথে যাত্রা করে।

আল্লাহর নবীর এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল - শত্রুর মনোবল খর্ব করা; তাদের পশ্চাদ্ধাবন করার মাধ্যমে তাদের এই ধারণা দেয়া যে, তারা যেন মনে করে যে, তাঁর শক্তি এখন ও অটুট এবং তাঁদের এই ক্ষতি তাঁদেরকে দুর্বল করতে পারেনি। 

আয়েশা বিনতে উসমানের কাছ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আবু আল-সায়িব নামক এক দাসের (freed slave) কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আবদুল্লাহ বিন খারিজা বিন যায়েদ বিন থাবিত আমাকে [মুহাম্মদ ইবনে ইশাক] বলেছেন:

বানু আবদুল-আশহাল গোত্রের অন্তর্ভুক্ত আল্লাহর নবীর এক অনুসারী, যিনি ওহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, বলেন:

"আমি ও আমার এক ভাই ওহুদ যুদ্ধে উপস্থিত হই ও আহত অবস্থায় ফিরে আসি। যখন আল্লাহর নবীর ঘোষক আমাদেরকে শত্রুর পশ্চাদনুসরণ করা বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করে, আমি আমার ভাইকে বলি অথবা সে-ই আমাকে বলে, "আমরা কি আল্লাহর নবী সঙ্গে অভিযানে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবো? আমাদের কোনো পশু নেই যার উপর আমরা সত্তয়ার হই এবং আমরা গুরুতর আহত।"

কিন্তু, আমরা আল্লাহর নবীর সাথে যোগ দিই। যেহেতু আমার জখমটি ছিল কম গুরুতর, যখন সে কাহিল হয়ে পড়ে, তখন আমি তাকে কিছু সময়ের জন্য পশুর ওপর সওয়ার করি এবং আমরা পালাক্রমে পায়ে হেঁটে ও পশুর ওপর সওয়ার হয়ে যেখানে মুসলমানরা গিয়ে থেমেছিল সেখানে আসি।"

আল্লাহর নবী মদিনা থেকে প্রায় আট মাইল দূরবর্তী ‘হামরা আল-আসাদ’ পর্যন্ত যাত্রা করেন। তিনি সেখানে সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার (মার্চ ২৫-২৭, ৬২৫ সাল) পর্যন্ত অবস্থান করেন এবং তারপর তিনি মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন।

আবদুল্লাহ বিন আবু বকর বিন মুহাম্মদ বিন আমর বিন হাযম আমাকে বলেছেন:

মা'বাদ বিন আবু মাবাদ আল খুজায়ি তাঁর পাশ দিয়ে গমন করে। তিহামার [Tihamah: Red Sea coastal plain of Arabia] খুজা গোত্রীয় মুসলমান ও মুশরিক উভয় লোকেরাই ছিলেন আল্লাহর নবীর সাথে জোটভুক্ত ও তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত। তারা তাঁর সাথে এই মর্মে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন যে, তারা এখানকার কোনো ঘটনাই তাঁর কাছে গোপন করবে না। 

সেই সময় মা'বাদ ছিলেন মুশরিক (Polytheist), সে বলে, "মুহাম্মদ, তোমার (তাবারী: তোমার অনুসারীদের) ওপর যা ঘটেছে, তা আমাদের জন্য পীড়াদায়ক এবং আমরা কামনা করি আল্লাহ যেন তোমাকে নিরাপদ রাখে।"

তারপর, আল্লাহর নবীর হামরা আল-আসাদে অবস্থানরত অবস্থায়ই সে যাত্রা অব্যাহত রাখে ও ‘আল-রাওয়াহা (al-Rauha') নামক স্থানে আবু সুফিয়ান ও তাঁর লোকজনদের সাক্ষাৎ পায়, তারা তখন আল্লাহর নবী ও তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশ্যে আবার ফিরে আসার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

তারা বলে, "আমরা তার শ্রেষ্ঠ অনুসারী, নেতৃবর্গ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হত্যা করেছি। তারপর কি তাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস না করেই আমরা ফিরে যাব? চলো, যারা প্রাণে বেঁচে গিয়েছে (survivors) তাদের কাছে ফিরে যাই এবং তাদেরকে শেষ করে ফেলি।"

যখন আবু সুফিয়ান মা'বাদকে দেখেন, তিনি বলেন, "খবর কী?"

জবাবে সে বলে, "এমন এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা তোমাদের পশ্চাদনুসরণ করে (pursue you) আসছে, যার নমুনা আমি আগে কখনো প্রত্যক্ষ করিনি; তারা রাগে অগ্নিশর্মা। তোমাদের যুদ্ধের সময় তাদের যারা অংশগ্রহণ করেনি, তারাও তাদের সাথে যোগ দিয়েছে; তারা যা করেছে [যুদ্ধে যোগ না দিয়ে] তার জন্য তারা দুঃখিত ও তোমাদের উপর প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ। এ রকম দৃশ্য আমি কখনোই দেখিনি।"

আবু সুফিয়ান বলেন, "এ কী বলছো তুমি?"

সে জবাবে বলে, "আল্লাহর কসম, আমার মনে হয় না যে, তোমার অশ্বারোহী বাহিনী (Cavalry) অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে।"

তিনি বলেন, "কিন্তু আমরা তাদের আক্রমণ করে যারা প্রাণে বেঁচে গিয়েছে, তাদেরকে নির্মূল করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।"

সে জবাবে বলে, "কিন্তু আমার পরামর্শ হবে তোমরা যেন তা না করো।"

তার এই উক্তিগুলো আবু সুফিয়ান ও তাঁর অনুসারীদের বিরত রাখে।

আবদুল কায়েস (Abdu'l-Qays) গোত্রের কিছু অশ্বারোহী তাঁর [আবু সুফিয়ান] পাশ দিয়ে গমন করে এবং তিনি জানতে পারেন যে, তারা খাদ্য সংগ্রহের জন্য মদিনায় যাচ্ছে।

তিনি বলেন, "তোমরা কি আমাদের এক বার্তা মুহাম্মদের কাছে পৌঁছে দেবে? বিনিময়ে আগামীতে তুমি যখন উকাজ মেলায় যাবে, তখন আমি তোমার এই উটগুলোর পিঠ কিসমিস ভর্তি মালে বোঝাই করবো।"

তারা রাজি হয়, তিনি বলেন, "তার সাথে যখন দেখা হবে, তখন তাকে বলবে যে, তাদেরকে নির্মূল করার জন্য আমরা তার ও তার অনুসারীদের কাছে ফিরে আসার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।"  

আল্লাহর নবী যখন হামরা আল-আসাদে অবস্থান করছিলেন, তখন অশ্বারোহীরা তাঁর পাশ দিয়ে গমন করে এবং আবু সুফিয়ান যা বলেছে, তা তাঁকে বলে। আল্লাহর নবী চিৎকার করে বলেন, "আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; তার প্রতি আস্থা জ্ঞাপনই সর্বোত্তম।" [2][3]

-  (অনুবাদ ও [**] যোগ- লেখক)

ইমাম বুখারীর (৮১০-৮৭০ সাল) বর্ণনা:

'পবিত্র আয়াত: "যারা আহত হয়ে পড়ার পরেও আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য করেছে, তাদের মধ্যে যারা সৎ ও পরহেযগার, তাদের জন্য রয়েছে মহান সওয়াব (৩:১৭২)" বিষয়ে আয়েশা হইতে বর্ণিত:

তিনি উরওয়া-কে বলেছেন, "হে আমার বোনপো! সেই দিন তোমার পিতা, আল যুবায়ের ও আবু বকর ছিলেন তাদের মধ্যে (অর্থাৎ, যারা ওহুদ যুদ্ধের দিন আল্লাহ ও তার নবীর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন); সেই সময়ে আল্লাহর নবী ছিলেন কষ্টে, যে কষ্ট তিনি ওহুদ যুদ্ধের দিন ভোগ করেছিলেন ও প্যাগানরা ফিরে গিয়েছিল; আল্লাহর নবী এই ভেবে শঙ্কিত ছিলেন যে, তারা আবার ফিরে আসতে পারে। সে কারণেই তিনি বলেছিলেন, "কে আছো তোমরা, যারা তাদের (অর্থাৎ, প্যাগান) পদচিহ্ন অনুসরণ করতে যাবে?" তারপর তিনি (এই উদ্দেশ্য) তাদের মধ্য থেকে ৭০ জনকে বাছাই করেন।" (উপ-কথক (sub-narrator) যোগ করেছেন, " তাদের মধ্যে ছিলেন আবু বকর ও আল-যুবায়ের।") -৫:৫৯:৪০৪ [4]

-  (অনুবাদ – লেখক)

মুহাম্মদ তাঁর স্ব-রচিত ব্যক্তি-মানস জীবনী গ্রন্থ কুরানে যা বলেছেন:                 
৩:১৭২ – “যারা আহত হয়ে পড়ার পরেও আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য করেছে,তাদের মধ্যে যারা সৎ ও পরহেযগার, তাদের জন্য রয়েছে মহান সওয়াব।”

>>> ওপরে বর্ণিত উদাহরণ, বানু আবদুল-আশহাল গোত্রের অন্তর্ভুক্ত আল্লাহর নবীর অনুসারী দুই ভাইয়ের উপাখ্যান।

৩:১৭৩- “যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সাজ-সরঞ্জাম; তাদের ভয় কর। তখন তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ়তর হয়ে যায় এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; কতই না চমৎকার কামিয়াবী দানকারী।”   
>>> ওপরে বর্ণিত আবদুল কায়েস (Abdu'l-Qays) গোত্রের কিছু অশ্বারোহীর উপাখ্যান ও মুহাম্মদের জবাবের বিষয়ে বলা হচ্ছে।

৩:১৭৪ – “অতঃপর ফিরে এল মুসলমানরা আল্লাহর অনুগ্রহ নিয়ে, তাদের কিছুই অনিষ্ট হলো না। তারপর তারা আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হল। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ অতি বিরাট।”  

>>> ওপরে বর্ণিত মুহাম্মদের কুরান ও আদি মুসলিম ঐতিহাসিকদের (সিরাত ও হাদিস) বর্ণনায় আমরা জানতে পারছি যে, 'আবু-সুফিয়ান ও তাঁর সৈন্যদল' মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের পরাস্ত করার পর মক্কায় উদ্দেশে প্রত্যাবর্তন করার পর পথিমধ্যেই তাঁদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিলেন।

দাবী করা হয়েছে, তাঁরা এই উদ্দেশ্যে "দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন" যে, তাঁরা আবার মদিনায় প্রত্যাবর্তন করে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের "সমূলে নির্মূল" করবেন। 

কিন্তু তা তাঁরা করেননি! কারণ,পথিমধ্যে মুহাম্মদের সাথে জোটভুক্ত ও তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত বানু খোজা গোত্রের মা'বাদ বিন আবু মাবাদ নামক এক ব্যক্তির মিথ্যা সংবাদ ("মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা এক বিশাল বাহিনী নিয়ে তাঁদের পশ্চাদনুসরণ করে আসছে এবং তাঁরা রাগে অগ্নিশর্মা") ও পরামর্শ!

উক্ত বর্ণনায় যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো, লেখকরা পাঠকদের ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছেন,

"মুহাম্মদের সাথে জোটভুক্ত ও তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত একজন লোকের সংবাদের ওপর ভিত্তি করে আবু সুফিয়ান ও তাঁর সৈন্যদল ভীত হয়ে, তাঁদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে, মক্কায় প্রত্যাবর্তন করেন!”

প্রশ্ন হলো, "এই দাবীর সত্যতা কতটুক?"

কারণ? কারণ হলো:

ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি যে, মুহাম্মদের সমস্ত অনুসারীকে সমূলে বিনষ্ট করার কোনো অভিপ্রায়ই আবু-সুফিয়ান ও তাঁর অনুসারীদের ছিল না।

যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পেয়েছি:

যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে আবু সুফিয়ান ওহুদ যুদ্ধে আগত মুহাম্মদ অনুসারী আউস ও খাযরাজ গোত্রের লোকদের (আনসার) স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, তাঁরা এসেছেন তাঁদের যাবতীয় দুরবস্থার জন্য যে-ব্যক্তিটি দায়ী, সেই মুহাম্মদের সাথে মোকাবেলা করতে; তাদের সাথে যুদ্ধ করতে নয় (পর্ব: ৫৭)!

আমরা আরও জেনেছি যে, তাঁরা বিজয়ী হয়েই 'যুদ্ধস্থান' পরিত্যাগ করে মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন। পরাজিত মুসলমানদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়!

যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পেয়েছি:

কুরাইশদের প্রত্যাবর্তনের প্রাক্কালে মুহাম্মদ যখন আলীকে আবু-সুফিয়ান ও তাঁর সৈন্যদলের গতিবিধি পর্যালোচনা করার আদেশ সহকারে পাঠিয়েছিলেন; তখন কুরাইশ দলের মক্কায় প্রত্যাবর্তনের দৃশ্য অবলোকন করে আলী আনন্দে এতই আত্মহারা হয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর নবীর নিষেধ আদেশও ভুলে গিয়েছিলেন (পর্ব: ৬৫)

আমরা আরও জেনেছি, মুসলমানদের এহেন শোচনীয় অবস্থার সুযোগ নিয়ে আবু সুফিয়ান ও তাঁর সৈন্যদল মুসলমানদের যথেচ্ছ হত্যা/বন্দীর মাধ্যমে সমূলে ধংস করার অভিপ্রায় পোষণ করেননি।

যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পেয়েছি:

যুদ্ধ শেষে যখন আবু সুফিয়ান ফিরে যেতে মনস্থ করেন, তখন তিনি পাহাড়ের শীর্ষে আরোহণ করেন ও উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলেন, "আজকের দিনটি হলো সেই দিনের (তাবারী: বদরের) বিনিময়ে।” আমরা জেনেছি যে কুরাইশরা ওহুদ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন বদর যুদ্ধে তাঁদের ৭০ জন নিকট আত্মীয়ের নৃশংস খুন ও অপমানের প্রতিশোধ নিতে, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয় (পর্ব-৫৪)।

প্রশ্ন হলো, তাঁরা কি তাঁদের সেই উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পেরেছিলেন?
এই প্রশ্নের জবাব হলো, "নি:সন্দেহে, হ্যাঁ।"

>>> ওহুদ যুদ্ধে আগত ৭০০ জন মুহাম্মদ অনুসারীর ৭০ জনকে তাঁরা হত্যা করেন; ৪ জন মুহাজির (আদি মক্কাবাসী) ও ৬৬ জন আনসার (আদি মদিনা বাসী)। এই যুদ্ধে আনসারদের দিতে হয়েছিল চরম মূল্য। মুহাম্মদের বহু অনুসারী হয়েছিলেন আহত। যে চার জন মুহাজির নিহত হয়েছিলেন তাঁরা হলেন:

১) হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব - মুহাম্মদের চাচা, হাশেমী গোত্রের।
২) আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ - মুহাম্মদের কাজিন, বানু উমাইয়া বিন আবদ-শামস গোত্রের।
৩) মুসাব ইবনে উমায়ের - মুহাম্মদের আরেক চাচা, বানু আবদ-দার গোত্রের। এবং
৪) শমাস ইবনে উসমান - বানু মাখযুম বিন ইয়াকাযা গোত্রের। 

অন্যদিকে, ওহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কুরাইশদের সংখ্যা ছিল ৩০০০; তাঁদের ২২ জন এই যুদ্ধে নিহত হন। [5]

সুতরাং, কী কারণে কুরাইশ দলপতি আবু সুফিয়ান ও তাঁর সহকারীরা পথিমধ্যে হঠাৎ করে মুসলমানদের সমূলে ধ্বংস করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছিলেন, তা মোটেও স্পষ্ট নয়।

>>> কুরান, সিরাত ও হাদিসের বর্ণনাকে সত্য বিবেচনা করে তা প্রমাণের জন্য অনেক ঐতিহাসিকই বিভিন্ন রকমের যুক্তি দেখিয়েছেন। যেমন, প্রখ্যাত স্কটিশ ঐতিহাসিক, এডিনবারা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস (Emeritus) উপাধি প্রাপ্ত আরবি ও ইসলামি শিক্ষার প্রাক্তন প্রফেসার William Montgomery Watt (১৯০৯ -২০০৬ সাল) এই বিষয়টির সত্যতার সপক্ষে তাঁর মতামত যেভাবে তুলে ধরেছেন তা হলো:

"যদিও মুসলমানদের হতাহতের পরিমাণ ছিল বেশি, মক্কাবাসীর মক্কা প্রত্যাবর্তন করার লক্ষণ হলো এই যে, তারা মুসলমানদের দ্বারা কঠোরভাবে নাড়া খেয়েছিলেন এবং এমন অবস্থায় ছিলেন না যে তাঁরা মুসলমানদের শক্তি কেন্দ্র (“strongholds”) মদিনা আক্রমণ করে তাদের জন্য আরও সুবিধা অর্জন করতে পারে। মুহাম্মদ, সম্ভবত, তা উপলব্ধি করেছিলেন, এবং তাঁর হামরা আল-আসাদ যাত্রাটির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল শত্রুপক্ষকে শক্তি প্রদর্শন ও মুসলমানদের ক্ষয়ক্ষতির পর তাদের মনোবল চাঙ্গা করা।" [6][7]

[‘The retreat of the Meccans showed that they had been roughly handled by the Muslims,even if the Muslim casualties had been higher, and that they were not in a position to attack the “strongholds” of Medina and so benefit from such advantage as they had gained’. Muhammad presumably realized this, and his march out to Hamra al-Asad was primarily a display of strength to the enemy and the way of boosting the morale of the Muslims after their losses. (see Watt, Medina, page 28)] [6][7]

এই যুক্তিটির সমস্যা হলো এই যে:

কুরাইশদের তিন হাজার সৈন্যের মধ্যে মাত্র ২২ জন নিহত হওয়ার পর অবশিষ্ট ছিল ২৯৭৮ জন। আর মুসলমানদের ৭০০ জন সৈন্যের ৭০জন নিহত হওয়ার পর অবশিষ্ট ছিল ৬৩০ জন; যাদের অধিকাংশই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অনেক আগেই গিয়েছিলেন পালিয়ে ও আহত হয়েছিলেন অনেকে।

আদি বিশিষ্ট মুসলমান ঐতিহাসিকদের বর্ণিত "ওহুদ যুদ্ধ উপাখ্যানের" গত ১৪ টি পর্বের পর্যালোচনা ও যুদ্ধ শেষে পরাজিত ও পর্যুদস্ত ৬৩০ জন মুসলমান সৈন্যের বিপরীতে ২৯৭৮ জন কুরাইশ সৈন্যের এমত পরিস্থিতি কোনোভাবেই প্রমাণ করে না যে, "কুরাইশরা মুসলমানদের দ্বারা কঠোরভাবে নাড়া খেয়েছিলেন এবং এমন অবস্থায় ছিলেন না যে তাঁরা মুসলমানদের শক্তিকেন্দ্র মদিনা আক্রমণ করে।"

যে প্রশ্নটি অবশ্যই করা যেতে পারে, তা হলো, “কুরাইশরা কি পথিমধ্যে তাঁদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন না?” জবাব হলো, "হ্যাঁ"! কুরাইশরা পথিমধ্যে তাঁদের সিদ্ধান্ত অবশ্যই পরিবর্তন করতে পারেন।

কিন্তু, তার চেয়েও বড় যে বাস্তবতা, তা হলো:

ইসলামের সকল ইতিহাস সম্পূর্ণরূপে একপেশে! কারণ সেই ইতিহাসের প্রবর্তকরা হলেন শুধুই মুহাম্মদ (কুরান) ও তাঁর নিবেদিতপ্রাণ অনুসারীরা (সিরাত ও হাদিস); আত্মপক্ষ সমর্থনে পরাজিত বিরুদ্ধবাদী কাফেরদের প্রামাণিক সাক্ষ্যের কোনো দলিল ইসলামের ইতিহাসের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই অবিশ্বাসী, সমালোচনাকারী ও বিরুদ্ধবাদীদের বিরুদ্ধে মুহাম্মদ ও তাঁর নিবেদিতপ্রাণ অনুসারীদের বর্ণিত অপবাদ ও অভিযোগের ইতিহাসের সঠিকত্ব প্রমাণের কোনো সুযোগ নেই (পর্ব-৪৪)।

ইসলামের ইতিহাস পাঠের সময় সত্যসন্ধানী প্রতিটি পাঠকেরই এই সত্য সর্বান্তকরণে সর্বদাই মনে রাখা অত্যন্ত আবশ্যক!

(চলবে)

[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।] 

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

 [1] মুহাম্মদ ইবনে ইশাক এই অভিযানকে কোন আলাদা নামকরণে চিহ্নিত করেন নাই। তিনি ওহুদ যুদ্ধ শিরোনামেই এই অভিযানের বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে আল-তাবারী এই অভিযানকে "হামরা আল-আসাদ অভিযান" নামে নামকরণ করেছেন।

[2] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ:  A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৩৮৯-৩৯১ http://www.justislam.co.uk/images/Ibn%20Ishaq%20-%20Sirat%20Rasul%20Allah.pdf

[3] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭,ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৪২৭-১৪৩১ http://books.google.com/books?id=efOFhaeNhAwC&printsec=frontcover&source=gbs_ge_summary_r&cad=0#v=onepage&q&f=false

[4] Sahi Bukhari: Volume 5, Book 59, Number 404:

[5]Ibid মুহাম্মদ ইবনে ইশাক - পৃষ্ঠা ৪০১-৪০৩ ও ৭৫৯ (ইবনে হিশামের নোট # ৬৩৫)

[6] Ibid আল-তাবারীপৃষ্ঠা (Leiden) ১৪২৭, xxxii -xxxiii

[7] William Montgomery Watt (1909-2006), Muhammad at Medina, Oxford 1956, page 21-29

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন