আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শুক্রবার, ১২ জুন, ২০১৫

যেখান থেকে আমার অবিশ্বাসের পথ চলা শুরু

লিখেছেন অপ্রিয় কথা

সেই ১৩ বছর আগের কথা। ২০০১ সাল। তখন আমি ১৫ বছরের এক কিশোর। নাকের নিচে সদ্য রোম গজাতে শুরু করেছে। দেশের রাজনৈতিক হালচাল একটু একটু বুঝতাম। সেই বছর নির্বাচন হল, নির্বাচনের আগে ঈশ্বরের কাছে মনে-প্রাণে প্রার্থনা করেছিলাম আওয়ামী লীগ যাতে আবার ক্ষমতায় আসে। তখন মনে মনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করতাম। 

আমি তখন কক্সবাজারে একটা কারখানায় কাজ (বিশেষ কারণে কাজের নামটা বলছি না) শিখছি। আমরা যারা এখানে কাজ শিখতাম, সবাই ছিলাম প্রায় সমবয়সী। ভোটের দিন কারো ওস্তাদ কারাখানায় ছিল না। তারা আগের দিন ভোট দেয়ার জন্য যার যার বাড়ি চলে গেছে। ভোট হয়ে গেল, সন্ধ্যার পর কয়েকজন মিলে আমরা রেডিওতে কোন দল কত সিট পেল তার ঘোষণা শুনছি। প্রায় জায়গায় বিএনপি জামাতের চার দলীয় ঐক্যজোট এগিয়ে আছে। রাত এগারটার পর বুঝতে পারি, এটা ইলেকশন নয়, সিলেকশন। তত্বাবধায়ক সরকার লতিফুর রহমান আর রাষ্টপতি সাহাবুদ্দিন ক্ষমতায় আনার জন্য যেন বিএনপি-জামাতকে সিলেক্ট করছে। চারিদিকে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি! যেখানে ঢাকার প্রায় আসন আওয়ামী লীগের দখলে ছিল, সেখানে আওয়ামী লীগ তেমন আসন পায়নি। 

এবার আসি, আমার অবিশ্বাসের কারণটা কোত্থেকে কোন প্রেক্ষাপট থেকে তৈরি হয়েছে:

ভোটের কয়েকদিন পর বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় আসার জন্য শপথ গ্রহণ করল। এদিকে দু'-চার দিন পর হিন্দুদের দুর্গাপুজা শুরু হবে। মনের মধ্যে আনন্দের মাদল বাজছে। পুজোতে ঘুরবো ফিরবো নাচবো, কত আনন্দ হবে। এর মধ্যে খবর আসতে শুরু করে বিএনপি-জামাতের নির্বাচনে জেতার বিজয়ের উল্লাস! বিএনপি-জামাতের ক্যাডাররা প্রথমে সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের মাটির মুর্তি ভেঙে উল্লাস শুরু করে। পরে তারা ভোলার উল্লাপাড়া, আগৈঝাড়া গ্রামের পূর্ণিমা, মহিমা, রতা রাণীদের ওপর গনধর্ষণ চালায়। সেখানকার কয়েকজন বালিকা নাকি ধর্ষণের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছে। তাদের আবার পাড়ে তুলে ধর্ষণ করেছে পাষণ্ডরা! হিন্দুদের দোষ ছিল একটাই - তারা কেন আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে?

চারিদিকে শোনা যাচ্ছে, এবার পুজো হবে না। তবুও পুজোর দিন বের হলাম পুজো দেখতে। কক্সবাজার শহরে প্রতিটি পুজোমণ্ডপে দেখি কালো কালো ব্যানার, তারা পুজো করবে না, ঢাকঢোল বাজাবে না। মাইক বাজাবে না, নাচগান করবে না। হিন্দুদের মূর্তিভাঙা আর তাদের ওপর গনধর্ষণের চিত্রগুলো বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। সেই পত্রিকাগুলো দেখলাম, প্রতিটি পুজোমণ্ডপের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদ হিসেবে সেঁটে দিয়েছে কক্সবাজার পুজো কমিটি। আমি সন্ধ্যায় বের হয়ে প্রত্যেক পুজোতে গিয়ে পত্রিকাগুলো দেখেছি, পড়েছি। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কোনো কোনো হিন্দু উদ্বাস্তুর মতো দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কেউ কেউ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। পত্রিকার ছবিতে পূর্ণিমা লজ্জায় তার মুখটা দুহাতে ঢেকে রেখেছে। মহিমা ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে। বালিকা রতার ভয়ার্ত চেহারা! 

ওখানে পড়েছি, বিএনপি-জামাত ও ছাত্রদল-শিবিরের একপাল পশু যখন উঠানে পূর্ণিমাকে ধর্ষণের জন্য নেমেছে, তখন পূর্ণিমার মা বারান্দা থেকে বলছে, "বাবারা, তোমরা একজন একজন কইরা আসো। আমার মাইয়া এহনো ছোড, তার এহনো রক্ত (ঋতুমতি হয় নাই) দেহা যাই নাই।" 

১১ বছরের রতা রানীকে যখন চারদল জোটের ক্যাডাররা পালা করে গনধর্ষণ করছে, তখন সে চিৎকার করে বলছে, "তোমরা আমারে ছাইড়া দাও, আমি আর এ দেশে থাকুম না!" নিজের জম্মভুমির ওপর কতটুকু ঘৃণা হলে একটা বালিকা এই কথা বলে? পত্রিকায় তাদের আতংকিত মুখ আর বিভীষিকাময় জীবন দেখে আমার দপদপ করে শরীর কাঁপতে থাকে। চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তে থাকে। 

তখন মনে প্রশ্ন জাগে, ঈশ্বর কোথায়? কোথায় দুর্গা মায়ের শক্তি? হিন্দুদের এমন নির্যাতন দেখে মা দুর্গা চুপ থাকে কী করে? ওরা যখন দুর্গার প্রতিমা ভাঙছিল, তখন মহামায়ার শক্তি কই ছিল? তিনি তো ভেঙেচুরে নির্জীবের পড়ে ছিলেন। তার মেয়েদের ওপর যখন ধর্ষণ চালাচ্ছিল, তখন মা এসে তার শোধ নেয়নি কেন? তাহলে তো মা দুর্গা একটা অপদার্থ! সেদিন রাতে প্রথম ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে মনে নানা প্রশ্ন জেগেছিল।

আল্লার অস্তিত্বের প্রতি প্রশ্ন জাগে তখন, যখন দেখি ইরাক-আফগানের মুসলিমের ওপর আমেরিকার সৈন্যরা অমানবিক নির্যাতন করছে, অন্যায়ভাবে বোমা হামলা করছে, যুদ্ধবিধস্ত ইরাকের নারী-শিশুরা অনাহারে মরছে! কেউ কেউ সারিবদ্ধভাবে থালা নিয়ে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে। টুইন টাওয়ারের হামলাকে কেন্দ্র করে বুশ তখন পুরো মুসলিম দেশগুলোকে শাসাচ্ছে! পাকিস্তানেও তাদের খবরদারি বজায় রেখেছে। তখন আমেরিকার ভয়ে পুরো মুসলিম বিশ্ব কাঁপছে। পাকিস্তানের জেনারেল মোশারফ তখন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বুশকে তেলাচ্ছে। বিশ্বে মুসলিমদের এমন করুণ ও অসহায় হাল দেখে সেদিনও আমি অঝোরে কেঁদেছিলাম। 

তখন আমার কিশোর মনে প্রশ্ন জাগে, আল্লাহ কোথায়? তিনি নাকি সর্বশক্তিমান! তো তিনি তার প্রিয় বান্দাদের দানব আমেরিকার হাত থেকে রক্ষা করছেন না কেন? তাহলে কি আল্লাহও নেই? সবই রূপকথার গল্প?

এই দু'টি ঘটনাই আমাকে যথেষ্ট ভাবিয়েছে, আল্লার-ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে মনে প্রথম প্রশ্ন উদয় হয়েছে। সেই থেকে আমি আল্লাহ ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছিলাম। আমি নিজেই নিজের কাছে অনেক প্রশ্ন করেছি, অনেক যুক্তি তর্ক-বিতর্ক করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই আমি ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ পাইনি। সেই থেকে আমার অবিশ্বাসের পথ চলা শুরু...

পরে আমার ধারণা বিভিন্ন অবিশ্বাসী দার্শনিকের সাথে মিলিয়ে দেখেছি। দেখলাম, আমার মতের সাথে তাঁদের মত অনেকটা মিলে গেছে। এই ঈশ্বর-আল্লাহ-গডের প্রতি আমার এই অবিশ্বাস একদিনে তৈরি হয়নি। তার জন্য অনেক কিছু জানতে হয়েছে, কতো বিনিদ্র রাত জেগে কতো বই পড়েছি, তার ইয়ত্তা নেই!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন