আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ইব্রাহিম ও মুহম্মদ - ধর্মীয় সীমালঙ্ঘনের পথিকৃৎ

লিখেছেন ক্যাটম্যান

ঠিক এক মাস আগে গত ০৭ আগস্ট ২০১৫ তারিখে ধর্মীয় মৌলবাদবিরোধী ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে ঢাকায় তার বাসগৃহে ঢুকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে শান্তির ধর্মের শান্তিপ্রিয় মুমিনেরা। গত সাত মাসে ধর্মীয় মৌলবাদবিরোধী চারজন ব্লগারকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। তবে একের পর এক ব্লগার খুন হলেও অপরাধের মূল হোতাসহ সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের ধরতে বাংলাস্তানের পুলিশ বাহিনী বিন্দুমাত্র সফলতা দেখাতে পারেনি। বরং পুলিশের নাকের ডগায় ধারাবাহিকভাবে একই ধরনের অপরাধ সংঘটিত হলেও পুলিশের ভূমিকা ছিল যথেষ্ট মাত্রায় সন্দেহজনক। এদিকে ব্লগারদের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশের ধারাবাহিক ব্যর্থতার কোনও সদুত্তর দিতে না পারলেও পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক ছাহেব ধর্মীয় বিষয়ে লেখালেখির ক্ষেত্রে মুক্তমনা ব্লগার ও লেখকদেরকে সীমালঙ্ঘন না করার নছিহত প্রসব করেছেন। আইজিপি ছাহেবের নছিহত প্রসবের একদিন পরে তারই নকশা নকল করে খানিকটা চড়া রাগে নছিহত-বমি উদগীরণ করেছেন বাংলাস্তানের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ছাহেব। নছিহত বমি করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ব্লগে বা অন্য কোনো মাধ্যমে লেখালেখি করলে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ছাহেবের এমন অর্বাচীন সুলভ নছিহত-বমি শ্রবণ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতার লাইন মনে পড়ে গেল। কবিতার লাইনটি হলো:

“কামাল তুনে কামাল কিয়া ভাই।”

মুক্তচিন্তা-বিরোধী নছিহত বমি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভাই সত্যিই কামাল করে দিয়েছেন। এমন ঘোষণার মাধ্যমে মন্ত্রী ছাহেব নিজেকে নবী মুহম্মদের ছাহাবির ভূমিকায় টেনে নামিয়েছেন। নিরীহ ব্লগারদের যারা নৃশংসভাবে হত্যা করছে, সে সকল অপরাধীদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে বিন্দুমাত্র সাফল্য দেখাতে না পারলেও পেয়ারে নবীজির মান বাঁচাতে ব্লগারদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঙ্কার প্রদানে সমর্থ হয়েছেন তিনি।

আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায় একই সময়ে একই সুরে ব্লগারদের ধর্মদ্রোহী না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু কেন? কারণ বাংলাস্তানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং এমন বার্তা মুক্তচিন্তক ব্লগারদের উদ্দেশ্যে নাজিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন তাদের। বাংলাস্তানের আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বশংবদ হিসেবে এমন প্রতিক্রিয়াশীল বার্তা নাজিল করেছেন প্রগতিশীল ব্লগারদের উদ্দেশ্যে। তার প্রমাণ পেলাম গত বৃহস্পতিবার বিকালে এক অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলা এক বক্তৃতায়। তিনি বলেছেন, “এদেশে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথা বলার কোনো অধিকার কারও নেই।

“ধর্ম পালন করবেন না, করবেন না। কিন্তু অন্যের ধর্মে আঘাত দিতে পারবেন না। এটা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হলে তা সহ্য করা হবে না।”

বলি, ম্যাডাম সহ্য করবেন না তো করবেনটা কী ? আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের সশস্ত্র নেতা-কর্মীদের দলবাজি, টেন্ডারবাজি ও দখলবাজি তো দিব্যি সহ্য করে যাচ্ছেন। আর নিরীহ ব্লগাররা না হয় একটু ব্লগবাজি করলই বা! তাঁরা তো ব্লগিং করে কারও জীবন কেড়ে নিচ্ছেন না। এমনকি কারও জমি দখলও করছেন না। তাঁরা যা করছেন, তাতে করে সমাজের প্রগতির চাকা সামনের দিকে ঘুরছে। আর আপনি কিনা সেই প্রগতিশীল ব্লগারদেরকেই হুমকি প্রদান করছেন। বলি, এত চোখরাঙানি আসে কোত্থেকে ? বঙ্গবন্ধুর দোহাই লাগে, দয়া করে এত মেজাজ দেখাবেন না। বাংলার অকুতোভয় ব্লগার ও মুক্তচিন্তকগণ আপনার অর্বাচীনসুলভ চোখরাঙানি দেখার জন্য টিকিট কেটে গ্যাল্যারিতে বসে নেই। তারা নিষ্ঠার সাথে স্ব স্ব দায়িত্ব অতীতেও পালন করেছেন, বর্তমানেও করছেন আর আগামীতেও পালন করতে কুণ্ঠিত হবেন না।

বাংলাস্তানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি ছাহেব - এদের কেউই যে ধর্মদ্রোহিতার তাৎপর্য উপলব্ধি করার উপযুক্ত নন, এতদিনে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। তাই এমন অর্বাচীনসুলভ আহ্বান ও হুমকি তাদের মুখেই শোভা পায়। এই অর্বাচীনত্রয় জীবনে কখনও মুহম্মদের আনীত কুরআন ঘেঁটে দেখেননি হয়ত। যদি কখনও ঘেঁটে দেখতেন,  তাহলে নিরীহ ব্লগারদের ধর্মদ্রোহিতা প্রতিরোধের ঘোষণা না দিয়ে তাদেরকে বরং অতিমাত্রায় ধর্মদ্রোহী হওয়ার আহ্বান জানাতেন। কারণ ধর্মদ্রোহিতা মুমিনদের নবী মুহম্মদের আদর্শ। মুহম্মদ তার জীবদ্দশায় ধর্মদ্রোহিতার অজস্র নজির স্থাপন করেছেন। মক্কা বিজয়ের পরে মুহম্মদ কাবাঘরে রক্ষিত তিনশ ষাটটি দেব-দেবীর মূর্তি ধ্বংস করেছেন। এটি কি মুহম্মদের ঐতিহাসিক সীমালঙ্ঘন ও ধর্মদ্রোহিতা নয়? এমনকি মুমিনদের জাতির জনক ইব্রাহিমের ধর্মদ্রোহিতার ইতিহাস কি কম উল্লেখযোগ্য? সেই বিবেচনায় ইব্রাহিম শুধু মুমিনদেরই জাতির জনক নন একই সাথে ধর্মদ্রোহীদেরও জাতির জনক হওয়ার দাবিদার। ইব্রাহিমের ধর্মদ্রোহিতার ইতিহাস জানা থাকলে বাংলাস্তানের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি ছাহেব হয়ত ধর্মদ্রোহী ব্লগারদেরকে ‘আনসারুল্লাহর’ জঙ্গীদের ন্যায় প্রতিরোধের আহ্বান না জানিয়ে বরং ইব্রাহিমের আদর্শ মেনে ব্লগারদের প্রতি অতিমাত্রায় ধর্মদ্রোহিতার আহ্বান জানাতেন। 

আল-কুরআন থেকে আমরা ইব্রাহিমের ধর্মদ্রোহিতার বিস্তারিত ঘটনা জানতে পারি, যা ধর্মদ্রোহীদের জন্য উত্তম দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ইব্রাহিম তার পিতৃধর্ম অস্বীকার ও সেই ধর্মের বিরোধিতায় যা করেছেন, কুরআনে তা নিম্নোক্ত ভাবে ব্যক্ত হয়েছে:
“যখন সে তাহার পিতা ও তাহার সম্প্রদায়কে বলিল, ‘এই মূর্তিগুলি কী, যাহাদের পূজায় তোমরা রত রহিয়াছ !’ উহারা বলিল, ‘আমরা আমাদের পিতৃপুরুষগণকে ইহাদের পূজা করিতে দেখিয়াছি।’ সে বলিল, ‘তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পিতৃপুরুষগণও রহিয়াছে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে।’ [সূরা আম্বিয়া: আয়াত ৫২-৫৪]
ইব্রাহিম তার পিতৃপুরুষগণকে কল্পিত দেব-দেবীর মূর্তিপূজায় লিপ্ত দেখতে পেয়ে তাদেরকে প্রশ্ন করলেন ‘এই মূর্তিগুলি কী?’ মূর্তি-উপাসকগণ ইব্রাহিমের উক্ত সাধারণ প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে না পেরে চিরাচরিত পদ্ধতিতে এক প্রকার অযৌক্তিক উত্তর দিয়ে ইব্রাহিমের কৌতূহল নিবৃত্তির চেষ্টা চালান। তাঁরা বলেন, ‘আমরা আমাদের পিতৃপুরুষগণকে ইহাদের পূজা করিতে দেখিয়াছি।’ অযৌক্তিক ধর্মকে যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকিয়ে রাখতে ‘পিতৃপুরুষ আচরিত ধর্মের’ অজুহাত দেয়ার হাস্যকর ধারা অন্ধ ধর্মবাদীগণ হাজার বছর আগে থেকেই চর্চা করে আসছেন, তাই অধুনাকালেও প্রায় প্রত্যেক ধর্মসম্প্রদায় নিজ নিজ ধর্মচর্চার প্রাথমিক কারণ ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ‘ধর্মটি পিতৃপুরুষগণের আচরিত, তাই আমরাও চর্চা করছি’ এমন বিবৃতিকে পুঁজি করে থাকেন। 

তবে অযৌক্তিক উত্তরে সন্তুষ্ট হতে না পেরে ইব্রাহিম তার পিতৃপুরুষগণকে কল্পিত দেব-দেবীর মূর্তিপূজার কারণে বিভ্রান্ত বলে তিরস্কার করলেন। এমনকি পিতৃপুরুষগণের আচরিত ধর্মও যে বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে, সে বিষয়ে ইব্রাহিম তার সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। এতে করে তাঁর সম্প্রদায় কিছুটা বিচলিত হয়ে তাকে প্রশ্ন করল:
“উহারা বলিল, ‘তুমি কি আমাদের নিকট সত্য আনিয়াছ, না তুমি কৌতুক করিতেছ?’ [সূরা আম্বিয়া: আয়াত ৫৫]
অন্ধ ধর্মবাদীগণ যখনই কারও যৌক্তিক প্রশ্নের সম্মুখীন হন, তখনই তারা প্রশ্নকারীর প্রয়াসকে কৌতুকের সাথে তুলনা করেন। যে কারণে ধর্মদ্রোহী ইব্রাহিমও এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। তার উত্তরে ইব্রাহিম তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট পৌত্তলিকদের পূজিত হাস্যকর দেব-দেবীর পরিবর্তে রহস্যময় এক দেবতাকে হাজির করলেন, যদিও চূড়ান্ত বিচারে পৌত্তলিকদের পূজিত দেবতার ন্যায় সেটিও হাস্যকর দেবতা বটে! 

এ বিষয়ে আল-কুরআনে বলা হয়েছে:
“সে বলিল, ‘না, তোমাদের প্রতিপালক তো আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক, যিনি উহাদের সৃষ্টি করিয়াছেন এবং এই বিষয়ে আমি অন্যতম সাক্ষী।’ [সূরা আম্বিয়া: আয়াত ৫৬]
এক্ষেত্রে ধর্মদ্রোহী ইব্রাহিমের সাথে বর্তমানকালের ধর্মদ্রোহী ও নাস্তিক ব্লগারদের মৌলিক পার্থক্য হলো, ইব্রাহিম পিতৃপুরুষগণের আচরিত ধর্মের বিরোধিতায় লিপ্ত হয়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এক ঈশ্বরের প্রবর্তন করেন। আর নাস্তিক ব্লগার ও মুক্তচিন্তকগণ যে কোনো অযৌক্তিক প্রথা, ধর্ম ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যৌক্তিক পন্থায় লড়াই করে বিজ্ঞানসম্মত সমাজ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকেন। কিন্তু এই উভয় প্রকার সংগ্রামের ক্ষেত্রে ধর্মবাদী-ধর্মদ্রোহীগণ যেমন পুরাতন ধর্মবাদীদের আক্রমণের শিকার হন, তেমনি ধর্মদ্রোহী বিজ্ঞানমনস্কগণও ধর্মান্ধদের নির্মম আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। 

যাহোক, এক্ষেত্রে ইব্রাহিম তার প্রচারিত নয়াপ্রভু আল্লাহর পক্ষাবলম্বন করে পিতৃপুরুষগণের পূজিত দেব-দেবীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রকাশ করতে থাকেন। তিনি বলেন:
‘শপথ আল্লাহর, তোমরা চলিয়া গেলে আমি তোমাদের মূর্তিগুলি সম্বন্ধে অবশ্যই কৌশল অবলম্বন করিব।’ অতঃপর সে চূর্ণ-বিচূর্ণ করিয়া দিল মূর্তিগুলিকে, উহাদের প্রধানটি ব্যতীত ; যাহাতে উহারা তাহার দিকে ফিরিয়া আসে। উহারা বলিল, ‘আমাদের উপাস্যগুলির প্রতি এইরূপ করিল কে ? সে নিশ্চয়ই সীমালঙ্ঘনকারী।’ [সূরা আম্বিয়া: আয়াত ৫৭-৫৯]
এই হলো মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম কর্তৃক সীমালঙ্ঘনের ঐশী ইতিহাস। যিনি পিতৃপুরুষগণের আচরিত পৌত্তলিক ধর্মের বিরুদ্ধে শুধু বিদ্রোহই ঘোষণা করেননি, একই সাথে কৌশলপূর্ণভাবে পৌত্তলিকদের পূজিত দেব-দেবীর মূর্তি ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেন। তাকে অনুসরণ করেই পরবর্তীতে মুমিনদের পেয়ারে নবি মুহম্মদ মক্কা বিজয়ের পরে পৌত্তলিক মন্দির কাবাঘরে রক্ষিত ৩৬০ টি মূর্তি ভেঙে চুরমার করে দেন। মুহম্মদের দুর্বিনীত অনুসারীগণ আজও সুযোগ পেলেই তার সুন্নাহ অনুসরণপূর্বক ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও সিনাগগে হামলা চালিয়ে ও অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক প্রাণহাণিসহ অপরিসীম ক্ষতি সাধন করে থাকেন। অথচ মদিনা সনদের ধ্বজাধারী আওয়ামি সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সীমালঙ্ঘনকারী ইব্রাহিম ও মুহম্মদের ন্যাক্কারজনক সুন্নাহ বেমালুম আড়াল করে প্রগতিশীল নিরীহ ব্লগার ও মুক্তচিন্তকদেরকে অতি আবশ্যকীয় সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থাকার হুমকি প্রদান করেছেন। কিন্তু পরধর্মবিদ্বেষী ইব্রাহিম ও মুহম্মদ প্রবর্তিত গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাহ - ধর্মীয় সীমালঙ্ঘন, যা মুমিন-মুসলমানদের জন্য অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। তবে মুসলমানগণ ভিন্ন ধর্মের সীমালঙ্ঘনে যথেষ্ট মাত্রায় আগ্রহী হলেও নিজ ধর্মের সীমালঙ্ঘনের বিষয়ে চরম অনীহা পোষণ করে থাকেন। এক্ষেত্রে মুক্তচিন্তক ব্লগারগণ কোনো প্রকার বৈষম্য চর্চায় পক্ষপাতদুষ্ট নন। তাঁরা সকল ধর্মের সীমালঙ্ঘনে সমানভাবে আগ্রহী।

এদিকে পৌত্তলিকদের পরম পূজ্য দেব-দেবীর মূর্তি ভাঙার পেছনে কে জড়িত, তার অনুসন্ধানে যখন তারা ব্যাপৃত হলেন, সেক্ষেত্রে তারা সনাক্ত করতে সক্ষম হলেন, ইব্রাহিম নামে এক যুবক এমন অপকর্ম করে থাকবে হয়ত। সে সম্পর্কে আল-কুরআনে বলা হয়েছে:
কেহ কেহ বলিল, ‘এক যুবককে উহাদের সমালোচনা করিতে শুনিয়াছি; তাহাকে বলা হয় ইব্রাহিম।’ উহারা বলিল, ‘তাহাকে উপস্থিত কর লোকসম্মুখে, যাহাতে উহারা প্রত্যক্ষ করিতে পারে।’ উহারা বলিল, ‘হে ইব্রাহিম ! তুমিই কি আমাদের উপাস্যগুলির প্রতি এইরূপ করিয়াছ ?’ সে বলিল, ‘বরং ইহাদের এই প্রধান, সে-ই তো ইহা করিয়াছে, ইহাদেরকে জিজ্ঞাসা কর যদি ইহারা কথা বলিতে পারে।’ [সূরা আম্বিয়া: আয়াত ৬০-৬৩ ]
আলোচ্য বর্ণনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, মন্দিরের পুরোহিত ও লোকজনের অনুপস্থিতিতে ঠাকুরঘরে প্রবেশ করে ইব্রাহিম একটি বড় মূর্তি ব্যতীত অন্যান্য সকল মূর্তি ভেঙে ফেলেন। তিনি সচেতনভাবে তামাশা করার উদ্দেশ্যে বড় মূর্তিটিকে অক্ষত রাখেন। পৌত্তলিক সম্প্রদায়ের লোকজন যখন তাকে ঘটনাস্থলে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করল, তার উত্তরে ইব্রাহিম মূর্তি ভাঙার অপকর্মে নিজের সম্পৃক্তি অস্বীকার করে তাঁর কৃত অপকর্মের দায় একমাত্র অক্ষত বড় মূর্তিটির উপর চাপিয়ে দেন। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, ইব্রাহিম আল-কুরআন স্বীকৃত একজন নবী হওয়া সত্ত্বেত্ত মূর্তি ভাঙার অপকর্মে নিজের দায় এড়ানোর জন্য অবলীলায় মিথ্যা বিবৃতি প্রদান করেন। অবশ্য ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে প্রায়শ মিথ্যা বলার অভিযোগ একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। যে-কারণে একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ইব্রাহিম তার জীবদ্দশায় তিনবার মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছেন। মূর্তি ভাঙার প্রেক্ষাপটে তার দেয়া মিথ্যা বিবৃতিটি হাদিসে বর্ণিত তিনটি মিথ্যা বিবৃতির একটি। যদিও ধর্মান্ধ মুমিনগণ ইব্রাহিমের মিথ্যা বিবৃতির বিষয়টি স্বীকার করতে চান না; বরং তারা মুহম্মদের হাদিস অস্বীকার করে হলেও মিথ্যাবাদী ইব্রাহিমের চারিত্রিক নিষ্কলুষতা প্রতিষ্ঠায় তৎপর ভূমিকা পালন করে থাকেন। তবে সুচতুর মুমিনগণ ইব্রাহিমের মিথ্যা বিবৃতি, যা আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের নানা কর্মকাণ্ডে তা যথাযথভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশে ব্লগার হত্যার অভিযোগে ধৃত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কতিপয় সক্রিয় জঙ্গী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ব্লগার হত্যায় নিজেদের দায় অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তা স্বীকার করেছেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নিরীহ ব্লগার হত্যায় সংশ্লিষ্ট জঙ্গীগণ হত্যাকাণ্ডের দায় অস্বীকার ও আত্মরক্ষার নিমিত্তে মিথ্যাবাদী নবী ইব্রাহিমকে পূর্ণ অনুসরণ করেছেন। নিঃসন্দেহে তারা মিথ্যাবাদী নবী ইব্রাহিমের উত্তম অনুসারী। তবে প্রগতিশীল ব্লগার ও মুক্তচিন্তকগণ নবী ইব্রাহিমের ন্যায় ধর্মদ্রোহী হলেও ইব্রাহিমের ন্যায় মিথ্যাভাষণ চর্চায় তারা একেবারেই অভ্যস্ত নন।

তবে ঘটনার এ পর্যায়ে এসে পৌত্তলিকগণ বুঝতে সমর্থ হন যে, ইব্রাহিম তাদের সাথে ধৃষ্টতাপূর্ণ তামাশায় লিপ্ত হয়েছেন। একইসাথে ইব্রাহিমের কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে তাঁরা এটি বুঝতেও সক্ষম হন যে, তাদের পূজিত দেবতাসমূহ বাস্তবিক বিচারে খুবই অসহায়। এক্ষেত্রে ইব্রাহিমের সুবাদে পৌত্তলিকগণ বাস্তবিক বোধের সম্মুখীন হলেও তার ফল স্থায়ী হয় না। কারণ আপাতদৃষ্টিতে ইব্রাহিম তার পিতৃপুরুষগণের আচরিত প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলেও মূলত তাঁর উদ্দেশ্য ছিল নিজের প্রবর্তিত নয়া প্রতিক্রিয়াশীলতাকে পুরোনো প্রতিক্রিয়াশীলতার স্থলে প্রতিস্থাপন করা। অর্থাৎ মূর্তিবহুল প্রচলিত দেব-দেবীর স্থলে মূর্তিবিহীন এক আধ্যাত্মিক ও রহস্যময় ঈশ্বরকে প্রতিষ্ঠিত করা, যা পৌত্তলিকগণের পূজিত বহু ঈশ্বরের সাথে ইব্রাহিমের আনীত নয়া ঈশ্বরের বিরোধ সৃষ্টি করে। যে কারণে নিজেদের ভুল সম্পর্কে ইব্রাহিমের পৌত্তলিক পিতৃপুরুষগণের সাময়িক বোধোদয় হলেও তারা ইব্রাহিমের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করেন। এ প্রসঙ্গে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে:
তখন উহারা মনে মনে চিন্তা করিয়া দেখিল এবং একে অপরকে বলিতে লাগিল, তোমরাই তো সীমালঙ্ঘনকারী ! অতঃপর উহাদের মস্তক অবনত হইয়া গেল এবং উহারা বলিল, ‘তুমি তো জানই যে, ইহারা কথা বলে না।’ ইব্রাহিম বলিল, ‘তবে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত কর যাহা তোমাদের কোন উপকার করিতে পারে না, ক্ষতিও করিতে পারে না ? ধিক্ তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাহাদের ইবাদত কর তাহাদেরকে ! তবুও কি তোমরা বুঝিবে না ? উহারা বলিল, ‘তাহাকে পোড়াইয়া দাও, সাহায্য কর তোমাদের দেবতাগুলিকে, তোমরা যদি কিছু করিতে চাও।’ [সূরা আম্বিয়া: আয়াত, ৬৪-৬৮]
ইব্রাহিম পৌত্তলিকদের বোঝাতে চেষ্টা করেন, তাদের পূজিত দেব-দেবী তাদের উপকার করতে যেমন অসমর্থ, তেমনি অসমর্থ তাদের ক্ষতি সাধনে। যদিও এমন বিবৃতি তার আনীত ঈশ্বর আল্লাহর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, তবুও তিনি সচেতনভাবে প্রতিক্রিয়াশীলতার বিপরীতে প্রতিক্রিয়াশীলতার চর্চা করেছেন। ফলশ্রুতিতে পিতৃপুরুষের ধর্ম-অস্বীকারকারী ও প্রতিক্রিয়াশীলতার চর্চাকারী ইব্রাহিমকে পৌত্তলিক পিতৃপুরুষগণের আক্রমণের শিকার হতে হয়। পৌত্তলিকগণ তাদের চরম বিপদগ্রস্ত দেব-দেবীকে সাহায্য করতে নিজ সম্প্রদায়ের লোকজনকে আহ্বান জানান এবং পৌত্তলিক ধর্মদ্রোহী ইব্রাহিমকে শায়েস্তা করতে তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। অতীতে ধর্মান্ধ পৌত্তলিকগণ অযৌক্তিক ধর্ম ও অসহায় দেব-দেবীর মান বাঁচাতে যেমন করে ভগবানের সাহায্যকারী দল গঠন করেছিলেন, তেমনি তারই আদলে অসহায় আল্লাহ-নবীর মান বাঁচাতে আল্লাহর সাহায্যকারী দল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম গঠন করেছেন বর্তমানকালের ধর্মান্ধ মুসলিম জঙ্গীগণ। মুসলমানদের জাতির পিতা ইব্রাহিম ধর্মদ্রোহী ও সীমালঙ্ঘনকারী হওয়ার কারণে যেমন সাবেকী পৌত্তলিকগণ কর্তৃক নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন, তেমনি বর্তমানকালের প্রগতিশীল ব্লগারগণও সেই নিপীড়িত ইব্রাহিমের প্রবর্তিত ধর্মের অন্ধ অনুসারীগণ কর্তৃক নির্মম আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। ধর্মান্ধ মুসলিম জঙ্গীগণ বর্তমানে ইব্রাহিমের ধর্মদ্রোহিতা ও সীমালঙ্ঘনের সুন্নাহ ভুলে সাবেকী পৌত্তলিকগণের পদাঙ্ক অনুসরণ করাকেই নিজেদের অনুসৃত অযৌক্তিক ইসলাম ধর্ম ও অসহায় আল্লাহ-নবীকে টিকিয়ে রাখার কার্যকর পন্থা বিবেচনা করছেন, যা নবী ইব্রাহিমের জন্য চরম অবমাননাকর বিষয়। ব্লগারগণ ধর্মদ্রোহিতা ও সীমালঙ্ঘনের মাধ্যমে মূলত নবী ইব্রাহিমকেই অনুসরণ করছেন। তাই নবী ইব্রাহিম শুধু এককভাবে মুসলমানদেরই জাতির পিতা বিবেচিত হওয়ার দাবিদার নন, তিনি একইসাথে ধর্মদ্রোহী ব্লগার ও মুক্তচিন্তকদের জাতির পিতা বিবেচিত হওয়ারও দাবিদার। অথচ বাংলাস্তানের আইজিপি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী ধর্মদ্রোহী ইব্রাহিম নবীর সীমালঙ্ঘনের সুন্নাহ অস্বীকারকারী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের হত্যাকাণ্ডের কারিশমায় মুগ্ধ হয়ে ধর্মদ্রোহী ও প্রগতিশীল ব্লগারদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তারা যে প্রকারান্তরে সাবেকী পৌত্তলিকদের চর্চিত প্রতিক্রিয়াশীলতার অনুসরণ করছেন, বিষয়টি হয়ত তারা উপলব্ধি করতে পারছেন না। 

তারা নাস্তিক ব্লগারদের উদ্দেশ্যে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা তেঁতুল শফির মতই হুমকি প্রদান করেছেন। চরম ধর্মভাবাপন্ন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই বাংলাদেশে প্রগতিশীল ব্লগার ও মুক্তচিন্তকদের প্রতি সরকার প্রধান ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহীগণ কর্তৃক স্বাধীন মতামত প্রকাশ-বিরোধী হুমকি প্রদান একেবারেই অনভিপ্রেত। বিষয়টি যত দ্রুত তাঁরা বুঝবেন তত দ্রুত তা দেশ ও দশের মঙ্গল বয়ে আনবে। তাই বলি, সময় থাকতে অতি দ্রুত ধর্মদ্রোহী ইব্রাহিমের ন্যায় ধর্মদ্রোহী ব্লগার ও মুক্তচিন্তকদের পক্ষাবলম্বন করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন