আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

লওহে মাহফুজের সন্ধানে: ক্যাটম্যান সিরিজ - ০৬

লিখেছেন ক্যাটম্যান

মুক্তচিন্তা চর্চা, প্রচার ও প্রসারের কারণে ধর্মান্ধ মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর নৃশংস হামলার শিকার হুমায়ুন আজাদ, রাজিব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় ও ফয়সল আরেফিন দীপন সহ নিহত ও আহত সকল মুক্তচিন্তকের স্মরণে এই লেখাটি অপরিমেয় ভালোবাসার স্মারক স্বরূপ নিবেদন করছি।


মুহম্মদের আল্লাহ ইহুদিদের জন্য শনিবারের তাৎপর্য স্বীকার করলেও মুহম্মদের অনুসারীদের জন্য শনিবারের করণীয় নির্ধারণ করেননি। এত গুরুত্বপূর্ণ শনিবার, যা ইহুদিদের প্রতি প্রদত্ত, কিন্তু মুহম্মদের অনুসারীদের জন্য তা গুরুত্বহীন বিবেচনা করে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অথচ মুহম্মদি কুরআনে দাবি করা আছে, আল্লাহ মুহম্মদের পরমেশ্বর সেই একই আল্লাহ মূসারও পরমেশ্বর। তা সত্ত্বেও মুহম্মদের অনুসারীদের জন্য বৈষম্যমূলক এমন সুবিধার বৈধতা দিতে মুহম্মদি কুরআনে বলা হয়েছে:

৫ম আয়াত: “শনিবার পালন তো কেবল তাহাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হইয়াছিল, যাহারা এ সম্বন্ধে মতভেদ করিত। যে বিষয়ে উহারা মতভেদ করিত তোমার প্রতিপালক তো অবশ্যই কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে উহাদের বিচার-মীমাংসা করিয়া দিবেন।” [সূরা নাহল: ১২৪]

এছাড়াও বাইবেলের চতুর্থ আজ্ঞায় ১১ নম্বর শ্লোকে সাব্বাৎ দিন পবিত্র হওয়ার জন্য ঈশ্বর কর্তৃক ছয় দিনে দুনিয়া সৃষ্টি করে সপ্তম দিনে বিশ্রামের যে-ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, তার সাথে মিল রেখে মুহম্মদি কুরআনেও আয়াত প্রসব করা হয়েছে। যেমন:

প্রথম আয়াত: “তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন।” [সূরা আল আরাফ: ৫৪]

দ্বিতীয় আয়াত: “আল্লাহ যিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও উহাদের অন্তর্বর্তী সমস্ত কিছু সৃষ্টি করিয়াছেন ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন।” [সূরা সাজদা: ৪]

উল্লেখ্য যে, উক্ত আয়াতসমূহে বিবৃত 'আল্লাহর আরশ' দ্বারা ‘আরামকেদারা’ বোঝানো হয়েছে, যে-আরামকেদারায় সপ্তম দিনে সমাসীন হয়ে আল্লাহ বিশ্রাম গ্রহণ করেছেন।

পঞ্চম আজ্ঞা: “তোমার পিতা ও তোমার মাতাকে গৌরব আরোপ করবে, তোমার পরমেশ্বর প্রভু তোমাকে যে দেশভূমি দিচ্ছেন, সেই দেশভূমিতে তুমি যেন দীর্ঘজীবী হও।” [যাত্রাপুস্তক ২০:১২]

ষষ্ঠ আজ্ঞা: “নরহত্যা করবে না।” [যাত্রাপুস্তক ২০:১৩]

সপ্তম আজ্ঞা: “ব্যভিচার করবে না।” [যাত্রাপুস্তক ২০:১৪]

অষ্টম আজ্ঞা: “অপহরণ করবে না।” [যাত্রাপুস্তক ২০:১৫]

নবম আজ্ঞা: “তোমার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না।” [যাত্রাপুস্তক ২০:১৬]

দশম আজ্ঞা: “তোমার প্রতিবেশীর ঘরের প্রতি লোভ করবে না। প্রতিবেশীর স্ত্রী, তার দাস-দাসী, তার বলদ-গাধা, তার কোন কিছুরই প্রতি লোভ করবে না।” [যাত্রাপুস্তক ২০:১৭]

ওপরোক্ত দশটি আজ্ঞা বাইবেলের দ্বিতীয় বিবরণ ৫: ৪-২ শ্লোকেও বর্ণিত হয়েছে।

উক্ত দশটি আজ্ঞা মূসা তার কল্পিত পরমেশ্বরের নামে চালিয়ে দিলেও বস্তুত তাতে কোনো অতিলৌকিক ঈশ্বরের হাত ছিল না। ইস্রায়েলের জনগণকে একটি সুশৃঙ্খল জাতিতে পরিণত করার উদ্দেশ্যে স্বয়ং মূসা উক্ত দশ আজ্ঞা প্রণয়ন করে তার কল্পিত পরমেশ্বরের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। প্রাচ্য বিশারদদের মতে, মূসার দশ আজ্ঞা ও তওরাতে বর্ণিত ৬১৩ টি বিধি-নির্দেশে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলনীয় আইন, হিত্তিয় আইন ও প্রাচীন মিশরীয় আইনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ওই সমস্ত প্রাচীন আইন সংহিতায় বিবৃত আইনসমূহের সাথে মূসার দশ আজ্ঞা ও তওরাতে বর্ণিত আইন সমূহের বিশেষ সাদৃশ্য বিদ্যমান। এক্ষেত্রে পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম আইন সংহিতা হাম্মুরাবির কোড অন্যতম।

প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার ষষ্ঠ ব্যাবিলনীয় রাজা হাম্মুরাবি এই কোড প্রবর্তন করেন। যিনি খ্রিষ্টপূর্ব ১৭৯২ সাল থেকে ১৭৫০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪২ বছর ব্যাবিলনের সম্রাট ছিলেন। ব্যাবিলনের জনগণকে সুশৃঙ্খলভাবে শাসনের উদ্দেশ্যে তিনি খ্রিষ্টপূর্ব ১৭৮৬ সালের দিকে আক্কাদীয় ভাষায় ২৮২ টি আইন বিশিষ্ট পাথরে খোদিত আইন সংহিতা প্রবর্তন করেন, যা হাম্মুরাবির কোড নামে ইতিহাসে বিখ্যাত। একই সাথে প্রাচীন নিকট প্রাচ্যে প্রাপ্ত আইন সংহিতা সমূহের মধ্যে যা অন্যতম। এটি সরকার পরিচালনার প্রাচীনতম মৌলিক আইন বা সংবিধান হিসেবে গণ্য হয়। হাম্মুরাবির কোডে লিপিবদ্ধ ১৯৬ নং কোড, যা প্রাচীন আইনের ইতিহাসে এক কুখ্যাত কোড হিসেবে পরিচিত। হাম্মুরাবির উক্ত কোড কিছুটা পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে মূসা নবী তার প্রণীত তওরাতে তা পরমেশ্বরের আজ্ঞারূপে অন্তর্ভুক্ত করেন। কোডটি নিম্নরূপ:
যদি কেউ কোন ব্যক্তির একটি চোখ বিনষ্ট করে, তবে তারও এক চোখ বিনষ্ট করা হবে। যদি কেউ কোন ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গে, তবে তারও হার ভাঙ্গা হবে। যদি কেউ কোন মুক্তমানুষের একটি চোখ বিনষ্ট করে অথবা একটি হাড় ভাঙ্গে তাহলে অপরাধী ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকেএক ‘মানা’ পরিমান রূপা পরিশোধ করবে। যদি কেউ একই অপরাধ কোন ব্যক্তির অধীনস্থ দাসের প্রতি সংঘটিত করে, তবে অপরাধী ব্যক্তি উক্ত দাস-প্রভুকে মুক্তমানুষের প্রতি সংঘটিত সমঅপরাধের জন্য প্রযোজ্য জরিমানার অর্ধেক পরিশোধ করবে। [হাম্মুরাবির কোড: ১৯৬]
উক্ত কোড দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মূসার পরমেশ্বর ইস্রায়েলের জনগণের উদ্দেশ্যে যা অবতীর্ণ করলেন, তা নিম্নরূপ:
কিন্তু যদি কোন বিপদ ঘটে তবে তোমাকে এধরণের পরিশোধ আদায় করতে হবে: প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত, হাতের বদলে হাত, পায়ের বদলে পা, দাহের বদলে দাহ, ক্ষতের বদলে ক্ষত, কশাঘাতের বদলে কশাঘাত। [যাত্রাপুস্তক ২১:২৩-২৫]
আর মহাপ্রতারক মুহম্মদ বাইবেল থেকে উক্ত বিধানটি চুরি করে নিজ প্রবর্তিত কুরআনে অন্তর্ভুক্ত করেছেন নিম্নোক্ত ভাষায়:
আমি তাহাদের জন্য উহাতে বিধান দিয়াছিলাম, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখমের বদলে অনুরূপ যখম। অতঃপর কেহ উহা ক্ষমা করিলে উহাতে তাহারই পাপ মোচন হইবে। আল্লাহ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে যাহারা বিধান দেয় না, তাহারাই জালিম। [সূরা মায়িদা: ৪৫]
এক্ষেত্রে আমাদের বুঝতে আর বাকি থাকে না যে, ব্যাবিলন ও প্রাচীন মিশরে প্রাপ্ত বিভিন্ন আইন সংহিতাসমূহ, মূসার লিখিত তওরাত ও মুহম্মদ প্রবর্তিত কুরআনের মাঝে পরিষ্কার যোগসূত্র বিদ্যমান। 

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন