আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

লওহে মাহফুজের সন্ধানে: ক্যাটম্যান সিরিজ - ০৭

লিখেছেন ক্যাটম্যান

মুক্তচিন্তা চর্চা, প্রচার ও প্রসারের কারণে ধর্মান্ধ মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর নৃশংস হামলার শিকার হুমায়ুন আজাদ, রাজিব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় ও ফয়সল আরেফিন দীপন সহ নিহত ও আহত সকল মুক্তচিন্তকের স্মরণে এই লেখাটি অপরিমেয় ভালোবাসার স্মারক স্বরূপ নিবেদন করছি।


তাছাড়া প্রাচীন কোডসমূহের মধ্যে হাম্মুরাবির কোড দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তৎকালীন নিকট-প্রাচ্যে আরও কয়েকটি আইন সংহিতা প্রবর্তিত হয়। যেমন - হিত্তিয় আইন, অ্যাসিরিয় আইন ও মূসার আইন। তবে মূসা তার দশ আজ্ঞা ও তওরাতের অন্যান্য বিধি-নির্দেশ প্রবর্তনের ক্ষেত্রে হাম্মুরাবির কোডসহ নেসিলিমের কোড বা হিত্তিয় আইন ও প্রাচীন মিশরীয় মা’আত দেবীর নামে প্রবর্তিত ৪২ টি নঞর্থক স্বীকারোক্তির দ্বারাও প্রভাবিত হন।

নেসিলিমের কোড খ্রিষ্টপূর্ব ১৬৫০-১৫০০ সালের দিকে প্রাচীন হিত্তিয়দের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হিত্তিয় সাম্রাজ্যে পাওয়া যায়। আধুনিক তুর্কি জাতির পূর্বসুরী হিসেবে এই হিত্তিয়দের বিবেচনা করা হয়ে থাকে। হিত্তিয়দের বর্ণনা মূসার গ্রন্থেও পাওয়া যায়।

আর খ্রিষ্টপূর্ব ১২৫০ সালের দিকে প্রাচীন মিশরে মা’আত দেবীর অনুসারীদের নৈতিকতার উন্নয়নে একটি সংরক্ষিত নথি-ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়। প্রাচীন মিশরের ধর্ম ও নৈতিকতার উন্নয়নে যা কেন্দ্রীয় বিষয় বলে গণ্য হতো। মা’আত দেবীর অনুসারীদের মতে, বিদেহী আত্মাকে মৃত্যুপরবর্তী জগতে বিচারের সময় ৪২ টি নঞর্থক স্বীকারোক্তি দিতে হবে। যেমন - আমি কোনো নর-নারীকে হত্যা করিনি, আমি খারাপ কথা বলিনি ইত্যাদি।

যদি কেউ মৃত্যুপরবর্তী জগতে মা’আত দেবী নির্ধারিত ৪২ টি নঞর্থক স্বীকারোক্তি দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সে পৃথিবীতে পুনর্জন্ম লাভ করবে। এ কারণে মিশরে মা’আত দেবীর প্রত্যেক অনুসারী ৪২ টি নঞর্থক স্বীকারোক্তি মুখস্ত করত। আর এভাবেই মিশরে মা’আত দেবীর পূজা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। উক্ত ৪২ টি নঞর্থক স্বীকারোক্তি ছিল মিশরের ইতিহাসে প্রথম লিপিবদ্ধ আইন। অধিকাংশ গবেষকের মতে মূসা তার প্রবর্তিত দশ আজ্ঞায় উক্ত ৪২ টি নঞর্থক স্বীকারোক্তির উপাদান ও ধরন অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

এমন প্রতারণামূলকভাবে প্রণীত মূসার দশ আজ্ঞার স্বীকৃতি মুহম্মদের আল-কুরআনেও বিদ্যমান। যেমন:
বল, ‘আস, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যাহা হারাম করিয়াছেন তোমাদেরকে তাহা পড়িয়া শুনাই। উহা এই : ‘তোমরা তাঁহার কোন শরিক করিবে না, পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করিবে, দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করিবে না, আমিই তোমাদের ও তাহাদেরকে রিযিক দিয়া থাকি। প্রকাশ্যে হউক কিংবা গোপনে হউক, অশ্লীল কাজের নিকটেও যাইবে না। আল্লাহ যাহার হত্যা নিষিদ্ধ করিয়াছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাহাকে হত্যা করিবে না।’ তোমাদেরকে তিনি এই নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা অনুধাবন কর। [সূরা আনআম: ১৫১]
ইস্রায়েলের জনগণকে নাটকীয়ভাবে দশ আজ্ঞা প্রদানের পর মূসার পরমেশ্বর মূসাকে একান্তে আরও বিস্তৃত বিধি-নির্দেশ সম্বলিত সন্ধি পুস্তক প্রদান করেন। কিন্তু মজার বিষয় হলো, উক্ত সন্ধি পুস্তকের যাবতীয় বিধি-নির্দেশ মূসা নিজ হাতে লিখেছেন। কারণ পরমেশ্বরের নিকট থেকে সমস্ত আজ্ঞা আনার ব্যাপারে ইস্রায়েলের জনগণ মূসাকেই মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করেছে এবং মূসার মাধ্যমে প্রাপ্ত পরমেশ্বরের সমস্ত নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালনের প্রতিশ্রুতি পূর্বেই প্রদান করেছে তারা। সেই প্রেক্ষাপটে যদি পরমেশ্বর মূসাকে নিজের সমস্ত ঐশ্বরিক নির্দেশনা লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব প্রদান করে এবং তা লিপিবদ্ধ করে পরমেশ্বর প্রদত্ত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে থাকে, সেক্ষেত্রে মূসাকে নিজ হাতে তওরাত লিখে পরমেশ্বরের নামে চালিয়ে দেয়ার অপরাধে প্রতারক ঠাওরানোর সুযোগ নেই পূর্বেই তার প্রতি আস্থা স্থাপনকারী ইস্রায়েলি জনগণের। আর সেই সুযোগে মূসা তার কল্পিত পরমেশ্বরের বিধানসমূহ নিজ হাতে লেখার চরম স্বাধীনতা যেমন উপভোগ করেছেন, তেমনি তা স্বীকার করতেও দ্বিধাবোধ করেন নি। যেমন:
পরে তিনি মোশীকে বললেন, ‘তুমি ও আরোন, নাদাব ও আবিহু এবং ইস্রায়েলের প্রবীনবর্গের মধ্য থেকে সত্তরজন, তোমরা মিলে প্রভুর কাছে উঠে এসো, আর দূরে থেকে প্রণিপাত কর। কেবল মোশীই প্রভুর কাছে এগিয়ে আসবে; ওরা কাছে এগিয়ে আসবে না, জনগণও তার সঙ্গে আরোহণ করবে না।’ মোশী গিয়ে জনগণের কাছে প্রভুর সমস্ত বাণী ও সমস্ত বিধিনিয়ম জানিয়ে দিলেন; সমস্ত লোক একসুরে উত্তরে বলল, ‘প্রভু যা কিছু বলেছেন, আমরা তা সবই পালন করব।' তাই মোশী প্রভুর সমস্ত বাণী লিখে রাখলেন। [যাত্রাপুস্তক ২৪: ১-৪]
যেহেতু উক্ত শ্লোকে স্পষ্ট স্বীকার করা হয়েছে যে, তওরাত মূসার নিজ হাতে লেখা, সেহেতু মূসার গ্রন্থ তওরাত ঈশ্বরের নিজ হাতে লেখা, এমন ভাবার অবকাশ আমাদের নেই। তবে তওরাত মূসার নিজ হাতে লেখা গ্রন্থ হলেও তা ঈশ্বর প্রদত্ত কি না, সে বিষয়ে আমরা সন্দেহ পোষণ করতে পারি। অর্থাৎ ঈশ্বর নিজ হাতে তওরাত লিখে না দিলেও তার কাছ থেকে শুনে মূসা নিজে লিখেছেন কি না ? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে: আদপেই মূসার ঈশ্বর বলে কেউ আছে কি, যিনি মূসাকে ঐশী গ্রন্থ প্রদানের তাড়না অনুভব করেন?

আমরা এই আলোচনায় পূর্বেও দেখেছি যে, মূসা সিনাই পর্বতের অগ্নি-ধূমময় চূড়ায় তার কল্পিত পরমেশ্বরকে দেখানোর এক মহা নাটকের আয়োজন করে ইস্রায়েলের জনগণকে সফলভাবে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হন। যদিও ইস্রায়েলের জনগণ সেদিন পর্বতচূড়ায় ঈশ্বর অথবা মূর্তিমান কিছু দেখেনি। তবুও সে ঘটনাকে ঈশ্বরের উপস্থিতি নির্দেশক ঘটনা বলে দাবি করেন মূসা। এ বিষয়ে বাইবেলে বলা হয়েছে: 
তাই যেদিন প্রভু হোরেবে আগুনের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, যেহেতু সেদিন তোমরা মূর্তিমান কিছু দেখনি, সেজন্য তোমাদের নিজেদের বিষয়ে খুবই সাবধান হও। [দ্বিতীয় বিবরণ ৪: ১৫]
বিধায় মূসার পরমেশ্বরকে ইস্রায়েলের জনগণ চাক্ষুষ দর্শনে ব্যর্থ হওয়ায় এটাই প্রমাণ হয় যে, মূসার পরমেশ্বর বলে আদৌ কোনো সত্তার অস্তিত্ব নেই।

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন