আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বুধবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৬

ভণ্ড জাকির নায়েকের ভণ্ডামি: পর্ব দুই (ষষ্ঠ অংশ)

লিখেছেন ডঃ চ্যালেঞ্জ নায়েক


এরপর জাকির নায়েক সূরা ইয়াসিনের ৩৮ নাম্বার আয়াতটি উল্লেখ করেছে, “সূর্য ভ্রমণ করে ওহার নির্দিষ্ট পথে নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।” জাকির নায়েক দাবি করেছে, এখানে ‘মুসতাকার’ অর্থ একটি নির্দিষ্ট গন্তব্য বা নির্দিষ্ট সময়। এবং আবারও জাকির নায়েক একটি শব্দের দুটো অর্থ উপস্থাপন করে প্রতারণা করার পথ তৈরি করেছে। কোনো শব্দের একাধিক অর্থ থাকতেই পারে, এটাই ভাষার সাধারণ বৈশিষ্ট্য। কিন্তু যখন কোনো শব্দ কোনো একটি বাক্যে ব্যবহার করা হয়, তখন শুধু ওই শব্দটি দ্বারা একটা নির্দিষ্ট অর্থই বোঝানো হয়। তাই এখানে মুসতাকার অর্থ হয় নির্দিষ্ট গন্তব্য হবে, না হলে নির্দিষ্ট সময় হবে। কিন্তু সব অনুবাদকই এখানে নির্দিষ্ট গন্তব্য এই অর্থটিই ব্যবহার করেছে। আর বুখারি, খণ্ড ৪, অধ্যায় ৫৪, হাদিস ৪২১ অনুযায়ী এই আয়াতে নির্দিষ্ট গন্তব্য এই অর্থটিই ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং জাকির নায়েকের ভিন্ন অর্থ এনে কুরআনের অর্থ পরিবর্তন করে ভিন্ন অর্থ আনার কোনো সুযোগই নেই। সুতরাং অনুবাদ নিয়ে জাকির নায়েক এখানে প্রতারণা করতে পারবে না। প্রতারক জাকির নায়েকের হাত ওই হাদিসটি বেঁধে দিয়েছে।

জাকির নায়েক এরপর বলেছে, বিজ্ঞান বর্তমানে জেনেছে যে, সূর্য সৌরজগতকে নিয়ে বিশ্বজগতের একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টের দিকে যাচ্ছে, যেটাকে জাকির নায়েক দাবি করেছে - বিজ্ঞানীরা নাকি সেই পয়েন্টকে সোলার এপেক্স বলে। জাকির নায়েক আরো দাবি করেছে, সূর্য নাকি ওই পয়েন্টের দিকে ১২ মাইল বেগে যাচ্ছে। জাকির নায়েকের দাবি - সূর্য যে-পয়েন্টের দিকে যাচ্ছে, সেই পয়েন্টের নাম কন্সোলেশন অফ হারকিউলিস। আসলে জাকির নায়েক কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে কুরআনের অর্থের পরিবর্তন তো করেছেই, তার ওপর তার মনগড়া ব্যাখ্যা দাঁড় করেছে। আর এখন বিজ্ঞানকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে অপবিজ্ঞান ছড়াচ্ছে।

সূর্য গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে (অথবা উপবৃত্তাকারে) প্রদক্ষিণ করে। সূর্যের প্রতি বার গ্যালাক্সিকে পরিভ্রমণ করতে ২২৫ মিলিয়ন বছরেরও বেীম সময় লাগে। আর সূর্যের গ্যালাক্সিকে পরিভ্রমণ করার সময় এর যাত্রাপথে বা কক্ষপথে গ্যালাক্টিক প্লেনে (গ্যালাক্সিকে একটা সিডি বা ডিভিডি ডিস্কের সাথে তুলনা করলে ডিস্কের প্লেটের মতই হলো গ্যালাক্সির প্লেন) একবার ওপরের দিকে ওঠে এবং আরেকবার নিচের দিকে নামে। প্রতিবার গ্যালাক্সিকে পরিভ্রমণের সময় সূর্য প্রায় তিন বার (২.৭ বার) ওঠা-নামা করে। আর সূর্য গ্যালাক্টিক প্লেনে প্রতিবার ওঠা-নামার সময় যেদিকে ভ্রমণ করতে থাকে, সেই দিকের নির্দিষ্ট একটা বিন্দুকে কেন্দ্র করে সূর্য ওঠা-নামা করে। যে-বিন্দুটিকে কেন্দ্র ধরে সূর্য চলতে থাকে, সেই বিন্দু অভিমুখে সূর্যের চলার পথকে সোলার এপেক্স বলে। আমাদের গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে সূর্য বৃত্তাকার পথে পরিভ্রমণ করছে অনেকটা গ্রহগুলোর সূর্যকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে (বা উপবৃত্তাকারে) পরিভ্রমণ করার মত। কিন্তু গ্রহগুলো যেমন শুধু একটি নির্দিষ্ট সরলরৈখিকভাবে ঘোরে, সূর্য গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে সেরকম সরলরৈখিক পথে চলে না। সূর্য প্রতিবার গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে সরলরৈখিক পথে চলার সময় আবার এর যাত্রাপথে ওপরে-নিচেও নামা-উঠা করতে থাকে। ফলে গ্যালাক্সিতে সূর্যের গতিপথ গ্রহদের গতিপথের মত সরলরৈখিক বৃত্তাকার না হয়ে ঢেউ খেলানো বৃত্তাকার পথ হয়। আর এই ঢেউ খেলানো পথে সূর্য যেদিকে উঠতে থাকে অথবা যে-পথে নামতে থাকে, সেই পথটিতে প্রতিবার ওঠা বা নামার সময় একটি বিন্দুকে কেন্দ্র ধরে নিয়ে সূর্য প্রতিবার ওঠা-নামা করে। সূর্য যে-সময়ে ওঠা বা নামার সময় যে-নির্দিষ্ট বিন্দুটির অভিমুখে যেতে থাকে অর্থাৎ চলতে থাকে, সেই বিন্দুটি বরাবর সূর্যের গতিপথকেই সোলার এপেক্স বলে।

ফলে সোলার এপেক্স বা সূর্যের একটি বিন্দু বরাবর গতিপথ সব সময় পরিবর্তন হয়। কারণ সূর্য যে-সময়ে গ্যালাক্টিক প্লেনে ওপরের দিকে উঠতে থাকে, সেই সময়ের সোলার এপেক্স আর পরবর্তীতে সূর্য গ্যালাক্টিক প্লেনে নিচের দিকে নামার সময় সোলার এপেক্স বা সূর্যের নির্দিষ্ট বিন্দুর দিকে যাওয়ার গতিপথ সেটি সম্পূর্ণ বললে যাবে। কারণ গ্যালাক্টিক প্লেনে সূর্যের ওঠার সময়ে সোলার এপেক্স এবং পরবর্তী ধাপে নামার সময় সোলার এপেক্স সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে। কারণ সূর্য প্রতিবার গ্যালাক্সিকে পরিভ্রমণের সময় কয়েকবার ওঠা-নামা করে, কিন্তু এর মধ্যে সূর্য অনেক জায়গা বা স্থান অতিক্রম করে ফেলে। এবং ওঠা-নামার সময়ে সূর্যের গতিপথের দিক পরিবর্তন হয়ে যায়। এমনকি সূর্যের একটা সোলার এপেক্স বরাবর চলা শেষ হলে নতুন সোলার এপেক্স শুরু হবে। ফলে সূর্যের সোলার এপেক্স বা নির্দিষ্ট বিন্দু অভিমুখে গমন প্রতিনিয়ত চলতেই থাকবে এবং প্রতিনিয়ত সোলার এপেক্স বদলে যেতে থাকবে। সোলার এপেক্স কখনও গ্যালাক্টিক প্লেনের সাপেক্ষে ওপরের দিকে এবং কখনও গ্যালাক্টিক প্লেনের সাপেক্ষে নিচের দিকে হবে। বর্তমানে সূর্য যে-নির্দিষ্ট বিন্দু অভিমুখে যাচ্ছে, সেটা অর্থাৎ বর্তমানের সোলার এপেক্সটা কনস্টেলেশন হারকিউলিস এবং স্টার ভেগার পাশাপাশি একটি কাল্পনিক বিন্দু অভিমুখী।

কিন্তু জাকির নায়েক এসব কিছু না বুঝেই বা বুঝেও প্রতারণার উদ্দেশ্যে বলেছে, সূর্য সোলার এপেক্সের যে-বিন্দুটির দিকে যাচ্ছে, সেটির নামই কনস্টেলেশন অফ হারকিউলিস। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সোলার এপেক্স কনস্টেলেশন অফ হারকিউলিস নয়; তবে সোলার এপেক্সের বিন্দুটি কনস্টেলেশন হারকিউলিস এবং ভেগা তারার পাশেই অবস্থিত একটা কাল্পনিক বিন্দু। জাকির নায়েকের দাবি মোতাবেক, সূর্য সোলার এপেক্সের যে-বিন্দুটির উদ্দেশে পরিভ্রমণ করছে, সেটিই সূরা ইয়াসিন-এর ৩৮ নাম্বার আয়াতে উল্লেখিত সূর্যের গন্তব্যস্থল। কিন্তু সূর্যের গন্তব্যস্থল যে-সোলার এপেক্স নয়, সেটি বুখারি, খণ্ড ৪, অধ্যায় ৫৪, হাদিস ৪২১ প্রমাণ। এই হাদিস অনুযায়ী, সূর্যের গন্তব্যস্থল হলো আল্লাহর আরশের নিচে।

আবার সোলার এপেক্সের যে-বিন্দুটিকে জাকির নায়েক সূর্যের গন্তব্যস্থল বলে দাবি করেছে, সেটি সূর্যের গন্তব্যস্থল হতে পারবে না। কারণ সূর্যের সোলার এপেক্স একটি লম্বা সময় পর পর বদলে যাবে। কারণ সূর্য যখন গ্যালাক্টিক প্লেনের সাপেক্ষে ওপরের দিকে উঠতে থাকবে, সেই সময়ের সোলার এপেক্স এবং সূর্য যখন নিচের দিকে নামতে থাকবে, সেই সময়ের সোলার এপেক্স সম্পূর্ন ভিন্ন। সূর্য যে-পথকে অতিক্রম করে সেই পেছনের পথের কেন্দ্রবিন্দু অভিমুখী পথকে সোলার এন্টাপেক্স বলে।

আর তাই সূর্যের নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল বলতে সোলার এপেক্সের নির্দিষ্ট বিন্দু হতে পারবে না। কারণ সূর্য অনবরত গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরতে থাকে এবং সোলার এপেক্সের দিক পরিবর্তিত হতে থাকে। সূর্য কখনই তার পরিভ্রমণ বন্ধ করে না। আর তাই সূর্যেরও কোনো গন্তব্যস্থল নেই। সূর্যের কক্ষপথ আছে কিন্তু কোনো গন্তব্যস্থল নেই। কিন্তু হাদিস ও কুরআন অনুযায়ী, সূর্যের একটা গন্তব্যস্থল আছে, আর সেটা হলো আল্লাহর আরশের নিচে। এই আয়াতটি দিয়ে এটাই বোঝানো হয়েছে। তাই জাকির নায়েকের দাবির কোনো ভিত্তিই নেই। বরং জাকির নায়েক কুরআনের আয়াতের অর্থ পরিবর্তন করে এবং বিজ্ঞানকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে মিথ্যে কথা বলেছে ও প্রতারণা করেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন