আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শনিবার, ৭ মে, ২০১৬

আদম-হাওয়ার কেচ্ছাকাহিনী

লিখেছেন মামুন আবদুল্লাহ

কোরান ও বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে পৃথিবীর প্রথম নর ও নারী হলেন আদম ও হাওয়া। তাঁদের আগে নাকি পৃথিবীতে মানুষ ছিলো না। বাইবেল গবেষকদের ধারণা, গবেষণা অনুযায়ী, আদম ও হাওয়া মোটামুটি ছয় হাজার বছর আগে পৃথিবীতে ঘুরে-ফিরে বেড়াতেন। অথচ মানুষের ফসিল ও ইতিহাস বলছে, আমাদের পৃথিবীতে এরও পুরনো অনেক সভ্যতা ছিলো যার মাধ্যমে প্রি-অ্যাডামাইটস (প্রাক-আদম বা আদমপূর্ব) একটা যুগের ধারণা সৃষ্টি করে। এই প্রি-অ্যাডামাইটস কিন্তু কোনো মূলধারার গবেষকদের কল্পনা প্রসূত নয়। বাইবেলে বর্ণিত আদমের তথ্যের অপ্রতুলতা ও গোঁজামিলের কারণে প্রি-অ্যাডামাইটসের ধারণার উদ্ভব করা হয়। যেহেতু আদম সংক্রান্ত প্রশ্নে ইসলামের তথ্য খুবই দুর্বল এবং অপ্রতুল, তাই ইসলামও এই সমস্ত প্রি-অ্যাডামাইট যুগের ধারণাগুলোকেই বহন করে।

দীর্ঘ সময় ধরে আমি শিক্ষা পেয়ে এসেছি, পৃথিবীতে প্রথম মানুষ ছিলেন আদম ও হাওয়া। বাইবেলে এদের অ্যাডাম ও ইভ বলা হয়। বাইবেলের এই গল্প থেকে পরবর্তীতে কোরান আদম ও হাওয়াকে দাবি করে। ইভকে জুইশ মিস্টিসিজমে লিলিথ নামে অবিহিত করা হয়। প্রচলিত গল্প যা বলে, আদম ও হাওয়া এই পৃথিবীতে সৃষ্টি হননি, পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও তাঁরা সৃষ্টি হয়েছিলেন। ইহুদি-খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মসহ সব আব্রাহামিক ধর্মগুলোতে এই আদম সম্পর্কিত গল্পগুলো প্রায় এক।

কিন্তু মরমন ধর্মের প্রবর্তক ব্রাঘাম ইয়াং সম্পূর্ণ অন্য রকম একটি তথ্য দিয়ে বসেন। তিনি বলেন, বাইবেলে বর্ণিত অ্যাডামের জন্ম আসলে পৃথিবীতে হয়নি, বরং তিনি পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো স্থানে জন্মেছেন। ব্রাঘাম ইয়াঙের তথ্যটির প্রচলিত ধারণার সাথে ৫০ শতাংশ যায় না। কেননা ব্রাঘাম দাবি করে বসেন, অ্যাডামকে আসলে সৃষ্টি করা হয়নি, তিনি জন্মেছিলেন। এখানে উল্লেখ করতে হবে, মরমন ধর্ম আসলে সম্প্রসারণশীল খ্রিষ্টধর্মের একটি বর্ধিত অংশ। যদিও মরমন আলাদা একটি স্বতন্ত্র ধর্ম, কিন্তু তা খ্রিষ্টধর্মেরই একটি অংশ।

জোহার জুইশ মিস্টিসিজমের প্রাথমিক (Zohar Primary Text of Jewish Mysticism) একটি পাঠে আমরা ঠিক এরকমই একটি গল্প পাই। অনেক ক্ষেত্রে ইহুদি ধর্মগুরুদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়ে থাকে যে, অ্যাডামের আসলে পিতামাতা ছিলো। একজন মা এবং একজন বাবা। আমাদের তথাকথিত মহান ও এক ঈশ্বর অ্যাডামকে সেখান থেকেই এনেছিলেন, তিনি যেখানকার বাসিন্দা ছিলেন। বাইবেলে বর্ণিত ঈশ্বরের রূপে অ্যাডামকে সৃষ্টি করার ঘটনা জোহার একেবারেই নাকচ করে দেন, কেননা যদি ঈশ্বরের কোনো সত্তা বা আকার-আকৃতি না থাকে, তবে তিনি নিজের রূপে অ্যাডামকে কীভাবে সৃষ্টি করবেন? ব্রাঘাম ইয়াং সেদিক থেকে আরেক কাঠি সরেস। তিনি দাবি করে বসেন, বাইবেলে বর্ণিত গার্ডেন অব ইডেন আসলে পৃথিবীতেই কোথাও ছিলো। আসমানে কোথাও না। এরপর ইভের ফল খাওয়া জনিত ঘটনার জের ধরে অ্যাডাম ও ইভ দু'জনকেই গার্ডেন অব ইডেন থেকে বের করে দেওয়া হয়।

এরপরের অ্যাডাম ও ইভের ওরফে আদম ও হাওয়ার গল্পটা আরো বেশি গোলমেলে। বাইবেল থেকে জানা যায়, তাদের দু’জন ছেলে জন্মায়। কেইন ও অ্যাবেল, ইসলামে কাবিল ও হাবিল নামে পরিচিত। যদিও সেথ নামে অ্যাডাম ইভের আরেকটি শিশুর কথা জানা যায়, কিন্তু পরবর্তীতে বাইবেলে সেথের ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। খুব সম্ভবত সেথ ঈশ্বরের সাথে স্বর্গে থেকে গিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত টানা পোড়েনের জের ধরে কেইন অ্যাবেলকে হত্যা করে। এরপর বিয়ে করেন এবং তার সন্তানও জন্ম গ্রহণ করে। পরে সন্তানের নামে কেইন একটি নগর প্রতিষ্ঠা করেন। প্রশ্ন হলো, কেইন বিয়ে কাকে করেছিলেন?

এই যে নারী, যাকে কেইন বিয়ে করেছিলেন, তিনি কোথা থেকে এলেন? জুডিও-ক্রিশ্চিয়ান বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে এই নিয়ে যা জানা যায়, তা বাইবেল কোরানের উক্তির একেবারে উল্টো। জেনেসিসে (4:16/17) এই নিয়ে লেখা রয়েছে কেইন নড (Land of Nod) নামের কোনো এক সমৃদ্ধ নগরে পৌঁছান। এই নগরে পূর্বে থেকেই লোক গিজ-গিজ করতো। ব্রুশ স্প্রিংস্টিন এই ল্যান্ড অব নডের সংস্কৃতি সম্পর্কে যা বলে গেছেন, তা রীতিমত বাইবেলের প্রথম মানুষের ধারণার ভিত থেকে নাড়িয়ে দেয়। ফার্নান্ড-অ্যানি পিস্টার করমন ল্যান্ড অব নডের মানুষদের কাল্পনিক ছবি এঁকেছেন। এখানেই বাইবেলে বর্ণিত কেইন স্থানীয় নারীকে বিয়ে করেন। কেইন নিজের জন্য যে-নগরটি প্রতিষ্ঠা করেন, তার নাম রাখেন নিজের ছেলের নাম অনুসারে। জুলিয়াস শ্নর ভন কারলোসফেল্ডের আঁকা একটি ছবিতে দেখা যায়, কেইন তার নগর প্রতিষ্ঠা করা স্ত্রী-পুত্রসহ পর্যবেক্ষণ করছেন এবং নগর প্রতিষ্ঠায় রাজমিস্ত্রি, ছুতোর ও শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা যায়। ধর্মীয় এই সব ছবি আঁকতে গিয়ে শিল্পীরা নিজস্ব কল্পনার আশ্রয় নেন ঠিকই, কিন্তু তার ধর্মীয় ভিত্তিও থাকে। উল্টা-পাল্টা এঁকে গিলোটিনে নিজের গর্দান হারানোর ভয় সবাই করে। বাইবেলে বর্ণিত এই মিথগুলো আসলে নিজেদেরই বক্তব্যের বিরুদ্ধে চলে যায়। ল্যান্ড অব নডের সমাজ ও সংস্কৃতির যে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা বাইবেলে পাওয়া যায়, তা থেকেই বুঝতে পারা যায় যে, আদম হাওয়াই পৃথিবীর প্রথম নর-নারী নন।

এই ব্যাপারে ইসলামের বক্তব্য একেবারেই হাস্যকর। অনেক ক্ষেত্রে ইসলামী স্কলারদের বলতে শোনা যায়, কেইন ওরফে কাবিল বিয়ে করেছিলেন তার বোনকে। অথচ হাওয়ার কোনো কন্যা সন্তান ছিলো কি না, এই ব্যাপারে অনেক ইসলামী স্কলাররা কোরান হাদিসের আলোকেও কোনো কোন তথ্য দিতে পারেন না। তারা যে তথ্য দেন, তা অপ্রতুল। মানব ইতিহাসের একটি বিশাল ও সুদীর্ঘ সভ্যতা রয়েছে, তা আদম-হাওয়ার গল্পের আড়ালে অস্বীকার করাটা নিতান্ত শিশুসুলভ যুক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।

ইহুদিদের মতে, ইভের নয়জন কন্যা সন্তান ছিলো। কিন্তু এই নয়জন কন্যার কোনো একজনের সাথে কেইনের বিয়ে হয়েছিলো কি না, এই ব্যাপারে তারাও কোনো তথ্য দিতে পারে না। বরং উল্টো বলে ঘুরে-ফিরে ল্যান্ড অব নডের কাছে আসতেই হয়। বাইবেলে বর্ণিত ল্যান্ড অব নডই প্রমাণ করে, আদম ও হাওয়া পৃথিবীর প্রথম নর ও নারী নন। তারা গার্ডেন অব ইডেনে থাকার আগে থেকেই এই পৃথিবীতে মানুষ ঘুরে বেড়াত। বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে ও পর্বতে। পুরুষেরা শিকার করতো। নারীরা নিজেদের আস্তানায় চাষাবাদ করতো। শিকারি পুরুষ তখনও ঘরমুখো হয়নি। চাষাবাদ তখনও পুরুষের একক সম্পত্তিতে পরিণত হয়নি। সন্তান ধারণের প্রয়োজনীয়তার জন্য তখনও নারীকে গৃহবন্দী করা হয়নি। মানুষের মাঝে জাতিগত, বর্ণগত ও ধর্মগত বিভেদ তখনও সৃষ্টি হয়নি, যতদিন না মহান ও এক ঈশ্বর এগুলো দেখে ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়ছেন।

গল্পের সৃষ্টি মানুষই করে। প্রতিটা গল্পেই প্রচুর পরিমাণে ফাঁক-ফোকর থেকে যায়। এই ফাঁক-ফোকরগুলো আসলে প্রমাণ করে অন্য কোন সম্ভাবনার। স্বাভাবিকভাবেই মানুষ এই গল্পগুলো না বুঝে সবকিছুর ধর্মীয়করণ করে ফেলে। তার থেকে মানুষ সৃষ্টি করে নানা পুঁথি-পুরাণ ও উপকথার। আসলে এই সমস্ত গল্পগুলোর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য মানুষ বুঝতেই চায়নি কখনো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন