আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬

শুভ্র বচন

লিখেছেন শুভ্র আহমেদ

১.
কনকনে শীতে বাবা ডেকে তুলত ফজরের নামাজের জন্য। নতুন কৈশোর। প্রায় রাতেই স্বপ্নদোষ হত। নামাজের জন্য এই শীতে কে গোসল করবে? ঐ শরীরেই মসজিদে যেতাম। ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে এক অপার্থিব আতঙ্কে ভুগতাম। মনে হত, এখুনি না খোদার গজবে পাথর হয়ে যাই! 

মাদ্রাসায় যখন এলাম, সেখানে সব ছাত্রের অবস্থা দেখে চোখ কপালে উঠল। অনেকেরই স্বপ্নদোষ হয়। তারা অপবিত্র দেহে কোরান ছোঁয়। কী করবে তারা? কী করতে পারবে? ঠাণ্ডায় ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করবে? এর চেয়ে গোসল ছাড়াই কোরান ছোঁয়া ভাল।

আল্লাহর ভয়ের চেয়ে হুজুরের ভয় বেশি বাস্তব।

২.
অন্য ধর্মের লোক, হোক সে বৌদ্ধ, হিন্দু বা খ্রিষ্টান - হাজার ভাল কাজ করার পরও দোযখে যাবে, কারণ তার ঈমান নেই। এটা আল্লাহর বিধান। এখন প্রশ্ন:
- মানুষ কোন ধর্মের পরিবারে জন্ম নেবে, তার ওপর তো তার নিজের হাত নেই। এটার জন্য কেন সে দায়ী হবে?
- মানুষের ভাল কাজের চেয়ে যার কাছে বিশ্বাসের মুল্য বেশি, তিনি আবার কেমন আল্লাহ?
- যদি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হবার কারণে কাউকে দোযখে দিতে হয়, তবে কি সবার আগে আল্লাহর বিচার করা উচিত না যে, তিনি কেন কাউকে মুসলিম আর কাউরে অমুসলিম ঘরে পাঠালেন?
৩.
ইসলামের প্রথম চার খলিফার শেষোক্ত তিনজনের মৃত্যুই অত্যন্ত নির্মম। ওমর, ওসমান আর আলী তিনজনকেই তলোয়ারের কোপে মরতে হয়েছে। 

এদের মাঝে ওমর বাদে বাকি দু'জন - আলী আর ওসমান - নিজের জাত ভাইদের হাতেই মারা যান। ওসমান হন্তকদের একজন ছিল মুহম্মদের জিগরি দোস্ত আবু বকরের ছেলে। ওমরের মৃত্যুর পর থেকেই শান্তির অনুসারীদের যে অশান্তি শুরু হয়েছে, সেটা আর থামার নাম নেই। 

আজ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই আতঙ্ক লাগে। ওঝা যায়, "মুসলিম-মুসলিম ভাই-ভাই" কথাটা কত অসার! মুসলিমরা নিজেরা নেই শান্তিতে, অন্য ধর্মের লোকদেরও শান্তিতে রাখতে দেয় না। অন্য কোথাও কারো সাথে কারো ধর্মবিরোধ নেই, মারামারি নেই, হানাহানি নেই, কিন্তু মুসলিম যেখানে, সেখানেই ধর্মীয় দাঙ্গা। 

এজন্যই বলা হয়, মুসলিম আর অমুসলিম একসাথে থাকলে হয় problem, আর মুসলিম আর মুসলিম একসাথে থাকলে হয় big problem.

রোগের ইতিহাস

বিশফোঁড়ন

১. আল্যার কী কুদরত! ইছলাম শান্তির ধর্ম, অথচ এই ধর্মের বয়ান রেডিওতে শুনে সিঙ্গাপুরের মুছলিমরাও জঙ্গিবাদের পথে।

২. যেমন ভগবান, তেমনই তার ভক্ত - দু'জনেই বদ্ধ আবাল! সিদ্ধিলাভ করতে হলে ১২ বছর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে - স্বপ্নে ভক্তকে এমন নির্দেশ দেয় শিব। বেচারা ১৩ বছর ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে। সিদ্ধিলাভ হয়নি তবু। হায়, সে হয়তো জানেই না, সিদ্ধি (গাঁজা) অতি সহজলভ্য।

৩. পুতিনের কাছ থেকে সম্মাননাসূচক পুরস্কার পাওয়া এক রুশ মোল্লা, যে কিনা পুতিনের প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিলের একজন সদস্যও, বলেছে, সব নারীর (শুধু মুছলিমাদের নয়) খতনা করা উচিত

৪. কন্যার ওপরে অশুভ আত্মা ভর করেছে, এমন সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তাকে ক্রুশ দিয়ে হত্যা করেছে তার মা। "ধার্মিক কখনোই সম্পূর্ণ মানুষ নয়, অনেক সময় মানুষই নয়" - হুমায়ুন আজাদ।

৫. জ্বীনকে ইছলামের pussyতল শায়াতলে নিয়ে আসার ক্ষমতার অধিকারী এক জ্বীনতাড়ানি মুছলিমের সন্ধান পাওয়া গেছে ব্রিটেনে।

৬. ন্যাংটা জৈন সন্ন্যাসীকে আমন্ত্রণ করে বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দিয়ে সারা বিশ্বের হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে হরিয়ানা বিধানসভা।

৭. "বিপজ্জনক" সেক্যুলার জ্ঞান আহরণ করে ফেলতে পারে, এই ভয়ে রক্ষণশীল ইতর ইহুদিরা নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গমন নিষিদ্ধ করেছে। নিজেদের বিশ্বাস এতোটাই ভঙ্গুর!

৮. অার ইছলামীদের ঈমান ধ্বসে পড়ে কার্টুনে, লেখায়, এমনকি গানেও। মালয়েশীয় র‍্যাপ গায়ককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে "মুছলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে কইষা বাড়ি দেওয়া" গানের কারণে। ইংরেজি সাবটাইটেলসহ মিউজিক ভিডিও দেখুন

৯. মুছলিম যেখানে যায়, অপরাধ বাড়িয়া যায়। মাত্র এক বছরেও কম সময়ে ব্রিটেনের ৫৬ শতাংশ সিরীয় শরণার্থী গুরুতর অপরাধের কারণে গ্রেপ্তার হয়েছে।

১০. আর সুইডেনে সংঘটিত সমস্ত অপরাধের ৯৫ শতাংশ ঘটিয়ে থাকে অভিবাসীরা।

১১. অন্য যে কোনও স্থানের চেয়ে উপাসনালয়গুলোতে যৌননির্যাতনের শিকার হবার সম্ভাবনা শিশুদের সবচেয়ে বেশি। পবিত্র স্থান তো!

১২. মসজিদ ও ইছলামী স্কুলে রাখা ইছলামী কিতাবগুলো সহিংসতাপূর্ণ হবেই, এমন ধারণা কি কানাডীয় কর্তৃপক্ষের ছিলো না?

১৩. যেখানে যৌনতার লেশমাত্র নেই, ধর্মবাজরা সেখানেও যৌনতা খুঁজে পায়। ৫ বছরের বেশি বয়সী শিশুবালিকাদের সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ করেছে রক্ষণশীল ইহুদি নেতারা। কারণ তা "উত্তেজনাকর"।

১৪. শুদ্ধ যৌনতার প্রচারক এক মোল্লা ও এক মহিলা-মোল্লা ধরা পড়েছে পরকীয়া সেক্স করতে গিয়ে।

১৫. সুইডেনের যুব উৎসবে ৪০ টি যৌননিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। কারা ঘটিয়েছে, কইঞ্ছেন দেহি?

১৬. ইছলামে জোরাজুরি বলে কিছু নেই, তবে হিজাব পরানোর জন্য স্ত্রীদের ওপর জোর খাটাতে স্বামীরা বাধ্য, বলেছে চৌদি ইছলামবাজ।

১৭. ন্যাংটা মুছলিম "আলহামদুলিল্যা" জপতে জপতে রাস্তায় দৌড়িয়েছে। স-ভিডিও সংবাদ।

১৮. ইহুদি-নাছারাদের দেশে গিয়ে মুছলিমরা সম্ভব-অসম্ভব সব ধরনের দাবি আদায়ে সোচ্চার। তবে লেবানীয় খ্রিষ্টানদের বাসায় বাইবেল পাওয়া গেছে বলে তাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে চৌদি আ[জব থেকে।

১৯. অরল্যান্ডের নাইট ক্লাবে সমকামীদের হত্যা করা হলে যে খ্রিষ্টান ধর্মযাজক বলেছিল, "উচিত শিক্ষা হয়েছে", তাকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে শিশুবালকের ওপরে যৌননির্যাতন চালানোর অভিযোগে। শালা নিজে সমকামী তো বটেই, শিশুকামীও!

২০. অন্য ধর্মগুলোর নেতারা সব মজা লুটবে, আর বৌদ্ধ নেতারা বসে বসে আঙুল চুষবে নাকি! ৬ বছর বয়সী বালিকার ওপরে তাই হামলে পড়েছিল বৌদ্ধ ভিক্ষু।

আমার বোরখা-ফেটিশ – ১৯২

নূরানী বাংলাদেশ


মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬

কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছর (পর্ব ১০)

লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ

{বন্ধু আবু বকর এবং মুহাম্মদ দুজনেই পিতা হলেন, আবু বকরের দ্বিতীয় স্ত্রী ‘উম্মে রুমান’ জন্ম দিলেন মুহাম্মদের তৃতীয় স্ত্রী আয়েশাকে! আর মুহাম্মদের স্ত্রী খাদিজা জন্ম দিলেন এক অপুষ্ট ছেলে সন্তান; মুহাম্মদ নিজের পিতার নামে, সন্তানের নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ্। প্রায় সাড়ে ৪৩ বছর বয়সে এবার পিতা হলেন মুহাম্মদ, নির্বংশ হবার দুঃখ কাটলো কিছুটা (প্রাচীন আরবে মেয়ে সন্তান বংশ রক্ষার নিয়ামক ছিলো না); কিন্তু এই তৃপ্তি প্রকাশ করার মত পরিবেশ পেলেন না মুহাম্মদ।

নতুন মতামত যখন প্রকাশের চেষ্টা করা হয়, তখন সেই মতামত প্রণেতাকে প্রথমেই যে-নামে সম্মোধন করা হয়, তা হচ্ছে ‘পাগল/উন্মাদ’, প্রকাশ্য প্রচারের তিন-চার মাসের মধ্যেই মক্কার ৭০ শতাংশ মানুষের চোখে, পাগল/উন্মাদ নামে পরিচিত হতে লাগলেন মুহাম্মদ, সেইসাথে বলা হতে থাকলো, এগুলো পুরাতন উপকথা মাত্র। এখানে বলে রাখা দরকার, যেসব মডারেট এবং অন্ধবিশ্বাসী মুসলিম মনে করেন, মুহাম্মদকে আগে থেকেই ‘আল-আমিন’/বিশ্বাসী নামে ডাকা হতো, তাঁরা জানেনই না, ‘আল-আমিন’ ছিলো একটি ব্যবসায়ীক টাইটেল; যেমন আমরা পাট ব্যবসায়ীকে ‘পাটোয়ারী’ ডাকি! এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ‘মানুষ মুহাম্মদ’-এ করার ইচ্ছা রইল।

সমাজের বেশিরভাগ মানুষ যদি আপনাকে পাগল উপাধি দেয়, কিন্তু আপনি ‍বিশ্বাস করেন, আপনার রাস্তা সঠিক; তবে আপনার বক্তব্য ৪৩ থেকে ৪৬ নং প্রকাশের (নিচে দ্রষ্টব্য) বাইরে কিছু হবার উপায় নেই, এখনই পড়ে দেখতে পারেন! আমি ততক্ষণে মুহাম্মদের বিদ্যার দৌড় পরখ করে আসি!

মুহাম্মদ কি সত্যিই স্বাভাবিক আছেন, যাচাই করতে একদিন সন্ধ্যায় চাচা ‘আবু তালিব’ এলেন; মুহাম্মদ তখন বাসায় ছিলেন না। ‘আবু তালিব’ ‍মুহাম্মদকে খুঁজে পেলেন শহরতলীর এক পাহাড়ের পাদদেশে, মুহাম্মদের পাশে বসলেন ‘আবু তালিব’; স্বাভাবিক আলোচনা শেষে দুই কবি অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে শুরু করলেন, হঠাৎ ছোট একটি উল্কার টুকরো বায়ুমণ্ডলে আগুন জ্বালিয়ে ছুটে চলে গেলো; ‘আবু তালিব’ প্রশ্ন করলেন মুহাম্মদকে, ‘ভাতিজা, এটা কী?’

শরীরে মৃদু একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘেমে উঠলেন মুহাম্মদ, দু'মিনিট চোখ বন্ধ করে রইলেন; তারপর চোখ খুলে চাচা ‘আবু তালিব’-কে যা বললেন, তা-ই হচ্ছে ৪৭ তম প্রকাশ

কিন্তু বিদ্যার দৌড়ের বিষয়টি কী? প্রাচীন আরবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অংশটুকু ছিলো গ্রীক ধারণার ওপর নির্ভরশীল, আর আরবের নিজস্ব চিকিৎসা ছিলো ইথিওপিয়া (হাবাশা), ইয়েমেন এবং মরুভূমির কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং (পানি ঢালা, গায়ে গরম ছ্যাঁকা দেওয়া, শিংগা লাগানো, উটের মূত্র, যাদু, তাবিজ, খেজুর পাতার ছাই, আর কিছু গাছের ছাল-বাকল বেঁটে খাওয়া)... মুহাম্মদ তৎকালীন গ্রীক বিজ্ঞানটুকু জানতেন; তিনি জানতেন পুরুষের বীর্য (Semen) তৈরি হয় মেরুদণ্ড এবং বক্ষপাঁজরের মধ্য থেকে (!), এবং যেহেতু মুহাম্মদ এই ভুলটাকেই সত্য মনে করতেন, এ কারণেই মুহাম্মদের দ্বিতীয় সত্তা (আল্লাহ ও জিব্রাইল) সেটাকেই প্রকাশ করেছেন এভাবে:
৫. অতএব মানুষের চিন্তা করে দেখা উচিত, তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে?
৬. তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি হতে,
৭. এটা নির্গত হয় মেরুদণ্ড ও বক্ষপাঁজরের মধ্য থেকে

এটি এমন একটি ভুল, জাকির নায়েকের মত একজন ডাক্তারকেও এই প্রশ্নের উত্তরে গোঁজামিল দিতে দেখা যায়। যতোই ২+২=৫ প্রমাণ করার চেষ্টা করুন, ভুল তো ভুলই। মদিনার মসজিদে নববীর দোতালায় অবস্থিত লাইব্রেরির প্রধানকে প্রশ্ন করেছিলাম এ বিষয়ে; তাঁর শেষ উত্তর ছিলো, আল্লাহ এ বিষয়ে ভালো জানেন।

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ১০ম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছরের তৃতীয় পাঁচ অংশঅনুবাদের ভাষা ৫০ টির বেশি বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৪৩ তম প্রকাশ; সূরা আত তাকাসুর (১০২) (প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা) ৩ থেকে ৮ আয়াত:

৩. এটা সঙ্গত নয়, তোমরা শীঘ্রই এটা জানতে পারবে।
৪. আবার বলি, মোটেই ঠিক নয়, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে।
৫. কখনো নয়, তোমরা যদি নিশ্চিত জ্ঞানে জানতে!
৬. তোমরা তো জাহান্নাম দেখবেই।
৭. আবার বলি, তোমরা অবশ্যই এটি দেখবে নিশ্চিত দৃষ্টিতে।
৮. এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা সুখ সম্পদ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৪৪ তম প্রকাশ; সূরা আল ফীল (১০৫) (হাতি), ৫ আয়াত:

১. তুমি কি দেখনি তোমার রব হাতিওয়ালাদের সাথে কী করেছিলেন?
২. তিনি কি তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেননি?
৩. তিনি তাদের উপর প্রেরণ করেছেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি,
৪. যারা তাদের উপর পাথরের কাঁকর নিক্ষেপ করেছিল।
৫. অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণ-সদৃশ করে দেন।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৪৫ তম প্রকাশ; সূরা আল ক্বলম (৬৮) (কলম), ১৬ আয়াত:

১. নুন, শপথ কলমের এবং ওরা যা লিপিবদ্ধ করে তার।
২. তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহে তুমি পাগল নও।
৩. আর নিশ্চয় তোমার জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার।
৪. তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।
৫. ফলে তুমি শীঘ্রই দেখবে এবং তারাও দেখতে পাবে
৬. তোমাদের মধ্যে কে পাগলামিতে আক্রান্ত।
৭. নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু, তিনি ভাল জানেন, কে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, আর তিনি ভাল জানেন সৎপথপ্রাপ্তদের ।
৮. অতএব, তুমি মিথ্যারোপকারীদের আনুগত্য করবে না।
৯. তারা কামনা করে, যদি তুমি আপোষকামী হও, তবে তারাও আপোষকারী হবে।
১০. এবং অনুসরণ কর না তার, যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত।
১১. পশ্চাতে নিন্দাকারী, যে একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে বেড়ায়।
১২. যে ভাল কাজে বাধা দেয়, সীমালঙ্ঘনকারী, পাপিষ্ঠ।
১৩. দুষ্ট প্রকৃতির, তার ওপরে আবার কুখ্যাত।
১৪. এ কারণে যে, সে ছিল ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির অধিকারী।
১৫. তার নিকট আমার আয়াত আবৃত্তি করা হলে সে বলে: এটা তো সেকালের উপকথা মাত্র।
১৬. আমি শীঘ্রই তার উঁচু নাকে দাগ করে দেব।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৪৬ তম প্রকাশ; সূরা আল ফাজ্‌র (৮৯) (ভোরবেলা), ১৫ থেকে ২৬ আয়াত:

১৫. মানুষতো এমনই যে, তার রব যখন তাকে পরীক্ষা করেন, পরে তাকে সম্মানিত করেন এবং সুখ-সম্পদ দান করেন, তখন সে বলে: আমার রব আমাকে সম্মানিত করেছেন।
১৬. আর যখন তিনি তাকে পরীক্ষা করেন এবং তার উপর তার রিজিককে সঙ্কুচিত করে দেন, তখন সে বলে, ‘আমার রব আমাকে অপমানিত করেছেন’।
১৭. কখনো নয়, বরং তোমরা ইয়াতীমদের দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন কর না।
১৮. এবং তোমরা অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দানে পরস্পরকে উৎসাহিত কর না, 
১৯. আর তোমরা উত্তরাধিকারের সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে ভক্ষণ কর।
২০. আর তোমরা ধনসম্পদকে অতিরিক্ত ভালবাস।
২১. এটা সঙ্গত নয়। পৃথিবীকে যখন চূর্ণ বিচূর্ণ করা হবে,
২২. আর তোমার রব ও ফেরেশতাগণ উপস্থিত হবেন সারিবদ্ধভাবে।
২৩. সেদিন জাহান্নামকে আনয়ন করা হবে এবং সেদিন মানুষ উপলদ্ধি করবে, কিন্তু এই উপলদ্ধি তার কী করে কাজে আসবে?
২৪. সে বলবে, ‘হায়! যদি আমি কিছু আগে পাঠাতাম আমার এ জীবনের জন্য’!
২৫. অতঃপর সেদিন তাঁর শাস্তির মত শাস্তি কেউ দিতে পারবে না
২৬. আর কেউ তাঁর বাঁধার মত বাঁধতে পারবে না।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৪৭ তম প্রকাশ; সূরা আত তারিক্ব (৮৬) (রাতের আগন্তুক), ১০ আয়াত:

১. শপথ আকাশের এবং রাতে যা আবির্ভূত হয় তার;
২. আপনি কি জানেন, যা রাতে আসে, তা কী?
৩. সেটা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
৪. প্রত্যেকের ওপর একজন তত্ত্বাবধায়ক রয়েছে।
৫. অতএব মানুষের চিন্তা করে দেখা উচিত, তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে ?
৬. তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি হতে,
৭. এটা নির্গত হয় মেরুদণ্ড ও বক্ষপাঁজরের মধ্য থেকে।
৮. নিশ্চয় তিনি তাকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।
৯. যেদিন গোপন বিষয়সমূহ পরীক্ষা করা হবে
১০. সেদিন তার কোন শক্তি থাকবে না এবং সাহায্যকারীও থাকবে না।

আয়াত প্রকাশের মনোজগত: কোরআন একটি অগোছালো সংকলন, এটা এলোমেলো করে দেয় পাঠকদের; বিশ্বাসী মানুষেরা এতে খুঁজে পায় যাবতীয় বিজ্ঞান, কিন্তু নবীর জীবনের সাথে মিলিয়ে ধারাবাহিকভাবে পড়লে সব ধাঁধার উত্তর মিলে যেতে বাধ্য! এই সিরিজের ১০টি পর্ব পুনরায় পড়ে আসুন, একজন স্বপ্নবিলাসী, প্রকৃতিপ্রেমী, একেশ্বরবাদী, নব্য দার্শনিক কবি মানুষের কাব্যকথন ছাড়া কিছুই চোখে পড়বে না। তা-ই যদি হয়, তবে সাহাবীরা কিসের জোরে নিজের পরিবাবারের সাথে লড়েছেন, কেন পিতার মৃত্যুর চেয়ে ইসলামের কোনো এক বন্ধুর মৃত্যুতে বেশি কষ্ট পেয়েছেন, সে উত্তর খুঁজবো আগামী পর্বে। কিসের মোহে আবু বকর তার প্রথম স্ত্রীর গর্ভে জন্মানো তাঁরই প্রথম পুত্রসন্তানের সাথে বদরের ময়দানে বিপরীত পক্ষে যুদ্ধ করেত পারেন, সেটা না জানলে মুহাম্মদকে কি সত্যিই বোঝা সম্ভব?!

(চলবে)

অজ্ঞেয়বাদীরা ছুপা নাস্তিক

ধরা যাক, কাউকে প্রশ্ন করা হলো, "আপনি ভাত খেতে ভালোবাসেন?" উত্তরে তিনি বললেন, "আমি রক মিউজিক পছন্দ করি না।" 
অর্থাৎ খাদ্য বিষয়ক প্রশ্ন করে উত্তর পাওয়া গেল সঙ্গীতরুচি সংক্রান্ত।

ঠিকই একইভাবে যখন কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়, "আপনি ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন?" উত্তরে অনেক বলে থাকেন, "আমি অজ্ঞেয়বাদী। কারণ, আমি জানি না, ঈশ্বর আছে কি না; এবং তা জানা সম্ভব নয়।"
অর্থাৎ বিশ্বাস বিষয়ক প্রশ্ন করে উত্তর পাওয়া গেল জ্ঞান সংক্রান্ত।

অনেকেই এমন একটি ভ্রান্ত ধারণা লালন করেন - অজ্ঞেয়বাদ হচ্ছে আস্তিকতা ও নাস্তিকতার মধ্যবর্তী একটি অবস্থান। না, তা নয়। একেবারেই নয়। বস্তুত আস্তিকতা-নাস্তিকতা হচ্ছে ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ক বিশ্বাস সম্পর্কিত এবং অজ্ঞেয়বাদ-জ্ঞেয়বাদ হচ্ছে ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ক জ্ঞান সম্পর্কিত। বিশ্বাস ও জ্ঞানের সহাবস্থান কখনওই সম্ভব নয়। তাই এই দুয়ের "মাঝামাঝি" বলে কিছু নেই।

ঈশ্বরবিশ্বাসের প্রশ্নে "ঈশ্বর আছে কি না, তা জানা সম্ভব নয়" জাতীয় উত্তর সর্বতোভাবে অপ্রাসঙ্গিক। এমন উত্তরদাতারা হয়তো ভেবেও দেখেন না যে, যার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়, তাকে বিশ্বাস করার প্রশ্নও থাকে না। তাই নয় কি? আর বিশ্বাস না থাকলেই আপনি নাস্তিক, আপনার তা পছন্দ হোক বা না হোক।

আসলে নাস্তিকের সবচেয়ে সরল সংজ্ঞা: যে-ব্যক্তি নিজেকে আস্তিক মনে করেন না, তিনিই নাস্তিক। এর মাঝামাঝি কোনও অবস্থান নেই। তাই নিজেদের অজ্ঞেয়বাদী হিসেবে দাবি করা ব্যক্তিরা শুধু একটি প্রশ্নের উত্তর দিন: "আপনি কি আস্তিক?"

আল্লাহর সঙ্গে ধর্ষিতার সংলাপ

লিখেছেন সাঈদুর রহমান‎

ধর্ষিতা: হে আল্লাপাক, ওই লোকটারে শাস্তি দেন, ওয় আমারে ধর্ষণ করছে।
আল্লাহ: হুম, তুমি বোরখা পরা অবস্থায় ছিলা?
ধর্ষিতা: জ্বি না।
আল্লাহ: তয়! চারজন সাক্ষী রাখছিলা??
ধর্ষিতা: জ্বি না।
আল্লাহ: হুম, খাড়াও দেখতাছি।

আল্লাহ: এই, তুমি তারে ধর্ষণ করছো?
ধর্ষক: ধর্ষণ কী, আল্লাপাক? আমি তো জিহাদে ছিলাম!
আল্লাহ: তার সাথে জোরপূর্বক যৌনসঙ্গম করছো?
ধর্ষক : ওই মাইয়া তো বিধর্মী ছিল! গনিমত পাইয়া ছহবত করছি, এইটাই কি ধর্ষণ হুজুর?
আল্লাহ: এহ!! তাই তো! আমারই ভুল হইছে।

আল্লাহ: এই মেয়ে, যাও, দোযকে যাও! বোরখা পরো নাই, সাক্ষী রাখো নাই... কিসের ধর্ষণ এইটা? বিচার নাই, যাও।... আর তুমি (ধর্ষক), নাম কী তোমার?!
ধর্ষক: মোহাম্মদ আবু বক্কর।
আল্লাহ: আহ! মোহাম্মদ নাম শুইনা প্রাণটা জুড়াইয়া গেল। বুকে আস। কোন জান্নাতে যাবা?
ধর্ষক: হেহেহে, একটাতে পাঠাইয়া দেন, হুজুর। সব আপনার দয়া।... আর ইয়ে, আমার ছেলেটাও জিহাদে ছিল। সেও এক মাইয়ার সাথে ছহবত করছে। তারেও যদি...

গরুপূজারি গাধাগুলো - ১৬৩


সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৬

খায়বার যুদ্ধ - ৯: আল-নাটার ইহুদিদের পরিণতি!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব- ১৩৮): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত বারো

লিখেছেন গোলাপ

(আগের পর্বগুলোর সূচী এখানে)

"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।" 

অমানুষিক নৃশংসতায় খায়বারের নিরপরাধ ইহুদি জনপদের ওপর আগ্রাসী আক্রমণ চালিয়ে স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীরা আল-নাটার আল-সাব বিন মুয়াধ দুর্গগুলো জোরপূর্বক দখল করার পর কীভাবে তাঁদের গচ্ছিত খাদ্যসামগ্রী ও অন্যান্য সমস্ত  সম্পদ লুণ্ঠন করেছিলেন; সেই লুণ্ঠিত সামগ্রীর তালিকায় কী ধরনের জিনিসপত্র ছিলো; এই দুর্গগুলো থেকে তারা কী পরিমাণ সম্পদ হস্তগত করেছিলেন; রান্না ও গৃহকর্মের প্রয়োজনে যে কাঠগুলো তাঁরা মওজুদ করে রেখেছিলেন, মুহাম্মদের নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা কীভাবে সেগুলো ধ্বংস করেছিলেন - ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।

আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) অব্যাহত বর্ণনার পুনরারম্ভ: [1]
পূর্ব প্রকাশিতের (পর্ব: ১৩৭) পর:

ইশাক বিন আবদুল্লাহ হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ইবনে আবি-সাবরা আমাকে যা বলেছে:

'-----ইতিমধ্যে মুসলমানরা আল-সাব বিন মুয়াধ দুর্গে ঘুরে বেড়ায়, এটির ছিলো একাধিক প্রবেশ পথ। তারা এক ইহুদিকে ভেতর থেকে ধরে নিয়ে আসে ও তার কল্লা কেটে ফেলেও তার রক্তের কালো রং দেখে তারা বিস্মিত হয়। তাদের একজন বলে, "আমি এমন কালো রক্ত কখনোই দেখিনি।" সে বলেছে যে, এক বর্ণনাকারী তাকে বলেছে, "ঐ শেলফগুলোর একটিতে রাখা ছিলো রসুন ও জুস," আর সে কারণেই ইহুদিটি তাদের দৃষ্টিগোচর হয়। তারা তাকে সামনে নিয়ে আসে ও তার কল্লা কেটে ফেলে।

আল-নাইম দুর্গের সকল ইহুদি, যারা আল-সাব বিন মুয়াধ দুর্গে ছিলো তারা ও নাটায় অবস্থিত প্রত্যেক-টি দুর্গে যারা ছিলো তাদের সকলকে ‘কালাত আল-যুবায়ের (Qalat al-Zubayr)’ নামের এক দুর্গে স্থানান্তরিত করা হয়। আল্লাহর নবী ও মুসলমানরা দ্রুতগতিতে তাদের দিকে এগিয়ে আসে। তাদের দুর্গ মধ্যে তারা তাদেরকে ঘেরাও ও রুদ্ধ করে রাখে, যার ভেতরে প্রবেশ সহজগম্য ছিলো না। প্রকৃতপক্ষেই এটি ছিলো এক পাহাড়ের চূড়ায়, যেখানে কোনো ঘোড়া কিংবা মানুষ আরোহণ করতে পারতো না, সে কারণেই তা ছিল দুর্গম। নাটার দুর্গ মধ্যে যারা অবশিষ্ট ছিলো, দু'-একজন ছাড়া তাদের সম্বন্ধে কিছুই উল্লেখিত হয়নি। তাদেরকে সম্মুখে থেকে পাহারা দেওয়ার জন্য আল্লাহর নবী লোক নিযুক্ত করেন। ইহুদিদের মধ্যে এমন কেউ ছিলো না, যে তাদের সম্মুখে এসেছিলো, কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়নি।কালাত আল-যুবায়ের’ এর লোকদের ঘেরাও করে রাখা অবস্থায় আল্লাহর নবী সেখানে তিন দিন যাবত অবস্থান করেন।

ইহুদিদের মধ্যে থেকে ঘাযযাল(Ghazzal) নামের এক লোক আবির্ভূত হয়। সে বলে, "আবু কাসেম, আমার নিরাপত্তা মঞ্জুর করুন; পরিবর্তে আমি আপনাকে এমনভাবে পথপ্রদর্শন করাবো, যা আপনাদের নাটার জনগণদের কাছ থেকে মুক্তি দেবে ও আপনারা বের হয়ে আল-শিইক (al-Shiqq) এর লোকদের উদ্দেশে রওনা দিতে পারবেন, এটি এ জন্যেই যে, প্রকৃতপক্ষেই আল-শিইক-এর জনগণ আপনাদের ভয়ে ভীত হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় আছে।" সে বলেছে: আল্লাহর নবী তার, তার পরিবার ও তার সম্পদের নিরাপত্তা প্রদান করেন।

সেই ইহুদিটি বলে, "আপনারা যদি এক মাসও অবস্থান করেন, তারা তার পরোয়া করবে না এই কারণে যে, ভূগর্ভস্থ স্থানে তাদের একাধিক জলপ্রবাহ আছে। তারা রাতের বেলা বের হয়ে আসতে পারে, ও সেখানে পানি পান করে তাদের দুর্গে প্রত্যাবর্তন করতে পারে, যা আপনার জন্য দুর্গম। কিন্তু আপনি যদি তাদের পানির উৎসটি কেটে দেন, তবে তারা নিদারুণ যন্ত্রণায় পতিত হবে।" আল্লাহর নবী তাদের জলপ্রবাহের উৎসস্থানে গমন করেন ও সেগুলো বন্ধ করে দেন। যখন তিনি তাদের পানি পানের উৎসটি বন্ধ করে দেন, তারা তৃষ্ণার্ত অবস্থায় থাকতে পারে না। তারা বের হয়ে আসে ও প্রাণপণে যুদ্ধ করে। সেই সময় কিছু মুসলমান নিহত হয় ও সেদিন দশজন ইহুদিকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। আল্লাহর নবী তা দখল করেন ও এটিই ছিলো নাটার শেষ দুর্গ।

নাটা দখল সম্পন্ন করার পর আল্লাহর নবী আদেশ করেন যে, তারা যেন স্থানান্তরিত হয়, সেনাদল তাদের স্টেশনটি আল-রাজী থেকে স্থানান্তর করে পুনরায় আল-মাযিলোতে নিয়ে আসে। আল্লাহর নবীকে রাতের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা হয়েছিলো, যেটি ছিলো ইহুদিদের যুদ্ধকৌশল, তাদের কাছ থেকে যে ভয়টি তিনি করতেন। নাটার জনগণ ছিলো ইহুদিদের মধ্যে সবচেয়ে সহিংস ও যার অন্তর্ভুক্ত ছিলো নাজাদ-এর লোকেরা। অতঃপর আল্লাহর নবী আল-শিইখ লোকদের উদ্দেশে যাত্রা করেন।----'

- অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ - লেখক।

>>> আদি উৎসে ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি, খায়বারের আল-নাটা নামক স্থানে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা সর্বশেষ যে-দুর্গটি দখল করে নিয়েছিলেন, তা হলো "কালাত আল-যুবায়ের" দুর্গটি। আল-সাদ বিন মুয়াধ দুর্গটি দখল করার পর মুহাম্মদ অনুসারীরা এই দুর্গ মধ্য থেকে এক ইহুদিকে ধরে নিয়ে এসে তাঁর কল্লা কেটে ফেলে।আল-ওয়াকিদির ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা আরও জানতে পারি, মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের আগ্রাসী আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়ে আল-নাইম, আল-সাব বিন মুয়াধ ও নাটায় অবস্থিত অন্যান্য দুর্গের প্রায় সকল ইহুদি পালিয়ে 'কালাত আল-যুবায়ের' নামের এক দুর্গম দুর্গে আশ্রয় নেন। মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা দ্রুতগতিতে এগিয়ে এসে তাদের সেই দুর্গটি চারিদিক থেকে ঘেরাও করে রাখেন, ইহুদিরা তাঁদের এই দুর্গ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। আর যে ইহুদিরা পালাতে ব্যর্থ হয়ে নাটার অন্যান্য দুর্গ মধ্যেই অবস্থান করছিলেন, আল ওয়াকিদিরি এই বর্ণনা মতে তাঁদের মাত্র দু'-একজন ছাড়া ঐ হতভাগ্যদের ভাগ্যে কী ঘটেছিলো, তার ইতিহাস কোথাও বর্ণিত হয়নি।

মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা 'কালাত আল-যুবায়ের' দুর্গটি অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন ঠিকই কিন্তু তার ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থা তারা করতে পারেনি। তাই মুহাম্মদ এই দুর্গের সম্মুখে পাহারার ব্যবস্থা করেন ও যে ইহুদিরাই তাদের সম্মুখে আসে, তাঁদের সকলকেই তারা খুন করে। তিন দিন যাবত এমত অবস্থা চলে। অতঃপর এই ইহুদিদের মধ্য থেকে ঘাযযাল নামের এক ব্যক্তি মুহাম্মদের কাছে এসে জানান যে, মুহাম্মদ যদি তাকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন, তবে সে মুহাম্মদকে এমনভাবে সাহায্য করবে যে অতি শীঘ্রই মুহাম্মদ এই দুর্গটি দখলের মাধ্যমে আল-নাটার জনপদবাসীদের সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত  করে খায়বারের আল-শিইক নামক স্থানের লোকদের আক্রমণ করার জন্য রওনা হতে পারবে। মুহাম্মদ যখন তার এই প্রস্তাবে রাজি হয়, তখন সে তাঁকে জানায় যে, এই দুর্গের ভূগর্ভস্থ স্থানে পানি পানকরার ব্যবস্থা আছে। সে মুহাম্মদকে তাদের সেই পানির উৎসটি কেটে দেয়ার পরামর্শ দেন, মুহাম্মদ তাঁদের সেই পানির উৎসটি বন্ধ করে দেন।

>> পানির অপর নাম জীবন, কারণ পানি ছাড়া কোনো জীব বাঁচতে পারে না। যখন কোনো জনপদের একমাত্র পানির উৎসটি বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন সেই জনপদের দুগ্ধপোষ্য শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সের শিশু-কিশোর, গর্ভবতী মহিলা, বৃদ্ধ, অতি বৃদ্ধসহ সকল বয়সের মানুষরা পিপাসিত অবস্থায় তিলে তিলে কষ্ট ভোগ করেন।সমস্ত পৃথিবীতে প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মস্তিষ্কের একজন মুসলমানকেও হয়তো পাওয়া যাবে না, যে ‘কারবালা প্রান্তরে’ ইমাম হুসেইনের পরিবার-সদস্যদের পানিবঞ্চিত অবস্থায় প্রচণ্ড নিষ্ঠুরতায় তৃষ্ণার্ত ও পিপাসিত রাখার খবর কখনোই শোনেননি। তাঁরা এই ঘটনাকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও করুণ ইতিহাসের একটি হিসাবে আখ্যায়িত করে প্রতিবছর মহরম মাসে দোয়া-মিলাদ মাহফিল, ইবাদত বন্দেগী, রোজা রাখা, তাজিয়া উৎসব - ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা স্মরণ করেন।

আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি, প্রচণ্ড নিষ্ঠুরতায় অনুরূপ পানিবঞ্চিত, তৃষ্ণার্ত ও পিপাসিত রেখে যুদ্ধে জয়ী হবার এই অমানবিক কৌশলের গোড়াপত্তনকারী ব্যক্তিটি ছিলেন এই ইসলাম অনুসারীদেরই স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)! কারবালা প্রান্তরের এই নৃশংস ঘটনার সাড়ে ছাপ্পান্ন বছর পূর্বে, ৬২৪ সালের মার্চ মাসে, এই ইমাম হুসেইনেরই নানা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ বদর যুদ্ধেঅংশগ্রহণকারী কুরাইশদেরকে প্রচণ্ড নিষ্ঠুরতায় অনুরূপ পানিবঞ্চিত, তৃষ্ণার্ত ও পিপাসিত রাখার কৌশলের গোড়াপত্তন করে যুদ্ধ জয় করেছিলেন (বিস্তারিত আলোচনা '"নৃশংস যাত্রার সূচনা [পর্ব ৩২]"পর্বে)। আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা আবারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে পাই।

'কারবালা প্রান্তর' ইতিহাসের সেই খুনিদের সবাই ছিলেন মুহাম্মদ অনুসারী! তারা কোনো কাফের, মুশরিক, ইহুদি-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন না। নবীর শিক্ষায় শিক্ষিত এই অনুসারীরা যুদ্ধে জয়ী হবার এই অমানবিক মোক্ষম কৌশলটি তাদের সেই নবীরই প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ও তাঁর পরিবার ও সহযাত্রীদের ওপর প্রয়োগ করেছিলেন!

ইসলামের ইতিহাস বড়ই বিচিত্র!

ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে আল-ওয়াকিদির মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি।


The detailed narrative of Al-Waqidi: [1]

Al-Waqidi said: Ibn Abi-Sabra related to me from Ishaq b Abdullah. He said,
‘----Meanwhile the Muslims roamed the fortress of al-Sab b Muadh, and it had entrances. They brought out a Jew, and cut of his head, and were surprised at the blackness of his blood. One of them says, “I have never seen such black blood.” He said: A speaker says, “One of those shelves holds garlic and broth,” and so the Jew was revealed. They brought him forward and cut of his head.

The Jews of the fortress of Naim, all of them, those from the fortress of al-Sab b Muadh, and those from every fortress in Nata were transferred to a fortress named Qalat al-Zubayr. The Messenger of God and the Muslims marched to them. They besiezed them and imprisoned them in their fortress, which was inaccessible. Indeed it was on the top of a rock and neither horse nor man could ascend it, for it was inaccessible. The rest stayed, and there is no mention of them, in the fortress of al-Nata- but a man or two. The Messenger of God placed men in front of them to keep watch over them. A Jew did not appear before them but they killed him. The Messenger of God stayed besieging those who were in Qalat al-Zubayr for three days.

A man from the Jews named Ghazzal arrived. He said, “Abu Qasim, grant me protection and I will lead you to what will relieve you from the people of al-Nata and you will go out to the people of al-Shiqq, for indeed the people of al-Shiqq are destroyed from fear of you.” He said: The Messenger of God granted security to him, his family and property. The Jew said, “If you stayed a month they would not care, for they have streams under the Earth. They would go out at night, drink there and return to their fortress, which is inaccessible to you. But if you cut of their water, they will be distressed.”

The Messenger of God went to their streams and stopped them. When he stopped their drinking source they were not able to stay thirsty. They set out and fought a strong battle. A few Muslims were killed, at that time, and ten Jews were taken at that day. The Messeenger of God conquered it and it was the last of the fortresses of Nata. When the Messenger of God finished with Nata he commanded that they transfer, and the troops move from their station in al-Raji back to al-Manzilo. The Messenger of God was protected from night attacks, the war of the Jews, and what he feared from them. The people of Nata were the most violent of the Jews and the people of the Najd were among them. Then the Messenger of God moved to the people of Shiqq. ---’

(চলবে)

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

[1]“কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক:  আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৬৫-৬৬৭; ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩২৮

আমাদের আত্মীয়েরা – ৯৮

আমরা বানরেরই বংশধর, হাওয়ার পোলা নই।


ধর্মাতুল কৌতুকিম – ৮১

২৪৯.
- "আমি তোমার জন্য দোয়া করবো" - এই কথার প্রকৃত অর্থ কী?
- "আমি তোমার জন্য বাস্তব কিছু করতে পারছি না বটে, তবু অন্তত কিছুটা কৃতিত্ব আমার প্রাপ্য।"

২৫০.
যাবতীয় ভগবানেশ্বরাল্লাকে সঙ্গে নিয়ে বারে ঢুকলো এক নাস্তিক। বারম্যান তাকে বললো:
- হুম, দেখতে পাচ্ছি, আবার একা একা মদ খেতে এসেছেন।

২৫১.
এক মুছলিম রমণীকে প্রশ্ন করা হলো:
- আপনি কি নিপীড়িত?
- জানি না, আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে হবে।

২৫২.
- বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে পার্থক্য কী?
- বিজ্ঞান নিরন্তর বিভিন্ন প্রশ্নের প্রকৃত উত্তর খুঁজে চলে, আর ধর্ম সব প্রশ্নের মনগড়া উত্তর বানিয়ে রেখেছে।

২৫৩.
- দোয়া-মোনাজাত-প্রার্থনায় কোনও কাজ হয় না, এর প্রমাণ কী?
- কাজ হলে পৃথিবীর সব পুরুষের ঈমানদণ্ডের দৈর্ঘ্য হতো অন্তত আট ইঞ্চি।

নিত্য নবীরে স্মরি – ২৫১

রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৬

জঙ্গিনামা: ধর্মকারীর কুফরী কিতাব

অন্য সব ধর্মের জঙ্গিবাদের তুলনায় ইছলামী জঙ্গিবাদ এতো প্রবল, পরাক্রমশালী ও সর্বগ্রাসী কেন? কেন এখন জঙ্গি শব্দটির শুনলে অবধারিতভাবে মুছলিম জঙ্গির কথাই মাথায় আসে শুধু? মুছলিম জঙ্গিরা এতো সংখ্যাবহুল কেন? সাধারণ মুছলিমদেরকে কোন পদ্ধতিতে এবং নবীর জীবনের কোন কোন বীভৎস ও অমানবিক ঘটনার উদাহরণ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয় জঙ্গিবাদের পথে আসতে, এবং জঙ্গি হওয়া প্রতিটি মুছলিমের একটি ঈমানী দায়িত্ব কেন, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে এই ইবুক-এ। বর্তমান ইবুকের অনুবাদক, সম্পাদক ও নির্মাতা নরসুন্দর মানুষ লিখছেন:

"প্রায়শই একটি চিন্তা মাথায় আসে আমাদের: জঙ্গি মনস্তত্ত্বের মূল উৎস কোথায়? রাজনীতি, তেলসম্পদ, ক্ষমতা; নাকি ধর্মেই? ইসলাম কি শান্তির ধর্ম? ইসলাম কি যুদ্ধের ধর্ম? ঘুরপাক খান অনেকেই! সত্যিই কি গোড়ায় গলদ না থাকলে শুধুমাত্র রাজনীতি, তেলসম্পদ আর ক্ষমতার মারপ্যাঁচ দিয়ে একজন যুবককে জঙ্গি তৈরি করা সম্ভব?

আমরা যারা নাস্তিকতার চর্চা করি, তাদের বক্তব্য মানতে চান না কোনো মডারেট মুসলিম; কিন্তু একই বক্তব্য যদি একজন ইসলামিক বিশেষজ্ঞ দেন; এমন একজন, যিনি আধুনিক শিক্ষায় ডক্টরেট ডিগ্রী পর্যন্ত অর্জন করেছেন; তখন তথাকথিত মডারেট মুসলিমদের ভাষ্য কী হতে পারে? একজন মানবতাবাদী মানুষ (সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী অথবা অবিশ্বাসী) কীভাবে নিতে পারেন ধর্মের অমানবিক বিষয়গুলোকে; তা দেখার ইচ্ছাতেই এই ইবুক-টির জন্ম।

খ্যাতনামা ইছলামবিদ শাইখ আনোয়ার আল আওলাকি’র ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে দেয়া একটি লেকচারের অডিও প্রতিলিপিই হচ্ছে এই ইবুক-টি। আমরা তার লেকচারের বিন্দুবিসর্গ পরিবর্তন করিনি; ঠিক যেভাবে তিনি শুরু এবং শেষ করেছেন, আমরাও ঠিক তেমনটাই রেখেছি; কেবল বিশেষ অংশগুলো হাইলাইট করে দিয়েছি।"

এই লেকচারে উদ্ধৃত ইছলামী ইতিহাসের ঘটনাগুলো ইছলামের আলোকে বিশ্লেষণ করে বক্তা এটাই প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, শুধু জঙ্গিরাই সঠিক ইছলাম মেনে চলে এবং কোরান, হাদিস ও নবীর আদর্শকে সঠিকভাবে মেনে চলতে চাইলে জঙ্গি হওয়া ছাড়া একজন মুছলিমের অন্য কোনও পথ নেই ও থাকতে পারে না।

ফরম্যাট: পিডিএফ (সম্পূর্ণভাবে মোবাইলবান্ধব)
সাইজ: ৭০৬ কিলোবাইট মাত্র
ডাউনলোড লিংক (গুগল ড্রাইভ): http://goo.gl/dORrpN
ডাউনলোড লিংক (ড্রপবক্স): http://goo.gl/u8Az0a

নিচে অনলাইনে পাঠযোগ্য ভার্শন:

সাইমুম (উপন্যাস: পর্ব - ১)

লিখেছেন উজান কৌরাগ

ঘর-বাড়ি আর গাছপালা মাথায় সাদা পাগড়ি প’রে স্থির হ’য়ে দাঁড়িয়ে আছে; আলাদা বয়সের দুই-চারজন মানুষ মাথায় সাদা পাগড়ি প’রে হাঁটছে; একটা গাধা আর দুটো রোমশ ভেড়া গায়ে সাদা জামা আর মাথায় সাদা পাগড়ি প’রে সবুজ ঘাস খুঁজছে, কিন্তু ঘাস পাবার উপায় নেই, তাবৎ ঘাস যে মুড়ি দিয়ে আছে সাদা চাদর! আসলে টুপি, জামা কিংবা চাদর নয়; ধবধবে সাদা তুষাররাশি। পাহাড়, পাহাড়ের গাছপালা, পাহাড়ের কোলঘেঁষা ঘরবাড়ি, মানুষ, গাধা আর ভেড়া সকলের ওপরই নিরন্তর বর্ষিত হচ্ছে মিহি দানার সাদা তুষার; আর তুষারাবৃত পথে হাঁটছি আমি, ঠান্ডায় আমার মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে, কিন্তু দারুণ উপভোগ করছি আমি এই শুভ্র-শীতল পরিবেশ। পাহাড় বেয়ে, রাশি রাশি তুষার মাড়িয়ে আমি ক্রমশ ওপর দিকে উঠছি; যতো ওপরে উঠছি ততো ঠান্ডা উপভোগ করছি আমি। চারিদিকে সুনসান নীরবতা, উত্তরে হাওয়ায় ভেসে নিঃশব্দ আদরের মতো ঝ’রে পড়ছে তুষার। তারই মধ্যে দ্রিম-দ্রিম শব্দ! প্রথমে দ্রিম-দ্রিম, তারপর দ্রিম-দ্রিমের সাথে পোঁ-পোঁ, আরো পরে যোগ হলো টুং-টাং। আমি ভাবলাম পাহাড়ি কোনো সম্প্রদায়ের বিশেষ কোনো উৎসব, আর সেই উৎসব উপলক্ষে ওরা যেসব বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছে, এ তারই শব্দ। শব্দ ক্রমশ কাছে আসছে, এখন আর টুংটাং শব্দটা নেই, শ্রবণেন্দ্রিয়ে শুধু দ্রিম-দ্রিম আর পোঁ-পোঁ শব্দ; অচৈতন্যকাল পেরিয়ে এখন আমার অধচৈতন্যজুড়ে বিস্তীর্ণ তুষারাবৃত জনপদ। কিন্তু জোড়ালো শব্দের দাপটে অধচৈতন্য থেকেও আমার পতন হলো চৈতন্যে। তুষারাবৃত জনপদ থেকে আমি ধপাস ক’রে গড়িয়ে পড়লাম সমতলে; তাও কোনো সবুজ জনপদে নয়, কংক্রিটের আবর্জনাময় এই ঢাকা শহরে; আমি শুয়ে আছি বাঁ-দিকে কাত হয়ে আমার রোজকার বিছানায় কোলবালিশ জড়িয়ে, পর্দার ফাঁক গলে রাস্তার লাইটের সরু একফালি আলো অন্ধকার তাড়িয়ে রেখার মতো পড়েছে আমার পেটের ওপর দিয়ে! কোথায় সেই মিহি দানার শুভ্র-শীতল তুষার, কোথায় তুষারাবৃত ঘরবাড়ি আর কোথায়ই-বা শরীর কাঁপানো উত্তরে শীতল বাতাস! মশারির মধ্যে তীব্র গরমে আমার গায়ের পাতলা গেঞ্জি ভিজে গেছে, মাথার বাঁ-দিকের চুল ভিজে গেছে, গলা-ঘাড়ে প্যাচপেচে ঘাম, কপালে-মুখে ঘাম, ঘামে বালিশ ভিজে চপচপ করছে; অথচ আমি কিনা তীব্র শীত উপভোগ করতে করতে সাদা তুষাররাশির ভেতর দিয়ে হাঁটছি! স্বপ্নের কী ছিরিছাঁদ!

অবশ্য স্বপ্নের আর কী দোষ, দোষ আমার মনের, আমার অদ্ভুতুড়ে কল্পনাশক্তির! অতিরিক্ত গরম পড়লে মশারির কুঠুরির মধ্যে শোবার পর এই অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে মনটাকে সরানোর জন্য ঘামতে ঘামতে কল্পনা করতে থাকি যে, আমি আদতেও এই গরম সমতলে নেই, আমি আছি হিমালয়ের পাদদেশের কোনো পাহাড়ি জনপদে, যেখানে অবিরাম তুষার পড়ছে, ঠান্ডা বাতাস হাড় কাঁপাচ্ছে, আর আপনাআপনিই পাওয়া যাচ্ছে মেঘের নিবিড় স্পর্শ! এই অসম্ভব কল্পনা করতে করতেই একসময় ঘুমিয়ে পড়ি আমি, এই তীব্র গরমে আমার ঘুমানোর এ এক মস্ত মহৌষুধ! গ্রীষ্ম কি ভাদ্রের অসহনীয় গরমের দুপুরেও আমি ইউটিউবে বৃষ্টির শব্দ ছেড়ে দিয়ে অনবরত ঘামতে ঘামতে পড়ি কিংবা কাজকর্ম করি আর ভাবি- আহা, কী বৃষ্টি, কী শীতল বৃষ্টি! মাঝে মাঝে গেয়েও উঠি - ‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়’! 

যাইহোক, জেগে জেগে অমন অতি কাল্পনিক স্বপ্ন দেখছিলাম বলেই হয়তো ঘুমের মধ্যেও সেই শান্তিময় টুকরো টুকরো ছবিগুলো আমাকে আচ্ছন্ন করেছিল! 

স্বপ্ন অলীক হলেও শব্দটা কিন্তু বাস্তব সত্য, যেন শান্তিময় সমতল কিংবা পাহাড়ি প্রকৃতিতে হঠাৎ আর্বিভূত হওয়া সাইমুম! বালিশে কান পাতলে শব্দটা আরো তীব্রভাবে আঘাত করছে শ্রবণেন্দ্রিয়ে, বীভৎস দ্রিম-দ্রিম আর পোঁ-পোঁ শব্দের সঙ্গে এখন মানুষের চিৎকার স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। শব্দের উৎস এবং উপলক্ষ এখন আমার কাছে পরিষ্কার। ভীষণ বিরক্তিকর আর আপত্তিকর হলেও শান্তিময় ঘুমের মাঝে এই শব্দের সাইমুম বাধ্য হয়েই মেনে নিতে হয় আমাকে, আমার মতো আরো অনেককে। অন্ধকারে হাতড়ে বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে সুইচ অন ক’রে দেখলাম আড়াইটা বাজে। গরম আর শব্দের তীব্রতায় বিছানায় উঠে বসলাম। ফ্যানের বাতাস অর্ধেকটাই আটকে দেয় মশারি। মশারি খুলে রাখলে গায়ে বেশ বাতাস লাগে, এমন চটচটে ঘাম হয় না শরীরে। কিন্তু সে উপায় নেই; মা-মেয়ে, খালা-ফুফু, দাদী-নানী, নাতনি ইত্যাদি নিয়ে শরীরে হামলে পড়ে লেডি মশার দল। লেডি না ছাই, মাগির দল! মাগির ঝাড় তোদের ডিম নিষেক, বংশগতি ঠিক রাখার জন্য থ্রিওনিন নামক অ্যামাইনো এসিড দরকার যা স্তন্যপায়ী প্রাণীর রক্তে বিদ্যমান; বেশ ভাল কথা, তা ব’লে তোরা রাতের বেলা জোট পাকিয়ে কামরাতে আসবি, মানুষকে ঘুমোতে দিবিনে! মাগির ঝাড়, তোদের তো সকাল আটটায় ক্লাস ধরতে হয় না, তোরা কি ক’রে বুঝবি, গরমে সারারাত না ঘুমিয়ে সকাল আটটায় ক্লাসে যাওয়ার কষ্ট! ও রাতে গরমে ঘুমোতে পারি না, এ রাতে যাওবা একটু ঘুমাতাম, তারও পোয়া বারো! আজ থেকে শুরু হলো মাঝরাত্তিরে শব্দদূষণ! মশারিটা উচু ক’রে চটজলদি বিছানা থেকে নিচে নামলাম। চটজলদি না নেমে উপায় আছে, মাগির দল পররাষ্ট্রনীতিতে তুখোর, আমেরিকার সম পর্যায়ের, মুহূর্তেই সেঁধিয়ে পড়তে পারে! 

বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। উহ, সাইমুম, সাইমুম! বাপরে বাপ, কী শব্দ! কী বাজায় ওরা? তিনতলার বারান্দা থেকে গলিতে তাকাতেই মূর্তিমান ছয়জন শব্দদৈত্যকে দেখতে পেলাম রাস্তার লাইটের আলোয়; যারা বংশপরম্পরায় মস্তিষ্কের কোষে বহন ক’রে চলেছে সাইমুম, যারা বুকে ধারণ করেছে সাইমুম! ছয়জনের মধ্যে চারজন মুখচেনা; আমাদের সি ব্লকের নয়, ডি ব্লকে কয়েকটা টিনশেড বাড়ি আছে, ওখানেই থাকে ওরা। দু’জনের হাতে দুটো পানির জার, বাঁ-হাতে গলার কাছটায় ধ’রে ডানহাতের চ্যালাকাঠ দিয়ে ধুপধাপ পেটাচ্ছে আর চিৎকার করছে, ‘সেহেরি খাওনের সময় অইচে, উইঠ্যা পড়েন!’ দু’জনের হাতে দুটো ছোট ভুভুজেলা, অনর্গল বাজিয়ে চলেছে। বাকি দু’জনের একজনের হাত খালি, সে শুধু চিৎকার করছে। আর অন্যজনের হাতে একটা সরু লাঠি, সে কেবল লাইটপোস্টের কাছে এসে পরপর কয়েকটা বাড়ি দিচ্ছে; দ্রিম-দ্রিম, পোঁ-পোঁ শব্দের পর এবার টুং-টাং শব্দরহস্যও আমার কাছে পরিষ্কার হলো। ছয়জনের মধ্যে তিনজনের উদোম শরীর, পরনে লুঙ্গি; দু’জনের গায়ে জামা, পরনে হাফপ্যান্ট; একজনের গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি, পরনে হাফপ্যান্ট। ওরা অনর্গল শব্দ আর চিৎকার করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে গলির আরেক মাথার দিকে, তীরের ফলার মতো শব্দ আঘাত হানছে আমার মস্তিষ্কের কোষে কোষে। শব্দের সাইমুমে আমার শ্রবণেন্দ্রিয় আহত, আমি বিরক্ত, ক্ষুব্ধ; আমার দৃষ্টি শরের মতো বিদ্ধ জাগনদার দলের পিঠে, আচমকাই আমার মুখ থেকে উচ্চারিত হলো, ‘অসভ্য বর্বরের দল!’

এখন রাত আড়াইটা বাজে, এটা মধ্যযুগ নয় যে এমন বীভৎস শব্দ সৃষ্টি ক’রে মানুষকে সেহেরি খাওয়ার জন্য জাগিয়ে দিতে হবে। প্রত্যেকটা বাড়িতে ঘড়ি-মোবাইল আছে; তাতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখা যায়। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে ‘জাগনদার’ শব্দটা বড্ড সেকেলে; জাগনদারের কাজটা ভীষণ বিরক্তিকর আর অভদ্রচিতও। যখন বাড়িতে বাড়িতে ঘড়ি-মোবাইল ছিল না, তখন হয়তো এর প্রয়োজন ছিল। তখন জীবনও আজকের মতো এতো জটিল ছিল না; সকাল পাঁচটা-ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে তাড়াহুড়ো ক’রে প্রস্তুত হ’য়ে মানুষকে ছুটতে হতো না অফিস কিংবা ক্লাসের উদ্দেশে। 

এই রাত আড়াইটার সময় সবার ঘুম ভাঙানোর কোনো মানে হয় না, কেননা সবাই রোজা থাকে না। অনেক শিশু-বালক রোজা থাকে না, অতিবৃদ্ধ কিংবা অসুস্থও মানুষ রোজা থাকে না, অনেকে এমনিতেই রোজা থাকে না, এছাড়া ভিন্ন ধর্মের কিংবা ভিন্ন মতাদর্শের মানুষও রোজা থাকে না। অবশ্য ভিন্ন ধর্মের কিংবা ভিন্ন মতাদর্শের মানুষকে এদেশের অধিকাংশ সংখ্যাগুরু মুসলমান গণনার মধ্যেই রাখে না; তাদেরকে দয়া-দাক্ষিণ্য আর করুণার পাত্র ভাবে। ভিন্ন মূল্যবোধ সম্পন্ন অথবা আলাদা মতাদর্শী মানুষকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে পীড়ন না ক’রে কিংবা তাদেরকে বিরক্ত না ক’রে কীভাবে একসাথে পাশাপাশি চলতে হয়, তা এদেশের অধিকাংশ সংখ্যাগুরু মুসলমানই জানে না। ভিন্ন মতাদর্শী মানুষ যাতে সংখ্যাগুরুর কোনো আচরণে আঘাতপ্রাপ্ত না হয়, তাদের সংকট কিংবা অসুবিধার জায়গায় দৃষ্টিপাত করা এবং তা সমাধানের চেষ্টা যে সংখ্যাগুরুর-ই করা উচিত, সেই সহবত এদেশের বেশিরভাগ মুসলমানের নেই। এরা পথে-ঘাটে হাঁটে-চলে, অফিস-আদালত করে, খেলাধুলা-শরীরচর্চা করে, শরীয়ত বিরোধী হলেও অনেকে গান-বাজনা করে, সাহিত্যচর্চা করে; কিন্তু অধিকাংশেরই বুকের মধ্যে সর্বক্ষণ থাকে সাইমুম, যা এদের কথাবার্তা, আচার-আচরণের মাধ্যমে ভিন্ন মতাদর্শী মানুষের ওপর প্রায়শই আছড়ে পড়ে। তাতে ভিন্ন মতাদর্শী মানুষের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ছটফট করলেও বেশিরভাগ মুসলমানই কেউ প্রকাশ্যে কেউবা নীরবে বিপুল আনন্দ অনুভব করে। 

জাগনদার দল আমাদের গলি থেকে অন্য গলিতে প্রবেশ করায় শব্দের দাপট কিছুটা কমেছে। প্রস্রাব চেপেছে আমার, বাথরুমে গিয়ে প্রস্রাব সেরে গায়ের ভেজা গেঞ্জিটা খুলে ফেললাম, ট্যাপ ছেড়ে হাত-মুখ, গলা-ঘাড়-বুক ধুয়ে পুনরায় বারান্দায় গিয়ে গামছা দিয়ে মুছলাম গা-মুখের জল। আর তখনই সচল হলো মসজিদের মাইক-‘আসসালামু আলাইকুম, সম্মানিত রোজাদার ভাই ও বোনেরা, সেহেরী খাওয়ার সময় হয়েছে, সেহেরী খাওয়ার সময় হয়েছে, আপনারা উঠুন, সেহেরী খেয়ে নিন।’ 

সালাম বাদে বাকিটুকু এভাবে আরো দু’বার বলার পর মাইকের কন্ঠরোধ হলো। হাতের গামছাখানা বারান্দার তারে মেলে দিয়ে ঘরে এসে ফ্যানের নিচে দাঁড়ালাম; কী সুন্দর বাতাস লাগছে গায়ে, কিন্তু মাগি মশাদের জন্য এই বাতাসটুকু উপভোগ করার উপায় নেই। এরই মধ্যে পায়ে দু-বার হুল ফুটিয়েছে মাগিরা! পা জ্বলছে, চুলকাচ্ছে। আমার আবার অ্যালার্জির সমস্যা আছে, সে কারণেই কিনা কে জানে মশার কামড়ে খুব চুলকায় আর চুলকালে সে জায়গাটায় চাকা চাকা হ’য়ে যায়। বাইরে থাকলে আরো কামড়াবে, আমি আবার মশারির ভেতর প্রবেশ করলাম। বালিশটা উল্টে দিলাম, মানে ঘামেভেজা পাশটা নিচে দিয়ে মাথা রাখলাম বালিশে। 

দরজার নিচ দিয়ে ডাইনিং-এ আলো দেখতে পাচ্ছি, রান্নাঘরেও শব্দ হচ্ছে; তার মানে মা উঠে সেহেরি বানাতে শুরু করেছে। আর কিছুক্ষণ পরই উঠবে অন্যরা; মানে - বাবা, দাদী আর ছোট আপু। দোতলা থেকে আসবে আমার চাচা, চাচী আর চাচাতো বোন; বাড়িতে থাকলে চাচাতো ভাইও আসতো, কিন্তু সে বাড়িতে নেই, দিন পনের হলো চিল্লায় গেছে। চারতলা থেকে আসবে আমার মেজো ফুফু-ফুফা, ফুফাতো বোন; ফুফাতো ভাইটা আবার কানাডায় থাকে। রোজার প্রথম দিনটায় সবার জন্য সেহেরি এবং ইফতারের বিশেষ আয়োজন আমাদের বাসাতেই করা হয়, এটা আমার বাবার নির্দেশ। অবশ্য সকলের প্রতি নির্দেশ হলেও চাচার প্রতি বাবার অনুরোধ বা আবদার বলাই ভাল। কারণ বয়সে দশ বছরের বড় হলেও বাবা চাচাকে নির্দেশ দিতে পারেন না, বরং চাচাই বাবাকে নির্দেশ দেন। আমাদের বাড়ির সবার সঙ্গে বাবা কঠোর এবং ব্যক্তিত্বপূর্ণ আচরণ করেন, এমনকি মেজো ফুফাকেও ধমকান; কিন্তু এই বাবাই আবার চাচার সামনে কেমন যেন অপরাধী বালকের মতো আচরণ করেন। সেই হিসেবে বলা যায়, চাচাই আমাদের বাড়ির অভিভাবক, সবাই তাকে মান্য করে, ভয় করে; কেবল আমি ছাড়া। চাচার ভাষায় আমি কুলাঙ্গার নাস্তিক, বংশের কলঙ্ক, বেতমিজ, গুণাগার। থাক সেসব কথা। 

ওই যে মাইকে আবার শুরু হয়েছে - ‘সেহেরীর আর মাত্র চল্লিশ মিনিট বাকি আছে, সেহেরীর আর মাত্র চল্লিশ মিনিট বাকি আছে, আপনারা উঠুন, সেহেরী খেয়ে নিন। সেহেরীর আর মাত্র চল্লিশ মিনিট বাকি আছে, সেহেরীর আর মাত্র চল্লিশ মিনিট বাকি আছে, আপনারা উঠুন, সেহেরী খেয়ে নিন।’ 

এরই মধ্যে আবার আমার গলা ঘেমে গেছে। কী অসহনীয় গরম! এই গরমে ঘুম ভাঙলে আমার আর সহজে ঘুম আসতে চায় না। অনেকে এই ভীষণ গরমেও শোয়া মাত্রই ঘুমাতে পারে, আমি পারি না। আমার বন্ধু জাহিদের কথাই বলি, ওকে বোধহয় আটত্রিশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রোদে ফেলে রাখলেও শোয়ামাত্রই ঘুমাতে পারবে; তাবৎ মাগি মশার ঝাড় ওকে ঘিরে কীর্তন করলে কিংবা সাম্বা নাচলেও ওর ঘুমের কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না! আমি ওভাবে ঘুমাতে পারি না, ভাল ঘুমের জন্য একটু আরামদায়ক পরিবেশ দরকার হয় আমার। 

এ বছর চৈত্রমাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে ঢাকাসহ সারাদেশে। তার পর থেকে শুরু হয়েছে খরা। ঢাকা শহর যেন জ্বলছে, বাতাসে আগুনের আঁচ! ঢাকার আকাশের ওপর দিয়ে লোভ দেখাতে দেখাতে মেঘ ভেসে যায় উত্তর-পূর্বদিকে; সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, শেরপুর প্রভৃতি জেলায় প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে; দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতেও প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে; সারাদেশে বজ্রপাতে প্রায় একশো মানুষ মরেছে; বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিবেবে ঘোষণা করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। অথচ ঢাকায় ঝড়-বৃষ্টি তো দূরের কথা, বাতাসে গাছের পাতাটাও যেন নড়ে না! দিনের পর দিন, রাতের পর রাত গরমে সিদ্ধ হচ্ছে মানুষ। আমার চাচীর বড়বোন থাকেন সিলেটে, গতকাল বিকেলেও নাকি তিনি ফোন ক’রে ঝড়-বৃষ্টির শব্দ শুনিয়েছেন চাচীকে, আর বলেছেন, ‘ঢাকা হলো দোজখখানা, গুনাহগারে ভরে গেছে ঢাকা শহর, এই জন্যই আল্লাহ বৃষ্টি দেয় না, গরমে কষ্ট দেয় ঢাকার মানুষরে!’ 

এই কথাগুলো সন্ধ্যায় চাচী আমার মাকে বলছিলেন আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে, অর্থাৎ আমাকে বুঝিয়ে দেওয়া যে, আমিও একজন গুনাহগার এবং এই অনাবৃষ্টির জন্য আমিও দায়ী। 

না, আমার আর সহজে ঘুম আসবে না। ঘুমের রেশ কেটে গেছে। তবে স্বস্তি এই যে, কাল আমার ক্লাস নেই, একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠলেও কোনো অসুবিধা হবে না। বাবার গলা শুনতে পাচ্ছি ডাইনিং-এ, মাকে কী যেন বলছেন। কয়েক মহূর্ত পরই আমার দরজায় শব্দ হলো।

(চলবে)

আস্তিকীয় আজগুবি ধারণা


Bigfoot (also known as Sasquatch) is the name given to a mythological simian. বিস্তারিত এখানে

ধার্মিক - ১

লিখেছেন যুক্তিবাদী পীর

রাত আনুমানিক ১০ টা। এক বড় ভাই রাতের গাড়িতে শহর ত্যাগ করবে, তাকে বিদায় জানাতে বাসষ্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি কোনো এক অজানা কারণে ১০:২০ টার গাড়ি ছাড়বে রাত ১১ টায় । 

ভাইয়া বল্ল:
- চল, চা খেয়ে আসি! 
- চলো যাই। 

হাতে প্রচুর সময় থাকায় ষ্টেশন থেকে একটু দূরেই চলে এলাম। চা-পরোটা খাওয়া শেষে একটা নড়বড়ে বেঞ্চে বসে আমি আর ভাইয়া বিড়ি ফুঁকছিলাম। 

হঠাৎ পেছন দিক থেকে গলঅর আওয়াজ:
- ভাইজান, আল্লার ওয়াস্তে একটু সাহায্য করেন... 

পেছনে ফিরে দেখি, একজন মধ্যবয়স্ক লোক, যার ডান হাতটা আমার দিকে বাড়ানো, লোকটা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে একটু ঘাবড়ে গেল এবং যথাসম্ভব দ্রুত ঐ স্থান ত্যাগ করলো। 

বি. দ্র. ঐ ভিখিরি লোকটি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী। কিছুদিন আগেও সে সনাতন ধর্ম অনুযায়ী তার মেয়ের বিয়ে দিয়েছে এবং সে আমার পরিচিত।

বিবিধ বিশ্বাস

শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬

ইসলামি সম্মেলন সংস্থার মহাসচিব: "পরকালের কোনো সত্যতা নেই"

লিখেছেন ক্যাটম্যান

গত ১৯-০৮-২০১৬ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত একটি খবরের উপ-শিরোনাম খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। খবরটির উপ-শিরোনামে মুদ্রিত হয়েছে— “যুবকদের পরকালের মিথ্যা প্রলোভন যারা দেখাচ্ছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে: ওআইসি মহাসচিব”।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে ওআইসি (Organisation of Islamic Cooperation) মহাসচিব ইয়াদ বিন আমিন মাদানি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে ওআইসি মহাসচিব বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে বলেন, ‘যুবকদের পরকালের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আত্মত্যাগের এই ভুল পথে কারা পরিচালিত করছে তা আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।’ আর তাই ওআইসি মহাসচিবের সেই বাণী উপজীব্য করে পরের দিন ইত্তেফাক পত্রিকার প্রথম পাতায় উপর্যুক্ত উপ-শিরোনামটি গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়। ওআইসি মহাসচিব প্রদত্ত বাণীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, ‘পরকালের মিথ্যা প্রলোভন’ বাক্যাংশটি; অর্থাৎ তিনি তার বাণীতে স্বীকার করেছেন যে, পরকালের কোনো সত্যতা নেই। তাই পরকালের যাবতীয় প্রলোভন মিথ্যা। জনাব মাদানি প্রদত্ত বাণীটি সাধারণের বোধগম্য হওয়া সত্ত্বেও মাথামোটা মুমিন-মুসলমানগণ তা বুঝতে অপারগ। তাই উক্ত বাণীটির অনুকূল অর্থান্তর করার মানসে তারা অযৌক্তিক ব্যাখ্যার অবতারণায় লিপ্ত হয়। তারা বোঝাতে চায়, জনাব মাদানি উক্ত বাণীতে পরকালকে মিথ্যা বলেননি; তিনি পরকালের প্রলোভনকে শুধু মিথ্যা বলেছেন। তাদের এমন দাবি যে ধোপে টিকবে না, জনাব মাদানি প্রদত্ত বাণীটি সামান্য বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টি আমাদের নিকট স্পষ্ট হবে। জনাব মাদানি প্রদত্ত বাণীটি একটু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে লিখলে যা হয়, তা নিম্নরূপ:

মূল বাণী: পরকালের মিথ্যা প্রলোভন।
(ক) পরিবর্তিত বাণী: পরকালের প্রলোভন মিথ্যা।
(খ) পরিবর্তিত বাণী: মিথ্যা পরকালের প্রলোভন।

উপর্যুক্ত পরিবর্তিত বাণী দু'টির প্রথমটির অর্থ হলো - পরকালের যাবতীয় প্রলোভন মিথ্যা। এখানে সত্য প্রলোভন বা মিথ্যা প্রলোভন বলে কোনো আলাদা বিষয় নেই। আর দ্বিতীয় পরিবর্তিত বাণীটির অর্থ হলো- পরকাল মিথ্যা, বিধায় সেই মিথ্যা পরকালের যাবতীয় প্রলোভনও মিথ্যা, অর্থাৎ কোনো প্রলোভন সত্য হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। পুরো বিষয়টি ঈমানি প্রতারণার সামিল।

অপরপক্ষে জনাব মাদানি প্রদত্ত মূল বাণীটির সঠিক অর্থ নিরূপণে মুমিন-মুসলমানদের ব্যাখ্যাও যদি অনুসরণ করি, সেক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগে পরকালের মিথ্যা প্রলোভনের বিপরীতে পরকালের সত্য প্রলোভন কী কী? আর মস্তিষ্ক প্রক্ষালক ধর্মীয় গুরুরা নাশকতাকারী মুসলিম জঙ্গীদেরকে কী কী মিথ্যা প্রলোভনে প্রলোভিত করে থাকে?

আল-কুরআন ও আল-হাদিস ঘেঁটে আমরা জানতে পারি যে, ইসলাম প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করতে মুহম্মদের আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিম পুরুষকে জান্নাতে গমন ও তথায় বিষমকামিতা চরিতার্থকরণে উদ্ভিন্নযৌবনা ও আয়তলোচনা হুর, সমকামিতা চরিতার্থকরণে মুক্তা সদৃশ গেলমান অর্থাৎ সুন্দর সুন্দর বালক, পানাহারের নিমিত্তে দুধ, মধু, মদ, শীতল পানি ও ফলের ন্যায় স্থূল বিষয়ের প্রলোভন দেখিয়েছেন। এবং একই উদ্দেশ্যে মুসলিম নারীদেরকে একজন জান্নাতি কামুক পুরুষের যৌনদাসী হয়ে জান্নাতে প্রবেশের প্রলোভন দেখিয়েছেন, যা নির্বোধ মুমিন-মুসলমানদের নিকট সত্য প্রলোভন বলে বিবেচিত।

অপরপক্ষে মস্তিষ্ক প্রক্ষালক ধর্মীয় গুরুরা মুসলিম জঙ্গীদেরকে নাশকতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করতে একইভাবে আল-কুরআন ও আল-হাদিসে বর্ণিত উপর্যুক্ত স্থুল প্রলোভনসমূহ দেখিয়ে থাকেন, যা আমরা সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গীদের প্রদত্ত জবানবন্দির সুবাদে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম হতে জানতে পেরেছি। বিধায় নাশকতাকারী জঙ্গী মুসলমানগণ যে সকল প্রলোভনে প্রলোভিত হয়ে নাশকতা সৃষ্টি করে থাকে, কুরআন-হাদিসের বিবেচনায় তা সত্য প্রলোভন। অপরপক্ষে মুসলিম জঙ্গীদের অনুসৃত প্রলোভনসমূহ যদি মিথ্যা প্রলোভন বিবেচিত হয়, সেক্ষেত্রে মুমিন-মুসলমানদের দাবিকৃত সত্য প্রলোভনসমূহও মিথ্যা প্রলোভনে পর্যবসিত হতে বাধ্য। তাহলে সত্য প্রলোভন ও মিথ্যা প্রলোভনের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। এই বিবেচনায় ওআইসি মহাসচিব ইয়াদ বিন আমিন মাদানি প্রদত্ত বাণীটি সঠিক; অর্থাৎ ‘পরকালের মিথ্যা প্রলোভন’ বাক্যাংশ দ্বারা মিথ্যা পরকালের যাবতীয় প্রলোভনকেই মিথ্যা সাব্যস্ত করেছেন তিনি। মুসলিম বিশ্বের ওপর কর্তৃত্বপরায়ণ বৃহত্তম সংগঠন ইসলামি সম্মেলন সংস্থা বা ওআইসি। আর সেই বৃহত্তম সংগঠনের মহাসচিব পদে আসীন থেকে কাফেরসুলভ ভঙ্গিমায় সময়োচিত যে-বাণী জনাব মাদানি প্রদান করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।

যুবকদেরকে পরকালের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আত্মত্যাগের ভুলপথে পরিচালনাকারীদের খুঁজে বের করার তাগিদ অনুভব করেছেন তিনি। তার ন্যায় আমরাও সেই একই তাগিদ সদা সর্বদা অনুভব করে থাকি। আর তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা যা দেখতে পাই, তা হলো, সারা পৃথিবীতে যাবতীয় ইসলামি জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদের মূল উৎস নিহিত রয়েছে আল-কুরআন, আল-হাদিস ও কুরআন-হাদিস নির্ভর ধর্মীয় কিতাবগুলোয়। সারা পৃথিবীর সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ কুরআন-হাদিসের সন্ত্রাসবাদী আদর্শের খপ্পরে পড়েই জঙ্গিবাদের ন্যায় আত্মবিনাশী পথ বেছে নেয়। কুরআন-হাদিস ইসলামি জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদের পাশাপাশি পারলৌকিক মিথ্যা প্রলোভনেরও আকর গ্রন্থ। তাই কুরআন-হাদিস থেকেই ইসলামি জঙ্গিরা পরকালের মিথ্যা প্রলোভন লাভ করে থাকে। অথচ সন্ত্রাসবাদের ধারক ও বাহক কুরআন-হাদিসের বিষয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। বরং ইসলামি সন্ত্রাসবাদ ও পারলৌকিক মিথ্যা প্রলোভনের আকর গ্রন্থ কুরআন-হাদিস অনুসরণ করে যে সকল ধর্মীয় গোষ্ঠী ও ব্যক্তি সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজকে নাশকতা সৃষ্টির ভুল পথে পরিচালিত করে, তাদেরকে খুঁজে পেতেই তিনি বেশি আগ্রহী। অথচ তাদেরকে খুঁজে পেলে তিনি যে কোনো বিপ্লব করে ফেলবেন, তা-ও নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে ওআইসি মহাসচিব সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকদের খুঁজে বের করার যে তাগিদ ব্যক্ত করেছেন, মূলত তা তার বাগাড়ম্বর ছাড়া অন্য কিছু নয়। কারণ পারলৌকিক সমস্ত মিথ্যা প্রলোভনকে পুঁজি করে ইসলামি জঙ্গিদের নেতৃত্ব দান ও ইসলামি জঙ্গিবাদের সুচারু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে কুরআন-হাদিসের হীন আদর্শ অনুসরণকারী বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী। তন্মধ্যে কট্টরপন্থী ওয়াহহাবি গোষ্ঠী গত কয়েক শতাব্দী যাবৎ সারা পৃথিবীব্যাপী ইসলামি জঙ্গিবাদের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠায় অন্যতম ভূমিকা পালন করছে। আর সেই ওয়াহহাবিবাদের ভিত্তিভূমি ও কেন্দ্র হলো ওআইসি মহাসচিব জনাব মাদানির জন্মভূমি সৌদি আরব। যে ওয়াহহাবিবাদের সুবিধা নিয়ে সৌদি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, নিজ দেশে সেই ওয়াহহাবিবাদের ভয়াবহ বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতেই রাজতান্ত্রিক পৃষ্ঠপোষকতায় তা সারা বিশ্বে রপ্তানি করছে ওআইসির গডফাদার সৌদি আরব। খোদ ওআইসি মহাসচিব কিনা যে দেশের নাগরিক। ওআইসি মহাসচিবের তাগিদ অনুযায়ী জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষক ও পরিচালনাকারীদের খুঁজে বের করতে আমরা যতই সচেষ্ট হই না কেন, তবে তিনি কখনও তাদেরকে খুঁজে বের করতে সচেষ্ট হবেন না; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে যদিও তিনি বলেছেন ‘যুবকদের পরকালের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আত্মত্যাগের এই ভুল পথে কারা পরিচালিত করছে তা আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।’

যাহোক, ওআইসি মহাসচিব তাঁর প্রতিশ্রুত তাগিদ যথাযথভাবে অনুসরণ না করলেও, বিশ্ব ওয়াহহাবিবাদের কেন্দ্র সৌদি আরব নিয়ন্ত্রিত বৃহত্তম ইসলামি সংস্থার মহাসচিব পদে আসীন থেকে ‘পরকালের মিথ্যা প্রলোভন’ অর্থাৎ পরকালের প্রলোভনকে মিথ্যা বলে যে সত্যভাষণ প্রদান করেছেন, সেজন্যই তিনি সাধুবাদ পাবার যোগ্য। তাঁর অবস্থা “এতক্ষণে” অরিন্দম কহিলা বিষাদে-এর ন্যায়। তিনি ইসলামি সন্ত্রাসবাদ ও ওয়াহহাবি জঙ্গিবাদের কুফল অনুভব করে বিষাদগ্রস্ত মনে উপর্যুক্ত সত্যভাষণটি প্রদান করেছেন। শুধু তা-ই নয়, ওয়াহহাবিপন্থীদের কট্টর ব্যাখ্যানুযায়ী উক্ত ঐতিহাসিক বাণী ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে জনাব মাদানি ইতোমধ্যেই নিজেকে একজন কাফের প্রমাণ করেছেন; যার কারণে ওআইসির ইতিহাসে একজন কাফের মহাসচিব হিসাবে জনাব মাদানির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

যদিও তথাকথিত মুমিন-মুসলমানগণ দাবি করছেন যে, জনাব মাদানি ‘পরকালের মিথ্যা প্রলোভন’ বাক্যাংশটি অন্য কোনো বিষয় বোঝাতে গিয়ে হয়ত অজ্ঞতাবশত বলে ফেলেছেন। তবে এ জাতীয় কোনো দাবিই বিচক্ষণ জনাব মাদানির কাফের হওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হতে পারে না। কারণ ওয়াহহাবিবাদের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহহাব তার লিখিত ‘কাশফুশ শুবহাত’ পুস্তকে উক্ত বিষয়ে স্পষ্টতই লিখেছেন: “কেননা যখন তুমি বুঝতে পারলে যে, মানুষ তার মুখ থেকে একটা কূফরী কথা বের করলেও তার জন্য সে কাফের হয়ে যায়, এমন কি যদি সে উক্ত কথাটি অজ্ঞতাবশতঃ বলে ফেলে, তবু তার কোন ওযর আপত্তি খাটে না।” (পৃষ্ঠা-১১, অনুবাদ: আবদুল মতীন সালাফী, ১৪২০ হিজরী।)

সেই বিবেচনায় জনাব মাদানি নিঃসন্দেহে একজন জলিল কদর কাফের, যাকে নিয়ে মুসলিম বিশ্বের প্রগতিশীল জনগণ গর্ব করতে পারে। আর এমন গুরুতর বিষয় অবগত হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ব ওয়াহহাবিবাদের দাসানুদাস হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর নেতৃবৃন্দের যে কোনোরকম পায়ুপীড়া নেই, সে জন্যে তারাও ধন্যবাদার্হ।

বিশ্বজুড়ে ইছলামী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া

পূর্ণাকারে দেখতে ছবির ওপরে ক্লিক করতে হবে

অনলাইনে নতুন বিনোদনী প্রজাতি - হিন্দু "নাস্তিক"

হিন্দু "নাস্তিক" প্রজাতির গতকালের বাণী:
ইছলামের নবীর এক স্ত্রীর বয়স ছিলো ৬, শুধু এটুকু জেনেই তাকে শিশুকামী বলা যাবে, কিন্তু কৃষ্ণের ১৬১০৮ স্ত্রী ছিলো জেনেও তাকে "লুইচ্চা" বলার আগে অর্বাচীন নাস্তিকদের উচিত হবে হিন্দুধর্ম ও কৃষ্ণ সম্পর্কে গভীর স্টাডি করা। আর হ্যাঁ, হিন্দুরা তার পূজা করলেও কৃষ্ণ চরিত্রটা তো কাল্পনিক।
নিচ্চই! নিচ্চই! আর তাছাড়া এই পূজার সাথে হিন্দুধর্মের কোনও সম্পর্ক থাকলে তো! এটা স্রেফ বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ! 

বছর দুয়েক আগে কৃষ্ণ সম্পর্কে ধর্মকারীতে প্রকাশিত হয়েছিল একটি মজাদার পোস্ট:

কৃষ্ণ - ১৭৭১৮৮ সন্তানের পিতা!

লিখেছেন ভীতুর ডিম

বিভিন্ন পুরাণ ও লোকবিশ্বাস অনুযায়ী কৃষ্ণ ১২৫ বছর বেঁচে ছিলেন। এবং সেই মহাভারত, পুরাণ অনুযায়ী কৃষ্ণের স্ত্রী ছিলেন ১৬১০৮ জন মাত্র। যাদের প্রত্যেকের গর্ভে ১০ টি করে পুত্র আর ১ টি করে কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। 

কিন্তু দুটো জিনিস আমার কাছে স্ববিরোধী লাগে। কী রকম? 

ধরা গেল, কৃষ্ণ ১৫ বছর বয়স থেকে সন্তানের পিতা হতে শুরু করে। এবং এই ধারা বজায় রাখে ১০০ বছর পর্যন্ত - যা কিনা অসম্ভব বলেই মনে হয়। তবু নাহয় মেনে নিলাম। তাহলে দাঁড়াচ্ছে, সন্তানজন্মদানপ্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার জন্য কৃষ্ণ সময় পেয়েছিল মোট ৮৫ বছর। 

এবার একটু অঙ্ক কষা যাক। 

১৬১০৮ জন স্ত্রীর যদি ১১ জন করে সন্তান হয়, তাহলে মোট সন্তানের সংখ্যা হল ১৬১০৮ x ১১ = ১৭৭১৮৮ জন।

এবার ধরা যাক, তিনি দিনে পাঁচ বার করে মিলন করছেন এবং প্রতিটি মিলনের ফলেই একটি করে সন্তান জন্মেছে - যা কিনা লজিক্যালি সম্ভব নয়, তবু নাহয় ধরে নিলাম। তার মানে তাকে সঙ্গম করতে হয়েছে ১৭৭১৮৮ / ৫ = ৩৫৪৩৭.৬ দিন। যা কিনা বছরের হিসেবে দাঁড়ায় ৩৫৪৩৭.৬ / ৩৬৫ = ৯৭ বছর।

অথচ তিনি সময় পেয়েছিলেন ৮৫ বছর। তাহলে কী করে সম্ভব হল? তাহলে কি কৃষ্ণের ১২৫ বছর বাঁচাটা গল্প নয়? তাহলে কি ১৬১০৮ জন স্ত্রীর ব্যাপারটা মিথ্যে নয়? তাহলে কি ১১ টি করে প্রত্যেক স্ত্রীর সন্তান হওয়াটা ভাঁওতা নয়? 

একটু ভাবুন... হরে কৃষ্ণ... হরে কৃষ্ণ... হেহহেহেহেহ...

হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব অযুত আবাল

এই একবিংশ শতাব্দীতে বসে বিজ্ঞান ও উন্নত টেকনোলজির সমস্ত সুযোগসুবিধা ও সেবা ব্যবহার করেও যারা বিশ্বাস করে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসলে আল্যার ইঙ্গিত (শাস্তি, শিক্ষা, পরীক্ষা ইত্যাদি), তাদেরকে "আবাল" আখ্যা দিলে প্রকৃত আবালরা অপমানিত বোধ করতে পারে। 

২৪ আগস্টের ভূমিকম্পকে মূঢ়মস্তিষ্ক মমিনমহল মনে করেছে নামাজের অ্যালার্ম। হায়, আবালআকীর্ণ এ বঙ্গদেশ। তো সেদিন ফেসবুকে জড়বুদ্ধিসম্পন্ন বেকুবের দল এ বিষয়ে প্রসব করেছে অসংখ্য স্ট্যাটাস, যেগুলো থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছেন Stezo Erich এবং লিখেছেন:
হে আল্যা, তোমার মুমিন বান্দাদের জন্য প্রতিদিন নামাজের আগে একটা করে অ্যালার্ম দিয়া দিয়ো।
সর্বমোট ১১টি ছবি। নিচের ছোট ছোট ছবিগুলোর ওপরে একের পর এক ক্লিক করে দেখতে হবে।

বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৬

ধর্মের চিড়িয়াখানায় - ১০

লিখেছেন ধর্মহীন জিরাফ

৪৬.
আমরা গর্বিত মুসলিম!
আমরা দৈনন্দিন জীবনে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের আবিষ্কৃত জিনিস থেকে সুবিধা ভোগ করি,আবার তাদেরই ধ্বংস কামনা করি।

৪৭.
ঈশ্বর কোনো খারাপ কাজের দায় না নিলেও সমস্ত ভালো কাজের কৃতিত্ব দাবি করতে একটুও লজ্জাবোধ করে না।
হে ঈশ্বর, তুমি এতো নির্লজ্জ কেন? এত অসৎ কেন তুমি?

৪৮.
শফি হুজুররা ওয়াজে-নামাজে বলে বেড়ায়, ইহকাল কিছুই না, পরকালই সব। ইহকাল যাত্রাপথের বিরতি মাত্র, এটাকে গুরুত্ব দেয়া যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি...
নারীনীতি, শিক্ষানীতি, ভাস্কর্য এগুলো তো সব ইহাকালীন। তাহলে এইগুলো নিয়ে এরা এত মাতামাতি করে কিল্লাই?

৪৯.
ধর্মে কুসংস্কারাচ্ছন্ন অশিক্ষিত মূর্খদের প্রাধান্য বরাবরই বেশি। সেটা ধর্মপ্রবর্তক ও ধর্মগুরু থেকে সাধারণ কোটি কোটি প্রকৃত ধার্মিক -সকলের বেলায়ই সত্যি।

৫০.
"তোমরা সত্যের সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করো না আর জেনেশুনে সত্য কে গোপন করো না।" (সূরা বাকারা, আয়াত ৪২)
কোরানের ওপরোক্ত আয়াতটা সবচেয়ে বেশি বার ধর্ষিত হয়েছে বাঁশের কেল্লা'র হাতে।

মানবশিরশ্ছেদের প্রথম পাঠ

শয়তানের প্রলোভন

বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৬

ইছলাম ত্যাগের কারণসমূহ - ৩৯

ব্রিটেনের কাউন্সিল অভ এক্স-মুসলিম নামের সংগঠনের উদ্যোগে #ExMuslimBecause নামে টুইটারে একটি প্রচারণা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রাক্তন মুছলিমরা উপস্থাপন করছে ইছলাম ত্যাগের বিবিধ কারণ। অতি দীর্ঘ ও ক্রমবর্ধমান এই কারণ-তালিকা থেকে কিছু সরস ও সিরিয়াস কারণ অনুবাদ করে প্রকাশ করা হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। এতে যুক্ত করা হচ্ছে/হবে ধর্মকারীর ঠিকানায় পাঠানো লেখা/ছবি/ভিডিওও।

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮

Hani Kafir: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ ভাবতেই হাসি পায় যে, আল্যা আস্ত একটা সুরা জুড়ে শুধু আবু লাহাবকে অভিশাপ দিয়েছে।

Lusi: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ আমি স্টুপিড হতে চাই না।

Alexander Kerensky: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ প্যারিস, মার্সেই, ব্রাসেলস এবং কোপেনহেগেনের হত্যাযজ্ঞ ও ইহুদিদের ওপর আক্রমণের সঙ্গে ইছলামের সম্পর্ক আছে।

Atheist Genie: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ "জান্নাত" বলে কিছু নেই। সৎ মানুষ হতে গেলে বেহেশতের প্রতিশ্রুতির (যেমন, অফুরান খাদ্য ও যৌনদাসী) প্রয়োজন পড়ে না।

Sarah imanuel: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ এক আবাল ঈশ্বরের চেয়ে খারাপ হতে পারে শুধু আরেক আবাল ঈশ্বর, যে মানুষে-মানুষে শত্রুতার উস্কানি দেয়।

Jane Gandhi: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ মানুষের জীবনের মূল্য মুহাম্মদ যতোটা দিতো, তারচেয়ে বেশি দিই আমি।

Asif Raheem: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ দাসপ্রথা ইছলামে অনুমোদিত।

Aaqib.Hossain: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ কোরানে উল্লেখিত আল্যার কর্মকাণ্ডের নৈতিকতা বিষয়ে জনসমক্ষে প্রশ্ন করার কারণে আমি মৃত্যুহুমকি পাই।

Freethoughts: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ আমি মানবতার পথে এসে বুঝেছি, নাস্তিক, ইহুদি ও সমকামীরাও মানুষ এবং তাদের হত্যা করা উচিত নয়।

Omar Makram: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ মিসরের ৮৬ শতাংশ মুছলিম ইছলামত্যাগকারী ব্যক্তিকে হত্যা করা সমর্থন করে, এটা "সাংস্কৃতিক" ব্যাপার হতে পারে না।

বড়োদের স্যান্টা

উপাসনালয় বনাম পতিতালয়

লিখেছেন মৌলবাদী Big জ্ঞানী

(পতিতালয় ভালো স্থান নাকি খারাপ স্থান, প্রয়োজনীয় নাকি অপ্রয়োজনীয়, সেই বিতর্ক এখানে অপ্রাসঙ্গিক। তবে পতিতালয় যে উপাসনালয়ের চেয়ে উত্তম, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সে-কথাই প্রমাণ করা হয়েছে এই লেখায়।)

১. 
মন্দিরে মুসলিমদের প্ৰবেশ নিষেধ, মসজিদে হিন্দুদের প্ৰবেশ নিষেধ; আমার মনে হয়, এর থেকে পতিতালয়ই ভালো, কারও প্রবেশেই নিষেধ নেই, সে হিন্দু বা মুসলিম যা-ই হোক না কেন! 
(অবশ্যই ১৮ বছরের পরবর্তী বয়সীদের) 

২. 
গীতাপাঠ করে, মন্দিরে পুজো দিয়ে, কোরআন তেলাওয়াত করে, নামাজ আদায় করে কার কী লাভ হয়, জানি না, তবে পতিতালয়ে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ "শক্তি" খরচ করে এলে শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকে। 
(কারণ যৌনতা আমাদের জীবনে আর পাঁচটি অভ্যাসের মতই সুস্থ একটি অভ্যাস) 

৩. 
মন্দিরের প্রণামী বাক্সে বা পীরের মাজারে লোকে টাকাপয়সা দান করে কী পায়, জানি না, তবে পতিতালয়ে যৌনকর্মীদের চাহিদার বেশি বখশিস দিলে তাঁরা খুশিও হন, এবং আরও বেশি সময় ধরে ভালো "পরিসেবা" দিয়ে customer কে খুশিও করে রাখেন। 
(একজন মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষকে খুশি করতে পারা একটি মহৎ গুণ)

৪. 
ঈশ্বর বা আল্লাহ সব মানুষকে সমান দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখেন কি না, আমার জানা নেই, তবে পতিতারা সকল "খদ্দের"-কে সমান চোখে দেখেন। 
(সাক্ষাৎ দেবী যদি বলতে হয়, তো একজন যৌনকর্মীকেই বলবো)

৫. 
মানুষ কাল্পনিক ঈশ্বর বা আল্লাহ'কে ভালোবেসে (?) সমাজের কতটা উপকারে কাজে আসে, তা জানা নেই, তবে একজন যৌনকর্মীকে ভালোবেসে যদি কেউ বিয়ে করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনে তাঁর অন্ধকার জগৎ থেকে, তবে একজন নারী তার প্রকৃত মর্যাদা পায়। তাঁকে আর কারও কাছে "শরীর বেচতে" হয় না। 
(ঈশ্বরপ্ৰেমীরা কি আদৌ মানুষকে ভালোবাসতে জানেন?)

চেয়ে চেয়ে দেখি আর ভাবি

মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৬

পুতুলের হক কথা - ২০

লিখেছেন পুতুল হক

৭৬.
আল্যা ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি কারো পিতা নন। তবে কি তিনি মাতা?

৭৭.
ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের শহর। পুরো দেশটাই এখন মসজিদে গিজগিজ করছে। এমন একটা দেশে যে ইসলামি সন্ত্রাস ছড়াবে, সে কথা বলাটাই বাহুল্য। আমাদের ঘরে ঘরে এখন মোল্লা। এদের মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এলিট ক্লাস মোল্লা। তারা সবাই ইসলামের পালক, রক্ষক এবং সেবক। এদের ইসলামপ্রীতি দেখে সন্দেহ হয়, স্বয়ং নবী মোহাম্মদেরও এতোটা ইসলাম-প্রেম ছিল কি না! সদা সর্বদা এরা ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছে। দামি গাড়িতে চড়ে দামি ফ্ল্যাটে থেকে মুখে ফেনা তুলে "এ জীবন কিছু নয়, আখিরাতই আসল" বলে। এরাই আজকাল নির্ধারণ করে, কে বেহেশত যাবে, আর কে নরক পাবে। আল্লাহর শেষ বিচারের কাজ এরা অনেকটাই এগিয়ে দিচ্ছে। কিছুদিন পরে হয়তো এরা গোরস্তানে বেহেস্ত যাবার ছাড়পত্র বেচবে। ভাবছি সময় থাকতে এদের কারো কাছ থেকে একটা ছাড়পত্র সংগ্রহ করে রাখবো।

৭৮.
আবহাওয়াবিদ পূর্বাভাসের মাধ্যমে মিকাঈলের কাজকারবার আগেই জানিয়ে দেয়। হায় মিকাঈল, এও দেখে যেতে হল জীবনে! তোমার আল্যা কি কিছুই করবে না বিজ্ঞানের?

৭৯.
কামরুলের প্যান্টের পকেটে এক গাছা সোনার হার। বাড়ি ফিরে হাতমুখ ধুয়েছে, খেয়েছে। হারের অস্তিত্ব সারাক্ষণ অনুভব করছে। পকেট থেকে বের করে দেখার সাহস হচ্ছে না।

কামরুল বাড়ি থেকে তিন মেইল দূরের একটি কলেজে একাদশ শ্রেণীতে পড়ে। অনির্বাণও তার সাথে একই ক্লাসে পড়ে। তারা ছোটবেলার বন্ধু। কিছুদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল, অনির্বাণরা ভারত চলে যাবে। ওদের জায়গা-জমি বেশিরভাগ বেদখল হয়ে গেছে, আর কিছু পানির দামে বিক্রি করে দিয়েছে জয়ন্ত কাকা। আজকে কলেজ থেকে ফেরার পথে দেখে, অনির্বাণদের বাড়ি দিনে-দুপুরে লুট হচ্ছে। কামরুলের খুব খারাপ লাগে। সে দৌড়ে যায় বাড়ির ভেতর। কাকিমাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তারা পালিয়ে গেছে।

চেনা-অচেনা অনেকগুলো মুখের মাঝে কামরুলের উদ্ভ্রান্ত মুখটি দেখা যায় কাকিমার শোবার ঘরে। নাড়ু কিংবা বরইয়ের আচার খেতে কামরুল কতবার যে এসেছে এই ঘরে! যে যা পারছে নিয়ে নিচ্ছে। কে যেন বলল, "যা পারো নিয়া নাও। হিন্দুদের মালে মুসলমানের হক আছে। গুনাহ্‌ নাই, নিয়া নাও।" ভাঙা আলমারির সামনে কাপড়চোপড়ের গাদার মধ্যে কাকিমার হারটি ছিল। কামরুল সন্তর্পণে সেটি নিয়ে নেয়।

পকেটের হারটি তার বুকে খোঁচা দিচ্ছে বারবার। তার একবার মনে হচ্ছে, সিঁদুর-জড়ানো হার নেয়া তাঁর অন্যায় হয়েছে, আবার মনে হচ্ছে, আল্লাহ্‌ যাকে অন্যায় বলেনি, সে কেন তবে অন্যায় মনে করবে? কামরুল খুব দোটানার মধ্যে পড়ে যায়।

৮০.
আমি যদি বলি, আল্যা নেই, তবে রাগ করার কথা আল্যার। আল্যা নাহয় রাগ করে আমায় বেহেশত দিল না। কিন্তু কোনো কোনো মানুষের এতো জ্বলে কেন?

দোয়া সরবরাহ হ্রাস