আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৬

কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছর - (পর্ব ০৮)

লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ


{প্রাক ইসলাম যুগের আরবি কবিতা ছিল মূলত গীতিকবিতা বা লিরিক ধরনের, আরবিতে যাকে বলে শি’রুল গিনাই। প্রাক ইসলাম যুগের কবিরা প্রকৃতির বর্ণনা, ক্ষমা প্রার্থনা, তিরস্কার, বীরত্বগাথা, গর্ব, প্রশংসা, ব্যঙ্গ, প্রেম, শোকগাথা এই সব কিছুই গীতিকাব্যের মত করে আবৃত্তি করতেন এবং গাইতেন।

প্রাচীন আরবি গীতিকাব্যগুলো দু’ধরনের হতো - কিতআ বা খণ্ড কবিতা এবং কাসিদা বা দীর্ঘ কবিতা। ইসলামের আবির্ভাবের পর আরবি কবিতা বেশ বড় একটা ধাক্কা খায়, কবিতায় নগ্নতার বিষয় কমে আসে, ইসলামের প্রভাবে মুহাম্মদ এবং আল্লাহ’র প্রশংসায় কবিতা রচনার নতুন ধারা শুরু হয়। 

কোরআনের প্রাঞ্জল ভাষার প্রভাব অতিক্রম করে কিতআ বা খণ্ড কবিতা এবং কাসিদা বা দীর্ঘ কবিতার ওপর। উদাহরণ টানা যেতে পারে এভাবে: সমগ্র জীবন রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়া মানুষ যখন জীবনান্দের কবিতা পড়া শুরু করেন, তখন যেমন নতুন মুগ্ধতার জগতে ডুবে যান; তৎকালীন মক্কাবাসীদের অবস্থা ছিল ঠিক তেমনটাই। আর তা যদি হয় সৃষ্টিকর্তার নামে প্রচারিত, তবে তো সোনায় সোহাগা!

কোরআনের সূরার মৌলিক দিক বুঝতে হলে আগে আমাদের প্রাচীন আরবের কবিতার রূপ দেখতে হবে; চলুন মুহাম্মদ পূর্ব তিনজন বিখ্যাত কবির তিনটি ছোট কিতআ পড়ি, তারপর এই সিরিজের ৬ষ্ঠ পর্ব থেকে সূরার আয়াতগুলা পড়ি; যদিও বাংলা অনুবাদে আরবি ভাব ও ছন্দ প্রকাশ পায় না, তবুও দিন আর রাত আলাদা করে বুঝতে পারাটা কঠিন ব্যাপার হবে না।

মুয়াল্লাকার কবি যুহায়ের ইবনে আবু সুলমা (মৃত্যু ৬০৯ খ্রি.)

জীবন বোঝায় ক্লান্ত আমি
যে পুরুষ বেঁচে আছে চার কুড়ি বছর ধরে
অনিবার ধ্বংস আসুক তোমার পিতার ওপর।
বিজ্ঞ আমি আজকের জ্ঞানে এবং গতকালের,
ভবিষ্যত সে তো অজানা আমার কাছে।
দেখেছি মৃত্যুকে আমি রাতের আঁধারের অন্ধ উটের পদক্ষেপে
যাকে ধরে সে করে ধ্বংস
ছেড়ে দিলে জীবন হয় দীর্ঘ, বুড়ো, অথর্ব।
এমনই এক পুরুষ আমি।

ভবঘুরে কবি ইমরুল কায়েস (মৃত্যু ৬১০ খ্রি.)

(তুমি তো জানলে না প্রিয়তমা)
তোমার জন্য অনুগত হৃদয়ে
মাথা নত করে
কত মানুষের পানির মশক বয়ে বেড়িয়েছি আমার কাঁধে
ক্লান্ত গাধার মত খালি পেটে ক্ষুধায় কাতর হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি
এমন সব প্রান্তরে যেখানে জুয়ায় হেরে যাওয়া নিঃস্ব ব্যক্তির মত
চিৎকার করে বেড়ায় ক্ষুধার্ত বাঘ
গর্জনরত বাঘকে বলেছিলাম, থামো তুমি
আমার অবস্থা মোটেও ভিন্ন নয়, তুমিও আমার মত
রিক্ত, নিঃস্ব, অসহায়।
আমরা যখন কিছু পাই, সহজে হারাই
আর যা অর্জন করি, তা শুধু দুঃখই বয়ে আনে।


সৈনিক কবি আনতরাহ ইবনে শাদ্দাদ (মৃত্যু ৬১৫ খ্রি.)

কীভাবে হবে মিলন, হায়!
সে, তার সাথীরা যখন বসন্ত যাপন
করছে উনায়যায়
তখন আমার গোত্র রয়েছে গাইলামে

এটা ছিল আঁধার তিমির রাত, যখন উটগুলোকে
পরানো হচ্ছিল লাগাম আর (আমি জেনে গেছি)
তুমি আসবে না আর
আসবে না ফিরে আমার হৃদয় মাঝে।

প্রিয় পাঠক, এবারে একটু মন দিয়ে এই সিরিজের ৬ষ্ঠ পর্ব থেকে সূরার আয়াতগুলা পড়ুন; নতুন ভাষার গঠন আর বক্তব্যের ভিন্নতা ঠিকই চোখে পড়বে; আমি ততক্ষণে মক্কা থেকে ঘুরে আসি।

একদিন খুব ভোরে মুহাম্মদ তার কিছু সাথীকে নিয়ে সাফা পাহাড়ের পাদদেশে এলেন, সবে মক্কার মানুষের ঘুম ভাঙতে শুরু করেছে তখন; অনেকেই প্রাতকার্যে শহরের বাইরে যেতে শুরু করেছেন; উচ্চস্বরে ডাকলে পুরো শহর থেকেই শোনা যায় শুশিয়ারী ডাক। মুহাম্মদ দ্বিধা নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেন (ছবি - ০১, নিচে); নিচে তাকিয়ে দেখলেন তার ভালবাসার মক্কা শহরটি তখনও মানুষের ভারে ক্লান্ত হয়ে ওঠেনি (ছবি - ০২, নিচে); চাচা আব্দুল উজ্জা’র (আবু লাহাব) কয়েকদিন আগের বিরোধিতার কথা মনে পড়লো মুহাম্মদের।

চোখ বন্ধ করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন; পাহাড়ের নিচে দাঁড়ানো আবু বকরের দিকে তাকালেন একবার; আবু বকর চোখের ইশারায় জানালেন, হে নবী, আমি হাজির আছি।

মুহাম্মদ উচ্চস্বরে গোত্রপ্রধান আর গোত্রের নাম ধরে ডাকতে শুরু করলেন! (যেহেতু মানুষ মুহাম্মদ লিখছি না এখনই, তাই সংক্ষেপ করছি। আধা ঘন্টার মধ্যে শ-দুয়েক মানুষ জমা হয়ে গেল; চাচা আব্দুল উজ্জা উঠে এলেন পাহাড়ের চূড়ায়, মুহাম্মদের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে হাতে তুলে নিলেন পাহাড়ের গায়ে জমে থাকা কিছুটা মরুধুলো; মুহাম্মদের মুখের দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে উঠলেন:
ধ্বংস হও তুমি মুহাম্মদ; সাত সকালে এই ফালতু বিষয়ে তুমি আমাদের ডেকেছো!
মুহাম্মদ হাত দিয়ে মুখে লেগে থাকা কিছুটা ধুলো মুছে নিলেন, মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকলো একটি লাইন:
১. আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে,
কয়েকজন সাহাবী সাথে নিয়ে আবু বকর ততক্ষণে সাফার ওপরে উঠে এসেছেন; আবু বকর বললেন: ‘‘হে আল্লার নবী, চলুন আজকের মত বাসায় ফেরা যাক।” চাচা আব্দুল উজ্জা’ও বাসায় ফিরলেন; (সংক্ষেপ করছি) ছেলেদের ডেকে বললেন; যাও মুহাম্মদের বাসায়, তার দু মেয়ের সাথে তোমদের যে বিয়ের কাবিন হয়ে আছে, তা ভেঙে দিয়ে এসো; আমি তোমাদের আরও সুন্দরী আর নামী মেয়ের সাথে বিয়ে দেবো; সমর্থন করলেন আব্দুল উজ্জা’র স্ত্রী (আরওয়া/উম্মে জামিল/আবু সুফিয়ানের বোন)।

এই ঘটানো ঘটলো সাফা থেকে নেমে আসার দু'-এক দিনের মধ্যেই; মুহাম্মদ প্রচণ্ড অপমানিত বোধ করতে থাকলেন; আর তার মুখ থেকে বের হলা কুরআনের প্রথম জঘন্য অভিশাপমূলক সূরা আল লাহাব/মাসাদ। এই পর্ব এই একটি মাত্র প্রকাশ দিয়ে শেষ হচ্ছে। মুহাম্মদের মনোজগতের ঝড় থামাতে আগামী প্রকাশ কতটা কার্যকর, সেটা আগামী পর্বেই দেখা যাবে!

(ছবি - ০১: সাফার চূড়া; যেখানে দাঁড়িয়ে মুহাম্মদ প্রথম জনসমক্ষে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। ছবিটি আমার নিজের হাতে তোলা)

(ছবি-০২, পূর্ণাকারে দেখতে ছবির ওপরে ক্লিক করতে হবে: মক্কার তৎকালীন সময়ের কাল্পনিক গঠন; ডান পাশের দিকটা সাফার চূড়া; ৬ষ্ঠ পর্বের ছবির সাথে মিলিয়ে এটিতে ৩, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ অংশগুলো দেখে নিতে পারেন!)

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ৮ম পর্ব; এই পর্বে থাকছে "মক্কা দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছর"-এর দ্বিতীয় এক অংশঅনুবাদের ভাষা ৫০ টির বেশি বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৩৯ তম প্রকাশ; সূরা আল লাহাব/মাসাদ (১১১) (জ্বলন্ত অঙ্গার) ৫ আয়াত:

১. আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে, 
২. কোনো কাজে আসেনি তার ধন-সম্পদ ও যা সে উপার্জন করেছে। 
৩. সত্বরই সে প্রবেশ করবে লেলিহান অগ্নিতে 
৪ এবং তার স্ত্রীও-যে ইন্ধন বহন করে, 
৫. তার গলদেশে খর্জুরের রশি নিয়ে। 

আয়াত প্রকাশের মনোজগত: অস্থির সময়ে প্রবেশ করছেন মুহাম্মদ; খাদিজা আবারও গর্ভবতী, একটা পুত্র সন্তানের আশা আছে এবার; অপরদিকে আবু বকর-এর দ্বিতীয় স্ত্রীও গর্ভবতী! 

এমন এক সময় আসছে সামনে, যখন প্রায় সমসাময়িক সময়ে ছেলে-সন্তানের পিতা হবেন মুহাম্মদ; আর যার মেয়ে সন্তানের জন্মে খাদিজা আর মুহাম্মদ দুজনেই খুশি হয়ে দেখতে যাবেন; সেই কন্যা একদিন হবে মুহাম্মদের স্ত্রী! 

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন