আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬

খায়বার যুদ্ধ - ১৬: মুহাম্মদকে হত্যা চেষ্টা! কারণ?: কুরানে বিগ্যান (পর্ব-১৪৫): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত উনিশ

লিখেছেন গোলাপ

(আগের পর্বগুলোর সূচী এখানে)

"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।" 

সাফিয়া বিনতে হুয়েই বিন আখতাব নামের এক অসামান্য সুন্দরী সপ্তদশী ইহুদি তরুণীর পিতা, স্বামী, ভাই ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের হত্যা করার পর যখন স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এই হতভাগ্য স্বজনহারা তরুণীটিকে তাঁর তাঁবুতে নিয়ে গিয়ে 'বিবাহ বাসর' উদযাপন করছিলেন, তখন আবু আইয়ুব আল-আনসারী নামের মুহাম্মদের এক আদি মদিনাবাসী বিশিষ্ট অনুসারী কী কারণে মুহাম্মদের জীবন আশংকায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন; মুহাম্মদকে রক্ষার চেষ্টায় তিনি কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন - তার বিস্তারিত আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।

মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দ), আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ), মুহাম্মদ ইবনে সা'দ (৭৮৪-৮৪৫ খৃষ্টাব্দ), ইমাম বুখারী (৮১০-৮৭০ খ্রিষ্টাব্দ), ইমাম আবু দাউদ (৮১৭-৮৮৯ খৃষ্টাব্দ) প্রমুখ ইসলামে নিবেদিতপ্রাণ আদি ও বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, আবু আউব আল-আনসারীর এই আশংকা ও আতঙ্ক তাঁর কল্পনাপ্রসূত মনের অবাস্তব চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ ছিল না। তা ছিল বাস্তবতা! খায়বার জনপদবাসীদের ওপর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা যে-সীমাহীন নৃশংসতা প্রদর্শন করেছিলেন, তারই প্রতিক্রিয়ায় মুহাম্মদকে হত্যা চেষ্টার সম্ভাবনা ছিল প্রত্যাশিত! খায়বারে মুহাম্মদকে সত্যিই হত্যা-চেষ্টা করা হয়েছিলো! আদি উৎসের মুসলিম ঐতিহাসিকরা সেই ঘটনার বর্ণনা বিভিন্নভাবে তাঁদের নিজ নিজ গ্রন্থে লিখে রেখেছেন; সবচেয়ে বেশি প্রাণবন্ত ও বিস্তারিত বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন আল-ওয়াকিদি, তাঁর 'কিতাব আল-মাগাজি' গ্রন্থে।

"কে এই অসীম সাহসী ব্যক্তি, যে 'স্বয়ং মুহাম্মদকে' হত্যার চেষ্টা করেছিলেন?”

আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) অব্যাহত বিস্তারিত বর্ণনা: [1] [2] [3]
পূর্ব প্রকাশিতের (পর্ব-১৪৪) পর:

(আবু আল-কেইন আল-মুযাননির কন্যা হইতে > আবু হারমালার বোন উম্মে আবদুল্লাহ হইতে > আবু হারমালা হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ইবনে আবি সাবরা আমাকে বলেছেন [পর্ব- ১৪৩]---)

'--- তারা যা বলেছেন তা হলো: যখন মুহাম্মদ খায়বার বিজয় করেন ও ছিলেন আত্মবিশ্বাসী, যয়নাব বিনতে আল-হারিথ (‘সাললাম বিন মিশকাম এর স্ত্রী’- [ইবনে ইশাক/তাবারী]) জিজ্ঞাসা করা শুরু করে, "ভেড়ার কোন অংশের মাংসটি মুহাম্মদের সবচেয়ে বেশি পছন্দ?" তারা জানায়, "সামনের পায়ের উপরি ভাগ (Forearm) ও গর্দানের।" সে তার এক ভেড়াকে ধরে নিয়ে আসে ও তা জবেহ করে। অতঃপর সে ক্ষমতাসম্পন্ন কিছু বিষ নেয় - সে অন্যান্য ইহুদিদের সাথে এই বিষ সম্বন্ধে পরামর্শ করেছিলো ও তারা এই বিষের ব্যাপারে বিশেষভাবে রাজি হয়েছিলো। সে ভেড়ার মাংসে বিষ মিশ্রিত করে, সামনের পা ও গর্দানের অংশে বেশি করে।

যখন সূর্য অস্তমিত যায়, আল্লাহর নবী মাগরিবের নামাজ আদায় করে তাঁর আস্তানায় প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি দেখতে পান যে, যয়নাব তাঁর বসার আসনটিতে বসে আছে। তিনি এ ব্যাপারে যখন খোঁজ-খবর নেন, তখন সে বলে, "আবুল কাসেম, এটি একটি উপহার, যা আমি আপনার জন্য এনেছি।"

আল্লাহর নবী উপহার সামগ্রীর খাবার খেতেন, কিন্তু তিনি খয়রাতের খাবার খেতেন না। তিনি আদেশ করেন যে, তার কাছ থেকে যেন উপহারটি নেয়া হয় ও সেটি তাঁর সম্মুখে রাখা হয়। আল্লাহর নবীর অনুসারীদের, অথবা তাঁর অনুসারীদের মধ্যে যারা সেখানে উপস্থিত ছিল তাদেরকে বলেন, "কাছে এগিয়ে এসো ও খাও।" তাই তারা কাছে এগিয়ে আসে ও খাওয়া শুরু করে। আল্লাহর নবী সামনের পায়ের উপরি ভাগটি নেন, যেখানে বিশর বিন আল-বারা নেয় পায়ের নলি। আল্লাহর নবী তার এক গ্রাস খাবার খায়, বিশর খায় তার খাবারের এক গ্রাস; যখন আল্লাহর নবী তার খাদ্য গলাধঃকরণ করেন, বিশর-ও তার খাদ্য গলাধঃকরণ করে।

আল্লাহর নবী বলেন,
"থামো! নিশ্চিতই এই পায়ের উপরি ভাগ ('হাড্ডি গুলো'- [ইবনে ইশাক/তাবারী]) আমাকে বলছে যে, তাতে বিষ মিশানো হয়েছে।"

বিশর বিন আল-বারা যা বলেছে তা হলো,
"আল্লাহর কসম,যে টুকরাটি আমি খেয়েছি, তা থেকে আমি তা জানতে পেরেছি, এবং যে বিষয়টি তা আমাকে থু-থু করে ফেলে দেয়া থেকে বিরত রেখেছিল তা হলো এই যে, খাবারের সময় আপনার খাওয়ার তৃপ্তি নষ্ট করা আমি ভীষণ অপছন্দ করি; কারণ আপনার হাতে যা ছিল, তা যখন আপনি খেয়ে ফেললেন, আমি আপনার ওপর আমার হস্তক্ষেপ ভদ্রতাপূর্ণ মনে করিনি। আমি একমাত্র যা আশা করেছিলাম, তা হলো এই যে, তাতে যা খারাপ ছিল তা যেন আপনি না খান।"

বিশর তার জায়গা থেকে নড়েনি যতক্ষণে না তার গায়ের রং মাথার শালের ("Taylasan") মত হয়ে যায়। তার কষ্ট বছর কাল স্থায়ী হয় না। যে পরিবর্তনটি হয়েছিলো, তা ছাড়া তার আর কোনো পরিবর্তন হয়নি, অতঃপর তার মৃত্যু হয়। বলা হয়, সে তার স্থান পরিত্যাগ করেনি যতক্ষণে না তার মৃত্যু হয়।

আল্লাহর নবী আরও তিন বছর বেঁচেছিলেন। আল্লাহর নবী যয়নাবকে তলব করেন ও বলেন, "তুমি কি গর্দানে বিষ মিশিয়েছ?" সে বলে, "কে তোমাকে তা বলেছে?" তিনি জবাবে বলেন, "গর্দানটি।" সে বলে, "হ্যাঁ।"

তিনি জিজ্ঞাসা করেন, "কী সেই কারণ, যা তোমাকে এটি করতে অনুপ্রাণিত করেছে?"

সে বলে, "তুমি আমার পিতা, আন্কেল ও স্বামীকে খুন করেছো। তুমি আমাদের লোকদের সম্পদ লুণ্ঠন করেছো।আমি নিজেকে বলেছি: যদি সে একজন প্রফেট হয় তবে সে অবহিত হবে। যা আমি করেছি, তা ভেড়াটি তাকে জানাবে। আর যদি সে রাজা হয়, তবে তার কাছ থেকে আমাদের পরিত্রাণ মিলবে।"

তার কী পরিণতি হয়েছিলো, সে ব্যাপারে আমাদের মধ্যে মতভেদ আছে। এক ভাষ্যকার বলেছেন: আল্লাহর নবী তার ব্যাপারে আদেশ করেন ও তাকে হত্যা করা হয়, অতঃপর তাকে করা হয় ক্রুশ বিদ্ধ।অন্যজন বলেন যে, আল্লাহর নবী তাকে ক্ষমা করে দেন।

তিনজন লোক সেই খাবার খেতে বসেছিল, কিন্তু তারা তার কিছুই গলধঃকরণ করেনি। এই ভেড়ার কারণে আল্লাহর নবী তাঁর অনুসারীদের আদেশ করেন যে, তাদের মাথার মধ্যখান থেকে যেন রক্ত টানা হয়। আল্লাহর নবী তাঁর বাম হাতের বাহুর নীচ থেকে রক্ত বাহির করে নেন। বলা হয়, তিনি তাঁর ঘাড়ের পিছন থেকে রক্ত বাহির করে নেন। এক শিঙা  (horn) ও ব্লেডের মাধ্যমে আবু হিন্দ  তা অপসারণ করে।

তারা যা বলেছেন: বিশর বিন আল-বারার মাতা যা বলতো তা হলো: আমি আল্লাহর নবীর মৃত্যুকালীন অসুস্থতার সময় তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। তাঁর গায়ে ছিলো জ্বর ও আমি তা অনুভব করেছিলাম ও বলেছিলাম, "আমি এমন কিছু খুঁজে পাইনি, যা কিনা আপনাকে অসুস্থ করতে পারে।" 

আল্লাহর নবী বলেন, "যেমন করে আমাদের পুরস্কার প্রদান করা হয়, তেমনই করে আমাদের পরীক্ষা প্রদানও করা হয়। জনগণ জোর দিয়ে বলছে যে, আল্লাহর নবীর ফুসফুস আবরণের অসুখ (Pleurisy) হয়েছে। আল্লাহ আমার ওপর তা প্রদান করবে না। বরং, এটা হলো শয়তানের ছোঁয়া, যার কারণ হলো খাবার খাওয়া, যা আমি ও তোমার ছেলে খায়বারে খেয়েছিলাম।আমি এই ব্যথার কষ্ট অনুভব করতেই থাকবো, যতক্ষণে না মৃত্যু এসে আমাকে গ্রাস করে।"

আল্লাহর নবী শহীদ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। বলা হয়, যে ব্যক্তিটি ঐ ভেড়ার মাংসের জন্য মৃত্যুবরণ করেছিলো সে হলো মুবাশশির বিন আল-বারা। কিন্তু আমরা অধিকতর নিশ্চিত যে, বিশর হলো সেই লোক। এই ব্যাপারে ঐকমত্য আছে।

আবদুল্লাহ যা বলেছেন: "তুমি আমার পিতাকে হত্যা করেছো", আল-হারিথের কন্যা যয়নাব এর এই উক্তির বিষয়ে আমি ইবরাহিম বিন জাফরকে জিজ্ঞাসা করি। সে বলেছে: তার পিতা আল-হারিথ [পর্ব-১৩৩] ও চাচা ইয়াসার কে [পর্ব-১৩৪] খায়বার অভিযানে হত্যা করা হয়েছিলো। সে ছিলো ঐ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি। এই সেই ব্যক্তি, যাকে আল-শিইক দুর্গ থেকে নামিয়ে আনা হয়েছিল। আল-হারিথ ছিলো ইহুদিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাহসী ব্যক্তি। সেই সময় তার ভাই যাবির-কে হত্যা করা হয়েছিলো। তার স্বামী ছিল তাদের মাস্টার, অবশ্য তাদের মধ্যে সবচেয়ে দুঃসাহসী ব্যক্তিটি ছিল সাললাম বিন মিশকাম [স্বামী] । যখন সে আল-নাটার [পর্ব-১৩৮] দুর্গ মধ্যে অবস্থান করছিলো তখন সে ছিলো অসুস্থ, তাকে বলা হয়েছিলো, "তোমার যুদ্ধ করার শক্তি নেই, সুতরাং তুমি আল-কাতিবায় [পর্ব-১৪০] অবস্থান করো।" সে জবাবে বলেছিলো, "আমি কখনোই তা করবো না।" তাকে অসুস্থ অবস্থাতেই হত্যা করা হয়েছিলো।---'

সুন্নাহ আবু দাউদ (৮১৭-৮৮৯ সাল) বর্ণনা: [4] 

‘আবু সালামাহ হইতে বর্ণিত: আবু সালামাহ হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ইবনে আমর বলেছেন, এবং তিনি আবু হুরাইরার উল্লেখ করেননি: আল্লাহর নবী (তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) উপহার সামগ্রী গ্রহণ করতেন, কিন্তু খয়রাত সামগ্রী (sadaqah) নয়। ----তাই খায়বারে এক ইহুদি মহিলা একটি ভেড়ার মাংস রোস্ট করে তাঁর কাছে নিয়ে আসে, যাতে সে বিষ মিশ্রিত করেছিলো। আল্লাহর নবী (তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) তা খেয়ে ফেলেন ও তাঁর শিষ্যবৃন্দরাও তা খায়।অতঃপর তিনি বলেন: তোমাদের হাতগুলো সরিয়ে ফেলো (এই খাবার থেকে), কারণ এটি আমাকে বলেছে যে, তাতে বিষ মেশানো হয়েছে।বিশর বিন আল-বারা ইবনে মারুর আল-আনসারি মৃত্যু বরণ করে।

অতঃপর তিনি (নবী) সেই মহিলাটিকে ধরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন (ও তাকে বলেন): "কী সেই কারণ, যা তোমাকে এই কাজটি করতে অনুপ্রাণিত করেছে, যা তুমি করেছো?"

সে বলে: যদি তুমি নবী হতে, এটি তোমার কোনো ক্ষতি করতো না; কিন্তু যদি তুমি রাজা হতে, আমি আমার লোকদের তোমার হাত থেকে নিশ্চিতই রক্ষা করতাম।"

অতঃপর আল্লাহর নবী (তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) তার ব্যাপারে আদেশ করেন ও তাকে হত্যা করা হয়।

যে ব্যথার প্রকোপে তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন: যে খাদ্যের টুকরাটি আমি খায়বারে খেয়েছিলাম, তার অব্যাহত ব্যথা আমি অনুভব করছি। এটি এমন একটি সময় যখন তা আমার মহাধমনী বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।’ - (0৩৪:৪৪৯৮)

ইমাম বুখারীর (৮১০-৮৭০ সাল) বর্ণনা: [5]

‘---আয়েশা হইতে বর্ণিত: আল্লাহর নবী তাঁর মৃত্যুকালীন অসুস্থতার সময় যা বলতেন, তা হালো, "হে আয়েশা! খায়বারে যে খাবারটি আমি খেয়েছিলাম তার সৃষ্ট ব্যথা আমি এখনও অনুভব করি, এবং এই মুহূর্তে আমি যা অনুভব করছি, তা হলো এমন যে, সেই বিষের প্রতিক্রিয়া যেন আমার মহাধমনীটি কেটে ফেলেছে।"’ – (৫:৫৯:৭১৩)

- অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ - লেখক।

>>> আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে খায়বারে অবস্থানরত অবস্থায় মুহাম্মদকে বিষ প্রয়োগে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছিলো! আর যে-ব্যক্তিটি তাঁকে হত্যা চেষ্টা করেছিলেন, তিনি ছিলেন যয়নাব বিনতে আল-হারিথা নামের এক মহিলা! আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো, এই হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসাবে দু'টি "উদ্দেশ্য (Motive)" এর উল্লেখ করা হয়েছে:

১) যয়নাব বিনতে আল-হারিথা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মুহাম্মদকে হত্যা চেষ্টা করেছিলেন।
কারণ, মুহাম্মদের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা যয়নাব এর পিতা আল-হারিথ, অসুস্থ স্বামী সাললাম বিন মিশকাম, দুই চাচা মারহাব ও ইয়াসার ও ভাইযাবির-কে হত্যা করেছিলেন। সাফিয়ার পিতা-স্বামী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের হত্যার মতই! মুহাম্মদের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা এই সংক্ষুব্ধ মহিলাটির এইসব একান্ত নিকট আত্মীয়দের অমানুষিক নৃসংসতায় কীভাবে হত্যা করেছিলেন, তার বিস্তারিত আলোচনা "আলী ইবনে আবু তালিবের বীরত্ব!" "রক্তের হোলি খেলা - ‘নাইম’ দুর্গ দখল!" পর্বে করা হয়েছে।

২) যয়নাব এই হত্যা চেষ্টার মাধ্যমে মুহাম্মদকে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন!
কী পরীক্ষা? পরীক্ষাটি হলো, মুহাম্মদ কি আসলেই "সত্য নবী?" নাকি তিনি "ভণ্ড নবী?” যদি তিনি "সত্য নবী" হন, তবে তিনি বিষ প্রয়োগের বিষয়টি আগে থেকেই অবহিত হবেন ও খাবারটি তিনি খাবেন না; বিষের যাতনা ও তার প্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করা থেকে তিনি নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন! কে তাঁকে এই খবরটি অবহিত করাবে? মৃত ভেড়াটি অলৌকিক উপায়ে তাঁকে তা অবহিত করাবে!

ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় যা স্পষ্ট, তা হলো, "মুহাম্মদ সেই বিষ মিশ্রিত খাবার খেয়েছিলেন! আর তা খাবার পর তিনি দাবি করেছিলেন যে, ঐ ভেড়ার মাংস বা হাড্ডি তাঁকে জানিয়েছে যে, সেখানে বিষ মিশানো হয়েছে। যার সরল অর্থ হলো, 'ঐ খাবারটি খাবার আগে' মুহাম্মদ জানতে পারেননি যে, সেখানে বিষ মিশ্রিত আছে।

অন্যদিকে, আদি উৎসের আল-ওয়াকিদির ওপরে বর্ণিত বিস্তারিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, বিশর বিন আল-বারা তাঁর খাবারের টুকরাটি খেয়েই জানতে পেরেছিলেন যে, সেখানে বিষ মিশ্রিত আছে, কিন্তু তিনি তা থু-থু করে ফেলে দেননি এই কারণে যে, তাতে তাঁর নবীর খাওয়ার তৃপ্তি নষ্ট হবে; কিন্তু তিনি মনে-প্রাণে আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, নবী তা খাবেন না। খাবারের স্বাদেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, সেখানে 'বিষ মেশানো' আছে। এখানে কোনো 'অলৌকিকত্ব' নেই!

প্রশ্ন হলো,
“কী কারণে এই ভেড়ার মাংস বা হাড্ডিগুলো (কিংবা মুহাম্মদের আল্লাহ) মুহাম্মদকে আগে ভাগেই সজাগ করে দিলো না যে, খাবারে বিষ মেশানো আছে?” তারা যদি দয়াপরবশ হয়েএকটু আগে মুহাম্মদকে এই অতি গুরুত্বপুর্ণ খবরটি জানিয়ে দিতো, তবে মুহাম্মদকে আর এতো কষ্ট পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করতে হতো না! তাহলে কি মৃত ভেড়াটির(কিংবা মুহাম্মদের আল্লাহর) অভিপ্রায় ছিলো এই যে, মুহাম্মদ ঐ বিষ যুক্ত খাবার ভক্ষণ করুক ও অতঃপর সেই বিষের প্রতিক্রিয়ায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করুক? মুহাম্মদ যে খায়বারের এই বিষ-মিশ্রিত খাবার খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তা আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় অত্যন্ত স্পষ্ট। যার সরল অর্থ হলো, যয়নাবের পরীক্ষায় মুহাম্মদ ফেল করেছিলেন! অর্থাৎ, যয়নাবের এই পরীক্ষা মতে “মুহাম্মদ যে এক ভণ্ড নবী” তা আমরা নিশ্চিতরূপেই জানতে পারি!

সত্য হলো,

বিশর বিন আল-বারা যেমন তাঁর খাবারের টুকরাটি খেয়ে খাবারের স্বাদেই জানতে পেরেছিলেন যে, সেখানে 'বিষ মেশানো' আছে, মুহাম্মদও একইভাবে এক টুকরা খাবার খেয়ে সেই খাবার গ্রহণের মাধ্যমেই জানতে পেরেছিলেন যে, সেখানে বিষ মিশ্রিত আছে।  এখানে কোনই 'অলৌকিকত্ব' নেই!মুহাম্মদের নৃশংস অমানবিক কর্মকাণ্ডের বৈধতা প্রদানে নিবেদিতপ্রাণ মুহাম্মদ অনুসারীরা মুহাম্মদের মৃত্যু-পরবর্তী সময়ে তাঁর নামে এরূপ অসংখ্য অলৌকিক উদ্ভট গপ্পের অবতারণা করেছেন! কুরান সাক্ষী, মুহাম্মদ তাঁর সমগ্র নবী জীবনে "একটিও"অলৌকিকত্ব হাজির করতে পারেননি। এই বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা "মুহাম্মদের মোজেজা তত্ত্ব (পর্ব: ২৩-২৫)"পর্বে করা হয়েছে।

সত্য হলো, যয়নাব বিনতে আল-হারিথ ছিলেন সাফিয়া বিনতে হুয়েই বিন আখতাব এর মতই এক হতভাগ্য মহিলা! কিন্তু তিনি সাফিয়ার মত নরম প্রকৃতির মানুষ ছিলেন না। তাঁর অসীম সাহসী পিতা, চাচা, ভ্রাতা ও স্বামীর মতই তিনিও ছিলেন এক নির্ভীক ও দুঃসাহসী বীর যোদ্ধা! তিনি ছিলেন এমনই এক অকুতোভয় মহিলা, যিনি "স্বয়ং মুহাম্মদকে" হত্যা চেষ্টা করেছিলেন!

মুহাম্মদের নৃশংস কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এটি ছিলো তাঁর যুদ্ধ!

ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে আল-ওয়াকিদির মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। ইবনে ইশাকের মূল ইংরেজি অনুবাদ ইন্টারনেটে বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক: তথ্যসূত্র [2]

The detailed narrative of Al-Waqidi (continued): [1]

‘They said: When Muhammad conquered Khaybar and was confident, Zainab bt. Al-Harith began to ask, “What part of lamb is most desirable to Muhammad?” They said, “The forearm and the shoulder.” She approached a goat of hers and slaughtered it. Then she took some potent poison - she had consulted the Jews about poison and they agreed over these poison specially. She poisoned the lamb, putting more on the forearms and shoulders.

When the sun went down, the Messenger of God prayed the Maghrib prayer and turned back to his house.  He found Zaynab sitting in his seat. He inquired about it and she says, “Abul Qasim, it is a gift I bring you.” The Messenger of God used to eat gifts, but he would not eat charity. He commanded that the gift be taken from her and placed before him. Then the Messeneger of God said to his companions who were attending, or those who attended among them: “Draw near and eat.” So they came close and put out their hands. The Messenger of God took the forearm, while Bishr b. Al-Bara took the shinbone. The Messenger of God took a bite of it, and Bishr took a bite, and when the Messenger of God swallowed his food, Bishr also swallowed his. The Messenger of God said, “Stop! Surely this forearm informs me that it is poisoned.” 

Bishr b. al-Bara said, “By God, I found that from the bite I ate, and what prevented me from spitting it out was that I hated to spoil your pleasure at your food, for when you swallowed what was in your hand I would not favor myself over you. I hoped only that you did not eat what was bad in it.” Bishr did not move from his place until his color became like a head shawl (taylasan). His pain did not last a year. He did not change, except what was changed, and he died of it. It was said that he did not leave his place until he died.

The Messenger of God lived for three more years. The Messenger of God called Zaynab, and said, “Did you poison the shoulder?” She said, “Who told you?” He replied, “The shoulder.” She said, “Yes.” He asked, “What persuaded you to do that?” She said, “You killed my father, my uncle and my husband. You took from my people what you took. I said to myself: If he is a prophet he will be informed. The sheep will inform him of what I did. If he is a king, we will be relieved of him.” There was disputation among us about her. A sayer said: The Messenger of God commanded about her and she was killed, then crucified. Another said that he had pardoned her. Three individuals put their hands in the food but did not swallow any of it. The Messenger of God commanded his companions to draw blood from the middle of their heads because of the sheep. The Messenger of God cupped blood from under his left arm. It was said he cupped blood from the nape of his neck. Abu Hind removed it with a horn and blade.

They said: The Mother of Bishr b.al-Bara used to say: I visited the Messenger of God during the sickness of which he died. He was feverish and I felt him and said, “I have not found what makes you sick on any other.” The Messenger of God said, “Just as rewards are given us, so are trials inflicted on us. People claim that the Messenger of God has pleurisy. God would not inflict it upon me. Rather, it is touch of Satan caused by eating what I, and your son ate on the day of Khaybar.I will continue to feel pain until the time of death overwhelms me.” The messenger of God died of martyr. It was said that he who died of the lamb was Mubashshir b. al-Bara. But Bishr is better confirmed with us. There is agreement upon it.

Abdullah said: I asked Ibrahim b Jafar about the words of Zaynab, daughter of al-Harith, “You killed my father.” He said: Her father al-Harith and her uncle Yasar were killed on the day of Khaybar. He was the most knowledgeable of the people. It was he who was brought down from al-Shiqq. Al-Harith was the bravest of the Jews. His brother Zabir was killed at that time. Her husband was their master, but the bravest of them was Sallam b. Mishkam. He was sick while he was in the fortress of al-Nata and it was said to him, “You have no strength to fight, so stay in al-Katiba.” He replied, “I will never do that.” He was killed when he was sick. ----‘  

(চলবে)

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

[1]“কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক:  আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৭৭-৬৭৯; ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩৩৩-৩৩৪

[2] অনুরূপ বর্ণনা: “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৫১৬

[3] অনুরূপ বর্ণনা: “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮, ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৮৩-১৫৮৪

Narated By Abu Salamah: Muhammad ibn Amr said on the authority of Abu Salamah, and he did not mention the name of Abu Hurayrah: The Apostle of Allah (pbuh) used to accept presents but not alms (sadaqah). This version adds: So a Jewess presented him at Khaybar with a roasted sheep which she had poisoned. The Apostle of Allah (pbuh) ate of it and the people also ate.He then said: Take away your hands (from the food), for it has informed me that it is poisoned. Bishr ibn al-Bara' ibn Ma'rur al-Ansari died. So he (the Prophet) sent for the Jewess (and said to her): What motivated you to do the work you have done? She said: If you were a prophet, it would not harm you; but if you were a king, I should rid the people of you. The Apostle of Allah (pbuh) then ordered regarding her and she was killed. He then said about the pain of which he died: I continued to feel pain from the morsel which I had eaten at Khaybar. This is the time when it has cut off my aorta.


--- Narrated 'Aisha: The Prophet in his ailment in which he died, used to say, "O 'Aisha! I still feel the pain caused by the food I ate at Khaibar, and at this time, I feel as if my aorta is being cut from that poison."

দোষ নারীর ও পোশাকের

ধর্মের প্রকৃত সংজ্ঞা

ছওয়াব আদায়ের মওকা

মদিনা সনদের দেশে নবীর সুন্নত যথাযথভাবে পালিত হবারই কথা।

যে-ধর্মের নবী তার বাপ-দাদার ধর্ম ও তার অঞ্চলের তৎকালীন সমস্ত ধর্মের দেব-দেবীকে ব্যঙ্গ করেছে, অপমান করেছে, অবমাননা করেছে, নিজের হাতে ভেঙেছে তাদের পূজার সাড়ে তিন শতাধিক মূর্তি, সেই ধর্মের অনুসারীরা নবীর সেই সুন্নত পালন করে ছওয়াব কামানোর মওকা ছাড়বে কেন?... গতকালকের খবর:

ফটোফপে বানানো ছবির মাধ্যমে ইছলাম অবমাননার কথিত অভিযোগের জের ধরেতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অন্তত তিনশটি বসত ঘর ও দশটি মন্দিরে ভাংচুর ও লুটপাট করে ছওয়াব অর্জন উৎসব পালন করা হয়েছে। 

একই অভিযোগে মাধবপুরেও দুটি মন্দিরে ভাঙচুর চালিয়ে অশেষ ছওয়াব হাছিল করেছে মুছলিমেরা।


লক্ষণীয়, রাজনৈতিক মতাদর্শে যতো ভিন্নতাই থাকুক, অমুছলিমদের ওপরে হামলা বা অত্যাচারের সময় বাঙালি মুছলিমদের (নাকি মুছলিম বাঙালিদের?) ঐক্য কিন্তু রীতিমতো ঈর্ষা-জাগানিয়া। কারণ রাজনৈতিক ভেদাভেদ মুছে দিয়ে ইছলাম সবাইকে নিয়ে আসে এক কাতারে। 

আর তাছাড়া সংখ্যালঘু হত্যা ও ধর্ষণ এবং তাদের পূজার মূর্তি ভাঙা, জমি বা বাড়ি-দখল, ভাঙচুর, লুটপাট ও ইত্যাকার কোনও অপরাধের (উল্লেখিত সমস্ত কর্মই অবশ্য ইছলামসম্মত ও সুন্নত) সুষ্ঠু বিচার হয়েছে এবং অপরাধী পেয়েছে যথাযথ শাস্তি, এমন অন্তত একটি নমুনা বাংলাদেশের ইতিহাসে আছে কি না, নিশ্চিত নই।  

তবে এই জাতীয় ঘটনায় অংশ নেয়া মুছলিমদের আচরণ থেকে একটি সত্য প্রকট হয়ে ওঠে: স্রেফ সম্যক সাহস, সঙ্গী, সমর্থন ও সুযোগ পেলে অনেক মডারেট মুছলিমই জঙ্গি বনে যাবে।

রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬

কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছর (পর্ব ১৭)

লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ


{ইসলাম প্রচারের পঞ্চম বর্ষে আবু জেহেলের চাচা, বানু মাখযুম গোত্রের প্রতিনিধি ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা মারা যান; মুহাম্মদের দাদা আব্দুল মুত্তালিবের পর মক্কার প্রধান প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনিই। মুহাম্মদের চাচা আবু-তালিব হাশিম গোত্রের প্রধান হলেও মক্কায় তার আর্থিক প্রভাব ছিলো না; অপর দিকে ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা ছিলেন সবদিক দিয়েই প্রবল পরাক্রমশালী মানুষ! তিনি মনে করতেন; কুরাইশ বংশে যদি কারও নবী হবার যোগ্যতা থাকে, তবে তা তারই আছে!

মুহাম্মদের ৩৫ বছর বয়সের সময় কাবা-ঘর সংস্কার হয়, সে-সময়ে কাবা-ঘর ভেঙে ফেলতে সাহস পাচ্ছিলেন না কেউ; ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা এগিয়ে এসে কাবার ওপরে উঠে ভাঙতে শুরু করেন। যে আবু জেহেলকে ইসলামের প্রধান শত্রু হিসাবে দেখা হয়; তিনি এখনও মুহাম্মদের জীবনের (কোরআন-এর) দৃশ্যপটে আসেননি, কারণ চাচা ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা’র মৃত্যুর পরেই আবু জেহেল বানু মাখযুম গোত্রের প্রতিনিধি হিসেবে ‘দারুন নাদওয়া’-তে কর্তৃত্ব করতে শুরু করেন।

এ পর্বের ৭১ নং প্রকাশের প্রায় পুরোটাই ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা-কে নিয়ে; তিনিই প্রথম মুহাম্মদকে জাদুকর হিসাবে মন্তব্য করেছিলেন। গত কয়েক পর্বে মুহাম্মদের নারী-দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের যে ঘটনার কথা বলছিলাম, তা এই ৭৫ নং প্রকাশ থেকেই শুরু হতে থাকে!

অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটো মৃ্ত্যুর ঘটনা ঘটে মক্কায়, ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা'র মৃত্যু মুহাম্মদকে উল্লসিত করে; অপরটি মুহাম্মদকে এতটাই কষ্ট দিতে থাকে যে, সূরায় আয়াতের সংখ্যা ৭০ থেকে এক ধাপে নেমে দাঁড়ায় মাত্র ৩-এ; মুহাম্মদ আপোষকামী হয়ে পড়েন এবং কাবার দেব-দেবীদের মেনে নিতে বাধ্য হন! 

গত তিন পর্বে আরবের নারী-দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা; আজ মদিনা/ইয়াসরিব ও তায়েফের নারীদের নিয়ে কথা বলার কথা, কিন্তু নবী মুহাম্মদের জীবনের এই মুহূর্তের ঘটনা বর্ণনা করা জরুরি হওয়ায়, এ পর্বে মক্কা ছেড়ে যাওয়া হচ্ছে না!

কয়েক মাস রোগে ভুগে মুহাম্মদের দুগ্ধপোষ্য শিশু আবদুল্লা মারা যান; মুহাম্মদকে বংশহীন বা লেজকাটা নামে ডাকা হতে থাকে মক্কায়; আবদুল্লা মারা যাবার দেড়-দুই মাস পর সূরা আল কাওসার প্রকাশ করেন মুহাম্মদ। এ প্রকাশের আগ পর্যন্ত মুহাম্মদের মুখে হাসি ছিলো না, এবং এ সময়ে কোনো নতুন আয়াত প্রকাশ করেননি তিনি। সূরা আল কাওসার প্রকাশের পর থেকেই মুহাম্মদের লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটতে থাকে; আগামী কয়েক পর্বে তা অবশ্যই চোখ এড়াবে না আমাদের!

সংযুক্ত ছবিটি পর্ব ৬ এ দেওয়া ১১ নং অংশের জান্নাতুল মালা কবরস্থানের খাদিজার কবর; এখানে মোট তিনটি কবর আছে, সবচেয়ে ছোট বর্গাকার অংশটি মুহাম্মদের প্রথম সন্তান কাশেম/কাশিম-এর কবর; মাঝারি'টি খাদিজার কবর; আর দুটো কবরকে একসাথে রেখে বড় বর্গাকার অংশের কোনো এক জায়গায় আছে মুহাম্মদের দুগ্ধপোষ্য শিশু আবদুল্লা'র কবর। কবরটির নির্দিষ্ট স্থান সনাক্ত করা যায়নি, তাই পুরো জায়গাটিকে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে।

পূর্ণাকারে দেখতে ছবির ওপরে ক্লিক করতে হবে

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ১৭ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছরের ১০ম পাঁচ অংশঅনুবাদে ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৭১ তম প্রকাশ; সূরা আল মুদ্দাসসির (৭৪) (পোশাক পরিহিত), ১১ থেকে ৫৬ আয়াত:

১১. যাকে আমি অনন্য করে সৃষ্টি করেছি, তাকে আমার হাতে ছেড়ে দিন।
১২. আমি তাকে দিয়েছি বিপুল ধন সম্পদ।
১৩. এবং নিত্য সঙ্গী পুত্রগণ।
১৪. এবং তার জীবনকে করেছি সচ্ছল ও সুগম।
১৫. এরপরও সে আশা করে যে, আমি তাকে আরও বেশি দিই।
১৬. না, তা হবে না, সে তো আমার নিদর্শনসমূহের উদ্ধত বিরুদ্ধাচারী।
১৭. আমি সত্বরই তাকে শাস্তির পাহাড়ে আরোহণ করাব।
১৮. সে চিন্তা ভাবনা করল এবং সিদ্ধান্ত নিল,
১৯. অভিশপ্ত হোক সে! কেমন করে সে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল! 
২০. আবারো ধ্বংস হোক সে, সে সিদ্ধান্ত নিল কীভাবে!
২১. সে আবার চেয়ে দেখল।
২২. অতঃপর সে ভ্রু কুঞ্চিত করল ও মুখ বিকৃত করল।
২৩. অতঃপর সে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল এবং অহংকার করল।
২৪. এবং ঘোষণা করল, এতো লোক পরম্পরায় প্রাপ্ত জাদু ভিন্ন আর কিছু নয়।
২৫. এটা তো মানুষেরই কথা।
২৬. আমি শীঘ্রই তাকে ফেলব জ্বালাময় আগুনে।
২৭. তুমি কি জান, জাহান্নামের আগুন কী?
২৮. এটা অক্ষত রাখবে না এবং ছাড়বেও না।
২৯. উহাতো গাত্রচর্ম দগ্ধ করবে।
৩০. সেখানে নিয়োজিত আছে ঊনিশ জন ফেরেশতা।
৩১. আমি তাদেরকে করেছি জাহান্নামের প্রহরী। কাফিরদের পরীক্ষা স্বরূপ। আমি তাদের এই সংখ্যা উল্লেখ করেছি, যাতে কিতাবীদের দৃঢ় প্রত্যয় জন্মে, বিশ্বাসীদের বিশ্বাস বর্ধিত হয় এবং বিশ্বাসীরা ও কিতাবীরা সন্দেহ পোষণ না করে। এর ফলে যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তারা ও কাফিরেরা বলবে: আল্লাহ এই অভিনব উক্তি দ্বারা কী বোঝাতে চেয়েছেন? এভাবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা পথ নির্দেশ করেন। তোমার রবের বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন। এটা তো মানুষের জন্য সাবধান বাণী।
৩২. কখনই নয়। চাঁদের কসম!
৩৩. রাতের কসম যখন তার অবসান হয়,
৩৪. প্রভাতের কসম, যখন তা উদ্ভাসিত হয়।
৩৫. নিশ্চয়ই জাহান্নাম ভয়াবহ বিপদসমূহের অন্যতম।
৩৬. মানুষের জন্যে সতর্ককারী।
৩৭. তোমাদের মধ্যে যে অগ্রসর হতে চায় কিংবা যে পিছিয়ে পড়ে, তার জন্য।
৩৮. প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী;
৩৯. কিন্তু ডান পাশের লোকেরা নয়।
৪০. তারা থাকবে জান্নাতে। তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেস করবে
৪১. অপরাধীদের সম্পর্কে
৪২. তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে?
৪৩. তারা বলবে: আমরা নামায পড়তাম না,
৪৪. আমরা অভাবগ্রস্তকে আহার্য দান করতাম না।
৪৫. আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম।
৪৬. আমরা কর্মফল দিন অস্বীকার করতাম
৪৭. আমাদের নিকট মৃত্যুর আগমন পর্যন্ত।
৪৮. অতএব, সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোনো উপকারে আসবে না।
৪৯. তাদের কী হয়েছে যে, তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় উপদেশ হতে?
৫০. তারা যেন ভয়ে সন্ত্রস্ত গাধা,
৫১. সিংহের সামনে থেকে পালাচ্ছে।
৫২. বস্তুতঃ তাদের প্রত্যেকেই কামনা করে যে, তাকে একটি উম্মুক্ত গ্রন্থ দেয়া হোক।
৫৩. কখনও না, বরং তারা পরকালকে ভয় করে না।
৫৪. কখনও না, এটাতো উপদেশ মাত্র।
৫৫. অতএব যার ইচ্ছা, সে ইহা হতে উপদেশ গ্রহণ করুক।
৫৬. আল্লাহর ইচ্ছে ব্যতীত কেউ উপদেশ গ্রহণ করবে না, তিনিই ভয়ের যোগ্য, তিনিই ক্ষমা করার অধিকারী।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৭২ তম প্রকাশ; সূরা আল মুয্যাম্মিল (৭৩) (বস্ত্রাচ্ছাদনকারী), ১ থেকে ৯, ১০/১২ বাদে ১৯ পর্যন্ত আয়াত:

১. হে বস্ত্রাচ্ছাদনকারী!
২. রাত্রিতে দণ্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে;
৩. অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম
৪. অথবা তদপেক্ষা বেশি। আর কুরআন আবৃত্তি কর ধীরে ধীরে স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে।
৫. আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী।
৬. নিশ্চয় রাত-জাগরণ আত্মসংযমের জন্য অধিকতর প্রবল এবং স্পষ্ট বলার জন্য অধিকতর উপযোগী।
৭. দিনের বেলায় তোমার জন্য আছে দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা।
৮. কাজেই তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি মগ্ন হও।
৯. তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের অধিকর্তা, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই; অতএব তাঁকেই কর্ম-বিধায়ক রূপে গ্রহণ কর।
১২. নিশ্চয় আমার কাছে আছে শিকল ও অগ্নিকুণ্ড। 
১৩. আর গলায় আটকে যায় এমন খাবার আর মর্মান্তিক শাস্তি।
১৪. সেই দিনে পৃথিবী ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ বহমান বালুকারাশিতে পরিণত হবে।
১৫. আমি তোমাদের নিকট পাঠিয়েছি রাসূল তোমাদের জন্য স্বাক্ষী স্বরূপ, যেমন রাসূল পাঠিয়েছিলাম ফিরআউনের নিকট।
১৬. তখন ফেরাউন সেই রসূলকে অমান্য করল। ফলে আমি তাকে শক্ত ধরায় ধরলাম।
১৭. অতএব, তোমরা কিরূপে আত্নরক্ষা করবে, যদি তোমরা সেদিনকে অস্বীকার কর, যেদিন বালককে করে দেব বৃদ্ধ?
১৮. যেদিন আকাশ হবে বিদীর্ণ; তাঁর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে।
১৯. এটা উপদেশ। অতএব, যার ইচ্ছা, সে তার পালনকর্তার দিকে পথ অবলম্বন করুক।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৭৩ তম প্রকাশ; সূরা ত্বোয়া-হা (২০) (ত্বোয়া-হা), ১ থেকে ৫২ আয়াত:

১. ত্ব-হা
২. তোমাকে ক্লেশ দেয়ার জন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি।
৩. বরং যে ভয় করে তার জন্য উপদেশ স্বরূপ।
৪. যিনি পৃথিবী ও সুউচ্চ আকাশ সৃষ্টি করেছেন, তাঁর নিকট হতে তা নাযিল হয়েছে।
৫. দয়াময় আরশে সমাসীন।
৬. যা আছে আকাশমণ্ডলীতে, পৃথিবীতে, এ দু'য়ের অন্তর্বতী স্থানে ও ভূগর্ভে তা তাঁরই।
৭. তুমি যদি উচ্চকন্ঠে বল, তিনি যা গুপ্ত ও অব্যক্ত সবই জানেন।
৮. আল্লাহ! তিনি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, সমস্ত উত্তম নাম তাঁরই।
৯. মূসার বৃত্তান্ত তোমার কাছে পৌঁছেছে কি?
১০. যখন সে আগুন দেখল, তখন নিজ পরিবারকে বলল, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখতে পেয়েছি, আশা করি, আমি তোমাদের জন্য তা থেকে কিছু জ্বলন্ত আঙ্গার নিয়ে আসতে পারব অথবা আগুনের নিকট পথনির্দেশ পাব।’
১১. অতঃপর যখন সে আগুনের নিকট এলো তখন আহবান করে বলা হল: হে মূসা!
১২. আমিই তোমার পালনকর্তা, অতএব তুমি জুতা খুলে ফেল, তুমি পবিত্র উপত্যকা তুয়ায় রয়েছ।
১৩. এবং আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, অতএব যা প্রত্যাদেশ করা হচ্ছে, তা শুনতে থাক।
১৪. আমি আল্লাহ! আমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; অতএব আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর।
১৫. কেয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি তা গোপন রাখতে চাই; যাতে প্রত্যেকেই তার কর্মানুযায়ী ফল লাভ করে।
১৬. সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামাত বিশ্বাস করে না এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে তাতে বিশ্বাস স্থাপনে প্রবৃত্ত না করে, তাহলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।
১৭. হে মূসা, তোমার ডানহাতে ওটা কী?
১৮. সে বলল, ‘এটা আমার লাঠি, আমি ওতে ভর দেই, এর সাহায্যে আমি আমার মেষপালের জন্য গাছের পাতা ঝেড়ে দেই, আর এতে আমার আরো অনেক কাজ হয়।’
১৯. আল্লাহ বললেন: হে মূসা, তুমি ওটা নিক্ষেপ কর।
২০. অতঃপর সে তা নিক্ষেপ করল, সাথে সাথে তা সাপ হয়ে ছুটতে লাগল।
২১. তিনি বললেন: তুমি একে ধর। ভয় কর না, আমি একে এর পূর্বরূপে ফিরিয়ে দেব।
২২. তোমার হাত বগলে রাখ, তা বের হয়ে আসবে নির্মল উজ্জ্বল হয়ে অন্য এক নিদর্শন রূপে; কোনো দোষ ছাড়াই।
২৩. এটা এ জন্য যে, আমি তোমাকে দেখাবো আমার মহানিদর্শনগুলির কিছু।
২৪. ফেরাউনের নিকট যাও, সে দারুণ উদ্ধত হয়ে গেছে।
২৫. মূসা বলল: হে আমার পালনকর্তা আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন।
২৬. আমার কাজকে সহজ করে দিন,
২৭. আমার জিহবার জড়তা দূর করে দিন,
২৮. যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।
২৯. আমার জন্য করে দিন একজন সাহায্যকারী আমার স্বজনবর্গের মধ্য হতে।
৩০. আমার ভাই হারুনকে।
৩১. তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন।
৩২. এবং তাকে আমার কাজে অংশীদার করুন।
৩৩. যাতে আমরা বেশি করে আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি।
৩৪. এবং আপনাকে স্মরণ করতে পারি অধিক।
৩৫. আপনি তো আমাদের অবস্থা সবই দেখছেন।
৩৬. তিনি বললেন: হে মূসা, তুমি যা চেয়েছ, তা তোমাকে দেয়া হল।
৩৭. এবং আমি তো তোমার প্রতি আর একবার অনুগ্রহ করেছিলাম।
৩৮. যখন আমি তোমার মায়ের অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দিয়েছিলাম,যা এখানে বর্ণিত হচ্ছে
৩৯. যে, তুমি তাকে সিন্দুকের মধ্যে রাখ, অতঃপর তা নদীতে ভাসিয়ে দাও যাতে নদী ওকে তীরে ঠেলে দেয়, ওকে আমার শত্রু ও তার শত্রু নিয়ে যাবে; আমি আমার নিকট হতে তোমার ওপর ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম, যাতে তুমি আমার দৃষ্টির সামনে প্রতিপালিত হও।
৪০. যখন তোমার বোন এসে বলল: আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব, কে এই শিশুর দায়িত্ব নেবে? তখন আমি তোমাকে তোমার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চোখ জুড়ায় এবং সে দুঃখ না পায়; এবং তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে; অতঃপর আমি তোমাকে মনঃপীড়া হতে মুক্তি দিই, আমি তোমাকে বহু পরীক্ষা করেছি। অতঃপর তুমি কয়েক বছর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলে। হে মূসা! এরপরে তুমি নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলে।
৪১. এবং আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য প্রস্তুত করে নিয়েছি।
৪২. তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনাবলীসহ যাও এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করো না।
৪৩. তোমরা উভয়ে ফেরআউনের কাছে যাও, সে খুব উদ্ধত হয়ে গেছে।
৪৪. তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে, অথবা ভয় করবে।
৪৫. তারা বলল: হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আশঙ্কা করি যে, সে আমাদের প্রতি জুলুম করবে কিংবা উত্তেজিত হয়ে উঠবে।
৪৬. তিনি বললেন: তোমরা ভয় কর না, আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি শুনি ও দেখি।
৪৭. সুতরাং তোমরা তার নিকট যাও এবং বল: অবশ্যই আমরা তোমার রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল। সুতরাং আমাদের সাথে বাণী ইসরাঈলকে যেতে দাও এবং তাদেরকে কষ্ট দিও না, আমরা তো তোমার নিকট এনেছি তোমার রবের নিকট হতে নিদর্শন। এবং শান্তি তাদের প্রতি যারা সৎ পথের অনুসরণ করে।
৪৮. আমাদের প্রতি অহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, শাস্তি তার জন্য যে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।
৪৯. ফির'আউন বলল: হে মূসা! কে তোমাদের পালনকর্তা?
৫০. মূসা বলল: আমার রাব্ব তিনি যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার যোগ্য আকৃতি দান করেছেন; অতঃপর পথ নির্দেশ করেছেন।
৫১. ফির'আউন বলল: তাহলে অতীত যুগের লোকদের অবস্থা কী?
৫২. মূসা বললেন: তাদের খবর আমার পালনকর্তার কাছে লিখিত আছে। আমার পালনকর্তা ভ্রান্ত হন না এং বিস্মৃতও হন না।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৭৪ তম প্রকাশ; সূরা মারইয়াম (১৯) (মারইয়াম, ঈসা নবীর মা), ১ থেকে ৫৭, ৫৯ থেকে ৭৪ আয়াত:

১. কাফ-হা-ইয়া-আইন-সাদ
২. এটা তোমার রবের অনুগ্রহের বিবরণ, তাঁর দাস যাকারিয়ার প্রতি।
৩. যখন সে তার রাব্বকে আহবান করেছিল নিভৃতে।
৪. সে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে গেছে, আর বার্ধক্যে আমার মস্তক সাদা হয়ে গেছে, হে আমার প্রতিপালক! তোমাকে ডেকে আমি কখনো বিফল হইনি।
৫. ‘আর আমার পরে স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে আমি আশংকাবোধ করছি। আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা, অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন’।
৬. যে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং উত্তরাধিকারিত্ব পাবে ইয়াকূবের বংশের এবং হে আমার রাব্ব! তাকে করুন সন্তোষভাজন।
৭. তিনি বললেন, ‘হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে একটি পুত্রের শুভ সংবাদ দিচ্ছি যার নাম হবে ইয়াহইয়া, পূর্বে এ নামে আমি কাউকে আখ্যায়িত করিনি।’
৮. সে বলল: হে আমার পালনকর্তা, কেমন করে আমার পুত্র হবে অথচ আমার স্ত্রী যে বন্ধ্যা, আর আমিও যে বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে উপনীত।
৯. তিনি বললেনঃ এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলে দিয়েছেন: এটা আমার পক্ষে সহজ। আমি তো পূর্বে তোমাকে সৃষ্টি করেছি এবং তুমি কিছুই ছিলে না।
১০. সে বলল: হে আমার পালনকর্তা, আমাকে একটি নির্দশন দিন। তিনি বললেন তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি সুস্থ অবস্থায় তিন দিন মানুষের সাথে কথাবার্তা বলবে না।
১১. অতঃপর সে কক্ষ হতে বের হয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট এলো এবং ইঙ্গিতে তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় (আল্লাহর) পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে বলল।
১২. আমি বললাম: হে ইয়াহ্ইয়া! এই কিতাব দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ কর; আমি তাকে শৈশবেই দান করেছিলাম জ্ঞান
১৩. এবং আমার নিকট হতে হৃদয়ের কোমলতা ও পবিত্রতা; সে ছিল সাবধানী
১৪. মাতা-পিতার অনুগত এবং সে ছিলনা উদ্ধত, অবাধ্য ছিল না।
১৫. তার প্রতি শান্তি - যেদিন সে জন্মগ্রহণ করে এবং যেদিন মৃত্যুবরণ করবে এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবে।
১৬. বর্ণনা কর এই কিতাবে উল্লেখিত মারইয়ামের কথা, যখন সে তার পরিবারবর্গ হতে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল।
১৭. অতঃপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো। অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল।
১৮. মারইয়াম বলল: আমি তোমা থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করি যদি তুমি আল্লাহভীরু হও।
১৯. সে বলল: আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব।
২০. মারইয়াম বলল: কেমন করে আমার পুত্র হবে, যখন আমাকে কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই।
২১. সে বলল: এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্যে সহজসাধ্য এবং আমি তাকে মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ করতে চাই। এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।
২২. অতঃপর সে গর্ভে সন্তান ধারণ করল এবং ঐ অবস্থায় এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল।
২৩. প্রসববেদনা তাকে এক খর্জুর বৃক্ষ তলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল; সে বলল: হায়! এর পূর্বে আমি যদি মরে যেতাম এবং লোকের স্মৃতি হতে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতাম!
২৪. তখন তাঁর নিচে থেকে তাঁকে ডেকে বললে -- ''দুঃখ করো না, তোমার প্রভু অবশ্য তোমার নিচে দিয়ে একটি জলধারা রেখেছেন।”
২৫. ''আর খেজুর গাছের কাণ্ডটি তোমার দিকে টানতে থাক, এটি তোমার ওপরে টাটকা-পাকা খেজুর ফেলবে।
২৬. 'সুতরাং খাও ও পান করো এবং চোখ জুড়াও। আর লোকজনের কাউকে যদি দেখতে পাও তবে বলো -- 'আমি পরম করুণাময়ের জন্য রোযা রাখার মানত করেছি, কাজেই আমি আজ কোনো লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলব না’।”
২৭. অতঃপর সে সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হল; তারা বলল: হে মারইয়াম! তুমি তো এক অদ্ভুত কাণ্ড করেছ!
২৮. ‘হে হারূনের বোন! তোমার পিতা তো খারাপ লোক ছিল না। আর তোমার মা-ও ছিল না ব্যভিচারিণী’।
২৯. তখন সে শিশুটির দিকে ইশারা করল। তারা বলল, ‘যে কোলের শিশু আমরা ঈভাবে তার সাথে কথা বলব’?
৩০. শিশুটি বলল, ‘আমি তো আল্লাহর বান্দা; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন’।
৩১. আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে।
৩২. আর আমার মাতার প্রতি অনুগত থাকতে এবং তিনি আমাকে করেননি উদ্ধত ও হতভাগা।
৩৩. আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্ম লাভ করেছি ও শান্তি থাকবে যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব।
৩৪. এই মারইয়ামের পুত্র ঈসা। সত্যকথা, যে সম্পর্কে লোকেরা বিতর্ক করে।
৩৫. সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয়। তিনি পবিত্র, মহান। তিনি যখন কোনো বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তখন তদুদ্দেশ্যে শুধু বলেন, ‘হও’, অমনি তা হয়ে যায়।
৩৬. আল্লাহই আমার পালনকর্তা এবং তোমাদের পালনকর্তা। সুতরাং তাঁর ইবাদাত কর, এটাই সরল পথ।
৩৭. অতঃপর দলগুলো তাদের মধ্যে মতভেদ করল। কাজেই সেই ভয়াবহ দিনের উপস্থিতকালে কাফিরদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য।
৩৮. তারা যেদিন আমার নিকট আসবে, সেদিন তারা কত স্পষ্ট শুনবে ও দেখবে! কিন্তু সীমা লংঘনকারীরা আজ স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে।
৩৯. তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিন সম্বন্ধে, যখন সকল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে; এখন তারা অনুধাবন এবং বিশ্বাস স্থাপন করবে না।
৪০. চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী আমি, পৃথিবীর এবং ওর ওপর যা আছে, তাদেরও এবং তারা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।
৪১. বর্ণনা কর এই কিতাবে উল্লিখিত ইবরাহীমের কথা; সে ছিল সত্যবাদী ও নবী।
৪২. যখন সে তার পিতাকে বলেছিল, ‘হে আমার পিতা! আপনি কেন এমন জিনিসের ‘ইবাদাত করেন যা শুনে না, দেখে না, আর আপনার কোনো কাজেই আসে না?
৪৩. হে আমার পিতা! আমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছে যা আপনার কাছে আসেনি, কাজেই আমার অনুসরণ করুন, আমি আপনাকে সরল সঠিক পথ দেখাব।
৪৪. হে আমার পিতা, শয়তানের এবাদত করবেন না। নিশ্চয় শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য।
৪৫. হে আমার পিতা! আমার ভয় হয় যে, দয়াময়ের ‘আযাব আপনাকে ধরে বসবে, তখন আপনি শয়তানের বন্ধু হয়ে যাবেন।’
৪৬. পিতা বলল: হে ইবরাহীম! তুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ? যদি তুমি বিরত না হও, আমি অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণনাশ করব। তুমি চিরতরে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও।
৪৭. ইবরাহীম বলল, ‘আপনার প্রতি সালাম, আমি আমার প্রতিপালকের নিকট আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব, তিনি আমার প্রতি বড়ই মেহেরবান।
৪৮. আমি পরিত্যাগ করছি আপনাদেরকে আর আপনারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকেন, তাদেরকে। আমি আমার প্রতিপালককে ডাকি, আশা করি আমি আমার প্রতিপালককে ডেকে বঞ্চিত হব না।’
৪৯. অতঃপর সে যখন তাদের থেকে এবং তারা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদাত করত সেই সব হতে পৃথক হয়ে গেল তখন আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকূব এবং প্রত্যেককে নবী করলাম।
৫০. আমি তাদেরকে দান করলাম আমার অনুগ্রহ এবং তাদেরকে দিলাম সমুচ্চ সুখ্যাতি।
৫১. এই কিতাবে উল্লেখিত মূসার কথা বর্ণনা কর, সে ছিল বিশুদ্ধ চিত্ত এবং সে ছিল রাসূল, নবী।
৫২. আমি তাকে আহবান করেছিলাম তূর পর্বতের দক্ষিণ দিক হতে এবং আমি গুঢ় তত্ত্ব আলোচনারত অবস্থায় তাকে নিকটবর্তী করেছিলাম।
৫৩. আমি নিজ অনুগ্রহে তাকে দিলাম তার ভাই হারূনকে, নবীরূপে।
৫৪. এই কিতাবে উল্লেখিত ইসমাঈলের কথা বর্ণনা কর, সে ছিল প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং সে ছিল রাসূল, নবী।
৫৫. সে তার পরিবারবর্গকে নামায ও যাকাতের হুকুম দিত আর সে ছিল তার প্রতিপালকের নিকট সন্তুষ্টির পাত্র।
৫৬. এই কিতাবে উল্লেখিত ইদরীসের কথা বর্ণনা কর, সে ছিল সত্যবাদী নবী।
৫৭. এবং আমি তাকে দান করেছিলাম উচ্চ মর্যাদা।
৫৯. তাদের পরে এলো অপদার্থ পরবর্তীরা; তারা সালাত নষ্ট করল ও লালসা পরবশ হল; সুতরাং তারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।
৬০. তারা বাদে যারা তাওবাহ করবে, ঈমান আনবে আর সৎ কাজ করবে। ফলে এরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, এদের প্রতি এতটুকু যুলম করা হবে না।
৬১. এটা স্থায়ী জান্নাত, যে অদৃশ্য বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দয়াময় তাঁর বান্দাদেরকে দিয়েছেন, তাঁর প্রতিশ্রুত বিষয় অবশ্যম্ভাবী।
৬২. সেখানে তারা শান্তি ছাড়া কোন অসার বাক্য শুনবেনা এবং সেখানে সকাল-সন্ধ্যা তাদের জন্য থাকবে জীবনোপকরণ।
৬৩. এই সেই জান্নাত, যার অধিকারী করব আমি আমার বান্দাদের মধ্যে তাদের যারা ধর্মপরায়ণ।
৬৪. আমরা আপনার রবের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করিনা; যা আমাদের অগ্রে ও পশ্চাতে আছে এবং যা এই দু’এর অন্তবর্তী তা তাঁরই এবং তোমার রাব্ব কোনো কিছু ভুলেননা।
৬৫. তিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের অন্তর্বতী যা কিছু আছে সবারই রাব্ব; সুতরাং তুমি তাঁরই ইবাদাতে ধৈর্যশীল থাক; তুমি কি তাঁর সমগুণ সম্পন্ন কেহকে জান?
৬৬. মানুষ বলে: আমার মৃত্যু হলে আমি কি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব?
৬৭. মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি পূর্বে তাকে সৃষ্টি করেছি আর সে তখন কিছুই ছিল না।
৬৮. সুতরাং শপথ তোমার রবের! আমি তো তাদেরকে শাইতানদেরসহ একত্রে সমবেত করবই এবং পরে আমি তাদেরকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের চতুর্দিকে উপস্থিত করবই।
৬৯. অতঃপর প্রত্যেক দলের মধ্যে যে দয়াময়ের প্রতি সর্বাধিক অবাধ্য আমি তাকে টেনে বের করবই।
৭০. তারপর আমি তো তাদের মধ্যে যারা জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হওয়ার অধিকতর যোগ্য, তাদের বিষয় ভাল জানি।
৭১. তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তথায় পৌছবে না। এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য ফায়সালা।
৭২. অতঃপর আমি পরহেযগারদেরকে উদ্ধার করব এবং জালেমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দেব।
৭৩. তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াত আবৃত্তি করা হলে কাফিরেরা মু'মিনদেরকে বলে: দু'দলের মধ্যে কোনটি মর্যাদায় শ্রেয়তর ও মজলিস হিসাবে কোনটি উত্তম?
৭৪. বলুন, যারা পথভ্রষ্টতায় আছে, দয়াময় আল্লাহ তাদেরকে যথেষ্ট অবকাশ দেবেন; এমনকি অবশেষে তারা প্রত্যক্ষ করবে, যে বিষয়ে তাদেরকে ওয়াদা দেয়া হচ্ছে, তা আযাব হোক অথবা কেয়ামতই হোক। সুতরাং তখন তারা জানতে পারবে, কে মর্তবায় নিকৃষ্ট ও দলবলে দুর্বল।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৭৫ তম প্রকাশ; সূরা আল কাওসার (১০৮) (প্রাচুর্য), ১ থেকে ৩ আয়াত;

১. আমি অবশ্যই তোমাকে কাওছার দান করেছি,
২. কাজেই তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশে নামায আদায় কর এবং কুরবানী কর,
৩. নিশ্চয়ই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই তো নিবংর্শ/লেজকাটা।


আয়াত প্রকাশের মনোজগত: মাঠে নামবেন আবু জেহেল, মুহাম্মদের জীবন বিষিয়ে তোলার জন্য এই একজনই যথেষ্ট; তবে তার দায় যতটা না আবু-জেহেলের, তার থেকে বেশী মুহাম্মদের মনের; কথায় বলে, ‘বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়!’ নবী মুহাম্মদ এতটাই চাপে পড়বেন সামনে, আবু-বকর সহ অনেকেই দেশ ত্যাগে বাধ্য হবেন; অপেক্ষায় থাকুন, সবে শুরু হচ্ছে মুহাম্মদের দ্বিধার জীবন!

(চলবে)

দ্বীনবানের দীন বাণী - ৪৮

ভিডিওসূত্র: https://youtu.be/7mXbp5sTiM0

মাথা ঢেকে নিয়ে হিজাবে > খেলতে ইরানে কি যাবে?

ইরানে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব প্রমীলা দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণকারিণীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করায় অনেকে তারকা-দাবাড়ু এই প্রতিযোগিতা বয়কট করছেন।

বাধ্যতামূলকভাবে হিজাব পরার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভারতীয় মহিলা শুটার হীনা সিধু ইরানে অনুষ্ঠেয় এশিয়া এয়ারগান শুটিং প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে রাশিয়ার জাতীয় প্রমীলা মিনি-ফুটবল (ফুটসাল) দল ইরানে গিয়ে দুটো ম্যাচ খেলে এসেছে। দলের প্রত্যেকের মাথায় ছিলো হিজাব ও পা ছিলো সম্পূর্ণভাবে আবৃত। "এটা ছিলো ইছলাম ধর্মের প্রতি আমাদের সম্মান প্রদর্শন।"

হজ্ব - একটি পৌত্তলিক ভ্রমণ

আল্যার উপার্জনের অর্থ নিয়ে অনর্থ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মসজিদের আদায়কৃত টাকার ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলার চরাঞ্চল চরবাগডাঙ্গায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে অন্তত ৫ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে গড়াইপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চরবাগডাঙ্গার একটি মসজিদের আদায়কৃত টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ রানা টিপুর লোক বলে পরিচিত শহীদুল ডিলারের সাথে আনেসুরের বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জের ধরে শুক্রবার দুপুরে গড়াইপাড়া গ্রামে দুই গ্রুপের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। 
এসময় উভয়পক্ষ শতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে অন্তত ৫জন আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে আফতাব ও সোহরাব নামক দু'ব্যক্তির বাড়ি ভাঙ্গচুরসহ লুটপাট করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 
সদর মডেল থানার ওসি মাজহুরুল ইসলাম জানান, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
ওপরের খবর থেকে আহরিত কয়েকটি শব্দ ও শব্দবন্ধ:

১. আদায়কৃত টাকা

২. টাকার ভাগবাটোয়ারা

৩. সংঘর্ষ

৪. শতাধিক বোমা

৫. বিস্ফোরণ

৬. ৫ জন আহত

৭. বিরোধ

৮. বাড়ি ভাংচুর

অনুসিদ্ধান্ত: ইছলাম শান্তির ধর্ম।

শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬

ভিডিও লিংকিন পার্ক

১.
"আমি আপনার জন্য দোয়া করবো" বা "My thoughts are with you" জাতীয় শূন্যগর্ভ ও নিরর্থক বাক্য ব্যবহার করে যারা মনে করে, একটা বিশেষ দায়িত্ব পালন করা হলো, তাদের জন্য বাজারে এসেছে Thoughts & Prayers App. অচিরেই ইনস্টল করে নিন।
লিংক: https://youtu.be/UXrB7Y6gVN8

২.
বৌদ্ধদের অনুভূতি তো বটেই, এমনকি বুদ্ধভক্ত কিছু বুদ্ধুর অনুভূতিও ব্যথা পেয়ে কঁকিয়ে উঠবে Rude Buddha নামের অতীব মজাদার ভিডিওটি দেখে। 
লিংক: https://youtu.be/dMbnfxwus0s

৩.
যেসব আবাল মনে করে, নাস্তিকতাও একটি ধর্ম, তাদের জন্য বিল মারের বিদ্রূপমাখা যুক্তি-চপেটাঘাত
লিংক: https://youtu.be/BTL-P2V8xKk

৪.
কেনীয় র‍্যাপ-গায়িকা Xtatic অকপটে জানাচ্ছেন, কেন তিনি নাস্তিকতার পথে এসেছেন। তাঁর সরল যুক্তি ও হাসি আমাকে মুগ্ধ করেছে।
লিংক: https://youtu.be/jOPiD1-24TY

৫.
হামলা, হত্যা বা ধর্ষণের সময় যারা "আল্যাহু আকবার" বলে চিৎকার করে, তারা নাকি ছহীহ মুছলিম নহে! তাহলে কে প্রথম "আল্যাহু আকবার" প্রথম প্রয়োগ করেছিল সহিংসতার সময়ে? ভিডিও দেখে জেনে নিন।
লিংক: https://youtu.be/vztQhvF00JY

ষড়যন্ত্র

বানিয়েছেন সাঈদুর রহমান

পূর্ণাকারে দেখতে ছবির ওপরে ক্লিক করতে হবে

যখন i-তে ইছলাম

বুরকা অ্যান্ড দ্য বিচ – ২৯

বিকিনিবহুল সমুদ্রতীর বা অন্যান্য রৌদ্রস্নানস্থলে বোরখাপরিহিতাদের অবস্থান বড়োই বেমানান, দৃষ্টিকটু, অশোভন এবং অশালীনও বটে। সেখানে তোলা কিছু ছবির সংকলন "বুরকা অ্যান্ড দ্য বিচ" ("বিচ" বানান কিন্তু beach. খিয়াল কৈরা!)।


শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬

ইসলামী পাটিগণিত - ৪

লিখেছেন আবুল কাশেম


নামায এবং পাপের গণনা

প্রতিদিন (২৪ ঘণ্টায়) পাঁচবার নামায পড়া ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে এক অন্যতম স্তম্ভ। নিয়মিত সঠিকভাবে নামায না পড়া শুধুমাত্র পাপই নয়, অনেক ইসলামী স্বর্গ, যেমন ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, ইত্যাদি দেশগুলোতে এ এক দণ্ডনীয় অপরাধ। নবী নিজেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন যে, যারা রীতিমত নামায আদায় করে না, উনি তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিতে চান। এখানে একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দেওয়া হল। এই ধরনের অনেক হাদিস আছে।
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বুখারী শরীফ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ৬১, হাদীস ৬২৪। উমর ইব্‌নে হাফ্‌স (র.)...আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে নবী (সা.) বলেছেনঃ মুনাফিকদের উপর ফজর ও ইশার সালাতের চাইতে অধিক ভারী সালাত আর নেই। এ দু’ সালাতের কী ফযীলত, তা যদি তারা জানত, তা হলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হত। (রাসূলুল্লাহ্‌ (সা.) বলেন), আমি সংকল্প করে ছিলাম যে মুআয্‌যিনকে ইকামত দিতে বলি এবং কাউকে লোকদের ইমামতি করতে বলি, আর আমি নিজে একটি আগুনের মশাল নিয়ে গিয়ে এরপরও যারা সালাতে আসেনি, তাদের উপর আগুন ধরিয়ে দেই। 
এক মুমিন তার জীবিতকালে ন্যূনতম কতবার নামায আদায় করবেন, তার একটু হিসাব করা যাক। 

ইসলামী বিধান অনুযায়ী, নামায শিক্ষা শুরু হয় একজন শিশু যখন সাত বছর বয়সী হয়। আর দশ বছরে উপনীত হলে নামায ফরজ বা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। নিয়মিত নামায না পড়লে দশ বছর থেকে মারধোরও করা যেতে পারে। ধরা যাক, এক মুমিনের আয়ুষ্কাল পঁচাশি (৮৫) বছর। অর্থাৎ পঁচাশি বছর পর্যন্ত একাধারে দৈনিক পাঁচবার তাকে নামায আদায় করতে হবে।

সুতরাং জীবিত থাকাকালীন নামায আদায়ের সময় হবে ৮৫-১০ = ৭৫ বছর। এক বছরে ৩৬৫ দিন হিসাবে ধরা যাক।

সর্বমোট নামায আদায় করতে হবে ৭৫ গুণ ৫ গুণ ৩৬৫ = ১৩৬ ৮৭৫ বার বা ১ লক্ষ ছত্রিশ হাজার আটশত পঁচাত্তর বার।

এই হিসাব ধরা হয়েছে—শুধুমাত্র ঘরে, একাকী নামায আদায়ের ওপর।

এই হিসাবে প্রতি শুক্রবার অর্থাৎ জুমার নামায ও অত্যধিক নফল নামায বাদ দেওয়া হয়েছে।

এক বছরে ৫২ জুমা নামায হবে।

তাহলে সারা জীবনে জুমার নামাজ পড়তে হবে ৭৫ গুণ ৫২ = ৩ ৯০০ বার। এই সংখ্যাটি ওপরে নির্ণীত সংখ্যার সাথে যোগ করা যেতে পারে। জুমার নামায বাধ্যতামূলক—এবং এই নামায গৃহে পড়া যাবে না। জুমার নামায মসজিদে পড়া বাধ্যতামূলক।

কিন্তু হাদিস পড়ে বোঝা যায়, এক মুমিনকে এত বার নামায আদায় করার প্রয়োজন নেই। 
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বুখারী শরীফ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ৫৮, হাদীস ৬১৭। আবদুল্লাহ্‌ ইবন ইউসুফ (র.)...আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ জামা’আতে সালাতের ফযীলত একাকী আদায়কৃত সালাতের সাতাশ’ গুন বেশী। 
এখন ওপরে হিসাবকৃত ১৩৬ ৮৭৫ কে ২৭ দিয়ে ভাগ করলে প্রায় ৫ ০৬৯ বার নামায হয়।

এই ৫ ০৬৯ বার কে ৫ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় ১০১৩.৮ দিন।

১০১৩.৮ দিনকে ৩৬৫ দিয়া ভাগ করলে পাওয়া যায় প্রায় ২.৮ বছর বা দুই বছর নয় মাসের মতো।

এর এর অর্থ হচ্ছে: একজন মুমিন প্রতিদিন ধরে ২ বছর ৯ মাস তার নিকটস্থ মসজিদে যাতায়াত করে পাঁচটি বাধ্যতামূলক নামায আদায় করলেই তার জীবনের সব নামায আদায় হয়ে যাবে। এরপর তার আর নামায পড়ার দরকার নেই; শুধুমাত্র শুক্রবারের জুমার নামায পড়া ছাড়া। অর্থাৎ, তেরো বছরে উপনীত হবার পূর্বেই তা’র নামাযের পালা শেষ হয়ে যাবে। অন্তত ওপরের হাদিস অনুযায়ী গণনা করলে তাইই পাওয়া যায়।

মজার ব্যাপারই বটে!

অন্য এক হাদিসে ২৭ গুণের স্থলে ২৫ গুণ বলা হয়েছে, যেমন উক্ত হাদিস বই-এর ৬১৮ নম্বর হাদীস।

এখন আরও একটি হাদিস পড়া যাক:
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বুখারী শরীফ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ৫৮ হাদীস ৬১৮। মূসা ইব্‌ন ইসমাঈল (র.)...আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির জামা’আতের সাথে সালাতের সওয়াব, তার নিজের ঘরে বাজারে আদায়কৃত সালাতের সাওয়াব দ্বিগুন করে পঁচিশ গুন বাড়িয়ে দেয়া হয় (১)। এর কারণ এই যে, সে যখন উত্তমরূপে উযূ করল, তারপর একমাত্র সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে রওয়ানা করল তার প্রতি কদমের বিনিময়ে একটি মর্তবা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। সালাত আদায়ের পর সে যতক্ষণ নিজ সালাতের স্থানে থাকে, ফিরিশ্‌তাগণ তার জন্য এ বলে দু’আ করতে থাকেন—“হে আল্লাহ্‌! আপনি তার উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করুন।” আর তোমাদের কেউ যতক্ষণ সালাতের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতে রত বলে গণ্য হয়। 
পাদটীকা (১): এ হাদীসে শুধু পঁচিশ গুণ বৃদ্ধ্বি হওয়াই বলা হয়নি, বরং দ্বিগুণ করে পঁচিশ গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

নিচের হাদিসটি পড়া যাক: 
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বুখারী শরীফ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ৩২৭, হাদীস ১১১৭। আবদুল্লাহ ইব্‌ন ইউসুফ (র.)...আবূ হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ মাসজিদুল হারাম ব্যতীত আমার এ মসজিদে সালাত আদায় করা অপরাপর মসজিদে এক হাজার সালাতের চাইতে উত্তম। 
ধরা যাক, এক মুমিন মদিনায় গিয়ে এক মাস (৩০ দিন) থাকলো এবং প্রতিদিন নবীর মসজিদে গিয়ে পাঁচ নামায আদায় করল।

এর পুরস্কার হবে ১০০০ গুণ ৫ গুণ ৩০ = ১৫০ ০০০।

এখন সেই মুমিন যদি ওপরে দেখানো হিসাব মত মসজিদে নামাজ আদায় করে থাকে, অর্থাৎ মদিনায় যাবার আগে, তা’হলে মদিনা থেকে ফেরার পর তার নামায বাকি থাকে--

১৩৬ ৮৭৫ বিয়োগ ১৫০ ০০০ = -১৩ ১২৫

এই সংখ্যাটি বিয়োগাত্মক (নিগেটিভ) হয়েছে এই কারণে যে, ঐ মুমিনের সারা জীবনে যে সালাতের প্রয়োজন ছিল তা’র চাইতেও অনেক বেশি সালাত সে আদায় করে ফেলেছে তিরিশ দিন মদীনায় নবীর মসজিদে সালাত আদায় করে।

তা’হলে কোনো মুমিন কাবা শরীফে এক নামায আদায় করলে কত পুণ্য পাবে? অনেকদিন আগে আমি ‘আলিম’ সফটওয়্যার কিনেছিলাম। সেই সফটওয়্যার এখন আমার নতুন কম্পুটারে চলে না। আগ্রহী পাঠকেরা ‘আলীম’ সফট্‌ওয়্যার কিনে অথবা ডাউনলোড করে নিচের অনুবাদকৃত হাদিসের সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন।
Transmitted by Ibn Majah. (Al-Tirmidhi, Number 247- taken from the Alim CD-ROM Version Narrated Anas ibn Malik
Allah's Messenger (peace be upon him) said: The prayer of a person in his house is a single prayer; his prayer in the mosque of his tribe has the reward of twenty-five prayers; his prayers in the mosque in which the Friday prayer is observed has the reward of five hundred; his prayer IN THE MOSQUE OF AQSA (i.e. BAYT AL-MAQDIS) has a reward of fifty thousand prayers; his prayer in MY MOSQUE (the Prophet's mosque in Medina) has a reward of fifty thousand prayers; and the prayer in the Sacred Mosque (Ka'bah) at Makkah has a reward of one hundred thousand prayers. 
বাংলা অনুবাদ হচ্ছে:
আনাস ইবনে মালিক বর্ণনা করেছেন:
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: এক ব্যক্তি তার নিজস্ব গৃহে নামায আদায় করলে তার মর্তবা হবে এক। সে যদি তার গোত্রের মসজিদে নামায পড়ে তার মর্তবা হবে পঁচিশটি নামাযের সমান। সে জুমার মসজিদে নামায আদায় করলে তার মর্তবা পাবে পাঁচশত গুণ। আল-আকসা মসজিদে এক নামায পড়ার মর্তবা হচ্ছে পঞ্চাশ হাজার নামাযের সমান। আমার মসজিদে এক নামায পড়লে তার মর্তবা হবে হবে পঞ্চাশ হাযার নামাযের সমান। আর কাবার মসজিদে এক নামাযের মর্তবা হবে এক লক্ষ নামাযের সমান।
এখন পাপের হিসাব করা যাক। একজন মুমিন তার জীবদ্দশায় কত পাপ করবে, তার সঠিক হিসাব কেউ জানে না। তবে আমরা ধরে নিতে পারি যে, প্রত্যেকদিন সে বারোটি পাপ করে। চিন্তা করা যায় যে, সে দৈনিক পাপ করছে এইভাবে:

দুই হাতে দুই পাপ
দুই পায়ে দুই পাপ
দুই চোখে দুই পাপ
দুই কর্ণে দুই পাপ
এক মুখে এক পাপ
এক জিহবায় এক পাপ
এক লিঙ্গে (স্ত্রী অথবা পুরুষ) এক পাপ
এক নাসিকায় এক পাপ
সর্বমোট বারো পাপ। অবশ্যই এই পাপের তালিকায় অনেক কিছুই বাদ পড়েছে—মস্তিষ্কের পাপ (কুচিন্তা), আঙ্গুলের পাপ, যৌনতার পাপ (বিভিন্ন প্রকার)—এই সব আর কি।

তাই জীবিত অবস্থায় (দশ থেকে পঁচাশি বছর পর্যন্ত) তার পাপের সংখা হবে ১২ গুণ ৭৫ গুণ ৩৬৫ = ৩২৮ ৫০০০ টি (৩ লক্ষ ২৮ হাজার ৫০০)।

এই বিশাল পাপ থেকে মুক্তির উপায় কী?

অনেক পাপই অযুর সাথে মুছে ফেলা হয়। যেমন, দুই হাত ধৌতের সময় দুই পাপ ধৌত হয়ে যায়…এই রকম ভাবে একবার অযু করলে ন্যূনতম বারোটি পাপ আল্লাহ্‌ পাক ক্ষমা করে দেন। অযু শেষে আবার নতুন করে পাপ করা চলবে, এই চক্র চলবে দিন রাত সব সময়ই। 

কিন্তু এই বারো পাপের চাইতেও অসংখ্য পাপ এক মুমিন দৈনিক করে থাকে। এই সব অগুনতি পাপ থেকে মুক্তির কী উপায়?

এর এক সহজ উত্তর হচ্ছে সালাত।

দেখুন এই হাদিস:
সহীহ মুসলিম, বাংলাদেশ ইসলামীক সেন্টার ঢাকা, খণ্ড ২, পৃঃ ৩২২, হাদীস ১২৪০। আবূ হুরায়রা (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাযের শেষে তেত্রিশবার আল্লাহ্‌র তাসবীহ বা পবিত্রতা বর্ণনা করবে, তেত্রিশবার আল্লাহ্‌র তাহমীদ বা প্রশংসা করবে এবং তেত্রিশবার তাকবীর বা আল্লাহ্‌র মহত্ব বর্ণনা করবে আর এইভাবে নিরানব্বই বার হওয়ার পর শততম পূর্ণ করতে বলবে—“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরীকা লাহু-লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি আিইয়েন কাদীর” অর্থাৎ আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একক ও লা-শারীক। সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র তিনিই। সব প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম—তার গোনাহ্‌সমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির মত অসংখ্য হলেও মাফ দেওয়া হয়। 
এই হাদিসে পরিষ্কার হয় না—সারা জীবনের পাপ নাকি এক দিন বা তদীয় অংশের পাপ। যদি সারা জীবনের পাপ হয়ে থাকে তবে পাপমোচনের এর চাইতে ভাল পন্থা আর কী হতে পারে? আর যদি দৈনিক পাপের জন্য হয়ে থাকে—তবে গণনা করে নিন কয়বার এই পন্থা নিতে হবে জীবনের সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাবার জন্য। 

এর চাইতেও ভালো পন্থা আছে: ওপরে উদ্ধৃত বুখারী শরীফ হাদিস ৬১৮-তে। এই হাদিসে বলা হয়েছে:
‘...সে যখন উত্তমরূপে উযূ করল, তারপর একমাত্র সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে রওয়ানা করল তার প্রতি কদমের বিনিময়ে একটি মর্তবা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়’।
ওপরের হিসাব অনুযায়ী, মসজিদের উদ্দেশে ২৩৭ ৭৫০ বার কদম ফেললেই আল্লাহ্‌ পাক সব পাপ মাফ করে দেবেন। 

ইসলামী পাপ থেকে মুক্তি পাবার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হবে হজ্জ পালন। একবার হজ্জ পালন করলেই জীবনের সমস্ত পাপ খণ্ডন হয়ে যাবে—প্রতিটি হাজি হয়ে যাবে নবজাত শিশু। কিন্তু এই হজ্ব হতে হবে হজ্বের মৌসুমে—অন্য সময় নয়, অর্থাৎ উমরা করলে সমস্ত পাপমোচন হবে না—হয়ত বা আংশিক হতে পারে।
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বুখারী শরীফ, তৃতীয় খণ্ড, পৃঃ ৭০, হাদীস ১৪৩১। আদম (র.)...আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে হজ্ব করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে নবজাতক শিশু, যাকে তার মা এ মুহুর্তেই প্রসব করেছে, তার ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে। 
আরও একটি হাদিস দেখা যাক:
এহিয়াও উলুমিদ্দীন, বাংলা অনুবাদ মাওলানা মুহিউদ্দিন খান,দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ১৭। হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি নামাযে দাঁড়িয়ে কোরআন তেলাওয়াত করে, সে প্রত্যেক হরফের বদলে একশ’টি সওয়াব পায়। যে নামাযে বসে কোরআন তেলাওয়াত করে সে প্রত্যেক হরফের বদলে পঞ্চাশটি সওয়াব পায় এবং যে ওযু ছাড়া পাঠ করে সে দশটি নেকী পায়। রাতের বেলায় নামাযে দাঁড়িয়ে পড়া সর্বোত্তম। কেননা, রাতের বেলায় মন খুব একাগ্র থাকে। 
উইকিপিডিয়া ঘাঁটাঘাঁটি করে জানা গেল যে, কোরানে ৩৩০ ১১৩টি হরফ আছে; হরফ বলতে এখানে আরবি হরফই বলা হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই—কারণ কোরানের অনুবাদ, সে যে ভাষায়ই হউক না কেন, তা’ নাকি কোরান নয়—এটা সব ইসলামী পণ্ডিতদের অভিমত।

দেখা যাক, একবার কোরান তেলাওয়াত সম্পন্ন করলে কতটুকু সওয়াব বা পুণ্য পাওয়া যাবে। ধরা যাক, সে নামাযে বসে সম্পূর্ণ কোরান তেলাওয়াত করল। আর যদি সে আংশিক কোরান তেলাওয়াত করে, তবে নিচের হিসাবটি সংশোধন করে নিতে হবে।

৫০ গুণ ৩৩০ ১১৩ =১৬ ৫০৫ ৬৫০ (ষোল মিলিয়নেরও বেশী)
অনেকেই বলে থাকেন, একজন সাচ্চা মুমিনের উচিত হবে মাসে একবার কোরান তেলায়াত করা। তাহলে বছরে বারো বার, এবং তার জীবদ্দশায় হবে এই প্রকার—

১৬ ৫০৫ ৬৫০ গুণ ১২ গুণ ৭৫ = ১৪ ৮৫৫ ০৮৫ ০০০ (প্রায় ১৫ বিলিয়ন বা ১৫০০ কোটি)

এই অবিশ্বাস্য নেকী পাওয়া কল্পনারও বাইরে। এর অর্থ হচ্ছে, এক মুমিন যত পাপই করুক না কেন, নামায, কোরান তেলাওয়াত দ্বারা সমস্ত পাপের থেকে সে মুক্তি পাবেই। আর সর্বশেষ পন্থা হচ্ছে, শুধু একবার হজ্ব করলেই সমস্ত পাপ আল্লাহ্‌ পাক ধুয়ে মুছে সাফ করে দেবেন।

এই হিসেব থেকে আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারি, কেন সমস্ত ইসলামী বিশ্ব পাপ এবং দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত।

শেষ প্রশ্ন হতে পারে—নবী করীম কি কোনো পাপ করেছেন কিংবা এখনও করে চলেছেন? 

আমরা কোরানে দেখি যে, আল্লাহ্‌ তা’লা নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তাঁর সবচাইতে প্রিয় নবী অনেক পাপ করেছেন। দেখুন:
৪০:৫৫ অতএব, আপনি সবর করুন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌র ওয়াদা সত্য। আপনি আপনার গোনাহের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং সকাল‑সন্ধ্যায় আপনার পালনকর্তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করুন।
৪৭:১৯ যেনে রাখুন, আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন উপাস্য নাই। ক্ষমাপ্রার্থনা করুন, আপনার ত্রুটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ্‌ তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত।
নবী সারা জীবনে সম্ভাব্য কত পাপ করেছেন, তার একটা ধারণা নিচের হাদিসে পাওয়া যায়।
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বুখারী শরীফ, নবম খণ্ড, পৃঃ ৫৫৩, হাদীস ৫৮৬৮। আবুল ইয়ামান (র)…আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ্‌র কসম! আমি প্রত্যহ সত্তরবারেরও বেশী ইস্তিগফার ও তাওবা করে থাকি।
উপরের হাদিস থেকে অনুমান করা যেতে পারে রাসূলুল্লাহ দৈনিক গড়পড়তা সত্তরটি পাপ করতেন। এখন সহজেই আমরা হিসাব করে নিতে পারি তাঁর জীবদ্দশায় কী পরিমাণ পাপ করেছিলেন।

কিন্তু আল্লাহ্‌ অতিশয় চালাক। তাই নিম্নের আয়াতে আল্লাহ্‌ পাক নবীর সমস্ত অতীত এবং ভবিষ্যতের পাপ মার্জনা করে দিয়েছেন। অতীতের পাপ বলতে কী বোঝায়, তা বোধগম্য। কিন্তু ভবিষ্যতের পাপ বলতে আল্লাহ্‌ পাক কী বলেছেন, তা পরিষ্কার নয়। এমন হতে পারে যে, ভবিষ্যতের পাপ বলতে নবীর মরণোত্তর পাপ বলা হয়েছে। অর্থাৎ, মৃত্যুর পরে ইসলামী স্বর্গে গিয়েও নবী পাপ করছেন—এখনও। কিন্তু আল্লাহ্‌ সেই সব পাপ মাফ করে দেবেন।
৪৮:১ নিশ্চয় আমি আপনার জন্যে এমন একটা ফয়সালা করে দিয়েছি, যা সুস্পষ্ট
৪৮:২ যাতে আল্লাহ্‌ আপনার অতীত ও ভবিষ্যতে ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন।
অন্যান্য যে সব আয়াতে নবীর পাপের বর্ণনা আছে সেগুলো হচ্ছে: ৯৪:২ এবং ৯৪:৩।

আর একটা সুখবর হচ্ছে—নাস্তিক এবং ইসলাম-বিদ্বেষীরা যারা অনেকবার কোরান আবৃত্তি করেছে, তারাও যে তাদের পাপ থেকে হয়ত ছাড়া পেয়ে যাবে, তা ওপরের হিসাব থেকে প্রতীয়মান হয়। তাই নাস্তিক, ইসলামফোব, ইসলাম ঘৃণাকারী, হারামখোর, হারামজাদা…এদের উচিত হবে আরও বেশি বেশি কোরান পড়া।

(চলবে)