আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬

সত্যিকারের ডাইনিদের গল্প - ১

লিখেছেন সরকার আশেক মাহমুদ

আমরা হয়ত কখনো কখনো আমাদের নিজেদের ভুল বা সাফল্য থেকে কিছু শিখি। কিন্তু সবকিছু ভুল বা সাফল্য থেকে শেখা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের জীবন ক্ষণস্থায়ী। প্রাণী হিসেবে আমদের বিশেষত্ব এটাই যে, বিবর্তনের ক্রমধারায় আমাদের ভাষা সৃষ্টি হয়েছে, এক প্রজন্মের অভিজ্ঞতা, অর্জন, ব্যর্থতা অন্য প্রজন্মের মানুষ এই ভাষার কারণেই শিখতে পারছে। এক অঞ্চলের মানুষও অন্য অঞ্চল থেকে শিখতে পারছে। বানর বা গরিলা সমাজে হয়তো তা সম্ভব নয়। আর তাই হয়ত আমরা বিদ্যালয়ে যাই। মানুষের গায়ের রং, ধর্ম, ভাষা যেমনই হোক না কেন, পৃথিবীর এক প্রান্তে আবিষ্কৃত ওষুধ পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষের রোগ নিরাময়ে কাজ করে। মানব সভ্যতার বিবর্তনেও পৃথিবীর অন্য সমাজের ভুল বা সাফল্য এবং সভ্যতার অগ্রগতির ধারা যদি আমরা জানতে পারি, মানুষকে জানাতে পারি, হয়তো আমাদের নিজেদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতে ভুলের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারি। 

ছোটবেলার রূপকথার বইতে জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া ভাই-বোনদের ডাইনি বুড়ির খপ্পরে পড়ার কাহিনী আপনারা সবাই হয়ত পড়েছেন। অথবা শুনেছেন হয়ত, ঝাড়ুতে ভর করে কীভাবে কীভাবে জাদুকরী উড়ে যেতে পারে আকাশে। আধুনিক রূপকথার হ্যারি পটারের কাহিনীতেও আমরা জাদুর বলে ঝাড়ুতে ভর করে উড়ে যাবার দৃশ্য দেখতে পেয়েছি। এই গল্পগুলো আমাদের জন্য যতই বিনোদনদায়ক হোক না কেন, এই জাতীয় গল্পের ঐতিহাসিক উৎসস্থলে ফিরে গেলে আমাদের নৃশংসতা আর বর্বরতা দেখে আঁতকে উঠতে হবে। মানুষের অজ্ঞতার যুগে ধর্মান্ধতার বাড়াবাড়ি পশ্চিমা বিশ্বের মানুষকেও কীভাবে ভয়ানক বর্বরতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল, তা থেকে উঠে আসা পশ্চিমা বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে তুলনা করতে গেলে যা কিনা অভাবনীয় মনে হবে। সেই সাথে আমাদের ভাবতে সাহায্য করে - আমাদের অজ্ঞতা, অন্ধবিশ্বাস এবং অযৌক্তিক ভীতি কীভাবে আমাদের ঠেলে দিতে পারে সহিংসতার দিকে। 

ডাইনি গল্প - এক: স্কটল্যান্ড 

১৭১৮ সালে উত্তর পূর্ব স্কটল্যান্ডের Caithness উইলিয়াম মন্টগোমরী (William Montgomery) নামক কাঠমিস্ত্রী ছিল, যে কিনা বেড়ালদের ভীষণ রকম অপছন্দ করতো। একদিন সে দেখতে পেল, কিছু বেড়াল তার বাড়ির পেছনের উঠোনে আনাগোনা করছে যা কিনা তার জন্য খুবই বিরক্তির উদ্রেক করছিল। একসময় সে ধরে নিল, এই বেড়ালগুলো আসলে বেড়াল নয়, বেড়ালবেশী ডাইনি। উল্লেখ্য যে, ইসলাম ধর্মে যেমন কুকুরকে ঘৃণা করার যথেষ্ট বন্দোবস্ত আছে, তেমন খ্রিষ্টান ধর্মে আছে/ছিল বেড়ালকে ঘৃণা করার যথেষ্ট মালমসলা। যাই হোক, এই ভদ্রলোক যা সন্দেহ করেছে, তার সাথে তাল মেলাল তার বাড়ির কাজের মেয়ে। সে বলল যে, সে শুনতে পেয়েছে যে বেড়ালগুলো মানুষের ভাষায় একে অন্যের সাথে কথা বলছে। তাই উইলিয়াম তার সন্দেহ সত্যি হয়েছে বলে ধরে নিল। আর তাই পরদিন বেড়ালবেশী কুচক্রী ডাইনিদের আক্রমণ করার জন্য তৈরি হয়ে গেল। একটা কুঠার, একটা ছোরা ও একটা ধারালো তরবারি নিয়ে বীর বেশে বিড়ালদের ওপরে আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ল। একটা বেড়ালের পিঠে আঘাত লাগলো, আরেকটার পেছনদিকে আর তৃতীয়টার পায়ে লেগে পা খোঁড়া হয়ে গেল। কিন্তু সবগুলো পালিয়ে গেল। একটা বেড়ালকেও আটকাতে পারলো না। 

কিছুদিন পরে গ্র্রামের দুই বৃদ্ধা মারা গেল এবং শোনা গেল যে, ঐ তাদের মৃত দেহ যখন চেক করা হল দেখা গেল একজনের পিঠে এবং অন্যজনের নিতম্বে সাম্প্রতিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আর গ্রামের মানুষেরা ধরে নিল, এই দুইজন বেড়ালবেশি ডাইনি ছিল। আর তাই অতি সতর্ক গ্রামবাসী তৃতীয় ডাইনী বুড়ি খোঁজার জন্য বেরিয়ে পড়ল, যার পায়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যাবে। কিছু সময়ের মধ্যে তারা ন্যান্সি গিলবার্ট (Nancy Gilbert) নামের এক সত্তর বছর বয়স্কা বৃদ্ধার সন্ধান পেল, যার পা ভাঙা। বয়সের ভারে বৃদ্ধার চেহারা যথেষ্ট বিচ্ছিরি হয়েছিল, যা তাকে ডাইনি হিসাবে সন্দেহ করতে সাহায্য করল, যে কিনা কাঠুরের আঘাত পেয়ে পালিয়ে এসেছে। ন্যান্সিকে তৎক্ষনাৎ বিছানা থেকে টেনে নিয়ে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হলো। 

এখানে বলে রাখা উচিত, কেউ ডাইনি হিসেবে অভিযুক্ত হলে তাকে শাস্তি দেবার আগে স্বীকারোক্তি আদায় করার ব্যাপারে তত্কালীন খ্রিষ্টানরা যে-নিয়মতান্ত্রিক বীভৎস রকমের অত্যাচার বা নির্যাতন করার প্রক্রিয়া ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়। যদিও ওই অত্যাচার শুরু করার আগে ন্যান্সি সবাইকে বলেছিল যে, কীভাবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তার পা ভেঙেছিল । কিন্তু বলা বাহুল্য, বিচারকদের কাছে স্বাভাবিক যৌক্তিক কথা গ্রহণযোগ্য হলো না। তারপর উপর্যুপরি নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে স্বীকার করতে বাধ্য করানো হলো যে, সে ডাইনি এবং তার পা ঐদিন উইলিয়াম মন্টগোমরী আঘাতে ভেঙে গিয়েছিল এবং সাম্প্রতিক মৃত দুই বৃদ্ধাও তার সহযোগী ডাইনি ছিল। যা হোক, উপর্যুপরি নির্যাতনের কারণে বৃদ্ধা কয়েদখানায় পরদিন মারা গেল। 

প্রায় তিন চারশত বছর ধরে ডাইনি বা জাদুকর সন্দেহে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের এভাবেই অত্যাচারের মাধ্যমে অভিযোগ স্বীকার করতে বাধ্য করানো হয়েছিল। তবে কোনো স্বীকারোক্তিই গ্রহণযোগ্য হতো না, যতক্ষণ না অভিযুক্ত ব্যক্তি অন্য কে কে তার সাথে ডাইনিগিরি করার কাজে সহযোগিতা করে, তাদের নাম না বলতো। তারপর ধরে আনা হতো অন্যদের পালাক্রমে। যদিও ডাইনি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা কেউ কেউ অনেক বেশি মনে করে। রক্ষণশীল অনুমানে আমরা বলতে পারি প্রায় ৪০০০০ থেকে ৫০০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল তিনশ বছর ধরে । আর কোনো কোনো অনুমানে মনে করা, দুই থেকে পাঁচ লক্ষ মানুষ। একটা বইয়ের উৎস দেখিয়ে উইকিপিডিয়াতে একটা হিসাবের পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের অনেককে খুঁটিতে বেঁধে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেয়া হতো। তাছাড়াও ছিল আরো অনেক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পন্থা, যা এখনই উল্লেখ করে আপনার পড়ার রুচি নষ্ট করতে চাচ্ছি না। পরবর্তী পর্বগুলোতে আসছে।

(মূলত End of faith বই থেকে সংগ্রহীত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন