আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৭

ফাদাক - ৫: নবী-পরিবারের দাবি ও 'আমি শুনিয়াছি' বাদ্য!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব-১৫৭): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত একত্রিশ

লিখেছেন গোলাপ

(আগের পর্বগুলোর সূচী এখানে)

"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই মুসলিম জাহানের প্রথম খুলাফায়ে রাশেদিন আবু বকর ইবনে কুহাফা কী অজুহাতে মুহাম্মদের রেখে যাওয়া সুবিশাল অংকের লুটের মালের সম্পদগুলো বাজেয়াপ্ত করেছিলেন (পর্ব-১৫৪); অতঃপর সেই সম্পত্তির উত্তরাধিকারের হিস্যা ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশায় নবী-কন্যা ফাতিমা নিজে ও তাঁর অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে কীভাবে আবু বকরের কাছে বারংবার ধর্না দিয়েছিলেন; যুক্তি-প্রমাণ (পর্ব-১৫৫)  সাক্ষী উপস্থাপনের (পর্ব-১৫৬) মাধ্যমে নবী কন্যা ফাতিমা তাঁর দাবির যথার্থতার প্রমাণ উপস্থিত করা সত্ত্বেও কী অজুহাতে আবু বকর তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন; আবু বকরের প্রতি অত্যন্ত বীতশ্রদ্ধ ও রাগান্বিত নবী-কন্যা কীরূপ মানসিক যন্ত্রণায় কষ্টভোগ করেছিলেন; ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা গত তিনটি পর্বে করা হয়েছে।

মুহাম্মদের রেখে যাওয়া সুবিশাল অংকের লুটের মালের সম্পত্তির (গনিমত) হিস্যা থেকে আবু বকর মুহাম্মদের একান্ত নিকট আত্মীয়দের বঞ্চিত করেছিলেন সত্য, কিন্তু তিনি এই সম্পদের উপার্জন থেকে মুহাম্মদের নিকটাত্মীয় ও তাঁদের বংশধরদের ভরণ-পোষণের সাহায্য ব্যবস্থা চালু রেখেছিলেন; যা আবু বকরের মৃত্যুর পরে ইসলামের ইতিহাসের দ্বিতীয় খুলাফায়ে রাশেদিন উমর ইবনে খাত্তাব বন্ধ করে দিয়েছিলেন! উমর ইবনে খাত্তাব কী অজুহাতে আবু বকরের প্রদত্ত সেই সাহায্য ব্যবস্থাটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন তার বিস্তারিত আলোচনা ‘লুটের মালের উত্তরাধিকার ও পরিণতি (পর্ব-১৫১)! পর্বে করা হয়েছে।

আদি উৎসে মুহাম্মদ ইবনে সা'দের (৭৮৪-৮৪৫ সাল) বর্ণনা মতে, নবী-কন্যা ফাতিমা তাঁর স্বামী আলী ইবনে আবু-তালিবকে সঙ্গে নিয়ে সর্বপ্রথম যেদিন আবু বকরের সঙ্গে তাঁর পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তির উত্তরাধিকারের হিস্যা ফেরত পাওয়ার দাবি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন, সেই দিনটি ছিল মুহাম্মদের মৃত্যুর পরদিনই! যার সরল অর্থ হলো:

"মুহাম্মদের মৃত্যুর ঐ দিনটিতেই আবু বকর মুহাম্মদের রেখে যাওয়া সুবিশাল অংকের সম্পত্তিগুলো বাজেয়াপ্ত করেছিলেন!"

পাঠক, একটু মানবিক দৃষ্টি ভঙ্গির মাধ্যমে কল্পনা করুন: “ফাতিমা নামের এক তরুণীর পিতার মৃত্যুর ঐ দিনটিতেই তাঁর পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করছেন আবু বকর ইবনে কুহাফা নামের তাঁর পিতারই এক বিশিষ্ট শিষ্য! ফাতিমার চোখের পানি শুকানোর সময় পর্যন্ত এই শিষ্যটি তাঁকে দেননি! এই কর্মের প্রতিবাদে পিতার মৃত্যুর পরের দিনই সমস্ত কষ্ট বুকে নিয়ে ফাতিমা নামের এই মেয়েটি তাঁর পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারের হিস্যার দাবি নিয়ে হাজির হয়েছেন সেই 'আবু বকরের' কাছে! ক্ষমতাধর আবু বকর তাঁর এই কর্মের বৈধতা প্রদান করছেন এই বলে:

"আমি শুনেছি, ‘আল্লাহর নবী বলেছেন, 'আমাদের সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তর উচিত নয়, যা আমরা (অর্থাৎ নবীরা) রেখে যাই তা হয় সাদাকা (যা ব্যবহার করতে হয় দান খয়রাতের জন্য)।‘”

অন্যদিকে, ফাতিমা ও তাঁর পরিবার সদস্যরা আবু-বকরের দাবি প্রত্যাখ্যান করে তাঁদের উত্তরাধিকারের হিস্যা ফিরে পাওয়ার প্রচেষ্টায় বিভিন্ন যুক্তি-প্রমাণ ও সাক্ষী সহ বারংবার তার কাছে ধর্না দিচ্ছেন! কিন্তু আবু বকর বিভিন্ন অজুহাতে তা অগ্রাহ্য করছেন; ক্ষমতা এখন তার হাতে! অতঃপর, ফাতিমা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে রাগে অভিমানে আবু বকরের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে ছয় মাস কাল জীবিত থাকার পর মৃত্যুবরণ করলেন, তাঁর স্বামী তাঁকে রাত্রিকালেই দাফন করলেন (পর্ব-১৫৪)!"  

এমনই একটি নির্দিষ্ট ঘটনায় সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী এই দুই দাবিদারের যে কোনো এক পক্ষের দাবি ও কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে অসৎ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত! এই দুই পক্ষ একই সাথে কখনোই সত্য, সৎ ও নীতিপরায়ণ হতে পারে না।

প্রশ্ন ছিলো, "এমন কী কোনো পন্থা আছে, যার মাধ্যমে প্রায় নিশ্চিতরূপেই অনুধাবন করা যায়, কে সেই অসৎ ও ভণ্ড?"

জবাব, “হ্যাঁ, পন্থা নিশ্চয়ই আছে। আর তা হলো, ইসলামের একান্ত প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষা ও যুক্তি বিদ্যার প্রাথমিক পাঠ।"

(১) ইসলামের একান্ত প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষা হলো "এমন কোন দাবি গ্রহণযোগ্য নয়, যা কুরানের (আল্লাহর) স্পষ্ট আদেশ ও নিষেধের পরিপন্থী।"

>>> ২৫ বছর বয়সে খাদিজা বিনতে খুয়ালিদ-কে বিয়ে করার পর থেকে মৃত্যুকাল অবধি মুহাম্মদ তাঁর জীবিকার প্রয়োজনে অর্থ উপার্জনের নিমিত্তে কোনো সর্বজনবিদিত সৎকর্ম পেশায় জড়িত ছিলেন, এমন ইতিহাস আদি উৎসে বর্ণিত মুহাম্মদের জীবনীগ্রন্থে (সিরাত) খুঁজে পাওয়া যায় না। মুহাম্মদ তাঁর মৃত্যুকালে যে বিশাল সম্পত্তি রেখে গিয়েছিলেন, তা তিনি অর্জন করেছিলেন মদিনা অবস্থানকালীন (৬২২-৬৩২ সাল) অবিশ্বাসী জনপদের ওপর বিভিন্ন সময়ে তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের অতর্কিত আগ্রাসী হামলা ও সম্পদ লুণ্ঠনের মাধ্যমে; যার বিস্তারিত আলোচনা "ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ" শিরোনামে গত একশত ত্রিশটি পর্বে করা হয়েছে। খায়বার, ফাদাক ও মদিনার বনি নাদির গোত্রের অবিশ্বাসী জনগণদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত সম্পত্তির পার্থক্য হলো:

মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা খায়বারের লুটের মাল ও ভূ-সম্পত্তিগুলো অর্জন করেছিলেন সরাসরি হামলার মাধ্যমে; তাই এই লুটের মালের হিস্যাদার ছিলেন মুহাম্মদ  তাঁর অনুসারীরা।

মুহাম্মদের ভাষায় (কুরান):
৮:৪১ - "আর এ কথাও জেনে রাখ যে, কোন বস্তু-সামগ্রীর মধ্য থেকে যা কিছু তোমরা গনীমত হিসাবে পাবে, তার এক পঞ্চমাংশ হল আল্লাহর জন্য, রসূলের জন্য, তাঁর নিকটাত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং এতীম-অসহায় ও মুসাফিরদের জন্য; যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে আল্লাহর উপর এবং সে বিষয়ের উপর যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি ফয়সালার দিনে, যেদিন সম্মুখীন হয়ে যায় উভয় সেনাদল। আর আল্লাহ সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল।"

অন্যদিকে, মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা ফাদাক ও মদিনার বনি নাদির গোত্রের জনগণদের কাছ থেকে যে লুটের মাল ও ভূ-সম্পত্তিগুলো হস্তগত করেছিলেন, তা ছিল হুমকির মাধ্যমে; তাই ফাদাক ও বনি নাদির গোত্রের কাছ থেকে লুণ্ঠিত সম্পত্তির মালিক ছিলেন,

মুহাম্মদের ভাষায় (কুরান):
৫৯:৬-৭ - "আল্লাহ বনু-বনুযায়রের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যে ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তজ্জন্যে তোমরা ঘোড়ায় কিংবা উটে চড়ে যুদ্ধ করনি, কিন্তু আল্লাহ যার উপর ইচ্ছা, তাঁর রসূলগণকে প্রাধান্য দান করেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। আল্লাহ জনপদ-বাসীদের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর, রসূলের, তাঁর আত্মীয়-স্বজনের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং মুসাফিরদের জন্যে, যাতে ধনৈশ্বর্য্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না হয়। রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।'

অর্থাৎ,
কুরান সাক্ষ্য দিচ্ছে, মুহাম্মদ তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর অন্যান্য অনুসারীদের মতই লুটের মালের হিস্যা গ্রহণ করতেন ও তিনি সেই সব সম্পদ ও ভূ-সম্পত্তির মালিক ছিলেন। যেহেতু তিনি সম্পত্তির মালিক ছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সেই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন তাঁর নিকট-আত্মীয়রা! এ ব্যাপারে আল্লাহর রেফারেন্সে মুহাম্মদের বক্তব্য (কুরান) অত্যন্ত স্পষ্ট!

মুহাম্মদের ভাষায়:
৪:৭ – “পিতা-মাতা ও আত্নীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদেরও অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে; অল্প হোক কিংবা বেশী| এ অংশ নির্ধারিত|

Ø অর্থাৎ, মুহাম্মদের দাবিকৃত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তার (আল্লাহর) বিধান হলো - মৃত ব্যক্তির সম্পদ ও সম্পত্তির ওপর তাঁর উত্তরাধিকারীদের অধিকার, "অল্প হোক কিংবা বেশি|” 

৪:১১ –“আল্লাহ্ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন: একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান| অত:পর যদি শুধু নারীই হয় দু-এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক| মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে| যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ| অত:পর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যতের পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর| তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না| এটা আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ|”

Ø অর্থাৎ মুহাম্মদের যিনি মনিব, সেই 'আল্লাহ' বলছে, মৃত মুহাম্মদের সম্পদ ও ভূ-সম্পত্তির ওপর তাঁর কন্যা ফাতিমার ন্যায্য অধিকার! 

৪:১২ -আর, তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি, যা ছেড়ে যায় তোমাদের স্ত্রীরা যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে| যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তোমাদের হবে এক-চতুর্থাংশ ঐ সম্পত্তির, যা তারা ছেড়ে যায়; ওছিয়্যতের পর, যা তারা করে এবং ঋণ পরিশোধের পর| স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে| আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর| যে পুরুষের, ত্যাজ্য সম্পত্তি, তার যদি পিতা-পুত্র কিংবা স্ত্রী না থাকে এবং এই মৃতের এক ভাই কিংবা এক বোন থাকে, তবে উভয়ের প্রত্যেকে ছয়-ভাগের এক পাবে| আর যদি ততোধিক থাকে, তবে তারা এক তৃতীয়াংশ অংশীদার হবে ওছিয়্যতের পর, যা করা হয় অথবা ঋণের পর এমতাবস্খায় যে, অপরের ক্ষতি না করে| এ বিধান আল্লাহ্র| আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সহনশীল|

Ø মুহাম্মদের দাবিকৃত সৃষ্টিকর্তা (আল্লাহ) বলছে, মৃত মুহাম্মদের স্ত্রীরা হলেন তাঁর রেখে যাওয়া সম্পদ ভূ-সম্পত্তির ন্যায্য অধিকারিণী। 

৪:১৭৬ – “মানুষ আপনার নিকট ফতোয়া জানতে চায় অতএব, আপনি বলে দিন, আল্লাহ্ তোমাদিগকে কালালাহ এর মীরাস সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশ বাতলে দিচ্ছেন, যদি কোন পুরুষ মারা যায় এবং তার কোন সন্তানাদি না থাকে এবং এক বোন থাকে, তবে সে পাবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধেক অংশ এবং সে যদি নি:সন্তান হয়, তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে| তা দুই বোন থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ| পক্ষান্তরে যদি ভাই ও বোন উভয়ই থাকে, তবে একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর সমান| তোমরা বিভ্রান্ত হবে আল্লাহ্ তোমাদিগকে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন| আর আল্লাহ্ হচ্ছেন সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত|”  

Ø আল্লাহর বিধান হলো - মৃত ব্যক্তির সম্পদের হিস্যা পাবেন তাঁর উত্তরাধিকারীরা।

মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির উত্তরাধিকার প্রশ্নে কুরানের (আল্লাহর) এই সকল বিধান অত্যন্ত স্পষ্ট। অন্যদিকে আবু বকরের দাবি, "আমি শুনেছি, আল্লাহর নবী বলেছেন, 'আমাদের সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তর উচিত নয়, যা আমরা (অর্থাৎ নবীরা) রেখে যাই তা হয় সাদাকা যা ব্যবহার করতে হয় দান খয়রাতের জন্য"; তাঁর এই দাবির সপক্ষে একটি বাণীও কুরানের কোথাও নেই। 

সুতরাং, কুরান সাক্ষ্য দিচ্ছে, মুহাম্মদের রেখে যাওয়া সুবিশাল সম্পত্তির উত্তরাধিকার প্রশ্নে নবী-কন্যা ফাতিমা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের, মুহাম্মদের অন্যান্য একান্ত নিকট-আত্মীয়দের ও আয়েশা ছাড়া মুহাম্মদের অন্যান্য নবী পত্নীদের (পর্ব-১০৮) দাবি ন্যায্য।

(২) যুক্তিবিদ্যার প্রাথমিক পাঠ হলো, “যিনি দাবিদার, প্রমাণের দায়িত্ব তাঁর!"

>>> মুহাম্মদের আল্লাহর বিধান অনুযায়ী, মুহাম্মদের রেখে যাওয়া বিশাল সম্পদের ন্যায্য উত্তরাধিকারী ছিলেন তাঁর একান্ত পরিবারের সদস্য ও নিকট-আত্মীয়রা। এই বিধানের ব্যতিক্রম হতে পারে যে-কারণে, তা হলো, যদি মৃত ব্যক্তিটি তাঁর জীবদ্দশায় কোন অছিয়্যত করে যান।

মুহাম্মদের ভাষায় (কুরান),
২:১৮০-১৮২- “তোমাদের কারো যখন মৃত্যুর সময় উপস্খিত হয়, সে যদি কিছু ধন-সম্পদ ত্যাগ করে যায়, তবে তার জন্য ওসীয়ত করা বিধিবদ্ধ করা হলো, পিতা-মাতা ও নিকটাত্নীয়দের জন্য ইনসাফের সাথে পরহেযগারদের জন্য এ নির্দেশ জরুরী| যদি কেউ ওসীয়ত শোনার পর তাতে কোন রকম পরিবর্তন সাধন করে, তবে যারা পরিবর্তন করে তাদের উপর এর পাপ পতিত হবে| যদি কেউ ওসীয়তকারীর পক্ষ থেকে আশংকা করে পক্ষপাতিত্বের অথবা কোন অপরাধমূলক সিদ্ধান্তের এবং তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়, তবে তার কোন গোনাহ্ হবে না|”

৫:১০৬- “হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যখন কারও মৃত্যু উপস্খিত হয়, তখন ওছিয়ত করার সময় তোমাদের মধ্য থেকে ধর্মপরায়ন দুজনকে সাক্ষী রেখো| তোমরা সফরে থাকলে এবং সে অবস্খায় তোমাদের মৃত্যু উপস্খিত হলে তোমরা তোমাদের ছাড়াও দু ব্যক্তিকে সাক্ষী রেখো| যদি তোমাদের সন্দেহ হয়, তবে উভয়কে নামাযের পর থাকতে বলবে| অত:পর উভয়েই আল্লাহ্র নামে কসম খাবে যে, আমরা এ কসমের বিনিময়ে কোন উপকার গ্রহণ করতে চাই না, যদিও কোন আত্নীয়ও হয় এবং আল্লাহ্র সাক্ষ্য আমরা গোপন করব না| এমতাবস্খায় কঠোর গোনাহগার হব|”  

Ø আদি উৎসের বর্ণনায় যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো - মুহাম্মদের তাঁর রেখে যাওয়া সুবিশাল সম্পত্তির ব্যাপারে কোন "লিখিত" ওসীয়ত ('উইল') করে গিয়েছিলেন, এমন বর্ণনা কোথাও উল্লেখিত হয়নি। কুরানের বিধান অনুযায়ী, মৃত মুহাম্মদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হলেন তাঁর একান্ত নিকট-আত্মীয় ও পরিবারের সদস্যরা। আবু বকর তাঁদেরকে সেই ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে মুহাম্মদের সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছিলেন যে দাবির ভিত্তিতে, তা হলো, "আমি শুনিয়াছি -----।" এ ক্ষেত্রে দাবিদার হলেন, "আবু বকর", তাই তাঁর এই দাবি প্রমাণ করার দায়িত্ব একমাত্র তারই! মুহাম্মদের উত্তরাধিকারীদের কাছে "প্রমাণ নিশ্চিত না করে" তিনি কোনোভাবেই মুহাম্মদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কোনো অধিকারই রাখেন না। কিন্তু তিনি তা করেছিলেন, ক্ষমতার মসনদে বসার পরেই! আবু বকর তাঁর দাবির সপক্ষে শুধু যে কোনো প্রমাণ দাখিল করেননি, তাইই নয়, উল্টো মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদেরই কাছেই প্রমাণ দাবি করেছিলেন! আবু বকরের এই অন্যায্য দাবিও নবী কন্যা ফাতিমা পূরণ করেছিলেন। তিনি প্রমাণ হাজির করেছিলেন; আল্লাহর বিধান অনুযায়ী, "দুই জন পুরুষ" সাক্ষীই যথেষ্ট। তিনি হাজির করেছিলেন 'দুইজন পুরুষ ও একজন নারী সাক্ষী।" তার পরেও আবু বকর ফাতিমার কাছে তাঁর পিতার সম্পত্তি ফেরত দেননি। তিনি কীভাবে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বলেছিলেন, তার আলোচনা গত পর্বে (পর্ব-১৫৬) করা হয়েছে। আল্লাহর রেফারেন্সে এই ধরনের লোকদের বিরুদ্ধে মুহাম্মদের কঠোর ভাষা (কুরান),

৪:১৩৫- “হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহ্র ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্নীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও| কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ্ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশী| অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না| আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ্ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কেই অবগত|”

সুতরাং, আবু বকর ইবনে কুহাফা যে-অজুহাতে মুহাম্মদের একান্ত পরিবার সদস্যদের উত্তরাধিকারীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ইতিহাসের সূচনা করেছিলেন, তা ছিলো এক প্রহসন ও মুহাম্মদের পরিবারের প্রতি তাঁর চরম অবমাননা, অন্যায় ও প্রতিহিংসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত! শিয়া মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত ইসলাম বিশ্বাসীরা আবু বকর ইবনে কুহাফা ও উমর ইবনে খাত্তাব-কে বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তি হিসাবে আখ্যায়িত করেন (পর্ব-১৩২)। তাঁদের এই অভিযোগ যে ভিত্তিহীন নয়, তা সুন্নি মুসলমানদের লিখিত ইসলামের ইতিহাসেও অত্যন্ত স্পষ্ট।

মুহাম্মদের মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া ফাদাক, খায়বার ও মদিনায় অবস্থিত সুবিশাল সম্পত্তির উত্তরাধিকার প্রশ্নে 'আবু বকর-উমর গং ও ফাতিমা-আলী গং' এর এই বিরোধ ইসলামের ইতিহাসের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তা সত্ত্বেও সুন্নি মুসলমানদের অধিকাংশই এই ঘটনাটির বিষয়ে একেবারেই অজ্ঞ! এর কারণ হলো, ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসের গভীর ও অন্ধকার ঘটনা পরম্পরার একটি, যার শুরু হয়েছিল মুহাম্মদের সর্বশেষ অসুস্থতার সময় ও তাঁর মৃত্যুর ঐ দিনটিতেই। তাঁর মৃত্যুর দিন ও তার অব্যবহিত পরে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের নিরপেক্ষ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই বিষয়গুলোর স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া সম্ভব। মুহাম্মদের খায়বার ও ফাদাক আগ্রাসনকালে লুণ্ঠিত সম্পত্তির আলোচনায় তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকার প্রশ্নে আবু বকর-উমর গং  ফাতিমা-আলী গং-এর এই বিরোধের আলোচনা প্রাসঙ্গিক, তাই তা 'ফাদাক আগ্রাসন' অনুচ্ছেদে সংযুক্ত করা হয়েছে। মুহাম্মদের ঘটনাবহুল নবী-জীবনের ঘটনাপ্রবাহের আলোচনার ধারাবাহিকতা ব্যাহত হওয়ার কারণে হয়তো এই মুহূর্তে অধিকাংশ পাঠকের পক্ষেই এই বিষয়গুলোর 'স্বচ্ছ ধারণা' পাওয়া দুরূহ। মুহাম্মদের মৃত্যুকালীন অসুস্থতার সময়, তাঁর মৃত্যুর দিন ও তার অব্যবহিত পরের ঘটনা প্রবাহের ধারাবাহিক আলোচনা (পরবর্তীতে যথা সময়ে করা হবে) শেষে এই বিষয়গুলোর 'স্বচ্ছ ধারণা' পাওয়া সহজ হবে।

[কুরানের উদ্ধৃতি সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হারাম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা  থেকে নেয়া, অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর।  কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট ইংরেজি অনুবাদকারীর ও চৌত্রিশ-টি বিভিন্ন ভাষায় পাশাপাশি অনুবাদ এখানে]

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন