আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

মঙ্গলবার, ২ মে, ২০১৭

চিঠি-হুমকি - ৭: হিরাক্লিয়াসের শেষ প্রস্তাব!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব-১৬৮): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত বিয়াল্লিশ

 লিখেছেন গোলাপ

(আগের পর্বগুলোর সূচী এখানে)
"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর চিঠি-হুমকিটি পাওয়ার পর বাণিজ্য-কর্মে  সিরিয়ায় অবস্থানকারী কুরাইশ দলপতি আবু সুফিয়ান বিন হারব ও তাঁর সঙ্গীদের রাজদরবারে ডেকে নিয়ে এসে অতি অল্প সংখ্যক প্রশ্নের জবাব জানার পর রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস মুহাম্মদ সম্বন্ধে যে "অভিমত" ব্যক্ত করেছিলেন, তার প্রতিবাদে দরবারে উপস্থিত তার সকল পরিষদবর্গ কীরূপ প্রচণ্ড চিৎকার ও শোরগোল শুরু করেছিলেন; পরবর্তীতে যখন হিরাক্লিয়াস তার সমস্ত উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের দরবারে হাজির করে তার সেই অভিমতটি আবারও প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন, তখন তিনি তাদের ভয়ে কীরূপ ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন; যখন তিনি তার সেই অভিমতটি তাদের জানিয়েছিলেন, তখন একটিও ব্যতিক্রম ছাড়া তার সকল উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ কীরূপ আচরণ করেছিলেন, তিনি তাদের কীভাবে শান্ত করেছিলেন; হিরাক্লিয়াসের চেয়েও উচ্চ-মর্যাদাশালী দাঘাতির নামের এক খ্রিষ্টান যাজক যখন জনগণদের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে হিরাক্লিয়াসের অভিমতেরই হুবহু অভিমত প্রকাশ করেছিলেন, তখন দাঘাতিরের কী পরিণতি হয়েছিলো; ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।
"হিরাক্লিয়াসের কাছে মুহাম্মদের চিঠি" উপাখ্যানের গত চারটি পর্বের বর্ণনায় যে বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো: সম্রাট হিরাক্লিয়াস, রোমে অবস্থানকারী তার বন্ধু, কিংবা যাজক দাঘাতির - এদের কেউই "'আহমদ’ নামটি ও এই নামের কোনো ভবিষ্যৎ নবীর আকার-আকৃতি-চরিত্র-বংশমর্যাদা-অনুসারী বৃত্তান্ত (পর্ব: ১৬৬)", ইত্যাদি বিষয়গুলো বাইবেলের কোথায় (কোন-শ্লোকে) উল্লেখিত আছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ হাজির করেননি। হিরাক্লিয়াসের কোনো পরিষদবর্গ, উচ্চপদস্থ কর্মচারী কিংবা জনগণের কেউই শুধু যে তাদের এই অভিমতের সাথে একমত হননি, তাইই নয়, তারা তাদের প্রচণ্ড বিরোধিতা করেছিলেন।
আল-তাবারীর (৮৩৮-৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ) অব্যাহত বিস্তারিত বর্ণনা: [1] [2] 
ইবনে হুমায়েদ < সালামাহ < মুহাম্মদ ইবনে ইশাক < খালিদ বিন ইয়াসার < এক অত্যন্ত প্রবীণ সিরিয়া-বাসী হইতে বর্ণিত, যিনি বলেছেন:
সিরিয়া ভূখণ্ড থেকে কনস্টান্টিনোপল [বর্তমান ইস্তাম্বুল] অভিমুখে যাওয়ার জন্য যখন হিরাক্লিয়াস প্রায় প্রস্তুত, আল্লাহর নবী সম্পর্কিত প্রতিবেদনটি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি রোমানদের সমবেত করেন ও বলেন:
"হে রোমান জনগণ, আমি আপনাদের কাছে কিছু বিষয় উপস্থাপন করবো। আমি যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে, তা আপনারা বিবেচনা করুন।" তারা জিজ্ঞাসা করে, "সেগুলো কী?"
তিনি বলেন, "ঈশ্বরের কসম, আপনারা জানেন যে, এই ব্যক্তিটি হলো একজন নবী, যাকে প্রেরণ করা হয়েছে। তাকে আমরা খুঁজে পাই আমাদের গ্রন্থে। আমরা তাকে জানি তার বিবরণের পরিপ্রেক্ষিতে, যার বিবরণ আমাদের বর্ণনা করা হয়েছে। আসুন আমরা তাকে অনুসরণ করি, যাতে আমরা ইহকাল ও পরকালের জীবনে নিরাপত্তা পেতে পারি।" 
তারা বলে, "যেখানে আমাদের আছে মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ রাজত্ব, অসংখ্য জাতি-গোষ্ঠী ও শ্রেষ্ঠ ভূখণ্ড, সেখানে আমরা কি আরবদের অধীনে থাকবো?"
তিনি বলেন, "তাহলে আপনারা আমাকে এই অনুমোদন দিন যে, আমি যেন প্রতি বছর তার কাছে রাজস্ব ('জিযিয়া') পৌঁছে দিই, যাতে তাকে দেয়া আমার এই অর্থের বিনিময়ে আমি তার আক্রমণের প্রচণ্ডতা ব্যাহত করে দুঃশ্চিন্তামুক্ত হওয়ার পথ পেতে পারি।" 
তারা বলে, "মানবজাতির সর্বাধিক সংখ্যক জাতিগোষ্ঠী, সর্বশ্রেষ্ঠ রাজ্য ও সবচেয়ে দুর্জয় ভূখণ্ডের অধিকারী হওয়ার পর ও আমরা কি আরবদেরকে (আমাদের নিজেদের) ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে আমরা আমাদের অপমান ও অবমাননা স্বীকার করে নিতে পারি? ঈশ্বরের কসম, আমরা তা কখনোই করবো না।"
তিনি বলেন, "তাহলে আপনারা আমাকে এই অনুমোদন দিন যে, আমি যেন তার সাথে শান্তিচুক্তি করতে পারি এই শর্তে যে, আমি আমার সিরিয়া ভূখণ্ডটি তাকে দিয়ে দিই, আর সে আমাকে 'আল-শাম' আমার অধিকারে ছেড়ে দেবে।" 
(প্রাচীন সিরিয়া ভূখণ্ড-টি ছিল প্যালেস্টাইন, জর্ডান, দামেস্ক, হিমস ও সিরিয়ার আর যে সমস্ত ভূখণ্ড আল-দারব (al-Darb) পর্যন্ত অবস্থিত অঞ্চলগুলো; আর আল-দারবের ওপারের সমস্ত অঞ্চলগুলোকে আল-শাম এর অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হতো)। [3]
তারা তাকে বলে, "সিরিয়া ভূখণ্ডটি আল-শামের কেন্দ্রবিন্দু জানা সত্ত্বেও কি আমরা তাকে তা দিয়ে দেবো? ঈশ্বরের কসম, আমরা তা কখনোই করবো না।"  
তাদের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তিনি বলেন,
"ঈশ্বরের কসম, আপনারা দেখতে পাবেন যে, যদি আপনারা তার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেন, তবে আপনারা আপনাদের নিজেদের শহরেই পরাজিত হবেন।"
অতঃপর তিনি তার এক খচ্চরের পিঠে সত্তয়ার হন ও প্রস্থান করেন। যখন তিনি আল-দারব এলাকায় আসেন, তিনি আল-শাম ভূখণ্ডের দিকে ফিরে তাকান ও বলেন, "হে সিরিয়া ভূখণ্ড, তোর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক!" - বিদায়, অতঃপর তিনি দ্রুতবেগে কনস্টান্টিনোপল প্রত্যাবর্তন করেন।'
- অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ - লেখক।
>>> আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় যে-বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো, মুহাম্মদের চিঠি-হুমকিটি পাওয়ার পর হিরাক্লিয়াস ছিলেন অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত ও ভীত-সন্ত্রস্ত! তিনি তাঁর ভয়ে এতটায় ভীত সন্ত্রস্ত ছিলেন যে, তিনি যে কোনো উপায়ে তাঁকে সন্তুষ্ট করতে চেয়েছিলেন, এমনকি তা যদি হয় প্রতিবছর 'জিযিয়া' কর পরিশোধ কিংবা সিরিয়া ভূখণ্ডটির সম্পূর্ণই মুহাম্মদের কাছে হস্তান্তর করার বিনিময়েও! উদ্দেশ্য, তবুও যেন তিনি মুহাম্মদের আক্রমণের প্রচণ্ডতা থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন, দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারেন।
"সম্রাট হিরাক্লিয়াস যদি মুহাম্মদের নেতৃত্বে নব্য এই আরব শক্তির ব্যাপারে কোন পূর্বধারণা না রাখতেন, তবে কেন তিনি মুহাম্মদের ভয়ে ছিলেন এতো ভীত-সন্ত্রস্ত?”
ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে আল-তাবারীর প্রাসঙ্গিক মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি:

The narratives of Al-Tabari (838-923 AD):
‘According to Ibn Humayd – Salamah - Muhammad b. Ishaq - Khalid b. Yasar -a very old Syrian, who said: When Heraclius was about to leave the land of Syria for Constantinople because of the report he had received about the Messenger of God, he assembled the Romans and said: "People of the Romans, I shall present certain matters to you. Consider what I have decided." "What are they?" they asked. He said: "You know, by God, that this man is a prophet who has been sent. We find him in our book. We know him by the description whereby he has been described to us. Let us follow him, that our life in this world and the next may be secure." They said, "Shall we be under the hands of the Arabs, when we are mankind's greatest kingdom, most numerous nation, and best land?" He said, "Then let me give him tribute each year, so that I can avert his vehemence from me and find rest from his warfare by means of money that I give to him." They said: "Shall we concede to the Arabs [our own] humiliation and abasement by a tax that they take from us, when we are mankind's most numerous nation, greatest kingdom, and most impregnable land? By God, we will never do it!" He said, "Then let me make peace with him on condition that I give him the land of Syria and that he leave me with the land of al-Sha'm." [The land of Syria was the land of Palestine, Jordan, Damascus, Hims, and whatever of the land of Syria was on this side of al-Darb, while they considered whatever was beyond al-Darb to be al-Sha'm.] They said to him: "Shall we give him the land of Syria, when you know that it is the navel of al-Sha'm? By God, we will never do it!" They having refused him, he said,
"By God, you shall see that, if you hold back from him, you will be defeated in your own city." 
Then he mounted a mule of his and departed. When he came in sight of al-Darb, he turned toward the land of al-Sha'm and said, "Peace be with you, land of Syria!" - a farewell salutation - and galloped back to Constantinople.’
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা: 
[1] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮, ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৬৭-১৫৬৮; বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক:
[2] অনুরূপ বর্ণনা: “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৬৫৬-৬৫৭; বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক:
[3] Ibid আল-তাবারী, নোট নম্বর ৪৫৫, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৬৮
‘প্রাচীন 'আল-দারব' শহরটির অবস্থান ছিল সিলিসিয়ান গেটের অদূরে, আনাটোলিয়া ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী প্রধান গিরিপথ।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন