আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শুক্রবার, ২ জুন, ২০১৭

এমন তো কথা ছিল না ভাই!

উজান কৌরাগ
ধর্মীয় উন্মাদনা-হানাহানির এই যুগে মুক্তচিন্তায়-যুক্তিতে-বিজ্ঞানে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে আলোর পথ দেখানো এবং মুক্তচিন্তার প্রসারের জন্য ধর্মগ্রন্থের মিথ্যা কল্পকাহিনী ভরা অন্ধকার দিকগুলো বিজ্ঞান ও যুক্তির মাধ্যমে উন্মোচন করা যেমনি প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন এসব লেখালেখি প্রচারের মাধ্যমেরও। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে বাংলাভাষায় তেমন মাধ্যম খুবই কম। এর কারণ এই যে কেউ ঝঁকিপূর্ণ ও কণ্টকাকীর্ণ পথে হাঁটতে চায় না। অধিকাংশ মানুষ সমাজের বাঁধা রাস্তায় চলতে চায়। এই জায়গায় ব্যতিক্রম ছিলেন মাহমুদুন নবী। প্রবাসে বসেও ধর্মকারীর মতো একটি মুক্তচিন্তার প্রদীপ তিনি জ্বালিয়ে রেখেছিলেন। চাইলে বাংলাদেশ-সমাজ-সমাজের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ নিয়ে না ভেবে আর পাঁচজন প্রবাসীর মতো আরামে-সুখে-স্বাচ্ছন্দে জীবন পার করতে পারতেন। কিন্তু তা চাননি তিনি। প্রবাসে বসেই তার সাধ্যের সবটুকু দিয়ে চেয়েছেন নিজ জন্মভূমির মানুষকে আলোকিত করতে-মানবিক দীক্ষা দিতে। বাঙালীদের মধ্যে তধাকথিত জনপ্রিয় বা বিখ্যাত মানুষ অনেক জন্মে, যারা অন্ধকারের সাথে পা মিলিয়ে পথ চলে; কিন্তু অন্ধকার তাড়ানোর মতো মানুষ খুব বেশি জন্মে না। অন্ধকার তাড়িয়ে আলোকিত সমাজ গড়ার লক্ষেই বিদেশে থেকেও গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি একাই চালাতেন ধর্মকারী ব্লগ। দূর্ভাগ্য আমাদের, গত ১৯ মে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।


আমার কাছে তিনি মাহমুদুন নবী আর ধর্ম পচারক নামেই পরিচিত ছিলেন। তিনি কখনো জানতে চাননি যে উজান কৌরাগ নামের আড়ালের মানুষটি কে, তেমনি আমিও জানতে চাইনি তার আসল পরিচয়। শুধু জানতাম তিনি ইয়োরোপ প্রবাসী। এভাবেই আমাদের কথা হয়েছে অনেকদিন। মনের মধ্যে অস্পষ্ট হলেও তার একটা অবয়ব কল্পনা করে নিয়েছিলাম। বয়স ভেবেছিলাম চল্লিশ, তার চলে যাবার পর জানতে পারলাম পঞ্চান্ন'র ওপরে বয়স হয়েছিল। কী-ই বা এমন বয়স!

আমি টেকনিক্যালি বেশ দূর্বল, বহুদিন-বহুবার তার সাহায্য চেয়েছি, নিরাশ করেননি কখনো। নানাভাবে সাহায্য করেছেন। আমার উপন্যাস সাইমুম নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন, প্রত্যেকটা পর্ব খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে পড়তেন, বানান সংশোধন করতেন, তথ্যগত কোনো ভুল বা অসংঙ্গতি থাকলে ঠিক করে নিতেন। এপ্রিল মাসের ২০ তারিখের মধ্যে সাইমুম'র পাণ্ডুলিপি দেবার কথা ছিল ই-বুক প্রকাশ করার জন্য, দিইনি। আরো একবার সম্পাদনার জন্য বলেছিলাম মে মাসের ১০ তারিখের মধ্যে দেব, তাও দিইনি। কিছু জায়গায় পুনরায় চোখ বুলানোর জন্য সময় চেয়েছিলাম। বললেন, 'কোনো তাড়া নেই। আপনি সময় নিন, কাজটা যথাসম্ভব নিঁখুত হওয়া দরকার।'

শেষ পর্যন্ত যখন পাণ্ডুলিপি পাঠালাম, তখন আর তার কোনো সাড়া নেই। তিনি সাড়া দেবেন না আর কোনোদিন!

যতোদিন বেঁচে থাকবো একটা আপসোস আর যন্ত্রণা আমার থেকে যাবে যে সম্পাদনা করার পর সাইমুম কেমন দাঁড়ালো তা তিনি দেখে যেতে পারলেন না।

এমন তো কথা ছিল না নবী ভাই, আমি না হয় কথা রাখতে পারিনি, বারবার সময় নিয়েছি, তাই বলে আপনিও কথা না রেখে এভাবে চলে যাবেন! আপনার উৎসাহেই সাইমুম যা হওয়ার কথা ছিল তার চেয়ে অধিক হয়েছে, আর আপনি সেটা প্রকাশ না করেই চলে গেলেন! চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে ভাই, অথচ অনেক আত্মীয়ের মৃত্যু সংবাদও আমার চোখ থেকে এক ফোঁটা জল ঝরাতে পারেনি!

রক্তের সম্পর্কে আমি বিশ্বাস করি না। অথচ না দেখেও আপনাকে আমার পরমাত্মীয় মনে হতো, এমন আরো অনেককেই আত্মীয় মনে হয়, যাদের দ্বারা প্রতিনিয়ত আমি সমৃদ্ধ হই।

এই হারানোর বেদনার মাঝেও আশার কথা এই যে কয়েকজন বন্ধু উদ্যোগী হয়েছেন ধর্মকারীকে বাঁচিয়ে রাখতে, কাজ শুরু করেছেন। ধর্মকারী চালু হলে ধর্মকারীর মধ্যেই বেঁচে থাকবেন নবী ভাই, বেঁচে থাকবেন আমার মাঝে, আমার মতো আরো অনেকের মাঝে।

লিখতে বসলেই আপনার অনুপ্রেরণা মশাল হয়ে জ্বলবে আমার মাঝে। যতোদিন বেঁচে আছি আপনাকে হারিয়ে যেতে দেব না ভাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন