বুধবার, ১০ আগস্ট, ২০১১

একলব্যের গুরুভক্তি ও উচ্চবংশের ছলচাতুরী


লিখেছেন বোকা বলাকা 

একলব্য, নিষাদরাজ হিরণ্যধনুর পুত্র। তাঁর বড় ইচ্ছা একজন খ্যাতিমান যোদ্ধা হওয়ার। কিন্তু যোদ্ধা হতে হলে তো গুরু ধরতে হবে। কে সেই গুরু? তিনি জানতে পারলেন কুরু-পাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু দ্রোনাচার্যই হতে পারেন এক্ষেত্রে উপযুক্ত গুরু। তিনি গেলেন আচার্যদেবের কাছে এবং মনের ইচ্ছাটা পাড়লেন। তাঁর কথা শুনে আচার্যদেব তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন।তিনি বললেন, একজন ম্লেছ (নিম্ন বর্ণ) তাকে অস্ত্রশিক্ষার কথা বলতে পারে এটা তিনি ভাবতেও পারেন না! অস্ত্রশিক্ষা তো তিনি দিলেনই না, উল্টো ঘর থেকে তাড়িয়ে দিলেন। 

কী আর করা, মনের দুঃখে বেচারা একলব্য আচার্যদেবের বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে চলে গেলেন বনে। ঘুরতে লাগলেন পশু-পাখির মত। কিন্তু বড় যোদ্ধা হওয়ার আশা তিনি ত্যাগ করতে পারলেন না। তিনি দ্রোণাচার্যের মাটির মূর্তি তৈরী ও সেই মূর্তিকেই আচার্য-রূপ জ্ঞান করে অস্ত্রাভ্যাসে কঠোর সাধনা শুরু করলেন। কিছুদিনের মধ্যেই অস্ত্রচালনায় তিনি যথেষ্ট পারদর্শী হয়ে উঠলেন। এক সময় দেখা গেল, একলব্য দ্রোনের ক্ষত্রিয় শিষ্যদের (কুরু-পাণ্ডবদের) চেয়েও বড় যোদ্ধা হয়ে গেছেন। 

একদিন পাণ্ডবরা একটি কুকুর সাথে নিয়ে সেই বনে মৃগয়া করতে গেলেন। সেই কুকুর একলব্যকে দেখে চিৎকার করছিল বলে একলব্য সাতটি শর নিক্ষেপ করে কুকুরটির মুখ বন্ধ করে দিলেন। পাণ্ডবরা একলব্যের এই কারিশমা দেখে বিস্মিত হয়ে তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে একলব্য নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন যে, তিনিও তাঁদের মত দ্রোণাচার্যের শিষ্য। এ কথা শুনে মধ্যম পাণ্ডব (অর্জুন) তার অস্ত্রগুরুর উপর তো রেগে আগুন। তাঁর অস্ত্রগুরু তাঁর সাথে প্রতারণা করেছেন। তিনি এত বড় অস্ত্রবিদ্যা একলব্যকে শিখালেন অথচ তিনি (অর্জুন) নাকি তাঁর প্রিয় শিষ্য?? এর কৈফিয়ত তাঁকে দিতেই হবে। 

তিনি চলে গেলেন অস্ত্রগুরু দ্রোনাচার্যের কাছে। তিনি গুরুকে বললেন যে, তিনি যদি দ্রোণের প্রিয় শিষ্য হন, তাহলে ওঁর অন্য শিষ্য একলব্য কী করে অর্জুনকে অতিক্রম করতে পারেন! দ্রোণ সেই কথা শুনে অর্জুনকে নিয়ে একলব্যের কাছে এলেন। একলব্যকে দ্রোণ বললেন যে, তিনি যদি ওঁর শিষ্য হন, তাহলে ওঁকে গুরুদক্ষিণা দিতে হবে। একলব্য তাতে সানন্দে সম্মত হলেন। তখন দ্রোণ ছলচাতুরী করে গুরুদক্ষিণা-স্বরূপ একলব্যের দক্ষিণ হস্তের বৃদ্ধাঙ্গুলীটি চাইলেন।গুরুভক্ত বোকা একলব্য সঙ্গে সঙ্গে নিজের দক্ষিণ হস্তের বৃদ্ধাঙ্গুলীটি ছেদন করে দ্রোণের হাতে তুলে দিলেন। ফলে একলব্যের সেই শরক্ষেপণ নৈপুন্যতা আর রইলো না। অর্জুন তার অস্ত্রগুরুর এহেন কারিশমা দেখে প্রীত হলেন।

এই যদি হয় উচ্চবংশীয় চাতুরতা, ধিক সে উচ্চবংশের আস্ফালনকে, ধিক সে মহাভারতের দাবীকৃত শ্রেষ্ঠ বীর অর্জুনকে। নিচু জাতের একলব্যের গুরুভক্তি পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করলো, আর উচ্চবংশীয় অর্জুন ও তার গুরু দ্রোনাচার্য ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপিত হলেন। কলংকিত হয়ে থাকলেন তাঁরা দু'জনে, আজও এবং ভবিষ্যতেও।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন