সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১২

ইসলামী ইতরামি: ঊনিশ-বিশ নেই

প্রথমে ইছলামীদের ক্রিসমাস 'উদযাপনের' কয়েকটি খবর:

১.

২.
ঈদ বা অন্য কোনও ইছলামী উৎসবের দিন মসজিদের পাশে গিয়ে ভিন্ন ধর্মের প্রচার করতে শুরু করলে কী ফলাফলটা কী হবে, তা তো সহজেই অনুমেয়। তবে ক্রিসমাসের প্রাক্কালে ইংল্যান্ডের সেইন্ট পল ক্যাথিড্রালের সামনে গিয়ে ইছলামীরা দিব্যি ধর্মপ্রচার করলো। ১.৪ মিনিটের ভিডিও।

৩.
চৌদি আজবে ঘরোয়াভাবে ক্রিসমাস পালনের প্রস্তুতি নিয়েছিল বিদেশীরা, কিন্তু আল্লাহর রহমতে তারা কামিয়াব হতে পারেনি। তাদেরকে আটক করা হয়েছে। 

৪.
শ'খানেক খ্রিষ্টান নির্মিতব্য চার্চের জন্য নির্ধারিত এলাকায় একত্র হয়েছিল ক্রিসমাস উদযাপনের লক্ষ্যে। সেখানে শ'দুয়েক মুছলিম হাজির হয়ে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে পচা ডিম ছুঁড়তে শুরু করে। অনেক জেনানাও তাতে অংশ নেয়। 

৫.
ইজরাইলে ক্রিসমাসের সময় এক দল মুছলিম চার্চে ঢুকে পড়ে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে ডিম ছুঁড়তে থাকে। বিশদ সংবাদ গুগল-অনুবাদে। 

৬. 
ইছলামবিরোধী চলচ্চিত্রের প্রতিবাদে যেমন প্রতিক্রিয়া হয় মুছলিমদের, 'মেরি ক্রিসমাস' শুনে তাদের প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত তার চেয়েও বেশি এক্সট্রিম। ৩.৩৩ মিনিটের ভিডিও।

৭. 
অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড়ো মসজিদ থেকে ফতোয়া জারি করা হয়েছিল: কাউকে 'মেরি ক্রিসমাস' বলে অভিনন্দন জানানো গুনাহর কাজ। পরে অবশ্য মসজিদের সাইট থেকে ফতোয়াটি সরিয়ে নেয়া হয়। 
(লিংকম্যান: সুকান্ত বিশ্বাস)

ওপরের ঘটনাগুলোর কোনও একটি যদি ঘটানো হতো ইছলামী উৎসবের সময়, সেটার পরিণতি কী হতে পারতো, কল্পনা করে নিন। এবারে অন্যান্য সংবাদ: 

৮.
একটি কার্টুন: মেঘের ওপরে আপেল গাছের তলে দাঁড়িয়ে আছে আদম আর হাওয়া। তাদের সামনে ফেরেশতার পাখা ও জ্যোতিশ্চক্র সম্বলিত এক মিসরীয় তাদেরকে বলছে, 'গণভোটের পক্ষে ভোট দিলে তাদেরকে কখনওই বেহেশত থেকে বহিষ্কার করা হতো না।' এই কার্টুনে আহত ধর্মানুনুভূতির ধারকেরা মামলা দায়ের করেছে কার্টুনিস্টের বিরুদ্ধে। 

৯.
ইসলাম ধর্ম সংশোধনের পরামর্শ দিয়ে টুইট করার অভিযোগে চৌদি আজবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক বুদ্ধিজীবীকে। 

১০.
ইছলামী শিক্ষার পরিপন্থী বলে বিল্ট-ইন ক্যামরা সম্বলিত মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ইছলামী যোদ্ধাদের গ্রুপ তালিবান। 

১১.
স্কুলের ড্রেস-কোড সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত থাকা সত্ত্বেও গ্রিসে একটি মুছলিম পরিবার স্কুলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেছে, কারণ স্কুল তার মেয়েকে হিজাব পরতে দিচ্ছে না। বুঝি না, এরা মেয়েকে মাদ্রাসায় না পাঠিয়ে কাফেরদের স্কুলে পাঠায় কেন? 

১২.
চৌদি আজবে ইছলামকে অপমান করার অভিযোগে এক ওয়েব পোর্টালের সম্পাদকের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।

১৩.
'আল্লাহপাক ইহুদিদের বংশবৃদ্ধি রোধ করতে চান এবং তিনি ইহুদি নারীদের সন্তানজন্মদানঅক্ষম (sterilized) বানিয়ে দেয়াটা সমর্থন করেন' - টিভিতে বললো তিউনিসিয়ার ইমাম। 

১৪.
এশিয়া-আফ্রিকার লক্ষ-কোটি মুসলিম অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করে, তবে মুছলিমরা বিশ্বব্যাপী মিলিয়ন-মিলিয়ন ডলারের মসজিদ বানাতে ব্যগ্র। এবার তারা এক বিলিয়ন (হ্যাঁ, বিলিয়ন) ডলার ব্যয় করবে নবীজিকে নিয়ে সাতটি মুভির একটি সিরিজ বানানোর পেছনে। কাফেরদের বানানো সেই বিতর্কিত ছবির উত্তর হিসেবে। অবস্থাদৃষ্টে এটাই প্রতীয়মান হয়ে ওঠে, অনাহারকিল্ষ্ট মানুষের চেয়ে নবীর ন্যাংটো পশ্চাদ্দেশ তাদেরকে অনেক বেশি পীড়িত করে।

১৫.
মিসরবাসী খ্রিষ্টানদের উদ্দেশে শান্তিকামী ও সহনশীল মুছলিম আহ্বান: "যে কোনও একটি বেছে নাও: হয় ইছলাম, নয় মৃত্যু।" আটচল্লিশ সেকেন্ডর ভিডিও। 

১৬.
'আমরা প্রয়োজনে ভীতি প্রদর্শন করে বিধর্মীদের নিয়ে আসবো ইছলামের পথে। তবে আমাদের কাউকে অন্য ধর্মে দীক্ষিত করলে তোমাদের খবরাছে!' মুছলিমকে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগে খ্রিষ্টান ধর্মযাজক গ্রেপ্তার। 

১৭.
ফেসবুকে ইশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দেয়ার 'অপরাধে' ইন্দোনেশীয় একজনের জেল হলো আড়াই বছরের। আবার সেই দেশেই মুছলিম মোল্লারা একাধিক শিশুকে যৌন নির্যাতন করলেও তাদের আটক পর্যন্ত করা হয় না। ইছলামী দেশ বলে কথা! 

নিচের খবর দুটো ঠিক ইতরামি নয়, বলা যায় - ইছলামী বিনুদুন। 

১৮.

১৯.
আজানের সময় বিমান উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করেছে ইরান। এ ব্যাপারে ধর্মকারীর লেখক লুক্স মন্তব্য করেছেন: শরিয়া আইন বেশিদিন থাকলে মানুষ পাগল হইতে বাধ্য।

চিত্রপঞ্চক - ৩৮

শেষের ছবিটা একটু ইয়ে-টাইপ। অতএব ইমোটা খিয়াল কৈরা! 

পাঠিয়েছেন টোস্টার
(ছবি দেখা না গেলে বিকল্প লিংক) 

(ছবি দেখা না গেলে বিকল্প লিংক)
পাঠিয়েছেন টোস্টার
(ছবি দেখা না গেলে বিকল্প লিংক) 

(ছবি দেখা না গেলে বিকল্প লিংক) 

(ছবি দেখা না গেলে বিকল্প লিংক)

ইসলামে বর্বরতা: নারী-অধ্যায় - ১৪

লিখেছেন আবুল কাশেম

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩

হিল্লা বিবাহ

এবার আমরা দৃষ্টি দেব ইসলামের আরও একটি বর্বর বিবাহপ্রথার ওপর। অনেকেই হয়ত এ ব্যাপারে কিছু না কিছু জেনে থাকবেন - কারণ গ্রামবাংলায় এই নির্মম ইসলামী প্রথাটি এখনও এই একবিংশ শতাব্দীতেও বহাল তবিয়তে আছে এবং অনেক পরিবারে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপারটা হচ্ছে এই প্রকার:

যখন স্বামী তার স্ত্রীকে ইসলামী পন্থায় স্থায়ী (অর্থাৎ তিন তালাক) দিয়ে দিলো, তারপর সেই স্ত্রী তার ভূতপূর্ব স্বামীর জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যাবে। স্বামী আর কিছুতেই সেই স্ত্রীর সাথে পুনরায় স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না; এমনকি সেই স্ত্রীকে বিবাহও করতে পারবে না। তবে এর মাঝে হেরফের আছে। তা হচ্ছে এই যে, ঐ তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে অন্য কোনো পুরুষের সাথে বিবাহে বসতে হবে। তারপর তাদের মাঝে যৌনসঙ্গম হতে হবে। এরপর এই দ্বিতীয় অস্থায়ী স্বামী মহিলাটিকে তিন তালাক দেবে। মহিলাটি তিন মাসের ইদ্দত করবে এবং যদি সে গর্ভবতী না হয়, তখনই তার ভূতপূর্ব স্বামী তাকে আবার বিবাহ করতে পারবে। যদি মহিলাটি অস্থায়ী স্বামী দ্বারা গর্ভবতী হয়ে পড়ে, তবে এব্যাপারে ইসলামী কায়দা পালন করতে হবে, যা আগেই লেখা হয়েছে। অনেক ইসলামীই এ ব্যাপারে খুব উৎফুল্লতা প্রকাশ করেন এই বলে যে: দেখুন, ইসলাম কতনা ন্যায় বিচার করছে। এই হিল্লা প্রথা মহিলাকে আরও একটি সুযোগ দিল অন্য স্বামীর ঘর করার। ইসলামীরা এও বলেন যে, এই হিল্লা প্রথার জন্যই পুরুষেরা যত্রতত্র তালাক দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।

কিন্তু ইসলামীদের এই সব আবোলতাবোল কতই না হাস্যকর। স্বামী দিল স্ত্রীকে তালাক, কিন্তু তার ভুক্তভোগী স্ত্রীকে কেন আবার বিবাহ করতে হবে এক বেগানা পুরুষকে যদি তার ভূতপূর্ব স্বামী চায় তার পূর্বের স্ত্রীর সাথে একটা সমঝোতা করে নিতে? কিসের বাধা এতে? কেনই বা ভূতপূর্ব স্ত্রীকে আবার যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে অন্য এক পুরুষের সাথে? এটা কি স্ত্রীকে সাজা দেওয়া হল না? এই সাজা তো স্বামীরই পাওয়া উচিত ছিল। কারণ সেই তো তালাক দিয়েছিল।

যাই হোক, আমরা এখন দেখব কোরান ও হাদিস কী বলছে হিল্লা বিবাহ সম্পর্কে।
কোরান সুরা বাকারা আয়াত ২৩০ (২:২৩০):
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয় বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করতে কোন পাপ নেই, যদি আল্লাহ্‌র হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হল আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা, যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।
এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল যে, হিল্লা বিবাহে অস্থায়ী স্বামীর সাথে মহিলাকে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হতেই হবে। তা না হলে এই হিল্লা বিবাহ সহিহ হবে না। যদি নামকা ওয়াস্তে এই হিল্লা বিবাহ, যা সাধারণত মসজিদের ইমাম অথবা কর্মচারীর সাথে হয়ে থাকে, তবে তা মোটেই সিদ্ধ হবে না। এই আইন যেহেতু কোরানে লিখিত, তাই বিশ্বের কারও সাধ্যি নাই যে এই আইনের রদবদল করে। এর রদের জন্য দুনিয়ার সমগ্র মুসলিম নারীরা জীবন দিয়ে ফেললেও কারও কিছু করার নেই। এটা হচ্ছে এমনই পরিস্থিতি, যেমন হচ্ছে ইসলামী উত্তরাধিকারী আইন—যথা মেয়ে পাবে ছেলের অর্ধেক। এই আইনও চিরকালের। বিশ্বের কোন শক্তি নেই আল্লাহ্‌র এই আইনের পরিবর্তন করতে পারে।

হিল্লা বিবাহের ব্যাপারে দেখা যাক একটি হাদিস।
মালিকের মুয়াত্তা: হাদিস ২৮. ৭. ১৮
ইয়াহিয়া—মালিক—ইয়াহিয়া ইবনে সাইদ—আল কাশিম ইবনে মুহাম্মদ থেকে। ইয়াহিয়া বললেন রসুলুল্লাহর স্ত্রী আয়েশা (রঃ) কে বলা হল: এক স্বামী তার স্ত্রীকে স্থায়ীভাবে তালাক দিয়েছে। সেই স্ত্রী অন্য এক পুরুষকে বিবাহ করল। সেই পুরুষ মহিলাকে তালাক দিয়ে দিল। মহিলাটির আগের স্বামী তার তালাক দেওয়া স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করতে পারবে কি না? বিবি আয়েশা উত্তর দিলেন ততক্ষণ হবে না যতক্ষণ না সে মহিলাটি ঐ পুরুষটির সাথে যৌন সঙ্গমের মিষ্টি স্বাদ উপভোগ করেছে।
এই হচ্ছে হিল্লা বিবাহের মর্মকথা।

মুসলিম নারীদের যৌনসঙ্গম উপভোগ করার অধিকার আছে কি?

আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ইসলাম স্বীকার করে নিয়েছে যে, অন্যান্য নারীদের মত মুসলিম নারীদেরও যৌনক্ষুধা রয়েছে এবং সেই ক্ষুধার নিবৃত্তির প্রয়োজন। কিন্তু এ ব্যাপারে আল্লাহ্‌ বড়ই সজাগ এবং অতিশয় কৃপণ। ইসলাম কোনোমতেই চায় না যে, মুসলিম নারীদের দমিত রাখা যৌনক্ষুধা বিস্ফোরিত হোক। তাই তো মুসলিম নারীদের যৌনাঙ্গ ও শরীরের প্রতি এত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিতে হচ্ছে। এই জন্যই মুসলিম নারীর যৌনতার ব্যাপারে এত ঢাক ঢাক গুঢ় গুঢ় - যেন কোনোক্রমেই একজন মুসলিম নারী তার ইচ্ছেমত তার যৌনতা উপভোগ করতে না পারে। সেই জন্যেই না করা হয়েছে কত অমানুষিক বর্বর শারিয়া আইনকানুন, যার একমাত্র কারণ - যেমন করেই হোক, নারীর এই দুর্নিবার ক্ষুধাকে চেপে রাখতেই হবে।

কিন্তু অন্যায় যে আরও ব্যাপক। আমরা দেখেছি, শারিয়া আইন বলছে চাহিবামাত্র স্ত্রীকে তার দেহদান করতে হবে স্বামীকে। কিন্তু এই নিয়মটা স্ত্রী তার স্বামীর ওপর প্রয়োগ করতে পারবে না। একজন মুসলিম স্ত্রীকে অপেক্ষা করতে হবে, কখন তার স্বামী তার (স্ত্রীর) যৌনক্ষুধা মেটাতে প্রস্তুত - অর্থাৎ স্ত্রী চাইলেই স্বামীর কাছে যৌনসঙ্গম আশা করতে পারবে না। স্ত্রীর তীব্র যৌনক্ষুধা জাগলেও সে তা মুখ ফুটে স্বামীকে জানাতে পারবে না। যৌনউপভোগের একমাত্র নায়ক ও পরিচালক হচ্ছে স্বামী। স্ত্রী হচ্ছে মেঝেতে পড়ে থাকা চাটাই। স্বামী সেই চাটাইয়ে বীর্যপাত করলেই যৌনসঙ্গম সমাপ্ত হয়ে গেল। মোটামুটি এইই হল ইসলামী যৌনসঙ্গম। এখানে নারীর ভূমিকা নিতান্তই নগণ্য - একেবারেই নেই বলা চলে। যেখানে স্বামীকে যৌনসঙ্গমের কত ব্যবস্থাই ইসলাম দিয়েছে, যথা এক সাথে চার স্ত্রী, অসংখ্য যৌনদাসী, অগণিত যুদ্ধবন্দিনী…ইত্যাদি; সেখানে স্ত্রীকে সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতে হচ্ছে মাত্র একজন পুরুষের ওপর - তার স্বামী, আর কারও ওপর নয়। কোনো মুসলিম নারীর কি এমন বুকের পাটা আছে যে, শারীয়া আইন অমান্য করে তার ইচ্ছামত যৌনক্ষুধা মেটাবে? এই কাজ করলে যে তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে!

আসুন আমরা এখন দেখি শারিয়া আইন কি বলছে মুসলিম নারীদের যৌন ক্ষুধা নিয়ে।
শারিয়া আইন এম ৫.২ (উমদাত আল সালিক, পৃঃ ৫২৫, ইমাম গাজ্জালী হতে):
স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করবে চার রাতে এক বার। কেননা স্বামীর হয়ত চার বিবি থাকতে পারে। স্ত্রীকে এর জন্য এই দীর্ঘ অপেক্ষা করতেই হবে। যদি সম্ভব হয় তবে স্বামী এর চাইতে অধিক অথবা কম সঙ্গমও করতে পারে। এমন ভাবে স্ত্রীর সঙ্গমের চাহিদা মিটাতে হবে যেন স্ত্রী চরিত্রবতী থাকে, তার যৌন ক্ষুধা আর না জাগে। এর কারণ এই যে, স্বামীর জন্য এটা বাধ্যতামূলক যে তার স্ত্রী যেন সর্বদা চরিত্রাবতী থাকে।
(চলবে)

আমার বোরখা-ফেটিশ – ৭১

(ছবি দেখা না গেলে বিকল্প লিংক)

ফ্যাশনদুরস্ত বোরখা: পাঠিয়েছেন সাদিয়া সুমি
(ছবি দেখা না গেলে বিকল্প লিংক)

যুক্তির কাঠগড়ায় কুরান-হাদিস - ০২

লিখেছেন রাইট হার্ট

যুক্তি – ৩ 

ইসলামে বর্ণিত সৃষ্টিকর্তা ‘আল্লাহ’ কর্তৃক প্রেরিত কুরানের দু'টি আয়াত দেখুন ~
So blessed is Allah, the best of creators.
এ সবই আল্লাহর আশীর্বাদ, যিনি সৃষ্টিকর্তাদের মাঝে অন্যতম।
(Quran 23:14) 
Do you call upon Ba'l and leave the best of creators – 
তোমরা কি বা’আল দেবতার এবাদত করবে এবং সর্বোত্তম স্রষ্টাকে পরিত্যাগ করবে।
(Quran 37:125) 
উক্ত আয়াতদ্বয়ে ব্যবহৃত আরবি শব্দ l-khāliqīna এর ইংলিশ প্রতিশব্দ Creators অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার বহুবচন। এখানে আল্লাহ নিজেই নিজেকে অন্যান্য সৃষ্টিকর্তা থেকে শ্রেষ্ঠ বা অন্যতম বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন। প্রশ্ন হল, সৃষ্টিকর্তা আসলে কতজন? নাকি ‘আল্লাহ’ খ্রিষ্টানদের ‘গড’ বা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ‘কৃষ্ণ’-র অস্তিত্বও স্বীকার করে নিচ্ছেন? বিষয়টার সহজ ব্যাখ্যা মেলে যদি ধরে নেই, মুহম্মদ তার সৃষ্ট চরিত্র ‘আল্লাহ’-কে তৎকালীন মূর্তিপূজক সমাজে প্রতিষ্ঠা পাবার জন্য আল্লাহকে দিয়েই নিজের বাণী আনিয়েছেন যে উক্ত ‘আল্লাহ’ চরিত্র অন্যান্য পূজিত দেবতা বা ঈশ্বর থেকে শ্রেষ্ঠ, অন্যতম! 

যুক্তি - ৪ 
যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য।
(Quran 2:186) 
উক্ত আয়াত অনুসারে, আল্লাহ বলেছেন যে, তাঁর কাছে কোনো বিষয়ে প্রার্থনা করলে তা তিনি কবুল করে নেন। ধরে নিতে পারি, ইসলামে বর্ণিত সৃষ্টিকর্তা ‘আল্লাহ’ মিথ্যা বলেন না, ফলে কুরানের বাণীতেও তিনি কিছুই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন না! শর্ত শুধু একটাই যে, তাঁর উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনসহ তাঁর নির্দেশিত কুরানের বাণী মেনে চলা। এখন কথা হল, আল্লাহ কি তাঁর এই প্রতিশ্রুতি রাখতে প্রকৃতপক্ষেই সক্ষম? কেউ যদি শর্ত পূরণ করে ৩০০ বছর বেঁচে থাকার প্রার্থনা করে তবে কি তা মঞ্জুর হবে? আল্লাহর প্রিয় নবী মুহম্মদের কথাই ধরুন, যিনি মারা গিয়েছেন কোন পুত্রসন্তান না রেখেই, আপনার কি মনে হয় তিনি সন্তানের জন্যে আল্লাহর কাছে আর্জি জানান নি? আল্লাহর প্রিয় হয়েও যখন তাঁর প্রার্থনা পূরণ হয়নি, তখন আপনি কি করে ধরে নিচ্ছেন, আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি রাখতে সক্ষম ! বস্তুত দেখা যাচ্ছে আল্লাহ এক মিথ্যাবাদী চরিত্র! 

যুক্তি - ৫ 

আল্লাহ দাবি করেছেন যে, পৃথিবীতে যত প্রাণী রয়েছে, প্রত্যেকেই মানুষের মতন একেকটি কমিউনিটি শ্রেণীবদ্ধভাবে বাস করে । আয়াতটি দেখুন ~ 
And there is no creature on [or within] the earth or bird that flies with its wings except [that they are] communities like you. (umamun means ‘communities) 
আর যত প্রকার প্রাণী পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে এবং যত প্রকার পাখী দু’ ডানাযোগে উড়ে বেড়ায় তারা সবাই তোমাদের মতই একেকটি শ্রেণীবদ্ধ জীব । 
(Quran 6:38) 
হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, একজন সৃষ্টিকর্তার কাছে জাগুয়ার (jaguar), লেপার্ড (leopard) বা মাকড়সাদের (spiders) ব্যাপারে কোনো তথ্যই ছিল না। ফলে তিনি জানতেন না যে বহু প্রাণী আছে, যারা শ্রেণী বা দলবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে না। এ ধরনের মিথ্যা উদ্ধৃতি থেকেই প্রতীয়মান হয় কুরান রচয়িতা মুহম্মদের অজ্ঞতা। কেননা এটা আশা করাই যায়, একজন সৃষ্টিকর্তা, যিনি এত নিখুঁত (আপাত দৃষ্টিতে) সৃষ্টি করতে সক্ষম, তিনি এমন প্রাইমারি লেভেলের জ্ঞান নিয়ে কথা বলবেন না!

খাপখোলা ভাবনা - ০১

লিখেছেন সাইদুল আল্লাবাপ

৪.
মুছলমান নামের উত্পত্তি মুছল আর হেমান নামক দুটি আরবি শব্দ থেকে। এইখানে মুছল মানে হচ্ছে গদা বা লাঠি আর হেমান মানে হচ্ছে বোকা জন্তু। তত্কালীন আরবীরা ব্যবসা করতে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় যাযাবরের মত ঘুরত। চরিত্রগত সমস্যা আরবিদের এখন যেমন আছে, তেমনি আগেও ছিল। নিজের বউ দেশে রেখে বউহীন আরবরা বিভিন্ন দেশে কাঁচ,আতর,পুথির মালা ইত্যাদি সওদা করত যে সবের ক্রেতা ছিল মহিলারা। নিজেকে সংযত করতে না পারা আরবরা প্রায়ই ক্রেতা মহিলাদের সাথে কাম সম্পর্ক সৃষ্টি করতে চাইত অনৈতিকভাবে। ফলশ্রুতিতে প্রায়শই আরবীয়রা ক্রেতা মহিলাদের স্বামীদ্বারা মুছল বা লাঠির পেটা খেত হেমান বা বোকা জন্তুর মত। আরব দেশের প্রায় সকল পুরুষ শরীরে বয়ে বেড়াত সেই মুছলের পেটার দাগ আর দগদগে ক্ষত। সবদিক বিবেচনা করে একাধারে লেখক, কবিরাজ, যুদ্ধবাজ, চোদনবাজ হজরত মুহাম্মদ সিদ্ধান্ত নিলেন যে, নিজেদের ঐতিহ্য বজায় রাখার এবং মুছল ও হেমান দুই শব্দের চমত্কার সংমিশ্রন দিয়ে তৈরি করলেন দ্বীন ইছলাম অনুসারীদের জাতির নাম মুছলমান। সবাই বলেন খাউজুবিল্লাহ...

৫.
"যে ব্যক্তি কিবলা মুখী হয়ে আল্লাহর নামে আলেম ওলামা কর্তৃক ধর্ষিত হয়ে পায়ুপথে রক্ত ঝরালো, তার জন্যে রয়েছে জান্নাত-ই -গেলমান এবং নুনুকাটা শুভেচ্ছা।" (সুরা আল শিরিষ , আয়াত ৪২০)

৬.
- মুমিনের শরীরে আঁকা উল্কি কত প্রকার ও কী কী?
- কোনো অতিবাল মুমিন (অতীব আল-মুমিন) যদি তার নিজের শরীরে কিংবা গোপন অঙ্গে উল্কি আঁকে, তবে তা হারাম। তবে এর মধ্যে হালাল উল্কিও আছে। যেমন সানি লিওনের যৌনাঙ্গের উল্কি মুমিন শরীরে আঁকলে তা চরম হারাম। আর আল্লাহর অতি ছুট্ট কোকড়ানো বাল সমেত আল্লাহ চাবি থুক্কু আল্লাহ তালার যৌনাঙ্গ (যেহেতু আল্লাহ নারী নাকি পুরুষ, তা কেউ জানে না, তাই উভয়লিঙ্গ ধরাটাকে নিরাপদ মনে করি) অথবা মহাকামী এবং সমকামী হজরত মুহাম্মদের নাম সমেত হেরা পর্বতের গুহা সদৃশ্য গুয়ার উল্কি আঁকা ১০০% হালাল।... নারায়ে ফাক বীর (মহা রতিকর্ম বাজ ) আল্লাহ ফাক বার (শুক্রবার)।

রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১২

হা-হা-হাদিস – ৭৪

হে ঈমান্দার বান্দাসকল, তোমাদের জন্য অজস্র রসময় কথা গুপ্ত রহিয়াছে হাদিস শরিফে।
- সহীহ আল-ধর্মকারী
শুনেছি (সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত নেই), ট্রেন চলাচল বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি নিয়ম আছে: কোনও স্টেশনে যে ট্রেনটি পরে এলো, সেটি আগে আসা ট্রেনটির আগে ছাড়বে অর্থাৎ লাস্ট ইন ফার্স্ট আউট। মনে হয়, ইছলামের নবী এই নিয়মটির প্রবর্তক। কীভাবে? 

আমরা সকলেই জানি, ইছলাম - মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাই পা নামের অঙ্গটির কথাও ইছলাম ভোলেনি। নবীজি জুতা পরিধানের ছহীহ নীতিমালাও জারি করে গেছে। যে পায়ের জুতো প্রথমে পরবেন (অর্থাৎ ডান পায়ের), সেই জুতো খুলবেন বাম পায়ের জুতো খোলার পর। হায়রে! প্রত্যেক মানুষের জুতা পরা ও খোলা নিয়েও আল্যার এতো মাথাব্যথা! 

Narrated By Abu Huraira: Allah's Apostle said, "If you want to put on your shoes, put on the right shoe first; and if you want to take them off, take the left one first. Let the right shoe be the first to be put on and the last to be taken off."

ইসলাম ও শাশ্বত প্রেম

লিখেছেন লুক্স

সাঈদীর প্রেমালাপ শুনে লজ্জা পেয়েছি, কিন্তু মোটেও অবাক হইনি। অবাক হওয়ার আসলেই কিছু নেই। সাঈদীর মতো ইসলামের একজন মৌলবাদী নেতা মাত্রই তার জীবনে অনেকগুলো যৌন কেলেংকারী থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ প্রেম, পরকীয়া এবং বহুবিবাহ ইসলামে সুন্নত। 

ইসলামের প্রবর্তক মোহাম্মদও এর কোনটি থেকেই দূরে ছিলেন না। সাঈদী বা যে কোনো একজন ক্ষমতাবান মুসলমান মানেই মোহাম্মদের ব্যক্তিগত জীবন অনুসরণ করবেন এবং ইসলামে অনুমদিত নারী ভোগের সুবিধাগুলো ভোগ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে সাঈদীও মোহাম্মদকে অনুসরণ করেছেন বা সুন্নত পালন করেছেন মাত্র।

ইসলামে যুদ্ধবন্দী নারীকে ভোগ করা অনুমোদিত। মোহাম্মদ নিজেও এর সুবিধা ভোগ করেছিলেন। একইভাবে ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় সাঈদী সহ অন্যান্য রাজাকাররা বাংলাদেশের অসংখ্য নারীকে ধর্ষণ করে মোহাম্মদের প্রদর্শিত পথই অনুসরণ করেছিলেন মাত্র। 

উম্মে হানির সাথে মোহাম্মদের পরকীয়া প্রেমের ঘটনা ইসলামের ইতিহাস থেকে আমরা সবাই জানি। সাঈদী আর তার স্ত্রীর মধ্যকার কথোপকথনে সাঈদীর পরনারীর সাথে সম্পর্কের সত্যতা প্রমান হয়। ঠিক যেভাবে মোহাম্মদ হাফসা এবং আয়শার কাছে ধরা পড়েছিলেন, দাসীদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ও পরকীয়া প্রেমের ব্যাপারে। তেমনি সাঈদীও ধরা পড়েছেন তার সহজ সরল স্ত্রীর কাছে।

সাঈদীর ফাঁস হওয়া সবচেয়ে আলোচিত অডিও পর্বটি হচ্ছে তার নাতনীর সাথে টেলিফোনে যৌনবিষয়ক প্রেমালাপ। সাঈদী আর তার নাতনীর রোমাঞ্চকর প্রেমালাপ যখন শুনছিলাম, মনে হচ্ছিল ঠিক যেন মোহাম্মদ আর ৬ বছরের আয়শার মধ্যে প্রেমালাপ শুনছি। কী শাশ্বত এই মিল। ঠিক মোহাম্মদ যেভাবে চালাকি এবং প্রেমের অভিনয় করে শিশু আয়েশাকে বিয়ে করতে সমর্থ হয়েছিলেন, সাঈদীও যেন মোহাম্মদ হয়ে তার নাতনীর উপর ভর করেছেন। 

পাঠকদের কারো কারো কাছে সাঈদীর নিজের নাতনীর সাথে প্রেমকে অনৈতিক মনে হতে পারে। তেমন মনে হবার আসলে কোন কারণ নেই। কারণ, মোহাম্মদ তার নিজের পুত্রবধু জয়নবকেও বিয়ে করেছিলেন। 

প্রেম শাশ্বত আর প্রেমের ধর্ম ইসলাম। ইসলাম ও মানব জাতির ইতিহাসে সব ধরণের প্রেমের এক জলন্ত উদাহরণ হচ্ছেন স্বয়ং মোহাম্মদ। একজন মুমিন মুসলমান হয়ে আপনি মোহাম্মদের জীবনি ও আদর্শ অনুসরণ করবেন আর সব ধরণের প্রেমের স্বাদ নেবেন না, তাহলে আপনি কেমন মুসলমান। সাঈদী মোহাম্মদের আদর্শে অনুসারী একজন সাচ্চা মুসলমান।

সবচেয়ে আলোচিত তিনটি অডিও এমবেড করলাম নিচে: ১. স্ত্রীর সঙ্গে সাঈদীর কথোপকথন, ২. নাতনির সঙ্গে সাঈদীর ফোন-সেক্স - এক, ৩. নাতনির সঙ্গে সাঈদীর ফোন-সেক্স - দুই। 

অডিও ডাউনলোড লিংকও যোগ করা হয়েছে।

স্ত্রীর সঙ্গে সাঈদীর কথোপকথন:


নাতনির সঙ্গে সাঈদীর ফোন-সেক্স - এক

নাতনির সঙ্গে সাঈদীর ফোন-সেক্স - দুই

অডিও ডাউনলোড লিংক (২১.১ মেগাবাইট)

জেহাদ প্রসঙ্গে

লিখেছেন মহসিনা খাতুন 

কিন্তু জিহাদ সম্পর্কে নতুন আর কী বলার থাকতে পারে, তাই ভাবছেন? ভাবছেন, যে বিষয় নিয়ে সারা বিশ্বে এত চর্চা, সেই প্রসঙ্গে চর্বিতচর্বণ ছাড়া আর কি হতে পারে? আসলে আমার মনে হয়, জেহাদ শব্দটি নিয়ে খানিকটা ধোঁয়াশা তো রয়েছেই। ধোঁয়াশা এই কারণে যে, এই শব্দটির এক রকম ব্যাখ্যা জঙ্গি মুসলিম, অমুসলিম এবং সেক্যুলারিস্টরা করে তো অন্যরকম ব্যাখ্যা করে উদারপন্থী মুসলিমরা। তাই কিছু বলার আগে আমরা জেহাদ শব্দটির অর্থ নিয়ে একটু আলোচনা করে নেব। ‘জেহাদ’ শব্দটি এসেছে আরবী শব্দ “জাহাদাহ্‌” থেকে , যার অর্থ উদ্যমী হওয়া। জেহাদ শব্দটির অর্থ হল - অসৎ-এর বিরুদ্ধে সর্ব শক্তি দিয়ে লড়াই করা। এই যুদ্ধ হল আসলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। 

এতদূর পর্যন্ত দুই পক্ষেরই কোনও সমস্যা নেই। উভয়পক্ষই মেনে নেয় জেহাদের এই অর্থ। কিন্তু এরপরই শুরু হয় যত গোলযোগ, যত মতান্তর। জঙ্গি মুসলিম,অমুসলিম এবং সেক্যুলারিস্টরা মনে করে, ইসলাম অনুযায়ী ‘অসৎ’ হল অমুসলিম এবং ইসলাম বিরোধীরা। তা সে যে-ই হোক, যেমনই হোক। যতক্ষণ অমুসলিম ও ইসলাম বিরোধী মানুষরা থাকবে, ততক্ষণই ইসলামের বিপদ। যতক্ষণ না ইসলাম সারা বিশ্বে প্রসারিত হচ্ছে, ততক্ষণ এদের বিরুদ্ধে চালিয়ে যেতে হবে সংগ্রাম। আধুনিক জঙ্গিবাদী মুসলিমরাও এ কথাই মানে। সমসাময়িক কালে গ্রেফতার হওয়ার পর কাসাব নামক জঙ্গির জবানবন্দী এ কথাই প্রমাণ করে। এ কথা নাস্তিক, খ্রিস্টান ও হিন্দুসহ ইসলামত্যাগী মানুষেরাও বোঝে। কিন্তু উদারপন্থী সাধারণ মুসলিমরা মনে করে যে, মনের মধ্যেকার অসৎ প্রবৃত্তিকে ধ্বংস করতে সংগ্রামই আসলে আল্লাহর পথে সংগ্রাম। ইসলাম- ও মুসলিমবিরোধীরা ইসলামকে কলঙ্কিত করতে জেহাদের অর্থের অপব্যাখ্যা করে, তেমনি অমুসলিমরা এই ব্যাপারটাকে না বুঝে তাদের ফাঁদে পা দেয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই পরস্প বিরোধী দুটি অর্থের মধ্যে কোনটি ঠিক? জেহাদ শব্দটির সঠিক অর্থ সম্পর্কে কাদের বক্তব্য আমরা মেনে নেব? 

আসলে, কিছু মানুষ মিথ্যা প্রচার ও ব্যাখ্যা করে জেহাদ সম্পর্কে মানুষের স্পষ্ট ধারণাকে গুলিয়ে দিচ্ছে খুব উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। যেমন, জাকির নায়েকের মতে, “যদি কোনও চাকুরীজীবী মনিবকে খুশি করার জন্য চেষ্টা করে, পরিশ্রম করে, তা সে ভাল কাজ দিয়েই হোক বা খারাপ কাজ দিয়েই হোক, তা হলেই তা জেহাদ।” আচ্ছা, জাকির নায়েকের দেওয়া অর্থে কোরআনে বা হাদিসে কোথাও জেহাদের উল্লেখ আছে? নেই। বাস্তবে, সংগ্রাম বা লড়াই করার জন্য সবার আগে প্রয়োজন একটি প্রতিপক্ষ। কিন্তু জাকিরের এই উদাহরণে কোন প্রতিপক্ষ নেই। সুতরাং তাকে লড়াই বলা যায় না। তাই তাকে জেহাদও আখ্যায়িত করা যায় না। 

তাহলে বোঝা গেলো যে, একটি স্পষ্ট প্রতিপক্ষ ছাড়া জেহাদ সম্ভব নয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, জেহাদের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ কে? উত্তরে বলা যায়, বিধর্মীরা আর ইসলাম বিরোধীরা। ডঃ ওসমান গনী সাহেব-এর মহানবী গ্রন্থেও একটি অধ্যায় আছে: ‘মহানবী তার জীবনে কতগুলি জেহাদ পরিচালনা করেছেন?’ পরিষ্কার বোঝানো আছে যে, জেহাদ হল আল্লাহ্‌-র পথে (ইসলাম প্রসারের জন্য) বিধর্মীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। জাকিরের “সন্ত্রাসবাদ ও জিহাদ” বইটিতে উপরিউক্ত উদাহরণটি দেওয়ার পরে পুরো বইটি জুড়েই যুদ্ধের কথা বলা আছে। অর্থাৎ তিনি পরোক্ষভাবে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে জেহাদের অর্থ আল্লাহর পথে সংগ্রাম। কোরআনেও দেখা যায় জিহাদ শব্দটি পারিভাষিক অর্থে গৃহীত, যার অর্থ হল ‘জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর পথে সংগ্রাম। এবং কোরআনে এই কথা উল্লিখিত আছে:
“হে নবী! কাফের ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জেহাদ করো এবং তাদের প্রতি কঠোর হন তাদের ঠিকানা জাহান্নাম”। (আত তাহরিম: ৯) 
“অবিশ্বাসীগণ ( কোরআন আল্লাহ্‌ ও নবীতে) তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু”! ( নিসা: ১১১) 
“তোমরা ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ না আল্লাহ-র ধর্ম সামগ্রিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়”। (আনফাল: ৩৮) 
এই বক্তব্য তো স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল। তাহলে উদারপন্থীদের মনে ধোঁয়াশা তৈরি হওয়ার কারণ কী? আসলে হজরত মোহাম্মদ যে জেহাদ তত্ত্ব চালু করে গিয়েছিলেন, তা সারা বিশ্বে স্থায়ী অশান্তি তৈরি করেছে। মুহম্মদের পরবর্তী সময়ে ইসলামী বাহিনী যখন পারস্য বিজয় করে, তখন পারস্যের বহু পণ্ডিত ইসলাম গ্রহণে বাধ্য হয়। এবং প্রায় দু'শো বছর আরবের সরাসরি অধীনে থাকে। কিন্তু নবম শতাব্দীর শেষের দিকে আরব পারস্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ততদিনে প্রায় সকল পার্সি ইসলাম গ্রহণ করে ফেলেছে। এরা কোনোদিনই ইসলামের মূল ধারার সাথে পুরো একমত হতে পারেনি। একটু স্বাধীনতা পেয়েই তারা ইসলাম নিয়ে নতুন করে আলোচনা ও গ্রন্থ লেখা শুরু করে। এরা জেহাদ তত্ত্বের ভয়াবহতা দেখে ইসলামের জেহাদ-তত্ত্বকে আপাদমস্তক পাল্টে তার আধ্যাত্মিক রূপদানের চেষ্টা করে। ‘চলিত ইসলামী শব্দকোষ’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, “মোহম্মদ পরবর্তী সময়ে জেহাদের ভয়ানক অপব্যবহার দেখে উদার মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিক এবং পণ্ডিতরা নবম এবং দশম শতকে জেহাদের একটি আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা দেন। তারা বলেন, আল্লাহর সঠিক পথের অন্বেষণে ব্যক্তির আধ্যাত্মিক প্রচেষ্টাই জেহাদ।’’ 

এইসব উদারপন্থী ও মরমিয়া সাধকদের মতে, জেহাদ দুই প্রকার। বড় জেহাদ আর ছোট জেহাদ। ভেতরের শত্রুকে পর্যুদস্ত করতে আল্লাহর পথে আধ্যাত্মিক লড়াই হল বড় জেহাদ। অন্যদিকে অস্ত্র হাতে বাইরের যুদ্ধ হল ছোট জেহাদ। “তবে এ সবই মোহম্মদ পরবর্তী যুগের ভাবনা-চিন্তা। কারণ কোরআন বা হাদিসে এর কোনও অনুমোদন মেলে না।” 

পরবর্তী কালে সূফীদের হাতে পড়ে জেহাদ তত্ত্ব আরও ব্যাপক রূপ পায়। সূফী সন্তরা পাঁচপ্রকার জেহাদের কথা বলেন: 

১. আত্মার জেহাদ: মনের ভিতরের রিপু রূপ শয়তানকে ধ্বংস করা অন্তরের সংগ্রাম ‘তৌহিদ’-এর মাধ্যমে। 

২. বাচনিক জেহাদ: খুতবা, জলসা ইত্যাদির মাধ্যমে সামাজিক শত্রু ও শয়তানদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা। 

৩. কলমের জেহাদ: ইসলামবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে ইজতিহাদ বা ইসলামী জ্ঞানের চর্চা এবং প্রচারের মাধ্যমে সংগ্রাম করা। 

৪. হাতের জেহাদ: নিজের অর্জিত সম্পদের মাধ্যমে অর্থাৎ আপন অর্থ ও অন্য সম্পদ দানের মাধ্যমে ইসলাম প্রসারের কাজে অন্য মুজাহিদদের সাহায্য করা। 

৫. তলোয়ারের মাধ্যমে: অস্ত্রশস্ত্রের দ্বারা ইসলামবিরোধী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। 

এর মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম প্রকারের জেহাদ বর্তমান বিশ্বের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলামী ধনী দেশগুলি থেকে জেহাদের উদ্দেশ্যে অর্থ সরবরাহ হচ্ছে দরিদ্র মুসলিম দেশগুলিতে। উদ্দেশ্য হল - অমুসলিমদের ইসলামে নিয়ে আসা। এবং কোনও মিশনারি কাজের মাধ্যমে নয়, বরং কোরআনের ভাষায় “তাদের মনে ভীতি সঞ্চার করে।” অর্থাৎ আতঙ্কের মাধ্যমে। কোনও সন্দেহ নেই যে, এটাই জেহাদের প্রকৃত অর্থ। 

বর্তমানের উদার এবং শিক্ষিত মুসলিম-বিশ্বের মানুষের কাছে জিহাদ একই সাথে আতঙ্ক, লজ্জা ও আশার নাম। তারা বোঝে যে, এই জগতে নিজেকে টিকিয়ে রাখাটাই সবচেয়ে বড় সংগ্রাম; তারা বোঝে, বর্তমানে কোরআন আওড়ানোর চেয়ে কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন পড়া কাজের। তারা কোরআন হাদিসকে শুধুমাত্র ধর্মগ্রন্থের বেশি আর কিছু বলে মনে করে না। এইসব নামেমাত্র মুসলিমরা দিনরাত দেখে যে, জেহাদ কীভাবে বর্তমান বিশ্বকে সন্ত্রস্ত করে রেখেছে। এমনকি মুসলিম দেশগুলিও সন্ত্রাসের বাইরে থাকছে না। বিভিন্ন ইসলামী গোষ্ঠীর প্রত্যেকটিই মনে করছে, অপর গোষ্ঠী হল তাদের ইসলামের বিরোধী। ফলস্বরূপ একে অপরের ওপর সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ এবং প্রাণহানী। ভাবতে পারেন, বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র ধ্বংসের পর থেকে আজ পর্যন্ত কুড়ি হাজারের ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণ হয়েছে! হতাহতের সংখ্যা বেশ কয়েক লক্ষ। অমুসলিমরা তো এর শিকার হচ্ছেই, মুসলিমরা শিকার হচ্ছে আরও বেশি। কী মনে হয়, এরা মনে মনে উপলব্ধি করতে পারে না সত্যিটা? পারে। 

এর ওপর অন্যধর্মী মানুষদের সাথে তাদের একত্র থাকতে হয়। তাদের মধ্যে মধ্যযুগীয় বর্বরতার লেশমাত্র না থাকলেও রোজকার জেহাদি কার্যকলাপ তাদের প্রতিনিয়ত অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে ফেলে। রোজ একটা বোমা বিস্ফোরণ হয় কোথাও না কোথাও, আর রোজ অন্যের সন্দেহ ও ঘৃণার পাত্র হতে হয় সাধারণ মুসলিমকে, সারা বিশ্বজুড়ে। কী করতে পারে তারা? না পারে নিজের ধর্ম ত্যাগ করতে, যে ধর্মীয় সংস্কৃতিতে তারা জন্মেছে, বড় হয়েছে, যাকে পবিত্র বলে এতদিন মেনে এসেছে, যাকে খারাপ বললে তাদের বুকে আঘাত লাগে; না পারে ইসলামের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা-হীন কদর্যতাকে বিনা বিচারে সমর্থন করতে, যার প্রায়োগিক রূপ পৃথিবীকে সন্ত্রস্ত করে রেখেছে ইসলামের জন্মের সময় থেকেই। বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক জাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদী দর্শন খুব স্পষ্ট ভাবেই দেখিয়েছে যে, উদ্বেগ এবং হতাশায় পরিপূর্ণ স্বাধীন জীবনই মানুষের যথার্থ অস্তিত্বকে সূচিত করে। কিন্তু বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা যেহেতু মানুষের মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দেয় ,তাই উদ্বেগ থেকে মুক্তি পেতে অধিকাংশ মানুষই আশ্রয় নেয় ‘মিথ্যা বিশ্বাস’-এর (false belief)। এক্ষেত্রেও ঠিক তা-ই ঘটে। তাকে আশ্রয় নিতে হয় অদ্ভুত এক মিথ্যা বিশ্বাসের, জেহাদের উদারপন্থী তত্ত্বের, যা কোরআন-হাদিস সমর্থিত নয়। সযত্নে লালিত আদর্শ ও কঠিন বাস্তবের সংঘাতে আজ এদের অন্তর জর্জরিত। 

কোন মানুষ উদ্বেগ থেকে মুক্তি পেতে কোন মিথ্যা বিশ্বাসের আশ্রয় নেবে, সেটা তার নিজের বিষয়। কিন্তু সমস্যা তো এখানেই শেষ নয়। এরকম মিথ্যা বিশ্বাসের বশীভূত হওয়ার অর্থ হল - নিজে অন্যের হাতের পুতুল বা যন্ত্রে পরিণত হওয়া। বিষয়টি কি রকম জাঁ পল সার্ত্রের উদাহরণ দিয়েই বোঝান যাক:
“একজন তরুণী প্রথমবার এক পুরুষ বন্ধুর সাথে ডেটিং এ বেরিয়েছে। সে ভাল করেই জানে যে, তার পুরুষ বন্ধুর উদ্দেশ্য তার ভালবাসা পাওয়া ছাড়াও আরও বেশি কিছু এবং শীঘ্রই এই বিষয়ে তাকে একটা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সে পুরুষ বন্ধুটির সঙ্গ ত্যাগ করার সাহস তার নেই, অথচ নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সমর্পণ করার ইচ্ছাও তার নেই। এই দু'টি বিকল্পের কোনও একটিকে বেছে নেওয়ার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা তার থাকলেও সে তা করতে পারে না। এরপর পুরুষ বন্ধুটি যখন তার হাতের ওপর হাত রাখে, তখন সে কী করবে, বুঝতে পারে না। কেননা, নিজের হাতটি যদি সে পুরুষ বন্ধুটির হাতে স্বাভাবিকভাবে রেখে দেয়, তাহলে তার অর্থ হবে পুরুষটিকে এগিয়ে যাওয়ার সম্মতি দেওয়া; অন্যদিকে যদি সে হাতটা সরিয়ে নেয়, তবে এই সুন্দর মুহূর্তটিকে নষ্ট করা হবে। এই মুহূর্তে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে সে এমন ভান করে, যেন সে কিছুই বোঝেনি। সে তৎক্ষণাৎ পুরুষ বন্ধুটির সাথে ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত, আবেগ-বর্জিত ও আদর্শের কথা বলে প্রাণপণে সে দেহ ও মনের বিচ্ছিন্নতা ঘটাতে চায়। হাতটি যেন একটি জড়বস্তু, যার কোনও অনুভূতি নেই। অচেতন জড়বস্তুর মতো সেটি পুরুষটির উষ্ণ মুঠির ভেতরে ধরা থাকে।” 
এরকম অনুভূতি তো সব মেয়েদের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। যাই হোক, সার্ত্রের মতে, মেয়েটির সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা ছিল। কিন্তু এই স্বাধীনতা তার মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করলো। কেননা তার সিদ্ধান্তের পরিণতি সে জানে না। মানুষ সর্বদাই উদ্বেগ থেকে বাঁচতে চায়। তাই সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে নিজেকে ভুল বোঝায়, নিজের কাছেই কিছু না বোঝার ভান করে। অর্থাৎ নিজে সেই বিষয়ে অনুভূতিহীন না হলেও, নিজেকে সেই বিষয়ে অনুভূতিহীন হওয়ার মিথ্যাতে বিশ্বাস করায়। ঠিক এই ঘটনা ঘটে সাধারণ মুসলিমদের সাথে। তারা সব বুঝেও সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণে কিছুই না বোঝার এবং কিছুই না হওয়ার ভান করে। তারা প্রাণপণে নিজেকে বিশ্বাস করাতে চায় যে, এইসবের কারণ ইসলাম নয়। আবার উদাহরণের মেয়েটি যখন ওরকম ভান করে, নিজেকে মিথ্যা বিশ্বস্ত করে তখন কিন্তু সে আসলে উদ্বেগ কাটাতে গিয়ে নিজের চিন্তা ও ক্রিয়ার স্বাধীনতাকে নিজেই হারিয়ে ফেলে। নিজের অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলে। এই অবস্থা এমন এক দুর্বল অবস্থা যে, মেয়েটি শেষমেশ নিজেকে পুরুষটির ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়। তার ফল হয় মেয়েটি যা চাইছিল না, সেটাই হয়। মুসলিমদের ক্ষেত্রেও অবস্থা ঠিক এই রকম। অর্থাৎ যে ইসলামী জেহাদ বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, সেই ইসলামী জেহাদি তত্ত্বের হাতেই তারা নিজেদের ছেড়ে দেয়। তখন জেহাদিদের ইচ্ছাই তাদের ইচ্ছায় পরিণত হয়। নিজের মিথ্যা বিশ্বাসের ফলে তারা হয়ে পড়ে যন্ত্র। জেহাদিরা যা স্বপ্ন দেখায়, তারা চোখ বন্ধ করে সেটাই বিশ্বাস করে। 

অন্যান্য সন্ত্রাসবাদীদের সাথে জেহাদিদের পার্থক্য একটা বিশেষ ক্ষেত্রে। অন্যান্য সন্ত্রাসবাদীরা নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য সরকারকে চাপ দেয়। কিন্তু জেহাদিরা যখন জেহাদি কার্য পরিচালনা করে, তখন শুধুমাত্র সরকারই তাদের টার্গেট নয়। বরং এই কাজ করে তারা সম্পূর্ণ মুসলিম জাতিকে উন্নত, জটিল, বহুমাত্রিক এই সমাজ থেকে আলাদা করে দিতে চায়, যাতে সারা সমাজ তাদের দিকে সন্দেহ ও ঘৃণার নজরে দেখে। যাতে তারা আরও গুটিয়ে নেয় নিজেদের, আরও সংহত করে নেয়, আরও সচেতন হয়ে পরে নিজেদের ধর্মীয় আইডেন্টিটি সম্পর্কে, যেটা তাদের মিথ্যা বিশ্বাসেরই অঙ্গ। ধর্মীয় আইডেন্টিটি সম্পর্কে নিজেদের মিথ্যা বোঝানো এই অতি-সচেতন (!) সংহত একটি মানবগোষ্ঠীকে অতি সহজেই ধর্ম বিষয়ে বিভ্রান্ত করা যায়। জেহাদিরা সেটা করে খুব দক্ষতার সাথেই। তারা ‘প্যান-ইসলাম’ (অর্থাৎ সারা বিশ্বের ইসলামীকরণের তত্ত্ব)-এর দিবাস্বপ্ন দেখিয়ে তাদের ব্যবহার করে যন্ত্র হিসেবে। আর এই মানুষগুলো অন্যদের ঘৃণা ও সন্দেহ থেকে বাঁচার জন্য এই পথটাকেই সঙ্গত মনে করে। তারা যন্ত্রের মতোই প্যান-ইসলামের সমর্থক হয়ে পড়ে। সমর্থক হয়ে পড়ে জেহাদের, নিজের অজান্তেই। 

তবে এটাই শেষ কথা নয়। আশার কথা এই যে, মিথ্যা বিশ্বাস কোনোদিন চিরকালের জন্য থাকতে পারে না। সার্ত্র নিজেই বলেছেন, মিথ্যা বিশ্বাস একটা প্যারাডক্সিক্যাল (paradoxical) অবস্থা। কেননা, সার্ত্রের মতে মানুষ যখন উদ্বেগ থেকে প্রাণপণে পরিত্রাণ লাভের চেষ্টা করে, তখন পক্ষান্তরে সে উদ্বেগ সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হয়ে পড়ে। ছোট বেলায় ভাঙার আগে আলগা হয় যাওয়া দাঁতের কথা ভাবুন, যতই ভাবতাম যে ওটা সম্পর্কে ভাববো না, ততই সেখানে জিভ চলে যেত, অর্থাৎ আমরা আরও সচেতন হয়ে পড়তাম। ঠিক সেইরকম এই সব মিথ্যা বিশ্বাসী মুসলিমদের ভবিতব্য হল, তারা একদিন বাস্তবের মাটিতে ফিরে আসবে। তাদের মিথ্যা বিশ্বাসই তাদের ফিরিয়ে আনবে মিথ্যা বিশ্বাস থেকে। নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন হবে তারা। স্বাধীনতা ও উদ্বেগের মুখোমুখি হবে। সেদিন কী হবে, সে সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করার ক্ষমতা আমার নেই। কেননা ‘স্বাধীনতা’ শব্দটির মধ্যে অসীম সম্ভাবনা নিহিত। 

শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২

কুরানে বিগ্যান (পর্ব-২১): কানে-চোখে-মনে সিলমোহর তত্ত্ব

লিখেছেন গোলাপ


সংকলিত কুরানের সর্বপ্রথম বোধগম্য প্রথম চারটি (২:২-৫) বাক্যের পরের দু'টি বাক্যেই মুহাম্মদ আরও দাবি করেছেন যে, বিশ্বস্রষ্টা অবিশ্বাসীদের কানে, চোখে ও মনে "সিল-মোহর" মেরে বিশ্বাসী হওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেন! বশ্যতা অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে এই প্রতিহিংসাপরায়ণ পৈশাচিক কর্মকাণ্ডকে মুহাম্মদ স্রষ্টার বাণী বলে প্রচার করেছিলেন! মুহাম্মদের ভাষায়: 
২:৬-৭ – “নিশ্চিতই যারা কাফের হয়েছে তাদেরকে আপনি ভয় প্রদর্শন করুন আর নাই করুন তাতে কিছুই আসে যায় না, তারা ঈমান আনবে না। আল্লাহ তাদের অন্তঃকরণ এবং তাদের কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।"

>>> মুহাম্মদ তার নবী জীবনের বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনুরূপ দাবি করেছেন বহুবার। অল্প কিছু উদাহরণ:

ক) স্বয়ং আল্লাহ অবিশ্বাসীদের “অন্তরে” মারেন মোহর - যেন তারা বুঝতে না পারে!
:১৫৫ - অতএব, তারা যে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল, তা ছিল তাদেরই অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য এবং অন্যায়ভাবে রসূলগণকে হত্যা করার কারণে এবং তাদের এই উক্তির দরুন যে, আমাদের হৃদয় আচ্ছন্ন| অবশ্য তা নয়, বরং কুফরীর কারণে স্বয়ং আল্লাহ্ তাদের অন্তরের উপর মোহর এঁটে দিয়েছেন|  ফলে এরা ঈমান আনে না কিন্তু অতি অল্পসংখ্যক।
:৮৭ - তারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছে এবং মোহর এঁটে দেয়া হয়েছে তাদের অন্তরসমূহের উপর। বস্তুতঃ তারা বোঝে না।  
৩০:৫৯ - এমনিভাবে আল্লাহ জ্ঞানহীনদের হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন।
:৯৩ - অভিযোগের পথ তো তাদের ব্যাপারে রয়েছে, যারা তোমার নিকট অব্যাহতি কামনা করে অথচ তারা সম্পদশালী। যারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থাকতে পেরে আনন্দিত হয়েছে। আর আল্লাহ মোহর এঁটে দিয়েছেন তাদের অন্তরসমূহে। বস্তুতঃ তারা জানতেও পারেনি।
৪৭:১৬ - তাদের মধ্যে কতক আপনার দিকে কান পাতে, অতঃপর যখন আপনার কাছ থেকে বাইরে যায়, তখন যারা শিক্ষিত, তাদেরকে বলেঃ এইমাত্র তিনি কি বললেন?  এদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তারা নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে।
:১০০ - তাদের নিকট কি একথা প্রকাশিত হয়নি, যারা উত্তারাধিকার লাভ করেছে। সেখানকার লোকদের ধ্বংসপ্রাপ্ত হবার পর যদি আমি ইচ্ছা করতাম, তবে তাদেরকে তাদের পাপের দরুন পাকড়াও করে ফেলতাম| বস্তুত: আমি মোহর এঁটে দিয়েছি তাদের অন্তরসমূহের উপরকাজেই এরা শুনতে পায় না।
খ) আল্লাহ “অন্তর ও কানে” ভরেন বোঝা - যেন তারা বুঝতে ও শুনতে না পারে!
:২৫-তাদের কেউ কেউ আপনার দিকে কান লাগিয়ে থাকে। আমি তাদের  অন্তরের  উপর  আবরণ  রেখে দিয়েছি যাতে একে না বুঝে এবং তাদের কানে বোঝা ভরে দিয়েছি। যদি তারা সব নিদর্শন অবলোকন করে তবুও সেগুলো বিশ্বাস করবে না| এমনকি, তারা যখন আপনার কাছে ঝগড়া করতে আসে, তখন কাফেররা বলে: এটি পূর্ববর্তীদের কিচ্ছাকাহিনী বৈ তো নয়।
১৭:৪৫-৪৬ - যখন আপনি কোরআন পাঠ করেন, তখন আমি আপনার মধ্যে পরকালে অবিশ্বাসীদের মধ্যে প্রচ্ছন্ন পর্দা  ফেলে দেই। আমি তাদের  অন্তরের  উপর  আবরণ  রেখে দেই, যাতে তারা  একে  উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদের কর্ণকুহরে বোঝা চাপিয়ে দেই। যখন আপনি কোরআনে পালনকর্তার একত্ব আবৃত্তি করেন, তখন অনীহাবশতঃ ওরা পৃষ্ট প্রদর্শন করে চলে যায়। 
১৮:৫৭ - তার চাইতে অধিক জালেম কে, যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার পূর্ববর্তী কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়? আমি তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে দিয়েছি, যেন তা না বোঝে এবং তাদের কানে রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেন, তবে কখনই তারা সৎপথে আসবে না।
গ) আল্লাহ "অন্তর-কর্ণ-চক্ষুর" ওপর মোহর মেরে করেন সম্পূর্ণ বিকলাঙ্গ!
১৬:১০৮ - এরাই তারা, আল্লাহ তায়ালা এদেরই অন্তর, কর্ণ চক্ষুর উপর মোহর মেরে দিয়েছেন এবং এরাই কান্ড জ্ঞানহীন।  
>>> প্রবক্তা মুহাম্মদ আমাদের আরও জানিয়েছেন যে তাঁর কল্পিত স্রষ্টা অবিশ্বাসীদের অন্তরের ব্যাধি আরও বৃদ্ধি করে তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। তার ভাষায়,

১) আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন
:১০ - তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহতাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদেরজন্যনির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদেরমিথ্যাচারের দরুন।
:১১০ - আমি ঘুরিয়ে দিবতাদের অন্তর দৃষ্টিকে, যেমন-তারা এর প্রতি প্রথমবার বিশ্বাস স্থাপন করেনি এবং আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্ত ছেড়ে দিব।
২) আল্লাহ প্রত্যেক জনপদে অপরাধীদের জন্য সর্দার নিয়োগ করেন!
:১২৩ - আর এমনিভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে অপরাধীদের জন্য কিছু সর্দার নিয়োগ করেছি-যেন তারা সেখানে চক্রান্ত করে। তাদের সে চক্রান্ত তাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই; কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারে না।   
৩) আল্লাহ শয়তানকে অবিশ্বাসীদের বন্ধু করে দেন!
:২৭-হে বনী-আদম শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্খায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছি-যাতে তাদেরকে লজ্জা স্খান দেখিয়ে দেয়| সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, , যারা বিশ্বাস স্খাপন করে না।   
) আল্লাহ অবিশ্বাসীদের সৎপথ  থেকে বাধা দান করেন!
১৩:৩৩ - ওরা প্রত্যেকেই কি মাথার উপর স্ব স্ব কৃতকর্ম নিয়ে দন্ডায়মান নয়? এবং তারা আল্লাহর জন্য অংশীদার সাব্যস্ত করে। বলুন; নাম বল অথবা খবর দাও পৃথিবীর এমন কিছু জিনিস সম্পর্কে যা তিনি জানেন না? অথবা অসার কথাবার্তা বলছ? বরং সুশোভিত করা হয়েছে কাফেরদের জন্যে তাদের প্রতারণাকে এবং তাদেরকে সৎপথ থেকে বাধা দান করা হয়েছে। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন পথ প্রদর্শক নেই।  
) আল্লাহ অবিশ্বাসীদের পাপাচারে উদ্ধুদ্ধ করেন!
১৭:১৬ - যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থাপন্ন লোকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করি অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে তখন সে জনগোষ্টীর উপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি তাকে উঠিয়ে আছাড় দেই।     
২৭: - যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মকান্ডকে সুশোভিত করে দিয়েছি। অতএব, তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়।
) আল্লাহ অবিশ্বাসীদের বিভ্রান্ত করেন!
৪০:৬৩ - এমনিভাবে তাদেরকে বিভ্রান্ত করা হয়, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে।  
) আল্লাহ অবিশ্বাসীদের সাথে  কৌশল করে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যান!
৬৮:৪৫-৪৫ - অতএব, যারা এই কালামকে মিথ্যা বলে, তাদেরকে আমার হাতে ছেড়ে দিন, আমি এমন ধীরে ধীরে তাদেরকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাব যে, তারা জানতে পারবে না।  আমি তাদেরকে সময় দেই। নিশ্চয় আমার কৌশল মজবুত।  
)  আল্লাহ অবিশ্বাসীদের গোমরাহ করেন
:১৪৩ এরা দোদুল্যমান অবস্খায় ঝুলন্ত; এদিকেও নয় ওদিকেও নয়। বস্তুত: যাকে আল্লাহ্ গোমরাহ করে দেন, তুমি তাদের জন্য কোন পথই পাবে না কোথাও।
) আল্লাহ স্বয়ং তার ফেরেশতাকুল অবিশ্বাসীদের অভিসম্পাত করেন!
 - বিস্তারিত একাদশ পর্ব অভিশাপ তত্ত্বে।

১০আল্লাহ অবিশ্বাসীদের ধ্বংস কামনা করেন!  
৬৩:- - মুনাফিকরা আপনার কাছে এসে বলেঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল। আল্লাহ জানেন যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রসূল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। তারা তাদের শপথসমূহকে ঢালরূপে ব্যবহার করে। অতঃপর তারা আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে। তারা যা করছে, তা খুবই মন্দ।এটা এজন্য যে, তারা বিশ্বাস করার পর পুনরায় কাফের হয়েছে। ফলে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। অতএব তারা বুঝে না। আপনি যখন তাদেরকে দেখেন, তখন তাদের দেহাবয়ব আপনার কাছে প্রীতিকর মনে হয়। আর যদি তারা কথা বলে, তবে আপনি তাদের কথা শুনেন। তারা প্রাচীরে ঠেকানো কাঠসদৃশ্য। প্রত্যেক শোরগোলকে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে। তারাই শত্রু, অতএব  তাদের সম্পর্কে সতর্ক হোন। ধ্বংস করুন আল্লাহ তাদেরকে। তারা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছে?
>>> মুহাম্মদ মানব ইতিহাসের স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গের একজন। আজকের পৃথিবীর ১৪০ কোটি মানুষ জন্মসূত্রে (ধর্মান্তরিতের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য) তাঁর প্রবর্তিত মতবাদ/ধর্মের অনুসারী। অথচ এ মানুষটি সম্বন্ধে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষেরই স্বচ্ছ কোনো ধারণা নেই। কেন? কারণ, শতাব্দীর পর শতাব্দী "বাধ্যতামূলক গুণকীর্তনের" মাধ্যমে তাকে আড়াল করে রাখা হয়েছে! মুহাম্মদের যাবতীয় বাণী ও কর্মকাণ্ডকে ঐশী ও পুত-পবিত্র রূপে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনে নিবেদিতপ্রাণ শত-সহস্র ইসলামী পণ্ডিত গত ১৪০০ বছর যাবত হাজার হাজার পৃষ্ঠা রচনা করেছেন, ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে। বোধগম্য কারণেই তাদের লেখাগুলো পক্ষপাতদুষ্ট, একপেশে, অতিরঞ্জিত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসত্য। কারণ ইসলামের প্রাথমিক সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো ইসলামবিশ্বাসীই মুহাম্মদের বাণী ও কর্মের কোনোরূপ সমালোচনা করার "কোনো" অধিকারই রাখেন না। পরোক্ষভাবেও নয়। সমালোচনার শাস্তি ভয়াবহ, ইসলামী বিধানেই


অমুসলিম লেখক/বুদ্ধিজীবীরাও একইভাবে পঙ্গু। শাসক, ক্ষমতাসীন ও নিবেদিতপ্রাণ ইসলাম অনুসারীর পেশীশক্তি এবং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক যাঁতাকলকে অবজ্ঞা করার পরিণতি ভয়াবহ! মুহাম্মদ সময়কালের আবু লাহাব-ক্বাব বিন আশরাফ-আবু রাফি-আসমা বিনতে মারোয়ান (দ্বাদশ পর্ব) থেকে শুরু করে বর্তমানের হুমায়ুন আজাদ-তসলিমা নাসরিন-সালমান রুশদী-আয়ান হারসি আলি ও সাবমিশান (Submission) চলচ্চিত্র নির্মাতা থিও ভ্যান গোগ সহ অসংখ্য উদাহরণকে কি অবজ্ঞা করা যায়? ইসলামী মতবাদের সামান্যতম প্রতিবাদ করে চরম মূল্যের জন্য সদা সন্ত্রস্ত থাকার দুঃসাহস কে দেখাতে পারে? পলিটিকাল কারেক্টনেস (Political correctness) নামের চতুরতার আশ্রয়ে সুবিধাজনক লেখা-বক্তৃতা-বিবৃতি-মন্তব্য-টক শো-এর নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে  কে যেতে চায়? এ পরিস্থিতির অবশ্যম্ভাবী ফলাফল "সত্যের সমাধি"! এমত পরিস্থিতিতে সত্যকে আবিষ্কার করতে হলে খুঁড়তে হবেইতিহাসের "কবর"। গত ১৪০০ বছরের হাজার হাজার পৃষ্ঠার পক্ষপাতদুষ্ট লেখা থেকে সত্যকে উদ্ধার অত্যন্ত দুরূহ, গবেষণাধর্মী ও সময়সাপেক্ষ কার্যক্রম। কিন্তু তা কক্ষনোই অর্থহীন নয়। বিশেষ করে যে মানুষের অনুসারীর সংখ্যা ১৪০ কোটি!

তথাকথিত ঈসা অথবা মুসা কোনো গ্রন্থ রচনা করেননি। এ নামে কোনো ব্যক্তি পৃথিবীতে আদৌ ছিলেন কি না, সে ব্যাপারেও পণ্ডিতরা একমত নন। তথাকথিত ঈসার মৃত্যুর প্রায় অর্ধ-শতাব্দী পরে তাঁর উদ্ধৃতি দিয়ে রচিত হয়েছে বাইবেল। তথাকথিত মুসার মৃত্যুর কয়েক শত বছর পর তাঁর উদ্ধৃতি দিয়ে রচিত হয়েছে তৌরাত। অন্যদিকে মুহাম্মদ নিজেই নিজেকেনবী হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। স্রষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে রচনা করেছেন কুরান। মানব ইতিহাসের হাজারও নৃশংস ঘটনার নায়কের উত্থান-পতন হয়েছে। তারা মৃত। মুহাম্মদও মৃত। আমার জানা মতে, মুহাম্মদই একমাত্র সফলকাম মানুষ, যিনি নিজে তাঁর যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে ঐশী, নির্ভুল ও কাল উত্তীর্ণ বলে প্রচার করেছিলেন। তাঁর অনুসারীরাও সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তাঁর মতবাদ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার ও প্রসারে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তাই মুহাম্মদের যাবতীয় অমনাবিক শিক্ষা আজও পালিত হচ্ছে পরম একাগ্রতায়! ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী নির্বিশেষে পৃথিবীর আপামর জনসাধারণ। প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে। 

সে কারণেই ঘুরে ফিরে এই মৃত মানুষটিকে নিয়ে এতো আলোচনা-সমালোচনা। তার উপর আক্রোশবশতঃ নয়। আমি মনে করি, মৃত মানুষের উপর জীবিতের কোনোরূপ আক্রোশ থাকা উচিত নয়। কারণ তা অর্থহীন! মৃত মানুষের কোনো কর্মক্ষমতা নেই। সে জাগতিক যাবতীয় ভাল-মন্দ ও আলোচনা-সমালোচনার অতীত। মুহাম্মদ-পরবর্তী ইসলামবিশ্বাসী রাষ্ট্রনায়ক ও অনুসারীদের যাবতীয় অমানবিক কর্মকাণ্ড এবং মুহাম্মদের যাবতীয় কাজের বৈধতা দানকারী পণ্ডিতদের কর্মকাণ্ডের জন্য মুহাম্মদকে কি দায়ী করা যায়? দায়ী সেই ব্যক্তিরা, যারা সেই কর্মের সাথে জড়িত। কোনো মৃত ব্যক্তি নয়!

মুহাম্মদ ছিলেন সপ্তম শতাব্দীর আনুষ্ঠানিক শিক্ষাবঞ্চিত এক আরব বেদুইন। তাঁর চিন্তা-ভাবনা, মন-মানসিকতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি বিষয়ের সাথে আধুনিক মানুষের চিন্তাধারার উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হবেই। এ সহজ সত্যকে অস্বীকার কারে যারা "মুহাম্মদী মতবাদ" সর্বকালের মানুষের জন্য একমাত্র পূর্নাঙ্গ জীবনবিধান রূপে প্রতিষ্ঠার ব্রতে ব্রতী হয়ে "মুহাম্মদী কায়দায়" পৃথিবীবাসীকে সন্ত্রস্ত করে তুলেছেন, তাদেরকে প্রতিহত করার দায়িত্ব সকল মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের! এই দায়িত্ব জ্ঞানেই ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ করার মানসে অগণিত মুক্তমনা আজ কলম ধরেছেন।

বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী নির্বিশেষে যে "সত্যে" আমরা একমত, তা হলো সৃষ্টিকর্তার (যদি থাকে) বাণীতে কোনোরূপ অসামঞ্জস্য, ভুল বা মিথ্যা থাকতে পারে না। শুধু “একটি মাত্র” ভুল, অবাস্তবতা অথবা অসামঞ্জস্য থাকলেই একশত ভাগ সুনিশ্চিত ভাবেই বলা যাবে যে, কুরান 'বিশ্বস্রষ্টার' বাণী হতে পারে না। গত বিশটি পর্বের আলোচনায় আমরা নিশ্চিতরূপে জেনেছি যে, মুহাম্মদের প্রচারিত বাণী আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-বাস্তবতার আলোকে অসংখ্য অসত্য, মিথ্যা ও অসামঞ্জস্যতায় ভরপুর। সুতরাং কুরান কোনো অবস্থাতেই স্রষ্টার বাণী হতে পারে না।

প্রতিটি মানুষেরই বচন ও কর্ম সে মানুষটিরই মন-মানসিকতার একান্ত বৈশিষ্ট্য। তা সেই বচন ও কর্ম তিনি ভুত-প্রেত-আত্মা অথবা জীনের উদ্ধৃতি দিয়েই করুন কিংবা করুন সৃষ্টিকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে! সব ক্ষেত্রেই তা তারই নিজস্ব মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। উদ্ধৃত জিন-ভুত-আত্মা বা স্রষ্টার নয়! কুরানের যাবতীয় বাণী "একান্তই" মুহাম্মদের। তাই কুরানের বক্তব্যকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণই হলো মুহাম্মদ ও তাঁর মানসিকতাকে আবিষ্কারের সবচেয়ে সহজ, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং সবচেয়ে কম শ্রমসাধ্য পদ্ধতি। গত দু'টি পর্বের আলোচনায় আমরা যে সত্যটি আবিষ্কার করলাম, তা হলো কুরানের প্রবক্তা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর কল্পিত সৃষ্টিকর্তাকে রূপায়িত করেছেন এক পক্ষপাতদুষ্ট, কুচক্রী, প্রতিহিংসা পরায়ণ, নীতিহীন, স্বেচ্ছাচারী রূপে! মুহাম্মদ তাঁর জবান-বন্দীতে (কুরানে) অসংখ্যবার ‌ঘোষণা দিয়েছেন যে তার আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা বিশ্বাসী বানান, যাকে ইচ্ছা অবিশ্বাসী বানান! যাকে ইচ্ছা করেন সুপথগামী, যাকে ইচ্ছা করেন বিপথগামী। যাকে ইচ্ছা করেন ক্ষমা, প্রবেশ করান জান্নাতে! যাকে ইচ্ছা দেন শাস্তি, টেনে-হেঁচড়ে নিক্ষেপ করেন জাহান্নামের অনন্ত আগুন ও রক্ত-পুঁজের সমুদ্রে! তিনি অবিশ্বাসীদের পেছনে লেলিয়ে দেন শয়তানকে, যেন শয়তান তাদেরকে করে বিপথগামী ও পথভ্রষ্ট! এহেন কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে মানবতার যে কোন মানদণ্ডে কুৎসিত, অনৈতিক ও গর্হিত!

এই অনন্ত মহাবিশ্বের আদৌ কোন স্রষ্টা আছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই।  এর পরেও যাঁরা স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী, তাঁরা কি তাঁদের সৃষ্টিকর্তাকে কখনোই পক্ষপাতদুষ্ট, কুচক্রী, নীতিহীন, স্বেচ্ছাচারী রূপে কল্পনা করতে পারেন? কক্ষনোই নয়! উপরি উক্ত দাবি একান্তই মুহাম্মদের। কোনো সুস্থ বিবেকবান মুক্তবুদ্ধির সভ্য মানুষ কখনোই কোনো পক্ষপাতদুষ্ট, কুচক্রী, নীতিহীনের সমর্থক হতে পারেন না।

পাঠক, আগেই বলেছি; আমার এ লেখা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের সপক্ষে কিংবা বিপক্ষে নয়। স্রষ্টায় বিশ্বাস উচিত নাকি অনুচিত, প্রয়োজন নাকি অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকারক নাকি লাভজনক, সে প্রসঙ্গেও নয়। সমগ্র আলোচনার উদ্দেশ্য - স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিজেরই জবানবন্দী ও কার্যকলাপ বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাঁর দাবীর যথার্থতা/অসাড়তা নিরূপণ! তাঁর সত্যিকারের জীবনী ও মানসিকতা নিরূপণ! মনোযোগী হয়ে কুরান পড়ুন এবং সত্যকে জানুন। 

[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।]

(চলবে)