সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৫

পেঁয়াজ সংকটের ঐশী কারণ

লিখেছেন ক্যাটম্যান

সম্প্রতি পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সংকটে পড়েছেন দেশীয় ভোক্তারা। শুধু তাই নয়, ভারতের বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার পেঁয়াজ ভোক্তাদের মাঝেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। হঠাৎ পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পশ্চাতে কী কারণ নিহিত আছে, তার অনুসন্ধানে সরকার ও বাজার বিশ্লেষকগণ রীতিমত গলদঘর্ম হচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। কেউ কেউ পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কয়েকটি কারণ সনাক্ত করেছেন বটে, যেমন - (১) অসাধু ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার লোভ। (২) বন্যার কারণে ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ভারতে পেঁয়াজের সংকট। (৩) রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে ভারতীয় পেঁয়াজের টনপ্রতি রপ্তানি মূল্য ৪২৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৭০০ ডলারে নির্ধারণ। (৪) আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি। এতসব কারণ থাকা সত্ত্বেও সরকার পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে নানারকম উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যেমন - টিসিবিকে পেঁয়াজ আমদানির নির্দেশ দান, বন্দরে আমদানিকৃত পেঁয়াজের চালান দ্রুত ছাড়ের ব্যবস্থা গ্রহণ, পেঁয়াজ আমদানিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সহজে ঋণপত্র খোলার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া ও বাজারে নজরদারি বৃদ্ধি করা। কিন্তু এতসব উদ্যোগ গ্রহণ করা সত্ত্বেত্ত পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার এখন পর্যন্ত ব্যর্থ।

পেঁয়াজ এই উপমহাদেশের মানুষের আবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য হওয়ায় বছরের প্রায় সময় পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি উপমহাদেশ জুড়েই সংবাদের শিরোনাম হয়। এমনকি ভারত উপমহাদেশীয় দেশসমূহ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবেও পেঁয়াজকে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করে থাকে। তবে রাজনীতিবিদগণ পার্থিব লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে পেঁয়াজকে কার্যকরী হাতিয়ার বিবেচনা করলেও ধর্মবাদীগণ পারলৌকিক লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে পেঁয়াজকে প্রতিকূল বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। তাই ধর্মবাদীগণের বিবেচনায় পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ অন্যত্র বিদ্যমান। সরকার পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির যত প্রকার কারণ সনাক্ত করুক না কেন, ধর্মবাদীগণের বিবেচনায় - এর পেছনে মূলত ঐশ্বরিক কারণ বিদ্যমান। তাই পেঁয়াজ শুধু সাধারণ ভোক্তা ও রাজনৈতিক নেতাদেরই আলোচনার বিষয়বস্তু নয়, একইসাথে তা ইসলাম ধর্মের প্রভু আল্লাহরও আলোচনার বিষয়বস্তু। কারণ ইসলাম ধর্মের প্রভু আল্লাহ পেঁয়াজের ঝাঁজাল গন্ধ সহ্য করতে না পেরে তাকে নিকৃষ্ট দ্রব্যের কাতারভুক্ত করেছেন, একইসাথে তার ভক্ত ও অনুসারীদেরকে পেঁয়াজ ভোগে নিরুৎসাহিত করেছেন। এমনকি যারা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে পেঁয়াজ ভোগের সিদ্ধান্তে অটল থাকবে, তাদেরকে আল্লাহ অভাব-অনটনের ন্যায় লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির হুমকি প্রদান করেছেন। আল-কুরআনে পেঁয়াজ বর্জনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলা হয়েছে -
স্মরণ করো, যখন তোমরা বলেছিলে, ‘হে মূসা! আমরা একই ধরনের খাবারের ওপর সবর করতে পারি না, তোমার রবের কাছে দোয়া করো যেন তিনি আমাদের জন্য শাক-সব্জি, গম, রসুন, পেঁয়াজ, ডাল ইত্যাদি কৃষিজাত দ্রব্যাদি উৎপন্ন করেন।’ তখন মূসা বলেছিল, ‘তোমরা কি একটি উৎকৃষ্ট জিনিসের পরিবর্তে নিকৃষ্ট জিনিস নিতে চাও? তাহলে তোমরা কোন নগরে গিয়ে বসবাস করো, তোমরা যা কিছু চাও সেখানে পেয়ে যাবে।’ অবশেষে অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছলো যার ফলে লাঞ্ছনা, অধঃপতন, দুরবস্থা ও অনটন তাদের ওপর চেপে বসলো এবং আল্লাহর গযব তাদেরকে ঘিরে ফেললো।
[সূরা বাকারা, আয়াত ৬১]
উক্ত আয়াতের শিক্ষা হলো: মূসার সম্প্রদায় ঈশ্বর প্রদত্ত একঘেয়ে খাবারের প্রতি বিরক্ত হয়ে তা থেকে নিস্তার পেতে বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবারের প্রতি আগ্রহ ব্যক্ত করে। শাকসবজি, গম, রসুন, পেঁয়াজ ও ডালের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবারের ব্যাপারে তারা মূসার মাধ্যমে ঈশ্বরের নিকট আবদার করে। আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী আমরা জানি যে, শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যপ্রাণ ও আঁশ বিদ্যমান, গম কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ, রসুন ও পেঁয়াজ যথেষ্ট ভৈষজিক গুণসম্পন্ন এবং ডাল আমিষের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। মূসার সম্প্রদায়ের দাবিকৃত খাবারসমূহের এত এত গুণ থাকা সত্ত্বেত্ত আল্লাহ এগুলো ভোগের চরম বিরোধী। তাই তিনি এগুলোকে ঈশ্বর প্রদত্ত একঘেয়ে উৎকৃষ্ট খাবারের বিপরীতে নিকৃষ্ট খাবার বলে আখ্যায়িত করেছেন। এবং এগুলো পেতে চাইলে কোনো এক নগরে গিয়ে বসবাস করার পরামর্শ দিয়েছেন। এমনকি ঈশ্বরের একঘেয়ে রুচির বিরোধিতা করায় লাঞ্ছনা, অধঃপতন, দুরবস্থা ও অনটন মূসার সম্প্রদায়ের ওপর চেপে বসেছিল এবং আল্লাহর গজব তাদের ঘিরে ফেলেছিল।

নিকৃষ্ট খাবার পেঁয়াজ-রসুনকে কেন্দ্র করে এমন তাৎপর্যময় শিক্ষা আল-কুরআনে থাকা সত্ত্বেত্ত বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় তা মানতে নারাজ। মুসলমানেরা আজীবন ইহুদি ধর্ম ও সংস্কৃতির চরম বিরোধিতা করে এলেও পেঁয়াজ রসুন-ভোগের প্রশ্নে তারা মূসার ইহুদি সম্প্রদায়ের ন্যায় ঈশ্বরবিরোধী। আল-কুরআনে পেঁয়াজ-রসুনকে ঈশ্বর ঘোষিত নিকৃষ্ট জিনিস হিসেবে জানলেও মুসলমানগণ তা উৎকৃষ্ট জিনিস হিসেবেই ভোগ করে থাকেন। পেঁয়াজ-রসুন ভোগের প্রশ্নে মুসলমানগণ আল-কুরআনের শিক্ষার বিরোধিতা করে মূলত আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন, যা চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ কুফরির সামিল। এই বিবেচনায় শাকসবজি ও পেঁয়াজ-রসুন ভোগকারী মুসলিম সম্প্রদায় মূলত মুসলিম বেশধারী কাফের। তাই মূসার ঈশ্বর যেমন পেঁয়াজখেকো ইহুদি সম্প্রদায়কে ঈশ্বরবিরোধিতার অপরাধে অভাব-অনটন দ্বারা শাস্তি দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি একই অপরাধে বর্তমান মুসলিম সম্প্রদায়কেও ঈশ্বরের হুকুম অমান্যের শাস্তি দিচ্ছেন মুহম্মদের আল্লাহ। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ বাংলাদেশে পেঁয়াজীয় গজব নাজিল করেছেন তিনি। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলার মুমিনকুলকে ঐশ্বরিক হুকুম অমান্যের শাস্তি দিচ্ছেন তিনি। যেন তারা চড়া মূল্যে পেঁয়াজ খরিদ করে অভাব-অনটনে নিপতিত হয়। উচ্চমূল্যে পেঁয়াজ ক্রয় করে তারা যেন দারিদ্র্যপীড়িত হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ অধঃপতন ও লাঞ্ছনা যেন তাদের ঘিরে থাকে। তাই আল-কুরআনে প্রদত্ত উক্ত অভিশাপ বাস্তবায়নের নিমিত্তে হঠাৎ পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির একমাত্র ও ঐশ্বরিক কারণ।

এক্ষেত্রে অভিশপ্ত পেঁয়াজ বর্জনের মাধ্যমেই শুধু আল্লাহ প্রদত্ত উর্ধ্বমূল্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সরকারের আশু কর্তব্য হলো: মুমিন মুসলমানদের অস্তিত্ব ও ঈমান রক্ষার্থে অবিলম্বে পেঁয়াজের উৎপাদন, বিপণন, বাজারজাতকরণ ও আমদানি-রপ্তানি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ। অর্থাৎ ঈমানবিধ্বংসী পেঁয়াজকে বাংলার জমিনে চিরতরে নিষিদ্ধ করা। যেন আর কোনো মুমিন পেঁয়াজের ঝাঁজাল গন্ধে আসক্ত হয়ে পেঁয়াজীয় গজবের শিকার না হয়। অথচ মদিনা সনদের ধ্বজাধারী বর্তমান আওয়ামি সরকার আল-কুরআনের শিক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে ঈমানবিধ্বংসী পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করতে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের কোনো উদ্যোগই যে সফল হবে না, সে বিষয়ে তারা একেবারেই ওয়াকিবহাল নয় হয়ত। যদি সরকার আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করতে সক্ষম হয়ও, সেক্ষেত্রে তা হবে আল্লাহর সাথে শিরকের সামিল। আর শিরকের গুনাহ আল্লাহ কখনও ক্ষমা করেন না। তবে ঈমানবিরোধী সরকারের এমন অবিমৃষ্যকারিতায় বাংলার জাতীয় মুমিন মুসলমানদের বসে বসে আঙ্গুল চুষলে হবে না। নিজেদের দূষিত ঈমানকে শুদ্ধ করতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। এই মুহূর্তে তাই বাংলার ছদ্মবেশী মুমিন মুসলমানদের আশু কর্তব্য হলো: ঈমানবিধ্বংসী পেঁয়াজ বর্জন করে নিজেদের ঈমানকে মজবুত করা এবং মুসলমানের ছদ্মবেশ পরিত্যাগ করে খাঁটি মুসলমান হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটানো। নইলে পেঁয়াজবিদ্বেষী আল্লাহর পেঁয়াজীয় গজবে খোদাদ্রোহী মুসলমানগণের ধ্বংস অনিবার্য।

রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৫

এ কী হেরিনু!

ধর্মবিশ্বাসীরা মাছের পেটে, বেগুনে, টমেটোয়, কাটা মাংসে, আমের আঁটিতে, গাছের পাতায়, টোস্টের ওপরে, এমনকি হাগনকুঠিতেও এবং সম্ভব-অসম্ভব সব স্থানে-অস্থানে, পাত্রে-অপাত্রে আল্লাহ-নবীর নাম (যিশু বা হিন্দু দেব-দেবীদের ক্ষেত্রে - চেহারা) খোদাই করা অবস্থায় দেখতে পায় প্রায়ই। এসবই ঐশী সংকেত।

অবশেষে নাস্তিকেরাও একটি সংকেত পেয়েছে তাদের দাবির সপক্ষে!

ভিডিও লিংক: https://youtu.be/l8-8WJxA-cI

(১০.০১.১০ তারিখে প্রথম প্রকাশিত) 

কোরান কুইজ – ৭৩

নিশ্চয়ই মোমিন মুসলমানগণ কোরান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন। বেয়াড়া নাস্তিকগনও নিজেদেরকে কোরান-অজ্ঞ বলেন না কখনও। তাই মুসলিম-নাস্তিক নির্বিশেষে সকলেই অংশ নিতে পারেন কোরানের আয়াতভিত্তিক এই ধাঁধা প্রতিযোগিতায়। এই সিরিজের মাধ্যমেই তাঁরা নিজেদের কোরান-জ্ঞান যাচাই করে নিতে পারবেন। 

প্রশ্ন ৮২: অবিশ্বাসীদের ভুল পথে চালায় কে?

১. আল্যা
২. শয়তান
৩. তারা নিজেরাই

উত্তর বেছে নিয়েছেন? এবারে মিলিয়ে দেখুন।
.
.

.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.

উত্তর ৮২: 

তিনটি উত্তরই সঠিক।
১. আল্যা (সুরা ৬:২৫, ৩৫:৮, ১০:১০০)
২. শয়তান (সুরা ১৫:৩৯, ১১৪:৫, ৪:১১৯)
৩. তারা নিজেরাই (সুরা ৯:৭০, ৬:১২, ৩০:৯)

পরম বিনোদনের ব্যাপার এই যে, একজন খাছ মুছলিম কোরানের অজস্র পরস্পরবিরোধী বাণী ও অগণ্য ভুল নিজে চোখে দেখলে বা অনুধাবন করলেও অবলীলায় দাবি করে - এই কিতাবখানাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ, যা সম্পূর্ণরূপে নিখুঁত, যাতে কোনও অসামঞ্জস্য নেই। এই জাতীয় চোখ-থাকিতেও-অন্ধ মানুষদের সম্পর্কে রিচার্ড ডকিন্স বলেছিলেন: a disgrace to the human species.

* কোরানের ছয়টি ভিন্ন অনুবাদ একসঙ্গে পাওয়া যাবে এখানে

** কৃতজ্ঞতা: আবুল কাশেম

ডাস্টবিন থেকে কুড়আনো চিন্তা - ০৬

লিখেছেন ধর্মব্যবসায়ী

১৬.
যা যা কাল্লা খাইরান = যা যা কল্লা কাইট্টান।

১৭.
- মুহম্মদের আগে কোন নবী এসেছিলেন ? 
- ইসা ইবনে আল্লা।

১৮.
(কল্পগল্প) মা কালী ও পাঠা বলি:
মা কালী অসূর বধে খড়গহস্ত হইয়া দিগ্বিদিক ঘুরিতেছিলেন। একদা ঝাঁকে ঝাঁকে অসুর আসিয়া কালীকে কোণঠাসা করিয়া ফেলে। উপায়ান্তর না দেখিয়া কালী পলায়নের পথ খুঁজিতে থাকে। সেই পথ ধরিয়া এক রাখাল ছাগলের পাল চড়াইয়া লইয়া যাইতেছিল। কালী তৎক্ষণাৎ ছাগলের বেশ ধরিয়া পালের মধ্যে ঢুকিয়া আত্মগোপন করিল। অকস্মাৎ একটা দাড়িওয়ালা পাঁঠা আসিয়া কালীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়, কালী অসম্মতি জ্ঞাপন করিয়া পাঁঠাটিকে এড়াইয়া চলার আপ্রাণ চেষ্টা করিলেও শেষ রক্ষা হয় নাই। 
সেই থেকে হিন্দুরা পাঁঠা বলি দেয়।

১৯.
- 'বিজ্ঞানমনস্ক' শব্দটির বিপরীত শব্দ কী?
- 'ধর্মপ্রাণ'।

২০.
আল্লা তালা - বাজারের সব থেকে দুর্বল এবং অকার্যকর তালা।
এই তালা দিয়ে না আটকানো যায় চোরকে, না আটকানো যায় ডাকাতকে।

বনি কুরাইজা গণহত্যা–৪: রায় ঘোষণা- ‘ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ ও লুট’!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব- ৯০) ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – চৌষট্টি

লিখেছেন গোলাপ

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯ পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭ > পর্ব ৪৮ > পর্ব ৪৯ > পর্ব ৫০ > পর্ব ৫১ > পর্ব ৫২ > পর্ব ৫৩ > পর্ব ৫৪ > পর্ব ৫৫ > পর্ব ৫৬ > পর্ব ৫৭ > পর্ব ৫৮ > পর্ব ৫৯ > পর্ব ৬০ > পর্ব ৬১ > পর্ব ৬২ > পর্ব ৬৩ > পর্ব ৬৪ > পর্ব ৬৫ > পর্ব ৬৬ > পর্ব ৬৭ > পর্ব ৬৮ > পর্ব ৬৯ > পর্ব ৭০ > পর্ব ৭১ > পর্ব ৭২ > পর্ব ৭৩ > পর্ব ৭৪ > পর্ব ৭৫ > পর্ব ৭৬ > পর্ব ৭৭ > পর্ব ৭৮ > পর্ব ৭৯ > পর্ব ৮০ > পর্ব ৮১ > পর্ব ৮২ > পর্ব ৮৩ > পর্ব ৮৪ > পর্ব ৮৫ > পর্ব ৮৬ > পর্ব ৮৭ > পর্ব ৮৮ > পর্ব ৮৯

বনি কুরাইজা গোত্রের লোকেরা স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কাছে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ করার পর তাঁদের মিত্র আল-আউস গোত্রের লোকেরা তাঁদের প্রাণ রক্ষার প্রচেষ্টায় উৎকণ্ঠিত অবস্থায় মুহাম্মদের কাছে দৌড়ে এসে কী আবেদন করেছিলেন, তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মুহাম্মদ তাদেরকে কী প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাঁরা তাঁর সেই প্রস্তাবে রাজিহলে মুহাম্মদ সা'দ বিন মুয়াদ নামের তাঁর এক একান্ত বিশ্বস্ত অনুসারীকে কী উদ্দেশ্যে বনি কুরাইজার বিরুদ্ধে ‘রায় প্রদানকারী’ রূপে ঘোষণা দিয়েছিলেন, মুহাম্মদের নির্বাচিত এই বিচারকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেমন ছিল, খন্দক যুদ্ধে তীরবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হওয়ার পর এই বিচারক 'বনি কুরাইজার প্রতি প্রতিহিংসা ও জিঘাংসার অভিপ্রায়'কীভাবে ব্যক্ত করেছিলেন - তার বিস্তারিত আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।

মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনার পুনরারম্ভ: [1][2]

পূর্ব প্রকাশিতের (পর্ব: ৮৯) পর:

‘আল্লাহর নবী তাঁর মসজিদে [বানু] আসলামের রুফায়েদা নামের এক মহিলার তাঁবুর ভিতরে সা'দ কে রেখেছিলেন। মহিলাটি আহত লোকদের সেবা-শুশ্রূষা করতেন ও যে স মুসলমানের সেবা-যত্নের প্রয়োজন, তাদেরকে তিনি দেখাশুনা করতেন। খন্দক যুদ্ধে যখন সা'দ তীরবিদ্ধ হয়ে আহত হন, তখন আল্লাহর নবী তাঁর লোকজনদের বলেন যে, তিনি পরে গিয়ে তার সাথে দেখা করার পূর্ব পর্যন্ত তাকে যেন রুফায়েদার তাঁবুর ভিতরে রাখা হয়।

যখন আল্লাহর নবী তাকে বনি কুরাইজার ব্যাপারে বিচারকের ভূমিকায় নিযুক্ত করেন, তার লোকেরা তার কাছে আগমন করে ওতাকে এক খচ্চরের পিঠের উপর বসানো চামড়ার গদির উপর আরোহণ করায়, সে ছিল স্থূলকায় এক মানুষ। তারা তাকে আল্লাহর নবীর নিকট নিয়ে আসে ও বলে, "তোমার মিত্রদের সাথে সদয় আচরণ করো,সেই কারণেই আল্লাহর নবী তোমাকে মধ্যস্থ নিযুক্ত করেছেন।"

যখন তারা তাকে জোরাজুরি করে, সে বলে, "এখন তার সময় এসেছে আল্লাহর নিমিত্তে কিছু করার, কোনো মানুষের অনুযোগে যত্নবান হওয়ার জন্য নয়।"

তার লোকদের যারা সেখানে উপস্থিত ছিল, তাদের মধ্যে থেকে কিছু লোক বানু আবদুল-আশহাল গোত্রের কোয়ার্টারে ফিরে আসে এবং সা'দ সেখানে পৌঁছার আগেই তাদের উদ্দেশে তারা বনি কুরাইজার লোকদের নিধনের ঘোষণা দেয়, কারণ তাকে তারা তাইই বলতে শুনেছিল।      

যখন সা'দ আল্লাহর নবী ও মুসলমানদের কাছে পৌঁছে, আল্লাহর নবী তাদের নেতাকে অভিবাদন জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে পড়ার আদেশ দেন।

কুরাইশ মুহাজিররা মনে করে যে,আল্লাহর নবী আনসারদের বোঝাতে চেয়েছেন, পক্ষান্তরে আনসাররা মনে করে যে, তিনি সবাইকে বোঝাতে চেয়েছেন, তাই তারা দাঁড়িয়ে যায় ও বলে, "হে আবু আমর, আল্লাহর নবী বিশ্বাস করে তোমাকে তোমার মিত্রদের ব্যাপারে নিযুক্ত করেছেন, যেন তুমি তাদের বিষয়ে রায় ঘোষণা করতে পারো।" [3]

সা'দ জবাবে বলে, "তোমরা কিআল্লাহর ওয়াস্তে অঙ্গীকারবদ্ধ যে, যে-রায় আমি ঘোষণা করবো, তা তোমরা মেনে নেবে?" তারা বলে "হ্যাঁ"।

সে আল্লাহর নবীর দিকে (তাকিয়ে) ও সম্মানহেতু তাঁর নাম উল্লেখ না করে বলে, "এটা কি তাঁর দায়িত্বে, যিনি এখানে উপস্থিত আছেন?" আল্লাহর নবী বলেন, "হ্যাঁ।"

সা'দ বলে, "তাহলে আমার রায় এই যে, 'তাদের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে হত্যা করো, তাদের সম্পত্তি বণ্টন করো ও তাদের মহিলা ও শিশু সন্তানদের বন্দী করো’।"

আলকামা বিন ওয়াককাস আল-লেইথি হইতে > আবদুল-রাহমান বিন আমর বিন সা'দ বিন মুয়াদ এর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আসিম নিন উমর বিন কাতাদা আমাকে জানিয়েছেন:

আল্লাহর নবী সা'দ কে বলেন, "তুমি যে রায়টি দিয়েছো, সেটিই হলো সাত আসমানের ওপর অধিষ্ঠিত আল্লাহর রায়।"’

(অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ - লেখক।)

>>> স্বঘোষিত আখেরি নবী মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর জীবদ্দশায় (৫৭০-৬৩২ সাল) যে স মানবতাবিরোধী নৃশংস অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, তার সবচেয়ে গর্হিত, নৃশংস ও হৃদয়বিদারক ঘটনাটি হলো এই 'বনি কুরাইজা গণহত্যা' সে কারণেই এই জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের বৈধতা প্রদানের প্রয়োজনে মুহাম্মদ অনুসারী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা গত ১৪০০ বছর যাবএই গণহত্যার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি তথ্যবিকৃতি ও মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। এই গণহত্যার সপক্ষে তারা সচরাচর যে-সবমিথ্যাচার ও কলা-কৌশলের আশ্রয় নেন, সেগুলো হলো:

"খন্দক যুদ্ধকালে তারা ‘চুক্তি ভঙ্গ’ করে মিত্রবাহিনীকে সাহায্য করেছিল!"
"বনি কুরাইজা গোত্রের লোকেরা 'মুহাম্মদের প্রস্তাবে' রাজিহয়েছিল!"
"তারা সা'দ বিন মুয়াদ কে মধ্যস্থতাকারীহিসাবে মেনে নিতে রাজিহয়েছিল!"
"সা'দের এই রায় ছিল ইহুদিদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ 'তৌরাত'এর নিয়ম অনুযায়ী!"

আদি উৎসের মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই লিখিত মুহাম্মদের জীবনীগ্রন্থ ('সিরাত') ও হাদিস গ্রন্থের বনি কুরাইজা উপাখ্যানের বর্ণনায় আলোকে এই সব 'অজুহাত' এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা যাক:


১) "খন্দক যুদ্ধকালে তারা চুক্তি ভঙ্গ করে মিত্রবাহিনীকে সাহায্য করেছিল"!

আদি উৎসে বিশিষ্ট মুসলিম স্কলারদেরই বর্ণিত খন্দক যুদ্ধ উপাখ্যানের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণে [পর্ব: ৭৭-৮৬] আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি, তাদের এই দাবির সপক্ষে সুনির্দিষ্ট একটি প্রমাণও কোথাও নেই। Not a single One!

২) "বনি কুরাইজা গোত্রের লোকেরা 'মুহাম্মদের প্রস্তাবে' রাজিহয়েছিল!"

আদি উৎসের মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই লিখিত মুহাম্মদের জীবনীগ্রন্থের বনি কুরাইজা উপাখ্যানের বর্ণনায় [4] যে বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পষ্ট,তা হলো, আত্মসমর্পণের পূর্বে বনি কুরাইজা গোত্রের লোকেরা “মুহাম্মদের কাছে কোনোরূপ শর্ত আরোপ করেছিলেন” এমন আভাস কোথাও নেই। বনি কুরাইজা গোত্রের লোকদের এমন ক্ষমতা ছিল না, তাঁরা ছিলেন অসহায় ও ভীত-সন্ত্রস্ত! তাঁরা মুহাম্মদের কাছে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

শুধু তাইই নয়, আত্মসমর্পণের পরেবনি কুরাইজা গোত্রের লোকেরা "তাঁদের প্রাণভিক্ষার জন্য মুহাম্মদের কাছে কখনো কোনো আবেদন বা অনুরোধ করেছিলেন”, এমন আভাসও কোথাও নেই!

বনি কুরাইজা গোত্রের লোকেরা নয়, আবদুল্লাহ বিন উবাই যেমন বনি-কেইনুকা ও বনি নাদির গোত্রের প্রাণভিক্ষার জন্য মুহাম্মদের কাছে আবেদন করেছিলেন, তেমনিভাবে আল-আউস গোত্রের লোকেরাবনি-কুরাইজা গোত্রের লোকদের প্রাণভিক্ষার জন্য মুহাম্মদের কাছে আবেদন করেছিলেন। (পর্ব: ৮৯)

আল-আউস গোত্রের উক্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মুহাম্মদ আল-আউস গোত্রের লোকদেরকে (বনি কুরাইজার লোকদের নয়) যে-প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন, তা হলো, বনি কুরাইজার বিষয়ে যদি আল-আউস গোত্রের কোনোলোক রায় প্রদান করে, তবে আল-আউস গোত্রের লোকেরা তাতে সন্তুষ্ট হবে কি না। মুহাম্মদের সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন আল-আউস গোত্রের লোকেরা, বনি কুরাইজার লোকেরা নয়। এই ঘটনার সময় বনি কুরাইজার কোনোলোক ঘটনাস্থলের আশেপাশে কোথাও ছিলেন, এমন তথ্যও কোথাও উল্লেখিত হয়নি

৩) "তারা সা'দ বিন মুয়াদ কে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে মেনে নিতে রাজিহয়েছিল!"

আল-আউস গোত্রের লোকদের নিকট প্রস্তাবিত মুহাম্মদের এই প্রস্তাবটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, “এই প্রস্তাবে মুহাম্মদ সুনির্দিষ্ট (Specific)কোনো লোকের নাম উল্লেখ করেননি।" অর্থাৎ, আল-আউস গোত্রের প্রতি মুহাম্মদের প্রস্তাবটি এমনটি ছিল না যে, "যদি তোমাদের গোত্র-নেতা 'আবদুল্লাহ বিন মুয়াদ' তোমাদের পক্ষ হতে বনি কুরাইজার বিষয়ে রায় প্রদান করে,তবে তোমরা তাতে সন্তুষ্ট হবে কি না।"

আল-আউস গোত্রের লোকেরা যখন উৎফুল্ল-চিত্তে মুহাম্মদের এই “অনির্দিষ্ট (non-specific/vague)” প্রস্তাবে সানন্দে রাজি হন, সম্ভবত, এই আশায় যে, যদি তাদের গোত্রের মধ্য থেকে কাউকে এই দায়িত্ব দেয়া হয় “তবে বনি কুরাইজার লোকদের প্রাণ রক্ষা হবে", তখন মুহাম্মদ 'সা'দ বিন মুয়াদের' নাম ঘোষণা করেন। মুহাম্মদ নিশ্চিত জানতেন যে, তাঁর এই একান্ত বিশ্বস্ত অনুসারী "তাঁর অভিপ্রায়ই" অনুগতভাবে পালন করবেন। “মুহাম্মদের পলিটিক্স (চাতুরী)' ছিল এইখানেই।

সুতরাং, আল-আউস গোত্রের লোকেরা তাদের গোত্র-নেতা 'সা'দ বিন মুয়াদের' রায় মেনে নিতে রাজি ছিলেন"- এই দাবির মধ্যে যে-সত্যতা আছে, তা হলো "এক চতুরতার ইতিহাস" উদ্দেশ্য সাধনের প্রয়োজনে মুহাম্মদ যে কীরূপ চতুরতার আশ্রয় অবলম্বন করতেন, এই ঘটনাটি হলো তারই এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ!

আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় যে-বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট,তা হলো, মুহাম্মদের প্রস্তাবে রাজিহওয়ার পর যখন মুহাম্মদ আল-আউস গোত্রের লোকদের উদ্দেশে 'সা'দ বিন মুয়াদের' নাম ঘোষণা করেন, তখন তারা উদ্বিগ্নচিত্তে বনি কুরাইজা গোত্রের লোকদের বাঁচানোর প্রাণপণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন।

তারা সা'দকে বিভিন্নভাবেএই মর্মে বারংবার অনুরোধ করতেই থাকেন যে, তিনি যেন বনি কুরাইজার লোকদের প্রতি সদয় হন। তাদের এই পীড়াপীড়ির পরিপ্রেক্ষিতেসা'দ ঘোষণা দেন যে, কোনো মানুষের অনুযোগে যত্নবান হওয়ার সময় তার নেই। এখন তার সময় এসেছে, "আল্লাহর নিমিত্তে কিছু করার"

অর্থাৎ মুহাম্মদের অভিপ্রায় চরিতার্থ করাকেই সা'দ বিন মুয়াদ তার একান্ত কর্তব্য বলে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন। এই বিষয়টি তীক্ষ্ণবুদ্ধির মুহাম্মদ সুনিশ্চিত জানতেন।

মুহাম্মদ ও সা'দের অভিপ্রায় যে অভিন্ন, তা আল-আউস গোত্রের লোকেরা সুনিশ্চিত জানতেন। তাই সা'দকে সদয় হওয়ার জন্য তাদের এত পীড়াপীড়ি!

আর এর প্রমাণ হলো,মুহাম্মদের 'সা'দ বিন মুয়াদের' নাম ঘোষণার পর আল আউস গোত্রের কিছু লোক সেই স্থান পরিত্যাগ করে বানু আবদুল-আশহাল গোত্রের কোয়ার্টারে ফিরে আসে ও "সা'দ সেখানে পৌঁছার আগেই" তারা তাদের উদ্দেশে বনি কুরাইজার গণহত্যার ঘোষণা দেয়! মুহাম্মদের নিযুক্ত এই মধ্যস্থতাকারীর রায় প্রদানের আগেই তারা কীভাবে বনি কুরাইজার এই ভবিষ্যৎ পরিণতির খবর জানতে পেরেছেন, তাও এই ঘটনার বর্ণনায় অত্যন্ত স্পষ্ট।

অন্যদিকে, সা'দ ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর তাকে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করার আদেশ জারি করে মুহাম্মদ তাঁর এই যুদ্ধাহত ও মৃত্যুপথযাত্রী অনুসারীর "নবীর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন ও নবীর অভিপ্রায় পূর্ণ করার আকাঙ্ক্ষা উজ্জীবিত করেন" ভক্তের প্রতি গুরুর এই অতিরিক্ত সম্মান প্রদর্শন ভক্তের গুরুভক্তির তীব্রতাকে বহু গুণে বৃদ্ধি করতে বাধ্য।

সা'দ যখন তার রায় ঘোষণা করেন, কোনোরূপ তথাকথিত ঐশী বাণীর আগমনের অপেক্ষা ও ঘটনা ছাড়াউৎফুল্ল মুহাম্মদ "আল্লাহর নামে" সাদের এই রায়ের সাথে তাঁর একাত্মতার ঘোষণা দেন।

প্রশ্ন হলো, 'সিরাতে' বনি কুরাইজার এই উপাখ্যানের প্রাণবন্ত ও বিস্তারিত (Vivid and detail) বর্ণনা থাকা সত্ত্বেকী কারণে ইসলাম-অনুসারী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবদাবি করে আসছেন যে, বনি কুরাইজা গোত্রের লোকেরা সা'দের রায় মেনে নিতে রাজি হয়েছিলেন? তাঁদের এই দাবির উৎস কী?”

তাঁদের এই দাবির উৎস হলো, 'সিরাত' রচনার একশত বছরেরও অধিক পরে (পর্ব: ৪৪) ইমাম বুখারীর (৮১০-৮৭০ সাল) রচিত ছয়-সাত লাইনের এক 'হাদিস';আর সেই হাদিসটি হলো:

সহি বুখারী: ভলুম ৪, বই নম্বর ৫২, হাদিস নম্বর ২৮০

‘আবু সাইদ আল-খুদরি হইতে বর্ণিত: যখন বনি কুরাইজা গোত্রের লোকেরা সা'দের রায় মেনে নিতে রাজি হয়, আল্লাহর নবী সা'দকে নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠান, সে তখন তাঁর নিকটেই ছিল। সা'দ এক খচ্চরের পিঠে চড়ে সেখানে আসে ও যখন সে নিকটবর্তী হয়, আল্লাহর নবী (আনসারদের) বলেন, "তোমাদের নেতার সম্মানে উঠে দাঁড়াও।" অতঃপর সা'দ সেখানে আসে ও আল্লাহর নবীর পাশে এসে বসে। আল্লাহর নবী তাকে বলেন, "এই লোকেরা তোমার রায় মেনে নিতে রাজি আছে

সা'দ বলে, "আমার রায় এই যে, তাদের যোদ্ধাদের হত্যা করো ও তাদের মহিলা ও শিশুদের বন্দী করো।" তখন আল্লাহর নবীর মন্তব্য ছিল,"হে সা'দ! তোমার রায়টি হলো আল্লাহর রায় (অথবা তার অনুরূপ)।" [5]

(অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ - লেখক।)

কিন্তু, ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি, দীর্ঘ ২৫ দিন যাব চারদিক থেকে অবরুদ্ধ থাকার পর বনি কুরাইজার লোকেরা অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত (কুরান: ৩৩:২৬) ও দুঃসহ অবস্থায় বিনা শর্তে মুহাম্মদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। বনি কুরাইজার লোকেরা মুহাম্মদের কাছে 'কোনোরূপ শর্ত আরোপ অথবা প্রাণভিক্ষার আবেদন জানিয়েছিলেন, এমন আভাস কোথাও নাই।

“'সিরাত' রচনার এক শতাব্দীরও অধিক পরে কোনোরূপ প্রামাণিক তথ্য ও ব্যাখ্যা (Evidence and explanation) ব্যতিরেকে এমন একটি দাবিযে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বনি কুরাইজার গণহত্যার বৈধতা প্রদানের অপচেষ্টা, তা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। যেখানে বনি কুরাইজা গোত্রের লোকেরা মুহাম্মদের কাছে 'কোনোরূপ শর্ত আরোপ অথবা প্রাণভিক্ষার কোনো আবেদনই করেননি’, সেখানে তারা ‘সা'দের রায় মেনে নিতে রাজি হয়' এমন দাবি একেবারেই অবান্তর!”

৪) "সা'দের এই রায় ছিল ইহুদিদের পবিত্র ধর্ম-গ্রন্থ 'তৌরাত' এর নিয়ম অনুযায়ী!"

আদি উৎসের বর্ণনায় এই দাবির আদৌ কোনো ভিত্তি নেই, সা'দ বিন মুয়াদ একজন "তৌরাত বিশেষজ্ঞ" ছিলেন,এমন ইতিহাস আদি উৎসের কোথাও উল্লেখিত হয়নি

সংক্ষেপে,

বনি কুরাইজার লোকেরা অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত ও দুঃসহ অবস্থায় "বিনা শর্তে" মুহাম্মদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। বনি কুরাইজা গোত্রের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের পর থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে রায় প্রদান করা পর্যন্ত "তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিণতির ব্যাপারে" যে সকল ঘটনাপ্রবাহ সংঘটিত হয়েছিল,তা ছিল মুহাম্মদ ও আল-আউস গোত্রের লোকদের মধ্যে।  বনি কুরাইজার কোনো লোক এ স ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

তাঁরা তাঁদের পরিণতির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। শুধুই অপেক্ষা!

[ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় আদি উৎসের বর্ণনার বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি।]

The narratives of Muhammad Ibne Ishaq (704-768 AD): [1] [2]

“The apostle had put Sa'd in a tent belonging to a woman of Aslam called Rufayda inside his mosque. She used to nurse the wounded and see to those Muslims who needed care. The apostle had told his people when Sa'd had been wounded by an arrow at the battle of the Trench to put him in Rufayda's tent until he could visit him later.

When the apostle appointed him umpire in the matter of B. Qurayza, his people came to himand mounted him on a donkey on which they had put a leather cushion, he being a corpulent man. As they brought him to the apostle they said, 'Deal kindly with your friends, for the apostle has made you umpire for that very purpose.'

When they persisted he said, 'The time has come for Sa'd in the cause of God, not to care for any man's censure.'

Some of his people who were there went back to the quarter of B. 'Abdu'l-Ashhal and announced to them the death of B. Qurayza before Sa'd got to them, because of what they had heard him say.

When Sa'd reached the apostle and the Muslims the apostle told them to get up to greet their leader. The muhajirs of Quraysh thought that the apostle meant the Ansar, while the latter thought that he meant everyone, so they got up and said 'O Abu' Amr, the apostle has entrusted to you the affair of your allies that you may give judgment concerning them.' [3]

Sa'd asked, 'Do you covenant by Allah that you accept the judgement I pronounce on them?' They said yes, and he said, 'And is it incumbent on the one who is here?' (Looking) in the direction of the apostle not mentioning him out of respect, and the apostle answered yes.

Sa'd said, 'Then I give judgement that the men should be killed, the property divided, and the women and children taken as captives.'

'Asim b. 'Umar b. Qatada told me from 'Abdu'l-Rahman b. 'Amr b. Sa'd b. Mu'adh from 'Alqama b. Waqqas al-Laythi that the apostle said to Sa'd, 'You have given the judgement of Allah above the seven heavens'.”

The Narratives of Imam Bukhari (810-870 AD):

‘Narated By Abu Sa'id Al-Khudri: When the tribe of Bani Quraiza was ready to accept Sad's judgment, Allah's Apostle sent for Sad who was near to him. Sad came, riding a donkey and when he came near, Allah's Apostle said (to the Ansar), "Stand up for your leader." Then Sad came and sat beside Allah's Apostle who said to him. "These people are ready to accept your judgment." Sad said, "I give the judgment that their warriors should be killed and their children and women should be taken as prisoners." The Prophet then remarked, "O Sad! You have judged amongst them with (or similar to) the judgment of the King Allah."’ [5]
(চলবে)

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ:  A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৪৬৩-৪৬৪

[2] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮,ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৪৯২-১৪৯৩ http://books.google.com/books?id=sD8_ePcl1UoC&printsec=frontcover&source=gbs_ge_summary_r&cad=0#v=onepage&q&f=false

[3] "আবু আমর" হলো সা'দ বিন মুয়াদের সম্মান-সূচক নাম, তারা তাকে এই সম্মান-সূচক নামে সম্বোধন করে। এই নামগুলোকে আরবে ‘কুনাহ (Kunah/ Kunyah)’ নামে অভিহিত করা হয়। (পর্ব- ৬৫)

[4] 'সিরাত'- আদি উৎসে বনি কুরাইজা উপাখ্যানের বর্ণনা:
ক) Ibid “সিরাত রসুল আল্লাহ"- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, পৃষ্ঠা ৪৬১-৪৬৯
খ) Ibid “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী, পৃষ্ঠা-১৪৮৫-১৫০০
গ) “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক: আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬, পৃষ্ঠা ৪৯৬-৫৩১

[5] সহি বুখারী: ভলুম ৪, বই নম্বর ৫২, হাদিস নম্বর ২৮০: http://www.hadithcollection.com/sahihbukhari/85-/3487-sahih-bukhari-volume-004-book-052-hadith-number-280.html

এই একই হাদিস বর্ণিত আছে: সহি বুখারী: ভলিউম ৫, বই ৫৯, নং ৪৪৭