লিখেছেন রুবাইয়্যাত আহসান
সব বিষয়ে ঘুরে ফিরে চলে আসে ইসলামের কথা। সত্যি বলতে এই সময়ে ধর্ম বিষয়ক যত ফাজলামো হচ্ছে তার সেভেন্টি পারসেন্ট করছে ইসলাম পালনকারীরা। আর আমাদের দেশে ধর্ম নিয়ে যত ফাজলামো জন্ম হয় তার নব্বই পারসেন্ট করে থাকে ইসলাম। সমস্যা হলো আমরা যারা এই ফাজলামোগুলো পছন্দ করি, পছন্দ করার কারণ অনেক জ্ঞানী-গুণী খুজে বের করেছেন আমরা নাকি এগুলোই সারাদিন খুঁজে বেড়াই। কথাটা কিঞ্চিত সত্য হওয়ার কারনে কোনো প্রকার ওজর আপত্তিতে যাচ্ছি না। তবে এই ফাজলামোগুলো দেখে হাসতে হাসতে যখন শেয়ার করি ব্লগে, অন্য আরো দশজনে যাতে মনমতো নিজের মতো করে একটু হাসতে পারে, সেটা আবার অনেকে পছন্দ করতে পারেন না। প্রতিদিন দশটা করে ফাজলামে জমা হতে থাক হিসাবের খাতায়। প্রতিদিন যদি একটা করে ফাজলামো শেয়ার করি তাহলে বকেয়া থেকে যায় প্রতিদিন নয়টা করে। কি বিশাল সংখ্যা দাড়াবে সেটা বছর শেষে, চিন্তা করেন একবার? আপনারা পছন্দ করেন না দেখে শেয়ারও করতে পারি না,ওদিকে আবার এগুলো জমে জমে পাহাড় হয়ে যেতে থাকে। আপনাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের কারণে কী বিশাল পরিমান ফাজলামো দেখা থেকে আপনার বঞ্চিত হচ্ছেন, তা একবার হিসেব কষে দেখুন।
ইফার পরিচালকের মাথার ঘুম হারাম হয়ে যায় যখন আমাদের দেশে মাওলানা আলেম-ওলামার সামনে হাতাকাটা জামা পড়া বেগানা নারী ঘুরে বেড়ায়। নাউজুবিল্লাহ বলে থুথু ছিটিয়ে রাস্তায় সমস্ত ঘৃণাটুকু দলা করে ছুড়ে মারেন রাস্তায়। সারারাস্তা গজব দিতে দিতে, অভিশাপ দিতে দিতে বাসার পাশের দোকান থেকে একটা পেল্লাই বোরকা কিনে পরিয়ে দেন বাসায় তরুণী স্ত্রীকে। আল্লাহর অসীম কুদরতে দুইদিন পরেই এই হুজুর কেরামতুল্লাহের সাহীরয়তিদের দেখা পাওয়া যায় পত্রিকার পাতায়- কুকাজ-অকাজ করতে গিয়ে পাবলিকের হাতে ধরা পড়ে জন্মদিনের ড্রেসে শ্রীঘরে গেলেন ইফার পরিচালক।
এইখবর গুলো আবার শেয়ার দিলেও লোকে চোখ টাটায়- ধর্মের নামে ইতরামি সহ্য হবে না!!!
এই কয়েকদিনে বেশ অনেক বিনোদন জমে গেছে। তবে উল্লেখ করার মতো মনঃপুত হলো এইটাকে- এক হুজুরে সাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লাম সুন্দর মতো ব্যাখ্যা করছেন, কী করে স্ত্রীকে পেটাতে হবে।
এর কয়েকদিন আগেই এক ফতোয়া জারি করা হয়- যেখানে বলা হয় স্ত্রীকে পেটানো যাবে আচ্ছামতো। তবে খেয়াল রাখতে হবে গায়ে যাতে কোন প্রকার দাগ না থাকে। অনেকটা হালের বলদের মতো। বুড়ো বলদ বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে গেলে সম্ভাব্য ক্রেতা যদি দেখতে পান ঘাড়ের নিচে জোয়ালের দাগ, সেক্ষেত্রে বলদ না কিনতে পারেন- এই ধরনের একটা কথা মাথায় রেখেই এই ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীর তালাকের পর তার পরবর্তী স্বামী যদি দেখতে পান তার গায়ে রয়েছে ইসলামী সুন্নতের নিদর্শন, তাতে তার পরবর্তী স্বামী এই স্ক্রাচওয়ালা স্ত্রী গ্রহণ করবেন কি না সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্বোচ্চ বিচারকমণ্ডলী বলেছেন, শরীরে আঘাতের দাগ না হওয়া পর্যন্ত একজন পুরুষ তার স্ত্রী ও ছোট বাচ্চাকে পেটাতে পারবেন। এক লোক তার স্ত্রী ও মেয়েকে নিষ্ঠুরভাবে মেরে কেটে রক্তাক্ত করার মামলায় ইসলামী অনুশাসন দ্বারা প্রভাবিত সেদেশের ফেডারেল সুপ্রিম কোর্টে ওই রায় দেওয়া হয়। সোমবার আবুধাবির ‘দ্য ন্যাশনাল’ পত্রিকায় রায়ের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। খবর এনডিটিভি অনলাইনের।
আরব আমিরাতে এক লোক তার স্ত্রী ও যুবতী মেয়েকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার ঘটনা সংক্রান্ত মামলায় চলতি মাসের গোড়ার দিকে সে দেশের ফেডারেল সুপ্রিম কোর্ট রায় প্রদান করেন। তাতে বলা হয়, নারী নির্যাতনের অভিযোগে লোকটি অভিযুক্ত। কিন্তু ইসলামী অনুশাসন ‘শৃঙ্খলা’র স্বার্থে ওই প্রহার অনুমোদন করে। তবে শরীরে দাগ না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রীকে পেটানো যাবে। রায়ে আরও বলা হয়, সন্তানের বয়ঃসন্ধির পর তাকে আঘাত করা যাবে না।
এই খবর প্রচারের পরবর্তী অংশটুকু দেখতে পারবেন নিচের ভিডিওতে, যেখানে এক বেহেশতগামী হুজুর বর্ণনা করছেন কী কী উপায়ে স্ত্রীকে পেটাতে হবে সহীহ ইসলামিক উপায়ে। হুজুরে পাকের উপর তার বড় হুজুরের দোয়া আছে- তাই তিন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াইতে পারছেন। দাঁড়াইয়া দুইটা লেদা ছাড়তে পারছেন। যদি বড় হুজুরের দোয়া না থাকতো তবে তিনি ব্লগ লেখতেন- ব্লগে আমরা লিটারেলি কিছু লেদা পাইতাম।

ইসলাম কি কি উপায়ে প্রহারের অনুমতি দেয় তা উপরোক্ত লেদাবাহিনীর চেয়ে নিচের হুজুর আরো ভালোমতো বর্ণনা করতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
কোনোভাবেই মুখে পেটানো যাবে না, যাতে করে তার মুখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সে দেখতে খারাপ হয়ে যেতে পারে।
দুই গালে চটাস-চটাস থাপড়ানো যাবে, গাল লাল হইলেও সমস্যা নাই - খেয়াল রাখতে হবে যাতে দাঁত খুইল্লা না আসে। কানে যাতে থাপ্পড় না লাগে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এই অংশটুকু পাবেন ভিডিওর একদম শেষে।
পশুরে যেভাবে পেটানো হয় ঠিক সেভাবে পেটানো যাবে না। পিটানোর মাঝে স্বামী শক্তি সঞ্চয় করার জন্য কিছু সময়ের বিরতি দিতে পারেন, যদি তিনি ইচ্ছা করেন। এক গ্লাস হরলিকস খেয়ে নিলে সোয়াব হবে এর মাঝে।
পাছায় মারা যাবে না। সেখানে দ্বিতীয় সুন্নত পালনে ঝামেলা হবে।
জুতানো যাবে । তাতে অপমান হবে, ব্যাথার চেয়ে বেশী যেটা কার্যকর।
লাথি মারা যাবে, মাপমতো বুঝে সুঝে। লাথি মারার সময় জুতা পড়া থাকলে ওকে- সমস্যা নাই।
(এখানে দেখে নিতে পারেন স্ত্রী-প্রহারের ইসলামী তরিকাগুচ্ছ)
নতুন আরেকটা ফাজলামো কতক্ষন আগেই দেখতে পেলাম ফেসবুক বন্ধুবরেষুদের কৃপায়-
এক নারী রাজনীতিবিদ কুয়েতে পুরুষদের যৌনদাসী রাখার ব্যাপারে সমর্থন দিয়েছেন এটাকে বৈধ করে নেওয়ার জন্য। ম্যাডামের চেহারা খানা আগে দেখিয়ে নেই- তারপর তারে নিয়ে আলাপ সালাপ করি।

ম্যাডামের বিচার বিবেচনার উপর চোখ বন্ধ করে আস্থা রাখা যায়। সালওয়া আল মুতাইরি নামের এই রাজনীতিবিদ ও টেলিভিশন উপস্থাপক বলেছেন পুরুষদের জন্য যৌনদাসী রাখার বৈধতা দেওয়া হলে সেটা তাদেরকে ব্যভিচারের হাত থেকে রক্ষা করবে।
এইটুকু বুদ্ধি দান করেই তিনি যদি থেমে যেতেন, তাইলে কথাই আছিলো- সবাই প্রশ্ন করতে পারতো, আপনার স্বামীর জন্য কোনো যৌনদাসী খরিদ করেছেন নাকি এখনো? আর যদি কিনেই থাকেন তাহলে কি আপনারা এখন থ্রিসাম করবেন?
এই প্রশ্ন কেউ তাকে করে নাই, আফসোস। জিজ্ঞাসা করছে এই দাসী কোথা থেইকা নিয়ে আসা হবে?
তিনিও চটপট তার জবাব দিয়ে দিছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে নারী বন্দীদের কিনে আনা যেতে পারে। কুমারী মেয়েদের দাম একটু চড়া হবে, কিন্তু তাতে কি? ভালো জিনিসের দাম তো একটু বেশী হবেই। এদেরকে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হলে এই যৌনদাসীগুলো খোদার পেয়ারা বান্দাদের অন্য নারীর দিকে আসক্ত হতে প্রতিহত করবে। বিদেশী এইসব যৌনদাসীগুলো তাদেরকে স্ত্রীর মতোই সার্ভিস দিবে।
আর যুদ্ধবিধ্বস্ত থেকে দেশ থেকে যৌনদাসী আনার ব্যাপারে তিনি যুক্তি দিয়েছেন সেখানে যে পরিমাণ দুর্ভিক্ষ ও দুর্দশা যুদ্ধপরবর্তী সময়ে শুরু হয়, তাতে করে তাদের যৌনদাসী করে নিয়ে আসা হলে কেউ আর অভুক্ত থেকে মারা যাবে না।
তারচেয়ে বড় কথা হলো বেহেশতে সত্তর হুরের সাথে ছহবত করার প্রিপারেশন তো দুনিয়া থেকেই নিয়ে যেতে হবে। এখন যদি দুনিয়াতে থেকে চারটা বউ আর দশটা যৌনদাসীকে একসাথে নিয়ে হালুম হুলুম না করতে পারে তাহলে বেহেশতে গিয়ে গেলমানদের শয্যাসঙ্গী হতে হবে।
সালওয়া আপা এইটাও নিশ্চিত করে বলেছেন এটাতে কোনো প্রকার লজ্জার কিছু নেই। কারণ পবিত্র কোরানুল কারীমেই এরশাদ করা আছে:
Qur’an 4:24—Also (forbidden are) women already married, except those (captives and slaves) whom your right hands possess.
আপার সাথে ফেসবুকে চ্যাট করতে হলে এই লিংকে তার প্রোফাইল দেখা যাবে- সালওয়া মুতাইরি। পোক মারা যাবে, তবে ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে যৌনদাসী কোথা হইতে আনা যাবে তা জিজ্ঞাসা করা যাবে না।
ইসলামিক শরীয়াহ আইনে এটা যে নিষিদ্ধ নয় তা সালওয়া আপা জানাতে ভুল করেন নি। উপরন্তু তার বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি পেশ করেছেন অষ্টম শতাব্দির মুসলিম নেতা হারুন আল রশিদের নাম। তার ২০০০ রক্ষিতা ছিলো। কেবল একটা উদাহরণ দিলে বক্তব্য জোরদার হয় না তাই আমরা এখানে আরো উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করতে পারি সম্রাট সোলায়মানের নাম- যার ছিলো তিনশর মতো রক্ষিতা। মুহাম্মদের নাম, যার বেশ কয়েকজন রক্ষিতা ছিলো। গৃহকর্মী যোগাড় করতে যেমন বিশেষ বিভাগ রয়েছে তেমনি যৌনদাসী সরবরাহের জন্য নির্দিষ্ট অফিস খোলা উচিত বলে সালওয়া আপা মতামত দিয়েছেন।
চেচনিয়া যুদ্ধের উদাহরণ সামনে এনেছেন এ প্রসঙ্গে: রাশিয়ান যুদ্ধবন্দী নারী সেখানে রয়েছে। তাদেরকে সেখান থেকে এনে কুয়েতে এনে বিক্রি করা হলে কতগুলো নিরীহ মেয়ে না খেতে পেয়ে মারা যাওয়া থেকে বেঁচে যেতে পারে। কুয়েতের চার বিয়ে করেও পুরুষদের যে চারিত্রিক অধঃপতন, সেখানকার বাদশাহদের দেখা যায় পশ্চিমে এসে প্রসটিটিউটেদের বাহুবন্ধনে ঘোরাঘুরি করতে , প্রতি হারামির বাসায় গৃহকর্মী পরিবর্তন করা হয় মাসান্তরে এ থেকে এই পদ্ধতি অনেক নিরাপদ বলে মনে করে সালওয়া।
একজনের টুইট এখানে শেয়ার করা হলো:
'Wonder how Salwa al Mutairi would’ve felt if during the occupation (of Kuwait) by Iraqi forces, she was sold as ‘war booty’ as she advocates for Chechen women,' tweeted Mona Eltahawy.

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন