আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১২

মুহাম্মদ হিমুর রক্তাক্ত প্রান্তর


লিখেছেন হিমালয় গাঙ্গুলী 

গাঞ্জার স্টিকে টান দিয়ে আমি খুক খুক করে কাশতে শুরু করলাম। গতকাল নাপিতসম্রাট জিব্রাইল আমাকে যে গাঞ্জা দিয়েছিল, তাতে মনে হয় ভেজাল ছিল। আজকাল কোনও কিছুই ভেজাল ছাড়া পাওয়া যায় না। একবার আমার খালাসদৃশ স্ত্রী খাদিজা বেগম আমাকে এক তাড়া ডলার দিয়েছিলেন। তার মধ্যে তিনখানা নোট ছিল জাল। বড়ই পরিতাপের বিষয়। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।

আবু বকর মিয়াকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসতে দেখা গেলো। এই লোকের বুদ্ধিমত্তা একটা মাঝারি সাইজের পাঙ্গাশ মাছের সমান। তার নাম আবু বকর না হয়ে আবুল বকরী হলে ঠিক হত। কোনও একটা রহস্যজনক কারণে সে আমাকে বিরাট ভক্তি-শ্রদ্ধা করে। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে আমার বরাবরই ভালো লাগে। প্রতিদিন আমি তার বিভ্রান্তি চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়িয়ে দিই। সম্প্রতি সে আমাকে প্রায় মহাপুরুষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

বকর হাঁপাতে হাঁপাতে এসে আমাকে লম্বা করে সালাম দিলো, "আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাত হু।"

আমি বিনীত গলায় বললাম, "অয়ালাইকুম আসসালাম, আব্বাজান।"

বকর পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে গেলো। ছাগল শ্রেণীর লোকজনকে বিভ্রান্ত করে তেমন মজা পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে আমাকে এই কাজ করতে হচ্ছে। কারণ আপাতত আমি আছি যুদ্ধের ময়দানে। মদীনার চারপাশে খাল কেটে বসে আছি। আমার ইনটিউশন ক্ষমতা প্রবল। সেই ইন্টিউশন বলছে, প্রায় ১৪০০ বছর পর আমার ভাবধারার একজন পূর্বদেশীয় সামরিক রাষ্ট্রপ্রধান তার দেশভর্তি খাল কেটে বেড়াবেন।

বকর হতভম্ভ ভঙ্গিতে বলল, "হুজুরে পাক কি আমাকে আব্বাজান ডাকলেন?"

আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, "না, শ্বশুর আব্বা ডেকেছি।"

বকরের চেহারায় প্রশ্নবোধক চিহ্ন ফুটে উঠল।

আমি উদাস গলায় বললাম, "ঘরে অবিবাহিত কন্যা থাকলে কি আর মন ঠিক থাকে! আপনার মন শান্ত করার জন্য আব্বাজান ডেকেছি, জনাব।"

আবু বকরের চোখ রসগোল্লা সাইজের হয়ে গেল। আমি মাঝে মাঝে আন্দাজে ঢিল মারি। এই ঢিলটা মনে হয় লেগে গেছে।

বকর বিস্মিত গলায় বলল, "আপনি কীভাবে জানলেন আমার ঘরে কুমারী মেয়ে আছে?"

আমি ফিসফিস করে ষড়যন্ত্রের ভঙ্গিতে বললাম, "আল্লাহ আমাকে কানে কানে বলে গেছেন। উনি মাঝে মাঝেই আমাকে কানে কানে গোপন কথা বলে যান। তিনি আরও বলেছেন আবু বকরের কুমারী মেয়েকে বিবাহ করতে। আপনাকে শ্বশুর ডাকলাম, এটাও আল্লাহের ইশারা।"

বকর বিড়বিড় করে বলল, "কিন্তু আমার মেয়ের বয়স মাত্র ৬ বছর।"

আমি গলায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ফুটিয়ে বললাম, "সবই আল্লাহর ইচ্ছা। এখন আপনি মানবেন কি না, সেটা আপনার ব্যাপার। মাছ ধরার অপরাধে আল্লাহ একবার একদল মানুষকে বান্দরে পরিণত করেছিলেন। এখন যদি আপনি চান আপনার নাম বকর মিয়া থেকে বান্দর মিয়া হোক, তাহলে হিসাব আলাদা।"

মাছ ধরার ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মহাপুরুষ হতে গেলে মিথ্যা বলা বাধ্যতামূলক। অদূর ভবিষ্যতে আমার যাবতীয় মিথ্যা কথা এবং ভণ্ডামি সাহিত্য আকারে প্রকাশ করার ইচ্ছা আছে। বইয়ের নামও ঠিক করে ফেলেছি, আল হাদিস। খুবই ইসলামী নাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দিয়ে বইয়ের ভুমিকা লেখাতে পারলে ভালো হত, তিনি হয়তো লিখতেন,
"আরব্য রজনীর লীলাভুমি অদ্যকার অন্ধকার আরব রাজ্যে উজ্জ্বল তরবারি হস্তে ধারণ করিয়া মহান বীর মুহাম্মদ হিমালয় অসাধ্য সাধন করিয়াছেন। শোণিতের খরস্রোতে ভাসিতেছে সোনার তরী। অসির ন্যায় মসী হস্তেও তিনি সমান দক্ষতায় উদ্ভাসিত হউন। তাঁহার ক্ষমতা সম্পর্কে বলিতে গেলে কাব্য ভিন্ন আমার পন্থা নাই:
...অন্ধ মরু গর্ভ হতে শুনেছিলে রমণীর আহবান
ঈমানদণ্ডের জাগরণে তুমি মুহাম্মদ আদি প্রাণ
শিশ্নশীর্ষে উত্থিতিলে গনিমতের প্রথম বন্দনা
রজঃহীন কিশোরীর সমতল বক্ষ 'পরে আনিলে বেদনা
নিঃসাড় নিঃসীম মরুস্থলে..."
বকরের কথায় আমার ঘোর কাটল। সে ইতস্তত করে বলল, "আল্লার উপরে কোনও কথা নাই। আপনার সহিত কন্যার বিবাহে আমি রাজি।"

আমি আনন্দে খাবি খাচ্ছি এমন একটা ভাব করে বললাম, "সে আব্বাজানের অশেষ মেহেরবানি।"

বকর বলদের সাথে আমার বেশি সময় কাটাতে হল না। সাফোয়ান নামের জনৈক যুবক আমাকে মিটিঙে ডেকে নিয়ে গেল। 

জিহাদি সৈনিকেরা সবাই সিরিয়াস মুখ করে বসে আছে। আমি আগ্রহ করে তাদের মুখভঙ্গি দেখছি। মানুষের চোখের দিকে ভালো করে তাকালে নাকি তার অন্তর পর্যন্ত দেখা যায়। আমি অন্তর পর্যন্ত দেখে ফেললাম। তাদের অন্তর ভর্তি শুধু হুর আর হুর। হুরে হুরে ধুল পরিমান। এরা সবাই রহস্যময় কারণে আমাকে মহাপুরুষ মনে করে। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে আমার ভালো লাগে বলে মাঝে মাঝেই আমি বানিয়ে বানিয়ে অনেক কিছু বলি। এই তৃতীয় শ্রেণীর গবেটগুলো সব চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে। একবার এদের কাকে যেন সাপে কাটল। কী মনে করে একজন তাকে আমার কাছে নিয়ে এল। আমি দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে ফুঁ দিলাম। ফুঁ-এর সাথে খানিক থুতুও বেরিয়ে গেল। আমার শিষ্যতুল্য নাপিত, জিব্রাইল প্রচার করা শুরু করল, সাপে কামড়ের চিকিৎসা হচ্ছে থুতু দেওয়া। ফাজলামি ব্যাপারটা আমার মজ্জাগত। কিন্তু এখন ফাজলামি করা যাবে না। আমি এই যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। আমি বিকট শব্দে গলা খাঁকারি দিলাম। 

যুদ্ধে অনেকগুলো ইহুদি ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে এক তরুণীকে দেখে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। তরুণী কাঁদছে। কাঁদলে কাউকে সুন্দর লাগে না, একে ইন্দ্রানির মত লাগছে। আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। মানুষ এত সুন্দর হয় কীভাবে! 

আমি কাছে গিয়ে গুনগুন করে গাইলাম, 
"দেখা হ্যায় প্যাহেলি বার,
সাজান কি আখো মে পিয়ার...
ট্যাক ট্যাকা ট্যাক
ট্যাক ট্যাকা ট্যাক"
বেশিক্ষণ গান গাওয়া গেল না। তরুণী সজোরে আমার গালে চড় কষিয়ে দিল।

বেশ বড়সড় একটা থাবড়া খেলাম এবং চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করলাম। আমি বিব্রত বোধ করলাম না। হিমুদের জন্য মান-সম্মান এগুলো নিষিদ্ধ। জিহাদি ভাইদের কাছ থেকে সুন্দরীর নাম উদ্ধার করলাম। তার নাম সাফিয়া। যুদ্ধে তার বাবা এবং স্বামীর ইন্তেকাল হয়েছে। আমি আমার মাতুল বংশ থেকে তেইশটা ভয়ংকর ক্রোমোজোম নিয়ে এসেছি বলে মৃত্যু ব্যাপারটা আমার কাছে স্বাভাবিকই মনে হল। তাছাড়া ঈমানদণ্ডের কাছে মৃত্যুদণ্ড ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। 

আমি সাফিয়া সুন্দরীকে নিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলাম। আমার আধ পাগল বাবা তার বিখ্যাত উপদেশ মালায় বলেছেন, "মুহাম্মদের জন্য সকল নারী জায়েজ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাপ্ত সামগ্রী ও নারী ইচ্ছামত ব্যবহার করা যাবে।"

খাটের কোথায় যেন ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ হচ্ছে। আমি পাত্তা দিলাম না। মহাপুরুষদের জন্য শারীরিক ব্যাপারগুলো যারা নিষিদ্ধ মনে করে, তাদের জন্য আমি গভীর করুণা বোধ করলাম। মহাপুরুষ মানে হল বেশি বেশি পুরুষ। আমি মহাপুরুষ কারণ আমার ঈমান ৩০ জন সাধারণ পুরুষের সমান মজবুত।

ঈমানদণ্ডের পূর্ণ ইস্তেমাল করে আমি পথে বেরিয়ে এলাম। অমাবস্যার নিশি প্রায় ভোর। আমি খালি পায়ে হাঁটছি। শিশিরে ভেজা ধূসর বালু দেখে মন খারাপ হয়ে যায়। কেমন একটা বিষাদ বিষাদ ভাব হয়। আসলে বিষাদগ্রস্ততা এক ধরনের দুঃখবিলাস। জগতে দুঃখ বলে কিছু নেই। অমাবস্যার পরেই আসে ভোর। এ জন্য ইচ্ছায় কোনও কার্পণ্য রাখতে হয় না । কেননা প্রকৃতি মানুষের কোনও ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন