(আমার রচনায় সাধু, চলিত, কথ্য, অকথ্য, শ্রাব্য, অশ্রাব্য সকল ভাষার মিশ্রণ থাইকতে পারে। আমার ভুল ধরা আপনাদের কাজ না। আপনাদের কাজ কোরানের আলোয় নিজেদের আলোকিত করা।)
প্রিয় কোরান পাঠক বন্ধুরা, আপনাদের জন্য কোরানের অমৃতসুধা বয়ে আনতে এবার একটু দেরী হইয়া গেল। আসলে আমি নিজে এই অমৃতসুধা পান করতে করতে এতই আসক্ত হয়ে গেসিলাম যে, বেশ কিছুদিন যাবত চোখে শুধু বেহেস্তী হুর, শরাব আর ফলমূল ছাড়া কিছুই দেখতাম না। রাস্তায় বের হলে যত বেগানা নারী দেখতাম (আল্লাহ মাফ করুক), সবাইকে আল্লাহর পাঠানো হুর বলেই মনে হইতো। একবার বাসে তো এক সুন্দরী রমণীকে দেখে আমার মধ্যে "রসুলুল্যার আদর্শ" মাথাচাড়া দিয়া উঠসিল। সে প্রকৃতপক্ষেই হুর কি না, তা পরখ করতে গিয়েই গোলমালটা বাধল। আরেকটু হলেই সে তার হিলজুতার ব্র্যান্ড আমার গালে ছেপে দিত। কিন্তু আল্যার অশেষ রহমতে বাসের লোকজন আমাকে মাঝপথে নামিয়ে দিয়ে আমার সম্মান রক্ষা করেছিল। কথায় আছে না, মানীর মান আল্যায় রাখে। ঠিক সেভাবেই আল্যা আমাকে অপমানের হাত থেকে রক্ষা করল। ঐ হারামজাদী যে দোযখে যাবে, এতে কোনো সন্দেহই নাই, তবে আল্যা তাকে কোন দোযখে পাঠাবে সেটাই চিন্তা করি। মনে মনে বলি, "হে নাদান লাড়কি, আমাকে অপমান করসস, তাতে কোনো আপসোস নাই, কিন্তু রসুলুল্যার আদর্শের যে পাছা মাইরা দিলি---সেই অপরাধে তো তোর হাবিয়া দোযখেও জায়গা হবে না।" আল্যা তাকে মাফ করুক। আহা রে! এত সুন্দর মাইয়া দোযখের আগুনে পুড়বে---ভাবলেও মনটা ব্যথায় ভইরা যায়।
ধুত্তারি, বলতে গেলাম কোরানের কথা, আইসা পড়ল সুন্দরী নারীর কথা। যাউকগা, আসল কথায় আসি। সভ্যতার শুরুর দিকে যখন মুদ্রার প্রচলন হয় নাই, তখন মানুষ বিনিময় প্রথার মাধ্যমে নিজের অভাব পূরণ করত। কিন্তু আপনারা কি কেউ জানেন, এই বিনিময় প্রথার কথা আল্যাই প্রথম কোরানে বলেছেন। আজ আমরা বিনিময় প্রথার সৃ্ষ্টি সম্পর্কে জানব, বন্ধুত্বের সীমারেখা সম্বন্ধে জানব, বেহেস্তের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানব এবং কোরান অবতীর্ণ হবার অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্যের কথা জানব। চলুন নিচের আয়াতগুলো পড়ি।
১) সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত ৪৫: কী বুঝলেন, জনাব? দয়ার সাগর আল্যা বলেছেন, চোখের বদলে চোখ, কানের বদলে কান, নাকের বদলে নাক এবং জখমের বদলে সমান জখম (কম-বেশী হতে পারবে না)। এর চেয়ে বেশী নিখুঁত বিনিময় প্রথা কি এই বিশ্বে আর কোথাও পাবেন? এই আয়াতে ক্ষমার কথা এসেছে পরে। ক্ষমা আবার কি? আপনি যদি প্রতিপক্ষের সাথে শক্তিতে না পারেন, তখন আসবে ক্ষমার কথা। আপনি পারার পরও যদি ছাইড়া দেন, তাইলে তো আপনি কাপুরুষ। আর মুসলমানরা বড়ই সাহসী জাতি। এই ধর্মে কাপুরুষদের কোনো স্থান নেই।
২) সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত ৫১: এখানে আল্যা মুমিনদেরকে বলেছেন ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের সাথে বন্ধুত্ব না করতে। ঠিকই তো আছে। মুসলমান বন্ধুত্ব করবে মুসলমানের সাথে। ইহুদির সাথে কী! মুহাম্মাদের উপরে কোন রসুল আছে--এই কথা যে বলে, সে তো অবশ্যই (আলেমের বাপ) জালেম। আর মহান আল্যার এত ঠেকা লাগে নাই যে, তিনি জালেমদের রাস্তায় ল্যাম্পপোষ্ট লাগায়ে বিদ্যুতের অপচয় করবেন।
৩) সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত ৮৫: আল্যা যে কতবড় আর্কিটেক্ট তা এই আয়াতেই বোঝা যায়। আমাদের দেশে নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা থাকার কারণে কত জায়গা নষ্ট হইতাসে। একবার চিন্তা করেন, এই সব জলাশয় যদি মাটির নিচে থাকত, তাইলে আবাদী জমি কত বাইড়া যাইত। এটা চিন্তা কইরা আল্যা বেহেস্তের নদীগুলানরে আন্ডারগ্রাউন্ডে পাঠায়া দিসে। হিসাব সোজা। বেহেস্তে যার যার পানির লাইন লাগবো, সে ঐ আন্ডারগ্রাউন্ড নদী থেইকাই লাইন নিবো। এতে সমস্যা একটাই। বেহেস্তবাসীদের স্যুয়ারেজ লাইনও ঐ নদীতে গিয়া পড়বো। তবে বেহেস্তী ফল খাইয়া হাগবে তো, তাই সেই হাগুও অতি সুমিষ্ট ও সুগন্ধযুক্ত হবে।
৪) সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত ৯৪: এই আয়াতটির অর্থ বুঝার জন্য আমি সুদূর চীন পর্যন্ত গেছি। সেখানে এক ইসলামী স্কলার আমাকে বললো, এ দুনিয়ায় কিছু মূর্খ মানুষ ইন্টারনেট, কৃত্রিম প্রাণ, মহাকাশযান ইত্যাদির পিছনে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করবে, আর কিছু জ্ঞানী মানুষ সব বাদ দিয়ে শুধু কোরান নিয়েই থাকবে। এই সকল জ্ঞানী মানুষেরা সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সাথে দু-পা থাকা সত্বেও গর্দভ নামক এক প্রকার অতি সুদৃশ্য ও ভারবাহী জীবে পরিণত হবে। কেবলমাত্র তারাই এই আয়াতের অর্থ বুঝতে পারবে। সাধারণ মানুষ পারবে না।
৫) সূরা আল-আন-আম, আয়াত ৮৫: এখানে কোরান অবতীর্ণ হবার কারণ বিষয়ে আল্যা কথা বলেছেন। আপনারা যারা শিক্ষিত, তারা নিশ্চয় বিভিন্ন সময় সার্টিফিকেট এটেস্ট (সত্যায়ন) করতে যান (অথচ আল্যাই সর্ববৃহত এটেস্টকারী)। ঠিক সেরকম, আল্যাও এটেস্ট করছেন যে, কোরান যেসব গ্রন্থকে সত্য বলে মানে, শুধুমাত্র সেগুলোই সত্য। বাকিগুলো মানুষই নিজে লেখিয়া আল্যার নামে চালাইতেসে। অতএব ধর্মবই কিনা বা পড়ার আগে যাচাই করে নিন---তা "হেরা প্রকাশনী" কর্তৃক প্রকাশিত ও বেহেস্তী হলোগ্রাম স্টিকারযুক্ত কিনা। আর এই এটেস্টেড গ্রন্থ দিয়া রসুলুল্যা যাতে পাবলিকরে ডর দেখাইতে পারে, সেজন্যই আল্যা কোরান পাঠিয়েছেন।
কোরান পাঠকগণ, কোরাণ পাঠ আসরের দীর্ঘ বিরতিতে আপনাদের যে জ্ঞানতৃষ্ণা জাগ্রত হয়েছিল--আশা করি তা কিছুটা হলেও নিবৃত করতে পেরেছি।