আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০১৬

ঈশ্বরের ইতিহাস - ৪ (সৃষ্টিতত্ত্ব)

লিখেছেন মেসবাহ উস সালেহীন

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩

ইসলামী মিথ অনুযায়ী, আদম আর হাওয়া হচ্ছেন আদি পিতা-মাতা। আদমের বংশধরদের বলে আদমী। হিন্দু মিথ অনুযায়ী, আদি পিতা মনু আর আদি মাতা হচ্ছেন শতরুপা। মনুর সন্তানকে বলে মানুষ। এই কন্সেপ্টের কারণে আমার এলাকায় এক মুরুব্বি মানুষকে মানুষ বলতেন না, সব সময় বলতেন আদমী। কাউকে মানুষ বলে ডাকলেই তিনি স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, ও হচ্ছে মনুর বংশধর। তাঁর কাছে এটা খুবই গুরুতর পাপ বলে মনে হতো।

আমরা তাহলে কার বংশধর? আদম নাকি মনুর? নাকি পৃথিবীতে প্রাণ এসেছে অন্য উপায়ে? ধর্মগুলো কি বলে এ ব্যাপারে? কবে পৃথিবী সৃষ্টি হল?

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে 'দি স্টোরি অফ গড' নামে একটা প্রোগ্রাম হয়েছিল, যেটার ৪ নাম্বার এপিসোডের বিষয় ছিল সৃষ্টিতত্ত্ব। এপিসোডটার রিভিউ লেখার চেষ্টা করছি।

প্রোগ্রামের হোস্ট মরগ্যান ফ্রিম্যান কথা বলেছেন বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সাথে। তবে মেইনস্ট্রিম ধর্মগুলো থেকে তিনি খুব সামান্য সাহায্যই পেয়েছেন। ভারতীয় হিন্দুধর্ম বিশারদ benda paranjape, মিশরের ইসলামি গবেষক আহমেদ রাগাব কিংবা রোমের father guiseppe tanzella-এর সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে সবাই বলেছে, বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মীয়ভাবে সৃষ্টিতত্ত্ব ব্যাখ্যা করা যাবে না। ঈশ্বর বিগ ব্যাং হওয়ারও আগেই ছিলেন, হয়তো তিনিই বিগ ব্যাং ঘটিয়েছেন। ধর্মীয় কেতাবে যা লেখা আছে, যেভাবে সৃষ্টি হওয়ার কথা লেখা আছে, সেটা বিজ্ঞান প্রমাণ করতে পারে না, আবার ভুল প্রমাণ করতেও পারে না।তাই এই আলোচনাগুলো পৃথক রাখা উচিত। ঈশ্বর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, ভাল কথা, তাহলে ঈশ্বরকে সৃষ্টি করেছেন কে? এই প্রশ্নের উত্তরে সবাই বলেছেন, আমরা অনেক ক্ষুদ্র প্রাণী, এই প্রশ্নের উত্তর আমরা খুঁজতে পারব না। এটা আমাদের জ্ঞানবুদ্ধির বাইরে, আমাদের স্রেফ বিশ্বাস করতে হবে যে, ঈশ্বর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।

ইহুদি, খ্রিষ্টান এবং মুসলমান – প্রধান এই ৩ টি ধর্মেই একটা কমন মিথ পাওয়া যায়: "ঈশ্বর ৬ দিনে পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলী তৈরি করেছিলেন।" বাইবেলের বুক অফ জেনেসিস-এ সৃষ্টি সম্পর্কে একটা দীর্ঘ বর্ণনা রয়েছে। দীর্ঘ হওয়া সত্ত্বেও আমি এখানে সেটা উদ্ধৃত করছি:
১. শুরুতে, ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। প্রথমে পৃথিবী সম্পূর্ণ শূন্য ছিল; পৃথিবীতে কিছুই ছিল না। ২. অন্ধকারে আবৃত ছিল জলরাশি আর ঈশ্বরের আত্মা সেই জলরাশির উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিল। ৩. তারপর ঈশ্বর বললেন, “আলো ফুটুক!” তখনই আলো ফুটতে শুরু করল। ৪. আলো দেখে ঈশ্বর বুঝলেন, আলো ভাল। তখন ঈশ্বর অন্ধকার থেকে আলোকে পৃথক করলেন। ৫. ঈশ্বর আলোর নাম দিলেন, “দিন” এবং অন্ধকারের নাম দিলেন “রাত্রি।” সন্ধ্যা হল এবং সেখানে সকাল হল। এই হল প্রথম দিন। ৬. তারপর ঈশ্বর বললেন, “জলকে দুভাগ করবার জন্য আকাশমণ্ডলের ব্যবস্থা হোক।” ৭. তাই ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করলেন। এক ভাগ জল আকাশমণ্ডলের উপরে আর অন্য ভাগ জল আকাশমণ্ডলের নীচে থাকল। ৮. ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের নাম দিলেন “আকাশ।” সন্ধ্যা হল আর তারপর সকাল হল। এটা হল দ্বিতীয় দিন। ৯. তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশের নীচের জল এক জায়গায় জমা হোক যাতে শুকনো ডাঙা দেখা যায়।” এবং তা-ই হল। ১০. ঈশ্বর শুকনো জমির নাম দিলেন, “পৃথিবী” এবং এক জায়গায় জমা জলের নাম দিলেন, “মহাসাগর।” ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে। ১১. তখন ঈশ্বর বললেন, “পৃথিবীতে ঘাস হোক, শস্যদায়ী গাছ ও ফলের গাছপালা হোক। ফলের গাছগুলিতে ফল আর ফলের ভেতরে বীজ হোক। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করুক। এইসব গাছপালা পৃথিবীতে বেড়ে উঠুক।” আর তাই-ই হল। ১২. পৃথিবীতে ঘাস আর শস্যদায়ী উদ্ভিদ উত্পন্ন হল। আবার ফলদাযী গাছপালাও হল, ফলের ভেতরে বীজ হল। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে। ১৩. সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে হল তৃতীয় দিন। ১৪. তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশে আলো ফুটুক। এই আলো দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করবে। এই আলোগুলি বিশেষ সভাশুরু করার বিশেষ বিশেষ সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর দিন ও বছর বোঝাবার জন্য এই আলোগুলি ব্যবহৃত হবে। ১৫. পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য এই আলোগুলি আকাশে থাকবে।” এবং তা-ই হল। ১৬. তখন ঈশ্বর দুটি মহাজ্যোতি বানালেন। ঈশ্বর বড়টি বানালেন দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য আর ছোটটি বানালেন রাত্রিবেলা রাজত্ব করার জন্য। ঈশ্বর তারকারাজিও সৃষ্টি করলেন। ১৭. পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে স্থাপন করলেন। ১৮. দিন ও রাত্রিকে কর্তৃত্ত্ব দেবার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে সাজালেন। এই আলোগুলি আলো আর অন্ধকারকে পৃথক করে দিল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে। ১৯. সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে চতুর্থ দিন হল। ২০. তারপর ঈশ্বর বললেন, “বহু প্রকার জীবন্ত প্রাণীতে জল পূর্ণ হোক আর পৃথিবীর ওপরে আকাশে ওড়বার জন্য বহু পাখী হোক।” ২১. সুতরাং ঈশ্বর বড় বড় জলজন্তু এবং জলে বিচরণ করবে এমন সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করলেন। অনেক প্রকার সামুদ্রিক জীব রয়েছে এবং সে সবই ঈশ্বরের সৃষ্টি। যত রকম পাখী আকাশে ওড়ে সেইসবও ঈশ্বর বানালেন। এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটি ভাল হয়েছে। ২২. ঈশ্বর এই সমস্ত প্রাণীদের আশীর্বাদ করলেন। ঈশ্বর সামুদ্রিক প্রাণীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করে সমুদ্র ভরিয়ে তুলতে বললেন। ঈশ্বর পৃথিবীতে পাখীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে বললেন। ২৩. সন্ধ্যা হয়ে গেল এবং তারপর সকাল হল। এভাবে পঞ্চম দিন কেটে গেল। ২৪. তারপর ঈশ্বর বললেন, “নানারকম প্রাণী পৃথিবীতে উত্পন্ন হোক। নানারকম বড় আকারের জন্তু জানোয়ার আর বুকে হেঁটে চলার নানারকম ছোট প্রাণী হোক এবং প্রচুর সংখ্যায় তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি হোক।” তখন য়েমন তিনি বললেন সব কিছু সম্পন্ন হল। ২৫. সুতরাং ঈশ্বর সব রকম জন্তু জানোয়ার তেমনভাবে তৈরী করলেন। বন্য জন্তু, পোষ্য জন্তু আর বুকে হাঁটার সবরকমের ছোট ছোট প্রাণী ঈশ্বর বানালেন এবং ঈশ্বর দেখলেন প্রতিটি জিনিসই বেশ ভালো হয়েছে। ২৬. তখন ঈশ্বর বললেন, “এখন এস, আমরা মানুষ সৃষ্টি করি। আমাদের আদলে আমরা মানুষ সৃষ্টি করব। মানুষ হবে ঠিক আমাদের মত| তারা সমুদ্রের সমস্ত মাছের ওপরে আর আকাশের সমস্ত পাখীর ওপরে কর্তৃত্ত্ব করবে। তারা পৃথিবীর সমস্ত বড় জানোয়ার আর বুকে হাঁটা সমস্ত ছোট প্রাণীর উপরে কর্তৃত্ত্ব করবে।” ২৭. তাই ঈশ্বর নিজের মতোই মানুষ সৃষ্টি করলেন। মানুষ হল তাঁর ছাঁচে গড়া জীব। ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও স্ত্রীরূপে সৃষ্টি করলেন। ২৮. ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমাদের বহু সন্তানসন্ততি হোক। মানুষে মানুষে পৃথিবী পরিপূর্ণ করো এবং তোমরা পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণের ভার নাও, সমুদ্রে মাছেদের এবং বাতাসে পাখিদের শাসন করো। মাটির ওপর যা কিছু নড়েচড়ে, যাবতীয় প্রাণীকে তোমরা শাসন করো।” ২৯. ঈশ্বর বললেন, “আমি তোমাদের শস্যদায়ী সমস্ত গাছ ও সমস্ত ফলদাযী গাছপালা দিচ্ছি। ঐসব গাছ বীজযুক্ত ফল উত্‌পাদন করে। এই সমস্ত শস্য ও ফল হবে তোমাদের খাদ্য। ৩০. এবং জানোয়ারদের সমস্ত সবুজ গাছপালা দিচ্ছি। তাদের খাদ্য হবে সবুজ গাছপালা| পৃথিবীর সমস্ত জন্তু জানোয়ার, আকাশের সমস্ত পাখি এবং মাটির উপরে বুকে হাঁটে য়েসব কীট সবাই ঐ খাদ্য খাবে।” এবং এই সব কিছুই সম্পন্ন হল। ৩১. ঈশ্বর যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেসব কিছু দেখলেন এবং ঈশ্বর দেখলেন সমস্ত সৃষ্টিই খুব ভাল হয়েছে। সন্ধ্যা হল, তারপর সকাল হল। এভাবে ষষ্ঠ দিন হল।
বাইবেলের ওপরের বর্ণনায় আমরা দেখতে পাই, সব বর্ণনা পৃথিবীকেন্দ্রিক। সূর্য তৈরি হয়েছে অনেক পরে, ১৬ নাম্বার আয়াতে। সূর্য আসার আগেই আলো এসেছিল, বাইবেলের বর্ণনায় আলোর উৎস সম্পর্কে কিছু বলা নেই।

বৈজ্ঞানিকভাবে, সৃষ্টির প্রথমে সব পদার্থ এবং শক্তি এক জায়গায় ঘনীভূত অবস্থায় ছিল। এই পরমাণুটির নাম সুপার অ্যাটম। এই সুপার অ্যাটমটি বিস্ফোরিত হয়, একে বলে বিগ ব্যাং। তখন স্পেস এবং টাইম সৃষ্টি হয়। এটা প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগের কথা (১৩৮০ কোটি বছর) সৃষ্টির কেন্দ্র থেকে সব পদার্থ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কেন্দ্র থেকে দূরে চলে যাওয়ার এই প্রবণতা এখনো রয়েছে।আমাদের সূর্য সৃষ্টি হয়েছিল ৪৬০ কোটি বছর আগে। সূর্যের গায়ে একটা ধূমকেতে আঘাত করার ফলে সূর্যের কিছু অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে লাগল। দীর্ঘদিন ঘুরতে ঘুরতে ওটা গোল আকার ধারণ করল, ওটাই পৃথিবী। সেটা ৪৫০ কোটি বছর আগের কথা।অন্যান্য গ্রহগুলোও এভাবেই সৃষ্টি হয়েছিল। পৃথিবীকে একটা ধূমকেতে আঘাত করায় এইভাবে পৃথিবীর কিছু অংশ নিয়ে চাঁদ সৃষ্টি হল।

পৃথিবী ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হল। পানি এলো ৪১০ কোটি বছর আগে।  ৩৯০ কোটি বছর আগে পানির ভেতরে সরল এককোষী প্রাণ সৃষ্টি হল (কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রজেন ইত্যাদি মৌলিক কণাগুলা একত্রে থাকা অবস্থায় বিদ্যুৎ স্ফুলিংগ চালান হলে অ্যামাইনো অ্যাসিড/সরল প্রাণ/ব্যাকটেরয়া তৈরি করা যায়। বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরিতে এটা তৈরি করেতে পেরেছেন। ৩৯০ কোটি বছর আগে, সম্ভবত, বাতাসের বিদ্যুৎ চমকের মাধ্যমে কার্বন, নাইট্রজেন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো একত্রে মিলিত হয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে প্রথম প্রাণ তৈরি হয়েছিল) এককোষী সরল প্রাণ থেকে পরে বিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে জটিল প্রাণ তৈরি হয়েছিল। এই কাজে সময় লেগেছিল কোটি কোটি বছর। প্রথম প্রাণটি ছিল উদ্ভিদ আর প্রাণীর মাঝামাঝি কোষ। পরে পৃথকভাবে উদ্ভিদ তৈরি হল, প্রাণী তৈরি হল। প্রথমে এলো অ্যামিবা জাতীয় সরল এককোষী প্রাণী ।তারপরে এলো পরিফেরা, নিডারিয়া পর্বের বহুকোষী সরল প্রাণী। তারপরে ধীরে ধীরে এলো জটিলতর প্রাণী। উদ্ভিদের ভেতরে অনেক রকমের ফাইটোপ্লাংকটন, শ্যাওলা, শৈবাল তৈরি হল। তখন সব প্রাণই ছিল পানিতে। কিছু শৈবাল ঢেউয়ের কারণে চলে গেল পানির কিনারায়, ডাঙায়। সেখানে মাটিতে অধিকাংশ শৈবাল শুকিয়ে গেল, কিছু কিছু শৈবাল মাটি থেকে পানি ও খাবার শুষে নিয়ে বেঁচে থাকল। এভাবে ডাঙায় উদ্ভিদ এল। অনেক জাতের উদ্ভিদ হল। মাছেরা আগে শ্যাওলা খেয়ে বেঁচে থাকত।ডাঙায় গাছপালা দেখে তারা ডাঙায় খাওয়ার জন্য চলে এল কেউ কেউ। তৈরি হল উভচর (কুমির জাতীয় প্রাণী) ছোট ছোট পোকামাকড়ের উদ্ভব হল। পোকা-খাওয়া উভচর তৈরি হল। পোকারা গাছের উঁচু ডালে চলে গেল। তাদের খাওয়ার জন্য উভচরেরা লাফ দিয়ে দিয়ে গাছের মগডালে ওঠা শিখল। কোটি কোটি বছর ধরে এভাবে লাফ-ঝাপ দিতে দিতে তাদের ডানা জাতীয় অঙ্গ গজাল। তৈরি হল পাখি। ৩ কোটি বছর আগে এলো স্তন্যপায়ী প্রাণী। মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স) এসেছে প্রায় ২০ লাখ বছর আগে।

অনেকে প্রশ্ন করে: বৈজ্ঞানিক সৃষ্টিতত্ত্ব অনুযায়ী বিগ ব্যাং-এর আগে কী ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর হছে, বিগ ব্যাং থেকেই সময় সৃষ্টি হয়েছিল।এর আগে যাওয়া সম্ভব নয়। যেমনভাবে উত্তর মেরুর উত্তরে কিছু নেই, ঠিক তেমনিভাবে বিগ ব্যাং-এর আগেও কিছু থাকা সম্ভব নয়।

বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রথমে ঈশ্বর মাটি দিয়ে আদম এবং হাওয়াকে তৈরি করে ইডেন গার্ডেনে (বেহেশত) রাখলেন। (তখনকার রসায়নবিদেরা জানতেন, মৌলিক পদার্থ ৪ টি - মাটি, পানি, আগুন আর বাতাস। তাঁরা সব কিছুকে এই ৪ টি মৌলিক পদার্থের তৈরি বলেই মনে করতেন। এভাবেই সবকিছু ব্যাখ্যা করতেন - যেমন, মানুষ মাটির তৈরি, জ্বিন আগুনের তৈরি। আরব রসায়নবিদেরা নূর, মানে আলোকেও মৌলিক পদার্থ মনে করতেন। তাঁরা ব্যাখ্যা দিতেন, ফেরেশতারা নূর দিয়ে তৈরি) ইডেন গার্ডেনে ঈশ্বর আদেশ দিয়েছিলেন: খবরদার, গন্ধম ফল খেতে যাবে না তোমরা! কিন্তু ওরা ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করে গন্ধম ফল খেয়েছিল। ফলে তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে তাদেরকে ইডেন গার্ডেন থেকে বের করে দিলেন। বাইরে বের হবার পরে তাদের বাচ্চাকাচ্চা হল। তারা সব সময় ইডেনে ফেরত যেতে চাইত, কিন্তু যেতে পারেনি। বাচ্চাকাচ্চাদের গল্প বলত ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম!’ বাচ্চাদের মাথাতেও সেই ইডেন গার্ডেনে ফেরত যাওয়ার স্বপ্ন ঢুকে গেল।

ইডেন গার্ডেনে আদম আর হাওয়াকে খাওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হত না। কারণ ইডেন গার্ডেনে অগনিত ফলফলাদি গাছে ঝুলে রয়েছে। পৃথিবীতে খাওয়া আহরণ এত সগজ নয়। আল্লাহ আদম আর ইভকে পৃথিবীতে পাঠানোর সময়েই বলেছিলেন, "যাও, কৃষিকাজ করে খাও।" এখানের মাটিতে লাঙল দিয়ে জমি চাষ করে বীজ বুনলে তারপরে খাওয়ার উপযোগী খাদ্য পাওয়া যায়, তৈরি খাবার পাওয়া সহজ নয়।

তাহলে কি ধর্মের সাথে কৃষিকাজের কোনো সম্পর্ক রয়েছে? একটা সময় মানুষ যাযাবর জীবনযাপন করত। আজ এখানে, কাল ওখানে -এভাবে ঘুরে বেড়াত নিজের নিজের মত করে। জমি চাষ করা শুরু হলে মানুষ কোনো এক জায়গায় স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করল, কারণ ফসল না পাকা পর্যন্ত তাকে ওই জায়গায় অপেক্ষা করতেই হবে। অনেকে এক জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে করতে দলবদ্ধ হয়ে গ্রাম গঠন করে ফেলল। ধর্মের উৎপত্তিও কি তখন থেকেই?

মরগ্যান ফ্রিম্যান গিয়েছিলেন তুরস্কে চ্যাতেলহুইওক নামের এক আর্কিওলজিকাল সাইটে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মাটি খুঁড়ে এই শহরটা খুঁজে বের করেছেন। এটা প্রায় ৯ হাজার বছরের পুরনো। পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া এটাই প্রাচীনতম শহর। মেসোপটেমিয়া সভ্যতার অংশ ছিল এই শহর। এই শহরের মানুষের ধর্মবিশ্বাস খোঁজার চেষ্টা করলেন মরগ্যান ফ্রিম্যান। লক্ষণ দেখে মনে হল, এই শহরের মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ধর্মে বিশ্বাসী ছিল না। তারা পূর্বপুরুষদের পূজা করত। তাদের বাসার যে জায়গায় তারা ঘুমাতো, সেই মাথা রাখার জায়গার নিচেই থাকত কবরখানা। গর্ত করে সেই গর্তে মানুষদের হাড়গোড় ফেলে দিয়ে গর্তটা বন্ধ করে দিত তারা। নতুন কেউ মারা গেলে আবার সেই গর্তটা খুলে নতুন মানুষের লাশ/হাড়গোড় ওটার ভেতরে ফেলে আবার গর্তটা আটকে দিত। এভাবেই তারা পূর্বপুরুষদের আত্মার সাথে একই বাড়িতে বসবাস করতো।

ব্যবহারের দিক থেকে তাদের বাড়িটাই ছিল আসলে মন্দির। শহরে আলাদা আর কোনো মন্দির ছিল না। তবে চ্যাতেলহুইক থেকে বেশ কিছুটা দূরে গোবেকিলি টেপি নামে আরেকটা আরকিওলোজিকাল সাইটে একটা মন্দিরের নিদর্শন পাওয়া গেছে। মরগ্যান ফ্রিম্যান সেখানেও গেলেন। দেখলেন ইংরেজি T অক্ষরের মত অনেকগুলা পিলার রয়েছে সেখানে। ধারণা করা হয়, আগে মানুষ মূর্তি বানাতে অতটা দক্ষ ছিল না। এই T-গুলোই দেবতাদের মূর্তি।

ওই এলাকায় কেন এই ধরনের মন্দির বানানোর দরকার পড়ল?

অনেকগুলো গ্রাম/কমিউনিটি যদি একই জায়গায় থাকে, তখন খাবার কিংবা শিকারের ভাগাভাগি নিয়ে মাঝে মাঝে ঝগড়া কিংবা যুদ্ধ বাধাটাই স্বাভাবিক। তখন বিভিন্ন গোত্র মিলে সিদ্ধান্ত নিল, আমাদের একটা কমন জায়গা থাকা দরকার, যেখানে এসে আমরা যুদ্ধ করব না, আমরা স্রেফ গল্পগুজব করব আর আমাদের অতীত নিয়ে আলোচনা করব (সম্ভবত, সেই সময়ে প্রতিটি গোত্রের একই অতীত ছিল। সব গোত্রই মেসোপটেমিয়ার কেন্দ্র থেকে উদ্ভূত হয়ে দেশের বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল) আর এই কমন কালচার থাকার কারণেই তারা একটা কমন উপাসনার জায়গা বানাল, কমন দেবদেবীদের মূর্তি বানিয়ে একসাথে পূজা শুরু করল।

ধারণা করা হয়, আমরা বর্তমান সময়ে ঈশ্বরের যে কনসেপ্ট পাই, অতীতে এই রকম ছিল না। মানুষের ধর্মবিবর্তন ধাপে ধাপে এই অবস্থায় এসেছে। একেবারে প্রথমে মানুষ প্রাকৃতিক শক্তির পূজা করতো। পরে পূর্বপুরুষ পূজা। পরে বহু ঈশ্বরের পূজা এবং সবশেষে এক ঈশ্বরের পূজা করা শুরু করল। তবে বিশ্বের সব জায়গায় ঈশ্বরের বিবর্তন একই সময়ে একই রকমভাবে হয়নি। এই ২০১৬ সালে এসে আমরা দেখি, বাংলাদেশে এক ঈশ্বর এর উপাসনা হচ্ছে, ভারতে হচ্ছে বহু ঈশ্বরের পূজা আবার আফ্রিকার জঙ্গলে এখনো প্রাকৃতিক শক্তির পূজা চলছে। সেখানকার সমাজে কোনো ধর্মগুরু নেই, বরং সেখানে আছে জাদুকর। তবে বর্তমানের প্রচলিত ধর্মগুলোর ভেতরেও অতীতের বিবর্তনের লক্ষণ রয়েছে।

ইজরাইলে চার্চ অফ হোলি সেপালকার নামে একটা গির্জা আছে। ধারণা করা হয়, এই জায়গাতেই যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল এবং তার কবরও এখানেই। তবে আরকিওলোজিস্ট যোডি ম্যাগনেস এইটা ছাড়াও আরেকটা গল্প শোনালেন। ১৭০০ বছর আগে রোমান সম্রাট কন্সটান্টাইন এই গীর্জা তৈরি করেছিলেন। গির্জার ভেতরে চ্যাপেল অফ অ্যাডাম নামে একটা অংশ আছে। বিশ্বাস করা হয়, এই চ্যাপেল অফ অ্যাডামে আদমকে কবর দেওয়া হয়েছিল। যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল ঠিক এই চ্যাপেলের ঠিক ওপরের পাথরে। যিশুর শরীর থেকে রক্ত নেমে যখন আদমের শরীর স্পর্শ করে, তখন আদম পুনরুজ্জীবিত হয় (খ্রিষ্টান ধর্মে পূর্বপুরুষ পূজার লক্ষণ)।

মর্গ্যান ফ্রিম্যান যোডি ম্যাগনেসকে জিজ্ঞেস করলেন, বাইবেলে যে বলা আছে, আদম এসেছিলেন ইউফ্রেটিস আর টাইগ্রিস নদীর মাঝখানে, তাহলে আদম এখানে এলেন কী করে? যোডি ম্যাগনেস বললেন, এটা এখানে রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, সম্ভবত। হিব্রু ভাষায় আদম মানে মানুষ। দাম মানে রক্ত, আদমাহ মানে মাটি। একইভাবে, ইডেন গার্ডেন মানে হচ্ছে যেখানে ঈশ্বর থাকেন। জেরুজালেমে যেহেতু ঈশ্বরের মন্দির আছে, সেহেতু এখানে অ্যাডাম আসতেই পারে।

আদম আর ইভ এর গল্পেরও কি এইরকম রূপক অর্থ আছে? আদম আর ইভ একটা সুন্দর জায়গায় বাস করতেন, যেখানে খাদ্যের অভাব ছিল না, পরে তারা অন্য জায়গায় চলে গেলেন, যেখানে খাদ্য পাওয়া যেত কম, ফলে মাটি চাষ করতে হত। আদম তার বাচ্চাকাচ্চাদের সেই হারানো খাদ্যে পরিপূর্ন ইডেনের গল্প বলতেন, আর বাচ্চারা সেখানে ফিরে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠল। এভাবেই পরবর্তীকালে মানুষের মুখে মুখে ইডেন গার্ডেনের কিংবদন্তী রচিত হল, ব্যাপারটা কি এরকম?

বাইবেলের বর্ণনা থেকে পরিষ্কার হয় যে, ইডেন গার্ডেন পৃথিবীর কোনো জায়গাতেই, নাকি পৃথিবীর বাইরে কোথাও। পৃথিবীর ভেতরের কোনো এক জায়গার কথাই বলা হয়েছে বলে মনে হয়। ইডেন গার্ডেন আর হেভেন আলাদা জিনিস। মৃত্যুর পরে পুণ্যার্থীরা হেভেনে যাবে, ইডেনে নয়। তবে বর্তমানে প্রচলিত ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী. বেহেশত হচ্ছে পৃথিবীর বাইরের একটা স্থান। এই বেহেশতেই আদম ছিল, এবং মৃত্যুর পরে যারা ভাল কাজ করবে, তারা এই বেহেশতেই যাবে, অন্য কোথাও নয়। আল্লাহর আদেশ অমান্য করায় বেহেশত থেকে এক ধরনের বিশেষ রকেটে করে আদম এবং হাওয়াকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। ২ জনকে ২ টা আলাদা রকেটে করে পাঠানো হয়। আদমের রকেট ল্যান্ড করে শ্রীলংকায় (যে পাহাড়ের ওপরে তিনি অবতীর্ন হন, তার নাম অ্যাডামস পিক, এটি এখন বৌদ্ধদের একটি পবিত্র ধর্মীয় স্থান। হিন্দুরাও বিশ্বাস করে এই পাহাড়ের সাথে শিব-এর একটা অলৌকিক ঘটনা জড়িত আছে) ইভ-এর রকেট ল্যান্ড করে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো এক জায়গায় (এই ২ টা রকেটের একটা পাওয়া গেছে। মক্কার কাবা ঘরে রক্ষিত কালো পাথর হাজরে আসওয়াদ-এর ওপর ভর করেই নাকি ইভ পৃথিবীতে এসেছিলেন বলে দাবি করা হয়। পাথরটি দেখতে মেয়েদের যৌনাঙ্গের মত কিছুটা। অনেকে মনে করেন,ভারতে যেমন শিবলিঙ্গ পূজা করা হয়, প্রাচীন আরবেও এইভাবে কোনো একজন দেবীর যোনী পূজা করা হত। সেই প্যাগান কালচার এখনো মূলধারার ইসলামে রয়ে গেছে। আদম সাগর পাড়ি দিয়ে শ্রীলংকা থেকে ভারতে ঢুকেছিল, সম্ভবত, সাঁতার কেটে। পরে ভারত থেকে পায়ে হেঁটে হেঁটে পুরা পৃথিবী খুঁজে বেড়িয়েছিল ইভকে। অবশেষে কয়েকশো বছর পরে আরাফার ময়দানে ২ জনের দেখা হয়েছিল (মিথ অনুযায়ী, তখনকার মানুষ বেঁচে থাকতো দীর্ঘদিন ধরে। বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।)।

বিশ্বের সব ধর্মেই কমবেশি সৃষ্টি নিয়ে এইরকম মিথ প্রচলিত আছে। আদিবাসীদের মিথগুলো মাঝে মাঝে খুব ইন্টারেস্টিং হয়। আদিবাসী তাদেরকে বলা হয়, যাদের কোনো মাইগ্রেশনের ইতিহাস কখনো পাওয়া যায় না। সৃষ্টির প্রথম থেকেই ঈশ্বর তাদেরকে এই পাহাড়ে/এলাকায় থাকতে দিয়েছেন বলে তাদের মাঝে উপকথা প্রচলিত আছে।

টেস্ট কেস হিসাবে এখানে সেন্ট্রাল অস্ট্রেলিয়ায় অ্যারেন্ট নামক এক আদিবাসীর কাছে গিয়েছিল 'দ্য স্টোরি অফ গড' দল (মরগ্যান ফ্রিম্যান এত দৌড়াদৌড়ি সইতে পারেননি। নিজে না গিয়ে আরেকজনকে পাঠিয়েছিলেন।) অ্যারেন্টদের সৃষ্টিতত্ত্বের গল্পটা এরকম: মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে একটা বড় উৎসব হচ্ছিল। অনেকে এসেছিল সেই উৎসবে। উৎসবের এক পর্যায়ে মেয়েরা নাচা শুরু করল। তাদের একজনের কোলে একটা বাচ্চা ছিল। বাচ্চাটাকে তার মা একটা ক্রেডল-এ (বাচ্চাদের খাট/দোলনা জাতীয় জিনিস) বাচ্চাটাকে রাখলেন। কিন্তু তাদের তুমুল নাচের এক পর্যায়ে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে ব্যাপক ভাইব্রেশন শুরু হল। দোলনা সহ বাচ্চাটা ছিটকে পড়ল পৃথিবীতে, মধ্য অস্ট্রেলিয়ার নরালা নামক জায়গায়। সেটা ছিল প্রাণের বীজ। সেখান থেকেই প্রথম মানবসন্তানের উৎপত্তি হল।

মরগ্যান ফ্রিম্যান নিজে দেখতে গেলেন আরেকটা আদিবাসি এলাকা। গুয়াতেমালায়। আরকিওলোজিস্ট রিচার্ড হ্যানসেন জানালেন, গহীন জঙ্গলের ভেতরে ঢেকে যাওয়া এই প্রাচীন শহরটার নাম ছিল এল মিরাডোর। ২০০০ বছর আগে এটি বর্তমানে লস এঞ্জেলেসের মত বড় একটা শহর ছিল। মর্গ্যান ফ্রিম্যান দেখলেন জঙ্গলের ভেতরে গাছের আড়ালে শহরের অনেক কিছু ঢেকে আছে। মিশরের পিরামিডের চেয়েও বড় পিরামিড আছে খানে। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করে অনেক কিছু পাওয়া যাচ্ছে এখন। মিশরের পিরামিডের হায়ারোগ্লিফিক্সের মতই এখানেও খোদাই করে লেখা আছে মায়াদের ধর্মগ্রন্থ মায়ান বাইবেল।

মায়াদের সৃষ্টির গল্প এইরকম: ঈশ্বর একবার ফাঁদে পড়ে আটকা পড়ে গেলেন পাতালে। সেখানে তার মাথা কেটেও ফেলা হল। তখন তার ২ ছেলে, যাদের নাম হচ্ছে হিরো টুইন্স, পাতালে যাওয়ার কথা ভাবলেন। কিন্তু পাতালে সশরীরে যাওয়া যায় না, ছাই হয়ে যেতে হয়। হিরো টুইনস নিজেদের শরীর আগুনে পোড়ালেন, তারপরে ছাই হয়ে গেলেন পাতালে। পাতালের পানির সাথে তাদের ছাই স্পর্শ করলেই তারা আবার পুনরুজ্জীবিত হলেন। ঈশ্বরের কাটা মাথা তারা নিয়ে এলেন পৃথিবীতে। মাটিতে সেই মাথাটা তারা পুতে দিলেন। সেখান থেকে ভুট্টা গাছ জন্মাল (এর আগে ওই কমিউনিটিতে ভুট্টা ছিল না); সেই গাছের ফল হিসেবে টিপিকাল ভুট্টা হয়নি, সেই গাছের ফল হিসাবে জন্ম নিয়েছিল মানব সন্তান। তারাই প্রথম মায়া সভ্যতার মানুষ ছিল। এভাবেই মায়া জাতি এসেছে বলে তাদের বিশ্বাস।

মায়াদের বর্তমান ধর্মীয় রিচুয়ালেও এই জিনিসটা বিশেষভাবে আছে। হিরো টুইনসকে স্মরণ করে ভুট্টা পুড়িয়ে ছাই করে সেই ছাই পানিতে মেশানো হয় আজও। ভুট্টা তাদের জাতীয় ফসল এখন।

মায়ারা আবার আকাশের ওরিয়ন তারকারাশিকে খুব গুরুত্ব দেয়। ৩ টা উজ্জ্বল তারা নিয়ে এটি গঠিত। ৩ টা তারার মাঝে উজ্জ্বল একটা নেবুলা আছে (নেবুলা হচ্ছে নতুন তারা, এই তারার এখনো জন্ম হয়নি, কুণ্ডলি পাকানো ধূণিকণা, মেঘ আর আগুনের সংমিশ্রনে অনেক উজ্জ্বল আলো তৈরি করে এরা) মায়ারা এই ওরিয়ন তারকারশির আদলেই সবকিছু বানাতে চাইতো। তারা আগুন জ্বালানোর সময় ৩ দিকে ৩ টা পাথর রেখে মাঝখানে আগুন জালাতো (বাংলাদেশের গ্রামের মাটির চুলার ডিজাইনও এই রকম, ৩ দিকে উচু মাটি, মাঝে আগুন) তাদের প্রধান ধর্মীয় জায়গাটায় ৩ টা মন্দির, ঠিক ওরিয়নের মত করেই। সম্ভবত তারা নেবুলার রহস্য বুঝতে পেরেছিল। নেবুলা থেকেই নতুন তারা তৈরি হয়, এটা বুঝতে পেরেছিল। তারা ওই নেবুলা এবং ওরিয়নের ৩ টা তারার ডিজাইনেই সবকিছু বানাতে চাইতো।

বাংলাদেশের গারো উপজাতি সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। বাংলা ভাষায় আমরা এদেরকে বলি গারো, তবে এদের নিজেদের ভাষায় এরা নিজেদেরকে বলে ‘মান্দি’: মান্দি মানে মানুষ। এদের ধর্মের নাম সাংসারেক। এদের প্রধান দেবতার নাম তাতারা রাবুগা। সৃষ্টির আদি অবস্থায় বিশ্বজগৎ নেই। বর্তমান পৃথিবীর চারদিক অসীম কালো, অন্ধকার ও অসীম জলরাশি পরিপূর্ণ। চারদিকে শুধুই পানি, নেই কোনোকিছুর অস্তিত্ব। এ অবস্থায় তাতারা-রাবুগা (গারোদের আদি ধর্ম সাংসারেক-এর প্রধান দেবতা) চিন্তা করলেন পৃথিবী সৃষ্টির। তার এ ইচ্ছাকে বাস্তব রূপান্তর করতে তিনি দায়িত্ব দিলেন তাঁর সহকারী দেবতা নস্তু-নপান্তুকে। নস্তু-নপান্তু প্রথমে পানির ওপর বিছানো মাকড়সার জালে আশ্রয় নিলেন। এরপর স্ত্রীলোকের বেশে সহকর্মী 'মাচি'র সহযোগিতায় পৃথিবী সৃষ্টির কাজে হাত দিলেন। তাতারা-রাবুগা পৃথিবী সৃষ্টির জন্য তাকে এক মুঠো বালি দিয়েছিলেন।

পৃথিবীর ওপরিভাগ তখন খুবই নরম, হাঁটা অসম্ভব। তাই এ বিষয়ে নস্তু-নপান্তু সাহায্য চাইলেন তাতারা-রাবুগার। তখন প্রধান দেবতা তাতারা-রাবুগা আকাশে সূর্য ও চাঁদ দিলেন এবং মর্তে বাতাস। সূর্য, চাঁদ আর বাতাসে শক্ত ও কঠিন হলো পৃথিবীর ওপরের ভাগ।

তাতারা-রাবুগা পৃথিবীকে একটি আবরণও দিলেন। পৃথিবী সৃষ্টির পর আনন্দে তিনি মেঘের তৈরি 'পাগড়ি' পরলেন, মাথার চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করলেন।

এরপর তাতারা-রাবুগা সর্বপ্রথমে লেজবিহীন বানর সৃষ্টি করেন। এই প্রাণীর কাজ হলো উচ্চস্বরে আওয়াজ তুলে পৃথিবীকে সজাগ রাখা। পৃথিকীর প্রকৃতি যাতে ঝিমিয়ে না পড়ে, সে জন্য যাবতীয় দায়িত্ব দেয়া সেই প্রাণীকে। এরপর তাতার-রাবুগা সৃষ্টি করেন হনুমান এবং বাদামি রঙের বানর। সৃষ্টি করেন একে একে স্থলের অন্যান্য প্রাণী। তাতারা-রাবুগা, জলচর প্রাণীর মধ্যে প্রথম সৃষ্টি করেন একটি বড় কুৎসিত ব্যাঙ। অন্য জলচর প্রাণীর কাছে আওয়াজ তুলে আকাশে মেঘের আগমন বার্তা ঘোষণা করার দায়িত্ব দেয়া হয় ব্যাঙকে। ব্যাঙ সৃষ্টি শেষে তাতারা-রাবুগা সৃষ্টি করেন জলের মাছগুলো। কিন্তু পরে তাতারা-রাবুগা দেখতে পান, মাটির নিচে অনেক পানি, কিন্তু পৃথিবীর ওপরিস্থলে কোনো পানি নেই। তাই তিনি পৃথিবীর বুকে প্রবাহিত করেন নদী। এছাড়া পৃথিবীর কঠিন বুক পানি দিয়ে ভেজাতে তিনি আকাশে পাঠালেন 'নরে-চিরে-কিম্রে-বক্রে' নাম্নি বৃষ্টিদেবীকে। বৃষ্টিদেবী আসার সংবাদ ঘোষণার জন্য দায়িত্ব দিলেন গয়রা’কে (বজ্রদেবতা); এভাবে পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি এবং বিভিন্ন দেবতাকে বিভিন্ন দায়িত্ব দেয়ার পর সবশেষ মানুষ সৃষ্টি করলেন তাতারা-রাবুগা।

তাতারা রাবুগা আদি নর-নারী শনি ও মণিকে সৃষ্টি করেন এবং আমিতং আপিলজার নামক স্থানে রাখেন। তাদের সন্তানগন গামচেং এবং দুজেং। তাদের পরবর্তী বংশধর নরমান্দে (পুরুষ) ও দিমা রঞ্চিত্ত ( দিমারিসি) গারোদের আদি পিতামাতা। এই বাচ্চারা গানচেং আর দুজং নামেও পরিচিত।

সব শেষে মরগ্যান এলেন ভারতে। বারাবসিতে গাইড benda paranjape তাকে নিয়ে গেলেন গঙ্গা দেখাতে। (এখানে একটা জিনিস না বলে পারছি না। এই সিরিয়ালটা করার সময় বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ছেলে-মেয়ে গাইডের সাথেই কথা হয়েছে মরগ্যানের। কোনো মেয়ের সাথেই মর্গ্যানের ঘনিষ্টতা করার কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। ইন্ডিয়ান বেন্দা পারাঞ্জাপিকে, মনে হয়, অবশেষে তার মনে ধরেছিল। এর সাথে অনেক জোক করতেন, ভালোবাসা নিয়ে অনেক কথা বলতেন (ঈশ্বরের প্রেমের কথা বলতেন, তবে লালনের গানের মত তাঁর কথাগুলোও দ্ব্যর্থবোধক), লাঞ্চ খাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন একবার) গঙ্গার ইতিহাস সম্পর্কে বেন্দা বলল, গঙ্গা ছিল স্বর্গের নদী। কিন্তু ব্রহ্মা তাকে বন্দী করে রেখেছিল। ব্রহ্মা একসময়য় চাইলেন, গঙ্গাকে পৃথিবীতে পাঠাবেন। কিন্তু গঙ্গা অনেক স্রোতস্বিনী শক্তিশালী নদী ছিল। এত শক্তিশালী নদী পৃথিবীতে গেলে অনেক ক্ষতি হতে পারে বিধায় গঙ্গাকে শিব তার চুলের মধ্যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় আটকে দিয়ে গঙ্গার শক্তি অনেক কমিয়ে দিল। সেই কম শক্তির গঙ্গা পৃথিবীতে এল। বিশ্বাস অনুযায়ী, এই গঙ্গার উৎপত্তি হিমালয় পর্বত থেকে নয়, এটি এসেছে সরাসরি স্বর্গ থেকে (হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, এখানে স্বর্গ হচ্ছে আকাশের ছায়াপথ, মানে মিল্কিওয়ে); গঙ্গা সজীব পানি সরবরাহ করে পৃথিবীতে, সেই পানি থেকেই সকল উদ্ভিদ এবং প্রাণী তৈরি হয়। গঙ্গা শুধু নদী নয়, গঙ্গা একজন দেবতাও। গঙ্গা দেবীর মূর্তি বানিয়ে পূজাও করা হয়।


ছবি পরিচিতি:

১ম ছবিটি তুরস্কের চ্যাতেলহুইওক এর বর্তমান অবস্থা
২য় ছবিটা চ্যাতেলহুইওকের কাল্পনিক ছবি
৩য় ছবিটা গোবেকিলি টেপির বর্তমান অবস্থা
৪র্থ ছবিটা গবেকিলি টেপির কাল্পনিক দৃশ্যায়ন
৫ম ছবিটা ইজরায়েলের চার্চ অফ সেপালকারের ভিতরে,চ্যাপেল অফ এডাম
৬ষ্ঠ ছবিটা শ্রীলংকার এডামস পিক এর
৭ম ছবিটা হাজরে আসওয়াদের
৮ম ছবিটা অস্ট্রেলিয়ার এ্যরেন্ট উপজাতিদের মিথ অনুযায়ী ড্র করা হয়েছে ।এখানে দেখাছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ধরে সবাই নাচানাচি করতেছে,একটা দোলনা জাতীয় জিনিসে একজনের কোলে একটা বাচ্চা
৯ম ছবিতে দেখা যাচ্ছে করোনা অস্ট্রেইলস। এটি দেখতে অনেকটা উলটানো দোলনার মতই
১০ম ছবিটা সেন্ট্রাল অস্ট্রেলিয়ার tnorala. অ্যারেন্টরা বিশ্বাস করে এখানেই সেই স্টার চাইল্ড এসে পড়েছিল (এখানে কোন একটা উল্কা পড়েছিল এটা মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়)
১১ এবং ১২ নাম্বার ছবিটা গুয়াতেমালার এল মিরাডোর শহরের বিভিন্ন অংশ
১৩ নাম্বার ছবিটা মায়াদের বাইবেল
১৪ নাম্বার ছবিটা আকাশের ওরিয়ন নক্ষত্রপুঞ্জের
১৫ নাম্বার ছবিটা দেবী গঙ্গার

ইছলাম রকস

ছহীহ ছওয়াল

সুকুমার রায়ের লেখা "জীবনের হিসাব" নামের ছড়ার প্যারোডি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

বিদ্যে-বোঝাই বিজ্ঞানীসব হুজুর দেখে থামে,
প্রশ্ন করে, "বলতে পারেন, বৃষ্টি কেন নামে?
পাহাড়গুলো কেমনে সৃজে, উল্কা কেন খসে?"
প্রশ্ন শুনে বৃদ্ধ হুজুর আরাম করে বসে।
হুজুর বলে, "এসব কি আর কঠিন প্রশ্ন? ধুরো!
আছে জানা এসব আমার, বুঝলে সকল খুড়ো?"

হিপক্রিটাস হঠাৎ বলে, "বলুন দেখি এটা,
ক্যামনে সৃজে বেটি, আবার ক্যামনেই বা ব্যাটা?
জাইগোট-টা কেমনে ঘটে? বীর্য কোথায় থাকে?"
হুজুর বলেন, "হাহ্-হাহ্-হাহ্, প্রশ্ন করেন কাকে!
জবাব জানে মাদ্রাসাতে পড়া সকল পোলা,
তারাই দেবে এসব বলে, থাকুক এসব তোলা।"

খানিক বাদে বলেন তাঁরা, "বলুন দেখি, হুজুর,
কেন এমন মিষ্টি খেতে আঙুর, কলা, খেজুর?
ক্যামনে আসে দিন থেকে রাত? ক্যামনে আসে দুধ?"
প্রশ্ন শুনে হুজুর সাহেব হলেন ধ্যানে বুঁদ।
এই না দেখে বিজ্ঞানীরা হকচকিয়ে থেমে
ভাবে: জবাবসহ ওহী আসছে নাকি নেমে!

হঠাৎ জেগে উঠে হুজুর মুচকি হেসে কয়,
"মুরতাদদের প্রশ্নে হবে আমার পরাজয়?
প্রশ্নবাণে ঠেকায় মোরে - সাধ্য এমন কার?
আমার আছে কোরান, হাদিস, মোহাম্মদ আল্লার।
মূর্খ তোরা, শোন তাহলে. ক্যামনে এসব হয়,
দোজাহানের মালিক খোদা যক্ষনই 'কুন' কয়।"

আমার বোরখা-ফেটিশ – ১৮৯

শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬

খায়বার যুদ্ধ - ৫: রক্তের হোলি খেলা - ‘নাইম’ দুর্গ দখল!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব- ১৩৪): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত আট

লিখেছেন গোলাপ

(আগের পর্বগুলোর সূচী এখানে)

"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।" 

স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীদের অতর্কিত আগ্রাসী আক্রমণের শিকার হয়ে খায়বারের ভীত-সন্ত্রস্ত ইহুদি জনপদবাসী তাদের দুর্গ-মধ্যে আশ্রয় নিয়ে নিজেদের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষার প্রচেষ্টায় মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে কীরূপ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন; পর পর দু'-তিন দিন ব্যর্থ হবার পরআলী ইবনে আবু তালিবের নেতৃত্বে মুহাম্মদ যে-হামলাকারী দলটি পাঠিয়েছিলেন, তার মোকাবিলায় দুর্গ-মধ্য থেকে কোন ইহুদি লোকটি সর্বপ্রথমবের হয়ে এসে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন; কে তাঁকে হত্যা করেছিলেন; এই যুদ্ধে আলী ইবনে আবু তালিব কীরূপ বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি সাধারণ যুদ্ধ-ঢালের পরিবর্তে কোন বস্তুকে যুদ্ধ-ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন; মুহাম্মদের জীবদ্দশায় বিভিন্ন যুদ্ধে আলী অসাধারণ বীরত্বের প্রকাশ করা সত্ত্বেও কী কারণে আলীসহ মুহাম্মদের নিজস্ব পরিবারের (হাশেমী বংশ) কোনো সদস্য সুদীর্ঘকাল মুসলিম জাহানের অধিপতি হবার সুযোগ পাননি; কারাতাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিলেন বলে শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত মুসলমানরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, তাঁদের সেই বিশ্বাসের ভিত্তি কী - ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।

ইসলাম-বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা ইসলামের ইতিহাসের খায়বার যুদ্ধ আলোচনায় যে-উপাখ্যানগুলো তাঁদের ওয়াজ মাহফিল, বক্তৃতা, বিবৃতি, রেডিও-টেলিভিশন আলোচনা ও টক-শো, সামাজিক মেলামেশায় ইসলামের আলোচনা - ইত্যাদি অনুষ্ঠানে গর্বভরে বয়ান করেন; মাদ্রাসা-স্কুল-কলেজের পাঠ্য পুস্তক সিলেবাসে শিক্ষা বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত করেন ও প্রশ্নপত্র তৈরি করেন; বুদ্ধিজীবীরা বই লেখেন; সাংবাদিকরা খবরের কাগজে আর্টিকেল লেখেন - তার সর্বাগ্রে ও শীর্ষস্থানেঅবস্থান করে খায়বার যুদ্ধে আলী ইবনে আবু তালিবের এই বীরত্বের ইতিহাস! সে-কারণেই আলীর বীরত্বের এই উপাখ্যান অসংখ্য ইসলাম-বিশ্বাসীরই মুখে মুখে।

প্রশ্ন হলো:
"আলী ইবনে আবু-তালিব ও তাঁর সঙ্গীদের এই বিজয় ও বীরত্বের 'রক্ত-মূল্য' কত ছিলো?"

অর্থাৎ,
"মুহাম্মদ ও আলীর নেতৃত্বে খায়বারের নিরপরাধ (তাঁরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের ওপর আক্রমণ করতে আসেননি, আক্রমণকারী মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা) ইহুদি জনগণের মোট কতজন লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর মুহাম্মদের প্রতিশ্রুত (পর্ব: ১২৩) এই আসন্ন বিজয় (কুরান: ৪৮:১৮-২১) কর্মটি সম্পন্ন হয়েছিলো?" 

মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনা পুনরারম্ভ: [1] [2] [3]   
পূর্ব প্রকাশিতের (পর্ব: ১৩৩) পর:

আবদুল্লাহ বিন সাহল বিন আবদুল রহমান বিন সাহল নামের বানু হারিথা গোত্রের এক ভাই জাবির বিন আবদুল্লাহর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমাকে বলেছেন:


ইহুদি মারহাব অস্ত্রসহ তাদের দুর্গ থেকে বের হয়ে আসে ও কবিতার মাধ্যমে [সিরাতে- 'কবিতা'] নিজের বীরত্বগাথা বলতে বলতে সকলকে একক যুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে। -- আল্লাহর নবী বলেন, "কে এই লোকটির সঙ্গে মোকাবেলা করবে?" মুহাম্মদ বিন মাসলামা বলে যে, সে তা করবে, কারণগতকাল যে-লোকটি তার ভাইকে হত্যা করেছে [পর্ব-১৩১], তার প্রতিশোধ নিতে সে অঙ্গীকারবদ্ধ। আল্লাহর নবী তাকে যেতে বলেন ও তার সাহায্যের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।

তারা একে অপরের দিকে এগিয়ে যায়, তাদের মাঝখানে ছিল এক পুরানো গাছ ও তার নরম ডাল-পালা, যার আড়ালে তারা আত্মগোপন করা শুরু করে। তারা একে অন্যের কাছে থেকে নিজেকে আড়াল করে। যখনই একজন গাছের আড়ালে লুকায়, অন্যজন তার তরবারি দিয়ে মাঝখানের ডাল-পালা ফালা-ফালা করে কেটে ফেলে তারা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। ডাল-পালা শূন্য গাছটি এমনভাবে অবশিষ্ট থাকে, যেন মনে হয়, এটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক মানুষ। মারহাব আক্রমণ ও আঘাত করে মুহাম্মদ বিন মাসলামা-কে। সে তার তরবারির তীব্র আঘাতটি ঢাল দিয়ে প্রতিহত করে ও অবিচল থাকে। অতঃপর মুহাম্মদ হত্যা করে মারহাব-কে।

মারহাব নিহত হবার পর তার ভাই ইয়াসির দ্বন্দ্ব-যুদ্ধের আহ্বান নিয়ে বের হয়ে আসে। [সিরাতে: 'কবিতা']

হিশাম বিন উরওয়া [c. ৬৮০-৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দ] হইতে বর্ণিত: আল-যুবায়ের বিন আল-আওয়াম [পর্ব: ১২৪]ইয়াসির-এর সাথে যুদ্ধের জন্য এগিয়ে আসে। তার মা সাফিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব [মুহাম্মদের ফুপু: পর্ব-১২] বলে, "হে আল্লাহর নবী, সে কি আমার পুত্রকে হত্যা করবে?" তিনি জবাবে বলেন, "না, যদি আল্লাহ চায়, তোমার ছেলে তাকে হত্যা করবে।" অতঃপর, আল-যুবায়ের অগ্রসর হয়। যখন এই দুইজন একে অপরের সম্মুখীন হয়, আল-যুবায়ের হত্যা করে ইয়াসির-কে। হিশাম বিন উরওয়া আমাকে বলেছেন যে, আল-যুবায়ের কে যখন বলা হয়েছিল, "আল্লাহর কসম, ঐ দিন তোমার তরবারিটি নিশ্চয়ই খুব ধারালো ছিলো", জবাবে সে বলেছিল যে, সেটি ধারালো ছিলো না, শুধুই সে তা ব্যবহার করেছিল প্রবল শক্তিতে।  [4]

আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) বিস্তারিত বর্ণনা: [3]

'সেটি ছিল মারহাবের দুর্গ। বিবৃত আছে: মারহাব প্রতিদ্বন্দ্বী মদ্দা ঘোড়ার মত সম্মুখে এসে হাজির হয়, ও তাঁর বীরত্বগাথা শোনায় কবিতার মাধ্যমে:

"খায়বার জানে যে, আমি মারহাব, আছে যার শাণিত অস্ত্র;
এক প্রমাণিত সাহসী, মাঝে মাঝে আমি করবো আঘাত, মাঝে মাঝে হবো আঘাতপ্রাপ্ত।"

সে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহ্বান করে। মুহাম্মদ বিন মাসলামা বলে, "হে আল্লাহর নবী, আমি অন্যায়ের শিকার এক ক্ষুব্ধ ব্যক্তি। গতকাল আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে, সুতরাং আমাকে আপনি মারহাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি দিন, কারণ সে হলো আমার ভাইয়ের হত্যাকারী।" আল্লাহর নবী তাকে দ্বন্দ্বযুদ্ধ করার অনুমতি দেন। তিনি তার জন্য দোয়া করেন ও তাকে তাঁর তরবারিটি দেন। মুহাম্মদ অগ্রসর হয় ও চিৎকার করে বলে,

"এই মারহাব, তুই কি দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহ্বান করেছিস?"
সে বলে, "হ্যাঁ।" মারহাব কবিতার মাধ্যমে নিজের বীরত্বগাথা বলতে বলতে তার সামনে এগিয়ে যায়: [সিরাতে 'কবিতা']।---

মারহাব যে বর্ম-আবরণটি পরিধান করেছিলো তা ছিল ওপরে গুটানো। মুহাম্মদ তার দুই ঊরুতে আঘাত করে ও সেগুলো কেটে ফেলে। বিবৃত আছে: মুহাম্মদ বিন মাসলামা তার ঢাল দিয়ে নিজেকে রক্ষা করে - মারহাব যখন তরবারি সমেত তার হাতটি ওপরে উঠিয়েছিল, তখন তার বর্ম-আবরণটি ছিল ওপরে গুটানো; মুহাম্মদ তরবারি সমেত ঝুঁকে পড়ে তার দুই পা কেটে ফেলে, মারহাব ভূপাতিত হয়। মারহাব বলে, "হে মুহাম্মদ, আমাকে শেষ করে ফেলো!"

মুহাম্মদ জবাবে বলে, "মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ কর, আমার ভাই মাহমুদ যেমন করে সে স্বাদ গ্রহণ করেছে!" সে তাকে পেছনে ফেলে রেখে হেঁটে যায়। অতঃপর আলী তার কাছে যায় ও তার কল্লা কেটে ফেলে এবং তার মালামাল লুণ্ঠন করে।

তারা আল্লাহর নবীর সম্মুখে এসে লুটের মাল নিয়ে ঝগড়া করে। মুহাম্মদ বিন মাসলামা বলে, "হে আল্লাহর নবী, নিশ্চয়ই আমি তার পা দুটো কেটে ফেলেছিলাম, অতঃপর তাকে কেবল এ জন্যই জীবিত রেখেছিলাম, যেন সে তরবারির তিক্ত স্বাদ আস্বাদন করে ও ধুকে ধুকে মরে, যেমন করে আমার ভাই তিন দিন যাবত মৃত্যুকষ্টে তা করেছিল। তাকে শেষ করে না ফেলার পেছনে আমার কোনোই বাধা ছিল না। তার পা দুটো কেটে ফেলার পরই আমি তাকে শেষ করতে পারতাম।" আলী বলে, "সে সত্য বলেছে। তার পা দুটো কাটার পর আমি তার কল্লা কেটে ফেলেছিলাম।"

আল্লাহর নবী মারহাবের তরবারি, ঢাল, টুপি ও শিরস্ত্রাণ মুহাম্মদ বিন মাসলামা-কে প্রদান করেন। সেই তরবারিটি ছিল মুহাম্মদ বিন মাসলামার পরিবারের কাছে ও তার সাথে ছিল এক ডকুমেন্ট - তেইমার এক ইহুদি ওটা পড়ার আগে কেউই জানতো না যে, তাতে কী লেখা ছিলো। তাতে লিখা ছিলো, "এটি মারহাবের তরবারি। যে তার স্বাদ আস্বাদন করে, সে মৃত্যুবরণ করে।"

জাবির হইতে বর্ণিত > মুহাম্মদ বিন আল-ফাদল-এর পিতা হইতে > মুহাম্মদ বিন আল-ফাদল আমাকে জানিয়েছে, সালামা বিন সালামা হইতে বর্ণিত > আবদুল্লাহ বিন আবি সুফিয়ান-এর পিতা হইতে > আবদুল্লাহ বিন আবি সুফিয়ান হইতে > যাকারিয়া বিন যায়েদ আমাকে জানিয়েছে, এবং মুজামমি বিন হারিথা হইতে বর্ণিত > মুজামমি বিন ইয়াকুব-এর পিতা হইতে > মুজামমি বিন ইয়াকুব আমাকে জানিয়েছে। তারা সবাই আমাকে যা বলেছে, তা হলো, মারহাব-কে হত্যা করেছিলো মুহাম্মদ বিন মাসলামা।

তারা বলেছে: উসায়ের আবির্ভূত হয়। সে ছিল এক শক্তিশালী মানুষ, যদিও সে ছিল খাটো; অতঃপর সে চিৎকার শুরু করে, "এমনকি কেউ আছে, যে দ্বন্দ্বযুদ্ধ করবে?"  মুহাম্মদ বিন মাসলামা তার কাছে আসে ও তারা একে অপরকে ঘাত-প্রতিঘাত করে, অতঃপর মুহাম্মদ বিন মাসলামা তাকে হত্যা করে।

তারপর ইয়াসির বের হয়ে আসে। সে ছিল অত্যন্ত বলিষ্ঠ ব্যক্তিদের একজন। মুসলমানদের ঠেকিয়ে রাখার জন্য তার কাছে ছিল এক বল্লম। আলী অগ্রসর হয়ে তার কাছে আসে, আল যুবায়ের তাকে বলে, "তোমার কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ এই যে, তাকে তুমি আমার হাতে ছেড়ে দাও।" আলী তা-ই করে। ইয়াসির তার বল্লম নিয়ে অগ্রসর হয় ও তার দ্বারা লোকদের তাড়িয়ে দেয়। আল-যুবায়ের তার সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধ করে।

সাফিয়া বলে, "হে আল্লাহর নবী, আমি বিষণ্ণ। হে আল্লাহর নবী, আমার সন্তানকে হত্যা করা হবে।" তিনি বলেন, "বরং তোমার ছেলেই তাকে হত্যা করবে।" তারা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করে ও আল-যুবায়ের তাকে হত্যা করে। আল্লাহর নবী তাকে বলেছিলেন, "তোমার আঙ্কল ও আন্টি যেন হয় তোমার মুক্তিপণের মাধ্যম।" অতঃপর তিনি যোগ করেন, "প্রত্যেক নবীরই শিষ্য থাকে, আল-যুবায়ের হলো আমার শিষ্য ও সে আমার ফুপুর ছেলে [পর্ব: ১২]।"

মারহাব ও ইয়াসির খুন হবার পর আল্লাহর নবী বলেন, "আনন্দ করো! খায়বার আমাদের স্বাগত জানিয়েছে ও অসুবিধা লাঘব করেছে।"

অতঃপর আমির বের হয়ে আসে, সে ছিল এক লম্বা মানুষ। যখন আমির আবির্ভূত হয়, আল্লাহর নবী বলেন, "তোমরা কি মনে করো যে, সে পাঁচ হাত লম্বা?" সে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহ্বান করে, তার তলোয়ার উঁচিয়ে আস্ফালন করে। সে যে বর্ম আবরণটি পরিধান করেছিল, তা ছিল লৌহ আবৃত। সে চিৎকার করে বলে, "কে আমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে?" লোকজন তার কাছ থেকে পিছু হটে। আলীতার কাছে এগিয়ে যায় ও তাকে আঘাত করে। কিন্তু তার কোন কিছুই কাজে আসে না যতক্ষণে না সে তার দুই পায়ে আঘাত হানে। অতঃপর সে পড়ে যায়, আলী তাকে সাবাড় করে ও তার অস্ত্র নিয়ে নেয়।

আল-হারিথ, মারহাব, উসায়ের, ইয়াসির ও আমির ছাড়াও ইহুদিদের আরও বহু লোককে হত্যা করা হয়েছিল - কিন্তু যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তা করা হয়েছে এই কারণে যে, তারা ছিলো তাদের মধ্যে সাহসী। এই লোকদের সবাই ছিলো নাইম দুর্গের ভিতরে।'

- অনুবাদ, টাইটেল, ও [**] যোগ - লেখক।

আল-তাবারীর (৮৩৯-৯২৩ সাল) অতিরিক্ত বর্ণনা: [5] 

ইবনে বাশার < মুহাম্মদ বিন জাফর < আউফ (বিন আবি জামিলাহ আল-আরাবী [৬৭৮-৭৬৩ সাল]) < মেইমুন (আবু আবদুল্লাহ) < আবদুল্লাহ বিন বুরায়েদা (৬৩৭-৭৩৩ সাল) < বুরায়েদা বিন আল-আসলামী (মৃত্যু: ৬৭৯-৬৮৪ সাল) হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে; এবং আবু কুরায়েব < ইউনুস বিন বুকায়ের (মৃত্যু: ৮১৫ সাল) < আল-মুসায়েব বিন মুসলিম আল-আউদি < আবদুল্লাহ বিন বুরায়েদা < তার পিতা (বুরায়েদা বিন আল-হুসায়েব) হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে:

আল-তাবারী আমাদের জানিয়েছেন যে, মারহাব-কে হত্যা করেছিল আলীইবনে আবু-তালিব। 

ইমাম মুসলিমের (৮২১-৮৭৫ সাল) বর্ণনা: [6]

ইমাম মুসলিমের বর্ণনা (সহি মুসলিম: নম্বর-০১৯:৪৪৫০) মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, আল-তাবারী ও আল ওয়াকিদির বর্ণনারই অনুরূপ, কিন্তু ঘটনার পূর্ণ বিবরণ সেখানে অনুপস্থিত(পর্ব-১২১)। ইমাম মুসলিমের এই দীর্ঘ হাদিসের বর্ণনা মতে মারহাব-কে খুন করেছিল আলী ইবনে আবু-তালিব।

তাঁর বর্ণনা মতে, মারহাবের সাথে প্রথমে যুদ্ধ করেছিলেন আমির নামের মুহাম্মদের এক অনুসারী, যিনি ছিলেন এই হাদিস বর্ণনাকারী ইবনে সালামাহ [<তার পিতা সালামাহ বিন আল-আকওয়া হইতে(পর্ব: ১১০)] এর আঙ্কল। লড়াইয়ের সময় আমির তার নিজের তরবারির আঘাতেই গুরুতর আহত হন ও মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় মুহাম্মদের কিছু অনুসারী যখন বলাবলি শুরু করে যে, আমির জিহাদে অংশগ্রহণ করলেও যেহেতু সে নিজেই নিজের জীবন নাশ করেছে, তাই সে তার যাবতীয় কর্মের সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। জবাবে মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের নিশ্চিত করেন যে আমিরের জন্য অপেক্ষা করছে "দ্বিগুণ পুরষ্কার!"

এই দীর্ঘ হাদিসে আর যে-তথ্যটি আমরা জানতে পারি, তা হলো, হুদাইবিয়া সন্ধি (পর্ব: ১১১-১২৯) শেষে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করার "মাত্র তিন দিন পর" মুহাম্মদ তাঁর হুদাইবিয়া যাত্রায় অংশগ্রহণকারী অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে খায়বারের জনপদের ওপর আগ্রাসী হামলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন।

>>> ইসলামের ইতিহাস পড়ার সময় যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সর্বদাই মনে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন, তা হলো, "ইসলামের যাবতীয় ইতিহাস একপেশে ও পক্ষপাতদুষ্ট (পর্ব:৪৪)!" এই ইতিহাসগুলো পড়ার সময় অতিরিক্ত সজাগ ও অনুসন্ধিৎসু না হলে এবং বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য-উপাত্ত যাচাই না করলে যে কোনো ব্যক্তিই বিভ্রান্ত হতে বাধ্য! 

ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ) সম্পাদিত ও A. GUILLAUME অনুদিত মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের 'সিরাত' গ্রন্থে খায়বার যুদ্ধের যে-উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে, তা পাঠ করে খায়বার যুদ্ধে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের বীভৎস ও নৃশংস কর্মকাণ্ডের প্রকৃত স্বরূপ জানা সম্ভব নয়। আর হাদিস গ্রন্থ? তার অবস্থা আরও খারাপ [বিস্তারিত: উমর ইবনে খাত্তাবেরঅভিপ্রায় (পর্ব: ১২১)!]। ইবনে হিশাম সম্পাদিত “সিরাত রসুল আল্লাহ” ও সমস্ত হাদিস গ্রন্থে (বিচ্ছিন্নভাবে) খায়বার যুদ্ধের যে-উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে, তা পাঠ করে সাধারণ পাঠকরা বিভ্রান্ত হতে পারেন এই ভেবে যে, খায়বারের মাত্র দু'জন লোককে হত্যা করে আলী ও তার সঙ্গীরা খায়বার যুদ্ধ জয় করে ফেলেছিলেন! বাস্তবিকইএই গ্রন্থগুলোতে খায়বার যুদ্ধ উপাখ্যানের এই পর্যায়ের বর্ণনায় মাত্র দু'জন (মারহাব ও ইয়াসির) ইহুদিকে হত্যার বর্ণনা ছাড়া আর কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

ইবনে হিশাম সম্পাদিত এই 'সিরাত' গ্রন্থের ৫১৮ পৃষ্ঠায় খায়বার যুদ্ধে যে মোট ১৮-২০ জনমুহাম্মদ-অনুসারী নিহত হয়েছিলেন, তাদের নাম ও গোত্রের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। [7]কিন্তু, মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা কতজন ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন, তার কোনো উল্লেখ ইবনে হিশাম সম্পাদিত এই সিরাত, আল-তাবারীর সিরাত ও হাদিস গ্রন্থে নেই! সে কারণেই, "শুধু" মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের সিরাত, আল-তাবারীর সিরাত ও হাদিস গ্রন্থ পাঠ করে "খায়বার যুদ্ধের বীভৎসতা" সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়।

বিষয়টি আর একটু খোলসা করা যাক:

“সশস্ত্র নৃশংস ১৪০০ জনের এক সন্ত্রাসী দল এক বিশেষ অভীষ্ট লক্ষ্যে একটি জনপদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ঐ জনপদের সমস্ত লোকদের যে কোনো মূল্যে (জখম-হত্যা-বন্দী ও দাস-দাসীকরণ) পরাস্ত করে তাদের সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি লুণ্ঠন করার অভিপ্রায়ে ঐ জনপদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা এখন এই জনপদবাসীর দোরগোরায় উপস্থিত হয়ে তাঁদের বাড়ী-ঘর (দুর্গ) ঘেরাও করে রেখেছে। অতঃপর ঐ আক্রান্ত জনপদবাসী তাঁদের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষার প্রচেষ্টায় প্রাণপণ লড়াইকরে চলেছেন। তাঁদের এই প্রতিরক্ষা এতটাই তীব্র ছিলো যে, এই আক্রমণকারীরা পর পর দুই-তিন দিন কোনো সুবিধেই করতে পারেনি (পর্ব: ১৩২)। অতঃপর তাদের সর্বাধিনায়ক তার এক ক্ষমতাবান অনুসারীকে নেতৃত্ব দিয়ে এই জনপদবাসীদের পরাস্ত করার জন্য পাঠিয়েছেন। অতঃপর সেই ক্ষমতাবান অনুসারী ও তার সঙ্গীরা বিপুল বীরত্বে মাত্র দু'জন ব্যক্তিকে হত্যা করে সেই জনপদ দখল করে ফেলেছিলেন - এমন বর্ণনা উদ্ভট, অযৌক্তিক ও নিঃসন্দেহে সত্যের অপলাপ।”

অন্যদিকে,

আল-ওয়াকিদির বর্ণনা অনেক বেশি স্বচ্ছ, প্রাণবন্ত ও বিস্তারিত। আল-ওয়াকিদির বিস্তারিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি, আলী ও তার সহযোগীরা খায়বারের জনপদবাসীর আল-হারিথ, মারহাব, উসায়ের, ইয়াসির ও আমির ছাড়াও ইহুদিদের আরও বহু লোককে হত্যা করেছিলেন।

প্রশ্ন ছিল:
"মুহাম্মদ ও আলীর নেতৃত্বে খায়বারের নিরপরাধ ইহুদি জনগণের মোট কতজন লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর মুহাম্মদের প্রতিশ্রুত "এই আসন্ন বিজয়" সম্পন্ন হয়েছিলো? আলী ইবনে আবু-তালিব ও তাঁর সঙ্গীদের এই বিজয় ও বীরত্বের 'রক্তমূল্য' কত ছিলো?"

এই প্রশ্নটির সুনির্দিষ্ট জবাবআমরা জানতে পারি আল-ওয়াকিদির বিস্তারিত বর্ণনায়। তাঁর বর্ণনা মতে, খায়বার যুদ্ধে মোট ৯৩ জন ইহুদিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এদের অধিকাংশকেই হত্যা করা হয়েছিল এই 'নাটায়'। তাঁর বর্ণনামতে মুসলমানদের মোট নিহতের পরিমাণ ১৫ জন, অধিকাংশই এই নাটায়। [8]

অর্থাৎ প্রশ্নটির জবাব হলো:

"আলী ইবনে আবু-তালিব ও তাঁর সঙ্গীদের এই বিজয় ও বীরত্বের 'রক্তমূল্য' ছিলো খায়বারের অসংখ্য লোককে বন্দী করে দাস ও দাসীকরণ ও তাঁদের সমস্ত সম্পত্তি লুণ্ঠন করা ছাড়াও প্রায় তিরানব্বুই জন ইহুদিকে নৃশংসভাবে হত্যার হোলি খেলা!"

ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে আল-ওয়াকিদির মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। ইবনে ইশাকের মূল ইংরেজি অনুবাদ ইন্টারনেটে বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক: তথ্যসূত্র [1]

The detailed narrative of Al-Waqidi: [3]

‘It was the fortress of Marhab. It was said: Marhabappeared like a competing stallion reciting rajaz verse:

Khaybar knows that I am Marhab of the piercing weapons,
A proven brave, I will strike sometimes, and sometimes will be struck.

He called for a duel. Muhammad b Maslamasaid, “O Messenger of God, I am a wronged and angry person. My brother was killed yesterday, so permit me to fight Marhab for he is a killer of my brother.” The Messenger of God permitted him to duel. He prayed for him and gave him his sword. Muhammad went out shouting, “O Marhab, did you call for a duel?” He said, “Yes.” Marhab came out to him reciting rajaz. ---Marhab was wearing armor that was rolled up. Muhammad struck the thighs of Marhab and cut them. It was said: Muhammad b Maslama protected himself with the shield – the armor from Marhab’s legs was pulled up when he raised his hand with the sword, and Muhammad bent with the sword and cut his two legs, and Marhab fell. Marhab said, “Finish me off, O Muhammad!” Muhammad replied, “Taste death, just as my brother Mahmud tasted it!” and he walked past him. Then Ali passed by and struck off his head, and took his booty.

They quarreled before the Messenger of God about his booty. Muhammad b Maslama said, “O Messenger of God, surely I cut of his legs and left him only that he may taste the bitterness of the sword and the violence of death just as my brother did, for he stayed three days dying. Nothing prevented me from finishing him off. I could have finished him off after I cut his legs.” Ali said, “He is truthfull. I cut off his head after his legs had been cut off.” The Messenger of God gave Muhammad b Maslama Marhab’s sword, shield, cap and helmet. The family of Muhammad b Maslama has his sword, and with it a document – no one knew what it was until one of the Jews of Tayma read it. It said: This is the sword of Marhab. Whoever tastes it will die.

Muhammad b al-Fadl related to me from his father from Jabir, and Zakarriyya b Zayd related to me from Abdullah b Abi Sufyan, from his father, from Salama b Salama; and Mujammi b Yaqub from his father from Mujammi b Haritha. They all said that Muhammad b Maslama killed Marhab.   

They said: Usayr appeared. He was a strong man though he was short, and he began to shout, “Is there anyone for a duel?” Muhammad b Maslama went out to him and they exchanged strokes and Muhammad b Maslama killed him.

Then Yasir came out. He was among the vigorous. He had a spear to keep back the Muslims. Ali went out to him and al-Zubayr said, “I entreat you leave him to me.” So Ali did. Yasir approached with his spear and drove the people with it. Al-Zubayr dueled him. Safiyya said, “O Messenger of God, it makes me sad. My son will be killed, O Messenger of God.” He said, “Rather your son will kill him.” He said: They fought each other and al-Zubayr killed him. The Messenger of God said to him, “May your Ransom be your uncle and aunt.” Then he added, “To every prophet is a disciple, and al-Zubyr is my disciple and the son of my aunt.”

When Marhab and Yasir were killed the Messnger of God said, “Rejoice! Khaybar welcomes and facilitates.”

Then Amir came out: He was a tall man. When Amir appeared, the Messenger of God said, “Do you think he is five arm lengths?” He called for a duel, brandishing his sword. He wore armor covered in Iron. He shouted, “Who will contest me?” The people recoiled from him. Ali went out to him and struck him. But all that did nothing until he struck his legs. Then he fell down, and Ali finished him off and took his weapons.

Al-Harith, Marhab, Usayr, Yasir and Amir were killed with many people from the Jews – but those who were named were mentioned because they were the brave ones. Those were all in the fortress of Naim.’

(চলবে)

[কুরানের উদ্ধৃতি সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হারাম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা  থেকে নেয়া, অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট ইংরেজি অনুবাদকারীর ও চৌত্রিশ-টি বিভিন্ন ভাষায় পাশাপাশি অনুবাদ এখানে]

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৫১২-৫১৪ http://www.justislam.co.uk/images/Ibn%20Ishaq%20-%20Sirat%20Rasul%20Allah.pdf

[2] অনুরূপ বর্ণনা: “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮,ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৭৭-১৫৭৮

[3]“কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক:  আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৫৫-৬৫৮; ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩২২-৩২৪

[4] ‘হিশাম বিন উরওয়া আল-যুবায়ের ছিলেন উরওয়া বিন আল-যুবায়ের পুত্র। তিনি আনুমানিক ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে (হিজরি ৬১ সাল) মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন, মৃত্যুবরণ করেন ৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দে (হিজরি ১৪৬ সাল) বাগদাদে। তিনি ছিলেন এক মুহাদ্দিস ও আইনজ্ঞ (transmitter of traditions and a jurist)’।

[5] Ibid: “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক” লেখক: আল-তাবারী - পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৭৯-১৫৮১

[6] ইমাম মুসলিম (৮২১-৮৭৫ সাল) - সহি মুসলিম: হাদিস নম্বর-০১৯:৪৪৫০

অনেক বড় হাদিস- এই পর্বের প্রাসন্গিক অংশ:
It has been narrated on the authority of Ibn Salama. He heard the tradition from his father who said: We arrived at Hudaibiyawith the Messenger of Allah (may peace be upon him) and we were fourteen hundred in number. -------------Thus, I reached Medinaahead of him.  By God, we had stayed there only three nights when we set out to Khaibar with the Messenger of Allah (may peace be upon him). -------

Salama continued: When we reached Khaibar, its king named Marhab advanced brandishing his sword and chanting:  Khaibar knows that I am Marhab (who behaves like). A fully armed, and well-tried warrior. When the war comes spreading its flames.
My uncle, Amir,came out to combat with him, saying: Khaibar certainly knows that I am 'Amir, a fully armed veteran who plunges into battles. They exchanged blows. Marhab's sword struck the shield of 'Amir who bent forward to attack his opponent from below, but his sword recoiled upon him and cut the main artery: in his forearm which caused his death. Salama said: I came out and heard some people among the Companions of the Holy Prophet (may peace be upon him) as saying: Amir's deed has gone waste; he has killed himself. So I came to the Holy Prophet (may peace be upon him) weeping and I said: Messenger of Allah. Amir's deed has gone waste. The Messenger (may peace be upon him) said: Who passed this remark? I said: Some of your Companions. He said: He who has passed that remark has told a lie, for 'Amir there is a double reward.

Then he sent me to 'Ali who had tore eyes, and said: I will give the banner to a man who loves Allah and His Messenger or whom Allah and His Messenger love. So I went to 'Ali, brought him beading him along and he had sore eyes, and I took him to the Messenger of Allah (may peace be upon him), who applied his saliva to his eyes and he got well. The Messenger of Allah (may peace be upon him) gave him the banner (and 'Ali went to meet Marhab in a single combat). The latter advanced chanting: Khaibar knows certainly that I am Marhab, a fully armed and well-tried valorous warrior (hero). When war comes spreading its flames. 'Ali chanted in reply: I am the one whose mother named him Haidar, (And am) like a lion of the forest with a terror-striking countenance. I give my opponents the measure of sandara in exchange for sa' (i.e. return the attack with one that is much more fierce). The narrator said: 'Ali struck at the head of Marhab and killed him, so the victory (capture of Khaibar) was due to him. This long tradition has also been handed down Through a different chain of transmitters.’


[7] Ibid: “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, পৃষ্ঠা ৫১৮

[8] Ibid “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক:  আল-ওয়াকিদি; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৯৯-৭০০; ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩৪৪-৩৪৫

আমাদের আত্মীয়েরা – ৯৭


ওপরের ছবিটি দেখে এরিক মারিয়া রেমার্কের লেখা "থ্রী কমরেডস" উপন্যাসে Pet Shop-এর বর্ণনার কথা মনে পড়ে গেল:

"এক কোণে দাঁড়িয়ে তাদের কথাবার্তা শুনছিলাম আমি। হঠাৎ কে যেন হ্যাট চেপে ধরুল আমার। চমকে উঠে ঘুরে তাকালাম। এক বানর তার পার্চের এক প্রান্তে এসে বসেছে। হলদেটে চামড়া, বিষণ্ণ মুখ, গোলাকার কালো চোখ, বৃদ্ধার ঠোঁটের মত ঠোঁট। পেটের ওপর দিয়ে বাঁধা চামড়ার কোমরবন্ধ, সেটার সাথে শেকল। ছোট ছোট হাত, কালো, একেবারে মানুষের হাতের মত, দেখলে চমকে যেতে হয়।

আমি আমার জায়গা ছেড়ে নড়লাম না একবিন্দুও। পার্চ ধরে সে আরও এগিয়ে এল আমাকে লক্ষ্য করে। তাকিয়ে আছে সে আমার দিকে; সন্দিন্ধ নয়, কিন্তু সতর্ক দৃষ্টি। সাবধানে একটা হাত বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। আমি সামনে বাড়িয়ে দিলাম একটা আঙুল। হাত একটু পেছনে টেনে নিল সে, তারপর ধরল সেটা। ঠাণ্ডা সেই হাতের স্পর্শে বিচিত্র এক অনুভূতি হলো আমার - কেমন করে ধরেছে সে আমার আঙুল! যেন দুঃখী বোবা মানুষ চাচ্ছে নিজেকে মুক্ত করতে, রক্ষা করতে। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না অতটা নিষ্প্রভ, পাংশু চোখের দিকে।"

'রঙ্গিলা রাসুল' সমাচার, পাকিস্তানের জন্মে এর সম্ভাব্য ভূমিকা এবং পাকিস্তানে ব্ল্যাসফেমি আইন - ৪

লিখেছেন মার্ক এন্টনি

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩

ঐতিহাসিকগণ বলেন, জিন্নাহ কংগ্রেসের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করলেও কংগ্রেসের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন এবং ভারত বিভাগ তিনি চাননি। কিন্তু ১৯৩০ সালে একটি আলাদা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের ধারণা তৈরির পর থেকেই ইকবাল বারবার জিন্নাহকে পাকিস্তান নামে একটি আলাদা রাষ্ট্র তৈরির কথা বলতে থাকেন। 

শেষ পর্যন্ত জিন্নাহ ১৯৪০ সালে অফিশিয়ালি ঘোষণা দেন যে, পাকিস্তান সৃষ্টিই তাঁর লক্ষ্য। ইকবাল জিন্নাহকে সবসময়ই একটি আলাদা মুসলিম রাষ্ট্রের গঠনের জন্য কথা বলে আসছিলেন। ১৯৩৭ সালের ২১ শে জুন জিন্নাহকে লেখা ইকবালের একটি চিঠি দেখুন:
একটি আলাদা মুসলিম অঙ্গরাজ্যই কেবল ভারতকে শান্তিপূর্ণ রাখতে পারে এবং মুসলিমদেরকে অমুসলিমদের কর্তৃত্ব থেকে রক্ষা করতে পারে। কেন উত্তর পশ্চিম ভারত এবং বাংলার মুসলিমদেরকে একটি জাতি হিসেবে বিবেচনা করা হবে না, যে জাতি নিজের সিদ্ধান্তেই চলতে পারে, যেমনটা ভারতের মধ্যকার জাতিগুলো এবং বাইরের জাতিগুলো চলছে?
পাঞ্জাব মুসলিম লীগের সভাপতি হিসেবে ইকবাল জিন্নাহর রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও পাঞ্জাবী নেতা স্যার সিকান্দার হায়াত খানের রাজনৈতিক চুক্তির সমালোচনা করেন, যাদেরকে ইকবাল সামন্তপ্রভু শ্রেণীর প্রতিনিধি হিসেবে দেখতেন এবং যারা ইসলাম ও তার মূল রাজনৈতিক দর্শনের প্রতি দায়িত্বশীল ছিলেন না। যাই হোক, ইকবাল প্রতিনিয়তই মুসলিম নেতাদের ও জনগণকে জিন্নাহ এবং মুসলিম লীগকে সমর্থন করতে উৎসাহিত করেছেন। ভারতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলার সময় তিনি বলেন:
কেবল একটাই রাস্তা খোলা আছে। মুসলিমদেরকে জিন্নাহ্‌র হাত শক্ত করতে হবে। তাদের সবাইকে মুসলিম লীগে অংশগ্রহণ করা উচিত। আমরা সকলে একত্রে মিলিত হলেই কেবল হিন্দু ও ব্রিটিশ উভয়ের বিরুদ্ধেই ভারতের প্রশ্নে লড়াই করতে পারব। এটা ছাড়া আমাদের দাবি কখনই বাস্তবায়িত হবে না। সবাই বলবে, আমাদের দাবি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াবে। কিন্তু সেটা তাদের আমাদের উদ্দেশ্যকে বানচাল করার কৌশল ছাড়া আর কিছুই না। এই দাবি আমাদের জাতীয় অস্তিত্বকে রক্ষা করার জন্য... মুসলিম লীগের নেতৃত্বে এই যুক্তফ্রন্ট গঠিত হতে পারে। আর কেবল জিন্নাহ্‌র নেতৃত্বেই মুসলিম লীগ বিজয়ী হতে পারে। এখন জিন্নাহ ছাড়া আর কেউই মুসলিমদের নেতৃত্বদানের ক্ষমতা রাখে না।
প্রশ্ন হচ্ছে: যেখানে ১৯৩০ সালের দিকে আল্লামা ইকবাল সমস্ত মুসলিম লীগ নেতার ওপরেই ক্ষুব্ধ ছিলেন, তিনি হঠাৎ করে জিন্নাহর ওপরে এত দরদ দেখানো শুরু করলেন কেন? এর কারণ এটা নয় তো যে, জিন্নাহ ইলমুদ্দিনের কেসে বোম্বে থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন? আর এ কারণে অন্যান্য যে কোনো নেতার চাইতে জিন্নাহই ইকবালের কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন আর জিন্নাহর চোখ দিয়েই ইকবাল সাহেব পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখতে থাকেন?

হতে পারে। কিন্তু এতে জিন্নাহর নিজের উপকার হয়নি কি? আল্লামা ইকবাল যখন সকলকে কেবল জিন্নাহকেই মুসলিমদের স্বাধীনতা এনে দিতে একমাত্র সক্ষম নেতা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন, তখন ভারতের সকল মুসলিমের কাছে জিন্নাহ এক অবিসংবাদী নেতায় পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন।

(চলবে)

নিত্য নবীরে স্মরি – ২৪৭

অনুবাদ ও ফটোমাস্তানি: আক্কাস আলী

শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০১৬

পুতুলের হক কথা - ১৬

লিখেছেন পুতুল হক

৬১.
উচ্চবিত্ত মুসলিম পরিবারের ছেলেমেয়েরা অনেক কিছু করে। সাথে একটু ইসলামও করে। বলাবাহুল্য, এই ইসলাম তাদের সুবিধামত হয়। বাপের অসৎ টাকায় নেশা করে, পার্টি করে, ফ্রি সেক্স করে। তবে শুধু করার আগে 'বিসমিল্লাহ' আর করার পরে 'আলহামদুলিল্লাহ' বলে। ধর্ম তাদের জীবনাচার নয়, কেবল বর্ম। কারণ সমাজে একটি ধারণা প্রচলিত আছে - যারা ধর্ম করে, তারা খারাপ মানুষ নয়।

৬২.
'আমার বন্ধু প্রতি ঈদে তার বাবার কবর জিয়ারত করে। আমি তাকে বললাম, নবী কিন্তু কোনো ঈদে তার বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করেনি। বুঝলাম না, বন্ধু কেন আমার সাথে রাগ করলো!

৬৩.
আমার ধর্ম আমার কাছে, ইসলাম ধর্ম সবার কাছে। ধর্ম নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করবেন না।

৬৪.
আমাদের বাসায় একজন ছুটা বুয়া ছিলেন প্রায় পনের বছর আগে। গ্রাম থেকে পালিয়ে চলে আসেন ঢাকায় এবং তারপর অনেক সংগ্রাম করে টিকে থাকার এক জীবন্ত কিংবদন্তী বুয়া। গ্রামে তাঁকে হিল্লা বিয়ে দেয়া হচ্ছিলো। সেদিন মাউলানার দিকে বসার পিড়ি ছুঁড়ে দিয়ে পালিয়ে আসেন। একদিন আমাকে বলেছিলেন "তোমাদের মত লেখাপড়ার সুযোগ পেলে আমি আল্লাহর ধার ধারতাম না।" 

উচ্চশিক্ষিত, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হিজাবি মেয়েদের দেখলে সেই বুয়ার কথা মনে পড়ে যায়।

৬৫.
যারা বলে, 'ইসলাম শান্তির ধর্ম', 'খুন-খারাবি ইসলাম সমর্থন করে না' কিংবা 'ইসলাম কখনো তলোয়ার দিয়ে ক্ষমতা দখল করেনি', তারা হয় না জেনে বলে কিংবা আংশিক জেনে বলে কিংবা ভুল ব্যাখ্যায় প্রভাবিত হয়ে বলে। ভুল মানুষের হতেই পারে। কিন্তু ভুল শুধরে না নিয়ে যারা চাপাতি হাতে তেড়ে আসে, তারাই প্রকৃত মুসলমান।

পষ্ট কইরা লেখা - ৩৪

ধর্মের চিড়িয়াখানায় - ৭

লিখেছেন ধর্মহীন জিরাফ

৩১.
মহামতি আইনস্টাইন নিজের টেলিফোন নাম্বারটাও মনে রাখতেন না। বললে বলতেন, যে-জিনিসটা লেখা আছে, সেটা মূখস্থ করার দরকার কী? আর ডঃ জাকির নায়েক শ্লোকের পর শ্লোক মুখস্থ বলে যায় চোখ-কান বন্ধ করে।

পার্থক্যটা বুঝতে পারছেন?

৩২.
মানবতাকে ফার্মেন্টেশন করলে তা ধর্মে রূপ নেয়।

৩৩.
ধর্মগুলো মানুষকে 'মানবিক ঈশ্বর' দিতে পারেনি। তারা মানুষকে দিয়েছে এমন এক ঈশ্বর, যে ক্ষুধার্ত মানুষের ক্ষুধাযন্ত্রণা দ্যাখে নীরব দর্শক হয়ে, ধর্ষিতার চিৎকার যে শোনে ভাবলেশহীনভাবে - এসব তুচ্ছ মানবিক অনুভূতি তাকে স্পর্শ করে না।

এই ঈশ্বরে আমি আস্থা রাখতে পারি না।

৩৪.
কোনো শহরে একজন করে পুরুষের জন্য ৭২ টা করে নারী (যৌনদাসী) বরাদ্দ দিলে পুরো শহরটা একটা সমৃদ্ধ বেশ্যাগারে রূপ নেবে।

৩৫.
"আমি একজন প্রকৃত মুসলিম এবং আমি ভীষণ অসাম্প্রদায়িক।"

হাহাহাহা... ওহ স্যরি! ইসলামিক রসিকতায় তো হাসা ঠিক না। যে ধর্ম বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছে বারংবার, সেই ধর্মে বিশ্বাসী একজন মানুষ বলছে যে, সে কিনা অসাম্প্রদায়িক! হাহাহাহা... ওহ, স্যরি।

দ্বীনবানের দীন বাণী - ৪৫

বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬

কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা অধ্যায় - গোপন প্রচারের তিন বছর (পর্ব ০৬)

লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ


{মানুষের জীবনযাপন বোঝার সহজ উপায় হচ্ছে তার শহরের প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ নিরীক্ষণ করা; মক্কার চারপাশটা যদি ঘুরে দেখা সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে নবী জীবনের অনেক ঘটনার লৌকিক ব্যাখ্যা করা সম্ভব; সেই সুযোগ আমার হয়েছে, মক্কা লাইব্রেরীর কিউরেটর আমার গাইড ছিলেন! 

আসুন, সংক্ষেপে আজ মক্কা চেনা শুরু করি; গত পর্বের ছবিটির সাথে এই পর্বের ছবিটি ডাউনলোড করে জুম করে সিরিয়াল অনুসারে দেখতে থাকুন।
৫৫৫০ x ২৮১০ রেজলুশনের মূল ছবিটির ডাউনলোড লিংক (৩ মেগাবাইট)

১: এটি মুহাম্মদের জন্মস্থান; ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত মুহাম্মদ এখানেই ছিলেন; বড় হলুদ বৃত্তটি মুহাম্মদের বানু হাশিম গোত্রের এলাকা; বানু হাশিম গোত্রের ১০ টি উপগোত্র ছিল; এটি মক্কা শহরের পূর্বের সীমা।

২: এই অংশে ছিল খাদিজার বাসা, মুহাম্মদ ২৫ থেকে ৫৩ বছর বয়স পর্যন্ত এই বাড়িতেই ছিলেন; মুহাম্মদের চাচা আবু লাহাব (আব্দুল উজ্জা) ছিলেন খাদিজার প্রতিবেশী; তাদের দুজনের বাড়ির দেওয়াল একসাথে সংযুক্ত ছিল।

৩: এটি সাফা পাহাড়ের চূড়া (উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট); এর ওপর থেকেই মুহাম্মদ জনসমুক্ষে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। সাফা কাবা থেকে ৩৩০ ফুট দূরত্বে অবস্থিত।

৪: এটি মারওয়া পাহাড়ের চূড়া (মারওয়া-কে পাহাড় না বলে উঁচু টিলা বলা যুক্তিযুক্ত); এর পাশেই ছিল জাবির নামে এক কর্মকারের দোকান; মুহাম্মদ এখানে সময় কাটাতেন মাঝে মধ্যেই। ৩ এবং ৪ এর মাঝের দূরত্ব প্রায় ১২০০ ফুট। মারওয়া কাবা থেকে ১১০০ ফুট দূরত্বে অবস্থিত।

৫: এই অংশে বাস করতেন মুহাম্মদের পারিবারিক চাচা আবু জেহেল (উমার ইবনে হিশাম/ আবু হাকাম); মুহাম্মদ বদর যুদ্ধের সময় তাঁকে মুসলমানদের ফেরাউন বলেছিলেন।

৬: সাফা পাহাড়ের পাদদেশের এই অংশে ছিল আরকাম-এর বাসা, এই বাসাকে মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের নিয়ে আলোচনা আর ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করেছিলেন ৬১৪ সাল থেকে।

৭: মুহাম্মদের চাচা আব্বাস ঠিক এই অংশে বাস করতেন।

৮: এটি জমজম কুপের অবস্থান এলাকা।

৯: এটি নবী মুহাম্মদের প্রথম প্রেম এবং মেরাজ নামক গল্প তৈরির স্থান - মানে উম্মে হানির বসবাসের স্থান।

১০: এটি নবী মুহাম্মদের একমাত্র বন্ধু, পরামর্শক, শ্বশুর আবু বকর-এর বাসস্থানের এলাকা; মুহাম্মদ প্রতিদিন একবার অবশ্যই এখানে আসতেন; এটি মক্কা শহরের পশ্চিম সীমার শেষ অংশ বলতে পারেন; ১ থেকে ১০ এর দূরত্ব এক মাইলের একটু বেশি; বলতে পারেন দেড় কিলোমিটার।

১১: এটি জান্নাতুল মালা কবরস্থান; মক্কা থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান; এখানে মুহাম্মদদের দাদা, চাচা, সন্তান এবং খাদিজার কবর আছে। হেঁটে হেঁটে হেরা গুহায় যেতে হলে জান্নাতুল মালা কবরস্থানের পাশ দিয়েই যেতে হয়।

১২: এটি হেরা গুহার পাহাড় (জবলে নূর); হেরা-কে গুহা বলা আর বেড়ালকে বাঘ বলা একই কথা। এর আকার (১২ বাই ৫১/৪ বাই ৭) বর্গফুট মাত্র; এখান থেকে মক্কা শহরকে দেখা যায়। এর অবস্থান মক্কা থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে। মুহাম্মদ তার প্রথম সন্তানের মৃত্যু; মক্কা ডুবিয়ে-দেওয়া বন্যা, আলীকে প্রতিপালনের জন্য নিয়ে আসা আর কাবা পুননির্মাণের সময় থেকে হেরায় নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন। এ সময় মুহাম্মদের বয়স ছিল ৩৫।

১৩: এটি মিনা এলাকা; এর অবস্থান মক্কা থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বে। এখানে শয়তানকে পাথর মারার প্রথা পালন করা হয়। চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার মিথ জন্ম নেয় এখান থেকেই।

মক্কা, মাত্র দেড় কিলোমিটারে ঘুরপাক খাওয়া একটি শহর; জনসংখ্যা ১৫০০ থেকে ২০০০ জনের মধ্যে; পানির সহজলভ্যতা এই শহরকে লম্বা মরুভূমি যাত্রার বিশ্রামস্থল হিসেবে বাড়তে সাহায্য করেছে; তার সাথে বেদুঈন আর হিজাজের শতাধিক গোত্রের বিনোদন ও ধর্ম পালনের স্থান হিসেবে গড়ে ওঠে মক্কা। মুহাম্মদের ইসলাম প্রচার ৬১০ থেকে ৬২০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই দেড় কিলোমিটারেই বৃত্তবন্দী থেকেছে; কুরাইশদের ভুল সিদ্ধান্ত আর মুহাম্মদের দূরদর্শিতা ৬২০ সালের পর থেকে ইসলামকে খোলা ময়দানে নিয়ে আসে; যার সুফল আজও ভোগ করছে সামান্য কয়েকজন, আর তার কুফলের যন্ত্রণা ভোগ করছে পুরো পৃথিবী!

বর্তমান মক্কা শহরটা চেনা হলো আজ; কিন্তু মুহাম্মদের সময় কেমন ছিলো মক্কার চেহারা; এই ধারাবাহিকের ৮ম পর্ব থেকেই মুহাম্মদ সাফা পাহাড়ে উঠে মক্কাবাসীদের সাবধান করা শুরু করবেন; আমরাও ঠিক সাফা চূড়ায় উঠে দেখবো, মুহাম্মদ কেমন দেখেছিলেন তাঁর সময়ের শহরটিকে!

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ৬ষ্ঠ পর্ব; এই পর্বে থাকছে গোপন প্রচারের তিন বছরের শেষ পাঁচ অংশঅনুবাদের ভাষা ৫০ টির বেশি বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৩১ তম প্রকাশ; সূরা আল ফাতিহা (১) (সূচনা) ৭ আয়াত:

১. শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। 
২. যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি সকল সৃষ্টিজগতের পালনকর্তা। 
৩. যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু। 
৪. যিনি বিচার দিনের মালিক। 
৫. আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। 
৬. আমাদেরকে সরল পথ দেখাও, 
৭. সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। 

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৩২ তম প্রকাশ; সূরা আল আদিয়াত (১০০) (অভিযানকারী) ১১ আয়াত:

১. শপথ ঊর্ধ্বশ্বাসে চলমান অশ্বসমূহের, 
২. অতঃপর ক্ষুরাঘাতে অগ্নিবিচ্ছুরক অশ্বসমূহের 
৩. অতঃপর প্রভাতকালে আক্রমণকারী অশ্বসমূহের 
৪. ও যারা সে সময়ে ধুলি উৎক্ষিপ্ত করে 
৫. অতঃপর যারা শক্রদলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে - 
৬. নিশ্চয় মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ। 
৭. এবং সে অবশ্য এ বিষয়ে অবহিত 
৮. এবং সে নিশ্চিতই ধন-সম্পদের ভালবাসায় মত্ত। 
৯. সে কি জানে না, যখন কবরে যা আছে, তা উত্থিত হবে 
১০. এবং অন্তরে যা আছে, তা অর্জন করা হবে? 
১১. সেদিন তাদের কী হবে, সে সম্পর্কে তাদের পালনকর্তা সবিশেষ জ্ঞাত। 

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৩৩ তম প্রকাশ; সূরা আল হাক্কাহ (৬৯) (নিশ্চিত সত্য) ৩৭ আয়াত:

১. সুনিশ্চিত বিষয়। 
২. সুনিশ্চিত বিষয় কী? 
৩. আপনি কি কিছু জানেন, সেই সুনিশ্চিত বিষয় কী? 
৪. আদ ও সামুদ গোত্র মহাপ্রলয়কে মিথ্যা বলেছিল। 
৫. অতঃপর সমুদ গোত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রলয়ংকর বিপর্যয় দ্বারা। 
৬. এবং আদ গোত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচণ্ড ঝঞ্জাবায়ূ, 
৭. যা তিনি প্রবাহিত করেছিলেন তাদের ওপর সাত রাত্রি ও আট দিবস পর্যন্ত অবিরাম। আপনি তাদেরকে দেখতেন যে, তারা অসার খর্জুর কাণ্ডের ন্যায় ভূপাতিত হয়ে রয়েছে। 
৮. আপনি তাদের কোনো অস্তিত্ব দেখতে পান কি? 
৯. ফেরাউন, তাঁর পূর্ববর্তীরা এবং উল্টে যাওয়া বস্তিবাসীরা গুরুতর পাপ করেছিল। 
১০. তারা তাদের পালনকর্তার রসূলকে অমান্য করেছিল। ফলে তিনি তাদেরকে কঠোরহস্তে পাকড়াও করলেন। 
১১. যখন জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল, তখন আমি তোমাদেরকে চলন্ত নৌযানে আরোহণ করিয়েছিলাম। 
১২. যাতে এ ঘটনা তোমাদের জন্যে স্মৃতির বিষয় এবং কান এটাকে উপদেশ গ্রহণের উপযোগী রূপে গ্রহণ করে। 
১৩. যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে-একটি মাত্র ফুৎকার 
১৪. এবং পৃথিবী ও পর্বতমালা উত্তোলিত হবে ও চুর্ণ-বিচুর্ণ করে দেয়া হবে, 
১৫. সেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে। 
১৬. সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও বিক্ষিপ্ত হবে। 
১৭. এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আট জন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের উর্ধ্বে বহন করবে। 
১৮. সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোনোকিছু গোপন থাকবে না। 
১৯. অতঃপর যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, সে বলবে: নাও, তোমরাও আমলনামা পড়ে দেখ। 
২০. আমি জানতাম যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। 
২১. অতঃপর সে সুখী জীবন যাপন করবে, 
২২. সুউচ্চ জান্নাতে। 
২৩. তার ফলসমূহ অবনমিত থাকবে। 
২৪. বিগত দিনে তোমরা যা প্রেরণ করেছিলে, তার প্রতিদানে তোমরা খাও এবং পান কর তৃপ্তি সহকারে। 
২৫. যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবে: হায় আমায় যদি আমার আমল নামা না দেয়া হতো। 
২৬. আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব! 
২৭. হায়, আমার মৃত্যুই যদি শেষ হত। 
২৮. আমার ধন-সম্পদ আমার কোনো উপকারে এলো না। 
২৯. আমার ক্ষমতাও বরবাদ হয়ে গেল। 
৩০. ফেরেশতাদেরকে বলা হবে: ধর, একে গলায় বেড়ি পড়িয়ে দাও, 
৩১. অতঃপর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে। 
৩২. অতঃপর তাকে শৃঙ্খলিত কর সত্তর গজ দীর্ঘ এক শিকলে। 
৩৩. নিশ্চয় সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না। 
৩৪. এবং মিসকীনকে আহার্য দিতে উৎসাহিত করত না। 
৩৫. অতএব, আজকের দিন এখানে তার কোনো সুহৃদ নাই। 
৩৬. এবং কোনো খাদ্য নাই, ক্ষত-নিঃসৃত পুঁজ ব্যতীত। 
৩৭. গোনাহগার ব্যতীত কেউ এটা খাবে না। 

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৩৪ তম প্রকাশ; সূরা আন নাযিয়াত (৭৯) (প্রচেষ্টাকারী) ২৭ থেকে ৪৬ আয়াত:

২৭. তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন না আকাশের, যা তিনি নির্মাণ করেছেন? 
২৮. তিনি একে উচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন। 
২৯. তিনি এর রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং এর সূর্যোলোক প্রকাশ করেছেন। 
৩০. পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন। 
৩১. তিনি এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন, 
৩২. পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, 
৩৩. তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের উপকারার্থে। 
৩৪. অতঃপর যখন মহাসংকট এসে যাবে। 
৩৫. অর্থাৎ যেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম স্মরণ করবে 
৩৬. এবং দর্শকদের জন্যে জাহান্নাম প্রকাশ করা হবে, 
৩৭. তখন যে ব্যক্তি সীমালংঘন করেছে; 
৩৮. এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, 
৩৯. তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। 
৪০. পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশি থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে, 
৪১. তার ঠিকানা হবে জান্নাত। 
৪২. তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, কেয়ামত কখন হবে? 
৪৩. এর বর্ণনার সাথে আপনার কী সম্পর্ক ? 
৪৪. এর চরম জ্ঞান আপনার পালনকর্তার কাছে। 
৪৫. যে একে ভয় করে, আপনি তো কেবল তাকেই সতর্ক করবেন। 
৪৬. যেদিন তারা একে দেখবে, সেদিন মনে হবে, যেন তারা দুনিয়াতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক সকাল অবস্থান করেছে। 

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৩৫ তম প্রকাশ; সূরা আল ওয়াক্বিয়াহ্ (৫৬) (নিশ্চিত ঘটনা) ৮১, ৮২ বাদে ৯৬ পর্যন্ত আয়াত:

১. যখন কিয়ামতের ঘটনা ঘটবে, 
২. যার বাস্তবতায় কোনো সংশয় নেই। 
৩. এটা নিচু করে দেবে, সমুন্নত করে দেবে। 
৪. যখন প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে পৃথিবী। 
৫. এবং পর্বতমালা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। 
৬. অতঃপর তা হয়ে যাবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণা। 
৭. এবং তোমরা তিনভাবে বিভক্ত হয়ে পড়বে। 
৮. যারা ডান দিকে, কত ভাগ্যবান তারা। 
৯. এবং যারা বামদিকে, কত হতভাগা তারা। 
১০. অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই। 
১১. তারাই নৈকট্যশীল, 
১২. অবদানের উদ্যানসমূহে, 
১৩. তারা একদল পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে। 
১৪. এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের মধ্যে থেকে। 
১৫. স্বর্ণখচিত সিংহাসন। 
১৬. তারা তাতে হেলান দিয়ে বসবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে। 
১৭. তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চিরকিশোরেরা। 
১৮. পানপাত্র কুঁজা ও খাঁটি সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে নিয়ে, 
১৯. যা পান করলে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং তারা বিকারগ্রস্তও হবে না। 
২০. আর তাদের পছন্দমত ফলমুল নিয়ে, 
২১. এবং রুচিমত পাখির মাংস নিয়ে। 
২২. তথায় থাকবে আনতনয়না হুরগণ, 
২৩. আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়, 
২৪. তারা যা কিছু করত, তার পুরস্কারস্বরূপ। 
২৫. তারা তথায় অবান্তর ও কোনো খারাপ কথা শুনবে না। 
২৬. কিন্তু শুনবে সালাম আর সালাম। 
২৭. যারা ডান দিকে থাকবে, তারা কত ভাগ্যবান। 
২৮. তারা থাকবে কাঁটাবিহীন বদরিকা বৃক্ষে। 
২৯. এবং কাঁদি কাঁদি কলায়, 
৩০. এবং দীর্ঘ ছায়ায়। 
৩১. এবং প্রবাহিত পানিতে, 
৩২. ও প্রচুর ফলমূলে, 
৩৩. যা শেষ হবার নয় এবং নিষিদ্ধও নয়, 
৩৪. আর থাকবে সমুন্নত শয্যায়। 
৩৫. আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। 
৩৬. অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী। 
৩৭. কামিনী, সমবয়স্কা। 
৩৮. ডান দিকের লোকদের জন্যে। 
৩৯. তাদের একদল হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে। 
৪০. এবং একদল পরবর্তীদের মধ্য থেকে। 
৪১. বামপার্শ্বস্থ লোক, কত না হতভাগা তারা। 
৪২. তারা থাকবে প্রখর বাষ্পে এবং উত্তপ্ত পানিতে, 
৪৩. এবং ধুম্রকুঞ্জের ছায়ায়। 
৪৪. যা শীতল নয় এবং আরামদায়কও নয়। 
৪৫. তারা ইতিপূর্বে স্বাচ্ছন্দ্যশীল ছিল। 
৪৬. তারা সদাসর্বদা ঘোরতর পাপকর্মে ডুবে থাকত। 
৪৭. তারা বলত: আমরা যখন মরে অস্থি ও মৃত্তিকায় পরিণত হয়ে যাব, তখনও কি পুনরুত্থিত হব? 
৪৮. এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণও! 
৪৯. বলুন: পূর্ববর্তী ও পরবর্তীগণ, 
৫০. সবাই একত্রিত হবে এক নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে। 
৫১, অতঃপর হে পথভ্রষ্ট, মিথ্যারোপকারীগণ। 
৫২. তোমরা অবশ্যই ভক্ষণ করবে যাক্কুম বৃক্ষ থেকে, 
৫৩. অতঃপর তা দ্বারা উদর পূর্ণ করবে, 
৫৪. অতঃপর তার ওপর পান করবে উত্তপ্ত পানি। 
৫৫. পান করবে পিপাসিত উটের ন্যায়। 
৫৬. কেয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন। 
৫৭. আমি সৃষ্টি করেছি তোমাদেরকে। অতঃপর কেন তোমরা তা সত্য বলে বিশ্বাস কর না। 
৫৮. তোমরা কি ভেবে দেখেছ, তোমাদের বীর্যপাত সম্পর্কে। 
৫৯. তোমরা তাকে সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি? 
৬০. আমি তোমাদের মৃত্যুকাল নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই। 
৬১. এ ব্যাপারে যে, তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের মত লোককে নিয়ে আসি এবং তোমাদেরকে এমন করে দিই, যা তোমরা জান না। 
৬২. তোমরা অবগত হয়েছ প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে, তবে তোমরা অনুধাবন কর না কেন? 
৬৩. তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? 
৬৪. তোমরা তাকে উৎপন্ন কর, না আমি উৎপন্নকারী? 
৬৫. আমি ইচ্ছা করলে তাকে খড়কুটো করে দিতে পারি, অতঃপর হয়ে যাবে তোমরা বিস্ময়াবিষ্ট। 
৬৬. বলবে: আমরা তো ঋণের চাপে পড়ে গেলাম; 
৬৭. বরং আমরা হৃতসর্বস্ব হয়ে পড়লাম। 
৬৮. তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? 
৬৯. তোমরা তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন, না আমি বর্ষণ করি? 
৭০. আমি ইচ্ছা করলে তাকে লোনা করে দিতে পারি, অতঃপর তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না? 
৭১. তোমরা যে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? 
৭২. তোমরা কি এর বৃক্ষ সৃষ্টি করেছ, না আমি সৃষ্টি করেছি? 
৭৩. আমি সেই বৃক্ষকে করেছি স্মরণিকা এবং মরুবাসীদের জন্য সামগ্রী। 
৭৪. অতএব, আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামে পবিত্রতা ঘোষণা করুন। 
৭৫. অতএব, আমি তারকারাজির অস্তাচলের শপথ করছি, 
৭৬. নিশ্চয় এটা এক মহা শপথ - যদি তোমরা জানতে। 
৭৭. নিশ্চয় এটা সম্মানিত কোরআন, 
৭৮. যা আছে এক গোপন কিতাবে, 
৭৯. যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। 
৮০. এটা বিশ্ব-পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। 
৮৩. অতঃপর যখন কারও প্রাণ কন্ঠাগত হয়। 
৮৪. এবং তোমরা তাকিয়ে থাক, 
৮৫. তখন আমি তোমাদের অপেক্ষা তার অধিক নিকটে থাকি; কিন্তু তোমরা দেখ না। 
৮৬. যদি তোমাদের হিসাব-কিতাব না হওয়াই ঠিক হয়, 
৮৭. তবে তোমরা এই আত্মাকে ফেরাও না কেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও? 
৮৮. যদি সে নৈকট্যশীলদের একজন হয়; 
৮৯. তবে তার জন্যে আছে সুখ, উত্তম রিযিক এবং নেয়ামতে ভরা উদ্যান। 
৯০. আর যদি সে ডান পার্শ্বস্থদের একজন হয়, 
৯১. তবে তাকে বলা হবে: তোমার জন্যে ডানপার্শ্বস্থদের পক্ষ থেকে সালাম। 
৯২. আর যদি সে পথভ্রষ্ট মিথ্যারোপকারীদের একজন হয়, 
৯৩. তবে তার আপ্যায়ন হবে উত্তপ্ত পানি দ্বারা। 
৯৪. এবং সে নিক্ষিপ্ত হবে অগ্নিতে। 
৯৫. এটা ধ্রুব সত্য। 
৯৬. অতএব, আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামে পবিত্রতা ঘোষণা করুন। 

আয়াত প্রকাশের মনোজগত: গোপন প্রচারের প্রায় তিন বছর সময়ে মুহাম্মদ আয়াত প্রকাশে স্বাভাবিক গতিশীলতা লাভ করেন; আর নিয়মিত বিরতিতে আয়াত প্রকাশের চর্চা, সাথে একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রকাশ ও পাঠ, ভাষার জড়তা কমাতে থাকে; আয়াতের আকার বাড়তে থাকাটাই তার এই জড়তাহীনতার প্রকাশ। 

মুহাম্মদ এই সময়ে আল্লাহ, বিশ্বাস, সমর্পন (ইসলাম), বেহেস্ত, দোযখ আর মানুষের ধন-সম্পদের বিভেদ নিয়ে আয়াতের মাধ্যেমে একটি পরিষ্কার ধারণা তাঁর সল্প সংখ্যাক সাহাবীদের (অনুসারী) দিতে সমর্থ হন। সাহাবীদের অনুরোধ আর মুহাম্মদের জনসমক্ষে ইসলাম প্রচারের ইচ্ছা তাঁকে মানসিকভাবে অস্থির করে তোলে! এই অস্থিরতাই হচ্ছে এই সময়ের সবচেয়ে বড় সূরার অংশ হিসেবে (প্রায় ১৭০ লাইনের) ৩৬/৩৭/৩৮ তম প্রকাশ; যেখানে মুহাম্মদের অবচেতন (আল্লাহ/জ্রিবাইল), মুহাম্মদকেই বিভিন্ন উদাহরন দিয়ে মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে চেষ্টা করতে থাকে। 

তার তা দিয়েই শুরু হবে আমাদের আগামী পর্ব!

(চলবে)