(এই পোস্টের লেখক মাজহারুল ইসলাম দশম শ্রেণীর ছাত্র। তিনি মাত্র কয়েকদিন হলো আমার ফেইসবুক-বন্ধু। তাঁর বেশকিছু স্ট্যাটাস ও নোট পড়ে আমি রীতিমতো মুগ্ধ ও চমৎকৃত হয়েছি।)
এঁর কাছ থেকে আরও লেখা পাবার প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণে ঋদ্ধ হয়ে উঠুক ধর্মকারী।)
লিখেছেন মাজহারুল ইসলাম
আমার মনে হয়, ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেনি বা নিজে আহত হয় নি; এমন মানুষ পৃথিবীতে নেই। বোধহয় বিশুদ্ধ ধার্মিকের এই অনুভূতি সামান্য কম, ছদ্মবেশীদের অনেক বেশি। ছদ্মবেশীদের আঘাত লাগলে বা লাগার সম্ভাবনা আছে বুঝলেই তাদের ক্ষিপ্রতা দেখা যায়। আমরা সবাই এখন ক্ষিপ্র আঘাতকারীদের বিরুদ্ধে।
কিন্তু এটি পৌরাণিক ভাবাদর্শের মতোই জ্ঞানকে বাধা দিচ্ছে, জ্ঞানীদেরকে হত্যা করছে। নিজেদের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে এই ভান ধরে ধর্মানুভূতি নামক ধারালো মনোঅস্ত্রটি আহত, খুন, আঘাত ও পীড়ন ক'রে চলেছে জ্ঞানীদের, প্রথাবিরোধীদের, রাষ্ট্রকে ও সমাজকে।
বেঁচে থাকার চূড়ান্ত আশাহীনতায় ভুগছে মানুষ,কিন্তু তারা এই ধ্রুব সত্যটি ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। যারা পেরেছে/পারছে তাদেরকে আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছিল/হচ্ছে পৃথিবী থেকে।
পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথাবিরোধী সত্যবাদীদের পরিণতি খুবই নির্মম। কেননা সত্য গ্রহণে মানুষের যেমন অনীহা; সত্য গোপনে তারা তেমনি তত্পর। ধর্মকে হাতিয়ার করে মানুষ সত্যবাদীদেরকে আঘাত করেছে বহুভাবে। তবে আধুনিকেরা সব সময়ই যুগ থেকে বিচ্ছিন্ন,কিন্তু কালোত্তীর্ণ। কেননা তাঁরা সত্য খুঁজে পেয়েছেন/পান।
যুগ থেকে একটু পেছনে তাকালেই আমরা এই সত্যগুলো খুঁজে পাই। যেখানে সত্যের পরাজয় হয়েছিল, জয় হয়েছিল ধর্মের। কিন্তু যেহেতু সত্য চিরন্তন; তাই আজকের যুগে আমরা সেগুলোর সত্যতা যাচাই করতে পারছি। আর ধর্ম যে ভিত্তিহীন, তাও বুঝে উঠতে পারছি। যদিও এখনো আমরা ধর্মাস্ত্রের ব্যবহারটি ভুলে যাই নি। ভুলিনি কীভাবে জ্ঞানীদেরকে আঘাত করতে হয়। তাদেরকে বিনাশ করতে হয়।
একটু ইতিহাসে ফিরে যাই, তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে। আমার ইতিহাস জ্ঞান কম। তবে যেটুকু জানি, আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করছি। তবে এগুলো জানা নেই, এমন মানুষ খুব কমই আছে বোধহয় !
প্রাচীনকালের সত্যবাদীদের পরিণতি:
(প্রাচীন গ্রিক ভাষায় Σωκράτης সক্রাত্যাস্) (খ্রিস্টপূর্ব ৪৭০ - খ্রিস্টপূর্ব ৩৯৯) প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক। এই মহান দার্শনিকের সম্পর্কে তথ্য লিখিতভাবে পাওয়া যায় কেবলমাত্র তাঁর শিষ্য প্লেটো-র ডায়ালগ এবং সৈনিক জেনোফন-এর রচনা থেকে। তৎকালীন শাসকদের কোপানলে পড়ে তাঁকে হেমলক বিষ পানে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তাঁকে পশ্চিমা দর্শনের ভিত্তি স্থাপনকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তিনি এমন এক দার্শনিক চিন্তাধারা জন্ম দিয়েছেন, যা দীর্ঘ ২০০০ বছর ধরে পশ্চিমা সংস্কৃতি, দর্শন ও সভ্যতাকে প্রভাবিত করেছে। সক্রেটিস ছিলেন এক মহান সাধারণ শিক্ষক, যিনি কেবল শিষ্য গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানে বিশ্বাসী ছিলেন না। তাঁর কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষায়তন ছিল না। যেখানেই যাকে পেতেন, তাকেই মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর বোঝানোর চেষ্টা করতেন। তিনি মনব চেতনায় আমোদের ইচ্ছাকে নিন্দা করেছেন, কিন্তু সৌন্দর্য দ্বারা নিজেও আনন্দিত হয়েছেন।
তাঁর একটি উক্তি: "নিজেকে অন্যের মধ্যে বিলিয়ে দেয়াই আমার অভ্যাস; আর এজন্যই এমনিতে না পেলে পয়সাকড়ি দিয়েও আমি দার্শনিক আলোচনার সাথী সংগ্রহ করতাম।"
(লাতিন ভাষায়: Nicolaus Copernicus নিকোলাউস্ কোপের্নিকুস্, তৎকালীন পোলীয় ভাষায়: Mikołaj Kopernik মিকল্বাই কপের্নিক্, আধুনিক পোলীয় ভাষায়: মিকউয়াই কপর্নিক্) (১৯শে ফেব্রুয়ারি, ১৪৭৩ - ২৪শে মে, ১৫৪৩) একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনিই প্রথম আধুনিক সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের মতবাদ প্রদান করেন।
কোপের্নিকুসের একটি বিখ্যাত বই হল- "De revolutionibus"। এই বইটি তিনি লিখেছিলেন আনুমানিক ১৫১২ খ্রিস্টাব্দের পরে। কিন্তু তা প্রকাশ পায় ১৫৪৩ এর এপ্রিলে। কেননা তখন এই ধরণের বই প্রকাশ করা ছিল ভয়ের ব্যাপার। খ্রিষ্টার যাজকেরা ছিলো অত্যন্ত শক্তিশালী। বাইবেলের বিশ্বাস থেকে একটু স'রে গেলেই তারা লোকজনকে পুড়িয়ে মারতো ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে। এজন্য কোপের্নিকুস যখন ১৫৪৩ সালের ২৪শে মে Frombork-এ মৃত্যুবরণ করেন, তখন তাঁর হাতে তাঁর লেখা অতি বিখ্যাত বই De revolutionibus-এর একটি কপি দেয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে যেন তিনি তাঁর সারা জীবনের কার্যক্রমের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছিলেন। বলা হয়, তিনি স্ট্রোক করেছিলেন। স্ট্রোকের পর কোমায় চলে যান। কোমা থেকে উঠে তাঁর অতি প্রিয় বইটির দিকে তাকান এবং শান্তিতে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই বইটির নাম পালটে হয় "দ্য রেভোলিউশনিবাস অর্বিউম কোয়েলিস্তিউম"।
বইটির শুরুতে একটি অস্বাক্ষরিত মুখবন্ধও ছাপা হয়। কিন্তু তিনি এটি লেখেন নি, এবং তিনি জানতেনও না এই মুখবন্ধটি থাকবে তাঁর বইয়ে। মূলত মুখবন্ধটি বাতিল করে দেয় বইটির প্রস্তাব এবং তাঁর নীতি। এ থেকেই বুঝতে পারা যায়, কী ধর্মীয় বিভীষিকার মধ্যে বের করতে হয়েছিল এই বইটি। স্বীকার করে নিতে হয়েছিল যে, জ্যোতির্বিদ্যা সত্য জানে না, সত্য জানে শুধু বাইবেল!
জর্দানো ব্রুনো (১৫৪৮–১৭ই ফেব্রুয়ারি, ১৬০০) একজন ইতালীয় দার্শনিক, ধর্মযাজক, বিশ্বতত্ত্ব বিশারদ এবং ওকাল্টিস্ট (গূঢ় রহস্যাদিতে বিশ্বাসী ব্যক্তি)।
ব্রুনো তার স্মৃতিবর্ধন পদ্ধতির জন্য বিখ্যাত যা সংগঠিত জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মহাবিশ্ব সম্পূর্ণ সুষম এবং অসীম নয় তার প্রাথমিক প্রস্তাবকদের মধ্যে তিনি একজন।
প্রচলিত ধর্মের বিরোধিতার (heresy) অপরাধে ১৫৯২ সালে ইতালির ধর্মীয় বিচারসংস্থা বেঁধে ফেলে তাঁকে। এবং আট বছর ধরে ব্রুনোর মতবাদ বিচার করে ধর্মদ্রোহিতার অপরাধে তাঁকে পুড়িয়ে মারা হয়। এজন্য অনেকে তাকে চিন্তার মুক্তির জন্য নিবেদিত একজন শহীদ হিসেবে গণ্য করে থাকেন।
গ্যালিলিও গ্যালিলি একজন ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক যিনি বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সাথে বেশ নিগূঢ়ভাবে সম্পৃক্ত। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নতি সাধন যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে, বিভিন্ন ধরণের অনেক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, নিউটনের গতির প্রথম এবং দ্বিতীয় সূত্র, এবং কোপারনিকাসের মতবাদের পক্ষে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের মতে আধুনিক যুগে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের এতো বিশাল অগ্রগতির পেছনে গ্যালিলিওর চেয়ে বেশি অবদান আর কেউ রাখতে পারেননি। তাঁকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক এবং এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। অ্যারিস্টটলীয় ধারণার অবসানে গ্যালিলিওর আবিষ্কারগুলোই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে – বাইবেল বিরোধী এই সত্য কথা বলার অপরাধে চার্চ গ্যালিলিওকে অভিযুক্ত করেছিল ‘ধর্মদ্রোহিতার’ অভিযোগে, ১৬৩৩ সালে। গ্যালিলিও তখন প্রায় অন্ধ, বয়সের ভারে ন্যুব্জ। অসুস্থ ও বৃদ্ধ বিজ্ঞানীকে জোর করে ফ্লোরেন্স থেকে রোমে নিয়ে যাওয়া হয়, হাটু ভেঙে সবার সামনে জোড় হাতে ক্ষমা প্রার্থনা করিয়ে বলতে বাধ্য করা হয়, এতদিন গ্যালিলিও যা প্রচার করেছিলেন তা ধর্মবিরোধী, ভুল ও মিথ্যা। বাইবেলে যা বলা হয়েছে সেটিই আসল, সঠিক - পৃথিবী স্থির অনড় - সৌরজগতের কেন্দ্রে। গ্যালিলিও প্রাণ বাঁচাতে তাই করলেন। পোপ ও ধর্মসংস্থার সম্মূখে গ্যালিলিও যে স্বীকারোক্তি ও প্রতিজ্ঞা-পত্র স্বাক্ষর করেন, তা বিজ্ঞান সাধনার ইতিহাসে ধর্মীয় মৌলবাদীদের নির্মমতার এবং জ্ঞান সাধকদের কাছে বেদনার এক ঐতিহাসিক দলিল:
"আমি ফ্লোরেন্সবাসী স্বর্গীয় ভিন্সেঞ্জিও গ্যালিলিওর পুত্র, সত্তর বৎসর বয়স্ক গ্যালিলিও গ্যালিলি সশরীরে বিচারার্থ আনীত হয়ে এবং অতি প্রখ্যাত ও সম্মানার্হ ধর্মযাজকদের (কার্ডিনাল) ও নিখিল খ্রিষ্টীয় সাধারণতন্ত্রে ধর্মবিরুদ্ধ আচরণজনিত অপরাধের সাধারণ বিচারপতিগণের সম্মূখে নতজানু হয়ে স্বহস্তে ধর্মগ্রন্থ স্পর্শপূর্বক শপথ করছি যে, রোমের পবিত্র ক্যাথলিক খ্রিষ্টধর্ম সংস্থার দ্বারা যা কিছু শিক্ষাদান ও প্রচার করা হয়েছে ও যা কিছুতেই বিশ্বাস স্থাপন করা হয়েছে আমি তা সবসময় বিশ্বাস করে এসেছি, এখনও করি এবং ঈশ্বরের সহায়তা পেলে ভবিষ্যতেও করব। সূর্য কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ও নিশ্চল এরূপ মিথ্যা অভিমত যে কীরূপ শাস্ত্রবিরোধী সে সব বিষয় আমাকে অবহিত করা হয়েছিল; এ মিথ্যা মতবাদ সম্পূর্ণরূপে পরিহার করে এর সমর্থন ও শিক্ষাদান থেকে সর্বপ্রকারে নিবৃত্ত থাকতে আমি এই পবিত্র ধর্মসংস্থা কর্তৃক আদিষ্ট হয়েছিলাম। কিন্তু তৎসত্ত্বেও সে একই নিন্দিত ও পরিত্যক্ত মতবাদ আলোচনা করে ও কোনো সমাধানের চেষ্টার পরিবর্তে সেই মতবাদের সমর্থনে জোরালো যুক্তিতর্কের অবতারণা করে আমি একটি গ্রন্থ রচনা করেছি; এজন্য গভীর সন্দেহ এই যে, আমি খ্রিষ্টধর্মবিরূদ্ধ মত পোষণ করে থাকি। .... অতএব সঙ্গত কারণে আমার প্রতি আরোপিত এই অতিঘোর সন্দেহ ধর্মাবতারদের ও ক্যাথোলিক সম্প্রদায়ভুক্ত প্রত্যেকের মন হতে দূর করবার উদ্দেশ্যে সরল অন্তকরণে ও অকপট বিশ্বাসে শপথ করে বলছি যে পূর্বোক্ত ভ্রান্ত ও ধর্মবিরূদ্ধ মত আমি ঘৃণাভরে পরিত্যাগ করি। ...আমি শপথ করে বলছি যে, আমার ওপর এ জাতীয় সন্দেহের উদ্রেক হতে পারে, এরূপ কোনো বিষয় সম্বন্ধে ভবিষ্যতে আর কখনও কিছু বলব না বা লিখব না। এরূপ অবিশ্বাসীর কথা জানতে পারলে অথবা কারও ওপর ধর্মবিরূদ্ধ মতবাদ পোষণের সন্দেহ উপস্থিত হলে পবিত্র ধর্মসংস্থার নিকট অথবা যেখানে অবস্থান করব সেখানকার বিচারকের নিকট আমি তা জ্ঞাপন করব। শপথ নিয়ে আমি আরও প্রতিজ্ঞা করছি যে, এই পবিত্র ধর্মসংস্থা আমার ওপর যে সব প্রায়শ্চিত্তের নির্দেশ প্রদান করবে আমি তা হুবহু পালন করব। এসব প্রতিজ্ঞা ও শপথের যে কোন একটি যদি ভঙ্গ করি তাহলে শপথভঙ্গকারীর জন্য ধর্মাধিকরণের পবিত্র অনুশাসনে এবং সাধারণ অথবা বিশেষ আইনে যেসব নির্যাতন ও শাস্তির ব্যবস্থা আছে তা আমি মাথা পেতে গ্রহণ করব। অতএব ঈশ্বর ও যেসব পবিত্র গ্রন্থ আমি স্পর্শ করে আছি, এঁরা আমার সহায় হোন। আমি উপরে কথিত গ্যালিলিও গ্যালিলি শপথ গ্রহণ ও প্রতিজ্ঞা করলাম এবং নিজেকে উপযুক্তভাবে বন্ধনে আবদ্ধ রাখতে প্রতিশ্রুত হলাম। এর সাক্ষ্য হিসেবে স্বহস্তলিখিত শপথনামা যার প্রতিটি অক্ষর এইমাত্র আপনাদের পাঠ করে শুনিয়েছি, তা আপনাদের নিকট সমর্পন করছি। ২২শে জুন, ১৬৩৩ খ্রীষ্টাব্দ, রোমের মিনার্ভা কনভেন্ট।”
হাইপেশিয়া (প্রাচীন গ্রিক ভাষায় Υπατία হুপাতিয়া) (৩৭০ - মার্চ, ৪১৫) বিখ্যাত মিশরীয় নব্য প্লেটোবাদী দার্শনিক এবং গণিতজ্ঞ। মহিলাদের মধ্যে তিনিই প্রথম উল্লেখযোগ্য গণিতজ্ঞ। তিনি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ আলেক্সান্দ্রিয়ান প্যাগানও ছিলেন। শিক্ষক হিসেবে তার সাফল্য উল্লেখ করার মত।
"এখানে শায়িত ডাইওফেন্টাস—আহ্, কী মনোরম দৃশ্য! গণিতের সুষমায় এই প্রস্তরখণ্ডে উৎকীর্ণ আছে তাঁর কথা। স্রষ্টা দিয়েছিলেন তাঁকে বালকজীবন তাঁর জীবনের এক ষষ্ঠাংশ। তারপর এক দ্বাদশাংশ কাটে তাঁর তারূণ্যের উচ্ছ্বাসে যখন শ্মশ্রূমণ্ডিত হয় মুখ। আরও এক সপ্তাংশ পরে তাঁর শুভ পরিণয়, আর দাম্পত্যের পঞ্চম বর্ষশেষে সংসার আলো করে আসা ছেলে। কিন্তু হায়, দুর্ভাগা প্রিয় পুত্র—পৃথিবীর আলো নিভে আসে তার যখন সে উপনীত হয় পিতার অর্ধেক জীবন। হৃদয়ের কষ্ট ভোলেন ডাইওফেন্টাস সংখ্যার সৌন্দর্যে চারটি বছর। অতঃপর অবসান হয় তাঁর জীবনের খেলা”।"
ছন্দোময় এই ধাঁধাঁটিতে করুণভাবে মূর্ত হয়ে আছে তৃতীয় শতকের মহান গণিতবিদ ডাইওফেন্টাসের জীবন। ধারণা করা হয়, এর রচয়িতা হাইপেশিয়া—ইতিহাসবেত্তাদের মতে পৃথিবীর প্রথম নারী, গণিত ও বিজ্ঞানে যিনি রেখে গিয়েছেন অসামান্য অবদান। শুধু তাই নয়, অন্ধকার যুগে ইউরোপের তলিয়ে যাবার পূর্বে পেরিক্লিসের সোনালী যুগের তিনি ছিলেন শেষ বিজ্ঞানী।
ভূমধ্যসাগরের কোলে নীলের পলল অববাহিকায় গড়ে উঠা প্রাচীন মিশরীয় নগরী আলেকজান্দ্রিয়া। এখানেই আনুমানিক ৩৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন হাইপেশিয়া, থমথমে এক সময়ে যখন মিশরের আত্মিক জগত ছিল বিপর্যস্ত। মেয়েদেরকে মনে করা হত মানুষের চেয়ে নিচু প্রজাতির—অ্যারিস্টোটলের নারীবিদ্বেষী শিক্ষার সুদূরপ্রসারী প্রভাব তখনো পুরোপুরি কাটেনি হেলেনীয় সভ্যতায়। ওদিকে শক্তিধর রোমান সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে দীক্ষিত হচ্ছে খ্রিষ্টধর্মে, ৩১২ খ্রিষ্টাব্দে যার সুচনা করে যান সম্রাট কনস্ট্যান্টিন। কিন্তু নতুন এই ধর্মের ঊষালগ্নে প্রায়ই দাঙ্গা বেঁধে যেত পবিত্র তাওরাত ও ঈঞ্জিলের অনুসারী এবং প্রাচীন দেবদেবীর উপাসনাকারীদের মধ্যে, আর রক্তরঞ্জিত হত মিশরের রাজপথ।
হাইপেশিয়ার পিতা থিওন ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক, যিনি পরবর্তীতে এর অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। থিওন চেয়েছিলেন মেয়ে হয়ে উঠবে একজন পরিপূর্ণ নিখুঁত মানুষ হয়ে। তাই শৈশব থেকেই পরম মমতায় মেয়ের চারদিকে গড়ে তোলেন অনুসন্ধিৎসা, জিজ্ঞাসা এবং জ্ঞান অন্বেষণের এক আনন্দময় জগত। পিতার তত্ত্বাবধানে হাইপেশিয়া লাভ করেন সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন ও শিল্পের উপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, অর্জন করেন কন্ঠের যথাযথ ব্যবহার এবং বাগ্মীতার দ্বারা মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা। মনোজগত প্রসারিত করার সাথে সাথে আত্মজার শারীরিক শিক্ষার দিকেও যত্নশীল হন থিওন, যাতে কন্যার সুস্থ দেহ ও তীক্ষ্ণ মানস জগতের সুন্দর সমন্বয় গড়ে উঠে—মেয়েকে শিক্ষা দেন সন্তরণ, অশ্বচালণা এবং পর্বতারোহণ।
পিতার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে দেননি হাইপেশিয়া— অতুলনীয় মেধার কারণে অল্প সময়েই তিনি এসব শিক্ষা যথেষ্ট আয়ত্ত করেন এবং এমনকি পিতার জ্ঞানকেই ম্লান করে দেন এক সময়; আজকে থিওন মূলত তাঁর মেয়ের জন্যই আমাদের কাছে বেশি পরিচিত। মাত্র ঊনিশ বছর বয়সে হাইপেশিয়া টলেমির Almagest উপর লেখা তাঁর পিতার বিশ্লেষণধর্মী একটি গ্রন্থের সম্পাদনা করেন। Almagest হচ্ছে তেরো খণ্ডের সেই বিশাল গ্রন্থ যাতে টলেমি তাঁর সমসাময়িক যাবতীয় গণিত ও মহাকাশ জ্ঞান সংকলিত করেন এবং আরবীয় পণ্ডিতগন যার নামকরণ করেন Al-kitabul-mijisti বা মহান গ্রন্থ। একজন তরুণী হিসেবে সেই সময় তিনি এক অকল্পনীয় অভিযানে বেরিয়ে পড়েন—উচ্চতর শিক্ষার জন্য চলে যান এথেন্সে, দার্শনিক কনিষ্ঠ প্লুটার্ক ও তাঁর মেয়ে এসলেপিজেনিয়া পরিচালিত গ্রিসের নিও-প্লেটোনিক বিদ্যালয়ে। এখানেই গণিতবিদ হিসেবে হাইপেশিয়ার সুনাম প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে আনাতোলিয়ার উচ্চভূমি থেকে আইবেরীয় উপদ্বীপে, বসফোরাস থেকে সুদূর জীব্রাল্টার পর্যন্ত।
এথেন্স থেকে প্রত্যাবর্তনের পর হাইপেশিয়া আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত ও দর্শনের উপর শিক্ষাদানের আমন্ত্রণ পান। ৪০০ খ্রিষ্টাব্দে, আনুমানিক তিরিশ বছর বয়সে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। এটি ছিল এক অনন্য ঘটনা, যা আরো বেশী তাৎপর্যপূর্ণ এ কারণে যে আলেকজান্দ্রিয়াতে তখন ছিল খ্রিষ্টান শাসিত সরকার আর হাইপেশিয়া ছিলেন গ্রিসের প্রাচীন ধর্মের অনুসারী। হাইপেশিয়ার গৃহ ও শ্রেণীকক্ষ মুখরিত হত সেযুগের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতবর্গের পদচারণায়। তাঁকে মনে করা হত দৈবশাস্ত্রে পণ্ডিত, বলা হত আফ্রোদিতির দেহে প্লেটোর আত্মা। এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকা থেকে আগত জ্ঞানোৎসাহীরা তাঁর কাছে শুনতেন ডাইওফেন্টাসের Arithmetica সম্পর্কে, শিখতেন ডাইওফেন্টাসের উদ্ভাবিত পদ্ধতি, অনির্ণেয় সমীকরণের সমাধান এবং সংকেতের ব্যবহার। প্যাগান হওয়া সত্ত্বেও হাইপেশিয়া বহু খ্রিষ্টানের শ্রদ্ধা লাভ করেন এবং খ্রিষ্টীয় লেখকদের কাছে তিনি ছিলেন গুণের আকর। সমসাময়িক খ্রিস্টান ঐতিহাসিক সক্রেটিস স্কলাস্টিকাস তাঁর চার্চের ইতিহাস গ্রন্থে বর্ণনা করেন:
একদা আলেকজান্দ্রিয়াতে ছিল এক নারী—দার্শনিক থিওনের কন্যা হাইপেশিয়া, যিনি সাহিত্য ও বিজ্ঞানে এরূপ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন যা ছাড়িয়ে যায় তাঁর কালের সব দার্শনিকের জ্ঞান। প্লেটো এবং প্লুটোনিয়াসের উত্তরসূরী হিসেবে তিনি উন্মোচিত করতেন দর্শনের তত্ত্ব দূরদূরান্ত থেকে আগত তাঁর শ্রোতাদের সামনে। আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবহারের সাবলীলতায় প্রায়ই তিনি বের হতেন জনসমক্ষে, যা তিনি অর্জন করেছিলেন মনের উৎকর্ষে। এমনকি পুরুষের সমাবেশে তার অবস্থান ছিল না মোটেও ব্রীড়াবনত। কারণ অনন্য আত্মমর্যাদা এবং গুণের দরুণ তিনি ছিলেন সকল পুরুষের শ্রদ্ধার পাত্র।
হাইপেশিয়া গণিতের ওপর বেশ কয়েকটি অভিসন্দর্ভ রচনা করেন, দশম শতাব্দীর বৃহদাকার বাইজ্যান্টীয়-গ্রিক অভিধান সুদা-তে যার উল্লেখ পাওয়া যায়। এসব রচনার অধিকাংশ সম্ভবত আলেকজান্দ্রিয়ার টলেমি (ইনি আলেকজান্ডারের সেনাপতি, মিশরের টলেমি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা— গণিতবিদ টলেমি নন) গ্রন্থাগার কিংবা সেরাপিসের মন্দির ধ্বংস হওয়ার সাথে হারিয়ে যায়, এবং বর্তমানে তাদের কিছু খণ্ডাংশ পরিলক্ষিত হয় মাত্র। এদের মধ্যে ডাইওফেন্টাসের Arithmetica এর উপর লেখা হাইপেশিয়ার ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থটির টিকে থাকার সপক্ষে যথেষ্ট প্রমান পাওয়া যায় গবেষকদের মতে এটি ডাইওফেন্টাসের মূল গ্রন্থটিতেই একীভূত হয়ে আছে।
এছাড়া তাঁর আরও একটি মূল রচনা On the Astronomical Canon of Diophantus এর কিয়দংশ পঞ্চদশ শতকে ভ্যাটিকান গ্রন্থাগারে আবিষ্কৃত হয়, ১৪৫৩ সালে ধর্মসহিষ্ণু অটোমান (উসমানী) সুলতান দ্বিতীয় মুহম্মদের কনস্ট্যান্টিনোপল তথা বাইজ্যান্টাইন সাম্রাজ্য বিজয়ের পর এটি সম্ভবত সেখানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাইওফেন্টাসের গণিত মূলত একঘাত ও দ্বিঘাত সমীকরণ সংক্রান্ত সমস্যার উপর আলোকপাত করে যেখানে হাইপেশিয়া বেশ কিছু বিকল্প সমাধান এবং নতুন সমস্যাবলীর অবতারণা করেন।
এছাড়াও হাইপেশিয়া পার্গে'র বিখ্যাত গণিতবিদ এপোলোনিয়াসের কোণকসংক্রান্ত গ্রন্থের উপর রচনা করেন On the Conics of Apollonius, যার ফলে উপবৃত্ত, পরাবৃত্ত ও অধিবৃত্তের ধারণা সহজবোধ্য হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের কাছে আর গ্রন্থটি বেঁচে থাকে অনেক শতাব্দী, যদিও অন্ধকার যুগে চলে যাওয়ার পর ইউরোপীয়রা প্রাচীনতম এই বক্ররেখাগুলির ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু অষ্টম শতকেই আরবীয় গণিতবিদগন এদের অপার সৌন্দর্য আবিষ্কার করেন এবং তাঁরা মিলন ঘটিয়ে দেন বীজগাণিতিক সমীকরণ ও জ্যামিতির। পারস্যের কবি দার্শনিক গণিতবিদ ওমর খৈয়াম তৃতীয়মাত্রার সমীকরণ সমাধান করতে গিয়ে এদেরকে নিয়ে যান ধ্রুপদী উচ্চতায়—এটি ইয়োহান কেপলার কিংবা রেনে ডেকার্তের জন্মের প্রায় ছয়শো বছরের পূর্বের কথা।
হাইপেশিয়া সম্ভবত তাঁর পিতার সাথে যৌথভাবে ইউক্লিডের Elements গ্রন্থটির সম্পাদনা ও উন্নয়ন সাধন করেন। Elements এর এই সংস্করণটি আজও গণিতশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়।
ব্যবহারিক প্রযুক্তির উপর ছিল হাইপেশিয়ার মূল ঝোঁক। তাঁর ছাত্র বিশপ সাইনেসিয়াস, যিনি খ্রিষ্টানদের ত্রিত্ববাদ গঠনে সহায়তা করেন, হাইপেশিয়াকে Astrolabe আবিষ্কারের জন্য অভিনন্দন জানান।
Astrolabe ব্যবহৃত হত সূর্য ও নক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয়ে এবং রাশিচক্রের আরোহণকারী চিহ্ন হিসেব করতে। হাইপেশিয়া যন্ত্রটিকে এতই সূক্ষ্ম করেন যে এটি গোলীয় জোতির্বিদ্যার যথার্থ সমাধান দিত। এছাড়াও তিনি পরিস্রাবণ ও তরলতলের উচ্চতামাপক যন্ত্র উদ্ভাবন করেন এবং তরলের আপেক্ষিক গুরুত্ব নির্ণয়ের জন্য তৈরি করেন Hydroscope.
হাইপেশিয়ার সমসাময়িক পণ্ডিতগন প্রায় কাব্যময়ভাবে তাঁর কথা বলে গিয়েছেন। ধর্মতাত্ত্বিক ঐতিহাসিক সক্রেটিস, নিসেফোরাস এবং ফিলোস্তোরজিয়াস ভিন্ন মতবাদে বিশ্বাসী হলেও তাঁর প্রশংসা করেন উদারভাবে। তাঁর সুনাম ছিল ব্যাপক এবং অকৃত্রিম। হাইপেশিয়া কখনো বিয়ে করেননি; ধারণা করা হয়, এমন কাউকে তিনি পাননি যিনি তাঁর মনন ও দর্শনের সমকক্ষ হতে পারেন।
যেহেতু হাইপেশিয়া ছিলেন নিও-প্লেটোনিক মতবাদে বিশ্বাসী এবং মিশরের ক্রমশ ঘোলাটে হওয়া রাজনীতিতে তিনি প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন, খ্রিষ্টান ধর্মীয় রাজপুরুষেরা তাঁর ব্যাপারে শঙ্কা অনুভব করতে শুরু করলেন। তাঁরা হাইপেশিয়ার দর্শনকে মনে করতেন চার্চদ্রোহী এবং ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টিকারী, এবং ৪১২ খ্রিস্টাব্দে সিরিল যখন আলেকজান্দ্রিয়ার প্যাট্রিয়ার্ক নিযুক্ত হন, তখন তিনি পরিকল্পিতভাবে এসব চার্চদ্রোহীদেরকে দমন শুরু করেন। তিনি ইহুদিদেরকেও আলেকজান্দ্রিয়া থেকে বিতাড়ন শুরু করেন। আলেকজান্দ্রিয়ার তৎকালীন খ্রিষ্টীয় রোমান গভর্ণর ওরেস্টেসের সাথে বন্ধুত্ব এবং রাজনৈতিক জোট গঠন হাইপেশিয়ার জন্য ব্যাপারটি আরো জটিল করে তোলে। কারণ চার্চ ও রাষ্ট্রের সংঘাত দ্বন্দ্বমুখর করে তুলেছিল ওরেস্টেস এবং সিরিলের সম্পর্ক। হাইপেশিয়ার প্রভাবকে সিরিল মনে করতেন চার্চের জন্য বড় হুমকি। প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে সিরিল তাঁর অনুসারীদের ক্ষেপিয়ে তোলেন। এরই ফলশ্রুতিতে ৪১৫ খ্রীষ্টাব্দে লেন্টের পবিত্র মৌসুমে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার পথে নিত্রীয় সন্ন্যাসীদের হাতে আক্রান্ত হন হাইপেশিয়া। তারা তাঁকে নগ্ন করে হেঁচড়ে নিয়ে যায় চার্চ সিজারিয়ামে, ঝিনুকের খোল দিয়ে তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করে ফেলে এবং তা পুড়িয়ে দেয়। ইষ্টান অর্থডক্স এবং রোমান ক্যাথলিক চার্চ পরে পৃথকভাবে সিরিলকে 'সন্ত' উপাধিতে ভূষিত করে।
মর্মন্তদ এই ঘটনা ছিল গণিত ও বিজ্ঞানের উপর এক ভয়ংকর আঘাত। মার্গারেট ওয়ের্থহেইম তাঁর পীথাগোরাসের ট্রাউজার গ্রন্থে বলেন—"গ্রীক গণিতবিজ্ঞানের মহান যুগ, যার সুচনা এক পুরুষের জন্মের মধ্য দিয়ে, তা সমাপ্ত হয় এক নারীর মৃত্যুতে।"
এবং সম্ভবত পরবর্তী ১৪০০ বছরে পৃথিবী বিজ্ঞান সাধনায় ব্রতী এমন বর্ণিল নারী আর পাবে না… যতক্ষণ না পর্যন্ত পোল্যান্ডের এক শিক্ষক দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক মেয়ে; মেরি কুরি তাঁর নাম।
পরিশিষ্টঃ হাইপেশিয়ার মৃত্যুর মাত্র ষাট বছরের মধ্যে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। ইউরোপে শুরু হয় অন্ধকারযুগ আর সেখানে ভীড় জমাতে থাকে দৈত্যদানো, রাক্ষস-খোক্ষস, ভুতপ্রেত, ভ্যাম্পায়ার আর ডাইনিদের দল। কিন্তু গণিত ও প্রকৃতি জ্ঞানের মুক্ত সমীরণ বইতে থাকে আরবের রুক্ষ্ম মরুময় উপদ্বীপে এবং তা ছড়িয়ে পড়ে মেসোপটেমিয়া, পারস্য, আনাতোলিয়া, আফ্রিকার উপকূল, আন্দালুসিয়া, মধ্যএশিয়া, ভারত মহাসাগর, ভলগা ধরে দূরদূরান্তে..
থেকে)