লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
{নবী মুহাম্মদ চরিত্রের অন্ধকার দিক হচ্ছে, তিনি সমালোচনা মেনে নিতে পারতেন না; মক্কার কুরাইশগন যখন তাকে পাগল/কবি/পুরাণ-কথক/গণক/জাদুকর বলে সমালোচনা করতে থাকলো; একই সাথে মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, শেষ-বিচার/দোযখ/বেহেস্ত আর আল্লাহর একত্বের ধারণাকে উপহাস করেতে থাকলো; মুহাম্মদ এবং তার অবচেতনের আল্লাহ-জ্রিবাইলও ক্রমশ ক্ষেপে উঠলো; শুরু হলো কুরাইশদের সমালোচনা, উপহাস, শাস্তি প্রদানের আয়াত প্রকাশ; আর নবাগত মুসলিমদের উৎসাহিত করার জন্য মদ/নারী/দাসীর লোভ তো থাকছেই; একটু সচেতনভাবে আজকের পর্বের ৬ টি প্রকাশ পড়লে বুঝতে বাকি থাকে না, কীভাবে মুহাম্মদের আল্লাহ আর জ্রিবাইল মহাবিশ্বের অসীম চিন্তা বাদ দিয়ে মক্কার গুটিকয়েক (১৫০০-২০০০) মানুষের কথায় পুতুল নাচের বাঘের মত ক্ষেপে উঠতো!
একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, মুহাম্মদ যখন মানসিকভাবে বেশি চাপে থাকতেন, তখন সূরায় আয়াতের সংখ্যা লম্বা হয়ে যেত; আর ক্রমশ ভয় ও লোভ প্রদর্শনের মাত্রা বাড়ত! আমি একটি হিসাব করে দেখেছি, তিন-চার মাস পর পর মুহাম্মদ হঠাৎ হঠাৎ ক্ষেপে উঠতেন, এবং মনের সকল রাগ-ক্ষোভ লম্বা সূরায় প্রকাশ করতেন! আগামী পর্বে তার নমুনা আবার দেখা যাবে!
এই পর্বের ৬ টি প্রকাশে একটি বিষয় হয়ত পাঠকের চোখে পড়বে - মুহাম্মদ তার নারী সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গির সমসাময়িক অবস্থার কিছুটা প্রকাশ করেছেন; আজ এটুকুই থাক, আরবের নারী নিয়ে আগামী পর্বে আরও জেনে নেওয়া যাবে! চলুন, আপনাকে আজ মক্কার পতিতালয় থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি!
মক্কা, সহজ কথায় একাধিক দেশের বাণিজ্য-যাত্রার মধ্যপথের সরাইখানা, বেদুঈন আর আরব গোত্রের বিনোদন আর মূর্তিপূজার কেন্দ্র। মোটামুটি ৪ ধরনের পতিতালয় ছিল মক্কায়, (ক) বাড়ির সামনে সাদা পতাকা ওড়ানো গণ-পতিতালয়, (খ) স্বাধীন নারী নিজ বাসায় শরীর বিক্রি করতেন, (গ) কোনো কোনো কুরাইশ তাদের দাসীদের দিয়ে বছরের নির্দিষ্ট সময় পতিতাবৃত্তি করাতেন, (ঘ) সামান্য কিছু কুরাইশ তার একাধিক স্ত্রী কতৃক দেহব্যবসা করাতেন!
বিস্তারিত ক্রমশ প্রকাশ্য। শুধু একটা প্রশ্ন রেখে যাই, যেহেতু হিজাজের (মক্কা, মদিনা, তায়েফ) কোনো সরকার ব্যবস্থা ছিলো না, তবে তাদের কোনো মুদ্রা থাকারও কথা নয়; তাহলে হিজাজের জনগণ, ইথিওপিয়া, ইয়েমেন, তায়েফ, মক্কা, ইয়াসরিব, সিরিয়া, মিশর এবং ইরানে কেনাকাটা করতো কী দিয়ে? আর মক্কার পতিতালয়ে শরীর ক্রয়-বিক্রয় হত কি ঘোড়ার ডিম দিয়ে! ভাবতে থাকুন, উত্তর পেলে জানাতে পারেন; না পেলে অপেক্ষা করতে থাকুন।
কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ১৩ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে
মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছরের ৬ষ্ঠ ছয় অংশ।
অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৫৪ তম প্রকাশ; সূরা আল ইনফিতার (৮২) (বিদীর্ণ করা) ৬ থেকে ১৯ আয়াত:
৬. হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল?
৭. যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন এবং অতঃপর সুবিন্যস্ত করেছেন,
৮. যিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামত আকৃতিতে গঠন করেছেন।
৯. না, কখনই না, তোমরা তো শেষ বিচারকে অস্বীকার করে থাকো;
১০. অবশ্যই তোমাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে।
১১. সম্মানিত লেখকগণ (যারা লিপিবদ্ধ করছে তোমাদের কার্যকলাপ),
১২. তারা জানে তোমরা যা-কিছু কর।
১৩. সৎকর্মশীলগণ থাকবে জান্নাতে।
১৪. এবং দুষ্কর্মকারীরা থাকবে জাহান্নামে;
১৫. তারা এতে প্রবেশ করবে বিচারের দিনে
১৬. আর তারা সেখান থেকে অনুপস্থিত থাকতে পারবে না।
১৭. তুমি জানো, বিচার দিবস কী?
১৮. আবার বলি: কর্মফল দিন কি তা কি তুমি অবগত আছ?
১৯. সেদিন কোনো মানুষ অন্য মানুষের জন্য কোনোকিছুর ক্ষমতা রাখবে না। আর সেদিন সকল বিষয় হবে আল্লাহর কর্তৃত্বে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৫৫ তম প্রকাশ; সূরা আল হাক্কাহ (৬৯) (নিশ্চিত সত্য) ৩৮ থেকে ৫২ আয়াত:
৩৮. আমি কসম করছি সে সব জিনিসের, যা তোমরা দেখতে পাও,
৩৯. এবং যা তোমরা দেখতে পাও না
৪০. নিশ্চয়ই এই কুরআন এক সম্মানিত রাসূলের বাহিত বার্তা।
৪১. এটা কোনো কবির রচনা নয়; তোমরা অল্পই বিশ্বাস কর।
৪২. এটা কোনো গণকের কথাও নয়, তোমরা কমই অনুধাবন কর।
৪৩. এটা বিশ্বজগতের প্রতিপালকের নিকট থেকে অবতীর্ণ,
৪৪. সে যদি আমার নামে কিছু রচনা করে চালাতে চেষ্টা করত
৪৫. আমি অবশ্যই তার ডান হাত ধরে ফেলতাম।
৪৬. তারপর নিশ্চয়ই তার কন্ঠশিরা কেটে ফেলতাম,
৪৭. অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউই তাকে রক্ষা করার থাকত না।
৪৮. এটা খোদাভীরুদের জন্যে অবশ্যই একটি উপদেশ।
৪৯. আমি অবশ্যই জানি যে, তোমাদের মধ্যে মিথ্যা আরোপকারী রয়েছে।
৫০. আর এটি নিশ্চয় কাফিরদের জন্য এক নিশ্চিত অনুশোচনার কারণ।
৫১. নিশ্চয় এটা নিশ্চিত সত্য।
৫২. অতএব, আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৫৬ তম প্রকাশ; সূরা আল মাআরিজ (৭০) (উন্নয়নের সোপান), ১৯ থেকে ৩৫ আয়াত:
১৯. মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে খুবই অস্থিরমনা করে,
২০. যখন তাকে বিপদ স্পর্শ করে, তখন সে হয়ে পড়ে অতিমাত্রায় উৎকন্ঠিত।
২১. আর যখন কল্যাণ তাকে স্পর্শ করে, তখন সে হয় অতি কৃপণ।
২২. তবে তারা স্বতন্ত্র, যারা নামায আদায়কারী।
২৩. যারা তাদের নামাযে সার্বক্ষণিক কায়েম থাকে।
২৪. আর যাদের সম্পদের নির্ধারিত হক রয়েছে
২৫. প্রার্থী ও বঞ্চিতের।
২৬. এবং যারা কর্মফল দিনকে সত্য বলে জানে।
২৭. আর যারা তাদের রবের শাস্তি সম্পর্কে ভীত সন্ত্রস্ত,
২৮. নিশ্চয় তাদের পালনকর্তার শাস্তি থেকে নিঃশঙ্ক থাকা যায় না।
২৯. এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।
৩০. তাদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্র ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না
৩১. অতএব, যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে, তারাই সীমালংঘনকারী।
৩২. এবং যারা আমানাত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।
৩৩. আর যারা তাদের সাক্ষ্যদানে অটল,
৩৪. এবং যারা তাদের নামাযে যত্নবান,
৩৫. তারাই জান্নাতে সম্মানিত হবে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৫৭ তম প্রকাশ; সূরা আদ-দোখান (৪৪) (ধোঁয়া), ৪৩ থেকে ৫৯ আয়াত:
৪৩. নিশ্চয়ই যাক্কুম বৃক্ষ হবে
৪৪. পাপীর খাদ্য।
৪৫. গলিত তামার মত পেটে ফুটতে থাকবে।
৪৬. যেমন ফোটে পানি।
৪৭. একে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে,
৪৮. অতঃপর তার মাথার ওপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দিয়ে শাস্তি দাও।
৪৯. এবং বলা হবে: আস্বাদন কর, তুমিতো ছিলে সম্মানিত, অভিজাত।
৫০. এটা তো ওটাই, যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ করতে।
৫১. নিশ্চয় খোদাভীরুরা নিরাপদ স্থানে থাকবে
৫২. বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারার মধ্যে,
৫৩. তারা পরিধান করবে মিহি ও পুরু রেশমী বস্ত্র এবং তারা মুখোমুখী হয়ে বসবে।
৫৪. এরূপই ঘটবে; তাদেরকে সঙ্গিনী দেব আয়তলোচনা হুর।
৫৫. তারা সেখানে শান্ত মনে বিভিন্ন ফল-মূল আনতে বলবে।
৫৬. প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না। তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করবেন
৫৭. তোমার রাব্ব নিজ অনুগ্রহে। এটাই তো মহা সাফল্য।
৫৮. আমি তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।
৫৯. অতএব তুমি অপেক্ষা কর, তারাও অপেক্ষাকারী।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৫৮ তম প্রকাশ; সূরা আল মু'মিনূন (২৩) (মুমিনগণ), ১ থেকে ১১ আয়াত:
১. অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ
২. যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র;
৩. আর যারা অনর্থক কথাকর্ম থেকে বিমুখ।
৪. আর যারা যাকাতের ক্ষেত্রে সক্রিয়।
৫. এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।
৬. তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না।
৭. সুতরাং কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমালংঘনকারী,
৮. এবং যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে
৯. আর যারা নিজেদের নামাযের ব্যাপারে যত্নবান।
১০. তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে।
১১. তারা শীতল ছায়াময় উদ্যানের উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা তাতে চিরকাল থাকবে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৫৯ তম প্রকাশ; সূরা ছোয়াদ (৩৮) (আরবি বর্ণ), ৬৭ থেকে ৮৮ আয়াত:
৬৭. বল: এটা এক মহা সংবাদ
৬৮. যা হতে তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ।
৬৯. ঊর্ধ্ব জগৎ সম্পর্কে আমার কোনো জ্ঞান ছিল না, যখন ফেরেশতারা কথাবার্তা বলছিল।
৭০. আমার নিকট তো এই অহী এসেছে যে, আমি একজন স্পষ্ট সতর্ককারী।
৭১. স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন - আমি কাদা থেকে মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি।
৭২. যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার সম্মুখে সেজদায় নত হয়ে যেয়ো।
৭৩. ফলে ফেরেশতাগণ সকলেই সিজদাবনত হল।
৭৪. কিন্তু ইবলিস; সে অহংকার করল এবং অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
৭৫. আল্লাহ বললেন, ‘হে ইবলিস, আমার দু'হাতে আমি যাকে সৃষ্টি করেছি, তার প্রতি সিজদাবনত হতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? তুমি কি অহঙ্কার করলে, না তুমি অধিকতর উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন?
৭৬. সে বলল: আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে।
৭৭. তিনি বললেন, ‘তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। কেননা নিশ্চয় তুমি বিতাড়িত।
৭৮. তোর প্রতি আমার এ অভিশাপ বিচার দিবস পর্যন্ত স্থায়ী হবে।
৭৯. সে বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দিন, যেদিন তারা পুনরুত্থিত হবে।’
৮০. তিনি বললেন - তোমাকে সময় দেয়া হল,
৮১. অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।
৮২. সে বলল: আপনার ক্ষমতার শপথ! আমি তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করব।
৮৩. তবে তাদের মধ্যে যারা আপনার খাঁটি বান্দা, তাদেরকে ছাড়া।
৮৪. তিনি বললেন: তবে এটাই সত্য, আর আমি সত্যই বলি
৮৫. তোর দ্বারা ও তোর অনুসারীদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই।
৮৬. বল: আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না এবং যারা মিথ্যা দাবি করে, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই।
৮৭. এটা তো বিশ্ববাসীর জন্যে এক উপদেশ মাত্র।
৮৮. এর সংবাদ তোমরা অবশ্যই জানবে, কিছুকাল পরে।
আয়াত প্রকাশের মনোজগত: আমরা মুহাম্মদের নারী সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গির আলোচনা শুরু করেছি, হয়ত আগামী দুই পর্বে এই বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমরাও বিষয় পরিবর্তন করবো না, যতক্ষণ নবী মুহাম্মদের নারী বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হয়; আমরা খুঁজে দেখবো, সত্যিই কি আরবে কোনো নারী স্বাধীনতা ছিল না? কেমন ছিল মক্কা, মদিনা, তাইফ এবং বেদুঈন নারীরা? আর সত্যিই কি জীবন্ত কন্যাসন্তান কবর দেবার প্রথা ছিল তৎকালীন মক্কায়? শুধু এতটুকু বলে শেষ করি আজ: এ বিষয়ে আপনার সকল জ্ঞান ধাক্কা খেতে বাধ্য; যেমন করে মুহাম্মদের নারী দৃষ্টিভঙ্গি চরম ধাক্কা খাবে দ্রুতই!
(চলবে)