আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শুক্রবার, ২০ মার্চ, ২০১৫

বর্ণাশ্রম প্রথা - হিন্দুধর্মের কুৎসিত একটি দিক

লিখেছেন অনির্বাণ অনিক

ইদানীং একটা কথা খুব চাউর হয়েছে, বর্ণাশ্রম প্রথা হিন্দুধর্মে নাকি স্বীকৃত নয়। হিন্দুধর্ম নাকি একটি মিষ্টি মিষ্টি গুল্লু গুল্লু পুচু পুচু ধর্ম। সপক্ষে যুক্তিদাতারা বেদে বর্ণাশ্রমপ্রথার অনুল্লেখকে প্রমাণ হিসেবে দাখিল করছেন। বেদের পুরুষ সুক্ত যদিও আমাদের ভিন্ন ইঙ্গিত দেয়, তবু পরবর্তী বৈদিক যুগে সৃষ্টি হওয়ার কারণে পুরুষ সুক্তকে ফন্দিবাজ কোনো হিন্দু উচ্চবর্ণের দ্বারা প্রক্ষিপ্ত ধরে নিয়ে নাহয় আলোচনার বাইরেই রাখলাম। কিন্তু শুধু বেদের ওপর ভরসা করে হিন্দুধর্মকে বর্ণাশ্রম প্রথার দায় থেকে ক্লীন চিট দেয়া কতটা সম্ভব? আসলে এই তত্ত্বগুলি প্রচারকারী ব্যক্তিবর্গের পক্ষে একটি সুবিধাজনক বিষয় হলো - হিন্দুধর্মের ঐতিহাসিক উৎপত্তিজনিত কারণে একটি সুপার ফ্লেক্সিবল জমি। ধর্ম সম্পর্কে সঠিক বিচারকারী কোনো মুক্তমনা বিচার করতে বসলে ঐ হিন্দুধর্মটা বৈদিক ধর্ম, না হিন্দুধর্ম না সনাতন ধর্ম, তা নিয়ে রীতিমত ধন্দে পড়ে যেতে বাধ্য হবে ।

সুতরাং হিন্দুধর্মের যে কোনো সমালোচনার ক্ষেত্রেই শুধু বেদের ওপর ভিত্তি করে যুক্তি সাজালে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য: বর্তমান হিন্দুধর্মের সাথে বেদের কতটা মিল আছে? শিব, দূর্গা কালী ইত্যাদি এদের অধিকাংশই শংকর প্রজাতির দেবতা। কিছুটা দেশী, কিছুটা বৈদিক পুরান-সব ঘেঁটে ঘ হয়ে এই সব দেবদেবীরা বিবর্তিত। আমি কোন ধর্মটাকে হিন্দুধর্ম ধরবো? বেদ রচয়িতারা নিজেরাও কিন্তু "হিন্দুধর্ম" নামক কোনো ধর্মের অস্তিত্ব জানতেন না। অনেকে এই সমস্যার সমাধানে "সনাতন ধর্ম" নামক একটি আজগুবি ধর্মকে খাড়া করেন। কিন্তু "সনাতন" শব্দটি গীতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে বিশেষণ হিসেবেই ব্যবহৃত, বিশেষ্য হিসাবে নয়। তাহলে হিন্দুধর্ম মাানে আপনাদের বেদে উল্লিখিত নাম-না-জানা ধর্ম, নাকি আজ আপনারা যে হিন্দুধর্মটিকে সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দিয়েছেন, সেই রূপটি হিন্দুধর্ম? হিন্দুধর্মের দ্বারা স্বীকৃত গ্রন্থ হিসেবে কেন ধরবো না সেই ধর্মগ্রন্থগুলিকেও, যেগুলির নির্দেশ হিন্দুধর্মের বর্তমান সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চেহারায় প্রতিফলিত হয়?

উদাহরণস্বরূপ একটি গ্রন্থ মনুস্মৃতি। মনুস্মৃতিকে বর্তমান হিন্দুরা হিন্দু ধর্মগ্রন্থ হিসেবে মান্যতা দিতে চান না। মান্যতা না দেওয়ার বিষয়টি একদিক দিয়ে প্রশংসাযোগ্য, কারণ ১. এর দ্বারা প্রমাণ হয়, হিন্দুদের মধ্যে ঊনবিংশ শতকের সংস্কার আন্দোলনগুলির ফলে ধর্মবদ্ধ সমাজে কিছুটা হলেও ফাটল ধরানো গেছে। ২.স্বাধীনতার পরে সংবিধান রচনাকালে আম্বেদকর প্রমুখ ব্যক্তিত্বগণ সংধু-সন্তদের ও হিন্দুত্ববাদীদের তুমুল বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েও হিন্দু কোড বিল থেকে শুরু করে অন্যান্য সাহসী পদক্ষেপগুলি নিয়েছিলেন, তার কিছুটা হলেও ফল ফলেছে। ৩. প্রাচীন ভারতবর্ষের ধর্মীয় "সংহিতার" দ্বারা সমাজকে ধর্মবদ্ধ করার প্রয়াসকে বাদ দিলে, দর্শনগত স্তরে একটা পর্যায় পর্যন্ত প্রথার বিপরীতে যাওয়ার ফ্লেক্সিবিলিটি ছিল, যা হিন্দু সমাজকে বর্তমান যুগেও প্রথা ভাঙ্গতে সামান্য হলেও শক্তি যুগিয়েছে।

এ সকল কারণে বর্তমানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আগত নাস্তিক বা ধর্ম বিষয়ে বিশেষ মাথা-না-ঘামানো অনেক ব্যক্তিই আছেন, যাদের জীবনচর্যায় এই ঘৃণিত প্রথাটি প্রতিফলিত হয় না। কিছু উদাহরণও নিজের চোখে দেখা, যেখানে উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণের মধ্যে বিবাহ সাধিত হয়েছে। কিন্তু সেটাও তো বর্তমান হিন্দুধর্মের গুণ নয়, পূর্বে বর্ণিত ঐতিহাসিক ফ্যাক্টরগুলির ফলশ্রুতি।

এবার এর বিপরীতে দেখুন, বর্তমানেও অধিকাংশ হিন্দু বিবাহ, পূজানুষ্ঠান ইত্যাদি বিষয়ে মনুস্মৃতির বর্ণাশ্রমের নির্দেশের বাইরে বেরোন না। বেশি দূর যেতে হবে না। আনন্দবাজারের ম্যাট্রিমোনিয়ালটা পড়লেই দেখা যায়। গুচ্ছের জাত-বর্ণ-গোত্র বিচারে ভরপুর থাকে। অর্থাৎ তাদের অনেকেরই অন্তরে মনুস্মৃতির প্রক্ষেপ আজো রয়ে গেছে। তাহলে আজকের হিন্দুধর্মের প্রসঙ্গ এলে মনুস্মৃতিকে বাদ দেবো কী করে? গীতাতেও একটি শ্লোকে নারী, বৈশ্য ও শূদ্রদের অধম করেই দেখানো হয়েছে। আবার ভারতের বিভিন্ন প্রত্যন্ত স্থানে দলিতদের ওপর বিক্ষিপ্ত অত্যাচারেও কি দেখা যায় না বর্ণাশ্রম প্রথার প্রতিফলন? সর্বোপরি একটা উদাহরণ বর্তমান যুগেও কি দেখাতে পারবেন, যেখানে একজন নিম্নবর্ণ উচ্চবর্ণ হয়েছে বা একজন উচ্চবর্ণ নিম্নবর্ণ? তাহলে হিন্দু ধর্মের বর্তমান প্রাতিষ্ঠানিক রূপ বাস্তবে পর্যবেক্ষণ করলে এই ধর্মগ্রন্থগুলির নির্দেশেরই প্রয়োগ দেখা যায় না কি? বেদের নির্দেশের প্রতিফলন দেখা যায় কি? তাহলে শুধুই বেদের ওপর ভরসা করে হিন্দুধর্মের কোনো বিষয়ের আলোচনা করি কী করে ?

সত্য বলতে কি, বর্ণাশ্রম হিন্দু ধর্মের অন্তর্ভুক্ত নয় সেদিনই মানা সম্ভব, যেদিন 
১. ম্যাট্রিমোনিয়ালে জাত-পাত-গোত্র বিচার বন্ধ হবে।
২. প্রত্যন্ত স্থানগুলিতে দলিতদের ওপর বিক্ষিপ্ত অত্যাচার বন্ধ হবে।
৩. উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণ কোনো প্রকারে ভিন্ন করার কোন উপায় থাকবে না।

তার পূর্বে বর্তমানে যে-ধর্মটি হিন্দুধর্মরূপে প্রচলিত, তার এই অন্যতম অন্ধকারাচ্ছন্ন দিকটিকে কোনোমতেই উপেক্ষা করে ধর্মটিকে এ বিষয়ে গুল্লু গুল্লু পুচুমণি স্বীকার করা সম্ভব নয়। এই ধর্মের বর্ণাশ্রম প্রথায় স্বীকৃতি দানকারী ধর্মগ্রন্থগুলিকেও এই ধর্মের বহির্ভুত স্বীকার করা সম্ভব নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন