আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৫

বানু কুরাইজার গণহত্যা– ২: কী ছিল মুহাম্মদের অভিপ্রায়?: কুরানে বিগ্যান (পর্ব- ৮৮) ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – বাষট্টি

লিখেছেন গোলাপ

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯ পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭ > পর্ব ৪৮ > পর্ব ৪৯ > পর্ব ৫০ > পর্ব ৫১ > পর্ব ৫২ > পর্ব ৫৩ > পর্ব ৫৪ > পর্ব ৫৫ > পর্ব ৫৬ > পর্ব ৫৭ > পর্ব ৫৮ > পর্ব ৫৯ > পর্ব ৬০ > পর্ব ৬১ > পর্ব ৬২ > পর্ব ৬৩ > পর্ব ৬৪ > পর্ব ৬৫ > পর্ব ৬৬ > পর্ব ৬৭ > পর্ব ৬৮ > পর্ব ৬৯ > পর্ব ৭০ > পর্ব ৭১ > পর্ব ৭২ > পর্ব ৭৩ > পর্ব ৭৪ > পর্ব ৭৫ > পর্ব ৭৬ > পর্ব ৭৭ > পর্ব ৭৮ > পর্ব ৭৯ > পর্ব ৮০ > পর্ব ৮১ > পর্ব ৮২ > পর্ব ৮৩ > পর্ব ৮৪ > পর্ব ৮৫ > পর্ব ৮৬ > পর্ব ৮৭

খন্দক যুদ্ধ শেষ হওয়ার অব্যবহিত পরেই স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) "জিবরাইলের নির্দেশে" তাঁর তিন হাজার সশস্ত্র অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে কীরূপ দ্রুততায় বনি কুরাইজার গোত্রের পর হামলা চালিয়েছিলেন, ভীত সন্ত্রস্ত বনি কুরাইজার লোকেরা প্রাণরক্ষার তাগিদে তাঁদের দুর্গ মধ্যে আশ্রয় নিলে তাঁদেরকে চারিদিক থেকে ঘেরাও করে রাখার মাধ্যমে কীভাবে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা  বনি কুরাইজার লোকদের "অন্তরে ত্রাসের সঞ্চার করেছিলেন” (মুহাম্মদের দাবি, তা ছিল 'আল্লাহর' কাজ!), ঘেরাওকৃত অবস্থায় মুহাম্মদ তাঁর এক বিশিষ্ট অনুসারীকে কীভাবে বনি কুরাইজা গোত্রের লোকদের “কবিতার মাধ্যমে গালাগালি করার নির্দেশ” দিয়েছিলেন - ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে। তাঁদের এই সন্ত্রাস, ঘেরাও ও গালাগাল চলে দিনের পর দিন!

এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বনি কুরাইজা গোত্রের লোকদের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল? 

বনি কুরাইজা গোত্রের লোকেরা প্রত্যক্ষ করেছেন, গত পাঁচটি বছরের (৬২২-৬২৭ সাল) মুহাম্মদের মদিনা জীবনে মুহাম্মদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা কী অজুহাতে অমানুষিক নৃশংসতায় খুন করেছেন১২০ বছর বয়সী অতিবৃদ্ধ কবি আবু আফাক-কে, সন্তানকে স্তন্যপান অবস্থায় পাঁচ সন্তানের জননী কবি আসমা-বিনতে মারওয়ান-কে, কাব বিন আল-আশরাফ-কে, অতি সাধারণ এক ইহুদি ব্যবসায়ী আবু আবু রাফি-কে! (পর্ব: ৪৬-৫০)।   

তাঁরা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছেন, মাত্র বছর তিনেক আগে বনি কেইনুকা গোত্র ও বছর দেড়েক আগে বনি নাদির গোত্রের সমস্ত মানুষকে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা কীভাবে তাঁদের শত শত বছরের ভিটে-মাটি থেকে প্রায় এক বস্ত্রে জোরপূর্বক বিতাড়িত করে তাঁদের সমস্ত সম্পত্তি করেছেন লুণ্ঠন ও ভাগাভাগি! (পর্ব: ৫১-৫২ ও ৭৫)। 

তাঁরা জানেন, বনি কেউনুকা ও বনি নাদির গোত্রের “সমস্ত মানুষকে মুহাম্মদ হত্যা করতে চেয়েছিলেন", তাঁদের জীবন রক্ষা পেয়েছে অসীম সাহসী আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সালুল ও তাঁর অনুসারীদের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে।

এত কিছুর পরেও কি তাঁরা ধারণা করতে পারেননি যে, তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে?
মা-বাবা, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, ভাই-ভগ্নী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজনদের নিয়ে দিনের পর দিন দুর্গ-মধ্যে অবরুদ্ধ বিভীষিকাময় জীবন অতিবাহ-কালে মৃত্যুভয়ে প্রকম্পিত বনি কুরাইজা গোত্রের লোকেরা কী ভাবছেন?

মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনার পুনরারম্ভ: [1] [2]

পূর্ব প্রকাশিতের (পর্ব: ৮৭) পর:

‘কুরাইশ ও ঘাতাফান গোত্রের লোকেরা যখন বনি কুরাইজা গোত্রের লোকদের রেখে প্রস্থান করে, কাব বিন আসাদের কাছে দেয়া প্রতিজ্ঞা রক্ষার নিমিত্তে হুয়েই বিন আখতাব বনি কুরাইজার লোকদের সঙ্গে তাদের দুর্গের ভেতরে অবস্থান নেয়। [পর্ব: ৮০]। যখন তারা নিশ্চিতরূপে অনুভব করে যে, আল্লাহর নবী তাদেরকে শেষ না করে ফিরে যাবে না, তখনকাব বিন আসাদ তার লোকদের বলে:

"হে ইহুদিরা, তোমাদের পরিস্থিতি যে কী,তা তোমরা দেখতেই পাচ্ছ; আমি তোমাদের তিনটি বিকল্প প্রস্তাব পেশ করবো। যেটি ভাল বলে মনে কর, সেটাই করো।

১) আমরা এই লোকটিকে সত্য নবী বলে মেনে নিয়ে তার অনুসরণ করবো, কারণ আল্লাহর ইচ্ছায় তোমাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনিই হলেন সেই নবী, যিনি প্রেরিত হয়েছেন, ও তিনিই হলেন সেই ব্যক্তি, যার বিষয় তোমাদের শাস্ত্রে উল্লেখ আছে; তাহলেই তোমাদের জীবন, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানরা রক্ষা পাবে।"

তারা বলে, "আমরা তৌরাতের আইন কখনোই বর্জন করবো না ও অন্য কিছুর বিনিময়ে কখনোই তা পরিবর্তন করবো না।"

তিনি বলেন, "যদি তোমরা এই প্রস্তাবে রাজী না হতে পারো, তবে
২) এসো, আমরা আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যা করি, যাতে আমাদের কোন পিছুটান না থাকে, তারপর আমরা পুরুষরা উন্মুক্ত তরবারি হাতে মুহাম্মদ ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ পর্যন্ত লড়াই করি, যতক্ষণে না আল্লাহ আমাদের ও মুহাম্মদের মধ্যে ফয়সালা করেন। যদি আমরা ধ্বংস হই, তাই হবো ও আমরা কোনো সন্তান রাখবো না, যেন তারা আমাদের জন্য কোনো দুশ্চিন্তার কারণ হয়। যদি আমরা জয়ী হই তবে আমরা অন্য স্ত্রী ও সন্তান অর্জন করতে পারবো।"

তারা বলে, "এই হতভাগ্য বেচারাদের কি আমাদের হত্যা করা উচিত? তারা যদি মরেই যায়, তবে জীবনে বেঁচে থেকে আর কী লাভ?"

তিনি বলেন, "যদি তোমরা এই প্রস্তাবে রাজী না হতে পারো, তবে
৩) আজকের রাত্রিটি হলো সাবাহ-র পূর্বরাত্রি, আশা করা যায় যে, সে কারণে মুহাম্মদ ও তার অনুসারীরা এই উপলব্ধি করবে যে, তারা আমাদের কাছ থেকে নিরাপদ। সুতরাং নেমে এসো নিচে, সম্ভবত, আমরা মুহাম্মদ ও তার অনুসারীদের অতর্কিত আক্রমণের মাধ্যমে পরাস্ত করতে পারবো।"
 
তারা বলে, "আমাদেরকে কি সাবাহ দিনটি অপবিত্র করতে হবে, যেমনটি করার কারণে আমাদের পূর্বপুরুষরা বানরে রূপান্তরিত হয়েছিল?"

তিনি জবাবে বলেন, "তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নে, যে জন্মের পর থেকে কখনো এইরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে তার সমাধান করেছে, যার মাধ্যমে সে জানে যে, এমন পরিস্থিতিতে তার কী করা উচিত"

তারপর তারা আল্লাহর নবীর কাছে খবর পাঠায় এই বলে, "বনি আমর বিন আউফ গোত্রের (কারণ তারা ছিল আল-‌আউস গোত্রের মিত্র) আবু লুবাবা বিন আবদুল মুনধির-কে আমাদের কাছে পাঠান, যেন তার সাথে আমরা পরামর্শ করতে পারি।" [3]

তাই আল্লাহর নবী তাকে তাদের কাছে পাঠান। যখন তারা তাকে দেখে, তখন তারা এসে তার সাথে সাক্ষা করে। মহিলা ও শিশুরা তার সম্মুখে এসে কান্না শুরু করে। তিনি তাদের জন্যে হন দুঃখিত।

তারা বলে, "এই আবু লুবাবা, তোমার কি মনে হয় যে, মুহাম্মদের সিদ্ধান্তের কাছে আমাদের আত্মসমর্পণ করা উচিত?"

তিনি বলেন, "হ্যাঁ"; তারপর তার গলার দিকে তার হাতের অঙ্গুলি নির্দেশ করেন, যার মানে হলো ব্যাপক হত্যা (slaughter)।

আবু লুবাবা বলেন, "আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ব্যাপারে তাদেরকে মিথ্যা বলেছি, তা বুঝতে পেরে আমার পা সেখান থেকে সরছিল না।"

তারপর তিনি তাদেরকে ছেড়ে চলে আসেন ও আল্লাহর নবী কাছে প্রত্যাবর্তন না করে মসজিদের একটি থামের সাথে নিজেকে বেঁধে রাখে ও বলে, "আমি যা করেছি তার জন্য আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়ার পূর্বে আমি এই স্থানটি ছেড়ে যাব না," তিনি আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞা করেন যে,তিনি আর কখনো বনি কুরাইজা গোত্রের নিকট যাবেন না ও যে-শহরে তিনি আল্লাহ ও তার নবীর ব্যাপারে মিথ্যা বলেছেন,সেখানে আর কখনো দেখা দেবেন না। [4]

আল্লাহর নবী তার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষায় ছিলেন; তার এই ব্যাপারটি যখন তিনি শুনতে পান, তখন বলেন, "যদি সে আমার কাছে আসতো তবে আমি হয়তো তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতাম, কিন্তু যে-ব্যবহারটি এখন সে করেছে, তা দেখার পর আমি তাকে তার ঐ স্থানটি ছেড়ে চলে যেতে দেব না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে।"

ইয়াযিদ বিন আবদুল্লাহ বিন কুসায়েত আমাকে বলেছেন, আল্লাহর নবীর কাছে আবু লুবাবার ক্ষমাপ্রাপ্তির খবরটি আসে ভোর বেলায় (প্রত্যূষে), তখন তিনি উম্মে সালামার গৃহে অবস্থান করছিলেন। [5] [6]

উম্মে সালামা বলে, "ভোর বেলায় যখন আমি শুনতে পাই, আল্লাহর নবী হাসছেন, আমি তাঁকে বলি, 'আপনি হাসছেন কেন? আল্লাহ যেন আপনাকে হাসি-খুশি রাখে!"

তিনি জবাবে বলেন, "আবু লুবাবাকে ক্ষমা করা হয়েছে।"

উম্মে সালামা বলে, "আমি কিপারি না এই সুখবরটি তাকে জানাতে?"

যখন তিনি বলেন যে, সে তা করতে পারে; তখন সে উঠে গিয়ে তার ঘরের দরজায় সামনে দাঁড়ায় (আল্লাহর নবীর বাসাটি ছিল মসজিদ সংলগ্ন, যেখানে আবু লুবাবা নিজেকে বেঁধে রেখেছিল) (এই ঘটনাটি ঘটেছিল মহিলাদের পর্দার বিধান জারি হওয়ার আগে) ও বলে, "হে আবু লুবাবা, আনন্দ করো, কারণ আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেছে।"

লোকেরা তাকে মুক্ত করার জন্য ছুটে আসে। তিনি বলেন, "না, যতক্ষণে না আল্লাহর নবী আমাকে তাঁর নিজ হাতে মুক্ত না করেন।" আল্লাহর নবী ফজরের নামাজের জন্য তার পাশ দিয়ে গমনকালে তাকে মুক্ত করেন।’ [7]

ইবনে হিশামের (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ) নোট:

‘আবদুল্লাহ বিন আবু কাতাদা হইতে > ইসমাইল বিন আবু খালিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সুফিয়ান বিন ইউয়েনাকে বলেছেন যে, আবু লুবাবার এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ নাজিল করে: 

৮:২৭ - "হে ঈমানদারগণ, খেয়ানত করো না আল্লাহর সাথে ও রসূলের সাথে এবং খেয়ানত করো না নিজেদের পারস্পরিক আমানতে জেনে-শুনে।"’ [4]    

'তিনি [আবু লুবাবা] গাছের গুঁড়ির (stump) সাথে ছয় রাত পর্যন্ত নিজেকে বেঁধে রাখেন। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের সময় তার স্ত্রী তার কাছে আসতো ও নামাজের জন্য তার বাঁধন খুলে দিত। তারপর তিনি ফিরে গিয়ে আবার নিজেকে গাছের গুঁড়ির সাথে বেঁধে রাখতেন, যা এক মুহাদ্দিস আমাকে জানিয়েছেন। তাঁর এই অনুশোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহর তরফ থেকে নাজিল হয়:

৯:১০৩ [৯:১০২] - "আর কোন কোন লোক রয়েছে যারা নিজেদের পাপ স্বীকার করেছে, তারা মিশ্রিত করেছে একটি নেককাজ ও অন্য একটি বদকাজ। শীঘ্রই আল্লাহ হয়ত তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়।"’ [7]           

(অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ - লেখক।)

>>> পরে আদি উৎসের বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে,মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের দ্বারা চারিদিক থেকে অবরুদ্ধ দুর্গের মধ্যে অবস্থানকালে ভীত সন্ত্রস্ত বনি কুরাইজা গোত্রের লোকেরা যখন বুঝতে পারেন, মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা তাঁদেরকে শেষ না করে ফিরে যাবে না, তখন তাঁরা মুহাম্মদের কাছে এই মর্মে খবর পাঠান যে, তিনি যেন বনি আমর বিন আউফ গোত্রের আবু লুবাবা বিন আবদুল মুনধির কে তাদের কাছে পাঠান, যেন তাঁরা তার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

তাঁদের এই প্রস্তাবে মুহাম্মদ, আবু লুবাবা বিন আবদুল মুনধিরকে তাঁদের কাছে পাঠান। বনি কুরাইজার এই অসহায় অবস্থা ও তাঁদের পরিবার পরিজনদের কান্না-কাটি দেখে মুহাম্মদের এই প্রতিনিধি দুঃখিত ও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি তাঁদেরকে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দেন ও “একই সাথে ইশারায় জানিয়ে দেন যে তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে।"

বলা হচ্ছে যে, এই কর্মটি করার পরই তিনি অনুতপ্ত হয়ে অনুশোচনা শুরু করেন, নিজেকে কষ্ট দেয়া শুরু করেন ও মসজিদ সংলগ্ন এক গাছের গুঁড়ির সাথে নিজেকে বেঁধে রেখে ঘোষণা দেন যে, তিনি আল্লাহ ও তাঁর নবীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বলেছেন ও যতক্ষণ পর্যন্ত না "আল্লাহ" তাকে ক্ষমা করবেন ততক্ষণ তিনি বন্দী অবস্থাতেই থাকবেন।

স্পষ্টত:ই তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত! এখন প্রশ্ন হলো:

১) "কার ভয়ে আবু লুবাবা ছিলেন ভীত-সন্ত্রস্ত? আল্লাহর ভয়ে? নাকি মুহাম্মদের ভয়ে? আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেছেন কি না, তা তিনি কীভাবে জানবেন? তার কাছে তো তথাকথিত কোনো 'ওহী' আসে না! তাহলে? ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় প্রকৃতপক্ষে তিনি কার কাছ থেকে "ক্ষমা পাবার" প্রতীক্ষা করছিলেন?"

এর জবাব হলো, "আল্লাহ" তাকে ক্ষমা করেছেন কি না, তা জানার একমাত্র বাহন হলো "মুহাম্মদ";অর্থাৎ, মুহাম্মদ তাকে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি সেই স্থানটি ত্যাগ করে কোথাও যেতে রাজি ছিলেন না। যার প্রমাণ আমরা দেখতে পাই এই উপাখ্যানের শেষ দৃশ্যে! যখন লোকেরা তাকে মুক্ত করার জন্য ছুটে আসে, তখন তিনি তাদের সাফ জানিয়ে দেন যে "যতক্ষণে না আল্লাহর নবী তাকে নিজ হাতে মুক্ত না করবেন" ততোক্ষণ পর্যন্ত তিনি মুক্ত হবেন না। এর সরল অর্থ হলো, প্রকৃতপক্ষে আবু লুবাবা ছিলেন মুহাম্মদের (আল্লাহর) ভয়ে ভীত!"

২) "আবু লুবাবা কি সত্যিই 'নবীর অভিপ্রায়' না জেনেই বনি কুরাইজা গোত্রের লোকদের এমনটি জানিয়েছিলেন? নাকি বনি কুরাইজার অসহায় বিপর্যস্ত অবস্থা প্রত্যক্ষ করে আবেগের বশে "মুহাম্মদের প্রকৃত অভিপ্রায়" প্রকাশ করার পর তিনি মুহাম্মদের ভয়ে ছিলেন ভীত-সন্ত্রস্ত?"

এর অত্যন্ত স্পষ্ট জবাবআছে বনি কুরাইজা উপাখ্যানের পরবর্তী ঘটনা প্রবাহে।

মুহাম্মদের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে মুহাম্মদ অনুসারীদের এই ঘেরাও, সন্ত্রাস ও গালাগাল চলে দীর্ঘ ২৫ দিন! এমত অবস্থায় যখন পরিস্থিতি তাঁদের জন্য অত্যন্ত দুঃসহ হয়ে পড়ে, তখন তাঁরা "বিনা শর্তে মুহাম্মদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন"।

[ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি।]

The narratives of Muhammad Ibne Ishaq (704-768 AD): [1] [2]

‘Now Huyayy b. Akhtab had gone with B. Qurayza into their forts when Quraysh and Ghatafan had withdrawn and left them, to keep his word to Ka'b b. Asad; and when they felt sure that the apostle would not leave them until he had made an end of them Ka'b b. Asad said to them:

'O Jews, you can see what has happened to you; I offer you three alternatives. Take which you please.'

(i) We will follow this manand accept him as true, for by God it has become plain to you that he is a prophet who has been sent and that it is he that you find mentioned in your scripture; and then your lives, your property, your women and children will be saved.

They said, 'We will never abandon the laws of the Torah and never change it for another.' He said, 'Then if you won't accept this suggestion

(ii) let us kill our wives and children and send men with their swords drawn to Muhammad and his companions leaving no encumbrances behind us, until God decides between us and Muhammad. If we perish, we perish, and we shall not leave children behind us to cause us anxiety. If we conquer we can acquire other wives and children.'

They said, 'Should we kill these poor creatures? What would be the good of life when they were dead?' He said, 'Then if you will not accept this suggestion

(iii) tonight is the eve of the sabbath and it may well be that Muhammad and his companions will feel secure from us then, so come down, perhaps we can take Muhammad and his companions by surprise.'

They said: 'Are we to profane our sabbath and do on the sabbath what those before us of whom you well know did and were turned into apes?'

He answered, 'Not a single man among you from the day of your birth has ever passed a night resolved to do what he knows ought to be done.'

Then they sent to the apostle saying, 'Send us Abu Lubaba b. 'Abdu'l-Mundhir, brother of B. 'Amr b. 'Auf (for they were allies of al-Aus), that we may consult him.' [3]

So the apostle sent him to them, and when they saw him they got up to meet him. The women and children went up to him weeping in his face, and he felt sorry for them. They said, 'Oh Abu Lubaba, do you think that we should submit to Muhammad's judgement?'

He said, 'Yes,' and pointed with his hand to his throat, signifying slaughter.

Abu Lubaba said, 'My feet had not moved from the spot before I knew that I had been false to God and His apostle.' Then he left them and did not go to the apostle but bound himself to one of the pillars in the mosque saying, 'I will not leave this place until God forgives me for what I have done,' and he promised God that he would never go to B. Qurayza and would never be seen in a town in which he had betrayed God and His apostle. [4] When the apostle heard about him, for he had been waiting for him a long time, he said, 'If he had come to me I would have asked forgiveness for him, but seeing that he behaved as he did I will not let him go from his place until God forgives him.'

Yazid b. 'Abdullah b. Qusayt told me that the forgiveness of Abu Lubaba came to the apostle at dawn while he was in the house of Umm Salama. [5] [6]. She said: 'At dawn I heard the apostle laugh and I said: 'Why did you laugh? May God make you laugh!'

He replied, 'Abu Lubaba has been forgiven.'

She said, 'Cannot I give him the good news?' and when he said that she could she went and stood at the door of her room (The prophet's house was next door to the mosque where Abu Lubaba had tied himself.) (this was before the veil had been prescribed for women) and said, 'O Abu Lubaba, rejoice, for God has forgiven you'; and men rushed out to set him free.

He said, 'No, not until the apostle frees me with his own hand.' When the apostle passed him when he was going out to morning prayer he set him free.’ [7]

(চলবে)

[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলাতরজমা থেকে নেয়া, অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।] 

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ:  A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৪৬১-৪৬৩

[2] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮, ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৪৮৭-১৪৯০

[3] বিন আউফ গোত্রটি ছিল আল-আউস গোত্রের মিত্র; আর বনি কুরাইজা গোত্র ছিল আল-আউস গোত্রের মিত্র।

[4] Ibid “সিরাত রসুল আল্লাহ”, ইবনে হিশামের নোট নম্বর নম্বর ৭০৭, পৃষ্ঠা ৭৬৪
God sent down concerning Abu Lubaba according to what Sufyan b Uyayna from Ismail b Abu Khalid from Abdullah b Abu Qatada said, “O ye who believe, do not betray God and the apostle and be false to your engagement while you know what you are doing. (8:27)”’

[5] ‘ইয়াযিদ বিন আবদুল্লাহ বিন কুসায়েত ৯০ বছর বয়সে ৭৪০ খৃষ্টাব্দে (হিজরি ১২২ সাল) মৃত্যুবরণ করেন’। 

[6] ‘উম্মে সালামার প্রাক্তন স্বামী আবু সালামা ওহুদ যুদ্ধে (এপ্রিল, ৬২৬ সাল) নিহত হওয়ার পর মুহাম্মদ তাকে বিবাহ করেন। মুহাম্মদের প্রত্যেক স্ত্রী তাঁর গৃহের ভিন্ন ভিন্ন কামরায় অবস্থান করতেন; তাঁর গৃহটি ছিল মসজিদ সংলগ্ন। বলা হয় যে তিনি তাঁর স্ত্রীদের সাথে পালাক্রমে রাত্রি যাপন করতেন’।

[7] Ibid “সিরাত রসুল আল্লাহ”, ইবনে হিশামের নোট নম্বর নম্বর ৭০৮, পৃষ্ঠা ৭৬৪
‘He remained tied to stump for six nights. His wife used to come to him at every time of prayer and untie him for prayer. Then he would return and tie himself to the stump according to what a traditionist told me, and the verse which came down about his repentance is the word of God, “And others who confess their sins have mingled good actions with bad; it may be that God will forgive them; God is forgiving, merciful” (9:103).”’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন