আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৫

রামু ট্র্যাজেডি: 'বাংলাদেশী অসাম্প্রদায়িকতার' মুকুটে এক গৌরব-পালক

লিখেছেন জুলিয়াস সিজার

গত পরশু ২৯শে সেপ্টেম্বর রামু ট্র্যাজেডির তিন বছর পূর্ণ হলো। ঠিক ট্র্যাজেডি নয়, আসলে রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপরে ঘৃণ্য নারকীয় হামলার তিন বছর পূর্ণ হলো।

কথায় আছে, কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ। আমার জন্য যেটা ট্র্যাজেডি, সেটা অন্য লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। যেমন ধরুন -

"সাম্প্রদায়িক নির্যাতন পৃথিবীর সব দেশেই হয়। আমাদের দেশেও মাঝেমাঝে টুকটাক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটে। তার জন্য আপনি বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক বলতে পারেন না।" - এই মহান সম্প্রীতির বাণী দেওয়া অসাম্প্রদায়িক (!) ভদ্রলোকদের জন্য রামুতে সাম্প্রদায়িক হামলা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র। ট্র্যাজিক কিছু কিংবা ট্র্যাজেডি কখনোই নয়।

যাই হোক, এহেনতর অসাম্প্রদায়িক দেশে কিছু অসাম্প্রদায়িকতার বিবরণ দিচ্ছি রামুর ঘটনার আলোকে:

১. বিচার হওয়া দূরের ব্যাপার, তিন বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বিচার প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি এখনও।

২. সাধারণত বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক সহাবস্থান এবং মতৈক্য কখনোই দেখা যায় না। তবে রামুতে হামলার আগে সেখানকার স্থানীয় আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জামাত-শিবির সর্বদলীয় সমন্বয় সভা করেছিল। তারপর সবাই মিলে একযোগে হামলা চালায়। আহা! কী একতা! পান থেকে চুন খসলেই যাদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে, সেই মহান শান্তির ধর্মের অনুসারীদের চেহারা অমুসলিম পেটানোর সময় সবারই এক।

৩. রামুর ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বৌদ্ধরা ১৭ জনকে দোষারোপ করেছেন, তাদের কাউকে মামলায় আসামী হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ। ঐ ১৭ জনের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের লোকজন আছে। বাকিটা আপনারা বুঝে নিন।

৪. জামাত-শিবিরের একজন নেতা মামলার মূল আসামী ছিলেন। তিনি জেলে বসে নির্বাচন করেই উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এরকম ঘৃণ্য একজন মানুষ যেখানে জেলে বসেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়, সেখানে ভোট দেওয়া হাজার-হাজার মানুষের মানসিকতা কতটা সাম্প্রদায়িক?

ফ্ল্যাশব্যাক: উত্তম বড়ুয়া নামের এক ব্যক্তি কুরান অবমাননাকর ছবি পোস্ট করেছেন গুজব ছড়িয়ে প্রথমে রামু উপজেলায় হামলা চালিয়ে শত বছরের পুরানো বৌদ্ধমন্দির পুড়িয়ে একেবারে ছাই করে দেওয়া হয়। ধ্বংস করা হয় ৩০টি ঘড়বাড়ি। এর পরের দিন আশেপাশের অন্যান্য এলাকায় হামলা চালিয়ে আরও ৭ টি মন্দির এবং বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়।... প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে হচ্ছে - উত্তম বড়ুয়া ঐ ছবি আপলোড করেননি। তাঁকে ট্যাগ করা হয়েছিল। ফেইসবুকে যে কেউ যে কাউকে আপত্তিকর ছবিতে ট্যাগ করতে পারে, যদি প্রাইভেসি সেটিংস ঠিকঠাক না থাকে। এটাকে ইস্যু বানিয়ে হামলা স্রেফ একটা বাহানা মাত্র।

মূল সমস্যা হচ্ছে - সে সময় মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যাটা চলছিল। তখন এখানকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করে এই বার্তাটা দিয়ে দেওয়া হলো যে, "তোমাদের ভালো থাকা খারাপ থাকা নির্ভর করবে ঐ পাড়ে রোহিঙ্গা মুসলমানেরা কেমন আছে, তার ওপর। তারা সেখানে নির্যাতিত হলে এখানে তোমরা নির্যাতিত হবে। ঠিক যেমন ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙলে তার দায় বাংলাদেশে হিন্দুদের শোধ করতে হয় নির্যাতিত হয়ে।"

বাংলাদেশের মুসলমানদের মানবতা আর অসাম্প্রদায়িকতা সব সময়ই ভারতের মুসলমান আবার মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্ভর করে কিনা!

তখন রামুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন, খালেদা জিয়াও গিয়েছিলেন। আহা, কী ড্রামা মেলোড্রামা! কিসের হিন্দির সিরিয়াল? সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে যেভাবে মুখ কাঁচুমাঁচু করে অভিনয়টা করলেন। উফস......জোস!

একসময় রামু নিয়ে অনলাইনে সেক্যুলারদের আহাজারি ছিল। এখন কেউ দেখান না আহাজারি। তিন বছরের পুরনো কাসুন্দি কে ঘাঁটতে যাবে বলেন? অসাম্প্রদায়িকতার শোক হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।

বছরের পর বছর অতিবাহিত হবে, কিন্তু বিচার হবে না। রামুর সেই পোড়া বৌদ্ধমূর্তির ছবিগুলো বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতার মুকুটে এক একটা গৌরব-পালক হয়ে থাকবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন