আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬

ঈশ্বরের ইতিহাস - ৩ (ঈশ্বর কে?)

লিখেছেন মেসবাহ উস সালেহীন


ঈশ্বর কে? কোথায় থাকেন তিনি? লালন গেয়েছিলেন, "জিজ্ঞাসিলে খোদার কথা, দেখায় আসমানে।" মূসা নবী জিহোভাকে দেখেছিলেন তূর পাহাড়ের ওপরে। মহানবী আল্লাহর ওহী পেয়েছিলেন হেরা গুহায়। গৌতম বুদ্ধ একটা অশোক গাছের তলায় বোধি লাভ করেছিলেন।এরা সবাই ঈশ্বরকে দেখেছিলেন আলাদা আলাদা ফরম্যাটে। সবাই একই ঈশ্বরকে দেখেননি। তাহলে একেক ধর্মের কি আলাদা আলাদা ঈশ্বর?তারা সহাবস্থান করে কীভাবে? ইসলাম, খ্রিষ্টান কিংবা ইহুদি ধর্মে ঈশ্বর ১ জন। কিন্তু হিন্দু ধর্মে হাজার হাজার ঈশ্বর কেন?

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে "দি স্টোরি অফ গড" নামে একটা প্রোগ্রাম দেখানো হয়েছিল। প্রোগ্রামটার ৩ নাম্বার এপিসোডের বিষয় হচ্ছে - "হু ইজ গড?"

সভ্যতার প্রথম দিকে মানুষ অনেক প্রাকৃতিক শক্তির পূজা করত। আকাশ, নদী, সূর্য, পাহাড়, গরু, ঝড়-বৃষ্টি, জঙ্গল - এই শক্তিগুলোকে মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কিন্তু এই প্রাকৃতিক জিনিসগুলো তার কৃষি কাজের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। নদীতে সময়মত জোয়ার-ভাটা না হলে যাতায়াতের সমস্যা হতে পারে। সময়মত বৃষ্টি না হলে ফসলের বারোটা বাজবে। এই সব কথা চিন্তা করে তারা প্রাকৃতিক শক্তিগুলোকে উপাসনা করত। প্রাকৃতিক শক্তিগুলোকে খুশি করার জন্য তারা অনেক পূজা-অর্চনা করত। বাংলাদেশের অনেক গ্রামে এখনো কৃষকেরা ‘শিরালী’ নামে এক বিশেষ প্রকার ওঝা/ফকির দিয়ে ফসলের ক্ষেতে পূজা-অর্চনা করে এই আশায়, যেন শিলা বৃষ্টি এসে ফসলের কোনো ক্ষতি করতে না পারে ।

তবে কোনো কোনো এলাকার বুদ্ধিমান মানুষ হয়তো উপলব্ধি করেছিল, ঝড়-বৃষ্টি কিংবা আর সকল প্রাকৃতিক শক্তিকেই নিয়ন্ত্রণ করে সূর্য। সূর্যের কারণেই ফসল ফলে, ফসল বেড়ে ওঠে, সূর্যের কারণেই ঝড়-বৃষ্টি ঘটে। তাই তারা অন্য সব প্রাকৃতিক শক্তিকে বাদ দিয়ে কেবলমাত্র সূর্যকে উপাসনা করা শুরু করল। ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জে এরকম একটা মন্দির পাওয়া গেছে, যেটা দেখে মনে হয়, স্থানীয় মানুষ এটা সূর্যের উপাসনা করার জন্য তৈরি করেছিল। একটা সমতল মাঠের ভেতরে অনেকগুলো লম্বা লম্বা পাথর গোল করে সুন্দর একটা জ্যামিতিক প্যাটার্নে সাজানো আছে স্টোনহেঞ্জে। বছরের বিভিন্ন মাসে পাথরগুলোর ছায়া পড়ে একটা নিখুঁত জ্যামিতিক প্যাটার্ন তৈরি করে। (তবে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, স্টোনহেঞ্জ ছিল চাঁদের দেবতার মন্দির। অনেকে আবার মনে করেন, এটা কোনো ধরনের ধর্মীয় মন্দির নয়, এটা জাস্ট সূর্য কিংবা চাঁদ পর্যবেক্ষনের জন্য একটা জ্যোতির্বিজ্ঞান টাওয়ার। অনেকে মনে করেন, এটা জাস্ট সময়ের হিসেব রাখার একটা ক্যালেন্ডার।)

ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জ বাদেও ওই সময় বিশ্বের আরো নানা প্রান্তে সূর্যের পূজা করা শুরু হয়। মিশরের ফারাও-রা (ফেরাউন) অনেকগুলো দেব-দেবীর পূজা করত। কিন্তু প্রায় ২৫০০ বছর আগে ফারাও আখেনাটেন ঘোষণা করেছিলেন, সূর্যই একমাত্র দেবতা ,আমি সেই সূর্যের প্রতিনিধি, তোমরা আমাকেই পূজা করো। আখেন আটেন মানে হচ্ছে আটেন-এর (সূর্য) ক্রীতদাস। রাজা আখেন আটেন-এর নাম একটু কম পরিচিত। আখেন আটেন-এর বউ এর নাম নেফারতিতি আর ছেলের নাম তুতেন খামেন। আখেন আটেন মারা গেলে মিশরের জনগণ আবার বহু-ঈশ্বরবাদী বিশ্বাসেই ফিরে যায়। এক উপাসকের পূজা বহাল থাকল না।

আখেন আটেন-এর মৃত্যুর বহু বছর পরে মিশরের নীল নদের তীরে মূসা নামে একজন ক্রীতদাস-সর্দার এক ঈশ্বরের ধারণা নিয়ে আসলেন। তার ঈশ্বরের নাম জিহোভা। স্থানীয় প্রশাসন তাকে তার ধর্ম প্রচারে বাধা দিলে তিনি দলবল নিয়ে নীল নদ পার হয়ে ইজরাইলে এসে বসতি স্থাপন করলেন। (নীল নদ কীভাবে পার হলেন, সেটা নিয়ে অনেক মিথ আছে। প্রচলিত গল্প হচ্ছে এই যে, তিনি তাঁর হাতের অলৌকিক লাঠির সাহায্যে নদীর পানিতে আঘাত করলে নদীতে ৭ টি সেতু তৈরি হয়। মূসার লোকেরা সবাই সেই সেতু ধরে পার হয়েছিল। ধাওয়া করে আসা ফেরাউনের সৈন্যরাও সেই সেতুতে উঠেছিল পার হওয়ার জন্য। কিন্তু তারা মাঝামাঝি আসতেই সেতুগুলো ভেঙে পড়ে। সৈন্যরা সব পানিতে ডুবে মারা যায়। আরজ আলি মাতব্বর এই ঘটনার ব্যাখ্যা হিসেবে বলেছেন, সম্ভবত, মূসা নবীর লোকেরা নদী পার হয়েছেন ভাটার সময় আর ফেরাউনের সৈন্যরা ডুবে গেছে জোয়ারের পানিতে। মূসা নবী লাঠি ব্যবহার করে দেখেছিলেন, কোথায় পানির গভীরতা কম।)

সেই ইসরাইলে পরবর্তীকালে আরো অনেকগুলো ধর্ম তৈরি হল। যেমন, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্ম। এই ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করে, এদের কাছে আসমানী কিতাব এসেছিল। এই ধর্মগুলোকে একত্রে বলে সেমেটিক ধর্ম। ইসলাম, খ্রিষ্টান কিংবা ইহুদি বাদেও আরো কয়েকটা ছোটো ছোট সেমেটিক ধর্ম রয়েছে, সেগুলোও একেশ্বরবাদী এবং সেগুলোর জন্ম ইজরাইলে। যেমন, বাহাই ধর্ম।

খ্রিষ্টান ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা যিশুর জন্ম, বেড়ে ওঠা, ধর্ম প্রচার সবই হয়েছে ইজরাইলে। তাই খ্রিষ্টানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র দেশ হচ্ছে ইজরাইল। মুসলমানদের কাছে যেমন সৌদি আরব পবিত্র, ঠিক সেই রকম। 

ইসরাইলের মানুষ সাকার ঈশ্বর ছেড়ে হঠাৎ করে নিরাকার ঈশ্বরবাদী হয়ে গেল কেন? (Samson and delaila নামক সিনেমাটা দেখতে পারেন। এই সিনেমায় ২০০০ বছর আগের ইজরাইল দেখানো হয়েছে। নায়ক এখানে ইহুদি, নিরাকার একেশ্বরবাদী, নায়িকা প্যাগান -সাকার বহু-ঈশ্বরবাদী) মরগান ফ্রিম্যান এই সিরিয়ালে একটা ভাল কারণ উল্লেখ করেছেন। খ্রিষ্টপূর্ব ২০ সালে রাজা হেরোদ ইহুদি ধর্মের একটা বিশাল বড় মন্দির তৈরি করেছিলেন। ৭০ সালে রোমান প্যাগানেরা সেই মন্দির ধ্বংস করে ফেললেন। প্যাগান (মূর্তিপূজক ধর্ম) অনুযায় কোনো নির্দিষ্ট দেবতার মূর্তি ভেঙে ফেললেই সেই দেবতা শেষ। সেই দেবতার আর কোনো উপাসক থাকবে না। তারা নতুন কোনো দেবতাকে তাদের উপাসক হিসেবে গ্রহণ করবে ।

মনে করুন, সরস্বতী হচ্ছেন চিটাগাং-এর দেবী, আর দুর্গা বরিশালের দেবী। বরিশালের সেনাবাহিনী গিয়ে চট্টগ্রাম আক্রমণ করল এবং জিতে গেল। অর্থাৎ দুর্গা যুদ্ধ করলো সরস্বতীর বিরুদ্ধে এবং তাকে পরাজিত করল। অতএক সরস্বতীর চেয়ে দুর্গার শক্তি বেশি। সরস্বতীর উপাসকেরা (অর্থাৎ চিটাগাং এর মানুষরা) তারপর থেকে সরস্বতী বাদ দিয়ে দুর্গার পূজা শুরু করবে। প্রাচীনকালে যুদ্ধগুলো হত এভাবেই।দেবতার সাম্রাজ্য বড় করার জন্যই দেবতার নামে মানুষেরা যুদ্ধ করত। যুদ্ধে অনেক মানুষ মারা যেত, অনেক দেবতাও মারা যেত। পরাজিত দেবতাদের নাম-নিশানা ইতিহাস থেকে মুছে যেত।

রোমানরা যখন ইজরাইলের মন্দির ধ্বংস করল ৭০ সালে, তখন নিয়ম অনুযায়ী ইহুদি ধর্মের অনুসারিদের নিজ ধর্ম ত্যাগ করে প্যাগান হয়ে যাওয়ার কথা। তখন কিছু ইহুদি পণ্ডিত নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষার জন্য নিরাকার ঈশ্বরের ধারণা নিয়ে এলেন। তাঁরা বললেন, ঈশ্বর কেবল ওই গ্রামে-ভদ্রপল্লীতে থাকেন না। কোনো নির্দিষ্ট মূর্তি কিংবা মন্দিরের ভেতরে ঈশ্বর বিরাজ করেন না। ঈশ্বর সর্বব্যাপী। মন্দির ধ্বংস হইছে তো কী হইছে? আমাদের ঈশ্বর মারা যায়নি। তিনি অন্য জায়গায় আছেন বহাল তবিয়তেই। তোমরা ইহুদি ধর্ম ত্যাগ না করে ইহুদি ঈশ্বর জিহোভার উপাসনা চালিয়ে যাও ঠিকমত।

ইজরাইলের আম জনতা এই সিস্টেমে বুঝ মানল। তারা নিরাকার ঈশ্বরবিশ্বাসী হয়ে গেল। এই ঘটনার আগে ইহুদিরা কি সাকার ঈশ্বর কনসেপ্টে বিশ্বাসী ছিল? পরিষ্কার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে কথিত আছে, মূসা নবীর সাথে জিহোভা মাঝে মাঝেই পাহাড়ে –ময়দানে দেখা করতেন অর্থাৎ তার শরীর আছে। নবী ইব্রাহিমের বাবা এবং পুরো পরিবার ছিল মূর্তি বানানোর কারিগর। এই সব প্রমাণ দেখে মনে হয়, প্রথমদিকে ইহুদিদের সাকার ঈশ্বরের কনসেপ্ট ছিল।

এখানে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে। বিশ্বের সব জায়গায় ধর্ম কিন্তু একইরকমভাবে ডেভেলপ করেনি। সভ্যতা কিংবা সংস্কৃতির দিক দিয়ে যেমন বিশ্বের কোনো কোনো জায়গায় ডেভেলপমেন্ট অনেক বেশি হয়, আবার কোনো কোন জায়গায় ডেভেলপমেন্ট অনেক কম হয়। সেই রকমই ধর্মের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম। ধর্মের ডেভেলপমেন্টের ধাপগুলা হল - প্রকৃতি পূজা > পূর্ব পুরুষ পূজা > প্রাকৃতিক শক্তি পূজা > বহু-ঈশ্বরবাদ > এক-ঈশ্বরবাদ। প্রকৃতি পূজা এখন কেবল আফ্রিকা কিংবা কয়েকটা আদিবাসী সমাজে দেখা যায়। পূর্ব পুরুষ পূজা বিভিন্ন ফরম্যাটে আমাদের মাঝে এখনো আছে। ইসলামে এই কনসেপ্টের নাম – মুরুব্বীর দোয়া। সুন্নি ইসলামের তুলনায় শিয়া ইসলামে পূর্ব পুরুষ কিংবা মাজারের মর্যাদা বেশি। বহু-ঈশ্বরবাদ ভালভাবে টিকে আছে কেবলমাত্র ভারতে। তবে একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রভাবে তাদের কনসেপ্টও অনেকখানি বদলে গেছে।

মরগ্যান ফ্রিম্যান ভারতে এসেছিলেন হিন্দুধর্ম বুঝতে। তিনি জানতে পারলেন, এখানে প্রতিটা পরিবারের নিজস্ব পারিবারিক দেবতা থাকে।বংশানুক্রমে তারা সেই ঠাকুরের পূজা করতে থাকে। সেই দেবতায় যখন কাজ না হয়, পরিবারে যখন কোনো বিপদ আসে, তখন পরিবারের লোকেরা অন্য দেবতার কাছে গিয়ে সাহায্য চায়। সেই নতুন দেবতা যদি সাহায্য করে, তখন পুরনো দেবতা বাদ। পরিবারের লোকেরা নতুন দেবতার পূজা করা শুরু করে।

রামচন্দ্রের বউ সীতাকে রাবন যখন অপহরণ করে বিমানে (পুষ্পক রথ) চড়িয়ে শ্রীলংকা নিয়ে গেল, তখন রাম সীতাকে উদ্ধারের জন্য নতুন একজন শক্তিশালী দেবতা খুঁজছিলেন। দেবী দুর্গার নাম তিনি তখন জানতে পারলেন। কিন্তু দুর্গার কাজের সময় হচ্ছে বসন্তকাল, অথচ তখন চলছিল শরৎকাল, রামের দরকার জরুরি সাহায্য। রাম তখন অনেক ভালভাবে দেবী দুর্গার উপাসনা করা শুরু করলেন। তাঁর উপাসনায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী ঘুম ভেঙে ফর্মে ফিরলেন শরৎকালেই। এই ঘটনাকে বলে অকালবোধন (অকালে যে বোধন অর্থাৎ জাগরণ = অকালবোধন - ছোটবেলায় বাংলা ব্যাকরণ বইতে এককথায় প্রকাশ পড়তাম, মনে আছে?) দেবী দুর্গার সাহায্যে রাম রাবণকে যুদ্ধে হারাতে পেরেছিল।তারপর থেকে রামের বংশধর এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা (কোলকাতা এবং বাংলাদেশের লোকেরা) দুর্গার পূজা করা শুরু করল। ভারতের অন্যান্য জায়গায় অন্যান্য লোকাল দেবতার পূজা বেশি হয়। দুর্গা সেই সব জায়গায় মাইনর দেবতা। মাদ্রাজের মানুষ বেশি পূজা দেয় তিরুপতির, গুজরাট কিংবা রাজস্থানের দেবতা হচ্ছেন গণপতি, উত্তরপদেশে রয়েছেন গণেশের অনুসারী, হায়দ্রাবাদে কৃষ্ণ। নেপালে আবার হনুমানজী প্রধান দেবতা।

দেবতারা নিজেরাও আবার মাঝে মাঝে নতুন ভক্ত খুজে বেড়ায়। চাঁদ সওদাগরের গল্প এরকমই। চাঁদ সওদাগর ছিলেন অন্য একজন দেবতার অনুসারী। দেবী মনসা চাইলেন যে, চাঁদ তাঁর আদি দেবতা বাদ দিয়ে আমার উপাসনা শুরু করুক। এই জন্য সে অনেক ছলাকলা শুরু করল। কোনটাতেই চাঁদ সওদাগর রাজি হচ্ছিলেন না তার প্রাচীন দেবতাকে ত্যাগ করতে। রাগ করে মনসা চাঁদের একমাত্র ছেলে লখীন্দরকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। চাঁদ তার ছেলেকে অনেক সাবধানে রাখতেন। বাসর রাতে মনসা লখীন্দরকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। চাঁদ সওসদাগর অনেক কষ্ট করে লখীন্দরের জন্য একটা লোহার বাসর ঘর বানিয়ে দিয়েছিলেন। মনসা সেই বাসর ঘরেই সাপ হয়ে ঢুকে লখীন্দরকে কামড়েছিল। মৃত লখীন্দরের জীবন ফিরিয়ে আনার জন্য তার বউ বেহুলা অন্যান্য দেবতাদের সাহায্য চাইল।(বেহুলা লখীন্দরের মৃতদেহ ভেলায় ভাসিয়ে নিয়ে চলে গেল দেবতাদের আস্তানায়। সেখানে দেবতা ইন্দ্র বললেন, আমি তোমাকে সাহায্য করব, যদি তুমি আমাকে তোমার নাচ দেখিয়ে মুগ্ধ করতে পারো। বেহুলা তখন ইন্দ্রের রাজসভায় নেচেছিল। সেই নাচ দেখে খুশি হয়ে ইন্দ্র লখীন্দরের জীবন ফিরিয়ে এনেছিল) দেবতারা তখন চাঁদ সওদাগর আর মনসার ভেতরে একটা শান্তিচুক্তি করে দিল। এই চুক্তি অনুযায়ী, চাঁদ সওদাগরের লোকেরা এখন থেকে পুরনো দেবতা বাদ দিয়ে মনসার পূজা করবে। চাঁদ নিজে মনসার পূজা দিতে চাচ্ছিলেন না। পরে চুক্তি অনুযায়ী, চাঁদ সওদাগর বাম হাত দিয়ে মনসার মূর্তিতে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে অবহেলা করে একটি ফুল ছুড়ে দিয়েছিলেন। মনসা ওটাকেই পূজা হিসেবে গ্রহণ করে তার ওপর থেকে অভিশাপ তুলে নিয়েছিল। শ্রাবণ মাসে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় মনসা পূজা হয় এখনও।

মরগ্যান ফ্রিম্যানকে তার ভারতীয় গাইড বোঝালেন যে, হ্যাঁ, অনেক দেবতা ভারতে আছে, ঠিক। কিন্তু এটাও এক ধরনের একেশ্বরবাদ।কারণ সব দেবতার মূল শক্তি একজনই। তিনি হচ্ছেন দেবতা ব্রহ্মা। ব্রহ্মা হচ্ছেন বটগাছের মূল, আর অন্যান্য দেবতারা হচ্ছেন সেই বটগাছের বিভিন্ন ডালপালা (প্রধান দেবতা যে আসলে কে, এটা নিয়েও বিভিন্ন মতবাদ আছে। ব্রহ্মার মতই বিষ্ণু এবং শিবের অনুসারী রয়েছে। ইসকন নামে নতুন একটা দ্রুত বর্ধনশীল সম্প্রদায় মূল দেবতা হিসেবে কৃষ্ণকে মানে।)

দেবতা/ঈশ্বর তাহলে কোথায় থাকেন? স্বর্গে? কখনো কখনো পৃথিবীতে? (যেহেতু ঈশ্বর সর্বব্যাপী) মানুষের ভেতরেও কি ঈশ্বর ঢুকে যেতে পারেন? মর্গ্যান ফ্রিম্যান গিয়েছিলেন মেক্সিকোর নাভাহো আদিবাসী গ্রামে। সেখানে কিন্ডালা নামে একটা অনুষ্ঠান হয়। গ্রামের কোনো মেয়ে যখন কিশোরী থেকে তরুণীতে পরিণত হতে থাকে, তখন এই অনুষ্ঠানটা করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে দেবতা এসে মেয়েটির শরীরে অবস্থান করে। দেবতাটার নাম ভুলে গেছি। উর্বরতার দেবতা তিনি। ফসলের উর্বরতা আর মেয়েদের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা - দুই ধরনের উর্বরতাই বোঝানো হয়েছে (বাংলাদেশেও দুর্গাপূজার একটা আনুষ্ঠানিকতা হিসাবে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। বিশ্বাস অনুযায়ী, কিছু সময়ের জন্য দেবী ওই কুমারীরের দেহে অধিষ্ঠান করেন।)

সকল ঘাটের জল খেয়ে মরগ্যান ফ্রিম্যান এলেন আমেরিকার এক নিউরোসায়েন্টিসট-এর কাছে। তিনি একটি মজার তথ্য দিলেন। বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন দেশের লোকের ব্রেইন স্ক্যান করে দেখা গেছে — মেডিটেশন করার সময়ে সকলের ব্রেইনের ফ্রন্টাল লোবেই বেশি রক্ত চলাচল করে। খ্রিষ্টানদের ব্রেইনে কম আর মুসলমানদের ফ্রন্টাল লোব বেশি একটু হয় — এমন কিছু নয়।

মর্গ্যান ফ্রিম্যান তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, নাস্তিকদের ব্রেইন স্ক্যান করে আপনি কী পেলেন? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, আমি এক নাস্তিককে মেডিটেশন করতে বলে তার ব্রেইন স্ক্যান করতে বলেছিলাম। তাকে গভীর মনোযোগ দিতে বললাম ঈশ্বর সম্পর্কে চিন্তা করতে।তার ব্রেইন স্ক্যান করে ফ্রন্টাল লোবে এক্টিভিটিজ অনেক কম পেলাম। ঈশ্বর সম্পর্কে তিনি গভীরভাবে কনসেন্ট্রেট করতেই পারেননি, ঈশ্বর সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা নেই।

প্রোগ্রামের টার্গেট সম্ভবত বেশিরভাগ আস্তিক লোকজন। তাই মর্গ্যান শেষে এসে তাদেরকে খুশি করার জন্য এই কথা বলিয়েছেন। আমার ধারণা, নাস্তিককে অন্য কোনো প্রিয় জিনিস (পরিচিত মিউজিক কিংবা অন্য কিছু) নিয়ে গভীর মনোযোগ দিতে বললে তার ফ্রন্টাল লোবেও একই রেসপন্স পেতেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন