আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১৬

কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছর (পর্ব ০৯)

লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮

{প্রশ্ন জাগে; মুহাম্মদ নবী না কবি ছিলেন? উত্তর: দুটোই; তবে ব্যাখ্যা করতে হবে এভাবে, যেহেতু মুহাম্মদ একটি নতুন ধর্মমত প্রচারে সফল হয়েছেন, তাই তিনি ধর্মপ্রচারক নবী; আর নিজের সচেতন মনের অজান্তে আরবি কবিতার জন্ম দিয়েছিলেন তিনি; তাই কবি। কোনো অনুবাদেই কবিতার সূর বা ছন্দমিল তুলে ধরা যায় না; তাই কোরআনের সকল অনুবাদ রসহীন গদ্যে পরিণত হতে বাধ্য। মক্কাতে প্রকাশিত বেশিরভাগ সূরায় কবিতার ছন্দমিল/অন্ত্যমিল দেখতে পাওয়া যায়, কিন্ত মদিনার প্রকাশিত সূরাগুলোতে ছন্দমিল/অন্ত্যমিলের প্রভাব কম; এর কারণ খুঁজতে মুহাম্মদের জীবন পর্যবেক্ষণ জরুরি।

মনে রাখতে হবে, প্রতিটি সূরা প্রকাশের জন্য মুহাম্মদের মনোজগতের বদল ও বিকাশ বড় ভূমিকা নিয়েছে, সেই সাথে বিনা কষ্টে (কবিতা প্রসবের কষ্ট, কবি মাত্রই জানেন) মুহাম্মদ এক লাইনও সূরা প্রকাশ করতে পারেননি। বর্তমানে প্রাপ্ত কোরআনের ৬২৩৬ টি লাইন কতটি খণ্ডে নবী মুহাম্মদ প্রকাশ করেছেন, তার ধারাবাহিক বন্টনই এই সিরিজটি লেখার কারণ, এর জন্য যাবতীয় শানেনূযুল আর অবতরণের হিসাবের ১৪০০ বছরের সংস্কারকে নবী মনোজগতের পরিপ্রেক্ষিতে ভেঙে ফেলতে হয়েছে। এবং আরও মজার তথ্য হচ্ছে মুহাম্মদ প্রতি মাসে গড়ে ২ টির বেশি সূরার অংশ প্রকাশ করতে সমর্থ ছিলেন না, এটি একটি লক্ষণীয় বিষয় বটে; ২৩ বছরের বাকিটা সময় পূর্ববর্তী প্রকাশের বহুপঠনের কারনেই কোরআনের সকল সূরা স্থায়ীত্ব লাভ করতে পেরেছিলো। মুহাম্মদের প্রতিটি প্রকাশ, নিজস্ব মনোজগতের শীতলীকরন প্রক্রিয়া ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়; আর মক্কার ১৩ বছর সময়কালে এসব প্রকাশের বেশিরভাগ কখনই কুরাইশদের কান পযন্ত পৌঁছায়নি। উদাহরণ: নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যরা সমাজ থেকে যেসব প্রশ্ন নিয়ে ঘরে ফেরেন; তার সমাধানমূলক উত্তর কখনই প্রশ্নকারীদের কাছে পৌঁছায় না। মনে করুন, আপনি নিয়মিত প্রচার করছেন - ইসলামে জঙ্গিবাদের স্থান নেই, জঙ্গিরা ভুল পথে আছে; তখন এই প্রশ্ন নিয়ে আপনার পাশের বাড়ির নবদীক্ষিত জঙ্গি ছেলেটি যখন তার প্রধানের কাছে যায়; এবং আপনার প্রশ্নের সত্যতা নিয়ে যে উত্তর পায়; তা কখনই আপনার কাছে পৌঁছাবে না। মক্কায় মুহাম্মদের সকল প্রকাশের ক্ষেত্রে ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে ১৩ বছর; শুধুমাত্র সাহাবীরাই ছিল এসব প্রকাশের মুল শ্রোতা।

আজকের পর্বের তিনটি সূরার অন্ত্যমিল/ছন্দমিল দিয়ে দিলাম; যারা আরবি পড়তে পারেন, আগের প্রকাশিত অংশগুলোর অন্ত্যমিল/ছন্দমিল খুঁজে দেখে নিতে পারেন। প্রশ্ন রইল, এগুলো ছন্দবদ্ধ কবিতা হবার যোগ্যতা রাখে কি না?

সূরা আল ফালাক:
অন্ত্যমিল/ছন্দমিল (ক, ক, ব, দ, দ)

সূরা আল ইনশিকাক:
অন্ত্যমিল/ছন্দমিল (ত, ত, ত, ত, ত, হ, হ, রা, রা, হ, রা, রা, রা, রা, রা, ক, ক, ক, ক, ন, ন, ন, ন, ম, ন)

সূরা আল বালাদ:
অন্ত্যমিল/ছন্দমিল (দ, দ, দ, দ, দ, দ, দ, ন, ন, ন, হ, হ, হ, হ, হ, হ, হ, হ, হ, হ)

মুহাম্মদ সাফা থেকে ফেরার পর থেকেই কিছুটা মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে ছিলেন; মেয়ে দুটোর বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় হতাশাও বাসা বাধে মনের ভেতর; তা থেকে উত্তরণের প্রকাশ সূরা আল ফালাক; সাফার চূড়া থেকে তার ইসলাম প্রচার প্রচেষ্টার সফলতা না আসার বেদনার প্রকাশ সূরা আল ইনশিকাক; মুহাম্মদের প্রতি প্রথম বিরোধিতা উঠে আসে কবিতাপ্রেমী মক্কার উচ্চবিত্ত শ্রেণী থেকে, তারই বিরোধী প্রকাশ সূরা আল বালাদ। সূরা লাহাব থেকে এই তিনটি প্রকাশের দুরত্ব তিন মাসের বেশি হবার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ৯ম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছর-এর দ্বিতীয় তিন অংশঅনুবাদের ভাষা ৫০ টির বেশি বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৪০ তম প্রকাশ; সূরা আল ফালাক (১১৩) (নিশিভোর) ৫ আয়াত:

১. বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার,
২. তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে
৩. অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়,
৪. গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিণীদের অনিষ্ট থেকে
৫. এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৪১ তম প্রকাশ; সূরা আল ইনশিকাক (৮৪) (খণ্ড-বিখণ্ডকরণ), ২৫ আয়াত:

১. যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে,
২. ও তার পালনকর্তার আদেশ পালন করবে এবং আকাশ এরই উপযুক্ত
৩. এবং যখন পৃথিবীকে আকৃষ্ট করা হবে।
৪. এবং পৃথিবী তার গর্ভস্থিত সবকিছু বাইরে নিক্ষেপ করবে ও শূন্যগর্ভ হয়ে যাবে।
৫. এবং তার পালনকর্তার আদেশ পালন করবে এবং পৃথিবী এরই উপযুক্ত।
৬. হে মানুষ, তোমাকে তোমার পালনকর্তা পর্যন্ত পৌঁছতে কষ্ট স্বীকার করতে হবে, অতঃপর তার সাক্ষাৎ ঘটবে।
৭. যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে
৮. তার হিসাব-নিকাশ সহজে হয়ে যাবে
৯. এবং সে তার পরিবার-পরিজনের কাছে হৃষ্টচিত্তে ফিরে যাবে
১০. এবং যাকে তার আমলনামা পিঠের পশ্চাদ্দিক থেকে দেয়া হবে,
১১. সে মৃত্যুকে আহবান করবে,
১২. এবং জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
১৩. সে তার পরিবার-পরিজনের মধ্যে আনন্দিত ছিল।
১৪. সে মনে করত যে, সে কখনও ফিরে যাবে না।
১৫. কেন যাবে না, তার পালনকর্তা তো তাকে দেখতেন।
১৬. আমি শপথ করি সন্ধ্যাকালীন লাল আভার
১৭. এবং রাত্রির, এবং তাতে যার সমাবেশ ঘটে
১৮. এবং চন্দ্রের, যখন তা পূর্ণরূপ লাভ করে,
১৯. নিশ্চয় তোমরা এক সিঁড়ি থেকে আরেক সিঁড়িতে আরোহণ করবে।
২০. অতএব, তাদের কী হল যে, তারা ঈমান আনে না?
২১. যখন তাদের কাছে কোরআন পাঠ করা হয়, তখন সেজদা করে না।
২২. বরং কাফেররা এর প্রতি মিথ্যারোপ করে।
২৩. তারা যা সংরক্ষণ করে, আল্লাহ তা জানেন।
২৪. অতএব, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন।
২৫. কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৪২ তম প্রকাশ; সূরা আল বালাদ (৯০) (নগর), ২০ আয়াত:

১. আমি এই (মক্কা) নগরীর শপথ করি
২. এবং এই নগরীতে আপনার (মুহাম্মদ) ওপর কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।
৩. শপথ জনকের ও যা জন্ম দেয়।
৪. নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রমনির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি।
৫. সে কি মনে করে যে, তার উপর কেউ ক্ষমতাবান হবে না?
৬. সে বলে: আমি প্রচুর ধন-সম্পদ ব্যয় করেছি।
৭. সে কি মনে করে যে, তাকে কেউ দেখেনি?
৮. আমি কি তাকে দিইনি চক্ষুদ্বয়,
৯. জিহবা ও ওষ্ঠদ্বয়?
১০. বস্তুতঃ আমি তাকে দুটি পথ প্রদর্শন করেছি।
১১. অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি।
১২. আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কী?
১৩. তা হচ্ছে দাসমুক্তি
১৪. অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে অন্নদান।
১৫. এতিম আত্মীয়কে
১৬. অথবা ধূলিধূসরিত মিসকীনকে
১৭. অতঃপর তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সবরের ও উপদেশ দেয় দয়ার।
১৮. তারাই সৌভাগ্যশালী।
১৯. আর যারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে, তারাই হতভাগা।
২০. তারা অগ্নিপরিবেষ্টিত অবস্থায় বন্দী থাকবে।

আয়াত প্রকাশের মনোজগত: ভেবেছিলেন, ভাল সাড়া পাবেন ইসলাম প্রচারে, কিন্তু ঘটনা ঘটলো উল্টো; বিভিন্ন গোত্রের প্রধান আর বুদ্ধিজীবীদের মিলে ৪০ জনের যে পরামর্শ-সভাস্থল (দারুন নাদওয়া) ছিলো কুরাইশদের; সেখান থেকে শুরু হলো মুহাম্মদের প্রতি বিরোধিতা। আর মুহাম্মদ সামনে আনতে থাকলেন একের পর এক ভীতি আর শাস্তিপ্রদানমূলক সূরার আয়াত! আগামী পর্বে এটা পরিষ্কার বোঝা যাবে।

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন