আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

সাইমুম (উপন্যাস: পর্ব ১৯)

লিখেছেন উজান কৌরাগ


বারান্দায় এসে চেয়ারে বসার পরপরই একটা কবুতর এসে বসেছে রেলিংয়ে, এইটাকে দেখে এসেছে আরেকটা। এসেছে খাওয়ার লোভে, প্রায়ই আমি এখানে বসে ওদেরকে চাল খাওয়াই; ওরা রেলিংয়ে বসে আমার হাত থেকে চাল খায়। আমি কৌশলে আস্তে আস্তে হাত টেনে আনলে ওরা গ্রিলের ফাঁক গলে আমার কোলের মধ্যেও চ’লে আসে। বারবার ঘাড় নেড়ে নেড়ে আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে, এর অর্থ - জানতে চাইছে, খাবার কই! আমি উঠে গিয়ে আমার খাটের নিচে ওদের জন্য রাখা মোটা চালের পাত্র থেকে একমুঠো চাল এনে ওদেরকে খাওয়াতে শুরু করলাম। 

মনটা ভাল নেই, মেজাজটাও চড়ে আছে; আর মন ভাল না থাকলে বা মেজাজ চড়ে থাকলে আমি পশুপাখি-গাছপালা-নদীনালার সাথে সময় কাটাই; ওরা মন ভাল ক’রে দেয়। এই মন ভাল না থাকা আর মেজাজ চড়ে থাকার কারণ সাতসকালে বাবার সাথে ঝগড়া হয়েছে। ঝগড়ার কারণ - আমার একটি লেখা। গতকাল জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ফিহেনহাইমের একটি সিনেমা কমপ্লেক্সে মুখোশ পরা এক বন্দুকধারীর হামলায় পঞ্চাশজন আহত হয়েছে। জার্মানিতে এই হামলা নতুন নয়, এর আগেও বেশ কয়েকবার হামলা হয়েছে এবং যথারীতি হামলাকারী হয় আফ্রিকা নয়তো মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান। কেবল জার্মানিতে নয়; ফ্রান্স, বেলজিয়াম, আমেরিকাতেও হামলা চালাচ্ছে ইসলামী জঙ্গিরা। এই তো সপ্তাহ দুয়েক আগেও মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় সমপ্রেমীদের একটি নৈশক্লাবে এক বন্দুকধারীর হামলায় ঊনপঞ্চাশ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। গত বছর জানুয়ারিতে মুহাম্মদকে নিয়ে কার্টুন প্রকাশের কারণে ফ্রান্সের ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি এবদোর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে বারোজনকে হত্যা করে আইএস জঙ্গিরা, এরপর থেকে ফ্রান্সে অন্তত ডজনখানেক হামলা হয়েছে। শরণার্থী বা মুহাজির মুসলমানদের এই হামলা বিষয়েই আমি এই লেখাটি ব্লগে প্রকাশ করেছি কাল রাতে -


মুহাজিরদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকড় ও ঐতিহাসিক সত্যতা
জার্মানীর ফিহেনহাইম শহরের সিনেমা কমপ্লেক্সে বন্দুকধারীর হামলায় পঞ্চাশজন আহত হলো আর এদিকে বাংলাদেশ নামক একটি মৌলবাদী রাষ্ট্রের ফেসবুকীয় শান্তি কমিটি শান্তির বাণী প্রচার শুরু করলো। যারা বলছেন. ইসলাম এই ধরনের হামলা বা হত্যার অনুমোদন দেয়নি; ইসলাম শান্তির ধর্ম, মানুষ খুন করতে বলেনি, ইসলাম রক্তপাতে বিশ্বাস করে না ইত্যাদি ধরনের মুখস্ত করা কথা এবং সবশেষে নিজের আসল রূপটিও প্রকাশ করছেন এই ব’লে যে, এর জন্য পশ্চিমাদের মুসলিম বিদ্বেষ দায়ী; আমার এই লেখাটি তাদের জন্য। যে বন্দুকধারী জার্মানীতে হামলা চালিয়েছে বা যারা ইউরোপ-আমেরিকায় একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তারাই মুহাম্মদের প্রকৃত অনুসারী, আপনি বা আপনারা নন। গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে যেসব মুসলমান জীবন বাঁচাতে জল-স্থলের বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢুকেছে, আমরা তাদের বলি শরণার্থী, ইসলামের ভাষায় তারা মুহাজির। ইউরোপের অনেক দেশই যখন মুসলমানদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা চিন্তা ক’রে মুহাজিরদের জন্য দরজা বন্ধ ক’রে দিয়েছে, তাদের সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে, সীমান্তের কোথাও কোথাও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মুহাজিরদের সংঘর্ষও হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে; তখন এই মুহাজিরদেরকে বিশ্বাস ক’রে তাদের জন্য জার্মানীর দরজা খুলে দিয়ে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল জার্মান সরকার। লক্ষ লক্ষ মুহাজিরকে তারা আশ্রয় দিয়েছে, খেতে-পরতে দিয়েছে। সাধারণ জার্মানরাও যে যেভাবে পেরেছে সাহায্য করেছে মুহাজিরদের, স্কুলবালক-বালিকারাও তার পানির বোতলটি বাড়িয়ে দিয়েছে মুহাজির বালক বা বালিকার দিকে। কিন্তু এই ভালবাসার বিপরীতে জার্মানরা কয়েক মাসের মধ্যেই পেয়েছে আঘাত; মুহাজিররা প্রথমে জার্মানদের জিনিসপত্র চুরি করতে শুরু করে, যদিও জার্মান সরকার তাদের ভরণপোষণের ভার নিয়েছে এবং কিভাবে তাদের জীবনযাত্রার মান আরো উন্নত করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। মুহাজিররা শুধু চুরিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও ব্যাপারটা না হয় মানা যেত, কিন্তু এরপর তারা যা শুরু করেছে, তা কেবল কোনো বেঈমান-নিমকহারাম এবং নির্বোধ জাতিই করতে পারে। তারা জার্মানদের ওপর ছুরি চালিয়েছে, জার্মান নারীদেরকে যৌন নিপীড়ন করেছে, গুলি-বোমাবাজি ক’রে মানুষ মারতে শুরু করেছে। সঙ্গত কারণেই সাধারণ জার্মান নাগরিকরা এখন মুহাজিরদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তারা মুহাজিরদেরকে ঘৃণা করতে এবং সন্ত্রাসী ভাবতে শুরু করেছে; তাদের বুকের ভেতরের ভালবাসার চারাগাছটি ডালডালা মেলে আরো বিস্তৃত হওয়ার আগেই মুহাজিরদের বিশ্বাসঘাতকতার বিষের প্রভাবে তা শুকিয়ে ম’রে যেতে শুরু করেছে। ফ্রান্সের চিত্রও একই। আর এদিকে বহু দূরের বাংলাদেশে বসে হামলাকারীদের কওমের ভাই-বোনেরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাচ্ছে যে, ইউরোপিয়ানরা বর্ণবিদ্বেষী-ইসলামবিদ্বেষী, শ্বেতাঙ্গদের বিদ্বেষের শিকার হয়ে ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ হামলা চালাচ্ছে। আইএস হামলার দায় স্বীকার করলে সেটার ব্যাপারে বাংলাদেশী কওমের ভাই-বোনেরা অনেকেই উচ্ছ্বসিত, আবার অনেকে বলছে, এর সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই, আল্লাহ্ বা নবী এমন হামলার আদেশ দেননি! হামলাকারীদের এই কওমের ভাই-বোনেরা জেনে বা না জেনে অর্ধেক সত্য আর অর্ধেক মিথ্যা বলছে; সত্য হলো আল্লাহ আদেশ দেননি, কেননা আল্লার তো কোনো অস্তিত্বই নেই। আর যার অস্তিত্ব নেই, সে কি ক’রে আদেশ দেবে, কোরান তো মুহাম্মদের প্রলাপ; আর মিথ্যা হলো - নবী আদেশ দেননি, ইতিহাসের সত্য হলো - নবী আদেশ দিয়েছেন যা কওমের ভাই-বোনেরা সর্বদাই অস্বীকার করে। ফলে কওমের ভাই-বোনদের মিথ্যাচারের জবাব দিতে এবং মুহাজিরদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঐতিহাসিক শেকড় ও ইতিহাসের সত্যতা খুঁজতেই আমার এই লেখা। এই যে মুহাজির হয়েও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানরা ইউরোপ-আমেরিকার অধিবাসীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, এটা মুসলমানদের জন্য নতুন কিছু নয়; চোদ্দশো বছর আগেই এর সূচনা হয়েছিল। চলুন, কওমের ভাই-বোনেরা, আমরা একটু চোদ্দশো বছর আগের ইয়াসরিব নগর অর্থাৎ বর্তমানের মদিনা থেকে ঘুরে আসি। যেহেতু মুহাম্মদের কুকীর্তির কথা এই ছোট্ট লেখায় তুলে ধরা সম্ভব নয়, তাই শুধু মদিনায় মুহাজির হিসেবে অবস্থানের সময়ের কয়েকটি হামলার কথা তুলে ধরে অতীতের সঙ্গে বর্তমানের সেতুবন্ধনটি খোঁজার চেষ্টা করবো। 
৬২২ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে মুহাম্মদ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, তার হিজরতের আগে-পরে আরো কিছু নব্য মুসলমান মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিল তাঁরই প্ররোচনায়। মুহাম্মদ এবং তাঁর অনুসারীদেরকে মদিনার আনসার অর্থাৎ মদিনানিবাসী নব্য মুসলমানরা আশ্রয় দিয়েছিল। মুহাম্মদের মদিনায় হিজরতের ব্যাপারে মুসলমানদের আরেকটি মিথ্যাচার হলো, কোরাইশদের হাত থেকে বাঁচতে তিনি মদিনায় পালিয়েছিলেন। কথাটা যে সত্য নয়, তা কোরানের মধ্যেই নিহিত আছে - ‘আর যে-কেউ আল্লাহ্’র পথে দেশত্যাগ করবে সে পৃথিবীতে বহু আশ্রয় ও প্রাচুর্য লাভ করবে। আর যে-কেউ আল্লাহ্ ও রসুলের উদ্দেশে দেশত্যাগী হয়ে বের হয় আর তার মৃত্যু ঘটে তার পুরস্কারের ভার আল্লাহর ওপর। আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা নিসা-৪:১০০)। মদিনায় হিজরতে অনিচ্ছুক মুসলিমদেরকে বোঝাতেই মুহাম্মদকে এই আয়াত নাজিলের কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছিল। তাছাড়া কোরাইশরা তাদের ধর্ম এবং সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল থাকলেও তারা সহিষ্ণু ছিল বলেই নবুওতির পর থেকে তেরো বছর মুহাম্মদ তাদেরকে নানাভাবে উত্যক্ত করা সত্ত্বেও তারা তাঁকে হত্যা করেনি। মুহাম্মদ তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নিতে এবং ইসলাম গ্রহণের জন্য কোরাইশদের প্রতি চাপ দিতেন, কাবাঘরের দখল চাইতেন, বহুঈশ্বরবাদী কোরাইশদের দেবদেবী এবং তাদের সনাতন রীতিনীতি নিয়ে কটাক্ষ করতেন, তাদেরকে আল্লাহ্’র শাস্তির ভয় দেখাতেন এবং তাদের পূর্বপুরুষগণ আল্লাহ্’র শাস্তি ভোগ করছে ব’লে জানাতেন। ফলে অতিষ্ঠ হয়ে কোরাইশরা একদিন সমবেত হয়ে মুহাম্মদের দ্বারা তাদের এইসব উৎপীড়নের বিষয়ে আলোচনা করছিল। মুহাম্মদ পাশেই ছিলেন, তিনি তখন কোরাইশদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘হে কোরাইশগণ, আমি অবশ্যই সুদসহ এর প্রতিশোধ নেব।’ 
বিরক্ত কোরাইশরা মুহাম্মদ এবং তার অনুসারীদেরকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে (৬১৭-৬১৯) নিষিদ্ধ করে, যা তারা দুই বছরের মাথায় তুলেও নেয়। 
মুহাম্মদ হিজরত করেছিলেন স্বেচ্ছায়, তার প্রত্যাশা অনুযায়ী কোরাইশদেরকে ইসলামে দীক্ষিত করতে না পেরে। তাছাড়া মুহাম্মদ এর পূর্বেও ৬২০ খ্রিষ্টাব্দে একবার মদিনায় হিজরতের চিন্তা করেছিলেন, কিন্তু তখন মদিনার আনসাররা তাকে নিরস্ত করেছিল এই ব’লে যে, মদিনায় তার হিজরতের পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি; কেননা তখনো পর্যন্ত মদিনায় আনসারদের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। 
মদিনায় হিজরতের পর মুহাম্মদ এবং অন্য মুহাজিররা গভীর সংকটের মুখে পড়ে। কারণ, তাদের না ছিল নিজস্ব আশ্রয়, না ছিল রুটি-রুজির ব্যবস্থা; খাদ্য এবং আশ্রয়ের জন্য তারা নির্ভরশীল ছিল আনসারদের ওপর, যারা কাজ করতো ধনী ইহুদিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ক্ষেত-খামারে। প্রথমদিকে মক্কা এবং মদিনার ইসলামগ্রহণকারীদের সবাই ছিল বহুঈশ্বরবাদী, সমাজের নিচুস্তরের দরিদ্র এবং উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবের মানুষ। ইহুদিরাও মদিনার আদি বাসিন্দা নয়, তারা বহু বছর আগে এসেছিল মক্কা-মদিনা থেকেও তুলনামুলক সভ্য জনপদ সিরিয়া এবং ফিলিস্তিন থেকে; কিন্তু বংশ পরম্পরায় দীর্ঘকাল বসবাস করার দরুন তারা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গিয়েছিল। শুরুতে ইহুদিদের সঙ্গে মুহাম্মদের কোনো বিরোধ ছিল না। বরং মুহাম্মদ ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ এবং রীতিনীতির প্রশংসা করতেন। নবুওতির আগে-পরে তিনি বহুবার ইহুদিদের মন্দির ‘সিনাগগ’-এ গেছেন, ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ ‘তাউরাত’ শ্রবণ করেছেন এবং তাদের কাছ থেকে ধর্মীয় এবং ইহুদি রীতিনীতির ব্যাখ্যা জেনেছেন। তিনি মক্কায় থাকাকালীন বাইবেল শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ‘বেথ-হা মিদ্রাস’-এও যেতেন। ফলে ইহুদি এবং খ্রিষ্টান ধর্ম দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছেন; কেবল ইহুদি বা খ্রিষ্টান ধর্ম নয়, আববের বহুঈশ্বরবাদী বিভিন্ন ধর্মীয় গোত্রের রীতিনীতি দ্বারাও তিনি প্রভাবিত হয়েছেন এবং তা ইসলামে গ্রহণও করেছেন; যার প্রতিফলন কোরান এবং হাদিসে দেখা যায়। বস্তুত কোরান কোনো মৌলিক-অলৌকিক গ্রন্থ নয়, আরবের বিভিন্ন ধর্ম এবং গোত্রের রীতিনীতির মিশ্রণে এটা মুহাম্মদের লৌকিক গ্রন্থ। মুহাম্মদ মদিনার ইহুদিদেরকে ইসলাম গ্রহণ এবং নবী হিসেবে তাকে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানালেও কোরাইশদের মতো তারাও তা প্রত্যাখান করে। বর্তমানে আমাদের চারপাশেও তো কতো ভণ্ড সাধু-সন্ন্যাসী, পীর-ফকির কিংবা মানসিক রোগী ঘুরে বেড়ায়; যারা নিজেকে ঈশ্বর বা আল্লার খুব ঘনিষ্ঠজন মনে করে এবং আমাদেরকে তাদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করার আহ্বান জানায়, তাই ব’লে আমরা সবাই তো আর নিজেদের বিশ্বাস এবং আদর্শ ছেড়ে তাদের আদর্শ এবং শিষ্যত্ব গ্রহণ করি না; কেউ কেউ হয়তো করে। মদিনার ইহুদিরা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, দৈনন্দিন কাজ-কর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতো; ফলে কোথাকার কোন মুহাম্মদ নিজেকে আল্লাহ্’র নবী দাবি ক’রে ইসলাম নামক একটি নতুন ধর্ম প্রতিষ্ঠিত এবং প্রচার করতে চায়, তাতে তাদের কিছু আসতো যেতো না। ইহুদিদের দলে ভেড়াতে কোরান নাজিল করলেও ইহুদিরা তা ভ্রান্ত মতবাদ ব’লে উড়িয়ে দিয়েছে, যেমনটা কোরাইশরা উড়িয়ে দিয়েছিল পাগলের প্রলাপ ব’লে। তবে মদিনার বহুঈশ্বরবাদীদের অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে, বিশেষত এটা বহুলাংশে বেড়ে যায় নাখলা হামলা এবং বদর যুদ্ধের পর লুণ্ঠিত ধন-সম্পদের লোভে। 
মদিনায় মুহাম্মদ এবং তার অনুসারী মুহাজিরদের মাসের পর মাস কেটে গেলেও তারা কোনো সুবিধাজনক রোজগারের পথ খুঁজে পাচ্ছিল না, এভাবে মাসের পর মাস চলতে থাকলে মুহাম্মদের অনুসারীরা হতাশ হয় এবং তার নবুওতির ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে। মুহাম্মদ মক্কায় থাকতে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, আল্লাহ্ তাদেরকে বহু আশ্রয় এবং প্রাচুর্য দেবে, কিন্তু বাস্তবতা হলো দুটো রুটির জন্যও তাদেরকে আনসারদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো; মুহাম্মদ আল্লাহ্’র কাছ থেকে তাদের জন্য কোনো অলৌকিক সুবিধা এনে দিতে পারেননি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মুহাম্মদ তখন আবার কোরানের আয়াত নাজিলের কৌশল অবলম্বন ক’রে অনুসারীদের সন্দেহ দূর করার চেষ্টা করেন এবং এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে থাকেন। অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নেন সিরিয়া থেকে মক্কায় প্রত্যাবর্তনরত কোরাইশদের বাণিজ্য কাফেলায় হামলা ক’রে তাদের মালামাল লুণ্ঠন করার। তবে তার এই সিদ্ধান্তে অনুসারী মুহাজিররা আরো হতাশ হয়ে পড়ে এবং তারা কোরাইশদের বাণিজ্য কাফেলায় হামলা চালাতে অনীহা প্রকাশ করে, কেননা কোরইশরা তাদেরই আত্মীয়-স্বজন। কিন্তু চতুর মুহাম্মদ আবারো কোরানের আয়াত নাজিলের কৌশল অবলম্বন ক’রে তার অনুসারীদের রাজি করান এবং তাদের মনোবল বৃদ্ধি করেন। মদিনায় হিজরতের আট মাস পর ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে মুহাম্মদের নির্দেশে তার অনুসারীরা প্রথম হামলা চালায় কোরাইশদের বাণিজ্য কাফেলায়, কিন্তু হামলাটি ব্যর্থ হয়। এরপর তারা পর্যায়ক্রমে আরো পাঁচটি হামলা চালায়, যার সর্বশেষ তিনটির নেতৃত্ব দেন স্বয়ং মুহাম্মদ; কিন্তু তাদের পাঁচটি হামলাই ব্যর্থ হয়!
এর পরের বছর ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে মুহাম্মদের নির্দেশে আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাসের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি দল নাখলা নামক স্থানে নাটকীয় ছলনার মাধ্যমে কোরাইশদের বাণিজ্য কাফেলায় হামলা চালায়। পূর্বের হামলাগুলো ব্যর্থ হওয়ায় সতর্ক মুহাম্মদ গোপনীয়তা রক্ষার্থে হামলার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগ মুহূর্তে জাহাসের হাতে একটা চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, দু-দিনের পথ পাড়ি দেবার আগে সে যেন চিঠিটা না খোলে। জাহাস দু-দিন পর চিঠিটা খুলে দেখে তাতে নাখলায় অবস্থান এবং হামলার নির্দেশনা দেওয়া। নাখলা মদিনা থেকে নয় দিনের এবং মক্কা থেকে দুই দিনের দূরত্বের পথ। জাহাস তার দল নিয়ে নাখলায় পৌঁছে কোরাইশদের কাফেলার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। রজব মাস ছিল তখন, ওমরা পালনের সময়। আরব সংস্কৃতি অনুযায়ী রজব মাসে যুদ্ধ এবং রক্তপাত নিষিদ্ধ হলেও মুহাম্মদ তা উপেক্ষা করেই তার অনুসারীদের মালামাল লুণ্ঠনের জন্য পাঠিয়েছিলেন। সময়টা ছিল যেহেতু ওমরাহ পালনের, তাই জাহাসের দলের একজন মাথা ন্যাড়া করেছিল যাতে কোরাইশরা তাদেরকে ওমরাহ পালনকারী মনে ক’রে বিভ্রান্ত হয়! হয়েছিলও তাই, কাফেলাটি তাদেরকে ওমরাহ পালনকারী ধার্মিক দল ভেবে অসতর্কভাবে কাছে আসতেই তারা অতর্কিত হামলা চালায়; কাফেলার একজন পালিয়ে গেলেও বাকি তিনজনের একজনকে খুন এবং অন্য দু’জনকে বন্দী ক’রে মদিনায় নিয়ে আসে, সঙ্গে লুণ্ঠিত মালামাল। এই বন্দী দু’জনের মুক্তিপণ বাবদও অর্থ আদায় করে কোরাইশদের কাছ থেকে। লুণ্ঠিত মালামাল এবং মুক্তিপণের অর্থ পেয়ে মুহাম্মদ আর তার অনুসারীদের জীবনযাত্রার মান কিছুটা উন্নত এবং ইসলাম প্রচারে সুবিধা হয়। আধুনিককালে এটাকে বলা হয় ডাকাতি এবং অপহরণের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন। অনেকটা এই ঘটনাটির মতোই একটি ঘটনা গতবছর আমাদের দেশেও ঘটেছে। আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারে একদল ডাকাত ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়েছিল; ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, নিরাপত্তাকর্মী, গণম্যান এবং একজন গ্রাহককে গুলি ক’রে হত্যা এবং ব্যাংক লুট করে তারা; এরপর ডাকাতরা পালানোর সময় জনতা তাদের ধাওয়া করলে তারা এলোপাথাড়ি গুলি এবং বোমা ছুড়তে ছুড়তে পালানোর চেষ্টা করে, ডাকাতদের গুলি এবং বোমার আঘাতে চারজন নিহত হলেও জনতার হাতে দু’জন ডাকাত আটক ও গণধোলাইয়ে একজন মারা যায়। এরপর আটকৃত দু’জনের তথ্যে ডাকাত দলের বাকি সদস্যদের গ্রেফতার করা হয় এবং পুলিশি তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসে কেউটে! ডাকাতরা আসলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী জঙ্গী সংগঠন ‘জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’র (জেএমবি) সদস্য; তারা নিজেদের জীবনযাপন এবং বাংলাদেশে শতভাগ ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার অর্থ সংগ্রহের জন্য ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়েছিল। এই ডাকাত দল অর্থাৎ জেএমবি সদস্যদের উদ্দেশ্য আর মুহাম্মদ ও তার অনুসারীদের উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, জেএমবি’র এই সদস্যরা তাদের নবীজির জীবন থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছিল এবং নবীজিকেই অনুসরণ করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই জেএমবি সদস্যদের, তারা আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার যাঁতাকলে পড়েছে, ফলে গত মে মাসে তাদের ছয়জনের ফাঁসি, একজনের যাবজ্জীবন এবং দুই জনের তিনবছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত; যা মুহাম্মদের ক্ষেত্রে হয়নি। 
নাখলা হামলার পর হয় সেই কুখ্যাত বদর যুদ্ধ, মুসলমানদের কাছে অবশ্য বিখ্যাত; কিন্তু সকল মানবতাবাদী, নিপীড়িত জনগণের পক্ষের মানুষের কাছে এটা কুখ্যাত যুদ্ধই হওয়া উচিত। নাখলা হামলার দুই মাসের মাথায় অর্থাৎ মার্চ মাসে মুহাম্মদ জানতে পারেন যে, মক্কার কোরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান বিন হারবের নেতৃত্বে বেশ বড় একটি বাণিজ্য কাফেলা সিরিয়া থেকে মক্কা ফিরছে। তখনই তিনি সেই কাফেলা আক্রমণ ক’রে মালামাল লুণ্ঠনের সিদ্ধান্ত নেন এবং সাড়ে তিনশো অনুসারীকে সঙ্গে নিয়ে পানির কূপসমৃদ্ধ বদর নামক মরুদ্যানে কাফেলাটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এরই মধ্যে আবু সুফিয়ানের কাছে মুহাম্মদের এই ষড়যন্ত্রের কথা পৌঁছে যায়। তিনি এই দুঃসংবাদটি জানিয়ে দমদম বিন আমর আল গিফারিকে দ্রুত মক্কার উদ্দেশে পাঠান, যাতে মক্কার কোরাইশরা এসে মুহাম্মদ ও তার বাহিনীর হাত থেকে কাফেলা রক্ষা করতে পারে। আর উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে তিনি কাফেলা নিয়ে বদরের পথে না গিয়ে লোহিত সাগরের ধার দিয়ে সতর্কতার সাথে এবং নিরাপদে মক্কায় পৌঁছে যান। কিন্তু তার পৌঁছার আগেই দুঃসংবাদ শুনে মক্কা থেকে সাতশ (মতান্তরে হাজার) কোরাইশের একটি দল কাফেলাটি উদ্ধারের জন্য বদরের পথে রওনা হয়ে যায়। 
এদিকে বদরে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা মুহাম্মদ জানতেন না যে, আবু সুফিয়ান অন্য পথে মক্কা পৌঁছে গেছে। তিনি নিজের সৈন্যদের জন্য তাদের তাঁবুর কাছে একটি পানির কূপ রেখে অবশিষ্ট পানির কূপগুলো বালি দিয়ে বন্ধ ক’রে দেন যাতে কাফেলার কোরাইশরা পানি খেতে না পারে, ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত থাকে। সফল হয়েছিল মুহাম্মদের এই ধূর্ত ও নিষ্ঠুর পরিকল্পনা, মক্কা থেকে আগত কাফেলা উদ্ধারকারী দলটি মরুপথ পাড়ি দিয়ে যখন বদরে পৌঁছায়, তখন তারা ক্লান্ত- তৃষ্ণার্ত ছিল; পানির কূপ বালিপূর্ণ থাকায় তাদের তৃষ্ণা নিবারণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ভোররাতে মুহাম্মদ আবু সুফিয়ানের কাফেলা মনে ক’রে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত কোরাইশদের উদ্ধারকারী দলটির ওপর নির্মমভাবে হামলা চালায়। দু'পক্ষে তুমুল সংঘর্ষ হয়, সংখ্যায় দ্বিগুণ কিংবা তারও বেশি থাকা সত্ত্বেও তৃষ্ণার্ত থাকায় কোরাইশরা যুদ্ধে হারতে থাকে, এবং এক পর্যায়ে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। যুদ্ধে কোরাইশ গোত্রের পঞ্চাশজন নিহত হয় এবং আরো প্রায় পঞ্চাশজন বন্দী হয়, পরবর্তীতে মুহাম্মদের নির্দেশে বন্দীদের অনেককেই হত্যা করা হয়। অন্যদিকে এই যুদ্ধে মুহাম্মদের বাহিনীর মাত্র পনেরজন নিহত হয়। 
এই যুদ্ধ মুহাম্মদকে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ক’রে তোলে এবং তিনি তার অনুসারীদেরকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, স্বয়ং আল্লাহ্’র ফেরেশতা তাদের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন, নইলে এই যুদ্ধে কোনোভাবেই তারা কোরাইশদের সঙ্গে পেরে উঠতেন না। আর এরপরই তার এই আত্মবিশ্বাসের খড়গ নেমে আসে মদিনার ইহুদিদের ওপর। প্রথমেই তিনি এক তুচ্ছ ঘটনায় পুরো বানু কাইনুকা গোত্রকে মদিনা থেকে উচ্ছেদ করেন। বানু কাইনুকা গোত্রের এক তরুণ নাকি মুসলিম এক মেয়েকে উত্যক্ত করেছিলেন, এমনও হতে পারে যে, তরুণ মেয়েটির প্রেমে পড়েছিল এবং প্রেম নিবেদন করেছিল। ইসলাম ধর্মে তো প্রেমও নিষিদ্ধ! এই উত্যক্ত অথবা প্রেম নিবেদনের অপরাধে একজন মুসলিমের হাতে তরুণ খুন হয়। খুনি মুসলিমকে আবার খুন করে একজন ইহুদি। এই অপরাধে মুহাম্মদ পুরো বানু কাইনুকা গোত্রকে ঘেরাও করে, টানা পনেরদিন অবরোধের পর ইহুদিরা আত্মসমর্পণ করে। মুহাম্মদ ইহুদি পুরুষদের বন্দী করার নির্দেষ দিলে ইহুদিদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন খাজরাজ গোত্রের প্রভাবশালী নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে ওবাই। অনেক তর্ক-বিতর্কের পর মুহাম্মদ ওবাইয়ের প্রভাবের কথা চিন্তা ক’রে ইহুদিদের হত্যার বদলে তাদেরকে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধন-সম্পদ রেখে মদিনা ত্যাগের জন্য তিনদিনের সময় বেঁধে দেন; আর ইহুদিদের ধন-সম্পদ গণিমতের মাল হিসেবে নিজেদের মধ্যে ভাগ ক’রে নেন। 
ইহুদি উচ্ছেদের সেই শুরু, এরপর তিনি বানু নাদির গোত্রকে উচ্ছেদ করেন; আর সর্বশেষ বানু কোরাইজা গোত্রের ওপর গণহত্যা চালিয়ে মদিনা ইহুদিশূন্য করেন। বানু কোরাইজা হত্যাকাণ্ড ছিল নির্মম, নৃশংস এবং রোমহর্ষক! বাজারের কাছে একটি পরিখা খনন ক’রে বানু কোরাইজা গোত্রের হাতবাঁধা আটশো থেকে নয়শো সাবালক পুরুষের শিরোশ্ছেদ ক’রে দেহগুলো পরিখার মধ্যে ফেলা হয়। মুহাম্মদ নিজে বানু কোরাইজার দু’জন নেতার শিরোশ্ছেদ করেন। উঠতি বয়সী ছেলেদের পরনের কাপড় খুলে তাদের গোপনাঙ্গের লোম পরীক্ষার মাধ্যমে সাবালকত্ব নির্ধারণ করা হয়। আর বানু কোরাইজার শিশু-নারী এবং ধন-সম্পদ গণিমতের মাল হিসেবে নিজেদের মধ্যে বণ্টন ক’রে নেন। 
বানু কোরাইজার গণহত্যা ১৯৭১ সালে আমাদের দেশে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ অন্যান্য গণহত্যার কথা মনে করিয়ে দেয়। ঠিক একইভাবে পরিখা খনন ক’রে গুলি এবং জবাই ক’রে বুদ্ধিজীবী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ তার ভেতর ফেলা হতো, দূর-দূরান্ত থেকে ট্রাকবোঝাই লাশ এনে ফেলা হতো পরিখার ভেতরে। কোথাও মাটি ফেলে ভরাট করা হতো পরিখা, কোথাওবা ওভাবেই ফেলে রাখা হতো, শিয়াল-কুকুর আর পশু-পাখিতে খেতো লাশ! একাত্তর সালের এই গণহত্যা চালানো হয়েছিল অখণ্ড মুসলমান রাষ্ট্র রক্ষার নামে, আল্লার জমিন রক্ষার নামে!
আমাদের বাংলাদেশেও অনেক মুহাজির আছে এবং এখনো আসছে, এরা অতীতে রক্তপাত ঘটিয়েছে। পাকিস্তান আমলে ভারত থেকে আগত বিহারী মুহাজিররা পশ্চিম পাকিস্তানের ইন্ধনে হিন্দু নিধনযজ্ঞে নেমেছিল ১৯৬৪ সালে; অকাতরে তারা খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন করেছিল। এরপর এই বিহারী মুহাজিররা আবার গর্জে ওঠে ১৯৭১ সালে, এবার আর শুধু হিন্দু নয়, মুসলমানরাও রেহাই পায়নি তাদের হাত থেকে। মুহাজিরদের হাতে মুসলমান নিধনের ঘটনা হয়তো বিশ্বে এটাই প্রথম। আজও আমাদের দেশে মুহাজিররা হামলা চালায়, রোহিঙ্গা মুহাজির। চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজারে সুযোগ পেলেই তারা হামলা চালায় আমাদের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলির ওপর। মুসলমান-মুসলমান ভাই-ভাই তত্ত্বে বিশ্বাসী রোহিঙ্গা মুহাজির আর কিছু বাঙালি মৌলবাদী মুসলমান হাতে হাত মিলিয়ে একসাথে চালায় আদিবাসী নিপীড়ন। কেবল আদিবাসী নিপীড়ন নয়, সুযোগ পেলে এই সম্মিলিত সাম্প্রদায়িক জোট হিন্দু-বৌদ্ধদের ওপরও হামলায় চালায়। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে এই সম্মিলিত সাম্প্রদায়িক জোট হামলা চালিয়েছিল কক্সবাজারের রামু, উখিয়া এবং চট্টগ্রামের পটিয়ার বৌদ্ধমন্দির এবং বৌদ্ধপল্লীতে। এক ডজনের বেশি বৌদ্ধ মন্দির এবং অনেকগুলো বৌদ্ধপল্লীতে ভাঙচুর করেছিল, আগুনে পুড়িয়ে ছাই ক’রে দিয়েছিল। 
মুহাজিররা পৃথিবীর নানা প্রান্তে যেখানেই গেছে, সেখানেই ধর্মের নামে কম-বেশি রক্তপাত ঘটিয়েছে এবং এখনো ঘটিয়ে চলেছে। ফলে আজকে যে মুহাজিররা ইউরোপ-আমেরিকায়-অষ্ট্রেলিয়ায় হামলা চালাচ্ছে, বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে হামলা চালাচ্ছে, এর শিকড় প্রোথিত সেই সুদূর অতীতে মদিনার জমিনে। মুসলমানরা স্বীকার করুক বা না করুক, ঐতিহাসিক সত্য হলো এই হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, নিপীড়ন, নিগ্রহ আর রক্তপতের বীজটি রোপন করেছিলেন স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ, কোটি কোটি ধর্মান্ধ মানুষের প্রাণের নবী।
এই লেখাটি নিয়েই সাতসকালে বাবার সাথে আমার ঝগড়া হলো। বাবা ব্লগ-ফেসবুক ব্যবহার করেন না, ইন্টারনেট দুনিয়ার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই; মা’রও না। সঙ্গত কারণেই আমি ব্লগ কিংবা ফেসবুকে কী লিখি, তা তাদের জানার কথা নয়, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আমি ইসলাম ধর্ম নিয়ে যা-ই লিখি, তার খবর তাদের কাছে চ’লে আসে; অন্য কোনো ধর্ম নিয়ে লিখলে আসে না। শুধু যে ওপর ওপর একটা খবর আসে, তা নয়; কী লিখি, কাকে নিয়ে লিখি, কখন পোস্ট করি এসব বিষয়ে একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর পায় তারা। বেশ কয়েক মাস যাবৎ এই উপদ্রব চলছে আমার মানসিক শান্তি নষ্ট করার জন্য। খবরগুলো এতো দ্রুত আর এতো নিখুঁতভাবে আসে যে, আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, এটা ছোট আপুর কাজ। পরে এই বিষয়ে ছোট আপুর সাথে কথা ব’লে নিশ্চিত হয়েছি যে, বাসায় অশান্তি হবে জেনে ও এ কাজ করে না, তবে আমাকে অনুরোধ করেছে এসব বিষয়ে না লেখার জন্য। এরপর আমার সন্দেহ হয় ফাহাদ, মালিহা, রাইদাহকে নিয়ে। মালিহা করে না, সে ব্যাপারেও আমি নিশ্চিত হওয়ার পর রাইদাহ আর ফাহাদকে আমি ব্লক করেছি; নাদিয়া আপু আর আবিদ ব্যতিত আমাদের সব আত্মীয়স্বজনকে আমি ব্লক করেছি। তারপরও বাসায় খবর আসে। নিশ্চয় অন্য কোনো আইডি থেকে কেউ আমাকে ফলো করে আর তথ্য পাঠায় বাবা-মা’র কাছে। 

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সবে নাস্তা করতে বসেছি, অমনি বাবা আমাকে চেপে ধরেছে লেখার প্রসঙ্গ তুলে। আমার তো অস্বীকার করার প্রশ্নই আসে না। বাবার প্রশ্নের জবাবে আমি বলেছি, ‘হ্যাঁ, লিখেছি।’

বাবা হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন, ‘নবীজিকে নিয়ে উল্টা-পাল্টা কথা কেন লিখেছিস।’

‘বাবা, আস্তে কথা বলো, আমি তো বয়রা নই।’

‘কেন আস্তে বলবো, তুই নবীজিকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা কেন লিখলি?’

চিবোনো পাউরুটি গলাধঃগরণ ক’রে আমার শান্ত উত্তর, ‘আমি উল্টাপাল্টা কিছু লিখিনি বাবা। একটা লাইনও মিথ্যা লিখিনি, যা সত্য, তাই-ই লিখেছি।’ 

‘সত্য লিখেছিস, আমি পড়ি নাই কী লিখেছিস তুই! সব বানানো মিথ্যে কথা, নবীজি আর ইসলামকে হেয় করার জন্য তুই এসব লিখিস।’ 

নিজের ঘর থেকে দাদীর ফোঁড়ন, ‘আল্লাহ্ আছে, আল্লাহ্ সব দ্যাখতাছে। নবীজিরে লাইয়া খারাপ কিছু কইলে আল্লাহ্’র হাত থেইকা তার রেহাই নাই!’

বাবার উদ্দেশে বললাম, ‘বাবা, বাসায় তোমাদের কোনো বিষয়ে তো আমি অসুবিধা করি না, আমার লেখালেখি নিয়ে তোমরা কেন মাথা ঘামাও। এইসব খবর তোমাদেরকে কে দেয়?’ 

‘সে যে-ই দিক, মিথ্যা তো দেয় নাই। তুই কেন করিস এসব, আমাদের একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না! তোকে জন্ম দিয়ে কি এতোই অপরাধ ক’রে ফেলেছি।’

‘তুমি একটু ইসলামের ইতিহাস পড়ে দেখ, তাহলেই বুঝতে পারবে যে, আমি কিছুই বানিয়ে লিখিনি।’

‘তুই পড় ওইসব কাফেরদের লেখা, আমার পড়ার দরকার নাই। ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ক’রে ইসলামকে হেয় করার জন্যে কাফেররা ওইসব ছাইপাঁশ লেখে আর তোর মতো নির্বোধ গাধা সেগুলো পড়ে।’

‘আমি যা লিখেছি, তাতে নতুন কিছু নেই, আর তুমি যাদের কাফের বলছো, সেই অমুসলিমরা ওসব কথা লেখেনি, তারা অনুবাদ করেছে মাত্র। মুহাম্মদের বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে ওইসব ইতিহাস লিখে গেছেন মুসলমানরাই।’ 

‘কোনো মুসলমানের সন্তান এইসব মিথ্যা ইতিহাস লিখতে পারে না। আল্লাহ্’র আদেশ ছাড়া নবীজি কোনো কাজ করেননি। নবীজির মতো দয়ালু আজ অব্দি পৃথিবীতে জন্ম নেয় নাই, কোনোদিন জন্মাবেও না।’ 

‘বাবা, তুমি নিজেই মুহাম্মদের চেয়ে অনেক বেশি দয়ালু, আমি যদি মুহাম্মদের সময়ে তার সঙ্গে তার ধর্ম নিয়ে এভাবে তর্ক করতাম, তাহলে আমি তার পুত্র হলেও এতোক্ষণে তিনি আমার শিরোশ্ছেদ করতেন। কিন্তু আমি নিশ্চিত, তুমি আমাকে তো নয়ই, এমনকি কেউ যদি আমাকেও খুন করে, তুমি সেই খুনিকেও খুন করতে পারবে না।’ 

গর্জে উঠলেন বাবা, ‘মুখ সামলে কথা বল, নবীজি কি বাজারের কসাই যে, শিরোশ্ছেদ করবে?’

‘কসাই পেটের দায়ে পশুহত্যা ক’রে বাজারে মাংস বিক্রি করে; কিন্তু কখনোই সে মানুষ হত্যা করে না। তোমাদের নবীজি কসাই ছিলেন না; কসাইয়ের চেয়েও অনেক বেশি নির্মম, নিষ্ঠুর আর হিংস্র ছিলেন। আর তিনি নিজহাতে শিরোশ্ছেদও করেছিলেন।’ 

আমার কথা শেষ হওয়ামাত্র বাবা হুঙ্কার ছেড়ে টেবিলে রাখা পানিপূর্ণ জগে ঘুষি মেরে মেঝেতে ফেলে দিলেন। ছিটকে কিছুটা পানি আমার গায়ে পড়লো, পানিতে ভেসে গেল মেঝে আর জগ গড়াতে গড়াতে গিয়ে ধাক্কা খেলো রান্না ঘরের পানি ফুটানো কলসিতে। আমি আর কোনো কথা না ব’লে অবশিষ্ট এক পিস পাউরুটি প্লেটে রেখেই নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছি। আমি ঘরে আসার পরেও অনেকক্ষণ যাবৎ সম্মিলিত কথার ঝড় বইয়ে দিয়েছে বাবা, মা আর দাদী। এখন ঝড়টা থেমেছে। 

বাংলাদেশের মুসলমানরা প্রতিনিয়ত আমাকে অবাক করে! কিছু মুসলমান আছেন, যারা মুসলমানদের ইতিহাস পড়েন, জানেন; কিন্তু এই বিষয়ে একেবারেই বোবা হয়ে থাকেন। আর আমার বাবার মতো মুসলমানরা কখনো ইতিহাস পড়েন না, ইতিহাসের সত্য জানার চেষ্টা করেন না, সত্য ইতিহাস স্বীকারও করেন না; সত্য ইতিহাস তুলে ধরলে এরা "অমুসলিমদের ষড়যন্ত্র" তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। অথচ এই বইগুলো লিখে গেছেন আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জরির আল-তাবারি, মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক, হিশাম বিন মুহাম্মদ আল-কালবি, মুহাম্মদ আল-ওয়াকেদি’র মতো মুসলিম লেখকেরা; যারা গর্বের সঙ্গে মুহাম্মদের বীরত্বগাথা প্রকাশ করছেন, কোনো কুণ্ঠাবোধ করেননি। কেবল অমুসলিমরাই নন, অনেক মুসলিম লেখকও ইতিহাসের এই সত্য স্বীকার ক’রে এইসব গ্রন্থ অনুবাদের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। কিন্তু আমাদের এই উপমহাদেশের মুসলিমরা সর্বদাই এইসব ইতিহাস লুকোতে চায় এবং অস্বীকার করে। এমনকি ভারতবর্ষে মুসলিম আগ্রাসনের যে নৃশংস অধ্যায়, তাও এরা লুকোতে চায়। আমি নিশ্চিত, এরা এটা করে অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কাছে নিজেদের লজ্জা ঢাকবার জন্য; কিন্তু এরা বোঝে না যে, তাদের এই কথাগুলো মুসলিম ইতিহাসের কলঙ্কজনক ইতিহাস ঢাকবার এক ছেঁড়াফোঁড়া ব্যর্থ আবরণ মাত্র! আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যসব মুসলিম দেশগুলো এমনটা করে কি না, তা আমার জানা নেই। 

(চলবে) 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন