আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭

চিঠি হুমকি - ২: খসরু পারভেজ-এর প্রতিক্রিয়া ও নির্দেশ!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব-১৬৩): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – একশত সাঁইত্রিশ

লিখেছেন গোলাপ

(আগের পর্বগুলোর সূচী এখানে)

স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দামেস্কের শাসনকর্তা আল মুনধির বিন আল-হারিথ ও পারস্যের শাসনকর্তা 'কিসরার' কাছে যে চিঠি-হুমকি প্রেরণ করেছিলে,ন তার ভাষা কেমন ছিলো, সেই চিঠিগুলো পড়ার পর এই শাসকরা যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন, তা জানার পর মুহাম্মদ তাঁদেরকে কীভাবে অভিশাপ বর্ষণ করেছিলেন, তার আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।

প্রশ্ন হলো,
"বিনা উস্কানিতে যদি কোনো ব্যক্তি শাসকদের কাছে চিঠি লিখে ঘোষণা দেন যে 'আমার বশ্যতা স্বীকার করো, তাহলে তুমি হবে নিরাপদ', অতঃপর তাঁরা যখন সেই হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন, তখন সেই ব্যক্তিটি তাঁদের কে করেন অভিসম্পাত, তবে এই শাসকদের পক্ষ থেকে ঐ ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে?"

আল-তাবারীর (৮৩৮-৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ) অব্যাহত বিস্তারিত বর্ণনা: [1] [2] 

পূর্ব প্রকাশিতের পর:

‘ইয়াযিদ বিন আবি হাবিব হইতে প্রাপ্ত [ইবনে হুমায়েদ <সালামাহ < মুহাম্মদ ইবনে ইশাক <ইয়াযিদ বিন আবি হাবিব (পর্ব-১৬২)] তথ্যের ভিত্তিতে (মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের) অব্যাহত বর্ণনা, তিনি বলেছেন:

---- কিসরা তা পড়ার পর ছিঁড়ে ফেলেন ও বলেন, "আমার গোলাম হয়ে সে আমাকে এভাবে লেখে!" অতঃপর কিসরা ইয়ামেনের গভর্নর বাধান (Badhan) এর কাছে এক চিঠি লেখেন, নির্দেশ,

"তোমার লোকজনদের মধ্য থেকে দুই শক্তিশালী ব্যক্তিকে হিজাজের এই লোকটির কাছে পাঠাও ও তাকে আমার কাছে ধরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করো।"

অতঃপর বাধান পারস্য অধিপতির আদেশপত্রটি সহ খোররাখুসরাহ (Khurrakhusrah) নামের এক পারস্যবাসীর সাথে বাদাওয়াহ (Babawayh) নামের তার এক পেশাদার কেরানী ও হিসাবরক্ষককে প্রেরণ করেন। তিনি তাদের মারফত আল্লাহর নবীর কাছে এক চিঠি পাঠান, যেখানে তার আদেশ ছিলো এই যে, তিনি যেন এই দুই ব্যক্তির সঙ্গে কিসরার কাছে গিয়ে উপস্থিত হন। তিনি বাদাওয়াহ-কে বলেন, "এই লোকটির এলাকায় যাও, তার সাথে কথা বলো ও তার সম্বন্ধে আমার কাছে রিপোর্ট পেশ করো।"

অতঃপর এ দুই ব্যক্তি যাত্রা শুরু করে। আল-তায়েফে পৌঁছার পর তারা নাখিব অঞ্চলে কিছু লোকের সাক্ষাৎ পায় যারা ছিলেন কুরাইশ বংশোদ্ভূত; তারা তাদেরকে তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে। তারা বলে যে, তিনি মদিনায়। কুরাইশরা এ দুই ব্যক্তির সাক্ষাৎ পেয়ে পুলকিত ও আনন্দিত হয়; তারা একে অপরকে বলে, "আনন্দ করো! রাজার রাজা কিসরা এখন তার শত্রু হয়ে গিয়েছে। তোমরা এই মানুষটির হাত থেকে পরিত্রাণ পেয়েছো।" [3] [4]

এ দুই ব্যক্তি যাত্রা করে ও আল্লাহর নবীর কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়। বাদাওয়াহ তাঁকে সম্বোধন করে, বলে: "সম্রাটের সম্রাট ও নৃপতির নৃপতি কিসরা চিঠি মারফত রাজা বাধান-কে এই আদেশ করেছেন যে, তিনি যেন তোমাকে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার কোনো লোককে পাঠিয়ে দেন। বাধান আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছেন, যাতে তুমি আমার সঙ্গে যেতে পারো। যদি তুমি তাই করো, তিনি তোমার সপক্ষে নৃপতির নৃপতি কিসরার কাছে লিখবেন ও তোমাকে তার কাছ থেকে রক্ষা করবেন। যদি তুমি তা অগ্রাহ্য করো, তুমি জানো যে, তিনি কে!  তিনি তোমাকে ধ্বংস করবেন, তোমার লোকদের ধ্বংস করবেন ও তোমার এলাকাগুলো ছারখার করে দেবেন।"


যখন এ দুই ব্যক্তি আল্লাহর নবীর সম্মুখে আসেন, তাদের ছিলো গোঁফ কিন্তু দাড়িগুলো ছিলো কামানো, যে কারণে আল্লাহর নবী তাদের দিকে তাকানো অপছন্দ করেন। তিনি তাদের দিকে ঘুরে দাঁড়ান ও বলেন, "আহা, কারা তোমাদের এই কাজটি করতে আদেশ করেছে?" তারা বলে, "আমাদের প্রভু? " - যার মানে হলো কিসরা "আমাদেরকে এই আদেশটি করেছেন।" আল্লাহর নবী বলেন, "কিন্তু আমার আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন দাড়ি রাখতে ও গোঁফের চুলগুলো ছাঁটতে।" অতঃপর তিনি তাদেরকে বলেন, "চলে যাও, আগামীকাল আমার কাছে এসো।"

অতঃপর স্বর্গ থেকে আল্লাহর নবীর কাছে যে খবরটি আসে, তা হলো - আল্লাহ কিসরার বিরুদ্ধে তার পুত্র শিরাওয়াহ (Shirawayh) কে উসকে দিয়েছে। সে তাকে হত্যা করেছে এই এই মাসের, এই এই রাত্রিকালের এই মাসে, এই এই ক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পরের মুহূর্তে। আল্লাহ তার পুত্র শিরাওয়াহ-কে তার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেছে, অতঃপর সে তাকে হত্যা করেছে।

(Then a message from heaven came to the Messenger of God that God had incited against Kisra his son Shirawayh. He had killed him in such, and such a month, on such and such - a night of the month, after such and such hours of the night had passed. God incited his son Shirawayh against him, and he killed him. ---)

আল-ওয়াকিদির [৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ] বর্ণনা মতে:
শিরাওয়াহ তার পিতা কিসরা-কে হত্যা করে হিজরি ৭ সালের জমাদিউল আওয়াল মাসের এক মঙ্গলবার দিন, রাত্রি ছয় ঘটিকায় (১৫ই সেপ্টেম্বর, ৬২৮ সাল)।' [*]

([*] 'আল-ওয়াকিদির বর্ণিত এই তারিখটির সঙ্গে আল-তাবারীর বর্ণিত তারিখের মত পার্থক্য আছে, যেখানে বলা হয়েছে যে মুহাম্মদ কিসরার [অর্থাৎ দ্বিতীয় খসরু, পারভেজ; শাসনকাল ৫৯১-৬২৮ সাল] মৃত্যু সংবাদটি জানতে পারেন "হুদাইবিয়া সন্ধি-চুক্তির দিনটিতে" - অর্থাৎ, হিজরি ৬ সালের জিলকদ মাসের [যার শুরু হয়েছিল মার্চ ১৩, ৬২৮ সাল] কোনো এক সময়ে। এটি ৬২৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বিতীয় খসরু-কে ক্যু-এর মাধ্যমে সিংহাসনচ্যুত করার তারিখটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সঙ্গতিপূর্ণ, যা সংঘটিত করেছিলেন তার পুত্র দ্বিতীয় কাবাদ শেরোয়া (দ্বিতীয় কুবাদ শিরাওয়াহ)। এর কারণ ছিলো এই যে, বাইজানটাইন সম্রাট হিরাক্লিয়াসের সঙ্গে বেশ কিছু যুদ্ধে সামরিক পরাজয় হওয়ার পরেও খসরু তার সঙ্গে সন্ধিচুক্তির বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করায় তার ওপর তার সেনাধ্যক্ষরা ছিলেন ক্রোধান্বিত। খসরুর মৃত্যুর সঠিক তারিখটি অজ্ঞাত। শেরোয়া/শিরাওয়াহর (Sheroe/Shirawayh) শাসনের স্থায়িত্বকাল ছিলো খুবই স্বল্প সময়ের (৬ কিংবা ৮ মাস) জন্য, তিনি ৬২৮ সালের শরৎকালের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন'।) [5]

'ইয়াযিদ বিন আবি হাবিব হইতে > মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের বর্ণনার পুনরারম্ভ:
তিনি এ দুই ব্যক্তিকে তলব করেন ও তাদেরকে খবরটি শোনান। তারা বলে, "তুমি কী জানো যে, তুমি কী বলছো? তোমাকে আমরা যে-কারণে দোষারোপ করছি, তার পরিণাম এর চেয়ে কম। আমরা কি তোমার উদ্ধৃতি দিয়ে এই খবরটি রাজার (ইয়ামেনের গভর্নর, আরবিতে যার খেতাব ছিল 'মালিক [রাজা']) কাছে লিখে জানাবো?"

তিনি বলেন,
"হ্যাঁ। আমার পক্ষ থেকে এই সংবাদটি তার কাছে জানাও ও তাকে বলো যে, আমার ধর্ম ও রাজত্ব যতদূর পর্যন্ত কিসরার রাজত্বের সীমানা ততদূর পর্যন্ত পৌঁছাবে এবং তা প্রসারিত হবে উটের পা ও ঘোড়ার খুরের পরম নাগাল যতদূর যায় ততদূর পর্যন্ত। তাকে বলো, ‘যদি তুমি নিজে বশ্যতা স্বীকার করো (অথবা, ‘যদি তুমি মুসলমান হও’), তবে তোমার যা কিছু আছে, তা তোমারই থাকবে ও আমি তোমাকে তোমার লোকদের, 'আবনা'' জনগণের, রাজা রূপে নিযুক্ত করবো (If you submit yourself, I will give you what you possess and make you king over your people, the Abna)।'" [6] [7]

অতঃপর তিনি খোররাখুসরাহ-কে স্বর্ণ- ও রৌপ্যখচিত একটি বেল্ট প্রদান করেন, যেটি তাঁকে দান করেছিলেন এক রাজা।

এই দুই ব্যক্তি তাঁর কাছ থেকে চলে আসে। তারা বাধানের কাছে আসে ও তাকে খবরটি জানায়। তিনি বলেন, "আল্লাহর কসম, এটি কোনো রাজার ভাষা নয়। আমি মনে করি যে, এই লোকটি হলো একজন নবী, যা সে বলছে। এসো, যে ঘটনাটি সে বলেছে, আমরা তার জন্য অপেক্ষা করি। যদি তা সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে যে ব্যাপারে কোনো বিতর্ক থাকে না, তা হলো এই যে, সে প্রকৃতপক্ষেই একজন নবী, যাকে প্রেরণ করা হয়েছে। যদি তা সত্য বলে প্রমাণিত না হয়, তার ব্যাপারে কী করা হবে, সে বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।"

অনতিবিলম্বে বাধান শিরাওয়াহর চিঠি পান, যেখানে বলা হয়েছে:

‘জানানো যাচ্ছে: "আমি কিসরা-কে হত্যা করেছি। আমি তাকে হত্যা করেছি শুধু এই কারণে যে, পারস্যের প্রতি আমার গভীর ভালবাসা; তার সিদ্ধান্তের কারণে তার পরিষদবর্গ হয়েছে নিহত ও তাদেরকে আটকে রাখা হয়েছে সীমান্তে। যখন তুমি আমার এই চিঠিটি পাবে, যে লোকগুলো তোমার সাথে আছে, আমার প্রতি তাদের আনুগত্য নিশ্চিত করবে। যে লোকটির ব্যাপারে কিসরা তোমার কাছে চিঠি লিখেছে তাকে তুমি দেখে রাখবে, আর তার ব্যাপারে আমার নির্দেশ পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাকে তুমি ঘাঁটাবে না।"’

যখন শিরাওয়াহর চিঠিটি বাধানের কাছে এসে পৌঁছে, তিনি বলেন, "এই লোকটি প্রকৃতপক্ষেই একজন নবী", অতঃপর তিনি মুসলমান হয়ে যান; আর 'আবনা' - পারস্যের যে লোকগুলো ইয়ামেনে ছিলো, তারাও তার সাথে মুসলমান হয়ে যায়।

(হিমায়ের (Himyar) এর জনগণ খোররাখুসরাহ-কে ধু আল-মি'জাযাহ নামে ডাকতেন, এর কারণ হলো এই যে আল্লাহর নবী তাকে বেল্টটি প্রদান করেছিলেন। হিমেয়ের ভাষায় বেল্ট-কে বলা হয় 'মিজাযাহ'। তার সন্তানরা আজ সেখান থেকেই তাদের 'পদবি নাম (surname)' গ্রহণ করেছে, “খোররাখুসরাহ ধু আল-মি'জাযাহ [এর সন্তানরা]।") [8]

বাদাওয়াহ বাধান-কে বলে, "আমি এই লোকটির চেয়ে বেশি অসাধারণ কোনো লোকের সাথে কখনোই কথা বলিনি।" বাধান বলেন, "সে কি তার সেনাদের জড়ো করেছিল?" জবাবে সে বলে, "না।"

আল-ওয়াকিদির বর্ণনা মতে: এই বছর তিনি মিশরের খ্রিষ্টান শাসক আল-মুকাওকিস-এর কাছে চিঠি লিখে তাকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান, কিন্তু তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি (পর্ব-১০৮)।' 

- অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ - লেখক।

>>> আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় যে-বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো, পারস্যের শাসনকর্তা খসরু পারভেজ (খসরু দুই) মুহাম্মদের এই চিঠি-হুমকির প্রতিক্রিয়ায় তাঁকে হত্যা, শারীরিক আঘাত, মৌখিক হুমকি-শাসানী-ভীতি প্রদর্শন কিংবা কোন গালমন্দ করার আদেশ জারী করেননি। একজন শাসক হিসাবে তিনি তাঁর অধঃস্তন ব্যক্তিদের এই  নির্দেশ জারি করেছিলেন যে, তারা যেন এই 'চিঠি-হুমকি' প্রদানকারী ব্যক্তিটিকে তাঁর কাছে ধরে নিয়ে আসেন। তাঁর এই প্রতিক্রিয়াকে অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দিয়ে যে সমস্ত ইসলাম বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা (অধিকাংশই না জেনে) শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবত 'কিসরার' বিরুদ্ধে বিষোদগার করে চলেছেন, তাদের কাছে প্রশ্ন:

"ঘটনাটি যদি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী হতো, তাহলে মুহাম্মদ 'কিসরার' বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন?"

এই প্রশ্নের সঠিক জবাব আমরা নিশ্চিতরূপেই অনুধাবন করতে পারি। মুহাম্মদ তাঁর বিরুদ্ধবাদীদের প্রতি যে কীরূপ অমানুষিক নৃশংস আচরণের উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন, তার বিস্তারিত আলোচনা 'ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ' এর গত একশত ছত্রিশটি পর্বে করা হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি, সামান্য কবিতা লেখার অপরাধে কীরূপ অমানুষিক নৃশংসতায় গুপ্ত-ঘাতক পাঠিয়ে মুহাম্মদ হত্যা করেছিলেন নিরস্ত্র অতিবৃদ্ধ আবু আফাক-কে (পর্ব-৪৬) আসমা-বিনতে মারওয়ান-কে (পর্ব-৪৭) ক্বাব বিন আল-আশরাফ-কে (পর্ব-৪৮),  আবু রাফি-কে (পর্ব-৫০)। 

আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় মুহাম্মদের সংঘটিত এক মোজেজার (অলৌকিক ঘটনা) বর্ণনা দেওয়া হয়েছে:

“অতঃপর স্বর্গ থেকে আল্লাহর নবীর কাছে যে-খবরটি আসে, তা হলো, আল্লাহ কিসরার বিরুদ্ধে তার পুত্র শিরাওয়াহ-কে উসকে দিয়েছে। সে তাকে হত্যা করেছে!”

বর্ণিত হয়েছে এই অলৌকিক ঘটনাটির "সত্যতার প্রমাণ" জানতে পেরে ইয়ামেনের গভর্নর বাধান ও তাঁর লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ইসলামের ইতিহাসের প্রাপ্তিসাধ্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দলিল হলো মুহাম্মদ স্বরচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থ কুরান। সেই কুরানেরই পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনায় আমরা জানি যে, "মুহাম্মদের আল্লাহ" মানুষকে কুমন্ত্রণা দিয়ে বিপথগামী করেন, যা মুহাম্মদ বহুভাবে ব্যক্ত করেছেন। এ বিষয়ের যার বিস্তারিত আলোচনা "অবিশ্বাসী পরহেযগার ও স্বেচ্ছাচারীর স্বেচ্ছাচার তত্ত্ব (পর্ব-২০)” পর্বে করা হয়েছে। সেই কুরানেরই পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনায় আমরা নিশ্চিতরূপে জানি যে, অবিশ্বাসীদের বারংবার অনুরোধ ও চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মুহাম্মদ তাঁর সমগ্র নবী-জীবনে "একটি মোজেজাও প্রদর্শন করতে পারেননি,” যার বিস্তারিত আলোচনা "মুহাম্মদের মোজেজা তত্ত্ব (পর্ব: ২৩-২৫)" পর্বে করা হয়েছে। সুতরাং, মুহাম্মদের যাবতীয় মোজেজার কিসসা যে মুহাম্মদের মৃত্যু-পরবর্তী সময়ের তাঁর অতি ভক্ত ও অতি উৎসাহী অনুসারীদের মস্তিষ্ক নিঃসৃত চিন্তাধারার ফসল, তা নিশ্চিতরূপেই বলা যায়। বাধন ও তাঁর লোকদের 'মুসলমানিত্ব বরণ' মুহাম্মদের প্রদর্শিত কোনো অলৌকিক ঘটনার কারণে সংঘটিত হয়নি।

প্রশ্ন হলো,
"কী কারণে তাঁরা 'মুসলমানিত্ব বরণ' করেছিলেন?"

আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনার আলোকে সম্ভাব্য কারণগুলো হলো:

(১) তাঁর উচ্চতর কর্তৃপক্ষ 'কিসরার প্রতি মুহাম্মদের হুমকি"বশ্যতা স্বীকার করো, তাহলে তুমি হবে নিরাপদ!"

(২) তাঁকে প্রতিশ্রুত মুহাম্মদের প্রলোভন“যদি তুমি নিজে বশ্যতা স্বীকার করো (অথবা, ‘যদি তুমি মুসলমান হও’), তবে তোমার যা কিছু আছে তা তোমারই থাকবে ও আমি তোমাকে তোমার লোকদের ('আবনা'' জনগণের) রাজা রূপে নিযুক্ত করবো।"

(৩) নিজ পিতা খসরু পারভেজ-কে নৃশংসভাবে খুন করার পর ক্ষমতার মসনদে আসীন খুনি-পুত্র শিরাওয়াহর চিঠি, "যে লোকটির ব্যাপারে কিসরা তোমার কাছে চিঠি লিখেছে তাকে তুমি দেখে রাখবে, আর তার ব্যাপারে আমার নির্দেশ পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাকে তুমি ঘাঁটাবে না।"

(চলবে)

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা: 

[1] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮, ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৭২-১৫৭৫; বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক:

[2] অনুরূপ বর্ণনা: “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৬৫৮-৬৫৯; বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক:

[3] ‘আল-তায়েফ -  পাহাড় পরিবেষ্টিত আল-তায়েফ শহর-টি মক্কা থেকে প্রায় ৪০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত’।

[4] ‘নাখিব -আল-তায়েফ এর একটি উপত্যকা’।

[5] Ibid আল-তাবারী, নোট নম্বর ৪৮০, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৭৪

[6] Ibid আল-তাবারী, নোট নম্বর ৪৮২, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৭৪
‘Or, "if you become a Muslim."’

[7] Ibid আল-তাবারী, নোট নম্বর ৪৮৩, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৭৫
“'আবনা' জনগণরা ছিলেন পারস্যের অধিবাসী, যারা অবস্থান করতেন ইয়ামেনে। তাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন পার্সিয়ান, বলা হয় যে তারা এসেছিলেন সায়িফ বিন ধি ইয়াযান (Sayf b. Dhi Yazan) এর সঙ্গে। তাদের কে 'আবনি আল-আহরার ("স্বাধীন সন্তান [Sons of the Free]" নামেও ডাকা হতো।"

[8] Ibid আল-তাবারী, নোট নম্বর ৪৮৪, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৭৫
'হিমায়ের গোত্র' - যাদের অবস্থান ছিল দক্ষিণ আরবে, যাদের রাজত্ব উদিত হয়েছিল ইসলামের আগেই। এখানে তা সাধারণভাবে ইয়ামেন হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে’।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন