আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

সোমবার, ২৭ জুন, ২০১১

শিশুকন্যার ওপর অত্যাচার

লিখেছেন Suirauqa

বহু ছোটবেলায় লালন ফকিরের একটা গানের লাইন পড়েছিলাম, "সুন্নত দিলে হয় মুসলমান, নারীর তবে কী হয় বিধান..." ওই সুন্নত শব্দটির মানে যখন জানলাম এবং জীববিজ্ঞান ক্লাসে নারী-পুরুষ প্রজনন অঙ্গের বিবরণ পড়লাম, তখন মনে হয়েছিল, সত্যি তো! আজ মনে হয়, সে যেন এক অন্য শতাব্দীর কথা। তখন লালন কি জানতেন, বা আমিই কি ছাই জানি যে, এই চূড়ান্ত বর্বর-জাতীয়, অমানবিক, হিংসক, ঘৃণ্য প্রথা মুসলমান দেশ বা গোষ্ঠীগুলোতে শিশুকন্যাদের ওপরে আরোপিত হয়ে আসছে? যে প্রথাটির কথা বলছি, তার পোষাকি নাম ফিমেইল সার্কামসিশন, যা অনুবাদে দাঁড়ায় নারী-সুন্নত বা নারী-খৎনা। কিন্তু সঠিক নাম ও বিবরণ পাওয়া যায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization, WHO) এবং জাতিসংঘ (United Nations, UN)-এর কাছে, এই প্রথার নাম হল, ফিমেইল জেনিটাল মিউটিলেশন বা FGM, অর্থাৎ নারী-জননাঙ্গের ইচ্ছাকৃত বিকলীকরণ। WHO-র সংজ্ঞা অনুযায়ী, এফ জি এম এর অন্তর্ভুক্ত হল সেই সমস্ত প্রক্রিয়া যা দিয়ে বহির্গত নারী জননাঙ্গের কিয়দংশ বা সম্পূর্ণাংশ কেটে নেওয়া হয়, বা চিকিৎসা-সংক্রান্ত কারণ ছাড়াই নারী যৌনাঙ্গের হানি ঘটানো হয়। 

উইকিপিডিয়াতে এই সংক্রান্ত লেখায় বিস্তারিত বিবরণ আছে। এইগুলো পড়তে গিয়ে আমার নিজেরই একটা শারীরিক রি-অ্যাকশন হচ্ছে, তাই আর সেই বর্ণনায় যাচ্ছি না। শুধু এটুকু বলা দরকার যে, এই কুপ্রথার শিকার যারা, তাদের জীবনে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। শিশুবয়স থেকে প্রাক্‌যৌবনকাল পর্যন্ত মেয়েদের ওপর এই প্রক্রিয়া আরোপিত হয়ে থাকে। বহু জায়গায়, এই অঙ্গচ্ছেদনের অস্ত্রোপচার যারা করে, তাদের অনেকেরই কোনো চিকিৎসা-শাস্ত্রের জ্ঞান থাকে না, এবং অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়া বা সঠিক জীবাণুশূণ্য পরিবেশ ছাড়া, কখনও বা সঠিক শল্যচিকিৎসার উপকরণ ছাড়াই। অনেক সময়ই অতিরিক্ত রক্তপাতে বা জীবাণু-সংক্রমণে সেই সব মেয়েদের মৃত্যু ঘটে। অনেক রকম গুরুতর লং টার্ম স্বাস্থ্যহানিও ঘটে। যেমন, প্রসাবপথে বা যৌনাঙ্গে সংক্রমণ, বিভিন্ন রকমের ক্ষত এবং বন্ধ্যাত্ব। এরা সারাজীবন যৌনসঙ্গম উপভোগ করতে পারে না, এবং প্রথম যৌনঅভিজ্ঞতা প্রচণ্ড পীড়াদায়ক হয়। প্রসবের সময় অনেক রকমের গণ্ডগোলের সম্ভাবনা দেখা দেয় - প্রসবকালে শিশুমৃত্যু এবং প্রসবের পরে রক্তপাত। 

এই অমানবিক প্রথার প্রচলনের কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে সংস্কৃতি, ধর্ম আর সমাজ-সম্পর্কিত বিভিন্ন কারণ। কিন্তু আসল যে কারণে এই বর্বর প্রথা শিশুকন্যা এবং মহিলাদের ওপরে আরোপ করা হয়ে থাকে, তা হল মহিলাদের দেহ ও যৌনতার ওপর সম্পূর্ণ অধিকার স্থাপন করা। এবং সেটা অনেকক্ষেত্রে সম্ভবপরও হয়। এফ জি এম মহিলাদের যৌনসুখ - অরগ্যাজম - উপভোগের অন্তরায় হতে পারে। তাছাড়া দেখা গেছে যে এই মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে, যার পোশাকী নাম হল পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস সিন্‌ড্রোম। সাধারণভাবে যে মহিলারা শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হন, তাদের এই সিনড্রোম দেখা যায়। কিন্তু এই প্রথা এই সব সমাজে চলে আসছে, কারণ মনে করা হয় যে, শিশুকন্যাকে বড় করে তোলার জন্য, এবং তাকে বয়োপ্রাপ্তি ও বিবাহের জন্য তৈরী করে তোলার জন্য এটি প্রয়োজনীয়। আসলে মনে করা হয় যে, এফ জি এম-এর ফলে যে যৌনাঙ্গে যন্ত্রণা হয় সেটা তাদেরকে বিবাহ-বহির্ভূত যৌন অভিজ্ঞতায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত করবে। মহিলাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা, যৌনস্বাধীনতায় এর থেকে বড় হস্তক্ষেপ আর হয় না, এবং এর থেকে ভয়াবহ যৌন নির্যাতন খুবই কম আছে। 

ধর্মীয় নেতারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে এই বিষয় নিয়ে কথা বলে থাকে। কেউ এটাকে মনে করে ধর্মের সঙ্গে সংযোগহীন, কেউ বলে ধর্মগ্রন্থে এর অনুমোদন নেই। আল-আজহার সুপ্রীম কাউন্সিল অফ ইসলামিক রিসার্চ - মিশরের সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ - একটি বক্তব্য পেশ করেছে এই মর্মার্থে যে, ইসলামে ধর্মীয় কানুনে এফ জি এম-এর কোন অনুমোদন নেই। কিন্তু বিভিন্ন ফিখ-এ (শরিয়তী আইনের অংশ) বলা আছে মহিলাদের প্রিপিউস (মেঢ্রত্বক) ছেদন করার কথা। চতুর্দশ শতাব্দীর আলেখ্য উমদাত আল-সালিক ওয়া-উদ্দাত আল-নাসিক-এ বলা আছে যে, এই ত্বকচ্ছেদন মহিলা এবং পুরুষ দু'জনের জন্যই অবশ্যকর্তব্য। মহিলাদের জন্য সেটা হল ক্লিটোরিসের উর্ধ্বাংশ, আরবী ভাষায় বাজ্‌র। 

প্রতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে নারী যৌনাঙ্গের বিকলীকরণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক দিবস, এই কথা জানিয়ে যে, এই প্রথা মহিলা এবং কন্যাসন্তানের পক্ষে মানবিকতার বিরোধী, এবং এফ জি এম কোনো ধর্মে অনুমোদিত নয়। সাধারণত এফ জি এম-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা বা জনমত গড়ে তোলার দু'রকম উপায় আছে - স্বাস্থ্য বিষয়ক এবং মানবাধিকার বিষয়ক। স্বাস্থ্য বিষয়ক উপায়ে এফ জি এম-এর প্রভাবে মহিলাদের যে শারীরিক এবং মানসিক হানি ঘটে, তার কথা প্রচার করা হয়। কিন্তু যেহেতু এই সব সমাজে মহিলাদের খুব একটা আওয়াজ নেই বা তাদের প্রয়োজনীয়তাকে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না, তাই এই উপায়ে খুব একটা ফলাফল পাওয়া যায়নি। বর্তমানে মানবাধিকার বিষয়ক উপায়ে চেষ্টা করা হচ্ছে, এই উপায়ে চারটে মানবাধিকার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংস্রতা, শিশুদের অধিকার, নির্যাতন থেকে মুক্তি, এবং স্বাস্থ্যের অধিকার ও শরীরী সার্বভৌমত্ব - যেগুলোকে এফ জি এম লঙ্ঘন করে থাকে। 

এই প্রসঙ্গের অবতারণা কেন করলাম? ইন্দোনেশিয়ার ইসলাম-প্রধান দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কয়েকদিন আগে একটি ডিক্রী জারি করে কিছু মেডিকাল প্রফেশনালদের অনুমতি দিয়েছে শিশুকন্যাদের ওপরে এফ জি এম অস্ত্রোপচার করার জন্য। সেই দেশে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে - তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের মাতৃস্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ইনা হার্নাবতী বলেছেন যে, এর উদ্দেশ্য এই যে ইসলামী বিধি মেনে অনেক মা-বাবা তাদের শিশুকন্যাদের এফ জি এম করিয়ে থাকে; অজ্ঞ, মুর্খ লোকেদের দিয়ে সেটা করানো থেকে শিক্ষিত ডাক্তারদের দিয়ে সেটা করানো বেশী স্বাস্থ্যকর। কিন্তু এই ডিক্রীর ফলে পরোক্ষে এই অমানবিক প্রথাকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন সে দেশের মহিলা মানবাধিকারের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন