আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১১

প্রাণের আদি রূপ


(অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত এক বালক এই নিবন্ধটি রচনা করেছিল এবং সেটি তখন প্রকাশিত হয়েছিল "বিজ্ঞান সাময়িকী" পত্রিকায়। সেই বালক এখন দশম শ্রেণীর ছাত্র। তাঁর দু'টি লেখা ধর্মকারীতে ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর নাম: মাজহারুল ইসলাম।)

আমার কথা

এই লেখাটি ২০০৯ সালে বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছিল। ধর্মের বিভিন্ন বই পড়ে আমি জীবনের উৎস সন্ধান করি প্রথমে। কিন্তু সেগুলো ছিল খুবই দুর্বল। তাই আমি মেনে নিতে পারি নি ঐসব দুর্বল কল্পকথা। নিজের মত করে প্রথমে ভাবি। পরে বেশ কিছু বই পড়ে সঠিকটি জানতে পারি। এবং জানাতে চাই। তারই ফলে এটা লিখে জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি দেখেছি অনেক শিক্ষিত লোকজনও এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বটি মানতে চাই না। আমি এটি লিখেছি ক্লাস এইটে থাকতে। নবম শ্রেণীতে উঠে দেখি, এই তত্ত্বটি জীববিজ্ঞান বইয়ের প্রথম অধ্যায়েই (জীববিজ্ঞানের পরিচিতি-পৃঃ ৮) দেওয়া আছে। কিন্তু বিস্তারিত কোনো বিবরণ নেই। ফলে আমি অনেকের সাথে এ নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রায় সকলেই তত্ত্বটি সঠিক বলেছেন। কিন্তু মেনে নিতে পারেন নি। আমরা বিজ্ঞানকে সঠিক বলি। কিন্তু মেনে নিতে পারি না। যারা মেনে নেয় ও প্রচার করে, তাদেরকে বরণ করে নিতে হয় পীড়ন অত্যাচার; ধর্মধ্বজীদের কঠোর শাস্তি। আমাদের এই সামাজিক দায়বদ্ধতাকে কাটিয়ে উঠতে হবে। না হলে বাংলাদেশ যে গতিতে মধ্যযুগের দিকে এগুচ্ছে; এর ফিরে আসা তো দূরের কথা, থামবারই কোনো চিহ্ন থাকবে না।

মানুষের ইতিহাস শুরু হবার পর থেকেই পৃথিবীতে জন্ম ও মৃত্যু শব্দদুটি মানুষের জীবনকে অর্থময় করে তুলেছে। জন্মের আগে মানুষ যেমন শূন্য ছিল, মারা গেলেও ঐ রকম শূন্য হবে। সূচনার আগে অন্ধকার আর সমাপ্তির পরেও অন্ধকার। দুই অন্ধকারের মাঝে ক্ষণিক আলোক ঝিলিকই হল জীবন। তাই জন্ম মৃত্যুই জীবের জীবনের সার্থকতা। কিন্তু কী ঐ জীবন? কোথা থেকে এলো ঐ প্রাণ? প্রাণীর দেহে প্রাণের সঞ্চার নিয়ে বিজ্ঞানী, দার্শনিক এমনকি কবিও মাথা ঘামিয়েছেন বহুদিন ধরে। তবে সাধারণেরা প্রাণকে দীর্ঘকাল ধরে অলৌকিক ঘটনা বলে মনে করত; কেননা- ধর্মবাদী চিন্তা, বৈজ্ঞানিক অনগ্রসরতা, কুসংস্কার, ভয় মিলে মানুষের ভাববাদী চিন্তাধারা জন্ম দিয়েছে আধ্যাত্মবাদের। সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞানীরা জীবনের আদিপর্ব ও মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিশদ গবেষণা করেছেন। জীবের উৎপত্তি যে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ও রাসায়নিক বিক্রিয়া বা বিবর্তনের ফলে হয়েছে, তার প্রমাণও দেখিয়েছেন। ফলে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি আর যুক্তির প্রসারের কারণে আত্মা দিয়ে জীবন-মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করার অন্তর্নিহিত ত্রুটিগুলো মানুষের চোখে সহজেই ধরা পড়েছে।

জীবন কী

জীবন-এর ব্যপারে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতটি দিয়েছেন জে ডী বার্নাল (১৯৫১); তাঁর মতটি এমন: 

"একটি নির্দিষ্ট আয়তন বা স্থানের মধ্যে স্বচালিত রাসায়নিক প্রক্রিয়ার নাম জীবন এবং এটি অতি জটিল ভৈত রাসায়নিকতন্ত্র যা অসংখ্য সুসংহত বা একীভূত ও স্বনিয়ন্ত্রিক রাসায়নিক ও ভৌত বিক্রিয়ার মাধ্যমে তার পরিপার্শ্বের বস্তু ও শক্তিকে স্বীয় বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার করে।"

জীবন কী, সেটা বোঝা সহজ হলেও এর উৎপত্তি সম্পর্কে মন্তব্যগুলো অত্যন্ত দুরূহ। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিজ্ঞানী, প্রাণিবিজ্ঞানী বা উদ্ভিদবিজ্ঞানী সকলেই বরাবর হিমশিম খেয়েছেন। তারপরেও ১৯২২ সালে 'জীবনের উৎপত্তি' নামে একটি বই বের করা হয়। যার লেখক ছিলেন প্রাণরসায়নবিদ ওপারিন। এই বইটিতে তিনি প্রথমবারের মতো এ পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছিল, তার একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেন। জীবনের দু'টি পর্ব দেখান তিনি: রাসায়নিক বিবর্তন ও জৈব বিবর্তন। এই দুটি পর্ব মিলেই 'Complete Evolution' নামক ওপারিন-এর বইটি ১৯৩৮ সালে অনূদিত হয়। কিন্তু ঐ একই সময়ে জীববিজ্ঞানী হালডেন, ওপারিনের কথা কিছু না জেনেই একই রকম মত প্রকাশ করেন এ ব্যাপারে। ফলে সৃষ্টি হয় এক নতুন তত্ত্ব। যা ওপারিন-হালডেন তত্ত্ব নামে পরিচিত। তাদের তত্ত্বটিকে বিশ্লেষণ কলে এমনটি পাওয়া যায় যে:

সাড়ে চারশ কোটি বছর আগেকার পৃথিবী কোনো দিক দিয়েই আজকের পৃথিবীর মতো ছিল না। এ সময় পৃথিবী ছিল প্রচণ্ড গরম, অনেকের মতে তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৫০০০-৬০০০ ডিগ্রির মত। পানি পড়া মাত্রই তা বাষ্প হয়ে উড়ে যেত। তখন সেখানে ছিল না কোনো প্রাণ, ছিল না কোনো মুক্ত অক্সিজেন। আকাশ আর পৃথিবী পরিপূর্ণ ছিল হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, নাইত্রোজেন, মিথেন, অ্যামোনিয়ার মতো বিষাক্ত গ্যাসে; সাথে ছিল জলীয় বাষ্প আর কিছু খনিজ পদার্থ। পরে পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ তাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে আর সূর্যের মহাকর্ষের টানে অধিকাংশ প্রাথমিক গ্যাসগুলো উড়ে চলে যায়। অক্সিজেনের পুরোটুকু বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন পরমাণুর সাথে মিলে নানা ধরনের অক্সাইড তৈরি করে। কার্বনও বিভিন্ন ধাতুর সাথে যুক্ত হয়ে তৈরি করে নানা ধরনের মেটাল কার্বাইড। তৈরি হয় ধীরে ধীরে কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন, সিলিকন ডাইওক্সাইড, হাইড্রোক্সাইড এসিড আর হাইড্রোফোরিক এসিড ইত্যাদি। বায়ুমণ্ডলে কোনো মুক্ত অক্সিজেন ছিল না, আর সেই সাথে বায়ুমণ্ডলের বাইরে আজকের দিনের মতো ওজোনের স্তরও ছিল না। তাই সূর্যের আলোর অতিবেগুনি রশ্মি খুব সহজেই পৃথিবীতে এসে পৌঁছাত। আর এক্স রশ্মি, গামা রশ্মি, কসমিক রশ্মিগুলোর বিকিরণ ঘটত। এই বৈদ্যুতিক বিকিরণও ছিল আজকের দিনের চেয়ে বহুগুণে বেশি। এমন একটি প্রাণহীন পরিবেশের একটা সময় এসব গ্যাসের ওপর উচ্চশক্তির বিকিরণের প্রভাবে নানা ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থের উদ্ভব হয়, এগুলো পরবর্তীতে নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়ার মাধ্যমে আরো জটিল জৈব পদার্থ উৎপন্ন করে। এ থেকেই পরে ঝিল্লি তৈরি হয়। ঝিল্লিবদ্ধ এসব জৈব পদার্থ বা প্রোটিনয়েড ক্রমে ক্রমে এনজাইম ধারণ করতে থাকে আর বিপাক ক্রিয়ার ক্ষমতা অর্জন করে এটি। এক সময় এর মধ্যকার বংশগতির সংকেত দিয়েই প্রতিকৃতি তৈরি করতে বা পরিব্যাক্তি ঘটাতে সক্ষম হয়। এভাবেই একটা সময় তৈরি হয় প্রথম আদি ও সরল জীব।

ওপারিন ও হালডেনের এই তত্ত্বটির সত্যতা যাচাইয়ে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ছাত্র মিলার একটি পরীক্ষা করেন। মিলার ১৯৫৩ সালে একটি বায়ু নিরপেক্ষ কাচের ফ্লাস্কে আদি পৃথিবীর একটি দশা তৈরি করেন। তিনি আগেই পাম্প করে এর ভেতর থেকে বাতাস বের করে নেন। তারপর সংযুক্ত ফ্লাস্কের পানি ফুটিয়ে জলীয় বাষ্প তৈরি করেন। একটি বড় পাঁচ লিটার ফ্লাস্কে হাইড্রোজেন, মিথেন, অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রবেশ করান। যেখানে ওই আগের ফুটন্ত জলীয় বাষ্প এসে মিশে যায়। এবার মিশ্রণে তিনি বৈদ্যুতিক প্রবাহ চালু করেন। বিক্রিয়াজাত গ্যাসগুলোকে শীতকের সাহায্যে ঘনীভূত করা হয় এবং তারপর সেগুলো বিশ্লেষণ করা হয়। বিশ্লেষণ থেকে ওপারিন-হালডেনের তত্ত্ব যে সঠিক, তা প্রমাণিত হয়। ১৮২০ সালে বিজ্ঞানী ভোয়েলার তাপ প্রয়োগে অজৈব এমোনিয়াম সায়ানেট থেকে ইউরিয়া নামক জৈব পদার্থ উৎপাদন করেছিলেন।

এই পরীক্ষাগুলো থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, আদিম পরিবেশে অজৈব পদার্থ থেকে জৈব পদার্থের উদ্ভবের সম্ভাবনাটি অত্যন্ত শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। জৈব পদার্থের মধ্যে লুকিয়ে আছে জীবনদায়ী শক্তি। জীবদেহ গঠিত এই জৈব পদার্থ দিয়েই, যাতে আছে প্রাণশক্তির স্ফুরণ। তাই আজ প্রমাণিত, কোনো জাদুকরের কেরামতিতে প্রাণের উন্মেষ ঘটেনি। কোনো কল্পিত ঈশ্বরও তার ইচ্ছামত মাটি আর রক্ত মিশিয়ে প্রাণের কিংবা আদম-হাওয়ার সৃষ্টি করেন নি। কোন অলৌকিক ক্ষমতা বলে এই রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো হাতের ইশারায় ঘটে যায় নি। সৃষ্টি হয় নি প্রাণের আদিরূপ। বরং জীবনের এই রাসায়নিক উৎপত্তি তত্ত্বকেই আজ পৃথিবীর অধিকাংশ বিজ্ঞানী সঠিক বলে মেনে নিয়েছে। তারা মানব মনের কুয়াশা কাটিয়ে জীবনের বাস্তব রূপটিকে প্রতিষ্টিত করাবার প্রয়াস পেয়েছেন। ড. হুমায়ুন আজাদের দুটি উক্তিদিয়ে আমি এই রহস্যের শেষ করতে চাই: 

১. মানুষের উৎপত্তি সম্পর্কে দুটি তত্ত্ব রয়েছে: অবৈজ্ঞানিকটি অধঃপঅতনতত্ত্ব, বৈজ্ঞানিকটি বিবর্তনতত্ত্ব। অধঃপতনতত্ত্বের সারকথা মানুষ স্বর্গ থেকে অধঃপতিত। বিবর্তনতত্ত্বের সারকথা মানুষ বিবর্তনের উৎকর্ষের ফল। অধঃপতনবাদীরা অধঃপতনতত্ত্বে বিশ্বাস করে; আমি যেহেতু মানুষের উৎকর্ষে বিশ্বাস করি, তাই বিশ্বাস করি বিবর্তনতত্ত্বে। অধঃপতনের থেকে উৎকর্ষ সব সময়ই উৎকৃষ্ট।

২. যারা ধর্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়, তারা ধার্মিকও নয়, বিজ্ঞানীও নয়। শুরুতেই স্বর্গ থেকে যাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল, তারা তার বংশধর।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন