আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

জান্নাতের কল্পকথা


লিখেছেন মহসিনা খাতুন

ইসলাম অনুসারে, বিশ্বাসীরা মৃত্যুর পর সর্বময় স্রষ্টা আল্লাহর তরফ থেকে পাবেন পুরস্কার। আর এই পুরস্কার হল জান্নাত। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ দ্বারা যার সারাটা জীবন পরিচালিত হবে, আল্লাহর বিচারের পর নিশ্চিতভাবেই তার জন্য অপেক্ষা করে আছে আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার জান্নাত। কিন্তু খুব ছোট্টবেলা থেকেই জানতে ইচ্ছা করত, এই জান্নাত ঠিক কেমন? বা এই পুরস্কার আদৌ সারা জীবন একটি নির্দিষ্ট জীবনাচরণ মেনে চলার উপযুক্ত পুরস্কার কি না। এর উত্তর পেতে গেলে সরাসরি কোরআন ও হাদিসের ছোটছোট এলোমেলো বর্ণনাগুলি সাজিয়ে গুছিয়ে একটি কোলাজ তৈরি করা ছাড়া উপায়ান্তর নেই। আর সেই চেষ্টাতেই আমার বর্তমান লেখা। কোরআন হাদিস যেটুকু পড়েছি, তাতে জান্নাতের যে ছবি আমি পেয়েছি, তা হল:

‘জান্নাত’ শব্দটি একটি আরবি শব্দ, যার আক্ষরিক অর্থ হল উদ্যান। যদিও জান্নাতকে বোঝাতে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ফার্সি ‘বেহেস্ত’ প্রতিশব্দটিই বেশি প্রচলিত। যাই হোক, কোরআনে বেহেস্ত বা জান্নাতকে বোঝাতে মোট আট প্রকার শব্দসমষ্টি ব্যবহার করা হয়েছে। ক) ফেরদৌস, খ) নায়ীম, গ) মা’ওয়া, ঘ) আদন, ঙ) দারুস সালাম, চ) দারুল খুলদ, ছ) দারুল মাকাম এবং জ) ইল্লিয়ন। তাই অনেকে মনে করেন, জান্নাতের সংখ্যা আটটি। আবার অনেকের মতে, এগুলি একটি জান্নাতেরই আটটি স্তর। তবে জান্নাতুল ফেরদৌসই হল এদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তবে ইসলামি সাহিত্যের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জান্নাত বলতে জান্নাতুল ফেরদৌসকেই বোঝানো হয়েছে।

আগেই বলা হয়েছে, জান্নাত হল আসলে একটি উদ্যান। তবে কোরআন এবং হাদিস অনুযায়ী, ইসলামি জান্নাত একটি না অসংখ্য, তা পরিষ্কারভাবে বলা নেই। কেননা, কোরআনে একাধিক জায়গাতে এমনও বলা হয়েছে, “জান্নাতিদের প্রত্যেককে একটি করে উদ্যানের মালিক করা হবে। প্রতিটি উদ্যানে থাকবে এক বা একাধিক প্রাসাদ।” অর্থাৎ অসংখ্য উদ্যান আছে জান্নাতে, এমনও হতে পারে। জান্নাতে প্রাপ্য উদ্যানের সংখ্যা সীমা নির্ধারিত করা না থাকলেও বলা হয়েছে, প্রাসাদের সংখ্যা নির্ধারিত হবে জান্নাতিদের কামানো সাওয়াব বা নেকী অনুযায়ী।

জান্নাতের মহলগুলি হবে জাঁকজমকপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ। সেখানে জান্নাতিরা চিরকাল থাকবে। তবে হাদিস অনুযায়ী, এইসব মহলের ক্ষেত্রেও শ্রেণী পার্থক্য বিদ্যমান থাকবে। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন জান্নাতিগন (নবী রসুলগণ) এমন সুউচ্চ ও উন্নততর মহলে অবস্থান করবে, সাধারণ জান্নাতিরা সেইসব মহলকে দূর থেকে সুদৃশ্য তারা-র মত দেখবে। আবু মালেক আশআরি (রা) বলেন, “রসুলুল্লাহ বলেছেন, জান্নাতে এমন অনেক সুউচ্চ মহল রয়েছে, যেগুলো শিল্পকর্মে এত স্বচ্ছ যে, তার ভিতর থেকে বাইরের ও বাইরে থেকে ভিতরের সব কিছু পরিদৃষ্ট হয় (মিস্কাত)।

জান্নাতের আবহাওয়া হবে নাতিশীতোষ্ণ (সুরা দাহর) । একাধিক সুপরিচিত বইতে জান্নাতকে এয়ার কন্ডিশনড (!) বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানকার আলো হবে প্রভাতকালীন আলোর মত। সুনির্মল সমীরণ ও অথচ উজ্জ্বল আলোয় প্রভাতকালীন পরিবেশ যেমন মনকে প্রফুল্ল রাখে, ঠিক তেমনি হবে জান্নাতের আবহাওয়া। আবার জান্নাতে সুকোমল ছায়াও বিরাজ করবে। সুরা রায়দ ও সুরা নিশায় বলা হয়েছে, জান্নাতে সর্বদা ঘন ছায়াঘেরা পরিবেশ বিরাজ করে। জান্নাতে দিনরাত্রিও আছে। কেননা, কোরআন অনুযায়ী জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন জান্নাতিরা প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় আল্লাহর দর্শন পাবে। এছাড়াও কোরআনে বলা হয়েছে যে, জান্নাত হবে সুঘ্রাণে পরিপূর্ণ। সেখানে সদা-সর্বদা ফুটে থাকা অসংখ্য ফুল ও ফলের সুগন্ধ এবং হুরীদের শরীর থেকে বের হওয়া মৃগনাভির সুগন্ধ মিলে এক অপূর্ব সুগন্ধে জান্নাত সর্বদাই পরিপূর্ণ থাকবে।

জান্নাতে থাকবে অসংখ্য সুসজ্জিত গাছপালা। এবং সেই গাছগুলিতে সর্বদাই ফুল ও ফল ধরে থাকবে। সুরা ওয়াকিয়া–তে বলা হয়েছে, “ তারা অবস্থান করবে এমন এক জান্নাতে যেখানে থাকবে কাঁটাবিহীন কুলগাছ, কান্দিভরা কলাগাছ, সম্প্রসারিত বিরাট ছায়া, সদা প্রবহমান জল ও প্রচুর ফলমূল, যা কখনো শেষ হবে না। সেখানে বিশুদ্ধ দুধ, পানি, মধু ও সুরার প্রবাহ (ঝর্ণা/নদী) থাকবে। কোনও কোনও ব্যাখ্যা অনুসারে, জান্নাতে অসংখ্য ঝর্ণা থাকলেও তাদের মধ্যে চারটি প্রধান। যেমন, সুরা দাহার-এ বলা হয়েছে 'সালসাবিল' নামে একটি প্রবাহের কথা । সালসাবিল হল এমন এক প্রবাহ বা ঝর্ণা, যা জান্নাতিরা যত্রতত্র নিজ ইচ্ছায় প্রবাহিত করতে পারবে।

যেসব পুরুষ জান্নাতে যাবে, আল্লাহর ইচ্ছায় জান্নাতে তাদের প্রত্যেককে পূর্ণবয়স্ক যুবক করে দেওয়া হবে। প্রত্যেক পুরুষের বয়স হবে ৩০ বছর। প্রত্যেকে দেখতে হবে অপূর্ব সুন্দর। সেখানে তাদের দাড়ি আল্লাহ খসিয়ে দেবেন। শুধু দাড়িই নয়, তাদের শরীরে রোম ও কেশ থাকবে না। তাদের পোশাক দেওয়া হবে সুন্দর পুরু রেশমের বস্ত্র। তাদের পরানো হবে মুক্তার তাজ, যেসব মুক্তার একটি পৃথিবীতে খসে পড়লে তা পূর্ব থেকে পশ্চিম - সারা পৃথিবীকে আলোকিত করে তুলবে। তাদের হাতে থাকবে স্বর্ণকঙ্কন। তাদের খাদ্য ও পানীয় পরিবেশন করা হবে স্বর্ণ পাত্রে। অবশ্য অন্যত্র স্বর্ণপাত্রের বদলে রৌপ্যপাত্রের কথা বলা হয়েছে। মলমূত্র ইত্যাদি তাদের হবে না। বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে বের হবে ঢেঁকুর ও সুবাসিত ঘামের দ্বারা। তাদের সর্দিও হবে না। সকল প্রকার রোগ থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হবে। লজ্জা, ঘৃণা ও আল্লাহর ভয় থেকে তাদের নিষ্কৃতি দেওয়া হবে। তাদের মনে সর্বদাই শান্তি বিরাজ করবে। আল্লাহ জান্নাতিদের যৌনক্ষমতা শতগুণ বাড়িয়ে দেবেন। তারা সেখানে অনন্তকাল যৌনসম্ভোগ করবেন। তাদের কখনো ক্লান্তি আসবে না। বীর্যস্খলন হবে না, যদিও আনন্দ ও উত্তেজনা অনেক বেশি হবে। প্রতিবার যৌনমিলনের স্থায়িত্বকাল হবে ৬০০ বছর। অন্য দিকে, জান্নাতি নারীদের প্রত্যেককে ১৬ বছরের অপূর্ব সুন্দরী যুবতীতে পরিণত করা হবে। তাদের প্রত্যেককে একজন পুরুষের সাথে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে। তবে সে তার ইহ জগতের স্বামী না-ও হতে পারে। নারীদের জান্নাতে আর ঠিক কী কী প্রাপ্য আছে, তার খুব একটা বিশদ বর্ণনা কোথাও নেই।

কোরআন অনুসারে, জান্নাতে জান্নাতিদের পুণ্যবতী স্ত্রীদেরও তাদের সঙ্গে রাখা হবে। অন্যত্র বলা হয়েছে, জান্নাতে তাদের পুণ্যকারী বাপ-মা, দাদা, পতি-পত্নী ও সন্তানগণ তাদের সাথে একান্নবর্তী পরিবারের মতো বাস করবে (সুরা আর রা’দ) । সঙ্গে জান্নাতি দের প্রত্যেক পুরুষকে অন্তত ৭২ টি করে হুরী ও ৮০০০০ গেলমান দেওয়া হবে অনন্তকাল যৌনসম্ভোগের জন্য।

হজরত আলিকে মহম্মদ জানিয়েছেন, “জান্নাতে একটি বাজার আছে। কিন্তু সেখানে কোনও কিছু কেনাবেচা হয় না। সেখানে অসংখ্য নারী-পুরুষের রূপ ও আকৃতির প্রতিকৃতি থাকবে। প্রতি জুম্মার দিন জান্নাতিগণ সেখানে মিলিত হবে। কোনও একটি প্রতিকৃতি দেখে কোনও জান্নাতি যদি মনে মনে সেই রূপ ও আকৃতি আশা করে, তাহলে তৎক্ষণাৎ তার রূপ ও আকৃতি সেই রকম হয়ে যাবে।” এবং আল্লাহ তাদের রূপ, সৌন্দর্য ও পোশাক আরও সুন্দর করে দেবেন। এরপর যখন সে নিজের পরিবারের কাছে ফিরে আসবে, তখন তারা বলবে যে, আল্লাহর কসম বলছি, আমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর তোমাদের রূপ-সৌন্দর্য অনেকগুণ বেড়ে গেছে।

সর্বোপরি সুরা হামিম এ বলা হয়েছে, “সেখানে তোমরা যা কিছু চাও, পাবে। এবং তোমাদের ইচ্ছা করার সাথে সাথেই তা হবে। এটা হল আল্লাহর তরফ থেকে মেহমানদারী।”

তো মোটের ওপর এই হল জান্নাত সম্পর্কে আমার ধারনা। ওপরের প্রত্যেকটিই কোরআন আর হাদিসের কথা। সুতরাং আমার ধারনা ভুল নয়। যদিও তাতে কিছুটা অসম্পূর্ণতা থাকতে পারে। কিন্তু মোটের ওপর জান্নাতের এই বর্ণনা আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। বারে বারেই মনে হয়েছে, এসব সত্যি তো? কখনো মনে হয়েছে, এই জান্নাতে যা কিছু আছে, সে সবই তো পুরুষের জন্য। আমি পুণ্য করলে আমি জান্নাতে যাবো ঠিক, তবে সেটা আমার জন্য নয়, বরং তা জান্নাতি পুরুষের জন্য। কোরআন হাদিসে জান্নাতের বর্ণনা দেখে কখনো কখনো এটাও মনে হয়েছে, এই প্রাপ্তি পুরুষ বা নারী কারো কাছেই পরম প্রাপ্তি বলে গণ্য হতে পারে কি? তবে সর্বদাই যা মনে হয়, তা হল, এই জান্নাতে যাওয়ার জন্য সারাটা জীবন ইসলামিক রীতিনীতি পালন করতে অন্তত আমি পারব না। কেননা এই প্রাপ্তি আমার কাছে যথেষ্ট নয়। জান্নাত নিয়ে আমি যতবার চিন্তা করি তত বেশি অসঙ্গতি, অসম্পূর্ণতা এবং স্বাতন্ত্র্যহীনতা ধরা পড়ে। এগুলোই প্রশ্নের আকারে এক এক করে তুলে ধরছি: 

প্রশ্ন ১. জান্নাতকে বোঝাতে আটটি ভিন্ন ভিন্ন শব্দ কোরআনে প্রয়োগ করা হয়েছে। তা কি আসলে একটি জান্নাতের আটটি স্তর বোঝায়? নাকি জান্নাত আটটি? নাকি জান্নাত অসংখ্য, যার মধ্যে কেবল আটটি উল্লিখিত? এর সার্বিক উত্তর কারো কাছে নেই।

প্রশ্ন ২. জান্নাতুল ফেরদৌস সম্পর্কে এত কথা বলা হয়েছে, অন্যান্য জান্নাতের সম্পর্কে (স্তরই হোক বা পৃথক) তার এক-দশমাংশও বলা হয় নি কেন?

প্রশ্ন ৩. কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী জান্নাতেও শ্রেনী বিভাজন থাকবে। সেখানে অট্টালিকাগুলি জান্নাতিদের পুণ্যকর্ম অনুযায়ী দেওয়া হবে। যারা কম পুণ্যকারী, তারা যখন নিজেদের অট্টালিকা থেকে বেশি পুণ্যকারীদের অট্টালিকাগুলি দেখবে, তখন তাদের কাছে সেগুলি সুদৃশ্য উজ্জ্বল তারার মত দেখাবে। সুতরাং আল্লাহর তৈরি জান্নাতও শ্রেণীবিভাজনমুক্ত নয়! সাম্যের আদর্শ নিয়ে আসা ইসলামের সর্বোচ্চ গন্তব্য এবং অন্তিম পুরস্কার অসাম্যের জান্নাত!

প্রশ্ন ৪. জান্নাতিদের পুণ্যকারী আত্মীয়রা একান্নবর্তী পরিবারের মতো সেখানে থাকবে বলা হয়েছে, যা কার্যত অসম্ভব। কেননা, পিতা ও পুত্রের পুণ্য যদি সমান না হয় (একজন কম ও অন্যজন বেশি পুণ্যকারী হলে), তাহলে তাদের বাড়িগুলি তো বহু দূরে দূরে থাকবে। সেক্ষেত্রে তারা একসাথে বাস করবে কীভাবে?

প্রশ্ন ৫. বাড়ির প্রয়োজন হয় প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য। জান্নাতে তো প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতি নেই। তাহলে অট্টালিকা কেন? আর তা যদি সঙ্গমকালীন পর্দার কারণে হয়, তবে স্বচ্ছ অট্টালিকা কেন?

প্রশ্ন ৬. কোরআন অনুযায়ী জান্নাতের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। এটা তো না হয় মেনে নিতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু পুরো জান্নাত জুড়ে প্রভাত সূর্যের মত সুকোমল কিন্তু উজ্জ্বল আলো থাকবে, আবার পুরো জান্নাত ঘন ছায়াঘেরা থাকবে - এই কথা দু'টি কি স্ববিরোধী নয়?

প্রশ্ন ৭. নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল জান্নাতে নরম আলো থেকে কষ্ট বা ক্লান্তির সম্ভাবনা তো নাই। তাছাড়া আল্লাহর জান্নাত তো কষ্ট- ও ক্লান্তিমুক্ত। তাহলে ঘন ছায়ার প্রয়োজন কোথায়?

প্রশ্ন ৮. জান্নাতে সকাল ও সন্ধ্যা হয়। কেননা সর্ব উচ্চ মানের জান্নাতিরা প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহ-র দর্শন পাবে বলা হয়েছে। কিন্তু অন্যত্র বলা হয়েছে সেখানে সদা সর্বদা প্রভাতসূর্যের মতো আলোকিত থাকবে। এই বিবৃতি দুটি কি স্ববিরোধী নয়?

প্রশ্ন ৯. একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়, জান্নাতে জান্নাতিদের ভালোলাগাগুলিও কিন্তু এই জগতের মানুষগুলোর মতোই , শুধু কষ্ট ও ক্লান্তির মতো খারাপ অনুভূতি সেখানে নেই। কিন্তু জান্নাতে তো বৈচিত্র্য নেই। সেখানে প্রথম বৃষ্টির স্পর্শ নেই, সোঁদা মাটির গন্ধ নেই, কাশবন নেই, হেমন্তের ঝরা পাতা নেই, ফাল্গুনের বৈঠকি শীতের উপর আলগা মিষ্টি রোদের খেলা নেই। অনন্তকাল একই রকম বৈচিত্র্যহীন স্থানে থাকলে কষ্ট না লাগলেও সেই ভালোলাগার অনুভূতি কি আর ততটা থাকবে?

প্রশ্ন ১০. জান্নাতে মধু, দুধ, পানি, সুরা এগুলি যখন বিশুদ্ধ হয়ে থাকবে, তখন এগুলো নিশ্চয়ই তাদের নিজস্ব সকল ধর্ম নিয়েই থাকবে। এগুলোর প্রবাহ যখন থাকবে তখন এগুলোর উৎস ও গন্তব্য নিশ্চয়ই থাকবে। কিন্তু সেখানে কোনও পাহাড় বা কোনও সমুদ্র জাতীয় কিছু তো নেই। পুরোটাই তো বাগান।

প্রশ্ন ১১. কেশ, রোম ও ভ্রূ ছাড়া কি মানুষ সুন্দর লাগতে পারে? জান্নাতিদের কীভাবে সুন্দর লাগবে? এমন একটি খুব সুন্দরী নারীর কথা কল্পনা করুন দেখি, যে কিনা কেশ রোম ও ভ্রূবিহীন!

প্রশ্ন ১২. জান্নাতিদের সকলকে নেতিবাচক গুণগুলি থেকে মুক্ত করা হবে। সেইজন্য জান্নাতে সর্বদা শান্তি বিরাজ করবে। কিন্তু এও বলা হয়েছে, জান্নাতিরা নিচে জাহান্নামিদের দিকে তাকিয়ে তাদের ওপর পরিহাস করবে। পরনিন্দা করা কি মহৎ গুণ? সেখানে কি নিজের আনন্দ নিয়ে থাকাই যথেষ্ট নয়?

প্রশ্ন ১৩. জান্নাতে জান্নাতিদের মধ্যে নিশ্চয়ই চিরকালীন শান্তি ও সন্তুষ্টি থাকবে না। কারণ নিজের রূপ ও আকৃতি সম্পর্কে অসন্তুষ্টি থাকলে তবেই তো তারা প্রতি জুম্মায় জান্নাতের বাজারে যাবে এবং অন্য রূপ ও আকৃতি পেতে চাইবে!

প্রশ্ন ১৪. যেখানে নিশ্চিত রূপেই মানুষের মধ্যে সন্তুষ্টি না থাকার প্রমাণ রয়েছে , আল্লাহ যেখানে মানুষের মনের মধ্যেকার অসন্তুষ্টি ও অশান্তি সরাতে পারেন নি, সেখানে নারীরা নিজের পতিকে অন্য ৭২ টা হুরীর সাথে ভাগ করে নিয়ে কতটা শান্তি ও সন্তুষ্টিতে থাকবে, তা তো জলের মতো পরিষ্কার!

প্রশ্ন ১৫. আয়েশা নামে আমার একসময়ের খুব অন্তরঙ্গ বান্ধবী আমায় বলতো, সালসাবিলকে আমি দুধের নদীর ওপর দিয়ে বয়িয়ে দিলে তো দুধ টা আর বিশুদ্ধ থাকবে না!!

প্রশ্ন ১৬. জান্নাতে প্রবাহিত সুরা হল বিশুদ্ধ সুরা। কিন্তু তা পান করলে কেউ মাতাল হবে না, এটা কীভাবে সম্ভব? মদশক্তি না থাকলে তাকে কি সুরা বলা যায়? তাও আবার বিশুদ্ধ সুরা!! মদশক্তি ছাড়া যদি সুরা সম্ভব হয়, তাহলে পানিও নিশ্চয়ই তৃষ্ণানিবারণী শক্তিবিহীন হতে পারে!

প্রশ্ন ১৭. জান্নাতিদের যে পাত্রে খাদ্য ও পানীয় পরিবেশিত হবে, তা নিয়েও পরস্পরবিরোধী মত। কোথাও বলা হয়েছে, পাত্রগুলি সোনার হবে আবার কোথাও বলা হয়েছে রুপোর হবে। কেন?

প্রশ্ন ১৮. জান্নাতিদের যে মুক্তার তাজ পরানো হবে সেখান থেকে একটি মুক্তা পৃথিবীতে পড়লে পৃথিবীতে পড়লে পৃথিবীর পশ্চিম থেকে পূর্ব আলোকিত করবে বলা হয়েছে। কোনও মুক্তার আলো-ই তা করতে সক্ষম নয়। কেননা পৃথিবী গোলাকার। [একটি অপ্রাসঙ্গিক কথা: জাকির নায়েক এর মতো পণ্ডিত(?)রা বলেন যে, কোরআন অনুসারে পৃথিবী নাকি উটপাখির ডিমের মতো প্রায় গোলাকার। তা কিন্তু পুরোপুরি মিথ্যা। কেননা, (পৃথিবীকে চ্যাপ্টা মনে করলেই একমাত্র) পৃথিবীর পশ্চিম থেকে পূর্ব একটি উৎস থেকে বের হওয়া আলোয় আলোকিত হতে পারে ।]

প্রশ্ন ১৯. কোরআনে বলা হয়েছে , আল্লাহর জান্নাতে যা চাওয়া হবে, তার সব কিছুই সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যাবে। কিন্তু তা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। যদি কেউ চেয়ে বসে, “আমি চাই জান্নাত হুরী ও গেলমান মুক্ত হোক” - তাহলে কি জান্নাত হুরী ও গেলমান মুক্ত হবে? যদি হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু কোরআনের আয়াত মিথ্যা হয়ে যাবে, মিথ্যা হয়ে যাবে আল্লাহ-র প্রতিশ্রুতি। আর যদি তা না হয় , তাহলেও আল্লাহ-র বাণী মিথ্যা হয়ে যাবে।

[এছাড়া হুরী ,গেলমান ও অন্যান্য কয়েকটি পরস্পর সম্পর্কিত বিষয়েও অনেক অসঙ্গতি আছে যেগুলি সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হল প্রসঙ্গ পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়। পরবর্তীকালে এই বিষয়ে স্বতন্ত্রভাবে লিখবো।] 

সব শেষে একটি কথা আবার বলতে চাই যে, জান্নাত সম্পর্কে আল্লাহ ও নবীর দাবীগুলি আমার কাছে যৌক্তিকভাবে এতটাই ভ্রান্ত বলে মনে হয়েছে, যার লোভ দেখিয়ে একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক যুক্তিবাদী মানুষকে বেশিদিন বোকা বানানো যাবে না। পাঠকের কাছে প্রশ্ন, এই স্ববিরোধী, অসঙ্গতিপূর্ণ জান্নাতের আশায় কি আপনারা কতকগুলি মধ্যযুগীয় রীতিনীতিসম্পন্ন গ্রন্থকে আপনার জীবনের পথনির্দেশিকা হিসাবে মেনে নেবেন?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন