অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙালি আবুল কাশেম। বহু বছর ধরে কোরান, হাদিস, ইসলামের ইতিহাস তথা ইসলাম নিয়ে সানুপুঙ্খ গবেষণালব্ধ অসংখ্য তথ্য-উপাত্তসমৃদ্ধ নিবন্ধ ইংরেজিতে রচনা করে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পেয়েছেন। সুখের কথা এই যে, তিনি কয়েক বছর হলো বাংলা টাইপিং আয়ত্ত করে নিয়ে বাংলায় চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর নিরলস ইসলাম-গবেষণা।
তাঁর রচনাগুলো ধর্মকারীতে প্রকাশের অনুমতি দিয়ে তিনি আমাদের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন।
মূল রচনা: আবুল কাশেম (সেক্স এন্ড সেক্সুয়ালিটি ইন ইসলাম)
অনুবাদ: খেলারাম পাঠক
অনুবাদ: খেলারাম পাঠক
(সতর্কতা: নরনারীর যৌনাচার নিয়ে এই প্রবন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই কামসম্পর্কিত নানাবিধ টার্ম ব্যবহার করতে হয়েছে প্রবন্ধে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যেও তাই অশালীনতার গন্ধ পাওয়া যেতে পারে। কাম সম্পর্কে যাদের শুচিবাই আছে, এই প্রবন্ধ পাঠে আহত হতে পারেন তারা। এই শ্রেনীর পাঠকদের তাই প্রবন্ধটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। পূর্ব সতর্কতা সত্বেও যদি কেউ এটি পাঠ করে আহত বোধ করেন, সেজন্যে কোনভাবেই লেখককে দায়ী করা চলবে না।)
ভুমিকা: ইসলামী সমাজে কাম বা সেক্স বিষয়টি একেবারেই অপ্রকাশ্য। সাধারণ মুসলিম সমাজে সেক্স শব্দটি কদাচিৎ উচ্চারিত বা আলোচিত হয়ে থাকে। হলেও হয় গোপনে, ভয়ে ভয়ে। (দৈব দুর্বিপাকে কোন সমস্যা দেখা দিলে কিংবা কাফেরদের দেশে নারীসম্ভোগের জন্যে গমন করা ছাড়া অন্য সময়ে যৌনবিষয়ক আলাপ আলোচনা ইসলামী সমাজে নিষিদ্ধই বলা যায়) ইসলাম ভান করে, যেন পুরুষ বা নারীর দেহে যৌনাঙ্গ বলতে কোনোকিছুর অস্তিত্ব নেই। একজন মুসলিম রমণীকে তার মাথা হতে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হয় আজীবন, তার “আওরাকে” সে এভাবেই আবরণ দিয়ে রক্ষা করে। ইসলামী পরিভাষায় আওরা বলতে নারীর সেই অঙ্গকে বোঝায়, যা দেখলে পুরুষ কামোত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং যা নারীর জন্যে লজ্জাস্বরূপ। অর্থাৎ সেক্সুয়াল অর্গান বা যৌনাঙ্গ হচ্ছে নারীদেহের একটি লজ্জাজনক অংশ! ‘তার সমস্ত দেহটিই একটি লজ্জাজনক বস্তু’ - এই অনুভূতি নিশ্চয়ই নারীদের জন্যে সম্মানের বিষয় নয়।
পুরুষের জন্যেও সিস্টেমটি চরম অবমাননাকর। কারণ এতে এই প্রমাণ হয় যে, পুরুষজাতি রাস্তায় বিচরণরত বেওয়ারিশ ষাঁড়ের চেয়ে বেশী কিছু নয়, সামনে মেয়ে দেখলেই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অপরিসীম যৌনক্ষুধা মিটিয়ে নেয়ার জন্যে সর্বক্ষণ মুখিয়ে আছে সে। একেবারেই অর্থহীন বাজে একটি ধারণা। এই কাফেরদের দেশে যুগের পর যুগ বাস করছি আমি, নানা বর্ণের নানা বয়েসের লাখ লাখ মেয়ে অহোরাত্র প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে। তাদের কারও বেশভুষা শালীন, কারও বেশভুষা প্রচলিত ভাষায় যাকে বলে চরম ‘সেক্সি’; কিন্তু কখনও দেখিনি যে, কোনো পুরুষ কামতাড়িত হয়ে এমনকি চরম সেক্সি মেয়েটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং পাশবিক ক্ষুধা মিটিয়ে নিল।
সেক্স সম্পর্কে ইসলামের ধারণা মুলতঃ বেদুঈন আরব কালচারের উপর প্রতিষ্ঠিত। আধুনিক সভ্য সমাজের মানদণ্ডে এই কালচার একেবারেই সেকেলে, বর্বর আর অসভ্য বললেও কম বলা হয়। কেন ইসলামী সমাজে সেক্স শব্দটি চরম নোংরা শব্দ বলে বিবেচিত হয়, কেনই বা এ সম্পর্কিত আলোচনা সেখানে একেবারেই নিষিদ্ধ -এই বিষয়টি আমাকে দারুণভাবে কৌতূহলী করে তোলে। ইসলামের মৌলিক ধর্মীয় রচনাগুলিতে সেক্স সম্পর্কে লিখিত কোনো বিধিবিধান আছে কি না, তা খুঁজে বের করতে প্রবৃত্ত হই আমি। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, তফসির, হাদিস, শরিয়া, ফিক্হ্ এইসব বিভিন্ন ইসলামী বিষয়ের উপর টন টন রচনা আছে, অথচ সেক্সের উপর যেটুকু তথ্য আছে তা অতীব সামান্য। সুতরাং এ সম্পর্কে কলম চালনা করতে আমাকে ভাসা ভাসা সূত্রের ওপর নির্ভর করতে হলো। আরও একটি বড় ধরনের সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল আমার জন্যে। আমি বিস্ময়ের সাথে আবিষ্কার করলাম - কামচর্চার নিষেধাজ্ঞাটি পুরুষদের ওপর মোটেও কার্যকরী নয় ইসলামে! আপাতঃ নিষেধ বলে যা প্রতীয়মান হয়, তা নেহায়েতই লোকদেখানো মাত্র!
ইসলামী আইনসমূহে অগণিত ছিদ্র রয়েছে। এত ছিদ্র আছে যে, ইচ্ছে করলে যে কোনো মুসলমান পুরুষ, তা সে বিবাহিত বা অবিবাহিত যা-ই হোক না কেন, আইনের কানাগলির সুযোগ নিয়ে অপরিমিত যৌনসম্ভোগ করতে পারে। তাকে যা করতে হবে, তা হলো খেলাটি ভালভাবে রপ্ত করা। না জেনে খেলতে গেলে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা। সেক্স করার জন্যে ইসলামে এত গুপ্ত উপায়, না-বলা এতসব আইনকানুন আছে যে মোল্লারা কখনও সে সম্পর্কে মুখ খুলবে না।
পাঠক, শীতকালে গরম লেপের উষ্ণতা কতোই না আরামদায়ক - তাই না? শেক্সপীয়ারের সনেট, রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গান, অজন্তার গুহাচিত্র কিংবা প্রাচীন গ্রীসের ভাস্কর্য - সর্বযুগের সংস্কৃতিপ্রেমী মানবসন্তানের মনে সন্তোষের জন্ম দেয়। কিন্তু আপনি কি ভেবে দেখেছেন যে, কিছু বিরল উপাদান আছে যার মাঝে মানুষ তার শারীরিক ও মানসিক তৃপ্তি এক সাথে খুজে পায়? সেক্স। হ্যাঁ, সেক্স হচ্ছে সেই বিরল উপাদানগুলির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান যা মানবজাতির (বিশেষ করে পুরুষ প্রজাতির) জালিকা শক্তি (ড্রাইভিং ফোর্স) হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। এই শক্তিশালী উপাদানটিকে কোন সমাজ কীভাবে হ্যান্ডল করে, তার ওপরেই সেই সমাজের প্রাগ্রসরতা কিংবা পরিপক্কতার পরিচয় নির্ভর করে।
এই নিরিখে ইসলাম কীভাবে সেক্সকে হ্যান্ডল করেছে, তার পর্যালোচনা করা যাক এবার। ইসলাম মানব-প্রজাতির যৌনাচারকে স্ত্রীজাতির মর্যাদার সাথে গুলিয়ে ফেলেছে। অথচ মানুষের স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়াকলাপ আর নারীর মর্যাদা সম্পূর্ণ আলাদা দু’টি বিষয়। পৃথিবীতে প্রচলিত আর সব ধর্ম - সামাজিক সিস্টেমগুলির সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে, ইসলাম সেক্স এবং সেক্সুয়াল পিউরিটির উপর অতিমাত্রায় গুরুত্ব আরোপ করে, অথচ এর মাঝে এত বেশী স্ববিরোধিতা রয়েছে, যা দেখে মনে হয় নরনারীর স্বাভাবিক যৌনাচার সম্পর্কে ইসলাম বড় বেশী স্পর্শকাতর, বড় বেশী উৎকন্ঠিত। সেক্স সম্পর্কে ইসলামের কপটতা, দ্বিমুখী ও পক্ষপাতদুষ্ট নীতি এবং উদ্ভট ও অযৌক্তিক বিধিনিষেধের স্বরূপ উন্মোচন করাই বক্ষমান প্রবন্ধের মুল উদ্দেশ্য। সেই সাথে এটাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো যে, যৌথ সম্মতির ভিত্তিতে নরনারীর যৌনতৃপ্তি মেটানোর প্রাকৃতিক অধিকারের ওপর কিছু অন্যায় ও অযৌক্তিক বাধানিষেধ আরোপ করে মানুষের ওপর অপরিসীম নির্যাতন চালানোর বিধান দেয়া হয়েছে ইসলামে। নরনারীর যৌন সম্পর্ক মানবজীবনের পরম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধরাপৃষ্ঠে জীবকুলের বিকাশ যৌনপ্রক্রিয়ারই অবধারিত ফসল। এটি ছাড়া ডারউইনের বিবর্তন বহু আগেই বন্ধ হয়ে যেতো। পাঠক, আসুন এবার আমরা ইসলামি সেক্সের ওপর আলোচনা শুরু করি।
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন