আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১২

ঈদের চাঁদ

লিখেছেন থাবা বাবা

সৌদী আরবে আজ ঈদ। রহিম কসাই তাড়াতাড়ি পাঁচটা গরু জবাই করে ফেললো। সৌদী আরবে ঈদ হইলে পরের দিন এইখানে ঈদ হবে এইটাই নিয়ম। রহিম মিয়া বিকালে গরু জবাই দিয়া ইফতারের পরে পরেই তার দোকানে ভাগা দিয়া বইসা গেছে… ঈদের দিন সবাই মাংস রান্ধে, তার বিক্রি হবেই। কিন্তু রহিম মিয়া দেখে মাংস কেউ কিনে না। সে একটু টেনশনে পইড়া গেল। কাহিনী তার মাথায় ঢুকতাছে না। ইফতারের ঘন্টাখানেক পরেও যখন কেউ মাংস কিনতে আইলো না, রহিম ভাই চিন্তায় পড়লো। মানুষ মাংস কিনে না কেন? পরের দিন ঈদ, কারো সেদিকে খেয়ালই নাই। 

রহিম মিয়া পোলারে দোকানে বসায়া বাইর হইয়া পড়লো কাহিনী দেখার জন্য। বাইর হয়ে মানুষের কথাবার্তা শুনে টের পাইলো যে, এখনো ঈদের চান্দ দেখা যায় নাই। তার মানে কাল ঈদ হবে না। রহিম মিয়ার মাথাটা চক্কর দিয়া উঠলো। তার পাঁচটা ইন্ডিয়ান গরু... গাঁও গেরামের বাজার, কারেন্ট আইলেও ঠিকমতো থাকে না। মাঝে মইধ্যে মনে করায় দেওনের লাইগ্যা বেড়াইতে আসে। রহিম মিয়ার দোকানে ফ্রিজ একটা আছে, কিন্তু কারেন্ট থাকে না বলে সেটা পড়েই থাকে সারা বছর। মাঝে-সাঝে পানি ঠাণ্ডা করা ছাড়া ওটার আর কোনো কাজ নাই। আর পাঁচটা গরু সেই ফ্রিজের মধ্যে ঢুকবে না। দিনেরটা দিনেই বিক্রি করে রহিম মিয়া। কিন্তু কাল ঈদ না হলে তার পাঁচটা গরু... সে আর চিন্তা করতে পারে না। 

তাড়াতাড়ি সে দোকানে গিয়া দশ কেজি মাংশ বাইন্ধা বাজারের মসজিদের পেশ ইমাম আলহাজ্জ্ব মুফতী মাউলানা আল্লামা মোহাম্মদ জামাল আল আবু বকর আলাইহে ছাহেবের বাড়িতে গিয়া উপস্থিত হইলো। হুজুর তখন তারাবীর জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। হুজুরের পায়ের কাছে মাংসের পোটলাটা রাইখা রহিম মিয়া লম্বা একটা সালাম দিয়া কইলো “হুজুর ঈদ মোবারক।”

হুজুর রিপ্লাইলো, “কী কও, আব্দুর রহিম? ঈদ মোবারক হইবো কেমনে? চাঁন দেহা যায় নাই তো এহনো!” 

শুইনা রহিম মিয়া আসমান থেইক্কা উষ্ঠা খাইয়া পড়ার ভান করলো। “কী কন হুজুর... আজ তো মদীনা মনোয়ারায় ঈদ, রেডুর খবরে হুনলাম। নবীর দ্যাশে ঈদ হইলে তো পরের দিন আমাগো দ্যাশে ঈদ অয়।”

হুজুর একটু রুষ্ট হয় রহিমের উপর, “চান না দেইখ্যা ঈদ হয় না আব্দুর রহিম, এখন বাড়ি যাও আর আল্লার রিজিক খাও। তারাওয়ীহর সালাতটা মসসিদে আইসা আদায় কইরা যাইও। এখন যাও, চাঁন দেখলে আইসা ঈদের মু-আনাকা কইরা যাইও। এখন যাও”! 

রহিম ঠিক এই সময় তার ট্রিক্সটা খাটায় ফালাইলো। “তা হুজুর, কাইল রোজা থাকলে আর মাংশ দিয়া কী করবেন, উল্ডা হুজুরাইনের উপরে পেরেশানী যাইবো। যাউকগা, আমি অহন যাই, তারাবীতে আপনের লগে মুলাকাত হইবো হুজুর” বলে মাংসের পোটলাটা তুলে রওনা দেয়। 

হুজুর পেছন থেকে ডাকে, “আব্দুর রহিম, তুমি ঠিক যান তো আজকা মদীনা মুনাওয়্যারায় ঈদ?”

“হ হুজুর, আমি নিজের কানে রেডুর খবরে হুইনাই তো পাঁচডা গরু জবাই দিলাম, এহন আপনে কন চান না দেখলে ঈদ অয় না।”

হুজুর চিন্তায় পড়ে, “তাঁরা জ্ঞানী মানুষ, তারা তাই কিছু বুইঝাই ঈদ করতাছে। তুমি গোস্ত রাইখা আমার লগে আস, দেখি কী করা যায়। কোনো জায়গায় চাঁন দেখা গ্যাছে কি না দেখি।”

রহিম মিয়া মাংসের পোটলাটা রাইখা হুজুরের পেছন পেছন মসজিদ লাগোয়া একটা ছোট ঘরে যায়। এইটা হুজুরের দপ্তর কাম মসজিদ কমিটির ‘কিয়াসের’ জায়গা। মসজিদ কমিটির কয়জন মেম্বার ঐখনে বইসা চা-বিড়ি খাইতেছিল। হুজুররে দেইখা সবাই বিড়ি-বুড়ি লুকায় ফালাইলো। হুজুর কোনো দিকে না তাকায় কইলো, “আপনেরা জানেন যে আইজ মদীনা মুনাওয়্যারায় ঈদ?”

মসজিদের এক মোতাওয়াল্লী কইলো “জ্বী হুজুর।”

“আপনেরা কেউ আমারে কইলেন না কেন কথাডা? আপনেরা জানেন না যে, হেরা ঈদ করার মানে হইলো আমাদেরো তাগো ফলো করা লাগবো?”

“হুজুর, আমাগো চাঁন কি দেহা গ্যাছে?”

“হেরা তো চান দেইখাই ঈদ করতাছে, আমরা কি মদীনা মুনাওয়্যারার হেগো উপরে আমাগো ইমান হারায় ফালাইছি নাকি?”

“কিন্তু হুজুর, আমাগো এইহানে চান না দেখলে কেমনে? ইসলামিক ফাউন্ডেশন তো কিছু কয় নাই।”

“কী কন মিয়া, এই আওয়ামী জাহেলিয়াতের ফাইন্ডেশনের কতা আপনের কাছে নবীর রওজাত্থে বেশী ইমানী লাগে?”

মুতাওয়াল্লীরা চিন্তায় পইড়া গেল। হুজুর তো কথা মিছা কয় নাই। হেরা তো চান দেইখ্যাই ঈদ করতাছে, তাইলে আমাগো সমস্যাডা কী? আরব দ্যাশ নবীর দ্যাশ, তাগো কতা বিশ্বাস না করা মানে তো মুনাফেকী করা। একজন সাহস কইরা মিন মিন কইরা কইলো, “হুজুর, তাইলে একটা মাইক আর রিক্সা ভাড়া করমু?”

হুজুর একটু নরম-গরম ভাষায় কইলো, “আমার লাইগ্যা বইসা রইছেন কেন তাইলে আপনেরা? এইডা এফতারের পরেই করনের কাম আছিল। যান, এক্ষনই মাইক পাঠায় দেন।” তার পরে রহিম কসাইয়ের দিকে ফিরা মোলায়েম স্বরে কপিলো, ‘আর আব্দুর রহিম মিয়া, কাল ঈদের দিন মসসিদের এতিমখানায় একটা জেয়াফতের নিয়ত করছিলাম। পারলে কিছু দিয়া শরীক হইয়া যাইয়েন। পেয়ারা নবীও তো এতিম আছিলো, তাই নবীজীর লাইগ্যা খাছ দেলে কিছু করি আমরা...” বলতে বলতে পেশ হুজুর হাপুস নয়নে কান্দা শুরু করলো। 

রহিম মিয়া দোকানে গিয়া আরো ১৫ কেজি মাংস বাইন্ধা হুজুরের দরবারে পাঠায় দিল। তাতে তার দুঃখ নাই। কারণ, মাইকিং এর ঘন্টাখানেকের মইধ্যে তার সব মাংস বেচা শেষ... দামও একটু বেশিই পাইছে। কারণ অন্য কোনো কসাই বিকালে গরু জবাই দেয় নাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন