ক্লাস নাইন। ধর্ম ক্লাস নেন আব্দুল মান্নান স্যার। আমাদের স্কুলে শুধুমাত্র ইসলাম ধর্ম ক্লাস হতো। হিন্দুধর্ম হতো না। সিলেবাস দেওয়া থাকতো। সময় আসলে শুধু পরীক্ষাই দিতে হতো ছাত্রদের।
আব্দুল মান্নান স্যার ছিলেন চরম মাত্রায় হিন্দুবিরোধী। রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতাও করতেন। ধর্ম ক্লাসে হিন্দু ছেলেদের পিছনের বেঞ্চে একসাথে বসতে বলতেন। চুপ করে বসে থাকতো ওরা। কথা বললেই মাইর।
একদিন স্যার বোর্ডে লিখলেন, ‘ভগবান।’
‘আজকে আমি তোমাদের শিখাইবো হিন্দুরা এতো খারাপ কেন? কেন ওরা আজকে ইসলামের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। এই সব কিছুর মুলে হইতেসে এই ‘ভগবান’।
কোনো কিছুর অতীত না জানিয়া তোমরা কখনোই তার সম্পর্কে ভাল ধারণা পাইতে পারবা না। তাই আজকে তোমাদের আমি শিখাইবো ‘ভগবান’ শব্দের মানে কী।
‘ভগবান’ শব্দ থেকে যদি ‘ভ’ কেটে দাও তাহলে থাকে ‘গবান’।
তোমরা কেউ কি এই ‘গবান’ শব্দের মানে জানো? এর মানে হইতেসে গবেট। হিন্দুরা হইতেসে গবেট, তাই তারা শান্তির ধর্ম ইসলাম কবুল না করিয়া মূর্তি পূজা করে। এদেরকে আমরা গবেট না বলিয়া আর কী বলিতে পারি?
এবার যদি আমরা ‘গবান’ থেকে ‘গ’ অক্ষরটি সরিয়ে ফেলি তাহলে থাকে ‘বান’; এটা হচ্ছে সেই বাণ যে বাণ তোমাদের বুকে বিঁধে তোমাদের রক্তাক্ত করবে। হিন্দুরা হচ্ছে তোমাদের জন্য একেকটি বাণ।
এবার যদি আমরা ‘বান’ এর থেকে ‘বা’ কেটে নেই, তাহলে থাকে ‘ন’। ‘ন’ মানে নাথিং। কিছু নেই।
হিন্দু ধর্ম বলে কিছু নেই। হিন্দুদের ভগবান নেই।'
স্যারের ক্লাস শেষে আমরা হিন্দু-মুসলমান বন্ধুরা একে অন্যের সাথে কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। স্যার কী সব বলে গেলেন। আমরা অনেকে বললাম, স্যারের এসব বলা ঠিক হয়নি, আবার কেউ কেউ বলল, স্যার যা বলেছেন, একদম ঠিক বলেছেন। হিন্দুদের সাথে মেলামেশা করা ঠিক না।
যাই হোক। অনেকদিন কেটে গেল স্যারের এই লেকচারের পর।
একদিন আমার এক হিন্দু বন্ধুর ধর্ম খাতা দেখার জন্য আমি নিলাম। পৃষ্ঠা ওল্টাতে ওল্টাতে একটা জায়গায় একটা লেখা আমার চোখ আটকে দিল।
খোদা।
খোদা শব্দ থেকে যদি ‘এ-কার’ বাদ দেই, তাহলে থাকে ‘খাদা’। ‘খাদা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে খাদ। ইসলাম হচ্ছে এমন একটি খাদ, যে-খাদ আমাদের গিলে খাবে।
এবার যদি ‘খাদা’ থেকে ‘খ’ কেটে নেই, তাহলে থাকে ‘আদা’ যার অর্থ হচ্ছে আদতে বা শুরুতে। অর্থাৎ ইসলাম হচ্ছে সব ধ্বংসের শুরু।
এরপর যদি ‘আদা’ থেকে ‘আ’ অক্ষরটি আমরা সরিয়ে ফেলি তবে থাকে ‘দ’। ‘দ’ হচ্ছে দৈত্য, ‘দ’ হচ্ছে দানব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন