আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২

কুরানে বিগ্যান (পর্ব-২১): কানে-চোখে-মনে সিলমোহর তত্ত্ব

লিখেছেন গোলাপ


সংকলিত কুরানের সর্বপ্রথম বোধগম্য প্রথম চারটি (২:২-৫) বাক্যের পরের দু'টি বাক্যেই মুহাম্মদ আরও দাবি করেছেন যে, বিশ্বস্রষ্টা অবিশ্বাসীদের কানে, চোখে ও মনে "সিল-মোহর" মেরে বিশ্বাসী হওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেন! বশ্যতা অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে এই প্রতিহিংসাপরায়ণ পৈশাচিক কর্মকাণ্ডকে মুহাম্মদ স্রষ্টার বাণী বলে প্রচার করেছিলেন! মুহাম্মদের ভাষায়: 
২:৬-৭ – “নিশ্চিতই যারা কাফের হয়েছে তাদেরকে আপনি ভয় প্রদর্শন করুন আর নাই করুন তাতে কিছুই আসে যায় না, তারা ঈমান আনবে না। আল্লাহ তাদের অন্তঃকরণ এবং তাদের কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।"

>>> মুহাম্মদ তার নবী জীবনের বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনুরূপ দাবি করেছেন বহুবার। অল্প কিছু উদাহরণ:

ক) স্বয়ং আল্লাহ অবিশ্বাসীদের “অন্তরে” মারেন মোহর - যেন তারা বুঝতে না পারে!
:১৫৫ - অতএব, তারা যে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল, তা ছিল তাদেরই অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য এবং অন্যায়ভাবে রসূলগণকে হত্যা করার কারণে এবং তাদের এই উক্তির দরুন যে, আমাদের হৃদয় আচ্ছন্ন| অবশ্য তা নয়, বরং কুফরীর কারণে স্বয়ং আল্লাহ্ তাদের অন্তরের উপর মোহর এঁটে দিয়েছেন|  ফলে এরা ঈমান আনে না কিন্তু অতি অল্পসংখ্যক।
:৮৭ - তারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছে এবং মোহর এঁটে দেয়া হয়েছে তাদের অন্তরসমূহের উপর। বস্তুতঃ তারা বোঝে না।  
৩০:৫৯ - এমনিভাবে আল্লাহ জ্ঞানহীনদের হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন।
:৯৩ - অভিযোগের পথ তো তাদের ব্যাপারে রয়েছে, যারা তোমার নিকট অব্যাহতি কামনা করে অথচ তারা সম্পদশালী। যারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থাকতে পেরে আনন্দিত হয়েছে। আর আল্লাহ মোহর এঁটে দিয়েছেন তাদের অন্তরসমূহে। বস্তুতঃ তারা জানতেও পারেনি।
৪৭:১৬ - তাদের মধ্যে কতক আপনার দিকে কান পাতে, অতঃপর যখন আপনার কাছ থেকে বাইরে যায়, তখন যারা শিক্ষিত, তাদেরকে বলেঃ এইমাত্র তিনি কি বললেন?  এদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তারা নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে।
:১০০ - তাদের নিকট কি একথা প্রকাশিত হয়নি, যারা উত্তারাধিকার লাভ করেছে। সেখানকার লোকদের ধ্বংসপ্রাপ্ত হবার পর যদি আমি ইচ্ছা করতাম, তবে তাদেরকে তাদের পাপের দরুন পাকড়াও করে ফেলতাম| বস্তুত: আমি মোহর এঁটে দিয়েছি তাদের অন্তরসমূহের উপরকাজেই এরা শুনতে পায় না।
খ) আল্লাহ “অন্তর ও কানে” ভরেন বোঝা - যেন তারা বুঝতে ও শুনতে না পারে!
:২৫-তাদের কেউ কেউ আপনার দিকে কান লাগিয়ে থাকে। আমি তাদের  অন্তরের  উপর  আবরণ  রেখে দিয়েছি যাতে একে না বুঝে এবং তাদের কানে বোঝা ভরে দিয়েছি। যদি তারা সব নিদর্শন অবলোকন করে তবুও সেগুলো বিশ্বাস করবে না| এমনকি, তারা যখন আপনার কাছে ঝগড়া করতে আসে, তখন কাফেররা বলে: এটি পূর্ববর্তীদের কিচ্ছাকাহিনী বৈ তো নয়।
১৭:৪৫-৪৬ - যখন আপনি কোরআন পাঠ করেন, তখন আমি আপনার মধ্যে পরকালে অবিশ্বাসীদের মধ্যে প্রচ্ছন্ন পর্দা  ফেলে দেই। আমি তাদের  অন্তরের  উপর  আবরণ  রেখে দেই, যাতে তারা  একে  উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদের কর্ণকুহরে বোঝা চাপিয়ে দেই। যখন আপনি কোরআনে পালনকর্তার একত্ব আবৃত্তি করেন, তখন অনীহাবশতঃ ওরা পৃষ্ট প্রদর্শন করে চলে যায়। 
১৮:৫৭ - তার চাইতে অধিক জালেম কে, যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার পূর্ববর্তী কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়? আমি তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে দিয়েছি, যেন তা না বোঝে এবং তাদের কানে রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেন, তবে কখনই তারা সৎপথে আসবে না।
গ) আল্লাহ "অন্তর-কর্ণ-চক্ষুর" ওপর মোহর মেরে করেন সম্পূর্ণ বিকলাঙ্গ!
১৬:১০৮ - এরাই তারা, আল্লাহ তায়ালা এদেরই অন্তর, কর্ণ চক্ষুর উপর মোহর মেরে দিয়েছেন এবং এরাই কান্ড জ্ঞানহীন।  
>>> প্রবক্তা মুহাম্মদ আমাদের আরও জানিয়েছেন যে তাঁর কল্পিত স্রষ্টা অবিশ্বাসীদের অন্তরের ব্যাধি আরও বৃদ্ধি করে তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। তার ভাষায়,

১) আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন
:১০ - তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহতাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদেরজন্যনির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদেরমিথ্যাচারের দরুন।
:১১০ - আমি ঘুরিয়ে দিবতাদের অন্তর দৃষ্টিকে, যেমন-তারা এর প্রতি প্রথমবার বিশ্বাস স্থাপন করেনি এবং আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্ত ছেড়ে দিব।
২) আল্লাহ প্রত্যেক জনপদে অপরাধীদের জন্য সর্দার নিয়োগ করেন!
:১২৩ - আর এমনিভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে অপরাধীদের জন্য কিছু সর্দার নিয়োগ করেছি-যেন তারা সেখানে চক্রান্ত করে। তাদের সে চক্রান্ত তাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই; কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারে না।   
৩) আল্লাহ শয়তানকে অবিশ্বাসীদের বন্ধু করে দেন!
:২৭-হে বনী-আদম শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্খায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছি-যাতে তাদেরকে লজ্জা স্খান দেখিয়ে দেয়| সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, , যারা বিশ্বাস স্খাপন করে না।   
) আল্লাহ অবিশ্বাসীদের সৎপথ  থেকে বাধা দান করেন!
১৩:৩৩ - ওরা প্রত্যেকেই কি মাথার উপর স্ব স্ব কৃতকর্ম নিয়ে দন্ডায়মান নয়? এবং তারা আল্লাহর জন্য অংশীদার সাব্যস্ত করে। বলুন; নাম বল অথবা খবর দাও পৃথিবীর এমন কিছু জিনিস সম্পর্কে যা তিনি জানেন না? অথবা অসার কথাবার্তা বলছ? বরং সুশোভিত করা হয়েছে কাফেরদের জন্যে তাদের প্রতারণাকে এবং তাদেরকে সৎপথ থেকে বাধা দান করা হয়েছে। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন পথ প্রদর্শক নেই।  
) আল্লাহ অবিশ্বাসীদের পাপাচারে উদ্ধুদ্ধ করেন!
১৭:১৬ - যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থাপন্ন লোকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করি অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে তখন সে জনগোষ্টীর উপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি তাকে উঠিয়ে আছাড় দেই।     
২৭: - যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মকান্ডকে সুশোভিত করে দিয়েছি। অতএব, তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়।
) আল্লাহ অবিশ্বাসীদের বিভ্রান্ত করেন!
৪০:৬৩ - এমনিভাবে তাদেরকে বিভ্রান্ত করা হয়, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে।  
) আল্লাহ অবিশ্বাসীদের সাথে  কৌশল করে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যান!
৬৮:৪৫-৪৫ - অতএব, যারা এই কালামকে মিথ্যা বলে, তাদেরকে আমার হাতে ছেড়ে দিন, আমি এমন ধীরে ধীরে তাদেরকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাব যে, তারা জানতে পারবে না।  আমি তাদেরকে সময় দেই। নিশ্চয় আমার কৌশল মজবুত।  
)  আল্লাহ অবিশ্বাসীদের গোমরাহ করেন
:১৪৩ এরা দোদুল্যমান অবস্খায় ঝুলন্ত; এদিকেও নয় ওদিকেও নয়। বস্তুত: যাকে আল্লাহ্ গোমরাহ করে দেন, তুমি তাদের জন্য কোন পথই পাবে না কোথাও।
) আল্লাহ স্বয়ং তার ফেরেশতাকুল অবিশ্বাসীদের অভিসম্পাত করেন!
 - বিস্তারিত একাদশ পর্ব অভিশাপ তত্ত্বে।

১০আল্লাহ অবিশ্বাসীদের ধ্বংস কামনা করেন!  
৬৩:- - মুনাফিকরা আপনার কাছে এসে বলেঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল। আল্লাহ জানেন যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রসূল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। তারা তাদের শপথসমূহকে ঢালরূপে ব্যবহার করে। অতঃপর তারা আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে। তারা যা করছে, তা খুবই মন্দ।এটা এজন্য যে, তারা বিশ্বাস করার পর পুনরায় কাফের হয়েছে। ফলে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। অতএব তারা বুঝে না। আপনি যখন তাদেরকে দেখেন, তখন তাদের দেহাবয়ব আপনার কাছে প্রীতিকর মনে হয়। আর যদি তারা কথা বলে, তবে আপনি তাদের কথা শুনেন। তারা প্রাচীরে ঠেকানো কাঠসদৃশ্য। প্রত্যেক শোরগোলকে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে। তারাই শত্রু, অতএব  তাদের সম্পর্কে সতর্ক হোন। ধ্বংস করুন আল্লাহ তাদেরকে। তারা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছে?
>>> মুহাম্মদ মানব ইতিহাসের স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গের একজন। আজকের পৃথিবীর ১৪০ কোটি মানুষ জন্মসূত্রে (ধর্মান্তরিতের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য) তাঁর প্রবর্তিত মতবাদ/ধর্মের অনুসারী। অথচ এ মানুষটি সম্বন্ধে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষেরই স্বচ্ছ কোনো ধারণা নেই। কেন? কারণ, শতাব্দীর পর শতাব্দী "বাধ্যতামূলক গুণকীর্তনের" মাধ্যমে তাকে আড়াল করে রাখা হয়েছে! মুহাম্মদের যাবতীয় বাণী ও কর্মকাণ্ডকে ঐশী ও পুত-পবিত্র রূপে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনে নিবেদিতপ্রাণ শত-সহস্র ইসলামী পণ্ডিত গত ১৪০০ বছর যাবত হাজার হাজার পৃষ্ঠা রচনা করেছেন, ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে। বোধগম্য কারণেই তাদের লেখাগুলো পক্ষপাতদুষ্ট, একপেশে, অতিরঞ্জিত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসত্য। কারণ ইসলামের প্রাথমিক সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো ইসলামবিশ্বাসীই মুহাম্মদের বাণী ও কর্মের কোনোরূপ সমালোচনা করার "কোনো" অধিকারই রাখেন না। পরোক্ষভাবেও নয়। সমালোচনার শাস্তি ভয়াবহ, ইসলামী বিধানেই


অমুসলিম লেখক/বুদ্ধিজীবীরাও একইভাবে পঙ্গু। শাসক, ক্ষমতাসীন ও নিবেদিতপ্রাণ ইসলাম অনুসারীর পেশীশক্তি এবং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক যাঁতাকলকে অবজ্ঞা করার পরিণতি ভয়াবহ! মুহাম্মদ সময়কালের আবু লাহাব-ক্বাব বিন আশরাফ-আবু রাফি-আসমা বিনতে মারোয়ান (দ্বাদশ পর্ব) থেকে শুরু করে বর্তমানের হুমায়ুন আজাদ-তসলিমা নাসরিন-সালমান রুশদী-আয়ান হারসি আলি ও সাবমিশান (Submission) চলচ্চিত্র নির্মাতা থিও ভ্যান গোগ সহ অসংখ্য উদাহরণকে কি অবজ্ঞা করা যায়? ইসলামী মতবাদের সামান্যতম প্রতিবাদ করে চরম মূল্যের জন্য সদা সন্ত্রস্ত থাকার দুঃসাহস কে দেখাতে পারে? পলিটিকাল কারেক্টনেস (Political correctness) নামের চতুরতার আশ্রয়ে সুবিধাজনক লেখা-বক্তৃতা-বিবৃতি-মন্তব্য-টক শো-এর নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে  কে যেতে চায়? এ পরিস্থিতির অবশ্যম্ভাবী ফলাফল "সত্যের সমাধি"! এমত পরিস্থিতিতে সত্যকে আবিষ্কার করতে হলে খুঁড়তে হবেইতিহাসের "কবর"। গত ১৪০০ বছরের হাজার হাজার পৃষ্ঠার পক্ষপাতদুষ্ট লেখা থেকে সত্যকে উদ্ধার অত্যন্ত দুরূহ, গবেষণাধর্মী ও সময়সাপেক্ষ কার্যক্রম। কিন্তু তা কক্ষনোই অর্থহীন নয়। বিশেষ করে যে মানুষের অনুসারীর সংখ্যা ১৪০ কোটি!

তথাকথিত ঈসা অথবা মুসা কোনো গ্রন্থ রচনা করেননি। এ নামে কোনো ব্যক্তি পৃথিবীতে আদৌ ছিলেন কি না, সে ব্যাপারেও পণ্ডিতরা একমত নন। তথাকথিত ঈসার মৃত্যুর প্রায় অর্ধ-শতাব্দী পরে তাঁর উদ্ধৃতি দিয়ে রচিত হয়েছে বাইবেল। তথাকথিত মুসার মৃত্যুর কয়েক শত বছর পর তাঁর উদ্ধৃতি দিয়ে রচিত হয়েছে তৌরাত। অন্যদিকে মুহাম্মদ নিজেই নিজেকেনবী হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। স্রষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে রচনা করেছেন কুরান। মানব ইতিহাসের হাজারও নৃশংস ঘটনার নায়কের উত্থান-পতন হয়েছে। তারা মৃত। মুহাম্মদও মৃত। আমার জানা মতে, মুহাম্মদই একমাত্র সফলকাম মানুষ, যিনি নিজে তাঁর যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে ঐশী, নির্ভুল ও কাল উত্তীর্ণ বলে প্রচার করেছিলেন। তাঁর অনুসারীরাও সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তাঁর মতবাদ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার ও প্রসারে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তাই মুহাম্মদের যাবতীয় অমনাবিক শিক্ষা আজও পালিত হচ্ছে পরম একাগ্রতায়! ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী নির্বিশেষে পৃথিবীর আপামর জনসাধারণ। প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে। 

সে কারণেই ঘুরে ফিরে এই মৃত মানুষটিকে নিয়ে এতো আলোচনা-সমালোচনা। তার উপর আক্রোশবশতঃ নয়। আমি মনে করি, মৃত মানুষের উপর জীবিতের কোনোরূপ আক্রোশ থাকা উচিত নয়। কারণ তা অর্থহীন! মৃত মানুষের কোনো কর্মক্ষমতা নেই। সে জাগতিক যাবতীয় ভাল-মন্দ ও আলোচনা-সমালোচনার অতীত। মুহাম্মদ-পরবর্তী ইসলামবিশ্বাসী রাষ্ট্রনায়ক ও অনুসারীদের যাবতীয় অমানবিক কর্মকাণ্ড এবং মুহাম্মদের যাবতীয় কাজের বৈধতা দানকারী পণ্ডিতদের কর্মকাণ্ডের জন্য মুহাম্মদকে কি দায়ী করা যায়? দায়ী সেই ব্যক্তিরা, যারা সেই কর্মের সাথে জড়িত। কোনো মৃত ব্যক্তি নয়!

মুহাম্মদ ছিলেন সপ্তম শতাব্দীর আনুষ্ঠানিক শিক্ষাবঞ্চিত এক আরব বেদুইন। তাঁর চিন্তা-ভাবনা, মন-মানসিকতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি বিষয়ের সাথে আধুনিক মানুষের চিন্তাধারার উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হবেই। এ সহজ সত্যকে অস্বীকার কারে যারা "মুহাম্মদী মতবাদ" সর্বকালের মানুষের জন্য একমাত্র পূর্নাঙ্গ জীবনবিধান রূপে প্রতিষ্ঠার ব্রতে ব্রতী হয়ে "মুহাম্মদী কায়দায়" পৃথিবীবাসীকে সন্ত্রস্ত করে তুলেছেন, তাদেরকে প্রতিহত করার দায়িত্ব সকল মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের! এই দায়িত্ব জ্ঞানেই ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ করার মানসে অগণিত মুক্তমনা আজ কলম ধরেছেন।

বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী নির্বিশেষে যে "সত্যে" আমরা একমত, তা হলো সৃষ্টিকর্তার (যদি থাকে) বাণীতে কোনোরূপ অসামঞ্জস্য, ভুল বা মিথ্যা থাকতে পারে না। শুধু “একটি মাত্র” ভুল, অবাস্তবতা অথবা অসামঞ্জস্য থাকলেই একশত ভাগ সুনিশ্চিত ভাবেই বলা যাবে যে, কুরান 'বিশ্বস্রষ্টার' বাণী হতে পারে না। গত বিশটি পর্বের আলোচনায় আমরা নিশ্চিতরূপে জেনেছি যে, মুহাম্মদের প্রচারিত বাণী আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-বাস্তবতার আলোকে অসংখ্য অসত্য, মিথ্যা ও অসামঞ্জস্যতায় ভরপুর। সুতরাং কুরান কোনো অবস্থাতেই স্রষ্টার বাণী হতে পারে না।

প্রতিটি মানুষেরই বচন ও কর্ম সে মানুষটিরই মন-মানসিকতার একান্ত বৈশিষ্ট্য। তা সেই বচন ও কর্ম তিনি ভুত-প্রেত-আত্মা অথবা জীনের উদ্ধৃতি দিয়েই করুন কিংবা করুন সৃষ্টিকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে! সব ক্ষেত্রেই তা তারই নিজস্ব মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। উদ্ধৃত জিন-ভুত-আত্মা বা স্রষ্টার নয়! কুরানের যাবতীয় বাণী "একান্তই" মুহাম্মদের। তাই কুরানের বক্তব্যকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণই হলো মুহাম্মদ ও তাঁর মানসিকতাকে আবিষ্কারের সবচেয়ে সহজ, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং সবচেয়ে কম শ্রমসাধ্য পদ্ধতি। গত দু'টি পর্বের আলোচনায় আমরা যে সত্যটি আবিষ্কার করলাম, তা হলো কুরানের প্রবক্তা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর কল্পিত সৃষ্টিকর্তাকে রূপায়িত করেছেন এক পক্ষপাতদুষ্ট, কুচক্রী, প্রতিহিংসা পরায়ণ, নীতিহীন, স্বেচ্ছাচারী রূপে! মুহাম্মদ তাঁর জবান-বন্দীতে (কুরানে) অসংখ্যবার ‌ঘোষণা দিয়েছেন যে তার আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা বিশ্বাসী বানান, যাকে ইচ্ছা অবিশ্বাসী বানান! যাকে ইচ্ছা করেন সুপথগামী, যাকে ইচ্ছা করেন বিপথগামী। যাকে ইচ্ছা করেন ক্ষমা, প্রবেশ করান জান্নাতে! যাকে ইচ্ছা দেন শাস্তি, টেনে-হেঁচড়ে নিক্ষেপ করেন জাহান্নামের অনন্ত আগুন ও রক্ত-পুঁজের সমুদ্রে! তিনি অবিশ্বাসীদের পেছনে লেলিয়ে দেন শয়তানকে, যেন শয়তান তাদেরকে করে বিপথগামী ও পথভ্রষ্ট! এহেন কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে মানবতার যে কোন মানদণ্ডে কুৎসিত, অনৈতিক ও গর্হিত!

এই অনন্ত মহাবিশ্বের আদৌ কোন স্রষ্টা আছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই।  এর পরেও যাঁরা স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী, তাঁরা কি তাঁদের সৃষ্টিকর্তাকে কখনোই পক্ষপাতদুষ্ট, কুচক্রী, নীতিহীন, স্বেচ্ছাচারী রূপে কল্পনা করতে পারেন? কক্ষনোই নয়! উপরি উক্ত দাবি একান্তই মুহাম্মদের। কোনো সুস্থ বিবেকবান মুক্তবুদ্ধির সভ্য মানুষ কখনোই কোনো পক্ষপাতদুষ্ট, কুচক্রী, নীতিহীনের সমর্থক হতে পারেন না।

পাঠক, আগেই বলেছি; আমার এ লেখা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের সপক্ষে কিংবা বিপক্ষে নয়। স্রষ্টায় বিশ্বাস উচিত নাকি অনুচিত, প্রয়োজন নাকি অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকারক নাকি লাভজনক, সে প্রসঙ্গেও নয়। সমগ্র আলোচনার উদ্দেশ্য - স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিজেরই জবানবন্দী ও কার্যকলাপ বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাঁর দাবীর যথার্থতা/অসাড়তা নিরূপণ! তাঁর সত্যিকারের জীবনী ও মানসিকতা নিরূপণ! মনোযোগী হয়ে কুরান পড়ুন এবং সত্যকে জানুন। 

[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।]

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন