আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৪

মডারেট মুসলমানদের উদ্দেশে খোলা চিঠি - ১

মুল রচনাআলি এ রিজভি
অনুবাদ: মাহফুজ সজল

প্রথমেই বলে নিই, আমি কী কী করব না।

আমি বলব না, বিশ্বব্যাপী মুসলিম জঙ্গিবাদের সময় আপনারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। আমি নিশ্চিত, আপনাদের মধ্যে বেশিরভাগই ISIS-এর মত জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। সত্যি বলতে, আপনাদের সাহায্যের জন্যই ISIS-কে আঘাত করা সহজ হয়েছে।

আমি আরও বলব না, আপনারা এইসব জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। আমি নিশ্চিত জানি, আপনিও আমাদের (আর দশটা অমুসলমানের) মত জঙ্গিদের এই সব জিহাদ আর জোর করে ধর্মান্তরকরণের বিপক্ষে। এই জঙ্গিদের বেশিরভাগ ভিকটিমই যে সাধারণ মুসলমান, সেটা আপনাদের থেকে আর কে ভালো জানে??

আমি কথা বলতে চাই, বহির্বিশ্বে আপনাদের সততা নিয়ে যে-প্রশ্ন উঠেছে, তা নিয়ে। কে জানে, হয়ত আপনারাও ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন।
সত্যি বলতে কী, বিশ্ব জুড়ে মুসলিম মৌলবাদীরা যেভাবে নিজেদেরকে "Voice of Islam" বলে চালিয়ে দিচ্ছে (চিন্তার ব্যাপার হল, অমুসলিম বিশ্ব সেটা মেনেও নিচ্ছে), তাতে আপনাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অনেকাংশে কমে গেছে।

কিছুদিন আগেই বিল মার লিবারেলদের প্রচুর সমালোচনা করেন, ইসলামের সমালোচনা না করার জন্য। এর প্রতিবাদে ধর্মবিদ রেজা আসলান CNN-এ বিল মারের প্রবল সমালোচনা করেন। এমনকি তাকে "স্টুপিড", "ধর্মবিদ্বেষী" এগুলোও বলেন। অবশ্য পরে তিনি এই আচরণের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন।

আসলান সাহেবের কথার জবাব পরে দেয়া যাবে। আপাতত তার কিছু কথা বলি, যেগুলোর সাথে, আশা করি, আপনারা একাত্ম বোধ করবেন। সাধারণ মুসলিমদের আর জঙ্গিদের প্রায়ই একই পাল্লায় মাপা হয়, আর ব্যাপারটা শুধু ভুলই না, সাধারণ মুসলিমদের জন্য অপমানজনকও বটে।

কিন্তু এই অন্যায্য বিশেষণ প্রয়োগের জন্য বিল মার এবং আমাদেরকে "স্টুপিড" আর "ধর্মবিদ্বেষী" বলে এড়িয়ে গেলে সমস্যার সমাধান হবে না। আপনারা মিডিয়াকে গাল দিতে পারেন, কিন্তু অমুসলিম বিশ্ব আর মিডিয়া দুয়ে মিলে মুসলমানদের পেছনে লেগেছে, এটা হয়তো আপনি নিজেও বিশ্বাস করেন না।

সমস্যাটা হল, আপনার মত অনেক মডারেট মুসলিমদের কারণেই ইসলাম অনেক অনেক বেশি সমালোচনার শিকার হচ্ছে। অবশ্য আমি জানি, আপনি এটা মোটেই চান না। আমার মনে হয় ব্যাপারটা একটু খুলে বলা দরকার।

দেখুন তো, এই ঘটনাগুলোর সাথে আপনি পরিচিত কি না:
১. কোনও মডারেট মুসলিম বলল ISIS আসলে "সহিহ মুসলিম না", ইসলাম আসলে শান্তির ধর্ম।
২. এখন কেউ জানতে চাইল: তাহলে কোরানের যেসব আয়াত সরাসরি কাফেরদের হত্যা করতে বলছে (যেমন সূরা নিসা: ৮৯, সূরা আল আনফাল: ১২/১৩) কিংবা যেই আয়াতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের হত্যার আদেশ দেয়া হয়েছে (সূরা আল মায়েদাহ: ৩৩), সে সব আয়াতের ব্যাখ্যা কী? এখানে একটা ব্যাপার খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে বেশিরভাগ ব্যাখ্যাতেই "বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী" বলতে মূলত ইসলামের বিরোধিতাকারীদের কথা বলা হচ্ছে।
৩. মডারেট মুসলমান তখন এই আয়াতগুলো "অপ্রাসঙ্গিকভাবে নেয়া হয়েছে" বলে থাকে। একই সাথে বলে, এই আয়াতগুলোকে আক্ষরিক অর্থে নেবার দরকার নেই অথবা আয়াতগুলোর অর্থ ভুলভাবে উপস্থাপনা করা হচ্ছে। 
৪. প্রশ্নকর্তা এ রকম আরও আয়াত এবং তাদের নানান রকম অনুবাদ দেখানোর পরেও মডারেট মুসলিম বার বার তার ধর্মগ্রন্থকেই সমর্থন করে যায়। 
প্রায়শই এই ধরনের আলোচনার সময় প্রশ্নকর্তাকে "ইসলামবিদ্বেষী" শব্দটা শুনতে হয়, যেমনটা আসলান সাহেব বিল মারকে বলেছেন। এই "ইসলামবিদ্বেষী" টার্মটা আলোচনা থামিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট এবং এতে আর যা-ই হোক, প্রশ্নকারীর মনে ইসলাম কিংবা মডারেটদের সম্পর্কে কোনও ভালো মনোভাব তৈরি হয় না। because, let's face it, কেউই "বিদ্বেষী" টার্মটা শুনতে চায় না। 

এখন নিজেকে একটু অমুসলিমদের কাতারে বসান। আপনার কি আসলেই মনে হয়, অমুসলিমরা ইসলাম আর জঙ্গিবাদকে এক করার চেষ্টা করছে? চতুর্দিকে দেখুন, কী ছবি আর কী ভিডিও, সবখানে জঙ্গিরা "আল্লাহু আকবর" বলে গলা কাটছে, কোরানের আয়াত বলতে বলতে বোমা মারছে, অন্য মুসলমানদেরকে জিহাদ করতে বলছে। আপনিই বলুন, কারা ইসলামের সাথে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক স্থাপনে ব্যস্ত। যদি কোনও খ্রিষ্টান বাইবেলের আয়াত বলতে বলতে কারও গলা কাটতো, তবে কি আপনি বাইবেলের দিকে আঙুল তুলতেন না? 

রেজা আসলান কোরানকে (অন্তত জ্বিহাদী আয়াতগুলো) "আক্ষরিক অর্থে" নেয়ার ঘোর বিরোধী। মজার ব্যাপার হল, মুসলিম (মডারেট কিম্বা মৌলবাদী) অমুসলিম সবাই জানি, কোরান মুসলিমদের কাছে আল্লার বাণী আর একে সেভাবেই নিতে হবে, যেভাবে আল্লা পাঠিয়েছেন। 

একইভাবে অনেক মডারেটও কোরানের আক্ষরিক অর্থ এড়িয়ে যেতে চান, তারা কোরানের "রূপক অর্থ" ব্যবহার করতে আগ্রহী। আপনার কী মনে হয়, এই আচরণ অমুসলিমরা কীভাবে দেখে? অমুসলিমরা মনে করে, আপনি কোরানের অর্থকে নিজের মত করে প্রচার করতে চাইছেন এবং কোরানের আসল অর্থ আসলে ভুল কিংবা বাতিল (অনেক বেশি পুরানো); ফলে কোরান যে আল্লার বাণী, আর একে যেভাবে পাঠানো হয়েছে,  সেভাবেই গ্রহণ করতে হবে, এই আইডিয়াটা ভুল মনে হয়। এছাড়াও কোরানকে "ভুল বোঝা হচ্ছে" টাইপের কথা বললে কোরান লেখকের (আল্লার) লেখার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। আমি যদি একটা বই লিখি, আর ভিন্ন ভিন্ন মানুষ তার ভিন্ন ভিন্ন অর্থ করতে চায়, এর মানে কি এই না যে, আমি আমার কথা বোঝাতে পারিনি? অন্য ভাবে বললে, আমি বইটা ঠিকভাবে লিখিনি?
 
আমি নিশ্চিত আপনি এই রকম মেসেজ দিতে চান না, কারণ একসময় আমিও আপনার জায়গাতেই ছিলাম। কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে, অমুসলিমরা এই আচরণে আপনার কোরান কিংবা আল্লা কারও ওপরই খুশি হতে পারছে না। 

এছাড়াও কোনও সাহিত্যের রূপক অর্থটাও যে অরিজিনাল আইডিয়াটাকে সমর্থন করে, সেটা নিশ্চয়ই মিথ্যা নয়? রূপক জিনিসটা কোনওকিছুকে আরও ভালভাবে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়, সেটার অর্থ পাল্টে দেবার জন্য নয়। যখন আয়াতে বলা হয় "ঘাড় থেকে মাথা আলাদা কর", তখন সেটাকে শান্তির বাণী বলে দাবি করলে ব্যাপারটা আর "রূপক" থাকে না। সত্য বলতে, এই আচরণ তখন অসততার মত মনে হয়, সেটা স্বেচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায়। 

এই রকম আয়াত যদি অল্প কয়েকটা থাকত, এই "রূপক" আর্গুমেন্ট যদি সমস্ত মুসলিম মেনে নিত, তাহলেও আপনাকে সমর্থন দেয়া যেত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দুটোর একটাও বাস্তবে হচ্ছে না। 

আমি বুঝতে পারছি, আপনি এতক্ষণে আমার সব কথাকেই "ভুল সবই ভুল" বলে মনে করছেন। সেটাই স্বাভাবিক, After all আপনি যখন এই (রূপক) ব্যাখ্যা কোনও মুসলিমকে শোনান, তারা ঠিকই গ্রহণ করে। কিন্তু এটাই কি স্বাভাবিক না? যে নিজের ধর্মকে রক্ষা করতে চায়, ধর্মকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়, সে তো তার ধর্মের পক্ষে যে কোনো যুক্তিই মেনে নেবে। 

বিশ্বাস করুন, ঘরের চার দেয়ালের বাইরে পরিস্থিতি খুবই ভিন্ন। আমি পশ্চিমা লিবারেলদের সাথে এ নিয়ে কথা বলেছি। তারা এই ধরনের আর্গুমেন্টকে একেবারেই গ্রহণযোগ্য মনে করে না (সেটাই কি স্বাভাবিক না?), কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে অস্বস্তি বোধ করে। কারণ তারা নিজেদের "ইসলামবিদ্বেষী" ভাবতে পছন্দ করে না, সেটা শুনতেও চায় না। এছাড়াও তারা মনে করে, মডারেটদের সাথে নিয়েই ইসলামী জঙ্গিবাদ হটানো যাবে। আপনার বেশিরভাগ লিবারেল বন্ধুই এই বিষয়টা হয়ত এড়িয়ে যায়, তবে সেটা তারা করে রাজনৈতিক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য। এদের সাথে বিল মারের তফাতটা এখানেই। 

দুঃখজনক হলেও সত্য এই আচরণের কারণেই মডারেট মুসলমানদের কথার বিশ্বাসযোগ্যতা ক্রমেই কমে যাচ্ছে, এই আচরণের জন্যই মডারেট মুসলমানদের প্রতি সন্দেহ বাড়ছে, তাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও লোকে সাধারণ মুসলমানদের "অমুসলিমবিদ্বেষী" মনে করছে। আমি নিশ্চিত, আপনি সেটা চান না, কিন্তু সত্যটা হল: সাধারণ মানুষেরা মডারেটদের সাথে মৌলবাদীদের অমিলের থেকে মিলই বেশি দেখছে। 

আপনি ইসলামের নামে হওয়া সব রকম অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, কিন্তু সেই আয়াত কোরানে থাকলে সেগুলোকে ডিফেন্ড করছেন। এই আচরণের মুলে হয় স্বেচ্ছা-অসততা কিংবা অজ্ঞতা লুকিয়ে থাকে। এই দুটোই কিন্তু যে কোনও অনেস্ট আর্গুমেন্টের পথে বাধা। এর ফলে কিন্তু আপনিই উভয়সংকটে পড়ছেন। 

কোরান যে আল্লার অপরিবর্তনীয় বাণী, সেটা প্রায় সব মুসলমানই বিশ্বাস করে, হোক তারা মডারেট কিংবা মৌলবাদী। একই সাথে তারা বিশ্বাস করে, কোরানের কিছু অংশও ছেড়ে দিলে আর মুসলমান থেকে যাবে না। এখন কথা হল, এই নিয়ম কি চিরকাল মানতেই হবে?

(দ্বিতীয় অর্থাৎ শেষ পর্ব অচিরেই প্রকাশিতব্য) 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন