আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

ওহুদ যুদ্ধ -৯: 'নিহত মুহাম্মদ' - গুজব!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব-৬২): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – পঁয়ত্রিশ

লিখেছেন গোলাপ

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭ > পর্ব ৪৮ > পর্ব ৪৯ > পর্ব ৫০ > পর্ব ৫১ > পর্ব ৫২ > পর্ব ৫৩ > পর্ব ৫৪ > পর্ব ৫৫ > পর্ব ৫৬ > পর্ব ৫৭ > পর্ব ৫৮ > পর্ব ৫৯ > পর্ব ৬০ > পর্ব ৬১

ইসলামের ইতিহাসের দ্বিতীয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এই ওহুদ যুদ্ধে স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কীভাবে ওতবা বিন আবি ওয়াকাস নামক এক কুরাইশের পাথরের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন এবং আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি “তাঁর নিজের জীবন রক্ষার প্রয়োজনে তাঁর অনুসারীদের জীবন বিক্রির আহ্বান জানিয়েছিলেন” তার আলোচনা আগের দু'টি পর্বে করা হয়েছে।

উক্ত আলোচনায় আমরা আরও জেনেছি যে, মুহাম্মদকে রক্ষার জন্য যুদ্ধরত মুসাব বিন উমায়ের নামক এক মুহাম্মদ অনুসারীকে খুন করেন ইবনে কামিয়া আল-লেইথি নামক এক কুরাইশ। মুসাব বিন উমায়েরকে খুন করার পর ইবনে কামিয়া আল-লেইথি মুসাবকে "মুহাম্মদ" ভেবে কুরাইশদের কাছে এই বলে খবর দেন যে তিনি মুহাম্মদকে হত্যা করেছেন।

মুহাম্মদ নিহত হয়েছেন খবরটি শুনার পর মুহাম্মদ অনুসারীদের মনোবল প্রায় সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ে। তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

তাঁরা যখন প্রচণ্ড হতাশা ও বিষণ্ণতায় নিমজ্জিত, তখন আনাস বিন আল-নাদির নামক এক মুহাম্মদ অনুসারী তাঁদেরকে আবার উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেন। তিনি প্রাণপণে যুদ্ধ করেন ও নিহত হন।

মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনা:

‘বনি আ'দি বিন আল-নাযযার গোত্রের আল-কাসিম বিন আবদুল রহমান বিন রাফি নামের এক ভাই আমাকে [মুহাম্মদ ইবনে ইশাক] জানিয়েছেন যে, আনাস বিন মালিকের চাচা আনাস বিন আল-নাদির ওমর বিন আল-খাত্তাব ও তালহা বিন ওবায়েদুল্লাহ ও তাদের সঙ্গে অবস্থানরত মুহাজির ও আনসারদের কাছে আসেন, তারা ছিলেন বিমর্ষ।

তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, "কী কারণে তোমরা এখানে বসে আছো?"

তারা বলে, "আল্লাহর নবী নিহত হয়েছেন।"

জবাবে তিনি বলেন, "তাহলে এরপর জীবিত থেকে তোমারা আর কী করবে? উঠে দাঁড়াও এবং আল্লাহর নবী যেভাবে নিহত হয়েছেন, তোমরাও সেইভাবে তোমাদের জীবন উৎসর্গ করো।"

তারপর তিনি শত্রুর সম্মুখীন হন এবং নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান।

আনাস হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে হুমায়েদ আল-তাওয়িল আমাকে বলেছেন, "ঐ দিন আমরা আনাস বিন নাদিরের গায়ে ৭০ টি কাটা চিহ্ন (তাবারী: 'এবং তরোয়ালের খোঁচা') দেখেছিলাম এবং তার বোন ছাড়া অন্য কোন লোকই তাকে শনাক্ত করতে পারে নাই; সে তাকে শনাক্ত করেছিল তার আঙ্গুলের মাথাগুলো দেখে (তাবারী: 'আঙ্গুলের বৈচিত্র্য দেখে')।"

"আল্লাহর নবী নিহত হয়েছেন" প্রচার হওয়ার পর ছত্রভঙ্গ লোকজনদের যে-ব্যক্তিটি আল্লাহর নবীকে প্রথম চিনতে পারেন, তিনি হলেন কাব বিন মালিক, যা আল-জুহরী আমাকে জানিয়েছেন।

কাব বলেন, "তাঁর হেলমেটের অন্তরালে আমি তাঁর চোখের মৃদু ঝিলিক দেখে চিনতে পারি এবং আমার গলার সবটুকু জোর দিয়ে বলে উঠি, "হে মুসলমানেরা, সাহস রাখো, এই যে এখানে আল্লাহর নবী।"

কিন্তু আল্লাহর নবী আমাকে চুপ থাকতে ইশারা করেন।

যখন মুসলমানেরা আল্লাহর নবীকে চিনতে পারেন, তারা তাঁকে গিরিসঙ্কটের (সংকীর্ণ উপত্যকার) দিকে নিয়ে আসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আবু বকর, ওমর, আলী, তালহা, আল-যুবায়ের, আল-হারিথ বিন আল-সিমমা এবং আরও অন্যান্য।

যখন আল্লাহর নবী গিরিসঙ্কটের মুখে পৌঁছেন, আলী তার ঢাল আল-মিহারসের (উহুদ প্রান্তে অবস্থিত এক কূপের নাম) পানি দিয়ে পূর্ণ করে তা আল্লাহর নবীর কাছে নিয়ে আসেন।

কিন্তু আল্লাহর নবী সেই পানি পানে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন, কারণটি ছিল তার পচা অরুচিকর গন্ধ। তবে, তিনি সেই পানি দিয়ে তাঁর মুখমণ্ডলের রক্ত ধৌত করেন এবং তা তাঁর মাথার উপর ঢেলে দেয়ার সময় বলেন,

"আল্লাহর প্রচণ্ড ক্রোধ তার ওপর, যে তার নবীর মুখমণ্ডল রক্তাক্ত করেছে।" 

সা'দ বিন আবি ওয়াকাসের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সালিহ বিন কেইসান আমাকে জানিয়েছেন যে, সা'দ বিন আবি ওয়াকাস প্রায়ই বলতেন,

"আমি কখনোই ওতবা বিন আবি ওয়াকাসকে খুন করার চাইতে অন্য কাউকে খুন করতে বেশি আগ্রহী ছিলাম না।

আমি জানি যে, সে ছিল অসৎ প্রকৃতির এবং তার লোকেরা তাকে ঘৃণা করতো। তাকে ঘৃণা করার জন্য এটাই আমার জন্য যথেষ্ট যে, আল্লাহর নবী বলেছেন, 'আল্লাহর প্রচণ্ড ক্রোধ তার ওপর, যে তার নবীর মুখমণ্ডল রক্তাক্ত করেছে।'"' [1][2]

>>> ওতবা বিন আবি ওয়াকাস ছিলেন সা'দ বিন আবি ওয়াকাসের নিজের ভাই। ওতবা মুশরিক রূপেই মক্কাই অবস্থান করেন ও বদর যুদ্ধে কুরাইশদের খুন, বন্দী ও অপমানের প্রতিশোধ নিতে ওহুদ যুদ্ধে অংশ নেন। আর তাঁর ভাই সা'দ ছিলেন সবচেয়ে গোড়ার দিকের মুহাম্মদ অনুসারীদের একজন, মুহাম্মদের আদেশে হিজরত করেন মদিনায়।

মুহাম্মদের দীক্ষায় সা'দ এখন তার সহোদর ভাইয়ের কল্লা কাটার জন্য অতিশয় আগ্রহী! নিজের সহোদর ভাইকে ঘৃণা করার জন্য এখন তার এটুকুই যথেষ্ট যে মুহাম্মদ বলেছেন, "আল্লাহর প্রচণ্ড ক্রোধ তার ওপর, যে তার নবীর মুখমণ্ডল রক্তাক্ত করেছে।"

মুসাব বিন উমায়েরের ও আবু আজিজ বিন উমায়ের এবং মুহেইয়িসা ও হুয়েইয়িসার উপাখ্যানেও আমরা এই একই দীক্ষার প্রতিফলন দেখতে পেয়েছি (পর্ব-৩৫ ও ৪৯)।

ইসলামের একান্ত প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষা!

>>> নবীর প্রতি ভালবাসা এবং ইসলাম প্রচার ও প্রসারের প্রয়োজনে যে কোনো ব্যক্তিকে অমানুষিক নৃশংসতায় খুন করা প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসীর ইমানী দায়িত্ব, তা সে পিতা-পুত্র অথবা ভাই-ভগ্নী যেইই হোক না কেন! কুরান, হাদিস ও ‘সিরাতের’ আলোকে এই বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা পর্ব-৩৬ এ করা হয়েছে।

স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হাতে-কলমে তাঁর অনুসারীদের এই শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। মুহাম্মদের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে তাঁর অনুসারীরা বদর যুদ্ধেই সর্বপ্রথম এই শিক্ষার ব্যবহারিক প্রয়োগ (Practical application) ও বাস্তবায়ন করেন (পর্ব-৩৩)!

যুদ্ধক্ষেত্রে ওতবা বিন আবু ওয়াকাসের হাতে আঘাত প্রাপ্ত হওয়ার পর তাঁকে "আল্লার নামে" মুহাম্মদের অভিশাপ বর্ষণ খুবই স্বাভাবিক বলে মনে হতে পারে। যে কোনো সাধারণ মানের মানুষই এমত পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড উত্তেজিত ও রাগান্বিত হয়ে তার আঘাতকারীকে অভিশাপ বর্ষণ করতেই পারেন।

কিন্তু,

আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি মক্কা ও মদিনার স্বাভাবিক পরিবেশে, মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ তাঁর বাণী ও কর্মকাণ্ডের মৌখিক সমালোচনাকারীকে "তাঁর আল্লাহর নামে" বিভিন্নভাবে অভিশাপ বর্ষণ করেছেন।

মুহাম্মদের স্বরচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থ (Psychobiography), ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দলিল, কুরানই তার সাক্ষ্য বহন করে আছে।এ বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা পর্ব ১১ ও ১২ তে করা হয়েছে।

(চলবে)

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ:  A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৩৮১-৩৮২

[2] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক:  আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৪০৬-১৪০৯

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন