লিখেছেন রিফু
মুহাম্মদ নবী পৃথিবীর ১.২ বিলিয়ন মানুষের আদর্শ।
যদিও এর মাঝে জঙ্গি, মোডারেট মুসলিম, মসজিদ-মাদ্রাসা-হুজুর-আলেম তিনটি পৃথক সম্প্রদায় রয়েছে, যার যে কোনো একটি মুহাম্মদের আদর্শধারী হলে বাকি দুই সম্প্রদায় মুহাম্মদের আদর্শ মানছে না।
এছাড়াও শিয়ারা হাসান হোসেনকেই আদর্শ মানে। এত সব কিছু বিচার করলে ১.২ বিলিয়ন থেকে কতজন অবশিষ্ট থাকে, যারা প্রত্যক্ষভাবে মুহাম্মদ পয়গম্বরের আদর্শে অভিভূত, তা জটিল হিসাবের ব্যাপার স্যাপার।
কিন্তু এছাড়াও কিছু মহামানব আছেন, যারা স্রষ্টা দেখিয়ে মানুষের প্রিয় হননি, জান্নাতের লোভ দেখাননি, তলোয়ার বা জাহান্নামের ভয় দেখাননি, বিশ্বাসের ফায়দা নেননি। তবুও তাঁরা তাঁদের মৃত্যুর পরেও আমাদের প্রিয় মানুষ।
কয়েকটা নাম বলি:
আব্রাহাম লিংকন, মার্টিন লুথার কিং জুনিওর, নেলসন ম্যান্ডেলা...
যেখানে ইসলামও দাসপ্রথার বিরুদ্ধে নয়, মানুষে মানুষে ভেদাভেদে নিশ্চুপ, সেখানে শতাব্দীতে শতাব্দীতে আসা এই তিন মহামানব, যাঁরা ঈশ্বরদূত নযন, কিন্তু মানুষের সমান অধিকারের জন্য যে কোনো ঈশ্বরদূতের চেয়ে বেশি করে গেছেন। তাঁরা কেউই মুসলমান ছিলেন না। নেলসন ম্যান্ডেলা নাস্তিক ছিলেন।
আলবার্ট আইনস্টাইন - পদার্থ বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠতম বিজ্ঞানী, যাঁর অবিস্মরণীয় আবিষ্কার অপব্যবহার করে মানবজাতি তাঁর অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তবে শিক্ষায় তিনি অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন। তিনি প্রথম জীবনে ইহুদি, পরবর্তিতে নাস্তিক ছিলেন। কখনোই মুসলমান ছিলেন না।
চার্লস ডারউইন - যে ব্যক্তি জীবনের সবচেয়ে বড় রহস্য সমাধান করে গেছেন, করে গেছেন ধর্মদ্রোহ। তিনি ধর্মে অবিশ্বাসী ছিলেন। মুসলমান কখনোই ছিলেন না।
সক্রেটিস - একটিই সংজ্ঞা, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। নাস্তিক ছিলেন। মুসলমান নন।
আল খারিজমি - মুসলিম বিজ্ঞানী বলে খ্যাত হলেও, ইনি অজ্ঞেয়বাদী ছিলেন। অবিশ্বাসী হিসেবে মারা গেছেন।
ইবনে সিনা - জগৎশ্রেষ্ঠ মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী। কিন্তু যেটা আপনাদের মিথ্যা বলা হয়, সেটা হল উনি মুসলিম ছিলেন। মোল্লাদের কথা না শুনে একবার ইবনে সিনার ব্যক্তিগত জীবন, আদর্শগত জীবনে নজর বোলালেই দেখা যায়, উনি কতটা ধর্মদ্রোহী ছিলেন।
মহাত্মা গান্ধী - ইনিও একটি জাতিকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছেন। অনেকে বলেন নাস্তিক ছিলেন। অনেকে বিরোধিতা করেন। যাই হোক, তিনি মুসলমান ছিলেন না।
মহাত্মা লালন সাঁই - আমার মতে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মনীষী, যাঁর মহত্ব ছিল তিনি মানুষের মনিষী ছিল। ধর্মদ্রোহী, নিধার্মিক। নাস্তিক ছিলেন। মুসলমান কখনোই নয়। তবে যে কোনো মুসলিমের চেয়ে বেশি নিষ্পাপ এই ব্যক্তি।
ফর্দ আর লম্বা করছি না। শুধু এইটুকুই বলছি, এঁরা কেমন মানুষ? কেউ অস্বীকার করবে না, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব এরা।
কিন্তু ইসলামের চোখে এরা ঘৃন্য, পাপিষ্ঠ, অপরাধী। আল্লাহ এদের পছন্দ করেন না। এরা জাহান্নামী। অবশ্যই। এরা কখনোই জান্নাতে যাবেন না। আল্লাহ এঁদের জাহান্নামের নিক্ষেপ করবেন বলে ওয়াদা করেছেন।
নিম্নের আয়াতগুলো পড়ুন-
নিশ্চয়ই যারা অবিশ্বাস করেছে, তাদের ধন সম্পদ ও তাদের সন্তান সন্ততি আল্লাহর নিকট কোন বিষয়েই ফলপ্রদ হবে না এবং তারাই হবে জাহান্নামের ইন্ধন। (সূরা আল ইমরান, ১০)
যারা অবিশ্বাস করেছে তুমি তাদের বল,অচীরেই তোমরা পরাভূত হবে এবং জাহান্নামের দিকে একত্রিত করা হবে এবং ওটা নিকৃষ্টতম স্থান। (আল ইমরান, ১২)
আর যে কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য জীবন জীবন ব্যাবস্তাহ অন্বেষণ করে তা কখনোই তার নিকট পরিগৃহীত হবে না। অতএব পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। (আল ইমরান, ৮৫)
আর তোমরা সে জাহান্নামের ভয় কর, যা অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। (আল ইমরান, ১৩১)
নিশ্চই যারা বিশ্বাসের পরিবর্তে অবিশ্বাস ক্রয় করেছে, তারা আল্লাহর কোনই অনিষ্ঠ করতে পারে না। এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। (আল ইমরান, ১৭৭)
যারা অবিশ্বাস করেছে তারা যেন এটা ধারনা না করে যে, আমি তাদেরকে যে সুযোগ দিয়েছি তা তাদের জীবনের জন্য কল্যাণকর; তারা স্বীয় পাপ বর্ধিত করবে, তদ্ব্যতীত আমি তাদেরকে অবসর প্রদান করি নি এবং তাদের জন্য রয়েছে অপমানকর শাস্তি। (আল ইমরান, ১৭৮)
অনন্তর যারা অবিশ্বাসী হয়েছে, বস্তুতঃ তাদেরকে ইহকাল ও পরকালে কঠোর শাস্তি প্রদান করবো এবং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। (আল ইমরান, ৫৬)
নিশ্চই যারা অবিশ্বাস করেছে এবং অবিশ্বাসী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, ফলতঃ তাদের কারো নিকট হতে পৃথিবী পরিমান স্বর্ণও নেওয়া হবে না- যদিও সে স্বীয় মুক্তির বিনিময়ে তা প্রদান করে; ওদেরই জন্য যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে এবং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। (আল ইমরান, ৯১)
সর্বশেষ আয়াত দু'টি লক্ষ্য করুন। স্পষ্টত, মুহাম্মদও তাদের জন্য সুপারিশ করবে না। আল্লাহ তাকে সেই অনুমতিই দিচ্ছেন না।
আর সবগুলো আয়াতেই স্পষ্ট, যারা আল্লাহর ইসলামে বিশ্বাস আনেনি, যারা অবিশ্বাসী, তারা অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আল্লাহ শুধুমাত্র সুরায়ে আল ইমরানে ৮ বার এই সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করেছে। বাকি কুরানেও এই সিদ্ধান্ত আরো অনেকবার নিশ্চিত করা হয়েছে, যদিও কুরানের প্রতিটি আয়াতই এক একটি অব্যর্থ দলিল।
একটি অপ্রাসঙ্গিক কথা:
সূরা আল ইমরানের ৯১ নং আয়াতে স্পষ্ট হয়েছে যে, এক পৃথিবী স্বর্ণের বিনিময়েও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। তৎকালে মুল্যবান স্বর্ণ দ্বারা বা অর্থ দ্বারা দাসমুক্তি বা অপরাধের জরিমানা স্বরূপ মুক্তি পাওয়া যেত। তার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ ৯১ নং আয়াত বলেছেন। কাজেই এটা স্পষ্ট, কুরান তৎকালের সাপেক্ষে লেখা হয়েছে। কারণ বর্তমানের প্রেক্ষিতে বা বর্তমানের উপমায় কোনো আয়াত নেই। কাজেই ১৪ শ বছর পর এই কুরান আর চলবে না।
একদিন আমারও মৃত্যু হবে, স্বীকার করি। কিন্তু মৃত্যুর পর কী হবে, তা 'কল্পনা' করে কল্পনা করি:
সামহাউ ইস্লামের আল্লাহ আমাকে ধরে বলল, সারাজীবনে আমার বাটে আঘাত করেছিস। কিন্তু আমি তো আল্লাহ। আমি তোকে মাফ করে দিলাম। জান্নাত নসিব দিলাম। নিশ্চই আমি দয়ালু, মহাপরাক্রমশালী।
আমি: ইয়া পারওয়ারদিগার, গোয়াজম-চুইদীকেও আপনি জান্নাত নসিব করিয়েছেন?
আল্লাহ: আমিই পরম ক্ষমাশীল। আমি পরম দয়ালু। আমি তাদের জান্নাত নসিব দিয়েছি।
আমি: তবে আল্লাহ, আমি আপনার জান্নাত অস্বীকার করলাম। ফেসবুকের ছাইয়া আইডির মত রিজেক্ট করলাম, ব্যবহৃত কনডমের মত ছুঁড়ে ফেললাম, সিগারেটের ধোঁয়ার মত ত্যাগ করলাম।
আল্লাহ: নিশ্চই আমি নিরাবেগ। নিশ্চই আমি করুণাপরায়ণ। নিশ্চই আমি তুচ্ছ রিফুর ঘাউড়ামিতে রাগ হই না। তা, কেন এই স্পর্ধা, কাফির?
আমি: ইয়া আল্লা, গোয়াজম আর চুইদি যে-বেহেস্তে, সে বেহেস্তে গিয়ে আমি নিজের মূল্য হ্রাস করবো না, তাদের সমমর্যাদার হব না, নিজের সত্ত্বাকে কলুষিত করবো না। আপনার আজাইরা বিচার-বিবেচনা মানবো না।
আল্লাহ: কেন হে কাফির? আমার সামনে কি তোমরা সকলেই সমান নও? নিশ্চয়ই আমি নিরপেক্ষ এবং সর্বাপেক্ষা আদর্শ বিচারক।
আমি: ওদের মত পাপী জান্নাতে যায় কীভাবে? তাদের তুলনায় আমি কাফির রিফু নিষ্পাপ।
আল্লাহ: ওরা মাফ চেয়েছে, আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু, আমি মাফ করে দিয়েছি। ওদের দৃষ্টিকোণ থেকে ওরা পাপ করে নি। ওরা পাকিস্তানকে নিজের দেশ মনে করে একজন আদর্শ দেশপ্রেমিকের দায়িত্ব পালন করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, ওরা কালিমা পড়েছে। ওরা মুহাম্মদের উম্মত, আমার অনুসারী। তাই ওরা জান্নাত পেয়েছে।
আমি: তবে আল্লাহ, আমাকে সেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করুন, যে জাহান্নামে নেলসন ম্যান্ডেলা, আব্রাহাম লিংকন, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, রাজা রামমোহন রায়, আলবার্ট আইনস্টাইন, আল খোয়ারিজমির মত লোকেরা আছে। সেখানে গেলে জাহান্নামকেও শান্তির মনে হবে। সেখানে এত জ্ঞানীরা আছে যে, নতুন আরো ক'টা জান্নাত বানিয়ে ফেলা যাবে।
সারমর্ম: বাস্তবতা এইটাই যে, ইসলাম যা বলে, তাতে গোয়াজম আর চুইদিও জান্নাতে যাবে।
বাই দ্য ওয়ে, যীশুও নাকি ক্ষমাশীল, হেতের বাপ ডবল ক্ষমাশীল। খ্রিষ্টান হলেও হেভেন অনিশ্চিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন