আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৫

লওহে মাহফুজের সন্ধানে: ক্যাটম্যান সিরিজ - ০৩

লিখেছেন ক্যাটম্যান

মুক্তচিন্তা চর্চা, প্রচার ও প্রসারের কারণে ধর্মান্ধ মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর নৃশংস হামলার শিকার হুমায়ুন আজাদ, রাজিব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় ও ফয়সল আরেফিন দীপন সহ নিহত ও আহত সকল মুক্তচিন্তকের স্মরণে এই লেখাটি অপরিমেয় ভালোবাসার স্মারক স্বরূপ নিবেদন করছি।


মূসার নেতৃত্বে ইস্রায়েল সন্তানগণ মিশর দেশ থেকে বেরিয়ে এসে যখন সিনাই মরুপ্রান্তরে পৌঁছে শিবির স্থাপন করে। তখন মূসা স্বীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী পরমেশ্বরের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে পর্বতে আরোহণ করেন। একই সময়ে পরমেশ্বর মূসাকে ডেকে তার ও তার জনগণের প্রতি এক সন্ধি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। যা এই আলোচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এই সন্ধি আমাদের আলোচ্য বিষয়বস্তু অতিলৌকিক লওহে মাহফুজের রহস্যময়তার দ্বারকে উম্মোচিত করবে। উক্ত সন্ধি প্রস্তাব সম্পর্কে বাইবেলে যা বলা হয়েছে তা নিম্নরূপ:
মিশর দেশ থেকে ইস্রায়েল সন্তানদের বেরিয়ে আসার পর তৃতীয় অমাবশ্যায়, ঠিক সেই দিনেই, তারা সিনাই মরুপ্রান্তরে এসে পৌঁছল। তারা রেফিদিম থেকে শিবির তুলে সিনাই মরুপ্রান্তরে এসে পৌঁছলে সেই মরুপ্রান্তরে শিবির বসাল; ইস্রায়েল পর্বতের ঠিক সামনেই শিবির বসাল। তখন মোশী পরমেশ্বরের কাছে উঠে গেলেন, আর প্রভু পর্বত থেকে তাঁকে ডেকে বললেন, ‘তুমি যাকোবকুলকে একথা বলবে, ইস্রায়েল সন্তানদের কাছে এ কথা ঘোষণা করবে: আমি মিশরীয়দের প্রতি যা করেছি, তা তোমরা নিজেরাই দেখেছ; এও দেখেছ, কীভাবে আমি ঈগলের ডানায়ই তোমাদের বহন করে আমার কাছে নিয়ে এসেছি। এখন, তোমরা যদি আমার প্রতি সম্পূর্ণ বাধ্য হয়ে আমার সন্ধি পালন কর, তবে সকল জাতির মধ্যে তোমরাই হবে আমার নিজস্ব অধিকার, কেননা সমস্ত পৃথিবী আমার! আর আমার কাছে তোমরা হবে এক যাজকীয় রাজ্য, এক পবিত্র জনগণ। এই সমস্ত কথা তুমি ইস্রায়েল সন্তানদের বলবে। [যাত্রাপুস্তক ১৯ : ১-৬]
মূসার পরমেশ্বর কর্তৃক ইস্রায়েল সন্তানদের প্রতি এমন এক সন্ধি প্রস্তাব উত্থাপিত হলেও মূলত ইস্রায়েলি জাতিয়তাবাদকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তি প্রদানের নিমিত্তে স্বয়ং মূসা তার পরিকল্পিত ঈশ্বরের নামে উক্ত সন্ধি প্রস্তাবের অবতারণা করেন। এক্ষেত্রে মূসা ও মূসার পরমেশ্বরের ভূমিকা খুবই প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ মূসা যখন তার পরমেশ্বরের নিকট থেকে কোনো নির্দেশনা পেতেন, তা তিনি তার সম্প্রদায়ের সকল ব্যক্তির নিকট উপস্থাপন না করে শুধুমাত্র ইস্রায়েলের প্রবীণবর্গের নিকট উপস্থাপন করতেন। মূসা তার ঈশ্বরের কোনো প্রত্যাদেশ ইস্রায়েলের কোনো যুক্তিনিষ্ঠ, দুরন্ত তরুণ সম্প্রদায়ের নিকট ব্যক্ত করতেন না। কারণ মূসার পরিকল্পিত প্রতারণা দ্বারা ইস্রায়েলের তরুণদের সম্মোহিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল খুবই ক্ষীণ। তাছাড়া তরুণরা নিজেদের বুদ্ধি-বিবেচনা ও কৌতূহলকে কাজে লাগিয়ে মূসার প্রতারণার মুখোশ যদি উম্মোচন করে ফেলে, তেমন গূঢ় আশঙ্কায় মূসা তার পরমেশ্বরের নির্দেশনা ইস্রায়েলের সাধারণ জনগণের নিকট সরাসরি উপস্থাপন না করে শুধুমাত্র ইস্রায়েলের বাছাইকৃত প্রবীণবর্গের নিকট উপস্থাপন করতেন, যারা প্রশ্নবিহীনভাবে মূসা ও মূসার পরমেশ্বরের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করত।
তখন মোশী এসে জনগণের প্রবীণবর্গকে আহ্বান করলেন, ও প্রভু তাঁকে যা কিছু আজ্ঞা করেছিলেন, সেই সকল কথা তাদের জানিয়ে দিলেন। লোকেরা সবাই মিলে উত্তর দিল: ‘প্রভু যা কিছু বলেছেন, আমরা তা সমস্তই করব।’ মোশী প্রভুর কাছে লোকদের কথা জানিয়ে দিলেন। [যাত্রাপুস্তক ১৯ : ৭-৮]
এছাড়াও ইস্রায়েলের কোনো ব্যক্তি যেন মূসার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে না পারে, সে লক্ষ্যে মূসা নানারকম কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করতেন। তন্মধ্যে প্রধানতম কৌশল ছিল - পরমেশ্বরের আদেশ-নির্দেশ অমান্য করার শাস্তিস্বরূপ ঐশ্বরিক আদেশ অমান্যকারীদের প্রতি ঈশ্বর কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়নের হুমকি। যদিও মূসার জনগণ তার প্রতি প্রায়ই অবিশ্বাস পোষণহেতু বিদ্রোহ করে বসত, তা সত্ত্বেও শাস্তি হিসেবে ঈশ্বর কর্তৃক মৃত্যু সংঘটনের ভীতি প্রদানের মাধ্যমে মূসা আমৃত্যু তার ইস্রায়েলি জনগোষ্ঠীকে ভেড়ার পালের ন্যায় নিয়ন্ত্রণ করেছেন; যা মূসার গ্রন্থে প্রায়ই পরিলক্ষিত হয়। 
মূসা ইস্রায়েলের জনগণের উদ্দেশে পরমেশ্বরের পক্ষ থেকে এমন কিছু নির্দেশনা পৌঁছান, যা দৃষ্টে যুক্তিশীল যে কোনো মানুষের মনে এমন কিছু সাধারণ প্রশ্নের অবতারণা হবে যে, ইস্রায়েলিদের উদ্দেশ্যে মূসার বিবৃত নির্দেশনাসমূহ আদৌ পরমেশ্বর প্রদত্ত কি না। কারণ পরমেশ্বরের সাথে মূসার সাক্ষাতের ঘটনায় অতিমাত্রায় গোপনীয়তা ও সাবধানতা অবলম্বন মূসা ও মূসার পরমেশ্বরের প্রতি আমাদের সন্দেহকে ঘনীভূত করতে যথেষ্ট সহায়ক।
তখন প্রভু মোশীকে বললেন: ‘দেখ, আমি নিবিড় মেঘে তোমার কাছে আসছি, তোমার সঙ্গে যখন কথা বলব, তখন লোকেরা যেন শুনতে পায়, এবং চিরকাল ধরে তোমাতে বিশ্বাস রাখতে পারে। ’
মোশী প্রভুর কাছে লোকদের কথা জানিয়ে দিলেন। প্রভু মোশীকে বললেন, ‘লোকদের কাছে যাও, আজ ও আগামীকাল তারা নিজেদের পবিত্রিত করুক, নিজ নিজ পোশাক ধুয়ে নিক আর তৃতীয় দিনের জন্য সকলে প্রস্তুত হোক; কেননা তৃতীয় দিনে প্রভু সকল লোকের দৃষ্টিগোচরে সিনাই পর্বতের উপরে নেমে আসবেন।
তুমি লোকদের চারপাশে সীমা স্থির করে একথা বলবে, সাবধান, তোমরা পর্বতে আরোহন করো না বা তার সীমা পর্যন্তও স্পর্শ করো না; যে কেউ পর্বত স্পর্শ করবে, তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হবে। কোন হাত তাকে স্পর্শ করবে না: তাকে পাথরাঘাতে মরতে হবে বা তীরের আঘাতে বিদ্ধ হতে হবে; পশু হোক বা মানুষ হোক, সে বাঁচবে না !
যখন তুরি দীর্ঘধ্বনি দেবে, তখন তারা পর্বতে উঠবে।’ মোশী পর্বত থেকে নেমে লোকদের কাছে এসে সকলকে নিজেদের পবিত্রিত করতে বললেন, এবং তারা নিজ নিজ পোশাক ধুয়ে নিল। পরে তিনি লোকদের বললেন, ‘তৃতীয় দিনের জন্য প্রস্তুত হও; কোন স্ত্রীলোকের কাছে যেয়ো না। [যাত্রাপুস্তক ১৯ : ৯-১৫]
বাইবেলের উক্ত শ্লোকসমূহে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মূসার পরমেশ্বর ইস্রায়েলের সকল লোকের সামনে সিনাই পর্বতের ওপরে নেমে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। অথচ ইস্রায়েলের জনগণ যেন মূসার পরমেশ্বরকে সরাসরি দেখার উদ্দেশ্যে সিনাই পর্বতে আরোহণ, এমনকি নির্দিষ্ট সীমা যেন স্পর্শ না করে, সে বিষয়ে তাদেরকে সাবধান করার নিমিত্তে মূসার প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন। কারণ মূসার পরমেশ্বর ব্যক্তি মূসার সাথে সিনাই পর্বতে সাক্ষাৎ করতে কোনো প্রকার লজ্জা, জড়তা ও কুন্ঠা বোধ না করলেও মূসার জনগণের সাথে সরাসরি সাক্ষাতে তার প্রবল আপত্তি রয়েছে। পরমেশ্বরের নিকটবর্তী হয়ে যোগাযোগ স্থাপনে মূসা ও পরমেশ্বরের পারস্পরিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হলেও ইস্রায়েলের জনগণের উপস্থিতিতে মূসার পরমেশ্বর স্বীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা অনুভব করেন। তাই পরমেশ্বর স্বীয় গোপনীয়তাসঞ্জাত নিরাপত্তা অটুট রাখতে ইস্রায়েলের জনগণকে মৃত্যুর হমকি প্রদান করে হলেও তাদের সিনাই পর্বতে আরোহনের সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করেন। শুধু তাই নয়, পরমেশ্বর স্বীয় ঐশ্বরিক মহিমাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে পবিত্রতা বোধের ওপরে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন, যে-কারণে ইস্রায়েলের জনগণকে দু'দিন সময় দেয়া হয়, যেন তারা নিজেদের দেহ ও পোশাকসমূহ পবিত্র করে। এমনকি তারা যেন স্ত্রী সঙ্গমে লিপ্ত না হয়, সে বিষয়েও বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হয়। যদিও এই নির্দেশনাটি মূসার পরমেশ্বর মূসাকে নির্দিষ্ট করে প্রদান করেননি, তা সত্ত্বেও মূসা স্বীয় তাড়নায় এমন নির্দেশনা ইস্রায়েলের জনগণকে প্রদান করেন। এ কারণে আমাদের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয় যে, ইস্রায়েলের জনগণের উদ্দেশে পরমেশ্বর প্রদত্ত অন্যান্য নির্দেশনাসমূহ স্বয়ং পরমেশ্বরের কি না। নাকি কল্পিত পরমেশ্বরের পক্ষে মূসা নিজেই এগুলো প্রণয়ন করে থাকেন? আমাদের এমন সন্দেহ ঘনীভূত হওয়ার পেছনে যথেষ্ট যৌক্তিক কারণসমূহ বাইবেলের অন্যান্য শ্লোকসমূহে বিদ্যমান রয়েছে।

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন