আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫

লওহে মাহফুজের সন্ধানে: ক্যাটম্যান সিরিজ - ০১

লিখেছেন ক্যাটম্যান

(লেখাটির পরিকল্পনা শুরু করি ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসের দিকে। লেখাটি ওই সময়ে শুরু করে এই বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এসেও শেষ করতে পারিনি। ইচ্ছা ছিল, মার্চ মাসের মধ্যে লেখাটি সম্পন্ন করার। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারিতে অভিজিৎ রায়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে আমি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। পরে বেশ কিছুদিন লেখাটি লেখার জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক শক্তি পাইনি। পরে নানা ব্যস্ততার মাঝে আবার যখন মানসিক শক্তি সঞ্চয় করে লেখাটি শুরু করতে গিয়েছি, তখন ওয়াশিকুর বাবুর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে পুনরায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। এই ভাবে যতবারই নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে লেখাটি দ্রুত শেষ করতে উদ্যোগী হয়েছি, ততবারই এক একজন মুক্তমনা ব্লগার ও লেখকের মর্মান্তিক মৃত্যু আমার লেখার শক্তি কেড়ে নিয়েছে। মাঝখানে শারীরিক অসুস্থতাও এই লেখাটি দ্রুত শেষ করতে না পারার কারণ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। মুক্তমনা সহকর্মীদের এতগুলি মৃত্যুতে আমি মানসিকভাবে এতটাই ক্লান্ত যে, লেখাটি যথাসময়ে শেষ করতে না পারার যন্ত্রণা আমি প্রায়শ অনুভব করে থাকি। 

লেখাটির কলেবর সীমিত রাখতে চাইলেও পাঠকের কথা বিবেচনা করে অনেক বিষয় লেখাটিতে অন্তর্ভুক্ত করায় তা আর হয়ে ওঠেনি। লেখাটির বিষয় হলো - ইসলাম ধর্মের দাবিকৃত ঐশী গ্রন্থ আল-কুরআনের উৎস লওহে মাহফুজের অনুসন্ধান। আমার জানামতে বিশ্বে ‘লওহে মাহফুজ’-এর বিষয়ে তেমন কোনো বস্তুনিষ্ঠ গবেষণাকর্ম সংঘটিত হয়নি। তবে আমার জানা যেহেতু খুবই সীমিত, সেই বিবেচনায় যদি তেমন কোনো গবেষণাকর্ম থেকেও থাকে, তা আমার জানা নেই। তবে তেমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। সেদিক থেকে “লওহে মাহফুজের সন্ধানে: ক্যাটম্যান সিরিজ” আমার একটি মৌলিক গবেষণা। বিষয়টির ওপরে ছোটখাট একটি বই লেখা সম্ভব। কিন্তু ব্যস্ত পাঠক ও আমার সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে আমি একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করেছি এখানে।)

মুক্তচিন্তা চর্চা, প্রচার ও প্রসারের কারণে ধর্মান্ধ মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর নৃশংস হামলার শিকার হুমায়ুন আজাদ, রাজিব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় ও ফয়সল আরেফিন দীপন সহ নিহত ও আহত সকল মুক্তচিন্তকের স্মরণে এই লেখাটি অপরিমেয় ভালোবাসার স্মারক স্বরূপ নিবেদন করছি।

মুসলমানগণ যে-ইসলাম ধর্মের অনুসারী, সে ধর্মের প্রবর্তক মুহম্মদ আরববাসীগণের মাঝে কুরআন নামক এক অগ্রন্থিত গ্রন্থ এনেছিলেন। যে কুরআনের বদৌলতে মুহম্মদ একেশ্বরবাদী ইসলাম ধর্মকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার প্রয়াস পান। মুহম্মদ তার আনীত কুরআনকে ঐশী গ্রন্থ হিসেবে দাবি করেন। ঐশী গ্রন্থ হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি যা প্রচার করেন, তার ব্যাখ্যা করলে এমন দাড়াঁয় যে, প্রাক-ইসলামি যুগে আরবের পৌত্তলিক সম্প্রদায় কর্তৃক পূজিত ‘আল্লাহ’ নামীয় এক দেবতা মুহম্মদের নিকট কুরআনকে ওহি হিসেবে পাঠিয়েছেন। 

পৌত্তলিক আরবদের পূজিত দেবতা নিচয়ের মধ্যে একমাত্র 'আল্লাহ' নামক দেবতা হঠাৎ করে অন্য সকল দেবতার মহিমাকে ছাপিয়ে নিজেকে সর্বেসর্বা ঈশ্বর হিসেবে দাবি করেন এবং মুহম্মদকে দায়িত্ব দেন একমাত্র ঈশ্বর হিসেবে আল্লাহর মহিমা মানব সমাজে প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার। আর যে-প্রক্রিয়ায় আল্লাহ মুহম্মদকে এই দায়িত্ব প্রদান করেন, তা হলো ওহি ও ওহি ভিত্তিক নবুওয়াত; যা পুরোটাই ছিল মুহম্মদের প্রতারনাপূর্ণ সচতুর কৌশলের অংশ।

পৌত্তলিক আরব সমাজে পূজিত অসংখ্য দেব-দেবীর ভিড়ে শুধুমাত্র ‘আল্লাহ’ ব্যতিত অন্য সকল দেব-দেবীকে বর্জন ও অস্বীকার করার মাধ্যমে মুহম্মদ ইসলাম নামক ব্র্যান্ডের একেশ্বরবাদী নবধর্ম প্রবর্তনের প্রয়াস পান, যা বহু গোত্র ও গোত্রীয় দেবতাকেন্দ্রিক পৌত্তলিক আরব সমাজে বিভেদ বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। এমনকি মক্কার পৌত্তলিক সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় কুরায়শ বংশের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলে এবং একই সাথে কাবা মন্দিরে পৌরহিত্যের দায়িত্বে নিয়োজিত কুরায়শ বংশের যোগ্যতাও হুমকির সম্মুখীন হয়। যে কারণে মুহম্মদ মক্কার পৌত্তলিক সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় কুরায়শ বংশের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তার নবধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে নিজ বংশের সদস্যদের দ্বারা চরম বিরোধীতার সম্মুখীন হন।

মুহম্মদের নব প্রবর্তিত ধর্ম পৌত্তলিক আরবদের নিকট স্বীয় পিতৃপুরুষের আচরিত ধর্মের তুলনায় ভিন্ন মনে হলেও প্রচারিত নবধর্মের একেশ্বরবাদী ধারণা তাদের নিকট একেবারে নতুন বিষয় ছিল না। কারণ তৎকালীন আরব ভূখণ্ডে পৌত্তলিক আরবদের পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল সুবিদিত। ইহুদি ধর্মাবলম্বীগণ একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করতেন আর খ্রিষ্টধর্ম ছিল মূলত একেশ্বরবাদী ইহুদি ধর্মের অপভ্রংশ। আরব ভূখণ্ডে বসবাসরত ওই সকল ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মাধ্যমে একেশ্বরবাদ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা সত্ত্বেও পৌত্তলিক আরবগণ স্বীয় পিতৃপুরুষের আচরিত পৌত্তলিক ধর্ম ত্যাগ করে একেশ্বরবাদী ইহুদি ধর্ম গ্রহণে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি।

অথচ পৌত্তলিক আরব সমাজের নেতৃস্থানীয় পৌত্তলিক গোত্রের একজন সদস্য হওয়া সত্ত্বেও মুহম্মদ তাদের মাঝে ইহুদি ধর্মের অনুরূপ নয়া একেশ্বরবাদী ধর্মের সূচনা ঘটান, যা পৌত্তলিক আরব সমাজের সুদৃষ্টি লাভ করেনি। অপরদিকে মুহম্মদ প্রবর্তিত নবধর্ম প্রচারের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে আরব ভূখণ্ডে বসবাসরত ইহুদি-খ্রিষ্টান সম্প্রদায় মুহম্মদের পথে এক বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। 

ইহুদি সম্প্রদায় আবিষ্কার করে, মুহম্মদের প্রচারিত একেশ্বরবাদী ইসলাম পৌত্তলিক আরবদের পূজিত দেবতা আল্লাহ প্রদত্ত ধর্ম নয়। মূলত তা হাজার বছরের প্রাচীন একেশ্বরবাদী ইহুদি ধর্মের নির্লজ্জ নকল। ইহুদিরা নিজেদের ধর্মীয় গ্রন্থ ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের মাঝে মুহম্মদ আনীত একেশ্বরবাদী ধর্মের উৎসমূল খুঁজে পায়। ইহুদি-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নিকট দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে যায় যে, মুহম্মদ তার আনীত গ্রন্থ কুরআনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে মূসা, দাউদ ও ঈসার বাণীবদ্ধ কিতাবের বিভিন্ন ঘটনাসমূহ হুবহু নকল অথবা আংশিক পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন ও বিয়োজন করার মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক ওহি হিসেবে কুরআনে সংযুক্ত করেছেন।

ইহুদিদের অব্যাহত অভিযোগ ও ধর্মীয় বিষয়গত আক্রমণের মুখে মুহম্মদ ক্রমান্বয়ে স্বীকার করতে বাধ্য হন, তাঁর প্রবর্তিত নয়া ধর্ম ইসলাম মূলত ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মেরই ধারাবাহিকতার ফসল। ইহুদি ধর্মের প্রভু, যিনি মূসাকে তওরাত ও নবুওয়াত প্রদান করেছিলেন, তিনিই মুহম্মদকে কুরআন ও নবুওয়াত প্রদান করেছেন। যার প্রেক্ষিতে আত্মপক্ষ সমর্থনের অজুহাত সৃষ্টির অপচেষ্টায় মুহম্মদ কুরআনে একাধিকবার প্রাসঙ্গিক আয়াতের অবতারণা করেন। যেমন,
আমি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছি তোমরা তাহাতে ঈমান আন। ইহা তোমাদের নিকট যাহা আছে উহার প্রত্যায়নকারী আর তোমরাই উহার প্রথম প্রত্যাখ্যানকারী হইও না এবং আমার আয়াতের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করিও না। তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।” [সূরা বাকারা : ৪১ আয়াত]
কুরআনের এই আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় - যেহেতু কুরআন ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ তওরাত-ইঞ্জিল বা বাইবেলকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে, সেহেতু ইহুদি-খ্রিষ্টান সম্প্রদায় যেন মুহম্মদের প্রতি শত্রুতাবশত কুরআনকে প্রত্যাখ্যান না করে। তারা যেন মুহম্মদের আল্লাহকেই নিজেদের পরমেশ্বর জিহোভা জ্ঞানে পূজা করে ও ভয় পায়। এ বিষয়ে আরও একটি আয়াত নিম্নরূপ:
আমি তোমার প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছি তাহা সত্য, ইহা পূর্ববর্তী কিতাবের প্রত্যায়নকারী। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাহার বান্দাদের সমস্ত কিছু জানেন ও দেখেন।” [সূরা ফাতির : ৩১ আয়াত]
(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন