আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

রবিবার, ২০ মার্চ, ২০১৬

হুদাইবিয়া সন্ধি - ৮: চুক্তি প্রস্তুতি: কে এই সুহায়েল বিন আমর? কুরানে বিগ্যান (পর্ব-১১৮): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – বিরানব্বই

লিখেছেন গোলাপ

(আগের পর্বগুলোর সূচী: এখানে)

"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"

উসমান ইবনে আফফান ও আরও দশজন আদি মক্কাবাসী মুহাম্মদ অনুসারী (মুহাজির) যারা তাঁদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সাক্ষাতের জন্য মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন, তাঁদেরকে কুরাইশরা 'হত্যা করেছে' বলে যে-গুজবটি ছড়িয়ে পড়েছিল, তা শোনার পর স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন; এই গুজবের প্রতিক্রিয়ায় তিনি তাঁর অনুসারীদের কী ধরনেরশপথ ও আনুগত্যের অঙ্গীকার গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন; কোন গাছের নিচে এই শপথ অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়েছিল; এই ঘটনাটির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তাঁর আল্লাহর রেফারেন্সে কুরানের কোন বাণী অবতারণা করেছিলেন - ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে। মুহাম্মদের স্বরচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থ কুরান ও ইসলামের ইতিহাসের আদি উৎসের সকল ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় যে-বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো:

“মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ একটি নির্জলা মিথ্যাকে সত্য ভেবে এমনভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, তিনি এই মিথ্যা খবরের প্রতিক্রিয়ায় কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তাঁর অনুসারীদের প্রতিজ্ঞা পাশে আবদ্ধ করেছিলেন! মিথ্যা ও সত্যের মধ্যে তিনি কোনো পার্থক্যই করতে পারেননি!”

অতঃপর উসমান ও তাঁর অন্যান্য অনুসারীরা নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের সাথে সময় কাটিয়ে যখন মুসলিম শিবিরে ফিরে আসেন, মুহাম্মদ কুরাইশদের প্রস্তাবিত এক সন্ধি-চুক্তিতে রাজি হন। ইসলামের ইতিহাসে যা "হুদাইবিয়া সন্ধি (Treaty of Hudaibiya)” নামে বিখ্যাত।

মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনার পুনরারম্ভ: [1] [2] [3] [4]

পূর্ব প্রকাশিতের (পর্ব: ১১৬) পর:

‘আল-যুহরি বলেন: অতঃপর কুরাইশরা বানু আমির বিন লুয়োভি (Amir b. Lu'ayy) গোত্রের সুহায়েল বিন আমর নামের এক ভাইকে শান্তি স্থাপন করার উদ্দেশ্যে মুহাম্মদের কাছে যে-শর্ত ও নির্দেশ সহকারে পাঠান, তা হলো এই যে, তিনি এই বছর প্রত্যাবর্তন করবেন এই কারণে যে, আরবের কোনো লোক যেন কখনো বলতে পারে, তিনি জোরপূর্বক ভেতরে ঢুকতে পেরেছিলেন।

যখন আল্লাহর নবী তাকে আসতে দেখেন, তিনি বলেন, "তাদের পাঠানো এই লোকটাকে দেখে প্রতীয়মান হয় যে, এই লোকেরা শান্তি স্থাপন করতে চায়।"

দীর্ঘ আলোচনার পর শান্তি স্থাপন বিষয়টি সম্পন্ন হয় ও চুক্তিপত্র লিপিবদ্ধ করা ছাড়া কোনোকিছুই যখন অবশিষ্ট থাকে না, তখন উমর লাফ দিয়ে উঠে আবু বকরের কাছে আসেন ও বলেন, "তিনি কি আল্লাহর নবী নন, আমরা কি মুসলমান নই, আর তারা কি মুশরিক (polytheists) নয়?" আবু বকর তাতে একমত পোষণ করেন, আর তিনি বলতে থাকেন, "তাহলে কেন আমরা এমন শর্তে রাজি হবো, যা আমাদের ধর্মের জন্য অবমাননাকর?" তিনি বলেন, "তাঁর কথামত চলো, কারণ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর নবী।" উমর বলেন, "আমিও তাই দিচ্ছি।" অতঃপর তিনি আল্লাহর নবীর কাছে আসেন ও তাঁকে তিনি একই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করেন; আল্লাহর নবী জবাবে বলেন, "আমি আল্লাহর দাস ও তার প্রেরিত রসুল। আমি তার আদেশের বিপক্ষে যাব না ও সে আমাকে বিফলকাম করবে না।"

উমর প্রায়ই বলতেন, "সেদিন যা করেছিলাম ও বলেছিলাম, তার ভয়ে আমি ভীত, সে কারণেই আমি ভিক্ষা প্রদান করা, রোজা রাখা, নামাজ পড়া ও দাসদের মুক্ত করা ক্ষান্ত দিইনি; সেদিন ভীত হয়ে আমি মনে করেছিলাম যে, তা (আমার প্ল্যান) ছিল আরও উত্তম।"

তারপর আল্লাহর নবী আলীকে ডেকে পাঠান ও তাকে যা লিখতে বলেন তা হলো, "আল্লাহর নামে, যিনি করুণাময় ও অতি দয়ালু।" সুহায়েল বলেন, "আমি তা স্বীকার করি না; পরিবর্তে লেখো, "আল্লাহর নামে।" (আল-ওয়াকিদি: '"করুণাময় [আল-রাহমান]" কী তা আমি জানি না, সুতরাং লেখো, যা আমরা লিখি, "আল্লাহর নামে"।)' আল্লাহর নবী তাকে পরের বাক্যটিই লিখতে বলেন, তিনি তাই লিখেন।

অতঃপর তিনি বলেন, 'লেখো, "এটি এই যাআল্লাহর নবী মুহাম্মদ সম্মত হয়েছে সুহায়েল বিন আমরের সাথে।"' সুহায়েল বলেন, "যদি আমি তোমাকে আল্লাহর নবী বলে সাক্ষ্য দিতাম, তবে আমি তোমার সাথে যুদ্ধ করতাম না। তোমার নিজের নাম ও তোমার পিতার নাম লেখো।" আল্লাহর নবী বলেন, 'লেখো, এটি এই, যা মুহাম্মদ বিন আবদুলল্লাহ সম্মত হয়েছে সুহায়েল বিন আমরের সাথে।" --- [5]

আল-তাবারীর (৮৩৯-৯২৩ সাল) অতিরিক্ত বর্ণনা: [6]

ইবনে আবদ আল-আলা ও ইয়াকুব এর বর্ণনার পুনরারম্ভ:

[‘মুহাম্মদ বিন আবদ আল-আলা আল-সানানি [7]<মুহম্মদ বিন থাওয়ার [8]< মামুর [9]<আল-যুহরি <উরওয়া (বিন আল-যুবায়ের) <আল-মিসওয়ার বিন মাখরামা এবং ইয়াকুব বিন ইবরাহিম [10] <ইয়াহিয়া বিন সাইদ আল-কাততান [11] <আবদুল্লাহ বিন আল-মুবারক [12]<মামুর <আল-যুহরি <উরওয়া <আল-মিসওয়ার বিন মাখরামা ও মারওয়ান বিন আল-হাকাম [13]’) হইতে বর্ণিত’ উরওয়া বিন মাসুদ আল-থাকাফি (পর্ব:১১৫)  উপাখ্যানের বর্ণনার পরের বর্ণনা]

মিকরাজ বিন হাফস [পর্ব-৩৭] উঠে দাঁড়ান ও তাদের কে বলেন, "আমাকে তার কাছে যেতে দাও।" তারা বলে, "যাও!" যখন তিনি দৃষ্টি সীমানায় আসেন, আল্লাহর নবী বলেন, "এই হলো মিখরাজ বিন হাফস। সে হলো এক চরিত্রহীন লোক।" মিকরাজ সেখানে আসেন ও আল্লাহর নবীর সাথে কথা বলা শুরু করেন; যখন তিনি তাঁর সাথে কথা বলছিলেন তখন সুহায়েল বিন আমর সেখানে আসেন।

আইয়ুব [বিন আবি তামিমা কেইসান আল-সাখতিয়ান (৬৮৫-৭৪৮ সাল)] <ইকরিমা [পর্ব: ১১৬] হইতে বর্ণিত:

যখন সুহায়েল সেখানে আসেন, আল্লাহর নবী বলেন, "তোমাদের জন্য কাজটা এখন সহজ হয়ে গেলো।"

মুহাম্মদ বিন উমারাহ আল-আসাদি ও মুহাম্মদ বিন মনসুর [মৃত্যু ৮৬৮ সাল] <উবাইদুল্লাহ বিন মুসা [৭৪৫-৮২৮ সাল] <মুসা বিন উবায়েদা [মৃত্যু ৭৬৯ সাল] <<আইয়াস বিন সালামাহ <তার পিতা (সালামাহ বিন আল-আকওয়া) [পর্ব: ১১০হইতে বর্ণিত:

কুরাইশরা সুহায়েল বিন আমর, হুয়ায়েতিব বিন আবদ আল-উজ্জা ও হাফস বিন ফুলান-কে শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে আল্লাহর নবীর কাছে প্রেরণ করেন।  যখন আল্লাহর নবী সুহায়েল বিন আমর-কে তাদের মধ্যে দেখতে পান, তিনি বলেন, "আল্লাহ তোমাদের কাজটা সহজ করে দিয়েছে। ঐ লোকেরা আত্মীয়তার সূত্রেতোমাদের সাথে যোগাযোগ করা মনস্থ করেছে ও তোমাদের সাথে শান্তি স্থাপন করা সাব্যস্ত করেছে। কুরবানির পশুদের সামনে পাঠাও ও উচ্চকণ্ঠে বলো লাব্বায়েকা (তীর্থযাত্রীর আওয়াজ), সম্ভবত, তা তাদের অন্তরকে নরম করবে।" তাই তারা শিবিরের সমস্ত দিক থেকে উচ্চকণ্ঠে বলতে থাকে লাব্বায়েকা, যতক্ষণে না তাদের সেই আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। অতঃপর তারা (কুরাইশদের এই তিন প্রতিনিধি) সেখানে আসে ও তাঁকে শান্তি স্থাপনের আহ্বান করে।’

- অনুবাদ, টাইটেল, ও [**] যোগ - লেখক।

ইমাম বুখারীর (৮১০-৮৭০ সাল) বর্ণনা:

এই প্রসঙ্গে ইমাম বুখারীর বর্ণনা (৩:৫০:৮৯১) আল-তাবারীর ওপরে বর্ণিত বর্ণনারই অনুরূপ। [4]

>>> আদি উৎসের (Primary source) ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো
- কুরাইশরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের সাথে কোনোরূপ সংঘর্ষে জড়াতে চাননি। সে কারণেই উসমান ইবনে আফফান মারফত মুহাম্মদের মক্কা আগমনের উদ্দেশ্য জানার পর তাঁরা মুহাম্মদের কাছে শান্তি স্থাপনের প্রস্তাব পঠিয়েছিলেন।

সেই প্রস্তাবে তাঁদের প্রথম যে-শর্তটি ছিল, তা হলো, "মুহাম্মদ এই বছর প্রত্যাবর্তন করবেন!" এই বিশেষ শর্তটি তাঁরা কী কারণে আরোপ করেছিলেন, সেই বিষয়টিও আদি উৎসের বর্ণনায় অত্যন্ত স্পষ্ট! সেই কারণটি হলো - তাঁদের আত্মগৌরব ও সম্মানবোধ; “যেন আরবের কোনো লোক কখনো বলতে পারে যে, মুহাম্মদ জোরপূর্বক মক্কায় ঢুকতে পেরেছিলেন!” কুরাইশরা তাঁদের আত্মমর্যাদার প্রশ্নে কোনো আপস করতে রাজি ছিলেন না, যার বিস্তারিত আলোচনা "অশ্রাব্য-গালি ও অসহিষ্ণুতা বনাম সহিষ্ণুতা" পর্বে (পর্ব-১১৫) করা হয়েছে।

আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, কুরাইশরা শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে মুহাম্মদের কাছে যে লোকগুলোকে পাঠিয়েছিলেন, তাঁদের প্রধান ছিলেন সুহায়েল বিন আমর নামের এক ব্যক্তি। আর সেই ব্যক্তিটিকে আসতে দেখে মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশ্যে মন্তব্য করেছিলেন, "ঐ লোকেরা আত্মীয়তার সূত্রে তোমাদের সাথে যোগাযোগ করা মনস্থ করেছে--, তোমাদের জন্য কাজটা এখন সহজ হয়ে গেলো।" কেন মুহাম্মদ সুহায়েল বিন আমর-কে দেখে এমন উক্তি করেছিলেন? কে এই সুহায়েল বিন আমর?

কে এই সুহায়েল বিন আমর?

এই সেই সুহায়েল বিন আমর, যাকে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা বদর যুদ্ধে বন্দী করে মদিনায় ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন; এই সেই সুহায়েল বিন আমর, যাকে ঘরের এক কোণায় দুই হাত ঘাড়ের সাথে বাঁধা অবস্থায় দেখে অনেক কষ্টেও নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে মুহাম্মদের দ্বিতীয় স্ত্রী সওদা বিনতে জামা (যামাহ) তাঁকে বলেছিলেন 'হে আবু ইয়াজিদ, তুমি সহজেই ধরা দিয়েছ, এর চেয়ে মহৎ মৃত্যুই তোমার উচিত ছিল' - যার বিস্তারিত আলোচনা “বন্দীহত্যা ও নিষ্ঠুরতা” পর্বে (পর্ব-৩৫) করা হয়েছে। 

এই সেই সুহায়েল বিন আমর, বদর যুদ্ধে যার নিচের ঠোঁট ফেটে ভাগ হয়ে গিয়েছিল ও বন্দী অবস্থায় যাকে দেখে উমর ইবনে খাত্তাব মুহাম্মদের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন এই বলে, "আমাকে সুহায়েলের সামনের দুইটি দাঁত উপড়ে ফেলার অনুমতি দিন; তাহলে তার জিহ্বা বেরিয়ে পড়বে"; এই সেই সুহায়েল বিন আমর, যাকে বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করতে  মিকরাজ বিন হাফস বিন আখিয়াফ (ওপরে বর্ণিত) মদিনায় মুসলমানদের কাছে সুহায়েলের মুক্তির সুপারিশ নিয়ে এসেছিলেন ও মুক্তিপণের অর্থ পরিশোধ করতে না পেরে বলেছিলেন, "তার পরিবর্তে আমার পায়ে শৃঙ্খল পরাও এবং তাকে ছেড়ে দাও, যেন সে তোমাদের কাছে তার মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে পারে।" [বিস্তারিত আলোচনা "লুঠ ও মুক্তিপণের আয়ে জীবিকাবৃত্তি" পর্বে (পর্ব-৩৭)।] 

খাদিজার মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পর মুহাম্মদ যাকে বিয়ে করেছিলেন (দ্বিতীয় স্ত্রী), তিনি হলেন সওদা বিনতে যামাহ (পর্ব: ১০৮);যিনি ছিলেন সুহায়েল বিন আমরের মৃত ভাইয়ের প্রাক্তন স্ত্রী। কুরাইশ বংশের বানু আমির গোত্রর গোত্র-প্রধান ছিলেন এই সুহায়েল বিন আমর। যদিও তিনি ছিলেন পৌত্তলিক, কিন্তু তাঁর ভাই আল-সাকরান বিন আমর(Al-Sakran b Amr) ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন ও মুহাম্মদের নির্দেশে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন (পর্ব: ৪১-৪২)। আল-সাকরানের মৃত্যুর পর, মুহাম্মদ তাঁর বিধবা স্ত্রী সওদা-কে বিবাহ করেন। সেই সূত্রে মুহাম্মদ পরিবারের সাথে ছিল সুহায়েল বিন আমরের আত্মীয় সম্পর্ক। আর সেই কারণেই, সম্ভবত, মুহাম্মদের এই উক্তি, "ঐ লোকেরা আত্মীয়তার সূত্রে তোমাদের সাথে যোগাযোগ করা মনস্থ করেছে,-- তোমাদের জন্য কাজটা এখন সহজ হয়ে গেলো।"[14]

কুরাইশরা ছিলেন “আল্লাহ" বিশ্বাসী! তাঁরা বংশ পরম্পরায় 'আল্লাহ'-কে দেবতা জ্ঞানে বিশ্বাস করতেন, যার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ হলো মুহাম্মদেরই রচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থ কুরান! [বিস্তারিত: "মুহাম্মদের মোজেজা তত্ত্ব" পর্বে (পর্ব: ২৪)] তাঁদের সেই দেবতা 'আল্লাহর' সঙ্গে তাঁরা কখনো “যিনি করুণাময় ও অতি দয়ালু (আল-রাহমান)" সম্বোধনটি যুক্ত করতেন না। কিন্তু মুহাম্মদ তাঁদের সেই দেবতার নামের সাথে যোগ করেছিলেন 'আল-রাহমান' শব্দটি, সম্ভবত, তাঁদের আল্লাহর সঙ্গে তাঁর আল্লাহর পার্থক্য করার জন্য। সে কারণেই সুহায়েল ঐ অতিরিক্ত শব্দটি যোগ করতে রাজি ছিলেন না। তাই তাঁর উক্তি, "করুণাময় [আল-রাহমান] কী তা আমি জানি না, সুতরাং লেখো, যা আমরা লিখি, 'আল্লাহর নামে'।" একইভাবে, মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহর নামের সাথে 'আল্লাহর নবী' যুক্ত করে চুক্তিনামা লিখিত হোক, তা মেনে নিতে সুহায়েল রাজি ছিলেন না। আর তা না মানার পিছনে তাঁর যুক্তিটি ছিল অকাট্য; "যদি আমি তোমাকে আল্লাহর নবী বলে সাক্ষ্য দিতাম, তবে আমি তোমার সাথে যুদ্ধ করতাম না।"

তিনি কোনো অন্যায্য দাবি করেননি।

(চলবে)

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

[1]“সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ:  A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৫০৪

[2] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮, ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৪৫-১৫৪৭

[3] অনুরূপ বর্ণনা (Parallel): “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক:  আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬০৫-৬১০ http://www.britannica.com/biography/al-Waqidi
ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ২৯৮-৩০১

[4] অনুরূপ বর্ণনা- সহি বুখারী: ভলিউম ৩, বই ৫০, নম্বর ৮৯১
অনেক বড় হাদিস, এই পর্বের প্রাসঙ্গিক অংশ:
---- Another person called Mikraz bin Hafs got up and sought their permission to go to Muhammad, and they allowed him, too. When he approached the Muslims, the Prophet said, "Here is Mikraz and he is a vicious man." Mikraz started talking to the Prophet and as he was talking, Suhail bin Amr came.



When Suhail bin Amr came, the Prophet said, "Now the matter has become easy." Suhail said to the Prophet "Please conclude a peace treaty with us." So, the Prophet called the clerk and said to him, "Write: By the Name of Allah, the most Beneficent, the most Merciful." Suhail said, "As for 'Beneficent,' by Allah, I do not know what it means. So write: By Your Name O Allah, as you used to write previously." The Muslims said, "By Allah, we will not write except: By the Name of Allah, the most Beneficent, the most Merciful." The Prophet said, "Write: By Your Name O Allah." Then he dictated, "This is the peace treaty which Muhammad, Allah's Apostle has concluded." Suhail said, "By Allah, if we knew that you are Allah's Apostle we would not prevent you from visiting the Kaba, and would not fight with you. So, write: "Muhammad bin Abdullah." The Prophet said, "By Allah! I am Apostle of Allah even if you people do not believe me. Write: Muhammad bin Abdullah." (Az-Zuhri said, "The Prophet accepted all those things, as he had already said that he would accept everything they would demand if it respects the ordinance of Allah, (i.e. by letting him and his companions perform 'Umra.)" The Prophet said to Suhail, "On the condition that you allow us to visit the House (i.e. Ka'ba) so that we may perform Tawaf around it." Suhail said, "By Allah, we will not (allow you this year) so as not to give chance to the 'Arabs to say that we have yielded to you, but we will allow you next year." So, the Prophet got that written."-----



[5] ‘সুহায়েলের আপত্তি ছিল এইখানে যে, তা ছিল মুসলমানদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, "যিনি করুণাময় ও অতি দয়ালু।" অনুরূপ বর্ণনা দিয়েছেন আল-ওয়াকিদি, '"করুণাময় [আল-রাহমান]" কী তা আমি জানি না, সুতরাং লিখো যা আমরা লিখি, "আল্লাহর নামে"[পৃষ্ঠা-৬১০]।' সুহায়েলে তাঁর নিজের ফরমুলায় ও "আল্লাহর" নাম ব্যবহার করেছেন।’ Ibid আল-তাবারী: নোট নম্বর ৩৭০

[6] Ibid তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী- পৃষ্ঠা ১৫৩৯-১৫৪০

[7] 'মুহাম্মদ বিন আবদ আল-আলা আল-সানানি ৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে বসরায় মৃত্যুবরণ করেন, আল-তাবারী সেখানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন।' - Ibid আল-তাবারী: নোট নম্বর ২৭৯

[8] 'মুহম্মদ বিন থাওয়ার আল-সানানি ৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।'

[9] 'আবু উরওয়া মামুর বিন রসিদ (৭১৪-৭৭০ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন আল-যুহরীর ছাত্র, ঐতিহাসিক ও হাদিস বর্ণনাকারী (traditionist)।' Ibid আল-তাবারী: নোট নম্বর ২৮১

[10] 'ইয়াকুব বিন ইবরাহিম আল-দাওরাকি (৭৮২-৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দ)।'

[11] 'ইয়াহিয়া বিন সাইদ ফাররুক আল-কাততান (৭৩৭-৮১৩ খ্রিষ্টাব্দ)।'

[12] 'আবু আবদ আল-রাহমান আবদুল্লাহ বিন আল-মুবারক (৭৩৬-৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দ)।'

[13] 'মারওয়ান বিন আল-হাকাম বিন আবি আল-আস বিন উমাইয়া ছিলেন মুয়াবিয়া শাসনের অধীনে মদিনার এক গভর্নর, পরবর্তীতে ৬৮৪ সালে তিনি খলিফা নিযুক্ত হোন ও নয় মাস যাবত রাজত্ব করেন। তিনি ৬৮৫ সালে (রমজান, ৬৫ হিজরি) মৃত্যুবরণ করেন। Ibid আল-তাবারী: নোট নম্বর ২৭৮

[14] Ibid আল-তাবারী: নোট নম্বর ৩৪০

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন