আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬

ঈশ্বরের ইতিহাস - ১

লিখেছেন মেসবাহ উস সালেহীন

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে নতুন একটা সিরিয়াল দেখানো হয়েছে। দি স্টোরি অফ গড। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এই প্রোগ্রামটা। প্রোগ্রামের হোস্ট মর্গান ফ্রিম্যান বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় যান, সেখানকার মানুষদের ধর্মীয় আচার-আচরণ দেখেন, মানুষদের সাথে কথা বলেন আর তারপর এগুলোর মাঝে মিল-অমিল খোঁজার চেষ্টা করেন। প্রথম পর্বের বিষয় হচ্ছে মৃত্যু। এখানে দেখানো হয়েছে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা, প্রাচীন ইনকা সভ্যতার মৃত্যু নিয়ে বিশ্বাস। একইসাথে সমসাময়িক হিন্দু আর খ্রিষ্টান ধর্মবিশ্বাসে মৃত্যুর কনসেপ্ট নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। বিজ্ঞান নিয়েও কিছুটা টানাটানি করেছে, কিন্তু সেটা খুব বেশি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়।

প্রাচীন মেক্সিকোয় (ইনকা কিংবা এ্যাজটেক সভ্যতায়) মৃত্যু কিংবা রক্ত খুবই প্রয়োজনীয় একটা ব্যাপার ছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল, সূর্য দেবতার উদ্দেশে রক্তপাত করা হলে সেটা সূর্যকে শক্তি যোগাবে। সূর্য সেই শক্তি নিয়ে প্রতিদিন আকাশে আসবে, আলো বর্ষণ করবে। সূর্য শক্তিহীন হয়ে গেলে পুরা পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যাব। তাই ওদের কমিউনিটির অনেকেই স্বেচ্ছায় নিজেকে দেবতার উদ্দেশে বলি দিতে যেত মন্দিরে। মন্দিরের পুরোহিত তার বুক কেটে হৃদপিণ্ড বের করত। লোকটা পরম তৃপ্তির সাথে দেখত, কীভাবে তার শরীরের হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত বের হচ্ছে, কীভাবে সেই রক্ত পেয়ে সূর্যদেব শক্তিশালী হচ্ছে। একটা তৃপ্তি নিয়েই সে মারা যেত - এই ভেবে যে, "আমার মৃত্যুতে আমার পুরা কমিউনিটি উপকৃত হচ্ছে।"

মিশরের রাজার মৃত্যুর পরে বিশাল বিশাল পিরামিড বানানো হত। পিরামিডের কেন্দ্রে রাজার কফিন রাখা হত। পিরামিডের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দোয়া-দরুদ-মন্ত্র লেখা থাকত। মৃত্যুর পরে রাতের বেলা রাজার আত্মা জেগে উঠবে। রাজা তখন তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। এই যাত্রাপথে অনেক দুষ্ট আত্মা-জ্বিন-ভূত তাকে বাধা দেবে। দোয়া-দরুদগুলো তাকে রক্ষা করবে। তবে ইসলাম ধর্মের কনসেপ্ট অনুযায়ী আমরা যে-ধরনের যাত্রার কথা বুঝি, সেরকম কিছু নয়। ইসলামের মিথ অনুযায়ী, মৃত্যুর পরে আত্মাকে পুলসেরাত নামে একটা ব্রিজ পার হতে হবে। এই ব্রিজের তলায় আগুন (দোজখ) আর ব্রিজ পার হতে পারলে বাগান (বেহেস্ত); অনেকেই তাকে দোজখে টেনে নিয়ে যেতে চাইবে। তবে একবার কেউ যদি পুলসেরাত পাড়ি দিয়ে বেহেশতে ঢুকতে পারে, তাহলে সে সারাজীবন ওই বেহেশতেই থাকবে।মিশরীয়দের বিশ্বাস সেই রকম ছিল না। রাজা সারারাত যুদ্ধ করে করে তার গন্তব্যে পৌছাবে। ভোররাতে আবার তার আত্মা কফিনে ফিরে আসবে। পরদিন রাতে আবার তার আত্মা নতুনভাবে যাত্রা শুরু করবে। এইভাবে প্রতিদিন একই সাইকেল চলবে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, রাজা যদি যুদ্ধে জিততে পারে, তাহলেই পরদিন সকালে সূর্য উঠবে। রাজা যদি হেরে যায়, তাহলে আর সূর্য উঠবে না। সূর্য না উঠলে পুরা দেশের ক্ষতি। এই জন্য দেশের মানুষ এত কষ্ট সহ্য করেও পিরামিড বানাতো। অপরদিকে রাজা মরে গেলেও কিন্তু দেশের প্রতি তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। প্রতিরাতে তার কর্তব্য হচ্ছে - অপদেবতাদের সাথে যুদ্ধ করে করে সূর্যদেবতাকে মুক্ত করা।

ইহুদিদের আদি পুস্তক ওল্ড টেস্টামেন্টে মৃত্যুর পরে অন্য কোনো জীবনের উল্লেখ নেই। কিন্তু যিশু এসে মৃত্যুর পরে অন্য এক জীবনের কথা বলেছেন। যিশু নিজে সকল মানুষের পাপ বহন করে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। নিজে ক্রুশবিদ্ধ হয়েছেন। তাই অন্য সব খ্রিষ্টানের আর কোনো পাপ নেই। অন্য খ্রিষ্টান যদি স্বীকার করে নেয় যে, যিশু আমার রক্ষাকর্তা, তিনিই আমার সব পাপ নিয়ে নিয়েছেন - এই বিশ্বাসের জন্যই সে স্বর্গে যাবে। ইসলাম নিয়ে এই এপিসোডে কোনো আলোচনা হয়নি। ইসলামের পরকাল অনেক স্পস্ট এবং বিশদ। এই পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী এবং মৃত্যুর পরে অনন্ত জীবন। অনন্ত জীবনে হয় আপনি বেহেশতে সুখে থাকবেন অথনা দোজখে অনেক কষ্টে থাকবেন। এই পৃথিবীতে আপনার কাজের ওপরে আপনার পরকালের স্থান নির্ধারিত হবে।

হিন্দু ধর্মের কনসেপ্ট অনুযায়ী - আপনার মৃত্যুর পরে আপনার পুনর্জন্ম হবে। এই জন্মে অনেক পাপ কাজ করলে আপনার জন্ম হবে মানুষের চেয়ে খারাপ কোনো প্রাণী হিসাবে কিংবা খারাপ মানুষ হিসাবে। আর এই জন্মে অনেক ভাল কাজ করলে আপনার নতুন জন্ম হবে অনেক ভাল পরিবারের মানুষ হিসাবে কিংবা মানুষের চেয়েও উন্নত কোনো প্রাণী হিসাবে। অনেক ভাল কাজ করলে তখন আপনার আত্মা এতই সুপিরিয়র প্রাণী হয়ে যাবে যে, সেটি ঈশ্বরের সাথে বিলীন হয়ে যাবে। একে বলে মোক্ষলাভ। এর পরে আর কোনো জন্মান্তর হবে না। 
ইসলামি সুফিজম-এর লক্ষ্যও কিন্তু এটাই। খোদার সাথে নিজেকে ফানা ফিল্লাহ করে দেওয়াই উদ্দেশ্য। নামাজ-রোজা কিংবা বেহেশত মূল উদ্দেশ্য নয়। হিন্দু ধর্মের মূল লক্ষ্য পুনর্জন্ম নেওয়া নয়, বরং মোক্ষলাভ করা। এই জন্য অনেক শর্টকাট পথ আছে। যেমন বেনারস কিংবা অন্যান্য তীর্থক্ষেত্রে শবদাহ করলে আত্মা মোক্ষলাভ করবে বলে ধারণা করা হয়। হিন্দুদের শবযাত্রা অনেক উৎসবমুখর হয়। কারণ এই মৃত্যুতে শোকের কিছু নেই। নতুন একটা জীবনের প্রথম পর্ব এই মৃত্যু।

সারমর্ম: মরগান ফ্রিম্যান একজন গীর্জার পাদ্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি কেন এই লাইনে এলেন? তিনি বললেন, আমি একবার পানিতে ডুবে গিয়েছিলাম। প্রায় ১৫ মিনিট পানির নিচে ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একটা রঙিন আলো। গথিক ডিজাইনের গীর্জার কাচের ভেতর দিয়ে যেমন রঙিন আলো আসে, সেই রকম। সেই আলোর ভেতর দিয়েই আমি যিশুকে দেখতে পেলাম। মনে হল যিশু আমার কাছে এসে কিছু স্বর্গীয় বাণী বলে গেলেন। ১৫ মিনিট পরে আমাকে উদ্ধার করা হয়। নতুন জীবন ফিরে পেয়ে আমি এই পেশায় এলাম।

একজন হার্টের ডাক্তারের কাছে মরগান ফ্রিম্যান তার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলেন। সেই ডাক্তার বললেন, মৃত্যুর পূর্বে সব ধর্মের মানুষই এই ধরনের হ্যালুসিনেশন ফিল করে। তারা রঙিন আলো দেখে। অনেক অবাস্তব জিনিস দেখে। অনেক সময় দেখে তাদের মৃত আত্মীস্বজনকে।মানুষের ব্রেইনের স্ট্রাকচারের কারণ এমন ঘটনা ঘটে। তবে তিনি নতুন একটা তথ্য দিলেন। আমাদের হৃদপিণ্ড কিংবা ব্রেইন নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার পরেও আমাদের শরীরের সব সেল মারা যেতে কিছুটা সময় লাগে। এই সময়েও মানুষের সচেতনতা কাজ করে।

মানুষ সব সময়েই চেয়েছে অমর হয়ে থাকতে। মৃত্যুর ভয় তাকে তাড়া করেছে সব সময়। সান্ত্বনা হিসেবে সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন কল্পগাথা বানিয়েছে। সব কল্পগাথার মোটামুটি কমন বিষয় হল — এই মৃত্যুর পরেও আরেকটা জীবন আছে। মিশরের ফারাওরা পিরামিডে নিজের নাম খোদাই করেছে অমর থাকার জন্য। মরগান ফ্রিম্যান জোক করে বলেছেন, আমিও অমর। আমার ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট আছে। আমি মারা গেলেও এই অ্যাকাউন্ট থাকবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন