আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬

'রঙ্গিলা রাসুল' সমাচার, পাকিস্তানের জন্মে এর সম্ভাব্য ভূমিকা এবং পাকিস্তানে ব্ল্যাসফেমি আইন - ২

লিখেছেন মার্ক এন্টনি


এবারে জিন্নাহর কথায় আসি। সেই সময় জিন্নাহ বোম্বেতে (বর্তমান ভারতের মুম্বাই) আইন প্র্যাকটিস করতেন। প্রশ্ন হল, তিনি বোম্বেতে প্র্যাকটিস করলেও লাহোরের একটি মামলায় নিজেকে সে সময় জড়িয়েছিলেন কেন? যাই হোক, তার আগে বলে নিই, সেই সময় জিন্নাহ কেবলমাত্র একজন আইনজীবী ছিলেন না, তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং একজন জনপ্রতিনিধিও ছিলেন। জিন্নাহ সেই সময় কংগ্রেসের সাথে সমস্ত সম্পর্ক শুধু ছিন্নই করেননি, একই সাথে তিনি ১৯২৯ সালের ২৮ মার্চে তার “১৪ দফা” নিয়ে আসেন। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে, ধর্মীয় আবেগের সাথে সম্পর্কের কারণেই মামলাটির প্রতি তিনি এত আগ্রহী ছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, এটাই ইলমুদ্দিনের খ্যাতিকে ব্যবহার করে ভারতের সকল মুসলিমের মধ্যে একটি রাজনৈতিক চেতনা ও ধর্মীয়বোধ তৈরি করার একটি সুবর্ণ সুযোগ। আর তাই তিনি তার মামলাটি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

কিন্তু আপিল বিভাগের ক্ষেত্রে হলেও জিন্নাহ কি এই মামলাটি গ্রহণ করে উচিত কাজ করেছিলেন? একজন রাজনৈতিক নেতার আচরণ তার অঞ্চলের সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে। তার মতামত একটি ন্যাশনাল সাইকি বা জাতীয় মনোভাবে পরিণত হয়ে যায়। জিন্নাহ কেসটি হাতে নিয়ে ও ইলমুদ্দিনকে সমর্থন করে সকলকে এই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, কেউ যদি ধর্ম অবমাননাকারীকে হত্যা করে, তাহলে সে একজন খুনের আসামী হলেও তাকে সমর্থন করা উচিত। ধর্মাবমাননাকারীকে যে হত্যা করেছে, তার সাত খুন মাফ। তার মতো একজন রাজনৈতিক নেতার পক্ষে এমন কাজ করাটা ছিল ন্যাক্কারজনক। জিন্নাহ অবশ্যই জানতেন যে, ইলমুদ্দিনকে এভাবে সমর্থন করাটা তার অনুসারীদের কাছে ইলমুদ্দিনকে একজন জাতীয় বীর বানিয়ে দেবে, সকল মুসলিম তাকে সমর্থন দেয়া শুরু করবে, মুসলিমদের মাঝে পরধর্মবিদ্বেষ বাড়াবে ও হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গাকে আরও উসকে দেবে।

পরে হয়েছিলও তাই। জিন্নাহর অংশগ্রহণ ইলমদ্দিনকে জাতীয় বীরে পরিণত হবার কাজে আরও বেশি সাহায্য করে। লাহোরে মোল্লারা মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে অনেক মিছিল বের করেছিল। পাঞ্জাবের মুসলিমদের মধ্যে এর মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক চেতনার উন্মেষ ঘটে। যার ফলে দেখা যায় ইলমুদ্দিনের জানাজায় দুই লক্ষ মুসলিমের অংশগ্রহণ। সাধারণ মুসলিমদের মনে ইলমুদ্দিনের ফাঁসি যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল তারই বহিঃপ্রকাশ হয়তো আমরা লাহোর সহও ভারতের অন্যান্য স্থানে ৪৭-এর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গাগুলোতে দেখেছিলাম। যাই হোক, পাকিস্তান জন্মের পরে এই ইলমুদ্দিনের নামে বহু রাস্তা, পার্ক ও হাসপাতাল তৈরি হয়েছে।

তো জিন্নাহর সেই আচরণটি পরবর্তীতে পাকিস্তানে কী প্রভাব ফেলেছে তা একটু পরে দেখবেন। এমনও হতে পারে, ইলমুদ্দিনের পক্ষে কাজ করার জন্যই জিন্নাহ পরবর্তীতে ভারতের সমস্ত মুসলিমের অবিসংবাদী নেতায় পরিণত হন। এ রকম বলার কারণও একটু পরে বলছি।

আল্লামা ইকবাল ও পাকিস্তানের স্বাধীনতায় “রঙ্গিলা রাসুল” এর সম্ভাব্য ভূমিকা

কাকতালীয় বা কোইনসিডেন্স কি না, জানি না, ইলমুদ্দিনের ফাঁসির কয়েকমাস পরেই আমরা আল্লামা ইকবালের পাকিস্তান সৃষ্টির যুগান্তকারী ধারণাগুলোর অভ্যুত্থান দেখতে পাই, আর সেই সাথে দেখতে পাই তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতাদের প্রতি তাঁর ক্ষোভ। একই সাথে দেখা যায় সেক্যুলারিজম ও জাতীয়তাবাদের প্রতি তাঁর বিদ্বেষ।

ইকবাল ১৯৩০ সালে লাহোরে ছয়টি ইংরেজি লেকচার প্রদান করেছিলেন। আর এরপর ১৯৩৪ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসে এই লেকচারগুলো নিয়ে “The Reconstruction of Religious Thought in Islam” বা “ইসলামের ধর্মচিন্তার পুনঃপ্রতিষ্ঠান” নামক বইটি প্রকাশ করেন। এই বইগুলো মাদ্রাজ, হায়দ্রাবাদ ও আলিগড়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এই লেকচারগুলোতে বর্তমান যুগে ইসলামের ধর্ম ও রাষ্ট্রদর্শন-আইনদর্শন (পলিটিকাল এন্ড লিগাল ফিলোসফি) হিসেবে দ্বৈত ভূমিকার কথা বলা হয়। অর্থাৎ তাঁর সেই লেকচারগুলো অনুসারে, ইসলাম শুধুমাত্র একটি নিছক ধর্ম নয়, এটা একটি রাজনৈতিক ও আইনগত নির্দেশনা। কাউকে ইসলাম পালন করতে হলে তাকে ইসলামের এই রাজনৈতিক ও আইনগত দর্শনকে অন্তর থেকে মেনে চলতে হবে। এই লেকচারগুলোতে ইকবাল সেসময়ের মুসলিম রাজনীতিবিদদের আচরণ ও প্রবণতার তীব্রভাবে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সকল মুসলিম রাজনীতিবিদ নীতিহীন ও বিপথগামী হয়ে পড়েছে। তারা কেবল ক্ষমতা নিয়েই সুখে থাকতে চায়, আম মুসলিম জনতার পাশে তারা একেবারেই দাঁড়াতে চায় না।

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন