আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬

ধর্ম থেকে মুক্তি: একটি ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ

লিখেছেন নরমপন্থী

কিছুদিন আগে এক স্কুলবন্ধুর সাথে দেখা অনেক বছর পর। খুব আড্ডা দিলাম। আলাপচারিতার একটা পর্যায়ে সে আমাকে তার জন্য দোয়া করতে বলল এই বলে, "দেখ, তুমি ধার্মিক মানুষ, সব সময় নামাজ পড়ো, আমার জন্য একটু দোয়া করবা।" আমি জানতাম, স্কুলজীবনের বন্ধুরা আমাকে আজো অত্যন্ত নামাজি মোসলমান মনে করবে তা-ই স্বাভাবিক। আমি বললাম, "ঠিক আছে, করব।" মনে পড়ল, স্কুলজীবনের কথা। কারণ আমি একদা খুবই নামাজি ছিলাম এবং স্কুলজীবনে নিয়মিত নামাজ পড়ার জন্য আমার সম্পর্কে ঐ এলাকায় অনেক সুনাম ছিল। কিন্তু আমার ধার্মিক জীবনের অবসান ঘটেছে অনেক বছর আগে - স্কুল এবং ঐ শহর ছাড়ার সাথে সাথেই। তা এরা কেউ হয়ত জানে না।

ছয়-সাত বছর থেকে তেরো বছর বয়স পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন সাত সকালে মসজিদে যাইতে হইতো ইসলামি জ্ঞান আহরণের জন্য। আরবি ভাষা শেখা তো কিছু না, ধর্মশিক্ষার নামে দেশী হুজুরদের ভাঁওতাবাজি। আমার মনে হয়, ধর্মের ভাষা শেখার জন্য এই বয়সে অর্থাৎ জীবনের সবচেয়ে (সকালের ঘুম থেকে ওঠার পরের) মূল্যবান সময়টুকু জলাঞ্জলি না দিয়ে, যদি ফরাসী বা চাইনিজ ভাষা শেখার কাজে কিংবা বাস্তব জীবনে কাজে লাগে এমন কিছুতে ব্যয় করতে পারতাম, তাহলে জীবনে অনেক সফলকাম হতে পারতাম। তবে আরবি ভাষার লৌহযুগের কিতাবখানা সুর করে পড়তে পারার কারণে হয়তো কোনোদিন আল-শাবাব জাতীয় সন্ত্রাসী আক্রমণে পড়লে নিজেকে মোসলমান (যদিও ভুয়া) প্রমাণ করতে পারবো জীবন বাঁচানোর স্বার্থে। যদি তাতেও তেনারা সন্তুষ্ট না হন, তাহলে আমার কর্তিত ধনাগ্র উন্মোচন করিয়া মোসলমানত্ত প্রমাণ করিবার উপায় তো রয়েই গেছে। না, বলতেই হয়, আল্লায় যা করে ভালোর জন্যই করে।

যা বলছিলাম, প্রাথমিক পর্যায়ে হয়তো আমার এই ধর্মশিক্ষা পুরোপুরি বিফলে যায়নি। কারণ যেমনটা বললাম, একটা বয়সে আমি ভীষণ রকম ধর্মকর্মে মেতে উঠেছিলাম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করতাম। সিজদায় গিয়া কপালটা মাঝেমাঝে একটূ জোরে ডলা দিতাম, যাতে হাসরের দিন আল্লায় এই কপাল দেইখ্যা উপযুক্ত প্রতিদান দেয়। তবে আমি যতোটা না জান্নাতের আশায় নামাজ পড়তাম, তার চেয়ে বেশি জাহান্নামে অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য। কোরান-হাদিসের বর্ণনায় পাওয়া কুমারী হুরিদের বিবরণ মোটেও আগ্রহের উদ্রেক করত না বরং তাদের তখনো বীভৎস পেত্নী-পেত্নী মনে হইত। (আমি বাঙালি মাইয়া ছাড়া অন্যদের বেশি আকর্ষণ বোধ করি না, কখনোই করি নাই। যৌনতার ব্যাপারটাতে আমি সম্ভবত জঘন্যতম রেসিস্ট। আর তাই জান্নাতি হুরি-টুরি তাই আমার দরকার নাই। যাক সে অন্য কাহিনী।) 

তাবলিগ জামাতের লোকজনের কাছে আমি ছিলাম পরিচিত মুখ। এমনকি এলাকার মসজিদে তাবলীগ জামাত আসলে মাঝে মাঝে নিজেই দাঁড়িয়ে বলতাম, “বাদ নামাজ দীন ও দুনিয়া সম্পর্কে জরুরি বয়ান হবে, সবাই থাকবেন বহুত ফায়দা হবে ইনশাল্লাহ।” মাঝে মাঝে তিন দিন লাগাইতাম। যদিও মুরুব্বিরা চল্লিশ দিন লাগাইতে বলতো, কিন্তু আমি তা পারি নাই। এই লাগানোর শব্দটা আপনাদের কাছে অশ্লীল মনে হইলে মনে মনে তওবা পড়েন। এই লাগানোর অর্থ আল্লার রাস্তায় সময় লাগানো।

তবে শুরু থেকেই আমি অনুভব করছিলাম, আমার জন্য ধর্মটা যেন সুপরিকল্পিত ফাঁদ। তা সে যে উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করা হোক না কেন, এটা আমার চিন্তা-চেতনার চারপাশে দেয়াল তৈরি করে ফেলেছে । আমি তীব্র কৌতূহল অনুভব করতে শুরু করেছিলাম এই দেয়ালের ওপারে কী আছে। কিন্তু উপায় জানা ছিল না।

তারপর এক দিন আছরের নামাজ শেষে বাসায় ফিরছি তখন “শয়তান” আমার মাথায় সোজাসাপটা প্রথম প্রশ্ন জাগিয়ে দিল। “অধিকাংশ মানুষই নিজ নিজ পিতা-মাতার ধর্মকে সত্য বলে মেনে নেয়, আর সবার জন্ম নির্ধারণের পেছনে তার নিজের হাত নেই।” কিন্তু বিষয়টা আমাকে সঙ্গে সঙ্গে নাস্তিক বানাইতে পারে নাই। কারণ তখনো আমি অনেক প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে জানতাম না। তবে নামাজ-টামাজে ঢিল দেওয়া শুরু করলাম। কেউ এই প্রশ্নের গ্রহণযোগ্য উত্তর দিতে পারে নাই। 

ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় আমি জুম্মার নামাজের কথা বলে বের হয়ে ঢাকা শহরের অলিগলি পার হয়ে কিছুক্ষণ পরে ঘরে ফিরতাম। আর রোজার সময় সেহেরি আর ইফতারের মাঝামাঝি দুপুর বেলা কয়েকটা গলি পার হয়ে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে ছালা-দিয়া-ঢাকা রিক্সাওয়ালাদের মোবাইল চায়ের দুপুরের নাস্তাটা সেরে নিতাম। বুঝতাম আর না বুঝতাম, মাঝে মাঝে কবিতার মাঝে আধ্যাত্মিক আশ্রয় খুজতাম। তবে স্বস্তি ছিলনা কিছুতেই। সমস্যাটা যেহেতু নিতান্ত ব্যক্তিগত, ভেবেছিলাম চুপে-চাপে জীবনটা পার করে দিব অভিনয় করে।

প্রায় এক যুগ ধরে প্রবাসে আছি। এখানে ফুল স্পিড ইন্টারনেটের বদৌলতে যে কোনো অনলাইন ভিডিও দেখার সুযোগ আমার দরজা খুলে দিল। মাস্টাস থিসিস লেখার সময় কিছু দর্শনের বই ঘাঁটার সুযোগ মেলে, তার সাথে জানতে পারি মানুষের চিন্তারাজ্যের অরাজকতার এবং সহজাত “ফেলাসির” কথা। শুরুতে একটা-দুইটা কইরা অনলাইনে নব্য নাস্তিকদের বিতর্ক দেখতে শুরু করলাম। হিচেন্স, হারিস কিংবা ডকিন্সদের ধারালো তুখোড় যুক্তির আঘাতে ইহুদি-খ্রিষ্টান ধর্মধারীদেরকে বারংবার নৃশংসভাবে নাস্তানাবুদ হইতে দেখলাম - একটার পর একটা। প্রথমে ভাবতাম, এই সব ধর্মগুলো তো আমি এমনিতেই বিশ্বাস করি না, তাহলে এদের পরাজয় দেখলে তো কোনো ক্ষতি নাই। কিন্তু যখন দেখলাম, ধার্মিকদের অত্যন্ত কঠিন বাহানার প্রাচীরও তাদের "নির্দয়" আক্রমণে ধূলিস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে, তখন মনে হল, আমার ইসলামিক বিশ্বাসেরও, মনে হল, নিচের মাটিটাও প্রায় চলে গেছে। আর তাই দোদুল্যমান বিশ্বাসটা নিজেকে আরো অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আর এই দীর্ঘ অস্বস্তি রফা দফা করতে আমাকে বই তিনটা সংগ্রহ করতে হল: ১. God is not great (Christopher Hitchens) ২. The End of faith (Sam Harris) এবং ৩. The God Delusion (Richard Dawkins). এর পরে এই গল্পের কিছু অবশিষ্ট থাকতে পারে না। পৃথিবীর যে কোনো ধর্মীয় ভাঁওতাবাজি থেকে এই দাওয়াই মুক্তি দিতে সক্ষম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন