লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
{বন্ধু আবু বকর এবং মুহাম্মদ দুজনেই পিতা হলেন, আবু বকরের দ্বিতীয় স্ত্রী ‘উম্মে রুমান’ জন্ম দিলেন মুহাম্মদের তৃতীয় স্ত্রী আয়েশাকে! আর মুহাম্মদের স্ত্রী খাদিজা জন্ম দিলেন এক অপুষ্ট ছেলে সন্তান; মুহাম্মদ নিজের পিতার নামে, সন্তানের নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ্। প্রায় সাড়ে ৪৩ বছর বয়সে এবার পিতা হলেন মুহাম্মদ, নির্বংশ হবার দুঃখ কাটলো কিছুটা (প্রাচীন আরবে মেয়ে সন্তান বংশ রক্ষার নিয়ামক ছিলো না); কিন্তু এই তৃপ্তি প্রকাশ করার মত পরিবেশ পেলেন না মুহাম্মদ।
নতুন মতামত যখন প্রকাশের চেষ্টা করা হয়, তখন সেই মতামত প্রণেতাকে প্রথমেই যে-নামে সম্মোধন করা হয়, তা হচ্ছে ‘পাগল/উন্মাদ’, প্রকাশ্য প্রচারের তিন-চার মাসের মধ্যেই মক্কার ৭০ শতাংশ মানুষের চোখে, পাগল/উন্মাদ নামে পরিচিত হতে লাগলেন মুহাম্মদ, সেইসাথে বলা হতে থাকলো, এগুলো পুরাতন উপকথা মাত্র। এখানে বলে রাখা দরকার, যেসব মডারেট এবং অন্ধবিশ্বাসী মুসলিম মনে করেন, মুহাম্মদকে আগে থেকেই ‘আল-আমিন’/বিশ্বাসী নামে ডাকা হতো, তাঁরা জানেনই না, ‘আল-আমিন’ ছিলো একটি ব্যবসায়ীক টাইটেল; যেমন আমরা পাট ব্যবসায়ীকে ‘পাটোয়ারী’ ডাকি! এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ‘মানুষ মুহাম্মদ’-এ করার ইচ্ছা রইল।
সমাজের বেশিরভাগ মানুষ যদি আপনাকে পাগল উপাধি দেয়, কিন্তু আপনি বিশ্বাস করেন, আপনার রাস্তা সঠিক; তবে আপনার বক্তব্য ৪৩ থেকে ৪৬ নং প্রকাশের (নিচে দ্রষ্টব্য) বাইরে কিছু হবার উপায় নেই, এখনই পড়ে দেখতে পারেন! আমি ততক্ষণে মুহাম্মদের বিদ্যার দৌড় পরখ করে আসি!
মুহাম্মদ কি সত্যিই স্বাভাবিক আছেন, যাচাই করতে একদিন সন্ধ্যায় চাচা ‘আবু তালিব’ এলেন; মুহাম্মদ তখন বাসায় ছিলেন না। ‘আবু তালিব’ মুহাম্মদকে খুঁজে পেলেন শহরতলীর এক পাহাড়ের পাদদেশে, মুহাম্মদের পাশে বসলেন ‘আবু তালিব’; স্বাভাবিক আলোচনা শেষে দুই কবি অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে শুরু করলেন, হঠাৎ ছোট একটি উল্কার টুকরো বায়ুমণ্ডলে আগুন জ্বালিয়ে ছুটে চলে গেলো; ‘আবু তালিব’ প্রশ্ন করলেন মুহাম্মদকে, ‘ভাতিজা, এটা কী?’
শরীরে মৃদু একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘেমে উঠলেন মুহাম্মদ, দু'মিনিট চোখ বন্ধ করে রইলেন; তারপর চোখ খুলে চাচা ‘আবু তালিব’-কে যা বললেন, তা-ই হচ্ছে ৪৭ তম প্রকাশ।
কিন্তু বিদ্যার দৌড়ের বিষয়টি কী? প্রাচীন আরবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অংশটুকু ছিলো গ্রীক ধারণার ওপর নির্ভরশীল, আর আরবের নিজস্ব চিকিৎসা ছিলো ইথিওপিয়া (হাবাশা), ইয়েমেন এবং মরুভূমির কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং (পানি ঢালা, গায়ে গরম ছ্যাঁকা দেওয়া, শিংগা লাগানো, উটের মূত্র, যাদু, তাবিজ, খেজুর পাতার ছাই, আর কিছু গাছের ছাল-বাকল বেঁটে খাওয়া)... মুহাম্মদ তৎকালীন গ্রীক বিজ্ঞানটুকু জানতেন; তিনি জানতেন পুরুষের বীর্য (Semen) তৈরি হয় মেরুদণ্ড এবং বক্ষপাঁজরের মধ্য থেকে (!), এবং যেহেতু মুহাম্মদ এই ভুলটাকেই সত্য মনে করতেন, এ কারণেই মুহাম্মদের দ্বিতীয় সত্তা (আল্লাহ ও জিব্রাইল) সেটাকেই প্রকাশ করেছেন এভাবে:
৫. অতএব মানুষের চিন্তা করে দেখা উচিত, তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে?
৬. তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি হতে,
৭. এটা নির্গত হয় মেরুদণ্ড ও বক্ষপাঁজরের মধ্য থেকে।
এটি এমন একটি ভুল, জাকির নায়েকের মত একজন ডাক্তারকেও এই প্রশ্নের উত্তরে গোঁজামিল দিতে দেখা যায়। যতোই ২+২=৫ প্রমাণ করার চেষ্টা করুন, ভুল তো ভুলই। মদিনার মসজিদে নববীর দোতালায় অবস্থিত লাইব্রেরির প্রধানকে প্রশ্ন করেছিলাম এ বিষয়ে; তাঁর শেষ উত্তর ছিলো, আল্লাহ এ বিষয়ে ভালো জানেন।
কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ১০ম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছরের তৃতীয় পাঁচ অংশ। অনুবাদের ভাষা ৫০ টির বেশি বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৪৩ তম প্রকাশ; সূরা আত তাকাসুর (১০২) (প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা) ৩ থেকে ৮ আয়াত:
৩. এটা সঙ্গত নয়, তোমরা শীঘ্রই এটা জানতে পারবে।
৪. আবার বলি, মোটেই ঠিক নয়, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে।
৫. কখনো নয়, তোমরা যদি নিশ্চিত জ্ঞানে জানতে!
৬. তোমরা তো জাহান্নাম দেখবেই।
৭. আবার বলি, তোমরা অবশ্যই এটি দেখবে নিশ্চিত দৃষ্টিতে।
৮. এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা সুখ সম্পদ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৪৪ তম প্রকাশ; সূরা আল ফীল (১০৫) (হাতি), ৫ আয়াত:
১. তুমি কি দেখনি তোমার রব হাতিওয়ালাদের সাথে কী করেছিলেন?
২. তিনি কি তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেননি?
৩. তিনি তাদের উপর প্রেরণ করেছেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি,
৪. যারা তাদের উপর পাথরের কাঁকর নিক্ষেপ করেছিল।
৫. অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণ-সদৃশ করে দেন।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৪৫ তম প্রকাশ; সূরা আল ক্বলম (৬৮) (কলম), ১৬ আয়াত:
১. নুন, শপথ কলমের এবং ওরা যা লিপিবদ্ধ করে তার।
২. তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহে তুমি পাগল নও।
৩. আর নিশ্চয় তোমার জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার।
৪. তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।
৫. ফলে তুমি শীঘ্রই দেখবে এবং তারাও দেখতে পাবে
৬. তোমাদের মধ্যে কে পাগলামিতে আক্রান্ত।
৭. নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু, তিনি ভাল জানেন, কে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, আর তিনি ভাল জানেন সৎপথপ্রাপ্তদের ।
৮. অতএব, তুমি মিথ্যারোপকারীদের আনুগত্য করবে না।
৯. তারা কামনা করে, যদি তুমি আপোষকামী হও, তবে তারাও আপোষকারী হবে।
১০. এবং অনুসরণ কর না তার, যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত।
১১. পশ্চাতে নিন্দাকারী, যে একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে বেড়ায়।
১২. যে ভাল কাজে বাধা দেয়, সীমালঙ্ঘনকারী, পাপিষ্ঠ।
১৩. দুষ্ট প্রকৃতির, তার ওপরে আবার কুখ্যাত।
১৪. এ কারণে যে, সে ছিল ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির অধিকারী।
১৫. তার নিকট আমার আয়াত আবৃত্তি করা হলে সে বলে: এটা তো সেকালের উপকথা মাত্র।
১৬. আমি শীঘ্রই তার উঁচু নাকে দাগ করে দেব।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৪৬ তম প্রকাশ; সূরা আল ফাজ্র (৮৯) (ভোরবেলা), ১৫ থেকে ২৬ আয়াত:
১৫. মানুষতো এমনই যে, তার রব যখন তাকে পরীক্ষা করেন, পরে তাকে সম্মানিত করেন এবং সুখ-সম্পদ দান করেন, তখন সে বলে: আমার রব আমাকে সম্মানিত করেছেন।
১৬. আর যখন তিনি তাকে পরীক্ষা করেন এবং তার উপর তার রিজিককে সঙ্কুচিত করে দেন, তখন সে বলে, ‘আমার রব আমাকে অপমানিত করেছেন’।
১৭. কখনো নয়, বরং তোমরা ইয়াতীমদের দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন কর না।
১৮. এবং তোমরা অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দানে পরস্পরকে উৎসাহিত কর না,
১৯. আর তোমরা উত্তরাধিকারের সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে ভক্ষণ কর।
২০. আর তোমরা ধনসম্পদকে অতিরিক্ত ভালবাস।
২১. এটা সঙ্গত নয়। পৃথিবীকে যখন চূর্ণ বিচূর্ণ করা হবে,
২২. আর তোমার রব ও ফেরেশতাগণ উপস্থিত হবেন সারিবদ্ধভাবে।
২৩. সেদিন জাহান্নামকে আনয়ন করা হবে এবং সেদিন মানুষ উপলদ্ধি করবে, কিন্তু এই উপলদ্ধি তার কী করে কাজে আসবে?
২৪. সে বলবে, ‘হায়! যদি আমি কিছু আগে পাঠাতাম আমার এ জীবনের জন্য’!
২৫. অতঃপর সেদিন তাঁর শাস্তির মত শাস্তি কেউ দিতে পারবে না
২৬. আর কেউ তাঁর বাঁধার মত বাঁধতে পারবে না।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৪৭ তম প্রকাশ; সূরা আত তারিক্ব (৮৬) (রাতের আগন্তুক), ১০ আয়াত:
১. শপথ আকাশের এবং রাতে যা আবির্ভূত হয় তার;
২. আপনি কি জানেন, যা রাতে আসে, তা কী?
৩. সেটা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
৪. প্রত্যেকের ওপর একজন তত্ত্বাবধায়ক রয়েছে।
৫. অতএব মানুষের চিন্তা করে দেখা উচিত, তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে ?
৬. তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি হতে,
৭. এটা নির্গত হয় মেরুদণ্ড ও বক্ষপাঁজরের মধ্য থেকে।
৮. নিশ্চয় তিনি তাকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।
৯. যেদিন গোপন বিষয়সমূহ পরীক্ষা করা হবে
১০. সেদিন তার কোন শক্তি থাকবে না এবং সাহায্যকারীও থাকবে না।
আয়াত প্রকাশের মনোজগত: কোরআন একটি অগোছালো সংকলন, এটা এলোমেলো করে দেয় পাঠকদের; বিশ্বাসী মানুষেরা এতে খুঁজে পায় যাবতীয় বিজ্ঞান, কিন্তু নবীর জীবনের সাথে মিলিয়ে ধারাবাহিকভাবে পড়লে সব ধাঁধার উত্তর মিলে যেতে বাধ্য! এই সিরিজের ১০টি পর্ব পুনরায় পড়ে আসুন, একজন স্বপ্নবিলাসী, প্রকৃতিপ্রেমী, একেশ্বরবাদী, নব্য দার্শনিক কবি মানুষের কাব্যকথন ছাড়া কিছুই চোখে পড়বে না। তা-ই যদি হয়, তবে সাহাবীরা কিসের জোরে নিজের পরিবাবারের সাথে লড়েছেন, কেন পিতার মৃত্যুর চেয়ে ইসলামের কোনো এক বন্ধুর মৃত্যুতে বেশি কষ্ট পেয়েছেন, সে উত্তর খুঁজবো আগামী পর্বে। কিসের মোহে আবু বকর তার প্রথম স্ত্রীর গর্ভে জন্মানো তাঁরই প্রথম পুত্রসন্তানের সাথে বদরের ময়দানে বিপরীত পক্ষে যুদ্ধ করেত পারেন, সেটা না জানলে মুহাম্মদকে কি সত্যিই বোঝা সম্ভব?!
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন